মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ১৭
ইশরাত জাহান
রাজ ফ্রেশ হয়ে এসে মায়ার কাছে বসে।ফোন করে সার্ভেন্টকে খাবার আনতে বলে।সার্ভেন্ট আসতে দেরি হলেও ঘরজুড়ে হাজির হলো সরদার বাড়ির সকল সদস্য।মাহমুদ সরদার,সিয়া,হিয়া এমন মালিনী আর সোনালীও।রাজ ওদেরকে দেখে বলে,”তোমরা এভাবে সাত সকালে আমার ঘরে হামলা করেছো কেন?আর বাবা তোমাকে তো আমি কালকেই বলে দিলাম যে সকালবেলা ছেলের ঘরের সামনে আসবে না।তবুও আসলে?”
“সার্ভেন্টকে উপরে খাবার আনতে বললে কেন?মায়া মায়ের কি কিছু হয়েছে?”
“কিছু তো আমারও হতে পারত।কই আমাকে নিয়ে তো কিছুই জিজ্ঞাসা করলে না।”
“অপদার্থকে জলজ্যান্ত লাগামহীন কথাবার্তায় দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে সে সুস্থ।”
রাজ কিছু বলার আগেই সোনালী মায়ার কাছে চলে আসে।মায়ার কপালে হাত রেখে দেখে জ্বর।মায়া হাতটা থেকে কপাল সড়িয়ে নেয়।বিরক্ত লাগছে তার এখন।সিয়া এসে মায়ার কপালে হাত দেখে দেখলো অতঃপর থার্মোমিটার এনে জ্বর মাপলো।103° জ্বর এসেছে।যেটা দেখে রাজ বলে,”আজকে আমি সমাবেশে যাবো না।”
মাহমুদ সরদার বাড়ির সবার দিকে একপলক দেখে নিয়ে বলেন,”বাসার লোকজন কি তোমার নজরে আসেনা?তোমার বউয়ের জ্বর এসেছে।সেবা করার লোক আছে।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“বলা তো যায়না।বিশেষ করে বউয়ের ক্ষেত্রে আমি তোমাকে তো বিশ্বাসই করতে পারি না।দেখা গেলো সমাবেশ থেকে এসে দেখলাম আমার বউয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই এই বাড়িতে।”
সোনালী রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি একদম চিন্তা করবে না।তোমার বউকে আমরা কিছু হতে দিবো না।আমরা সবাই আছি তো।সুস্থ হয়ে যাবে আমাদের বউমা।”
রাজ বিড়বিড় করে বলে,”সতীনের মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বউমা বলার মত দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য আল্লাহ আমাকেই দিলো!জীবন যুদ্ধে বউকে নিয়ে কত নাটক যে দেখতে হবে মন্ত্রী হয়ে এটা আমি নিজেও জানি না।হতাশ জীবন!”
সোনালী কিছুই বুঝলো না।বুঝবে তো পরে আগে তো তাকে শুনতে হবে।তাই ভ্রু কুঁচকে বলে,”কিছু বললে তুমি?”
রাজ বিছানা থেকে উঠে দাড়িয়ে বলে,”আমার বউয়ের পাশ থেকে উঠে যান।”
“কেন?”
“কারণ ওর এলার্জি আছে।”
“কিন্তু আমি তো এলার্জির কিছু আনিনি।”
“আস্ত আপনিটাই তো আমার বউয়ের জন্য এলার্জি।”
বিড়বিড় করে বলে রাজ।এবার একটু জোরে বলে,”জ্বরের সময় ওর আশেপাশে লোকজন থাকা পছন্দ না।”
মাহমুদ সরদার পিছন থেকে খোচা মেরে বলেন,”এতক্ষণ তো তুমি ছিলে তোমার বউয়ের পাশে।”
“আমি তো আমার বউয়ের স্বামী তাই আমি থাকতে পারি।বাকিরা আসামি তাই পারবে না।এখন আমার ঘরের আবর্জনা কমিয়ে চলে যাও।আবর্জনার কারণে এলার্জি বাড়ে।আমরা ব্রেকফাস্ট করে নেই।”
মাহমুদ সরদার কোনো কথা না বলে মায়ার কাছে এসে মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,”কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে কল দিবে।”
বলেই তিনি চলে যান।সবাই একই আশ্বাস দিয়ে চলে গেলো।মায়া সবার কথাতে শুধু মুচকি হাসলো।সার্ভেন্ট খাবার নিয়ে আসলো।ছোট্ট টেবিলের উপর খাবার রাখা হলো।সার্ভেন্ট চলে গেলো।রাজ নিজের মত খাবারগুলো প্লেটে সাজাতে থাকে।মায়ার সামনে প্লেট ধরতেই মায়া নাক সিটকে বলে,”আমি খাবো না।”
রাজ বুঝতে পারছে জ্বরের জন্য খাওয়ার রুচি নেই।তাই সে তার ঠোঁট মায়ার ঠোঁটের সাথে মিলিয়ে আবার ছেড়ে দিয়ে বলে,”এটা কেমন ছিল?”
মায়া চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে। জ্বরের জন্য মেয়েটাকে কিছুটা রোগা রোগা লাগছে।মায়া রাগন্বিত কণ্ঠে বলে,”এভাবে হুটহাট চুমু খান কেন?”
“চুমুতে পুষ্টি থাকে।যেটা খেলে গায়ে শক্তি বাড়ে।তাই আমি হুটহাট চুমু খাই।শুধু আমি একা না তোমাকেও খাওয়াই।”
“আপনি একজন বিরক্তিকর মানুষ।”
“একটা জিনিষ খেয়াল করলাম।”
“কি?”
“খাবারের সময় যেভাবে নাক সিটকালে চুমু খাওয়ার সময় কিন্তু ওভাবে নাক সিটকালে না।”
“আপনার সমাবেশের সময় হয়ে আসছে।”
“আগে হা করো তারপর।”
“আপনি আসলেই এখন লুচ্চু আর লাগামহীন।”
“এই ওয়েট ওয়েট আমি তো হা করতে বলেছি খাবার দিবো তাই।তুমি লুচ্চু বললে কেন?”
“কিছু না।”
“আচ্ছা এবার খাবারটা শেষ করো।”
“বললাম তো খাওয়ার ইচ্ছা নেই।”
“চুমু খাবে?”
“কিঃ!”
“খাবার তো খেতে চাও না।তাই বললাম চুমু খাবে?শরীরে একটু তো শক্তির দরকার।”
“চুমু খেলে শরীরে শক্তি বাড়ে এটা কার থেকে জেনেছেন?”
“নিজের জীবন থেকে।এই যে আমি তোমার সাথে চুমু খাই আর শক্তি পাই।আসো তোমাকে আরেকটু শক্তি দেই।
“একদমই না।দূরে থাকুন আমার থেকে।আপনার ওই শক্তি আমার লাগবে না।”
“তুমি খাবার শেষ করলেই আমি চলে যাব।”
“আপনি জানেন আপনি একজন বিরক্তিকর মানুষ?”
“সে বউদের কাছে স্বামীরা বিরক্তিকর হয়।বিশেষ করে রোমান্স করতে গেলে।”
মায়া চুপ করে আছে।রাজ আবারও বলে,”খাবারটা খেয়ে নেও মায়াবতী।”
“আমার খেতে ইচ্ছা করছে না।”
“এটা ঝাল ঝাল খাবার।তোমার জ্বরের জন্য এভাবে বানাতে দেওয়া।”
“আপনি কিভাবে জানলেন আমি জ্বর আসলে ঝাল খাবার খাই?”
“বউ হও তুমি আমার।বউয়ের খোঁজ নিবো না আমি?”
মায়া রাজের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।রাজ মায়াকে খাইয়ে দিচ্ছে।কয়েক গাল খাওয়ার পর মায়ার ঠোঁট লাল হয়ে এসেছে। নাক ঘেমে উঠেছে।ঝালে এখন ফসফস করে ওঠে।ডান হাত দিয়ে গাল হা করে বাতাস করছে।তবুও রাজকে বলছে না যে ঝাল লেগেছে।নিজের কষ্টগুলো যেনো লুকিয়ে রাখতে তার সর্বপ্রধান চেষ্টা।রাজ গ্লাস নিয়ে মায়ার মুখে দিলো।ঢকঢক করে গিলে নিলো মায়া।গ্লাসটা পাশে রেখে দেখলো মায়া এখনও কাপছে।নিশ্বাসের গতি ওঠানামা করছে।গলার কাছে এর দৃশ্য স্পষ্ট।রাজ নেশালো কণ্ঠে বলে ওঠে,”খুব বেশি ঝাল লাগছে?”
মায়া মাথাটা উপর নিচ করে হ্যাঁ বুঝিয়ে দেয়।রাজ বলে,”পানি খেয়েও কাজ হলো না?”
মায়া মাথাটা দুদিকে নাড়িয়ে না বুঝিয়ে দেয়।রাজ কিছু একটা ভেবে বলে,”বুঝতে পেরেছি কিসে কমবে এই ঝাল।”
মায়া ঝালের কারণে ভেজা চোখে ও কাপা কাপা ঠোঁটে বলে,”কিসে কমবে?”
“চুম্বন বিলাস।”
মায়া লাল রক্তিম চোখে তাকালো।রাজ মায়ার ঠোঁটের দিকে নেশালো দৃষ্টিতে বলে,”দুষ্টুমি করবে না মায়াবতী।”
বলেই মায়ার মাথার পিছনের সমস্ত চুল নিজের বাম হাত দিয়ে ধরে মায়াকে নিজের কাছে এনে মায়ার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট রেখে চুম্বন বিলাসে মত্ত হয়ে আছে।মায়া এবার চোখগুলো বড় বড় করে রেখেছে।রাজ ছেড়ে দিলো মায়ার ঠোঁট।মায়ার মুখটা টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে বলে,”ঝাল কমেছে কি?”
মায়া অনুভব করলো সে তো ঝালের কথা ভুলেই গেছে।রাজ এবার অন্য খাবার খেতে থাকে।যেটা তার জন্য আনা হয়েছে।খাবার খেয়ে মায়ার কপালে হাত রেখে বলে,”অনেকটাই তাপ কমেছে।এভাবে ঝালের সাথে চুম্বন বিলাস করতে করতে জ্বর একেবারে গায়েব হয়ে যাবে।”
বলেই ঔষধ খাইয়ে দেয় মায়াকে।বিছানা থেকে উঠে আয়নার সামনে যায়।মায়া বিছানায় মাথাটা এলিয়ে দিয়ে কম্বলটা বুকের উপর রেখে চোখ বন্ধ করে নেয়।মাথাটা ঝিম হয়ে আছে তার।মনে হচ্ছে কেউ টিপে দিলে ভালো লাগতো।যেমনটা রাতের বেলা রাজ টিপে দিয়েছিলো।রাজ মায়ার মাথায় আদুরে হাত রেখে বলে,”আমি সমাবেশের জন্য ব্যাস্ত না হলে তোমার কাছে থেকে যেতাম।যেতে ইচ্ছে করছে না বউকে রেখে।দেখো আমার এই মনটাকে সবাই বউ পাগলা বলে দিচ্ছে।অথচ আমি কিন্তু আমার বউকে ভালোবাসি বলেই এমন করি এটা বুঝলো না।”
“আপনি যান মন্ত্রী মশাই।”
“এই যান না বলে জান বলতে পারো না?”
“দুটোর মধ্যে পার্থক্য কি?”
“যান হলো যেতে বলা আর জান হলো নিজের জীবনের সাথে মিশিয়ে নেওয়া।”
বলেই রাজ চলে যায়।যেতে যেতে বলে,”জানি তুমি কাউকে কল দিবেনা তাই কল দেওয়ার কথা বলব না।শুধু বলব এদিক ওদিক যাওয়ার চেষ্টা করবে না।এসে ঘরে না পেলে কিন্তু পাতাল থেকে খুঁজে সোজা বাথরুমে নিয়ে গিয়ে জ্বর অবস্থায় বাথরুম বিলাস শুরু করে দিবো।”
মায়া তার মাঝে কোনো প্রতিক্রিয়া জানালো না।রাজ এসে গাড়িতে বসলো।পাশের সিটে মাহমুদ সরদার।রাজ তাকে দেখে বিরক্তির ভাব প্রকাশ করে বলে,”তোমার বাবা আমার উপর অন্যায় করেছে বাবা।”
“কেন কি করেছে?”
“এই যে আমাকে লিলিকালে বিয়ে দিয়ে মনে বউয়ের জন্য ভালোবাসার উষ্ণতা ফুটিয়ে এখন নিজে দুই বউ নিয়ে কবরে চলে গেছে।এখন আমার বউয়ের মনে প্রেমের উষ্ণতা কে জাগাবে?”
“বাবার সামনে লাগামছাড়া কথা বলতে পারো বউকে প্রেমের উষ্ণতা বৃদ্ধি করাতে পারো না?মূর্খ ছেলে।”
“দিলে তো মাথাটা বিগড়ে।চ্যালেঞ্জ করলাম তোমাকে।বউ আমার স্বামী বলতে অজ্ঞান হয়ে যাবে।”
“তুমি তো পারই মানুষকে অজ্ঞান করে দিতে।”
রাজ সানগ্লাস পড়ে নিলো।ঠোঁটে দুষ্টু হাসি লেগে আছে।ড্রাইভার গাড়ি চালাতে ব্যাস্ত।
রুদ্র ঘুম থেকে উঠলো মাত্র।প্রায় ভোরের দিকে এসেছিলো।এসেই ঘুমের রাজ্যে পারি দেয়।এখন উঠেই ফ্রেশ হয়ে আহান সরদারের সাথে সকালের খাবার খায়।আহান সরদার জানান,”আদ্র আসবে বিকেলে।”
“ওকে।”
“বিয়ের ডেটটা ফিক্স করে দেই ওদের?তোমার কি রানিং কোনো মিশন আছে?”
“যেটা আছে তার কাজ চলছে।তুমি বিয়ের ব্যাপারে কথা বলো।ভাইয়ের বিয়েটা তাড়াতাড়ি হয়ে যাওয়াই ভালো।”
আহান সরদার সূক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে বলেন,”এমন বলছ কেন?”
“এমনিতেই বললাম।ভাইয়ের বিয়ে না হলে তো তুমি তোমার দ্বিতীয় বউমাকে দেখতে পাবে না তাই।”
“বিয়ে করার জন্য মনে হচ্ছে মনটা লাফাচ্ছে?”
“অস্বাভাবিক কিছু তো হচ্ছে না বাবা।বিয়ের জন্য তো ছেলে মেয়েদের মন লাফাবেই।”
“লজ্জা করে না বিয়ের কথা বাবার সামনে এভাবে বলতে?”
“বাবা বিয়ে না দিলে তো ছেলেকেই নিজ দায়িত্বে মনে করিয়ে দিতে হবে যে তার বিয়ের বয়স হয়ে গেছে।এতে লজ্জার কি আছে?”
“সব লাগামহীন কি সরদার বাড়িতেই জন্মেছে?”
“এটা তোমাদের সৌভাগ্য।”
“কিভাবে?”
“বাবা হয়ে করছ টা কি?বিয়ে দিতে পারলে না কেউ আমাদের ভাইগুলোকে।আমরাই তো নিজে থেকে উদ্যোগ নেই।”
“বউটা মরার সময় যে কেন আমাকেও নিয়ে গেলো না আল্লাহ ভালো জানে?”
“আমাদের বিয়ে দিতে হবে তাই নিয়ে যায়নি কিন্ত তুমি তো এটা বুঝতেই চাও না।শুধু নিজের বউয়ের কাছে যেতে চাও।”
আহান সরদার খাবার শেষ করে চলে গেলেন নিজের কাজে।এই ছেলের মুখটাও হয়েছে রাজের মত।রুদ্র পাশে থাকা হট কফি নিয়ে বাইরে আসে।সুইমিং পুলের কাছে এসে ভাবছে আজকে আর জিম করা হলো না।হঠাৎ এদিক ওদিক তাকাতেই রুদ্রের চোখ গেলো মেইন গেটের দিকে।একটা বাইক এসেছে।বাইকে বসে আছে সুদর্শন এক যুবক।তার থেকে ছোট হবে।ওই বাইকে এসে বসল হিয়া।যেটা দেখে মাথাটা বিগড়ে গেলো রুদ্রের।
মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ১৬
হাতে থাকা হট কফি যেন তার কাছে কিছুই না যতটা হট এখন তার মস্তিষ্ক।বাইক চোখের আড়াল হতেই রুদ্র একজনকে কল দিয়ে বলে,”আমি একটা বাইকের নাম্বার আমি সেন্ড করে দিচ্ছি।ওটা নিয়ে বাইকের মালিকের বায়োডাটা আমাকে দিবে।”
বলেই কল কেটে হাতে থাকা কফির মগ থেকে কফিগুলো ফেলে দিয়ে বলে,”হট কফির গুল্লি মারি।আমার হবু বউ ভেগে গেলো।”
