মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ১৩

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ১৩
ইশরাত জাহান

জেসি রকির কলার ধরে নিয়ে সবার সামনে এসে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।বিচারকের সামনে নিজের আইডি কার্ড দেখিয়ে দিল।বিচারক কার্ড ভালো করে পর্যবেক্ষক করে জেসির আইডেন্টিটি প্রকাশ না করে বলে,”কি কি প্রমাণ এনেছেন এগুলো পেশ করুন।”
জেসি একটা মেমোরি দিয়ে বলে,”আজকে বাজারে চাঁদাবাজির জন্য মারপিট শুরু হয়।বিশেষ করে দীর্ঘ দুইমাস ধরেই এমন চলছে।মন্ত্রী শাহমীর রাজ তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ব্যাস্ত ছিলো।কিন্তু যখনই খোঁজ পেয়েছিলেন যে তার এলাকাতেই তার পিঠপিছে কেউ ছুরি চালাতে ব্যাস্ত তখনই উনি আমার সাথে যোগাযোগ করেন।এই কয়দিন ইনভেস্টিগেশন চালাচ্ছিলাম।তবে আমরা চেয়েছিলাম ওনাকে সোজা অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাব।এদিকে হুট করেই শুনতে পেলাম স্যারের নামে মিথ্যা মামলা তাই আমরা সোজা আসামিকে এখানে নিয়ে আসি।”

সবার সামনে ভিডিও ওপেন করা হলো।ভিডিওতে দেখতে পেলো রকি সবার থেকে টাকা চাচ্ছে।এদিকে রকির সাথে আছে আরশাদের লোকজন।সবাই শাহমীর রাজের নাম করে টাকা চাচ্ছে।এটা দেখে আরশাদ বলে,”এখানে তো তেমন কিছুই প্রমাণ হয়না বরং এখানে স্পষ্ট যে শাহমীর রাজ সব কিছু করায়।”
জেসি মৃদু হেসে আরশাদের দিকে সন্দিহান নজরে তাকিয়ে বলে,”আনফর্চুনেটলি এখানে শাহমীর রাজের দলের অতি নগণ্য এক লোকের সাথে বাকি সদস্য কিন্তু আপনার দলের।আর আপনার দলের সবাই বলছে শাহমীর রাজের নাম।এটা একটু সাজানো গোছানো প্ল্যান হয়ে গেলো না?”
আরশাদ শুকনো ঢোক গিলে বলে,”মানে কি এগুলোর?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“মানে এই যে শাহমীর রাজ যদি চাঁদাবাজি করতেন তাহলে এখানে তার একাধিক লোক থাকতো।আমরা এর আগের অনেক ভিডিও দেখেছি।যেখানে আপনার দল আর শাহমীর রাজের দলের লোকের মধ্যে মারামারি দেখা দিয়েছে।সবদিক থেকে তদন্ত করেই আমি জানতে পারলাম আপনি এবং আপনার লোকজন মিলে শাহমীর রাজের দলের থেকে শুধু রকিকে নিজের দলের করেছেন।আর শাহমীর রাজের সাথে এমন করাটা অস্বাভাবিক না।আপনার কাজই হলো আপনার বিরোধী দলকে হারানো।এই দিক থেকে আপনি আপনার বেস্টটাই করছেন মিস্টার আরশাদ।”
জেসি আরো কিছু ভিডিও দেখালো।যখন রকি রাজের দলের ছিলো তখনকার ভিডিও।রাজের দলের কেউই চাঁদাবাজি করেনি।আবার হয়তো চোখের আড়ালের দুই একজন করেছে।কাউকে তো বিশ্বাস করা যায়না।আবার এতজন খুঁটিয়ে দেখাও হয়না।তাই তারা সামনেও আসতে পারেনা।রকির ডানা একটু বেশি গজিয়েছিল।যার কারণে সে পুরোপুরি ফেঁসে গেলো।কথায় আছে,’বেশি বাড় বেড়োনা, ঝড়ে পড়ে যাবে।’ রকির সাথে এটাই হলো।
সবার সকল সিদ্ধান্ত শুনে রকিকে অ্যারেস্ট হলো।এবার মুখ খুলল মায়া।স্বাভাবিক মুখ করে বলে,”আমার গার্মেন্টসের সাধারণ মেয়ে কর্মীগুলো কোথায়?আমি তাদেরকে সুরক্ষিত দেখতে চাই।”

জেসি তুড়ি বাজাতেই তিনটি মেয়ে চলে আসে।রাজ এতক্ষণ মায়ার পাশেই ছিল।সবাই দাড়িয়েই ছিল।জেসি এসেই অতি দ্রুত সবকিছু সমাধান করে দেয়।রাজ মায়ার কানের কাছে মুখ রেখে বলে,”চু চু চু কতটা ব্যাকুল হয়ে আছি আমি আমার নেক্সট বাসরের জন্য দেখেছো মায়াবতী।তোমার সব অবজেকশন অতি দ্রুতই মিটিয়ে দিলাম।ওনলি ফর মাই বাথরুম বিলাস।”
বলেই ঠোঁটটা উচু করে চুম্বন দেখিয়ে দিলো।মায়া চোখ রাঙিয়ে মেয়েগুলোর দিকে তাকালো।মনে মনে ভাবছে,”এদেরকে কোথায় পেলো?”
মায়া ওদের দিকে এগোতে নিবে রাজ হাত ধরে আটকিয়ে বলে,”ওদিকে গেলেই যে স্বামীর নামে করা মিথ্যা মামলা ধরা পড়ে যাবে মায়াবতী।”

মায়া বিরক্তিতে তাকালো রাজের দিকে।ফিসফিস করে বলে,”কোথায় পেয়েছেন এদেরকে?”
রাজ ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,”আমি তো পাইনি।পেয়েছে তো মিস জেসি।তাকেই জিজ্ঞাসা করো।”
মেয়ে তিনজন এসে দাড়ালো সবার সামনে।বয়ান দিলো রাজের পক্ষে।সবকিছু শুনে আরশাদকে অপরাধী বানানো হলো।শাস্তিস্বরূপ তাকেও অ্যারেস্ট করা হচ্ছে।রাজ আফসোসের সাথে বলে,”নিজের চালে নিজেই ফেঁসে গেলেন।”
আরশাদ অগ্নিদৃষ্টি দিলো শুধু।সে তো কিছুদিন পরেই বের হবে।তার ক্ষমতার জোর তাকে বের করে দিবে।এটা সবাই খুব ভালো করেই জানে।তাই তো চুপ করে চলে গেলো।বিচারক এবার মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”আপনার নিজের স্বামীর নামে মামলা করেছিলেন আপনি।আপনার কি খারাপ লাগেনি?”

মায়া সোজাসাপ্টা উত্তর দেয়,”আসামি যে তাকে শাস্তি পেতে হবে।হোক সে আমার স্বামী বা অন্য কেউ।”
মায়ার এমন শক্তপোক্ত কথা শুনে সবাই হাততালি দিলো।একজন তো বলেই দিলো,”শাহমীর রাজ যেমন বিচক্ষণ মানুষ তার বউ তো তেমনই হবে।একদম মানিয়েছে দুজনকে।”
মায়া আর রাজের কানে কথাটা গেলো।রাজ দুষ্টু হেসে বলে,”দেখলে তো মায়াবতী।তোমার আমার মিলন দুনিয়া করেছে গ্রহণ।”
“তবে আমি করিনি গ্রহণ।”
“বিয়ে তো হয়েই গেছে এখন আর গ্রহণ করা বা না করা দিয়ে কি হবে?সোজা তো বাবা মা ডাক শোনার প্রস্তুতি নিতে হবে।”

“আপনার কথাগুলো বাংলা সিনেমার ভিলেনদের মতো।”
“বাংলা সিনেমার মেঙ্কা হিরো হয়ে কে জীবনটা বরবাদ করবে?বউয়ের আঁচলের নিচে থেকে নিজেকে ভার্জিন রেখে বউয়ের সতীত্ব বজায় রাখা হলো বাংলা সিনেমার নায়কদের কাজ।আমি তো মন্ত্রী।বউকে নিয়ে চলে যাব সোজা চন্দ্র,রৌদ্র,বৃষ্টি,তন্দ্রা এসবে না ডাইরেক্ট বাথরুম বিলাসে।”
“শাট আপ।”
বলেই মায়া চলে যায়।বাকি মেয়েদের বাবা মা ছিল।তারাই ওদেরকে নিয়ে গেলো।মায়া গাড়িতে উঠে সোজা চলে গেলো নিজের কোম্পানিতে।রাজ গেলো আরেকটা সভায়।

গাড়ি থামতেই সিটের সামনে থেকে বন্দুক নিয়ে বাইরে বের হয় মায়া।নিজের কোম্পানির সিক্রেট রুমে আসলো।এখানে দুজন যুবককে বেধে রাখা আছে।এরাই তো মেয়েগুলোকে কিডন্যাপ করতে চেয়েছিল।মায়ার পিছু পিছু এসেছে তারেক।তারেক একটু অবাক হলো।সিক্রেট রুমে এখন কেন আসছে।রুমের দরজা খুলতেই তারেক অবাক।দুজন যুবককে দেখতে পেলো সে।তাদের হাত পা বেঁধে রাখা।তারেক ওদেরকে দেখেও চুপ করে আছে।মায়া ওর গার্ডদের চোখের ইশারা করতেই দুজন গার্ড ওই দুজন যুবকের মুখে গরম পানি ছুঁড়ে মারল।আগুন গরম পানির তেজে ঘুমটা ভাঙার সাথে সাথেই কাতরাচ্ছে যুবক দুজন।অসহনীয় যন্ত্রণা হচ্ছে পুরো মুখজুড়ে।মায়ার বাকি দুজন গার্ড হাতে লাঠির সাইজে ছোট রড নিয়ে আসে।মায়া বেধে রাখা যুবকদের দিকে তাকিয়ে বলে,”রে*প করেছিলি না মেয়েদেরকে?বিনা শাস্তিতে বুক ফুলিয়ে অনেক ঘুরেছিস।এবার তোদের শান্তির দিন শেষ।”

বলেই লোক দুজনকে ইশারা করলো।ওরা এসেই রড দিয়ে করাঘাত করতে লাগলো।এতটাই জোরে আঘাত করছে যে যুবক দুজন চিৎকার করছে।আফসোস এই চিৎকার এই ঘরের বাইরে পৌঁছাবে না।কারণ পুরো রুমটি সাউন্ডপ্রুফ।মায়া ওর হাত উচু করে থামিয়ে দিলো সবাইকে।সবাই থেমে গেলো।মায়া তার হাতের বন্দুক তাক করে যুবক দুজনের দিকে।যুবক দুজন ছটফট করছে।মায়া ওদের দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে বলে,”ধ*র্ষ*কদের শাস্তি আইন দেয় কিন্তু যেই ধ*র্ষ*ক আইনকে কিনে নিজেকে শান্তিতে রাখে তাকে এই মায়া শাস্তি দেয়।”

বলেই বন্ধুক চালিয়ে দিলো।সোজা যুবক দুজনের মস্তিষ্ক বরাবর।ওখানেই দুজন যুবক কাতরাতে কাতরাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলো।মায়া গুলিটা হাতে নিয়ে নাড়াতে নাড়াতে বাইরে বের হলো।গাড়িতে উঠতেই তারেক বলে,”আপনি তো এদের ব্যাপারে জানান নি আমাকে।”
“তুমি মেয়েদের দিকটা সামলাচ্ছিলে তাই।তুমি যখন মেয়েদের খোঁজ পাও ঠিক তার পিছন দিক দিয়েই ওরা পালায়।আমি তখনই ওদেরকে ধরে নেই।”
“আপনি ওই সময় ছিলেন ওখানে?”
মায়া রহস্যের হাসি দিয়ে বলে,”কোনো কাজ এই মায়া অপরিপক্ক রাখে না।নিজের হাতে ওদেরকে শাস্তি দিবো বলেই তো পিছনে ছিলাম।ভাগ্যিস ছিলাম তাই তো পালানোর সময় ওদেরকে ধরতে পেরেছিলাম।”
“ওদেরকে এভাবে মারা কি ঠিক হলো?”
“তুমি ওদের হিস্ট্রি চেক করেছো তারেক?”

তারেক দুইদিকে মাথা নাড়ালো।মায়া গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বলে,”প্রথমে যে যুবককে গুলি করলাম ওর নাম হিমেল।লাস্ট পাঁচ বছর ধরে ওর নামে তিনটি রে*প কেস এসেছে।জেলেও গেছে। পরে টাকার খেলায় জিতে আবার বাইরে আরামে ঘুরে বেড়াচ্ছে।দ্বিতীয় যুবকটি হলো লিখন।নিজের খালাতো বোনের সাথে পরকীয়া করে তাকে শেষে খুন করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়।সমস্ত কিছুর ভিত্তির উপর তারও জেল হয়।প্রমাণ না থাকায় শুধু কয়েক বছরের শাস্তি আর কিছু টাকা মঞ্জুর করা।এগুলো দিয়েই ওরা ছাড়া পায়।জেল থেকে বের হয়ে এসে আবারও অনৈতিক কাজে যোগ।এদেরকে এদের পরিবার ঠিক পথ না দেখিয়ে উল্টো দেখিয়ে দিচ্ছে সমাজ নষ্টের পথ।উষ্কিয়ে দিচ্ছে টাকার কাছে।এখন তুমিই বলো আমি কি করে এতগুলো অন্যায় দেখেও ওদেরকে ছেড়ে দেই?আজ আমি আবার ওদেরকে ছেড়ে দিবো ওরা আবারও অন্যায় করবে।জেনে বুঝে অন্যায়কারীকে ছেড়ে দেওয়া কি আমার উচিত হবে?”

তারেক মাথাটা নাড়িয়ে না বুঝিয়ে দিলো।গাড়ি চালানোতে মনোযোগী হলো এখন সে।
রাজ মিটিং শেষ করে বাসায় চলে এসেছে।মাহমুদ সরদার আর মোহন সরদার বসে আছেন সোফায়।মোহন সরদার রাজকে দেখে বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বলে,”বড় ভালোবাসা দেখিয়ে বিয়ে করেছিলে না?বউ কেমন ডোজ দিলো?”
“মাস দুই কি এক গেলেই এই ডোজের ফল পাবে।এত তাড়াতাড়ি ফল পাওয়া যায়না কাকা।”
মোহন সরদার চোখ রাঙালো।এই ছেলে হুটহাট বেফাঁস কথা বলে।চিল্লিয়ে বলে,”দিন দিন নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছো তুমি।বিদেশ থেকে এগুলো শিখেছো?”

“এগুলো দেশেও শেখা যায়।শুকরিয়া অন্তত তোমার আর তোমার ছেলের মত আমি নই।”
“কি বোঝাতে চাও তুমি নিজেকে দিয়ে?”
“হতে পারি আমি বেফাঁস বানীর অধিকারী কিন্তু দিনশেষে আমি আমার একমাত্র বউয়ের যোগ্য স্বামী।যে নিজের বউ ব্যতীত অন্য নারীতে আসক্ত না।”
“তোমার বউ তো তোমাকে বাইন্ডিং করছে।”
“বউয়ের অভিমান হয়েছে খুব।এটা যেদিন ভেঙ্গে যাবে সেদিন আমিও এক সুখী সংসার গড়ে তুলতে পারব।এটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।”

মাহমুদ সরদার খুব ভালো করেই জানে রাজ ফল বলতে কিসের কথা বলেছে।মায়া যে মোহন সরদার আর সোনালীকে টার্গেট করে নাস্তানাবুদ অবস্থা করে দিবে এটার দিক অনুসরণ করেই রাজ কথাটি বলেছিলো।এখন যার মস্তিষ্ক যেদিকে যায় সে সেই ব্যাপারে কথা বলতে চায়।অবশ্য ভাইয়েরও বা দোষ কিসের?তার ছেলেটাও তো মাঝে মাঝে এমন এমন কথা বলে যে বড় হয়েও তিনি মনে মনে নাউজুবিল্লাহ পড়ে।ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
হিয়া আর সিয়া মিলে আজকে সন্ধ্যায় পিঠা বানিয়েছে।পিঠাগুলো খুব সুন্দর না হলেও মোটামুটি স্বাদের।ভাইয়ের আজ মুখ কালো হতে হতে হয়নি।খুশিতে দুই বোন মিলে ভাইয়ের প্রিয় সাজের পিঠা বানিয়েছে।রাজ সোফায় বসা অবস্থায় বলে,”বোনেরা কোথায়?তুমি যে বলেছিলে ওরা চিন্তায় কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে।”
“ভাইয়ের বিপদ শেষ কান্নাও শেষ।এখন পিঠা বানাচ্ছে।”
রুদ্র আর আহান সরদার এসেছে এখানে।রুদ্র রাজের পাশে বসে বলে,”গুড নিউজ আছে।ভাই কল করেছিলো।”
“কি?”

“দুইটা সেম্পোল টেস্ট করেছে।ম্যাচ করেছে দুজনের।এখন শুধু তাকে দেশে নিয়ে আসবে ভাই।”
রাজ মৃদু হাসলো।তারপর সোনালীর দিকে তাকিয়ে বলে,”শত্রুই এবার শত্রুর কাজে লাগবে।”
“সতিনকাটা তবে এটাকেই বলে।”

বলেই হেসে দেয় দুজনে।কেউ কিছু বুঝলো না কিন্তু মাথাও ঘামালো না।কারণ এরা ভাইয়েরা সব এমন।এক জায়গায় সবাই হলেই হাসাহাসি আড্ডা।বিশেষ করে রাজ আর রুদ্র যেনো একটু বেশি।আদ্র একটু গম্ভীর।ও এত বেশি কথা বলেনা।সিয়া আর হিয়া পিঠা নিয়ে এলো।দুধের মধ্যে গোল আকারে সাজের বানানো ভেজে রাখা পিঠা।পারদর্শীদের মত অত সুন্দর ডিজাইন না হলেও পিঠাগুলো নতুন হাতের কাজ অনুসারে সুন্দর হয়েছে।বিশেষ করে রাজের দুই বোন বানিয়েছে।মালিনীকে তেমন পছন্দ না হলেও সিয়া আর হিয়া রাজের কলিজার টুকরা।দুই বোনকে আগলে রেখেছে সবসময়।মাহমুদ সরদার এই দিক দিয়ে ছেলেকে নিয়ে গর্ববোধ করেন।সাথে দুই মেয়েকে নিয়েও।সিয়া আর হিয়া পিরিচে করে পিঠা উঠাচ্ছে আর রাজ এটা দেখে বলে,”আমার বউটা কোথায়?তাকে কি তোরা কেউ দেখেছিস?”

“ভাবী তো এখনও আসেনি।”
ভ্রুকুটি করে রাজ বলে,”এত রাত হয়ে গেলো এখনও আসেনি।”
“কোথায় এত রাত?আসবে হয়ত।এত উতলা হইয়ো না।”
মাহমুদ সরদারের কথা শুনে রুদ্র বলে,”তোমার ছেলে একদিনেই বউকে চোখে হারাচ্ছে বড় বাবা।”
রাজ দুষ্টু হেসে বলে,”আব্বে ব্যাটা রুদ্র বউ হলো এমন এক ব্যক্তি যাকে কাছে পেলেও চিন্তা আবার কাছে না পেলেও চিন্তা।”
“এমন ভাবে বলছো যেনো আমাদের কারো বউ নেই।শুধু তোমার একারই বউ জুটেছে।”
“তোমরা তো জেনারেশন ভিত্তিক দুটো করে বিয়ে করেছো।প্রথমে আমার দাদা তারপর আমার বাবা এরপর আমার শ না মানে কাকা।আমি তো একটাই বিয়ে করেছি।তোমরা যদি তোমাদের দুই নাম্বার বউ নিয়ে দিনশেষে সন্তুষ্ট না থাকো তার জন্য কি আমি আমার একটা বউকে নিয়ে সন্তুষ্ট না?”

মাহমুদ সরদার গলা খাকারি দিলেন।এই ছেলের সামনে কোনো কথা বলে শান্তি নেই।তার দুইটা বিয়ের জন্য মনে হয় মৃত্যু পর্যন্ত কথা শুনবে।বিশেষ করে তার ভাইয়ের অপকর্মের জন্য।মাঝে মাঝে রাজের কথার মাঝে প্রকাশ পায়,অপকর্ম করেছে তার ভাই কিন্তু দোষের ভাগীদার সেও।কেনো সে শাহানা পারভিনের হয়ে লড়াই করেনি।এদিকে তিনি কিছুতেই বুঝাতে পারে না তার সাধ্য অনুসারে চেষ্টা করত।এখন নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অধিকার দেখাতে আসলে তো তাকে চুপ থাকতেই হবে।তাই তো সে না পেরে অনেক সময় চুপ থাকতেন।মাহমুদ সরদারের ভাবনার ছেদ ঘটলো গাড়ির আওয়াজে।রাজ এটা শুনেই বলে,”এসেগেছে আমার এনাগোন্ডা বউ।হলরুমে পা রেখেই একটা তুফান বাদিয়ে দিবে।”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ১২

“এই না তুমি তোমার বউকে চোখে হারাচ্ছিলে এখন আবার ভয় পাচ্ছো?”
“ওই যে বললাম বউ মানুষটাই এমন যে থাকলেও জ্বালা না থাকলেও জ্বালা।”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ১৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here