মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৩৫

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৩৫
ইশরাত জাহান

অতীত(মায়াবীর)
ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছে মায়া।ভাবতে থাকে পুরনো অতীত।আজ থেকে ঠিক নয় বছর আগের কথা।
অতীত,
ঢাকায় একটি ম্যাচে ভাড়া থাকতো মায়া ও মৌ।পড়াশোনার জন্য শিবচর থেকে ঢাকা আসতে হয় তাদের।ভালোই যাচ্ছিলো তাদের দিন।মায়ার আঠারো বছরে যেদিন পা দেয় ঠিক তার দুইদিন পর মায়া জানতে পারে রাজ আসবে দেশে।শাহানা পারভীন ও মাহমুদ সরদার কথা বলছিলেন।মায়া জানে না ফোনের ওপাশে মাহমুদ সরদার ছিলেন।কিন্তু তাদের শেষের কথা শুনতে পায় মায়া।শেষের কথাটি এমন ছিলো,”অবশেষে আমাদের মায়ার পুতুল বর মানে আমার শাহমীর বাবা আসছে। কাল বিকালে আমার জামাই বাবাজি আসবে।আমার খুব খুশি লাগছে।”

মায়ের মুখে এটুকু শুনে মায়া বুঝলো এতদিনে সে যাকে পুতুল বর হয়ে জানতো।যাকে সে দেখেনি।কিন্তু জানে যে তার একটি পুতুল বর আছে সে দেশে আসবে তখন মায়ার মনে আগ্রহ জাগে তার সেই পুতুল বরকে দেখার।জন্মদিন পালন করতে মায়া শিবচরে এসেছিলো কয়েকদিন থাকবে বলে।জন্মদিন পালন হয়েছে।এখন সে তার পুতুল বরকে দেখতে চায়।তাই এখন সে ঢাকায় যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করে।মায়ের মুখে শাহমীর নাম শুনে মায়া বুঝতে পারলো যে সে মাহমুদ সরদারের ছেলে।মায়া যে তার নাম শুনেছে আর তার ছোটবেলার ছবি দেখেছে।সরদার বাড়িতে থাকতে তো মায়া সবার ফ্যামিলি অ্যালবাম দেখতো আর সেখানে নামগুলো শুনেছিলো।যেহেতু কাল বিকালে আসবে তাই মায়া আজকেই ঢাকায় যাবে।পরীক্ষার নাম করে বের হয় মায়া।মৌ ও মায়া একসাথে আসে।মৌ জিজ্ঞাসা করে,”তোমার তো এখন কোনো পরীক্ষা নেই আপু।তাহলে কেনো মিথ্যা বললে?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমি একটা জিনিষ জানতে চাই বোন।এখন বলা যাবে না।আগে নিজে ভালোভাবে জেনে নেই তারপর তোকে বলব।”
“আচ্ছা।”
পরেরদিন মায়া বিকালে চলে যায় এয়ারপোর্টে।মিহিরের থেকে সবকিছু জেনে নেয়।মিহির শাহানা পারভীনের সাথে কৌশলে কথা বলে মায়াকে সব ডিটেইলস বলে দেয়।মায়া ঠিক সেভাবে সময় মতো পৌঁছে যায়।মুখে মাস্ক মাথায় ওড়না ও চোখে সানগ্লাস দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখে মায়া।দেখতে পায় সেখানে দাড়িয়ে থাকা সরদার বাড়ির পুরো পরিবারকে।মোহন সরদার ও সোনালী সবাই আছে সেখানে।সবার দিকে চোখ বুলিয়ে নেয় মায়া।ঘৃণা জমে আছে তার এই লোকগুলোর উপর।

প্লেন উড়ে আসে মায়ার মাথার অনেক উপর থেকে।আকাশের দিকে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আছে মায়া।প্লেন আসার শব্দে মায়ার উত্তেজনা বাড়তে থাকে।এই যে এখনই বের হবে মায়ার পুতুল বর।কেমন দেখতে সে এটা মায়া জানেনা। যেমনই দেখতে হোক না কেনো মায়ার মনে সে অজান্তেই জায়গা করে নিয়েছে।তার মা চেয়েছে তার পুতুল বর তার হবে।দেখতে বিশ্রী হলেও মায়া এই শাহমীর রাজকে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিতে রাজি।সিয়া ও হিয়া তখন অনেক ছোট।ফ্রগ পরে আছে।হঠাৎ তাদের লাফালাফি দেখতে পায় মায়া।চিৎকার করে বলে,”আমাদের ভাইয়া এসেছে।উড়ে উড়ে এসেছে আমাদের কাছে। ইয়ে।”

মাহমুদ সরদার ওদেরকে দেখিয়ে দিচ্ছে,”ওই যে রাজ এসেছে।তোমাদের ভাই।”
সবাই অনেক খুশি।মায়া ওদের ইশারা মতো তাকিয়ে দেখলো।লম্বা সুঠাম দেহী এক যুবক।চোখে সানগ্লাস মুখে ছোপছোপ দাড়ি চুলগুলো স্পাইক করা।দেখতে শ্যাম বর্ণের।রাজকে দেখার সাথে সাথে মনে ধরে যায় মায়ার।মুখ ফুটে নিজে থেকেই বলে,”আমার পুতুল বর।”
রাজ এসেই মাহমুদ সরদারকে জড়িয়ে ধরে।তারপর পরিবারের সাথে ব্যাস্ত হয়ে যায়।মায়ার চোখের দেখা যেনো ফুরায় না।সে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।তারপর একটি অটো নিয়ে চলে আসে মায়া।

ম্যাচের কাছাকাছি আসতে জ্যাম বেধে যায়।মায়া সেদিকে তাকিয়ে দেখে। বোর লাগছিলো তাই আশেপাশে তাকালো।হঠাৎ চোখে পড়লো দূরে ফাঁকা একটি মাঠ মতো জায়গায় একদল লোক কালো রঙের ড্রেস পরে আছে।মায়ার ব্যাগে দূরবীন থাকে।ওটা দিয়ে দূরের জিনিস দেখতে থাকে সে।লোকগুলো প্রত্যেকের হাতে গুলি।একজন বৃদ্ধ লোককে ধরে আছে দুজন।ভিড়ের কারণে মায়া অটো নিয়ে দেখতে থাকে তাদের কর্মকাণ্ড।মনের অজান্তেই কৌতূহল বেড়ে যায় মায়ার।তাই অটোর ভাড়া মিটিয়ে নেমে যায় মায়া।এগিয়ে গিয়ে দেখতে থাকে।বৃদ্ধ লোকটির দিকে এগিয়ে আসছে এক যুবক।বৃদ্ধটি তার দিকে তাকিয়ে হাতজোড় করে বলে,”আমাকে ছেড়ে দেও বাবা।আমি আর এসব করবো না।”

যুবকটি দাত কিড়মিড় করে বলে,”এই সমাজে নিরীহ ব্যাক্তিদের শান্তিতে বেচে থাকতে দেখলে তোদের সহ্য হয় না তাই না?এতক্ষণ তোর ক্ষমতায় এক নারীর অপহরণ চলছিলো আর রাস্তার লোক চেয়ে চেয়ে দেখছিলো।এখন আমার ক্ষমতায় তোর পাপের মৃত্যু হবে আর ওরা চেয়ে চেয়ে দেখবে।কেউ কিছু বলবে না।এই সমাজে নারীদের বেচে থাকার অধিকার আছে।তারা শান্তিতে জীবন যাপন করার অধিকার রাখে।”

বলেই লোকটির পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেয়।আশেপাশের সবাই চোখ বন্ধ করে নেয়।ভয়তে কাপতে থাকে তারা।যুবকটির কথাগুলো মনে ধরেছিলো মায়ার।যেখানে মানুষ পাপ কাজকে টাকার বিনিময়ে সমর্থন করে নেয়।সেখানে এই যুবক কোনো অন্যায়ের বিচার করলো।সবার ভয় লাগলেও মায়ার কোনো ভয় লাগেনা।তার কাছে মনে হয় এটাই উচিত কাজ।মায়া অনেক জোরে জোরে হাততালি দিয়ে ওঠে।
হঠাৎ কারো হাততালি দেওয়ার শব্দে পিছনে তাকিয়ে রইল বীর।মায়াও তাকালো তার দিকে।সুরমা চোখে দেওয়া বীরের।চোখে রক্তিম আভাস।দেখতে মাশাআল্লাহ।যুবকটি এগিয়ে এলো মায়ার কাছে।বলে,”এখানে কি করো মেয়ে?”

কনফিডেন্ট নিয়ে মায়া বলে,”কোনো এক সাহসী পুরুষকে টাকার খেলায় উড়তে না দেখে অন্যায়ের বিচার করতে দেখলাম।কেনো যেনো তাকে কাছ দেখতে ইচ্ছা করলো।হয়তো কিছু শিখতে পারবো তাই।”
অবাক হয়ে তাকালো মায়ার দিকে।বলে,”নাম কি তোমার?”
“মেহেরুন জাহান মায়া।আপনার?”
হালকা হেসে উত্তর দিলো,”আরহাম খান বীর।এই শহরের মাফিয়া।এই শহরে বেড়ে ওঠা পাপের বিনাশকারী।”
বীরের চোখের দিকে তাকালো মায়া।দেখতে পেলো হিংস্র রূপের পুরুষকে।মায়া সেদিকে তাকিয়ে থেকেই বলে,”সব পাপের বিনাশ তো হয়না।কিছু পাপ যে চোখের আড়াল থেকে যায়।”
“যেগুলো চোখের সামনে প্রকাশ পায় সেগুলো দমন করতে ক্ষতি কি?”

মায়া মূলত মোহন সরদার ও সোনালীর কথা বলছিলো।কিন্তু বীরের কথা তার ভালো লাগে ।আশেপাশে যানবাহন চলতে থাকে।মায়ার কানে ভেসে আসে সেই শব্দগুলো।পিছনে তাকিয়ে দেখে নিলো একবার।তারপর বলে,”সময় কারো জন্য থেমে থাকে না।এই যে চলমান গাড়ির মতো আমাকেও এখন এগিয়ে যেতে হবে।আপনার কথাগুলো আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।ইনফ্যাক্ট আপনাকে আইডল ভাবা যায়।আজ আসি তাহলে।ভাগ্যে থাকলে আবার দেখা হবে।আর না থাকলে ভেবে নিবো কোনো ভালো কিছুর জন্য আজ আমার এখানে পথ থেমে গিয়েছিলো।”
বলেই চলে যায় মায়া।মায়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে বীর। বীরকে সবাই ভয় পায়।সেখানে অষ্টাদশী এক মেয়ে সাহস নিয়ে তার সাথে কথা বললো।তাও কি না তার হাতে কাউকে খুন হতে দেখে।

দিন যেতে থাকে নিজের মতো।বীর আর মায়ার দেখা হয় না।মায়া নিজেও ভুলে গেছে বীরের কথা।কিন্তু বীর ভোলেনি মায়ার কথা।মায়াকে না ভুললেও মায়াকে নিয়ে খুব বেশি উদাস ছিলো না।মায়া প্রতিদিন সময় করে রাজকে দেখার জন্য এদিক ওদিক উকি দিতো।রাজ যখন এমপি পদে থাকে তখন বিভিন্ন জায়গায় রাজের এনাউন্সমেন্ট মায়া শুনতে থাকে।সেগুলো মায়া তার ফোনে ক্যাপচার করে নেয়।রাজকে যত দেখতে থাকে ততই রাজকে পাওয়ার আকাঙ্খা বাড়তে থাকে।রাজ যেগুলো ভাষণ দিয়ে বলতো মায়া সেগুলো নিজের ব্রেনে সেট করে রাখতো।নারীদের জন্য দরিদ্রদের জন্য বিভিন্ন বক্তব্য দিতো রাজ।যেগুলো শুনে মন ছুঁয়ে যায় মায়ার।
এভাবে কেটে যায় আড়াই মাস।হঠাৎ একদিন রাতে মায়া ও মৌ ঘুমিয়ে ছিলো।এমন সময় মায়ার ফোনে কল আসে।মায়া ঘুম ঘুম চোখে ফোন নিয়ে কানে দিতেই শুনতে পায় শাহানা পারভীনের হাসফাস।মায়া ফট করে চোখ খুলে বলে,”কি হয়েছে মা?”

শাহানা পারভীন হাঁফাতে হাঁফাতে বলেন,”আমি মনে হয় আর বাঁচবো না মা।জানি না আমি আজকে এখান থেকে বেঁচে ফিরবো কি না।তাই বলে দিতে চাই।তোমার সাথে বড় ভাই মানে মাহমুদ সরদারের ছেলে শাহমীর বাবার অনেক আগেই বিয়ে হয়েছে।আমি যদি মারা যাই তুমি নিজ দায়িত্বে ওই বাড়ির বউ হয়ে যাবে।আমি তোমাদের চারহাত এক করতে পারলাম না।অনেক ইচ্ছা ছিলো শাহমীরের বউ হয়ে তোমাকে দেখার।মৌকে তুমি দেখে রেখো।ওর প্রাপ্য মর্যাদা তুমি ওকে বুঝিয়ে দিও।ওরা আমাকে ধরে ফেললে আমি শেষ।”

“কিন্তু মা তুমি এখন কোথায়?”
“আমি ঢাকা এসেছিলাম।তোমার দাদুকে যারা খুন করেছিলো তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পেয়েছি তাই। আর হ্যাঁ তোমার দাদুকে যারা খুন করেছে তারা নারী পাচারের সাথে যুক্ত।শুধু তাই না তারা আর কেউ না ওই….”
আর বলতে পারে না শাহানা পারভীন।জোরে চিৎকার করে ওঠে,”আহ।”

শাহানা পারভীনের মাথায় আঘাত করা হয়।মায়ার কানে এই চিৎকার ঘোরের মত লাগে।তাড়াতাড়ি ফোনে লোকেশন অন করে নেয়।শাহানা পারভীন ও মায়ার ফোনের সাথে লোকেশন কানেক্ট করা থাকে।এটা মায়া করে রেখেছিলো।তাড়াতাড়ি করে লোকেশন দেখে বের হয় মায়া।সেখানে যেতে যেতে বেশ দেরি হয়।যাওয়ার সময় পুলিশকে কল করে সব বলে দেয়। মায়া লোকেশন অনুযায়ী ওই জায়গায় পৌঁছায় ঠিকই কিন্তু দেখতে পায়না কাউকে।আশেপাশে দৌড়ে দৌড়ে খুঁজতে থাকে।

অন্ধকার এলাকা কিছু চোখে আসে না তার।হঠাৎ দেখতে পেলো ছোপ ছোপ রক্ত দিয়ে সোজা একটা লাইন।সেই লাইন বরাবর হাঁটতে থাকে মায়া।এগোতে এগোতে চলে আসে রাস্তার মাথায়।সেদিকে চোখ যেতেই মায়ার দেখতে পেলো কিছু লোক তার মাকে রক্তাক্ত করে রেখেছে।শাহানা পারভীনের পায়ে জোরে বাড়ি দিলো এক রিং হাতে দেওয়া নারী।মায়া পুরো বোবা হয়ে যায়।মাথা ফাঁকা হয়ে আসে তার।গলা অব্দি আসা কথাগুলো দলা পাকিয়ে এসেছে।মাকে এভাবে দেখে মায়ার মাথা কাজ করা বন্ধ হয়।দূর থেকে পুলিশের গাড়ির শব্দ আসে।তাই খুনিগুলো দৌড়ে চলে যায়।পুলিশ সোজা গাড়ি নিয়ে আসামিদের ধরতে যায়।ওরা চলে যেতেই মায়া দেখলো একটি ট্রাক এগিয়ে এসেছে।ট্রাকটি আসার আগেই মায়া দৌড়ে রক্তাক্ত শাহানা পারভীনকে নিয়ে অনেক কষ্টে এক কোনায় চলে আসে।

গভীর রাতের ফাঁকা রাস্তায় মায়া হাত বাড়িয়ে কাউকে পায় না।কতশত গাড়ি যাতায়াত করছে।মায়া হেল্প হেল্প বলে চিল্লাতে থাকে।কিন্তু কেউ একজন এসে সাহায্য করে না।না পেরে মায়া ওখানে হাঁটু গেড়ে বসে কান্না করতে থাকে।হঠাৎ একটি গাড়ি এসে মায়ার সামনে থামে।গাড়ি থেকে বের হয় বীর।মায়ার কাছে এসে বলে,”Any problem?”
মায়া মুখ উচু করে তাকায়।দেখলো বীরকে।বীর অবাক হলো মায়াকে এখানে দেখে।জিজ্ঞাসা করে,”তুমি এত রাতে এখানে কি করছো?”

মায়া আশার আলো পেয়ে উঠে দাড়ায়।বীরের কাছে এসে আকুতি মিনতী করে বলে,”আমার মা।আমার মাকে বাঁচান প্লিজ।আমার মা ছাড়া আমি বাঁচব না। দয়া করে বাঁচান আমার মাকে।”
বীর পাশে তাকিয়ে দেখলো শাহানা পারভীনের আহত দেহ।বীর শাহানা পারভীনকে কোলে নিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে মায়াকে বলে,”আমার গাড়িতে বসো।হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।”
মায়া চোখের পানি মুছে গাড়িতে ওঠে।শাহানা পারভীনকে নিজের কোলে নেয়।মৌকে ম্যাসেজ করে বলে দেয়,”আমি ব্যাস্ত আছি বোন।চিন্তা করবি না। কাল হাসি এসে তোকে নিয়ে যাবে।”
হাসিকে কল করে বলে,”মায়ের অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।আমি হসপিটালে যাচ্ছি।বাকি কথা পরে বলবো।তুমি সকালে এসে মৌকে নিয়ে যাবে।”

বলেই কল কেটে দেয়।হাসি এই রাতে আর ঘুমোতে পারে না।সকাল হওয়ার অপেক্ষা না করে তাদের বাড়ির গাড়ি নিয়ে বের হয়।একটু পর সূর্য উঠবে।যদি বিপদের কিছু হয় তাহলে তাকে এখনই যাওয়া উচিত।তার বিপদে মায়া ও শাহানা পারভীন ছিলো।এখন শাহানা পারভীনের বিপদে সে থাকবে।
হসপিটালে এসে তাড়াতাড়ি করে শাহানা পারভীনকে ভর্তি করে দেওয়া হয়।বীরের ক্ষমতায় সম্ভব হয়েছিলো।বীর নিজ দায়িত্বে শাহানা পারভীনকে ভর্তি করিয়ে দেয়।শাহানা পারভীনকে অপারেশন রুমে নেওয়া হয়েছে।মায়া মুখে হাত দিয়ে কাপছে।তার মায়ের কিছু হয়ে গেলে কি নিয়ে বাঁচবে?তার দুনিয়া তো তার মা।এই মা গেলে সে নিঃস্ব হয়ে যাবে।বীর তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে।কে বলবে এই মেয়ে সাহসী?সেদিন কত সাহস দেখালো। আর আজকে ভীতু হয়ে আছে।

ডাক্তার বের হলো অপারেশন রুম থেকে।ডাক্তারকে দেখে বীর এগিয়ে গেলো।মায়া সেখানে বসেই ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে আছে।ডাক্তার বলে,”প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে।ও নেগেটিভ রক্ত লাগবে।আপাতত দুই ব্যাগ লাগবে।তারপর রোগীর কন্ডিশন দেখে বলা যাবে।”

এই রাতে ও নেগেটিভ রক্ত পাওয়া খুবই দুষ্কর।মায়ার রক্ত বি পজেটিভ।এটা মোহন সরদারেরও।মায়ার এবার নিজের উপরেও রাগ উঠছে।কেনো সে মোহন সরদারের রক্ত পেলো?আজ মায়ের রক্ত তার শরীরে থাকলে সে তার মাকে বাঁচাতে পারতো।মাথা ফাঁকা হয়ে এসেছে।বাবাকে বাদ দিয়ে এখন নিজের উপর নিজের ঘৃণা হতে থাকে।ওই লোকটার রক্ত দিয়ে কি করবে সে?লোকটার মতোই বেকার হয়ে গেলো তার রক্ত।এখন যদি মায়ার শরীরের সাথে তার মায়ের রক্তের মিল থাকতো তাহলে মায়া নিজে চোখ বন্ধ করে রক্ত দিতো।

বীর মায়ার মুখের দিকে তাকালো।মায়ার দিকে তাকিয়ে বীরের মনে মায়া কাজ করলো।মায়াকে সাহসী দেখতে তার ভালো লেগেছিলো।এই মায়াকে দেখে তার নিজের কাছেই খারাপ লাগছে।বীরের মনে হতে থাকে এই মায়াকে তেজী হিংস্র রূপেই মানায়। আর তাকে সেই তেজী বানাবে বীর নিজে।তাই ডাক্তারকে বলে,”এখন রক্ত জোগাড় করা সম্ভব নয়।তবে আমার রক্তের গ্রুপ ও নেগেটিভ।আপনি আমার রক্ত নিন।”
মায়ার কানে কথাটি আসতেই মায়ার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।বীর সেই হাসি দেখে শান্তি পায়।ডাক্তার বলে,”আপনাকে আগে টেস্ট করাতে হবে।আসুন আমাদের সাথে।”

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৩৪

ডাক্তার রক্ত পরীক্ষা করে দেখলো।বীরের রক্তে কোনো সমস্যা নেই।সে ব্লাড ডোনেট করতে সক্ষম।তাই ডাক্তার বীরের থেকে দুই ব্যাগ রক্ত নেয়।তবে প্রথম এক ব্যাগ রক্ত নিয়ে কিছুক্ষণ রেস্টে রেখে আবার এক ব্যাগ নেয়।বীর তাতে আপত্তি করে না।বীরের কাছে এখন একটাই চাওয়া।এই মেয়ের মুখের হাসি।মায়ার মুখের হাসি বীরের মন ছুঁয়ে নেয়।

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৩৬