মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৬৩

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৬৩
ইশরাত জাহান

খাটের কোনায় হেলান দিয়ে হাটুর মাঝে মুখ গুজে কান্না করছে হিয়া।রুদ্রকে অনেক অপমান করেছে।এখন রুদ্রের বিষয়ে জেনে তার খারাপ লাগছে।ওর সামনে যাওয়ার মত মনোবল শক্তি পাচ্ছে না।হিয়ার ঘরের দরজার কাছে এসে রুদ্র দাড়িয়ে আছে।দেখতে থাকে কান্না করা হিয়াপাখিকে।ধীরে ধীরে এসে হিয়ার পাশে বসে বলে,”হিয়াপাখি।”
কান্নারত লাল মুখটা উচু করে তাকালো হিয়া।রুদ্র তাকিয়ে আছে তার দিকে।মুখে বিজয়ের হাসি।হিয়া কেনো কান্না করছে এটা রুদ্র খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।রুদ্রের মুখে মোলিন হাসি দেখে হিয়া দুই হাত দিয়ে কিল মারতে থাকে রুদ্রকে।রুদ্রকে মারতে মারতে বলে,”আমার কষ্ট লাগলে আপনার ভালো লাগে তাই না রুদ্র ভাই?”
রুদ্র হিয়ার হাতদুটো একসাথে ধরে হিয়ার মুখের কাছে নিজের মুখ এগিয়ে বলে,”যার জবান থেকে আমাকে নিয়ে এমন মিথ্যা কথা বের হবে সত্যি বলছি সে এই দুনিয়ার সবথেকে বড় নিকৃষ্ট ব্যাক্তি।আমি কখনই পারবো না আমার হিয়াপাখিকে কষ্ট দিতে।”

“আমি বিশ্বাস করি না।”
বুকের বাম পাশে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বলে,”বিশ্বাস কর হিয়াপাখি।তোকে যতবার কষ্ট দিয়েছি ততবার আমার এই হৃদয়কেও ক্ষত করেছি।”
“কেনো কষ্ট দিলেন তাহলে?বলে দিলেই তো হতো যে আপনি আমার নষ্ট পুরুষ নন আপনি যে আমার শুদ্ধ পুরুষ।”
খাটের উপর শুধু মাথাটা এলিয়ে দিলো রুদ্র।পা দুটো ফ্লোরে মেলে রেখেছে।বুকের ওপর দুটো পাঞ্জাবির বোতাম খোলা।হিয়ার কাছে মোহনীয় লাগছে।উপরের দিকে তাকিয়ে রুদ্র বলে,”আমার হিয়াপাখি যে কোমল হৃদয়ের অংশীদারি।সে পারে না কোনো নিখুঁত অভিনয় করতে।শুধু পারে অভিমান নিয়ে দূরে সরে যেতে।”
“এটার জন্য আপনি দায়ী।একবার বললেই হতো যে এগুলো সব অভিনয়।কিন্তু আপনার ভালোবাসাটা ছিলো একদম মন থেকে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“বলতে তো চেয়েছিলাম অনেকবার।কিন্তু থমকে গেছি।আমার জ্বর আসলে তোর আতঙ্ক আমার কোনো ক্ষত হলে তোর এগিয়ে আসা এই সবকিছু দেখে তোকেও আমি সবকিছু বলতে চেয়েছিলাম।কিন্তু পারিনি কারণ ওই সোনালীর জন্য।তুই যখন আমাকে নিয়ে অধিক চিন্তিত হতে থাকিস তখন ঐ মহিলা তার পাপ কাজগুলোকে বাড়িয়ে দেওয়ার একটা আকাঙ্ক্ষা পেতো।তুই আমাতে মেতে থাকলে ওই মহিলা তার চাবিকাঠি পেয়ে যেতো।রাজ ভাইকে কখনও জারা কাবু করতে পারবে না।এটা আমি একদম শিওর ছিলাম।কারণ ওদের সম্পর্কে আমি সবই জানতে পারি।তবে আস্তে আস্তে।কিন্তু তুই আমার প্রেমে পড়েছিস এটা জানলে শত্রু দমনের আগেই আমাদের বিয়ে হতো।তাই আমি তোকে চাইলেও বলতে পারিনি আসল সত্যিটা।”
“সব বুঝলাম কিন্তু এটা বুঝিনি ওইদিন ওই মেয়েকে নিয়ে বারের রুমটাতে কি করছিলেন?আর আরেকদিন একটা মেয়েকে খুন করেছিলেন কেনো?”

“ওইদিন বারে গিয়েছিলাম একটা ক্রিমিনালকে ধরতে।ও ওর বেড পার্টনারকে নিয়ে ওই রুমটিতে ছিলো।এটার ইনফরমেশন আমরা পেয়ে যাই।তাই আমি আর আমার এসিস্ট্যান্ট জেসি মিলে চলে যাই বারে। ধরেও ফেলেছিলাম ক্রিমিনালদের।কিন্তু ওই বজ্জাত লোকটা জেসিকে ধাক্কা মেরে আমার কাছে ফেলে দেয়।জেসি ব্যালান্স হারিয়ে আমার কাছে ঝুঁকে আসে।কোমড়ে একটু ব্যাথা পায় জেসি।ওকে সোজা করতে গিয়েই তুই হাজির হলি। যা ভাবার তুই তোর মত ভেবে নিলি।”

হিয়ার মনে পড়ল সেদিন ওই রুমটিতে যাওয়ার আগে একজন পুরুষের সাথে ওর ধাক্কা লাগে। দুইয়ে দুইয়ে চার করে হিয়া বলে,”তারমানে যে লোকটার সাথে আমি ধাক্কা খাই সেই ক্রিমিনাল ছিলো?তাকে কি ধরতে পেরেছিলেন?”
“হ্যাঁ।কারণ চারপাশে আমাদের লোক ছিলো। আর আরেকদিন যে মেয়েকে আমি মেরে ফেলি ও ছিলো সোনালীর পার্সোনাল অ্যাসিসট্যান্ট।যে বাইরের সকল ইনফরমেশন সোনালীকে দিতো।যদিও আমার প্রেমে পড়েছিলো কিন্তু বেচারি আমার আসল সত্যি জেনে সোনালীকে জানাতে চায়।ইনফ্যাক্ট ওই মেয়েই নারীদের সাথে বন্ধুত্ব করে ওদের সোনালীর লোকের কাছে দিতে সাহায্য করত।ওকে ওইদিন খুন করার পারমিশন আমি পেয়েছিলাম।উপর মহল থেকে আমাকে পারমিশন না দিলে আমি এই কাজ করতে পারতাম না।”
হিয়ার কাছে সবকিছু এখন ক্লিয়ার।মাথা নিচু করে আছে এখন সে।রুদ্র হিয়াকে দেখে বলে,”লজ্জা পাচ্ছিস কেন হিয়াপাখি?”

রুদ্রের মুখের দিকে তাকাতেই হিয়ার চোখ যায় রুদ্রের বুকের দিকে।পাঞ্জাবির বোতাম খোলা তাই উন্মুক্ত বুকটা দেখা যাচ্ছে।সাদা বুকটার উপর কালো কালো কিছু দেখে হিয়া ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করে।রুদ্র বুঝতে পারল হিয়ার দৃষ্টি।বোতাম লাগাতে যাবে তখনই হিয়া ধরে ফেলে রুদ্রর হাত।রুদ্র হাত সরিয়ে নেয়।হিয়া ভালোভাবে রুদ্রের বুকটা উন্মুক্ত করতেই দেখতে পেলো সেখানে টেটো করা।গোটা গোটা অক্ষরে লেখা আছে “হিয়াপাখী”।হিয়া ওখানে হাত বোলালো।রুদ্র দেখছে তার চশমা পরা হিয়াপাখিকে।ছেড়ে দেওয়া চুলের সাথে চশমাটা হিয়ার মুখে সুন্দরভাবে ফুটিয়েছে।হিয়াকে দেখতে দেখতে রুদ্রের চোখ যায় হিয়ার গোলাপী ওষ্ঠের দিকে।ঠোঁটজোড়া একসাথে লেগে আছে। আর চশমা পরা চোখ জোড়া রুদ্রকে দেখছে।রুদ্র যেনো এবার হিয়ার মাঝে ডুব দিলো।হিয়ার ওষ্ঠের দিকে চোখ দিয়েই মনের আবেগে এগিয়ে আসতে থাকে।রুদ্রের এগিয়ে আসা বুঝতে পারে হিয়া।বুক থেকে চোখ সরিয়ে রুদ্রের মুখের দিকে তাকালো হিয়া।বুঝতে পারলো রুদ্র এখন একটা অঘটন ঘটাতে চায়।হিয়া চায় না এই অঘটন বিয়ের আগে ঘটুক।দুই সেন্টিমিটার দূরত্বে আসতেই হিয়া ওর নাকমুখ চেপে ধরে।ভ্রু কুঁচকে তাকায় রুদ্র।হিয়া বলে,”আপনার মুখ থেকে সিগারেটের গন্ধ রুদ্র ভাই।কি ছাই পাশ খান আপনি!ছিঃ।”

ম্লান হেসে দূরে সরে গেলো রুদ্র।তারপর বলে,”আমার থেকে এই সিগারেটের গন্ধ শোষণ করে নিতে হবে তোকে।”
“ছিঃ!সম্ভব না।”
“একবার তোর ওষ্ঠজোড়া শোষণ করতে দে হিয়াপাখি।দেখবি সিগারেট শোষণ করা ছেড়ে দিবো।”
“আপনি আসলেই একটা নষ্ট পুরুষ।”
বলেই দৌড়ে চলে যায় হিয়া। হো হো করে হেসে দেয় রুদ্র।দেখছে তার হিয়াপাখিকে দৌড়ে যেতে।
বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে দাড়ি চুলকাতে থাকে রাজ।মায়ার কানের কাছে এসে বলে,”বোনকে বিয়ের আগেই প্রেম করার সুযোগ করে দিয়ে ভুল করলাম নাকি!ব্যাটা রুদ্র তো বের হবার নামই নিচ্ছে না।”
অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে তাকালো মায়া।রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”বোনকে নিয়েও এমন বলতে হবে তোমাকে?মুখে কি লাগাম দিতে জানো না?”

“উচিত কথার ভাত নেই।আমার অবস্থাও তাই।আমি মরছি আমার বোনের কথা ভেবে তুমি আসো লাগাম লাগাতে।”
“বোনকে নিয়ে যখন এতই চিন্তা তাহলে পাঠালে কেনো?”
“বোনের দুঃখটা সহ্য হয় না তাই।”
“ওই দেখো তোমার বোন লাফাতে লাফাতে আসছে।”
রাজ তাকালো সিড়ির দিকে।হিয়াকে হাসিখুশি দেখে বলে,”ব্যাপার কি?গেলো কানতে কানতে আসলো হাসতে হাসতে।ব্যাটা রুদ্র আসলেই কিছু করে দিলো নাকি!”

রাজের কথা পাত্তা না দিয়ে মায়া চলে যায় হিয়ার কাছে।হিয়াকে নিয়ে দাদীর সামনে দাড়ালো মায়া। দাদীর উদ্দেশে বলে,”আমাদের রুদ্র আর হিয়া অনেক আগে থেকেই এক অপরকে ভালবাসে।আমি চাই ওদেরও বিয়েটা হয়ে যাক।”
“কিন্তু বড়ভাইকে আগে বিয়ে না দিয়ে ছোটভাইয়ের বিয়ের ব্যাপারে ভাবাটা মানায় না।আপাতত ওরা দূরে থাকুক আগে আদ্র ও সিয়ার বিয়ে হোক।তারপর ওদের বিয়ে নিয়ে কথা হবে।”
“দূরত্ব কখনও ভালোবাসাকে গভীর করে তুলতে পারে না।ভালোবাসায় যত দূরত্ব থাকে ভালোবাসা উপলব্ধি বারে কিন্তু এক সময় এই দূরত্বটাও অভ্যস্ত হয়ে যায়।তখন চাওয়া পাওয়ার আকাংক্ষা কমে আসে।”
কথাগুলো মায়া রাজের দিকে তাকিয়ে বলে।ফিচেল হাসে রাজ।মনে পড়ে যায় চট্টগ্রামের কথা।যেগুলো রাজ মায়ার উদ্দেশে বলেছিলো।মাহমুদ সরদার ওদের কাছে এসে হিয়ার মাথায় হাত রেখে বলেন,”তোর কি রুদ্রকে বিয়ে করতে আপত্তি আছে মা?”

হিয়া মাথা নাড়িয়ে না বুঝিয়ে দেয়।রুদ্র তখন সিড়ি দিয়ে নামতে থাকে।মাহমুদ সরদার এবার দাদীর দিকে তাকিয়ে বলেন,”আপনি চাইলে আমরা একসাথে এদের ভাই বোনের বিয়েটা দিতে পারি।যদি আপনাদের আপত্তি না থাকে।”
আদ্র সম্মতি দিলো মাহমুদ সরদারের কথাতে।বলে,”আমার কোনো আপত্তি নেই আংকেল।আমার ভাই কম কষ্ট সহ্য করেনি।এখন ওর সুখে থাকার সময় এসেছে।”

দাদার ইশারা পেয়ে দাদী নিজেও এবার শান্ত হলেন।রাজি হলেন এই বিয়েতে।মুখে হাসি ফুটে উঠলো সবার।মিলি তাকিয়ে আছে রুদ্রের দিকে।এতগুলো বছর যাকে আপন ভাই ভাবতো সে আসলে তার ভাই না।এগুলো ভাবতেই কান্না পায় মিলির।মৌকে দেখেও কান্না পায় তার।সবাইকে দেখে মনে মনে লজ্জা পায় এখনও।এই পরিবার এখন সুখ পেলেও সে এই পরিবারের এমন এক সদস্য যার মা বাবা এই পরিবারের সুখ কেড়ে নিয়েছিলো।মোহন সরদার ও সোনালী এতকিছু না ঘটালে আজ এই সরদার বাড়ি আরো বেশি আনন্দে মেতে উঠতো।মিলির চোখ থেকে পানি পড়তেই মিলির দিকে চোখ যায় রুদ্রের।বোন বলে অনেক হাসি মজা করেছে।বিদেশ থেকে এই আনো ওই আনো বলে কত কিছু বলতো রুদ্রকে।

ইনফ্যাক্ট তারেকের পিছনে লেগে থাকতে তো রুদ্র নিজেই বলেছিলো।মিলির ভালবাসা উপলব্ধি করে রুদ্র বলেছিলো,”তারেককে পেতে হলে ওর মনের মত হয়ে চল।দেখবি ও তোকে ভালোবাসবে।”
তাই তো মিলি এত চেষ্টা করে যায়।রুদ্র এসে মিলির পাশে দাঁড়ালো।মিলির মাথায় হাত রেখে বলে,”আমার বোনটা দেখি এখন একা একা দুঃখ পেতে শিখেছে।ভাই পর বলে এখন আর ভাইয়ের সুখে সামিল হতে ইচ্ছে করে না?”
অশ্রুকণা যেনো আরো বৃদ্ধি পেলো।পৃথিবীতে জন্ম নেওয়ার পর আগে বাবা মায়ের সাথে সন্তানের ভালোবাসা সৃষ্টি হয় তারপর ভাই বোনের।এই ভালোবাসা কি ভোলা যায়।মিলির আপন ভাই না হলেও জন্মের পর থেকে তো রুদ্রকেই ভাইয়া বলে চিনে এসেছে।রুদ্রকে দেখে মিলি বলে,”আমাকে দেখলে তোমার খারাপ লাগছে না ভাইয়া?আমি যে তোমার বাবা মায়ের খুনীর সন্তান।”

“ধুর বোকা মেয়ে।তোর মা যাই করুক না কেনো তুই তো নিষ্পাপ।তোর মধ্যে ওদের মতো পাপে ভরা ছিল না।তুই আমার বোন ছিলি আছিস আর থাকবি।”
মায়া এসে মিলিকে একপাশ জড়িয়ে বলে,”অন্যায় যে করে শাস্তি সে পায়।যে অন্যায় করে না সে কখনই শাস্তির প্রাপ্য না।আমরা সবাই তোমাকে ভালোবাসি মিলি।তোমার বেড়ে ওঠা ছিলো ভিন্ন।যেখানে সুশিক্ষা ছিলো না।কিন্তু তারপরও তুমি কাউকে ভালোবেসে তার জন্য নিজেকে বদলে দিতে পেরেছো।এটাই বা কয়জন পারে?”
শাহানা পারভীন এসে মিলিকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আগে আমার এক মেয়ে ছিল।মৌ আসার পর আমার দুই মেয়ে।আর তোমাকে কাছে পাওয়ার পর এখন আমার তিন মেয়ে হলো।এক মাকে হারিয়েছো তো কি হয়েছে আরেক মা আছে তো।”

খুশিতে মাথা নারোলো মিলি।পাশ থেকে কান্নার শব্দ আসলো।মৌয়ের কোলে থাকা প্রলয় কান্না করছে।এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলো।এখন জেগে উঠেছে আর কান্না করে দিলো।রাজ এসে প্রলয়কে কোলে নিলো।কান্না করছে প্রলয়।নাক মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে বাচ্চাটার।রাজ তার দিকে তাকিয়ে বলে,”মাশাআল্লাহ।বাচ্চাটা একদম রাজপুত্রের মত দেখতে হয়েছে।”
বলেই মৌয়ের কোলে দিয়ে দিলো প্রলয়কে।বাড়ির সবাই এখন মিষ্টি মুখ করতে ব্যাস্ত।একসাথে দুইটা আনন্দের মিষ্টি। মায়ারাজের সুখী জীবনে জুনিয়র আসতে চলেছে আর সিয়া হিয়া দুই বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে।

রাতে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে মায়া।নাইট ড্রেস পরে এসেছে মাত্র।রাজ সোফায় বসে কিছু ভাবছে।মায়া আয়নার সামনে দাড়িয়ে হাত পায়ে লোশন লাগিয়ে বলে,”এখন আবার কি হলো তোমার?”
“ভাবছি বাবুটা আরেকটু দেরিতে আসলে ভালো হতো।”
“এই না তুমি বাচ্চা বাচ্চা করছিলে!এখন এসেছে বলে আফসোস কেনো?”
“আরে আমার বাথরুম বিলাস তো হচ্ছে না।”
হুংকার দিয়ে মায়া বলে,”মন্ত্রী মশাই।”
“ধুর বউ আমার কষ্ট বোঝেইনা।এই যে আমি বউয়ের ভালোবাসা না পেয়ে না পেয়ে শুকিয়ে যাচ্ছি।এটা কি একবারও দেখেছো?এতদিন বাইরের শত্রু ছিলো আমাদের মাঝে দেওয়াল হয়ে।তাও একটু চুরি করে কাছে পেয়েছি তোমাকে।কিন্তু এখন শত্রু না হয়েও দেওয়াল হয়ে আছে আমাদের এই চুরির ফল।আমার বংশধর হয়ে এখন আমার থেকেই আমার বউকে পুরোপুরি আলাদা রাখছে।ভাবা যায় এটা!”

“তুমি তোমার সন্তানের প্রতি জেলাস মন্ত্রী মশাই।”
“বউকে যে বান্দা ঠিক মত কাছে পায় না সে বোঝে এই কষ্ট কাকে বলে।”
মায়া এবার রাজের কাছে আসে।রাজের বুকে হাত রেখে বলে,”আর তো মাত্র কয়েক মাস।এই ধরে নেও আট মাস মত।এরপর তো সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“আচ্ছা এমন কোনো ঔষধ বা প্রযুক্তি নেই জাতে করে বাচ্চা এক দুই মাসেই বেড়ে ডেলিভারি হয়ে আসে।তাহলে তো বাচ্চার মাকে তাড়াতাড়ি ভালোবাসতে পারবো।”
মায়া কি বলবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।শুধু দেখে যাচ্ছে রাজের পাগলামি।রাজ কোনো উত্তর না পেয়ে বলে,”কি হলো মায়াবতী?কিছু বলো।”
“এই বুদ্ধি নিয়ে তুমি মন্ত্রী হয়েছো!জনগণ কি আদৌ সুস্থ মস্তিষ্কে তোমাকে ভোট দিয়ে মন্ত্রী বানিয়েছিলো নাকি মাতাল হয়ে?”

“জনগণ আমাকে ভালোবেসে ভোট দিয়েছে।কিন্তু বেচারা আমি আমার বউয়ের ভালোবাসা থেকে দূরে।এখন দিন গুনতে হবে।শুধু কি দিন!এখন থেকে রাতও গুনতে হবে।সাথে করে অপেক্ষায় থাকবে আমার বাথটাব।”
“লাগামহীন মন্ত্রী মশাই।”
“আর কোনো কথা না।এখন আমার বাচ্চাকে প্রপার রেস্ট দিতে হবে।ওকে এখন ঘুমোতে হবে মায়াবতী।তাই তুমিও ঘুমাবে।”

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৬২

বলেই মায়াকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো রাজ।মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।মনে মনে ভাবছে ভিন্ন কিছু।চোখ বন্ধ করে আছে মায়া।চোখ বন্ধ রেখেই বলে,”আমি জানি মন্ত্রী মশাই।তুমি অন্যকিছু নিয়ে ভাবছো।তবে তুমি চিন্তা করো না।এই মায়াবতী তার মন্ত্রী মশাই ও নিজেকে সুরক্ষা করবে।এবার যা কিছু হবে তোমার এই মায়াবতীর ইচ্ছাতেই হবে।আমার মন্ত্রী মশাইয়ের মায়াবতীর ইচ্ছা পূরণ হবে।”

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৬৪