মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ২৩

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ২৩
ইশরাত জাহান

সিয়া হিয়া পরীক্ষা দিয়ে এসেছে থেকে সোফায় বসে আছে।বিরক্ত লাগছে আবার চিন্তাও বাড়ছে।রুদ্র আরামের ভঙ্গিতে আছে। জারা ও মিলি বসে বসে দেখতে থাকে।মালিনী সোনালীর কাছে বসে শান্তনা দিচ্ছে।সোনালী হাইপার হয়ে উঠেছে। কাল রাতে মোহন সরদার বাসায় আসেনি।কাল রাতে না আসলেও চিন্তা হয় না কিন্তু সারাদিনে একবারও কল রিসিভ করছে না কেনো?লোকটা কোথায় কি করছে বুঝতে পারছে না সোনালী।ঘণ্টা তিন চার ধরেই এই নাটক দেখছে সিয়া ও হিয়া।পরীক্ষা দিয়ে এসে একটু খেতেও পারেনি।এখন খাবার এনে দিলো সার্ভেন্ট।এর আগেও এনে দিয়েছিলো কিন্তু চিন্তায় খাওয়া দাওয়া হয়নি।এখন সোনালীর নাটকের কান্না শুরু।এদিকে তার ছেলে মেয়েদের বাবা হারানোর শোক নেই।মিলি একটু চিন্তিত থাকলেও রুদ্র ফুল রিলাক্স।তাহলে তারা কেনো না খেয়ে থাকবে?পরীক্ষার সময় এসব ঝামেলা নিয়ে থাকলে নিজেদের সপ্ন পূরণ হবে না।

রুদ্র একটা বড় হামি দিয়ে বলে,”চিন্তা করো না মম। ড্যাড তোমার জন্য সতীন আনতে যায়নি।তুমি যার সতীন হয়ে এসেছিলে সেও নেই। ড্যাড যেখানেই থাকুক তোমাকে ছাড়া একটু রিল্যাক্স আছে।”
ছেলের এমন কথায় ক্ষেপে গেল সোনালী।এই মানুষ করেছে তাকে।একটু ভালোবাসা বা দয়া দেখায় না।সিয়া হিয়া ও মিলি কিছু বুঝে না।মালিনী বলেন,”ছিঃ বাবা।বাবা মাকে নিয়ে এসব বলতে নেই।”
“সেই দুপুরে খেতে এসেছি।এখন সন্ধার আযান দিবে কিন্তু খাবার কি খেতে পেরেছি?বাবার এসিস্ট্যান্টকে কল দিয়ে তো শুনতে পারো।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“দিয়েছি কল।কেউ ধরছে না।”
“তাহলে এক কাজ করা যাক।মিসিং ডায়েরি করি।মোহন সরদার কাল রাত থেকে হারিয়ে গেছে।মন্ত্রীর বাড়িতে বসবাসরত বুড়ো লোককে কেউ কিডন্যাপ করেছে বলে ধারণা করা হয়।আসামি হতে পারে কোনো বিরোধী দল।”
“শাট আপ,রুদ্র।”
চিল্লিয়ে বলেন সোনালী।হিয়া বিড়বিড় করে সিয়ার কানে কানে বলে,”বাবা যেমন তার ছেলেও তেমন।”
রুদ্র হিয়ার মুখের পাশে ফু দিলো।হিয়ার ছেড়ে দেওয়া চুল উড়ে মুখের সামনে চলে আসে।ফলস্বরূপ হিয়া তাকিয়ে থাকে রুদ্রের দিকে।রুদ্র চোখ টিপ দিয়ে বলে,”ড্যাড এর মতো বউ থুয়ে ফুর্তি করার মতো ভুল করবো না আমি। আর হ্যাঁ আমার সাথে ড্যাডের একটু ফারাক আছে।সময় আসলে জানতে পারবি।”

হিয়া মুখ ভেংচি দেয়।অতঃপর খাওয়ায় মন দিতে থাকে।মাহমুদ সরদার বাড়িতে এসেছেন মাত্র।ঢুকেই দেখলেন বাড়িটি পুরো মরা বাড়ির মত নিরিবিলি।ডাইনিং টেবিলে বসে ভাত খাচ্ছে সিয়া হিয়া রুদ্র ও মিলি।সোফায় বসে কান্না করতে থাকে সোনালী।তার দুই পাশে শান্তনা বাণী দিচ্ছে মালিনী ও জারা।ভ্রু কুচকে মাহমুদ সরদার বলেন,”কি হয়েছে?”
মালিনী দৌড়ে এসে দাঁড়ায় মাহমুদ সরদারের পাশে।বলেন,”ছোট ভাইকে কাল থেকে ফোন দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে না।এদিকে তার এসিস্ট্যান্টকেও কল করে পাচ্ছি না।অফিসে যেয়ে দেখা যায় অফিস বন্ধ। বড় একটা তালা ঝুলিয়ে রাখা।কিছুই বুঝতে পারছি না কি হলো।”

মাহমুদ সরদার অপ্রকাশ্যে হেসে দিলেন।মনে মনে খুশি হলেও প্রকাশ্যে বলেন,”চিন্তা করার কিছু নেই।হয়তো অফিস বন্ধ রেখে বাইরে ঘুরতে গেছে।তোমাদের সাথে কথা বলতে চায় না তাই সবকিছু বন্ধ রেখেছে।”
আসলে মাহমুদ সরদারের কাছে কল এসেছিলো মোহন সরদারকে এরেস্ট করা নিয়ে।কিন্তু সে এবার না জানার ভান করেই থাকছেন।প্রকাশ্যে অনেক সাহায্য করেছেন।কিন্তু অপ্রকাশ্যে সেও চায় মোহন সরদার শাস্তি পাক।বাবা মেয়ের এই লড়াইয়ে এবার তিনি ঢুকতে চান না।তাই কথা ঘুরিয়ে দিলেন।
একজন সার্ভেন্ট ডেকে মাহমুদ সরদার কিছু কথা বলছিলেন।মালিনী একটু তাকিয়ে থেকে অবাক হয়ে বলেন,”কি বলছিলে তুমি ওকে?”

“দেখতে পাবে।ধৈর্য ধরো।”
বলতে না বলতেই ঢাক ঢোল বাজার শব্দ আসতে থাকে।সবার খাওয়া দাওয়া শেষ।হাত ধুয়ে উঠেছে মাত্র। ঢাক ঢোলের আওয়াজ বৃদ্ধি পাচ্ছে।সবাই বুঝতে পারলো তাদের বাড়ির দিকেই কিছু একটা আসছে।রুদ্র ঢাক ঢোলের আওয়াজের তালে তালে হাত উচু করে দুলিয়ে দুলিয়ে নাচতে থাকে।সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে। মিলি জিজ্ঞাসা করে,”তুই নাচতেছিশ কেনো?”
“কারণ ঢাক ঢোল বাজছে তাই।আরে তোরাও নাচ।কি হচ্ছে কেনো হচ্ছে না জানলেও আনন্দের বাজনায় আনন্দ কর।”

ঢাক ঢোল পিটিয়ে সাত আটজন লোক সরদার বাড়ির মেইন গেটে হাজির হয়।সাথে সাথে গেট খুলে দেয় দারোয়ান।আশপাশ থেকে প্রতিবেশীরা ভিড় বাড়াতে থাকে।বাড়ির বাইরের বড় উঠানে এসে দাড়ালো সরদার বাড়ির লোকজন। জারা নিজেও আছে সেখানে।সবার দাড়ানোর সাথে সাথে সেখানে ফুল দিয়ে সাজানো একটি গাড়ি এসে থামলো।গাড়ি থেকে নাচতে নাচতে নামলো পিয়াশ ও মৌ।ওরাও হাত উচু করে লাফিয়ে লাফিয়ে নাচতে থাকে।গার্ড এসে রাজের গাড়ির দরজা খুলে দিলো।বর বেশে রাজ গাড়ি থেকে নামতেই সবাই অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে।মায়া এখনও বের হয়নি।রাজ নিজেও গানের তালে নাচতে থাকে।নাচতে নাচতে গৃহে প্রবেশ করে জারার দিকে তাকিয়ে বলে,”জারা বেইবী তোমার জন্য সতীন এনেছি।”

জারা হা হয়ে যায়।সোনালী চেঁচিয়ে বলেন,”হোয়াট?”
“ওহ হো কাকিয়া।তোমাকে বলিনি তো।জারা বেইবীকে বলেছি।অবশ্য তোমার তো ঝটকা লাগবেই।তোমার বোনের মেয়ের সতীন বলে কথা।”
মালিনী রাজের কাছে এসে বলেন,”এসব কি ধরনের তামাশা রাজ।তুমি বিয়ে করলে আমাদের না জানিয়ে।আমরা তো এখানেই আছি।বিয়ে করার যখন এতই ইচ্ছা আমাদের বলতে।জারা তো রেডি ছিলোই।”
“আমি তো বাবাকে বলেই গেছিলাম মা।কারণ বাবার পছন্দেই আমার বিয়েটা হচ্ছে।”

রাজের কথায় মালিনী ফিরে তাকান মাহমুদ সরদারের দিকে।মাহমুদ সরদার নির্দ্বিধায় বলেন,”হ্যাঁ।আমি রাজের বিয়েটিকে মেনে নিয়েছি।ইনফ্যাক্ট রাজের বউ হিসেবে আমি তাকে গ্রহণ করতেও রাজি।পাত্রী আমার পছন্দের।”
“আর জারা! জারাকে আর ওর মা বাবাকে আমি কথা দিয়েছি যে রাজ আর জারার বিয়ে দিবো।তাহলে এখন কি হবে?”

“আমরা কি জানি?তুমি কি কখনও তোমার ইচ্ছা পূরণের আগে আমাদের থেকে একটু আলাপ করে নেও?তোমার ডিসিশনকে আগে প্রায়োরিটি দিয়েছো।”
“তোমরা বাবা ছেলে মিলে কখনও আমার কথা শুনতে চেয়েছো?আমি যা কিছু করতে চাই আগে তোমাদের থেকে জানতে চাইতাম কিন্তু তোমরা নিজেদের মতো করে এগিয়ে গেছো।”
বলেই কান্না করে দিলেন মালিনী।রাজ মালিনীর কাছে এসে বলে,”আমি তোমার সমস্ত মতামতকে সম্মান করি মা।কিন্তু মায়াবতীকে আমার চাই।তাই আমি ওকে বিয়ে করেছি।তুমি এই সম্পর্ক মেনে নেও মা।তোমার ছেলে তোমারই থাকবে কিন্তু তার ভালোবাসা তার থেকে হারালে তোমার ছেলের মনকে ভাঙতে দেখবে।তোমার ছেলে সুখে থাকবে না মা।”

মালিনী আর কিছু বললেন না।ছেলের সুখের কথা ভেবে চুপ করে গেলেন।জারা এসে রাজের কাধে হাত রাখলো।রাজ ঘুরে দাড়ালো। জারা রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”বেইবী!প্লিজ বলে দেও তুমি এসব নাটক করছো।আমি তোমাকে খুব খুব খুব ভালোবাসি বেইবী।বিলিভ মী তুমি আর আমি এই বাড়িতে অনেক হ্যাপি ফ্যামিলি হয়ে থাকবো।”
গাড়ির ভিতর থেকে রক্তচক্ষু দিয়ে দেখছে মায়া।সবকিছু সহ্য হলেও রাজের কাধে জারার হাত দেওয়াটা সহ্য হলো না।গাড়ির দরজা নিজে খুলে পাশে থাকা গার্ড থেকে গুলি নিয়ে সাথে সাথে শুট করে দিলো জারার হাতে।জারার বাম হাত ছিদ্র হয়ে রক্ত বের হতে থাকে।সাথে সাথে ব্যাথায় চিল্লিয়ে জারা বলে,”আউচ।”

সোনালী এসে জারার হাত ধরে দাড়ায়।মিলি দৌড়ে গেছে মেডিসিন বক্স আনতে।একজন সার্ভেন্ট পানি নিয়ে আসে।গুলি জারার হাতের ভিতর ঢুকতে পারেনি।মায়া টার্গেট করেছিলো জাস্ট একটু সাইড থেকে।তাই জারার হাতের কোনা দিয়ে গুলি চলে যায়।এর ফলে জারার হাত ছিদ্র হয়ে যায়। জারার হাত ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে সোনালী আর মালিনী।রাজ স্মিত হেসে বলে,”গৃহ প্রবেশেই রক্তের বন্যা বয়ে দিলে মায়াবতী?”
“মেহেরুন জাহান মায়ার জিনিসে কেউ নজর দিবে আর মায়া চেয়ে চেয়ে দেখবে এতটাও খারাপ দিন মায়ার আসেনি।আর সেখানে তো আস্ত আপনিটাই আমার ব্যাক্তিগত পুরুষ।”
মায়ার গর্জে যাওয়া কণ্ঠ শুনে সবাই তাকিয়ে থাকে মায়ার দিকে।সিয়া ও হিয়া মায়াকে দেখছে খালি।মিলি বলে ওঠে,”এই মেয়ে তো সেই মেয়েটা যে আমাদের মাজারে ঝামেলা করেছিলো আবার ওর কোম্পানির উদ্বোধনে গিয়েছিলাম।”

রাজ মায়ার রাগী চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে।রাগে ফোঁসফোঁস করছে মায়া।রাজ তাকিয়ে দেখছে মায়ার হার্টবিট ফাস্ট হয়ে এসেছে।মিলির কথাগুলো কানে ভেসে আসতেই রাজ মায়ার দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে,”এটাই আমার বউ আমার মায়াবতী।”
মাহমুদ সরদার ইশারা করতেই একজন সার্ভেন্ট মিষ্টি ও শরবত নিয়ে আসে। সার্ভেন্টদের হাতে বউ বরণের সামগ্রী দেখে মাহমুদ সরদার বলেন,”বউ বরণ করতে হবে তো। যাও আমাদের বৌমাকে বরণ করে নিয়ে আসো।”
মালিনী মুখ ঘুরিয়ে বলেন,”আমার কোনো ইচ্ছা নেই।পারলে তুমি করো তোমার বৌমাকে বরণ।”
মাহমুদ সরদার পাত্তা দিলেন না।নিজে থেকেই চলে গেলেন মায়াকে বরণ করতে।মিষ্টির থালার পাশ থেকেই একটু উকি দিয়ে মালিনীর দিকে তাকালো মায়া।তারপর মাহমুদ সরদারকে বলে,”বউকে বরণ করার দায়িত্ব তো একমাত্র শাশুড়ির থাকে।শাশুড়ির অবর্তমানে অন্য কেউ।আমার শাশুড়ি কি মারা গেছে?”

সবাই থমকে যায় এমন কথায়।মালিনী নিজেও ক্ষেপে গেছেন এবার।মায়া ডেভিল হাসি দিয়ে বলে,”না মানে চোখের সামনে জলজ্যান্ত শাশুমাকে দেখছি কিন্তু সে তার ছেলের বউকে বরণ করতে না করছে।বিষয়টা তো এমন হলো যে সে আমার শাশুমা হওয়ার যোগ্য না।অথবা সে দুনিয়া থেকে টা টা বিদায়।”

বলেই মালিনীর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দেয় মায়া।মায়ার চোখ টিপ দেওয়া দেখে বিষম খান মালিনী।মাহমুদ সরদার হেসে দেন।বলেন,”ও এখনও তোমাকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত না।আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।”
“উহু,এই আস্তে আস্তে শব্দটা ব্যাবহার করে যে আমার অপেক্ষার মাত্রা বাড়তে থাকবে।শাশুমার ভালোবাসা না পাই তার দায়িত্ব তো দেখতে চাই।তাকেই এখন আমাকে বরণ করতে হবে।এটা যে আমার একমাত্র অধিকার।”
সোনালী এসে মালিনীর পাশে দাড়িয়ে বলেন,”যদি বরণ না করে তাহলে?”
মায়া গুলি উচু করে সেদিকে তাকিয়ে গুলির মাথায় হালকা ফু দেয়।তারপর বলে,”একটু আগে একটা ডেমো দেখালাম।সিচুয়েশন আবারও ঘুরে আসতে পারে।”
ভয়তে ঢোক গিলে সোনালী।প্রতিবেশীরা বিড়বিড় করে বলে,”যেমন মন্ত্রী তার তেমন বউ।মন্ত্রীর মতো করা মস্তিষ্কের।”

মায়া আবার বলে ওঠে,”আমি কিন্তু এমন বৌমা নই যে শাশুড়ির ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে।শাশুড়ির ছেলের ভালোবাসা কি কম নাকি যে শাশুড়ির ভালোবাসার কাঙাল হবো?কিন্তু অধিকারবোধ।এই যে উনি চায় ওনার না হওয়া বৌমাকে বরণ করতে এটাই তো আমার হার।এই হার মানতে শিখেনি মায়া।মায়া যা চায় তাই পায়।এখন তার ইচ্ছা সে তার শাশুড়ির থেকে বরণ গ্রহণ করবে।কি মন্ত্রী মশাই?আপনি করবেন না পূরণ?আপনার মায়াবতীর ইচ্ছা।”

রাজ একটু হেসে এগিয়ে আসে মায়ার দিকে।বলে,”অবশ্যই মায়াবতী।তবে তোমার মুখে আমি দ্বিতীয়বার আমার মায়ের মৃত্যুর কথা শুনতে চাই না।মাথায় রেখো আমার দুনিয়া আমার মা তুমি ও আমার পরিবার।”
বলেই রাজ তাকায় সিয়া হিয়ার দিকে।তারপর তাকায় মায়ার দিকে।মায়া বলে,”আমার এই জবান থেকে আপনার মায়ের মৃত্যু আসবে না।কিন্তু আমার শাশুমার কথা ঠিকই আসবে।শাশুড়ি বৌমার মাঝে ঢুকবেন না যেনো মন্ত্রী মশাই।আপনাকে আবার এসব জিনিসে মানাবে না। ট্রিপিকাল ভারতীয় সিরিয়াল হয়ে যাবে যে।”
রাজ হালকা হেসে দেয়।মাহমুদ সরদার হো হো করে হেসে বলেন,”তুমি পারও মা।আচ্ছা তোমার শাশুড়ি তোমাকে বরণ করবে।”

বলেই মালিনীর কাছে থালা নিয়ে আসে মাহমুদ সরদার।শাসনের সুরে বলেন,”তাড়াতাড়ি বরণ করে নেও।কোনো প্রকার না আমি শুনবো না।আমার বৌমাকে তোমার পছন্দ না হলেও চলবে কিন্তু তার কোনো কিছুতে আমি যেনো কষ্ট পেতে না দেখি।অবশ্য সে যেমন রণচন্ডি তুমি না চাইলেও জোর করেই ছুরি ঘোরাবে এই বাড়িতে।”
বলেই থালাটা মালিনীর হাতে দিয়ে দেয়।মায়া তার ফোন বের করে মৌয়ের হাতে দিয়ে বলে,”তাড়াতাড়ি শাশুড়ি বৌমার কিছু মোমেন্ট ক্যাপচার করে নেও।বলা তো যায় না সম্পর্কগুলোর পরিবর্তন হতে থাকে কোন সময়।আমার শাশুড়ি তো আবার ভালো মানুষের সঙ্গ নিয়ে চলে।তার থেকে আবার সিরিয়ালের শাশুড়ির ডেমোগুলো শিখে আমার উপর অ্যাপ্লাই করতে চাইতে পারে।”

মায়ার তিক্ত কথাগুলো হজম করে মায়ার কাছে আসে মালিনী।মায়াকে মিষ্টি খাইয়ে দেয়।মায়া সুন্দর একটি হাসি দিয়ে জড়িয়ে ধরে মালিনীকে।মালিনীর কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,”ভুলেও সিরিয়ালের শাশুড়ি হতে যাবেন না শাশুমা।আমি আবার সিরিয়ালের বৌমা না।আমি আপনার জীবনের এটম বোম আলা বৌমা।আমার আর আমার স্বামীর মাঝে দেওয়াল হয়ে আসলে আমি এই দেওয়াল গুঁড়ো গুঁড়ো করে দিবো।”
মালিনী কেপে উঠল মায়ার কথায়।এ মেয়ে তো খুব ডেঞ্জারাস।গৃহ প্রবেশেই শাশুড়িকে হুমকি দিচ্ছে।মায়া ছেড়ে দিলো মালিনীকে।তারপর বলে,”পিকচার তোলা কমপ্লিট মৌ?”
“হ্যাঁ।অনেক সুন্দর লাগছে শাশুড়ি বৌমা জুটি।”

“লাগবেই তো।মন্ত্রী মশাই এর মা বলে কথা।সে তো এখন আমার শাশুমা।”
বলেই অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে মালিনীর দিকে।জারা কান্না করছে। একেতো রাজ বিয়ে করেছে।আবার তার বউ তাকে গুলিও করে হাত ফুটো করে দিয়েছে।নেকা কান্না করে রাজের সামনে এসে হাত দেখিয়ে জারা বলে,”সী বেইবী।তোমার এই নিউ ওয়াইফ আমার হাত ফুটো করে দিয়েছে।she is a criminal.”
“ওহ বেইবী!আরো কি গুলি খেতে চাও তুমি?তোমার সতীন কিন্তু গোলাগুলিতে এক্সপার্ট।”
বলে ওঠে রাজ।সবাই হেসে দেয়।

মাহমুদ সরদার রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলেন,”ভাবীকে কোলে নিয়ে গৃহ প্রবেশ করো।ভাই বিয়ে করেছে।বউ নিয়ে দেবর ননদ আনন্দ করবে না?”
রুদ্র কিছু করার আগে রাজ মায়াকে কোলে করে নিয়ে বলে,”আমার বউ আমার পার্সোনাল লকার।তার গায়ে হাত দেওয়া তো দূরের কথা তার দিকে চোখ দেওয়ার অধিকারও আমি কাউকে দিবো না।কেউ আমার বউয়ের আশেপাশে আসলে তার শকুনের নজর এই বাঘের কাছে ফিকে পড়ে যাবে।”

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ২২

বলেই মায়াকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকতে থাকে রাজ।রাজের এই কথাটি শুনে মায়া খুব খুশি হয়।রাজের দিকে তাকিয়ে থাকে অপলক দৃষ্টিতে।রাজের কানের কাছে ফিসফিস করে মায়া বলে,”জেলাস মন্ত্রী মশাই।”
রাজ ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে বলে,”মায়াবতীর মতো অতি মাত্রার জেলাস না হলেও আংশিক আছি।”

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ২৪