মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ২৮+২৯+৩০

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ২৮+২৯+৩০
ইশরাত জাহান

সকালবেলা,
হিয়া উপন্যাসের বই নিয়ে বসে আছে ব্যালকনিতে।উপন্যাসের পাতায় একবার চোখ তো একবার চোখটা ইশারায় পিছন করছে।এক পলক মনের গহনে লুক্কায়িত পুরুষকে দেখে নিয়ে পড়তে থাকে নতুন এক প্রেম কাহিনী।বেশ দূর থেকেই জিম করছে আর ঘামছে রুদ্র।এই ঠান্ডায় কিনা ঘামছে।এটা মানা যায়!ডাম্বেল দিয়ে জিম করতে গিয়ে শরীরের যে শক্তি প্রয়োগ করতে হয় তার ফলেই এই ঘাম।রুদ্র না পেরে গায়ের শার্ট খুলে নিচে ফেলে।এটা দেখে হিয়া হা হয়ে চশমা চোখে তাকে দেখছে।রুদ্র আবারও ডাম্বেল করতে থাকলো।এর মাঝেই আপনাআপনি চোখটা ব্যালকনিতে গেলো।হিয়াকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্র একবার নিজের দিকে তাকালো।সিক্স প্যাক বডি মাংস ফুলে ফুলে আছে।দেখতে যেনো টাইগার শ্রফ।হিয়াকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্র এবার দুষ্টু হেসে হিয়ার দিকে তাকিয়েই চোখ টিপ দিলো।হিয়া স্বজ্ঞানে ফিরল।কিছু না বলেই চলে গেলো ভিতরে।আয়নায় নিজেকে দেখে আবার জানালার দিকে একবার উকি দিয়ে রুদ্রকে দেখে মুখ ভেংচি কেটে বলে,”নষ্ট পুরুষ।”

মায়ার ঘুম ভেঙেছে কিছুক্ষণ হলো।রাজ এখনও বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে।রাজের গালটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে মায়া।জানালার সাথে বিছানা থাকায় শুয়ে থেকেই হাত দিয়ে পর্দা সরিয়ে দিলো মায়া।পর্দা সরতেই কাচের জানালা দিয়ে আলো ঢুকলো ভিতরে।কিছু আলো এসে বিরক্ত করলো রাজকে।চোখটা পিটপিট করছে রাজ।মায়া এটা দেখেই হেসে দিয়ে বলে,”আপনি নাকি মন্ত্রী!মন্ত্রীর মাঝেও কি না বাচ্চা বাচ্চা ভাব দেখা যায়।”
রাজ মুচকি হেসে ঘুমের মাঝেই মায়ার নগ্ন গলার নিচটায় নাক ঘষে।মায়া এবার রাজের পিঠে আলতো চাপড় দিয়ে বলে,”এবার উঠুন মন্ত্রী মশাই।বাসায় যেতে হবে তো।এরপর আবার অফিস আছে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আজকে আমার কোনো মিটিং নেই।এছাড়া আজকে কোনো কাজ নেই।”
“মন্ত্রীর আর কি!বসে বসে খাওয়া কিন্তু আমাকে তো কাজ করতে হবে।কোম্পানিতে আমি না গেলে তো কাজ আগাবে না।”
রাজ চোখটা ছোট ছোট করে মায়ার দিকে তাকিয়ে উষ্কখুষ্ক চুলগুলো ঝাড়ি মেরে বলে,”মন্ত্রীর বুঝি কোনো কাজ নেই?”
“কি কাজ শুনি?”
“জনগণের সেবা করা মন্ত্রীর প্রধান কাজ।”
“বউ বউ করতে থাকলে জনগণের সেবা করবেন কখন শুনি?”
“কৃষিমন্ত্রী হিসেবে আমাকে একটাই সেবা করতে হবে।খাদ্য বিষয়ে নিরাপত্তা জাহির করা।তারপরও আমি অনেক কিছু সামলিয়েছি।এখন বিরতি চাই।”

“কেন?”
“বউকে প্রানভরে আদর করতে হবে তাই।”
“হয়েছে তো।অনেক তো প্রাণ ভরালেন।এবার চলুন ব্রেকফাস্ট করতে হবে।”
“আরেকটু থাকি মায়াবতী।”
“এভাবে আলসেমি করবেন না মন্ত্রী মশাই।”
রাজ একটু কম্বল সরালো।গরম থেকে শীতের আভাস পেতেই আবারও কম্বল জড়িয়ে বলে,”অনেক শীত!”
“শীতের আগমন চলছে যে।”

“এই জন্যই বলছি এখন উঠতে হবেনা।ঠান্ডা লেগে যাবে।”
“আপনি না জনগণের সেবা করবেন?”
“সকাল সকাল জনগণ না বউকে সেবা করতে চাই।”
“মন্ত্রী মশাই!”
“No more word’s Mayaboti.”
বলেই মায়ার ঠোঁটে মর্নিং কিস দিতে শুরু করে।কিছুক্ষণ পর রাজ উঠে মায়াকে কোলে নিলো।মায়া ভ্রুকুটি করে বলে,”আবার?”

রাজ মাথাটা নাড়িয়ে বলে,”এখন আর আদর দিয়ে কষ্ট দিবো না মায়াবতী।এখন তোমার আমার থেকে ছুটি।”
“তাহলে কোলে নিলেন কেন?”
“একসাথে বাথরুমে গিয়ে শাওয়ার নিবো তাই।”
মায়া রাজের বুকে আলতো চাপড় মেরে বলে,”আপনার দিনে রাতে শুধু বাথরুম বিলাস।”
“ওখানে যে কারো নজর নেই।”
বলেই চলে গেলো দুজনে আবারও বাথটাবে।

মৌ আর পিয়াশ উঠেই আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেদের পরিপাটি করে নিলো। পিয়াশ মাথার চুলগুলো ঠিক করে বলে,”আমরা সম্পর্কটা অতি দ্রুত এগিয়ে নিলাম বলে মনে হয়না?”
মৌ গলার দুইপাশে পারফিউম দিয়ে পিয়াশের দিকে ফিরে বলে,”এমনটা তো মনে হয়না আমার কাছে।তোমার কাছে এমন মনে হয়?”
“আমরা একে অপরের পরিচিত না তারপরও দুইরাত একসাথে বৈধ সম্পর্কে জড়িয়েছি। আর নিজেদের মানিয়েও নিয়েছি।কেমন যেনো তাড়াহুড়ো লাগলো।”
মৌ মৃদু হেসে পিয়াশের গলা জড়িয়ে বলে,”স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক যত দ্রুত গভীরতা থাকবে তত দ্রুত সম্পর্ক মজবুত হয়।আমি আর তুমি যদি এখন গুটি গুটি পায়ে এগোতাম তাহলে এই সম্পর্কের মাঝে একটা দেওয়াল চলে আসার সম্ভাবনা ছিল।একজন স্ত্রী হিসেবে এই দেওয়াল আমি তৈরি করতে চাইনা।”

“তুমি কি সত্যি আমার মত গরীবকে মেনে নিয়েছো?”
“গরীব হলেও আমার স্বামী তুমি।ভাগ্যক্রমে আমার নিয়তিতে জড়িয়েছো।এখন ভালোবাসা বৃদ্ধি করাটা জরুরি।আমি তো মিশন শুরু করেছি এখন তুমিও করো।”
পিয়াশ হেসে দিল।মৌয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমাকে মন্ত্রীর শালী না একদম বোন মনে হয়।দুজনেই লাগামছাড়া আর ভালোবাসার উন্মাদনায় মত্ত।”
“এই ভালোবাসাটা দেখাই বলেই তো তুমি আমার সাথে নির্দ্বিধায় সংসার করছো জনাব।”

বলেই মৌ টুক করে পিয়াশের কপালে চুমু দিল।পিয়াশ মুচকি হেসে সাহসের সাথে এবার মৌয়ের ঠোঁটটা নিজের আয়ত্তে করে নিলো।কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিতেই মৌ আনন্দের হাসি হেসে বলে,”ইউ নো হোয়াট?আমি একমাত্র আমার স্বামীর থেকে ভালোবাসা নিবো বলে এতদিন সিঙ্গেল ছিলাম।এই ভালোবাসা এই যত্ন সবকিছু আমি আমার স্বামীর থেকে চাই।তুমি আমাকে এভাবে প্রতিদিন ভালোবাসবে আর আমি তোমাকে আমার হাতের সুস্বাদু খাবার রান্না করে খাওয়াব তোমাকে।সাথে সেবা ফ্রী।”
দুজনেই হেসে দিল।পিয়াশ মৌকে আলিঙ্গন করে মনে মনে ভাবছে,”গরীবের কপালটা এভাবে আপনাআপনি খুলবে এটা ভাবনার বাইরে ছিল।”

মায়া আর রাজ চলে এসেছে।সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে আছে।মাহমুদ সরদার রাজের দিকে তাকিয়ে বলেন,”কালকের তোমার হয়ে আমিই সবকিছু ম্যানেজ করেছি।তুমি যেগুলো ফোনে পাঠিয়েছিলে ওগুলো সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছি।”
“ভেরি গুড বাবা।”
“তোমার হাতে কে গুলি ছুড়লো জানতে পারলে কিছু?”
“রুদ্র ইনভেস্ট করছে।তবে আমার মনে হয় বিরোধী দলের কেউ করেছে।আমাদের গোপন শত্রুর এখনও আমার ব্যাপারে এতটা হাইপার হওয়ার সময় হয়নি।”
“কবে কাজে লাগাবে তাকে?”

“দেশে আগে আসুক তো আমার….”
“থাক আর বলতে হবে না।আসলেই আমাদের মিশন শুরু।”
মায়া ভ্রু কুঁচকে বলে,”কি নিয়ে ফিসফিস চলছে এখানে?”
“তোমাকে নি….”
মাহমুদ সরদার বলতে নিয়েই রাজ হাত ধরে থামিয়ে দিলো।রাজ না আটকালে হয়তো মনের ভুলে বলেই দিতো সবকিছু।রাজ এবার মাহমুদ সরদারের দিকে তাকিয়ে বলে,”পেট পাতলা বাবা আমার।”
“তোমার বাবা হই আমি।”
“তো!তোমার পেট পাতলা স্বভাব থাকলে আমি কি বলব তোমার পেট মোটা?”
“আপনারা আবারও বিড়বিড় করছেন?”
মাহমুদ সরদার গলা খাকারি দিয়ে বলেন,”এক অপদার্থকে ভুলে ডাউনলোড করেছিলো আমার বউ।তার মাশুল গুনছি বিড়বিড় করে।”

মালিনী এসে মাহমুদ সরদারের পাশে বসলো।একেক করে সবাই আসলো।সিয়া আর হিয়া পাশাপাশি বসে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,”Good morning everyone.”
সবাই উত্তর দিলো।মাহমুদ সরদার তার বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে বলেন,”আজকে তোমাদের কোথাও যেতে হবে না।আজকে মার্কেট করতে বের হও।”
মিলি সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে এই কথা শুনে বলে,”আমাদের শপিংয়ের জন্য তুমি নিয়ে যাবে বড়বাবা।”
“আমি তো ব্যাস্ত থাকব মা।”

“এভাবে টুকটাক শপিং তো আমরা বোনেরা প্রায়ই করি।একটু ফ্যামিলি মিলে একসাথে শপিং করা হয়না।”
মিলির মন খারাপ দেখে মাহমুদ সরদারের মনটা খারাপ হয়ে গেলো।এমনিতেও মেয়েটার উপর দিয়ে অনেক কিছুই যাবে।যেটা ভাবলে মন চায় তার ভাই আর ভাইয়ের বউকে আরেকটু সুযোগ দিতে।কিন্তু একজনের জন্য বাকিদের জীবন ধ্বংস করা যায়না। তাই তো তিনি না চাইতেও ভাইয়ের বউয়ের বিরুদ্ধে স্টেপ নিতে সবাইকে সহযোগিতা করছেন।মাহমুদ সরদারের চাহনি রাজ ধরে ফেললো।বাবা বলে কথা।বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে একবার মিলির দিকে তাকালো।বোনের ভবিষ্যতের কথা ভাবলে চোখটা জ্বলে উঠলো।ভিজে আসার আগেই নিজেকে সামলে রাজ বলে,”আজকে সবাই মিলে শপিং করব।আজ আমাদের সবার ছুটি।”

মিলি খুশিতে নিচে নামলো।সিয়া আর হিয়া হাততালি দিলো।মায়া বলে,”মিস্টার আদ্র আর রুদ্রকেও রেডি থাকতে বল তোমরা।আমি একটু অফিসে যাবো।কালকে আমার কিছু কাজ অর্ধেক করেই চলে আসতে হয়।”
সবাই সম্মতি দেয়।তারেক বাড়ির ভিতরে ঢুকলো।মায়া তারেককে দেখে বলে,”সকালে নাস্তা করেছো?”
“জি ম্যাম।”
“সোফায় বস আমি খেয়ে একসাথে বের হব।”

মিলি একটা প্লেট নিয়ে তাতে অল্প কিছু খাবার বেড়ে সোফার দিকে গেলো।যেটা দেখে এতক্ষণ ধরে চুপ করে থাকা মোহন সরদার ও বাকিরা অবাক চাহনি দিলো। মিলি তারেককে উদ্দেশ্য করে বলে,”এই নেও নাস্তা করো।”
তারেক এক পলক সবাইকে পরখ করল।কিছুটা ইতস্তত হয়ে বলে,”লাগবে না ম্যাম।”
মিলি তবুও প্লেট এগিয়ে দিয়ে বলে,”এটা আমাদের ভদ্রতা।আমরা মেহমান আপ্যায়ন করি।”
তারেক প্লেট নিলো।মোহন সরদার ভ্রু কুঁচকে বলে,”কখনও তো আমাদের বাকি মেহমানদের আপ্যায়ন করতে দেখলাম না।তোমার হঠাৎ ওকেই আপ্যায়ন করতে হলো কেন?”
মিলি পিছনে ঘুরে বলে,”এগুলো ট্রেনিং চলছে বাবা।তুমি বুঝবে না।”
রাজ মাহমুদ সরদারের কানের কাছে এসে বিড়বিড় করে বলে,”বাড়িতে হয়তো আরো একটা বিয়ের সানাই বাজবে।”
“বিয়ের সানাই নাকি অমাবস্যার ঘুটঘুটে অন্ধকার এটাই তো বুঝতে পারছি না।”
“এমন কেন মনে হলো?”

“আমার যে ভাই সে তো আর তোমার বউয়ের মত না যে একজন অ্যাসিসট্যান্টের সাথে মেয়ের বিয়ে মানবে।”
“ভুলে যেওনা দুজনেই কিন্তু একই বাবার সন্তান।”
“একই বাবার সন্তান হলেও দুজনের অভিভাবক আলাদা।মৌকে মায়া মা দেখে।মিলিকে দেখে মোহন।এছাড়া মৌ যে মোহনের বায়োলজিক্যাল মেয়ে এটা তো মোহন জানেই না।তাই আপত্তি করার প্রশ্ন আসে না।”
“এমনিতেও আপত্তি করতে পারবে না বাবা।তোমার বউমা আছে না।বোনের জন্য এমন স্টেপ নিবে যে আমার বউয়ের অগ্নিদৃষ্টি দেখে আমার শশুর পরপারে পাড়ি জমাবে।”
মাহমুদ সরদার মৃদু হাসলেন।মায়া আর তারেক খাবার শেষ করে সবার উদ্দেশ্যে বলে,”আমি এখন আসি।তোমরা মলে গিয়ে আমাকে কল দিও।”

“আচ্ছা ভাবী।”
মায়া মৃদু হেসে চলে গেলো।বাইরে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে মায়া প্রশ্ন করলো,”মিলিকে তোমার কেমন লাগে?”
“কেন ম্যাম?”
“এমনি জিজ্ঞাসা করছি।”
“কোনো ভালো লাগা বা খারাপ লাগা চিন্তা করছিনা তাকে নিয়ে।”
“ওকে,মন্ত্রী মশাইকে কে গুলি করেছিলো জানতে পেরেছো?”
“হ্যাঁ,ওই যে কয়দিন আগে একটা লোকের সাথে ঝামেলা হলো।পরে তো তাকে জেলে পাঠানো হয়েছিল।তার ছেলে এগুলো করেছে।”

“বাবাকে ছাড়ানোর জন্য মন্ত্রী মশাইয়ের জীবন নিয়ে টানাটানি।”
“ব্যাপারটা তো এমনই।”
“ছেলেটাকে আমার সিক্রেট রুমে নিয়ে আসবে।”
“কিন্তু ম্যাম স্যার তো তাকে অলরেডি নিজের গোডাউনে নিয়ে গেছেন।”
মায়া গাড়ির জানালা খুলেছিল।তারেকের মুখে এমন কথা শুনে হাত থামিয়ে তারেকের দিকে তাকালো।তারেক ভিত চাহনি দিলো।মায়া ভিলেনি হাসি দিয়ে বলে,”চলো অফিসের দিকে।”
তারেক গাড়িতে উঠে ড্রাইভিং করতে থাকে।মায়া ফোন দেখছে আর বলে,”সুপার মডেল ইনসিয়ার সাথে কথা হয়েছে?”

“হ্যাঁ।”
“কি মতামত?”
“প্রথমে মডেলের জন্য রাজি ছিলো না। মোহন সরদার তাকে বাকি পঞ্চাশ হাজার দিয়ে একটা শুটের জন্য হায়ার করেছে। পরে আমি বললাম ডাবল দেওয়া হবে অনলি ড্রেস প্রোমোটের জন্য।উনি রাজি হলেন।”
“মোহন সরদারের অ্যাপয়েনমেন্ট ক্যান্সেল করেছে কি?”
“না ম্যাম।আমি আপাতত ক্যান্সেল করতে না করেছি।”
মায়া জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছে আর ভিলেনি হেসে বলে,”নিশানা তাহলে সঠিকভাবেই পৌঁছে যাচ্ছে।”

নিজের রুমে এসে মায়া টেবিলে বসে ডিজাইন দেখতে ব্যাস্ত।মৌ যেখানে অংশগ্রহণ করেছে ওখানে মায়াও যাবে।মায়াকে প্রথমে জাজ হিসেবে অফার করা হলেও মায়া রাজি হয়নি।মায়া চায় তার মত তার বোন নিজ যোগ্যতায় বড় হবে।মৌকে নিজের মাধ্যমে মেধা অর্জন করতে হবে।তবেই না নিজের জীবনের মূল্য বুঝবে।এই জগতের কুট কাচালীর থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারবে।নিজে নিজের মত করে বেচে থাকতে পাড়ার শান্তি আলাদা।এটা মায়া খুব ভালো করেই উপলব্ধি করে।মায়া কাগজগুলো দেখে নেয়।এরমাঝে কল দিলো রুবি।জানালো,”আমাদের অফিসে আজ আপনার সাথে একজন দেখা করতে এসেছে।”

“আমার সাথে?”
“হুম,বলল এই ফ্যাশন হাউজের ওনারের সাথে দেখা করতে চায়।শুধু আপনার নামটাই জানেনা।”
“কি বলেছিলে তুমি?”
“আমার সাথে দেখা হয়নি ম্যাম।আমি আপনার রুমে ফাইলগুলো ঠিক করছিলাম।আমাকে ম্যানেজার জানালো।”
“সে কি আমার নাম বলেছে?”
“উহু,বলেছে আপনার অনুমতি ব্যতীত আপনার কাছে যেতে দেওয়া যাবে না।”
মায়া এবার একটু ভাবলো।অতঃপর বলে,”ওনার একটা ছবি বা যেখানে উনি আছে ওই জায়গার ফুটেজ আমাকে পাঠাও।”
“ওনাকে কি ওয়েটিং রুমে রেখে দিব?”
“হ্যাঁ।”
রুবি লোকটিকে ওয়েটিং রুমে থাকতে বলে মায়াকে ফুটেজটা পাঠালো।মায়া ওটা দেখে স্পাই ম্যানকে কল করে বলে,”এই লোকটার ডিটেইলস জানাও।”

এদিকে শিবচরের শোরুমে এসে অপেক্ষা করে লোকটা বিরক্ত হয়ে বসে আছে।না পেরে কল দিলো সোনালীকে।জানালো,”এই মেয়ে তো দেখা দিচ্ছে না উল্টো এক ঘণ্টার উপরে আমাকে অপেক্ষা করাচ্ছে।”
“তোমাকে যার শোরুমে পাঠিয়েছি তার বংশ সম্পর্কে কোনো ধারণা আছে তোমার?ওই মেয়ের নানা থেকে মা সবার মাথায় বুদ্ধিতে ভরপুর ছিলো।ওদের বাজিমাত করতে আমাকে কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।মেয়েটাকে কাঁচা খিলাড়ি ভেবো না।এক ঘন্টা তো অল্প সময় আজকে লান্স করার সময় পাও কি না দেখো।”

“আমার টাকা বাড়িয়ে দিতে হবে।”
“দিবো দিবো।এখন কল কাটো।তোমাকে যেভাবে বললাম ওভাবেই কাজের অফার করবে।যেন কোনো সন্দেহ করতে না পারে।”
“ওকে ম্যাম।”
আড়ালে এগুলো মায়ার শিবচরের ম্যানেজার ভিডিও করে মায়াকে পাঠালো।মায়া ভিডিও দেখে বুঝে গেলো সব।আলতো হাসতেই স্পাই ম্যানের কল আসলো।মায়া রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে জানালো,”অবৈধ ভাবে ড্রাগ সাপ্লাইয়ের জন্য এই লোকটাকে জেলে নেওয়া হয়েছে কয়েকবার।এছাড়া এর যে লিডার সে ওকে ছড়িয়ে দেয়।তার নাম এখনও অপ্রকাশ্য।আপাতত এটুকুই তথ্য জানা গেলো।”
মায়া এবার বলে ওঠে,”আচ্ছা ঠিক আছে।”

কল কেটে মায়া এবার রুবিকে কল দিয়ে বলে,”আমার চেয়ারে আজ তুমি বসবে রুবি।কানে ব্লুটুথ রাখো।যেভাবে যেভাবে শিখিয়ে দিব সেভাবে সেভাবে উত্তর দিবে।আর হ্যাঁ টেবিল থেকে আমার নামের ডেস্ক নেমপ্লেটে সরিয়ে দেও।ওখানে তোমার নামের ডেস্ক নেমপ্লেট রাখো।”
“কিন্তু ম্যাম কেন?”
“ইটস ইম্পর্ট্যান্ট।”
“ওকে ম্যাম।”
মায়া এবার মৃদু হেসে উঠে দাড়ালো।উদ্দেশ্য এখন প্রতিযোগিতার ওখানে যাওয়া।মায়ার কথামত রুবি সবকিছু ঠিক করল।এরপর ম্যানেজারকে বলে,”ওনাকে পাঠাও।”
ম্যানাজার লোকটিকে নিয়ে আসলো।রুবি ইশারা করলো সামনের চেয়ারে বসার জন্য।লোকটার শার্টের বোতামে ক্যামেরা সেট করা।যেখানে রুবির মুখটা ভিডিও হচ্ছে।লোকটা একটা ফাইল দিয়ে বলে,”আমাদের নতুন কোম্পানি।যেখানে আমরা প্রথম কাজেই প্রফিট করতে পেরেছি।এখন আমরা চাই আপনার এই শোরুমের সাথে শেয়ারে কাজ করতে।”

রুবি কাগজগুলো দেখে বলে,”আমার এই শেয়ারিংয়ে বেনিফিট?”
“অন্তত শিবচরের এই শোরামটা বিডিতে ছড়াতে পারবেন।আমি শুনেছি এটা আপনাদের বংশিয় ব্যাবসা।আপনার নানা এরপর আপনার মা এটাকে এগিয়ে নিয়ে এসেছে।যেহেতু এতদূর এগিয়েছে সেহেতু এই জেনারেশনে এসে আরো উন্নত করতেই চাইবেন।তাই না মিস রুবি?”

নামটা বলার আগে টেবিলের দিকে তাকালো একবার।রুবি কিছুটা অনুমান করল ব্যাপারটা।মায়া সবকিছু শুনছিল।মনে মনে হাসলো শুধু।সোনালীর খেলাটা পুরোপুরি না বুঝলেও এই মহিলা যে তাকে খুঁজতে ব্যাস্ত এটা মায়ার বোঝা হয়ে গেলো।মোহনাকে রুবি ভাবছে এখন ওরা।মায়া রুবিকে বলে,”ডিলটা নিতে রাজি হবেনা।বলো এটা আমার এই পর্যন্তই রাখার ইচ্ছা।বিডি অব্দি ছড়ানোর কোনো ইচ্ছা নেই।এতদিন যেভাবে চলেছে একই ভাবে চালাবো।”
রুবিও ঠিক একই কথা জানিয়ে দিলো।লোকটা আরেকবার অফার করল।রুবি তবুও অফারটা একসেপ্ট করল না।লোকটা হতাশ চাহনি দিয়ে বিদায় নিলো।মায়া গাড়িতে বসে আছে।লোকটা যেতেই রুবি বলে,”আমাদের এই ফ্যাক্টরীর হাতিয়ার ধরেই তো বাকি দুইটা শোরুম হয়েছে ম্যাম।ইনফ্যাক্ট এখানকার গার্মেন্টস থেকেই তো মায়া ফ্যাশন হাউজের কাপড় সিলেক্ট হয়।তাহলে ইনি কেন বলল যে শিবচরের শোরুমটা বিডিতে ছড়াবে?”

“আমাদের শিবচরের শোরুমের নাম আমার মায়ের নামে আর আমার বাকি শোরুমের নাম আমার নামে।যেহেতু উনি কাগজপত্র ঘাটেনি অবশ্যই ভিতরের তথ্য জানা সম্ভব না।”
“ওহ।”
“তোমার ব্যাপারে জানাও।বাসার কি খবর?”
“পরিবারের সবার পছন্দ।আমি বলেছি পড়ে জানাবো।”
“আচ্ছা।এরপর কি কি হয় আমাকে জানাবে। আর হ্যাঁ সাবধানে থাকবে।হয়তো আমি ভেবে তোমার উপর রিস্ক আসতে পারে।আমি তোমার পিছনে গার্ড রাখব।ভয় নেই তোমার।শুধু এখন তোমাকে আমার ফ্যাশন হাউজের মালকিন হয়ে থাকতে হবে।”

“ওকে ম্যাম।”
মায়া কল কাটলো।কান থেকে ব্লুটুথ সরিয়ে বাইরের প্রকৃতি দেখতে থাকে।ড্রাইভার গাড়ি থামালে মায়া দরজা খুলে।বাইরে বের হতে নিলেই একটি হাত মায়ার সামনে এগিয়ে আসে।মায়া হাতের মালিকের দিকে তাকাতেই মৃদু হাসলো।মায়া রাজকে দেখে হেসে দিয়ে বলে,”আপনি এখানে কেন মন্ত্রী মশাই?”
“একমাত্র শালীর আজ ক্যারিয়ার জীবনের প্রথম স্টেপ।দুলাভাই হিসেবে পাশে না থাকলে বউ কষ্ট পাবে যে।”
“শালীর প্রতিযোগিতায় দুলাভাই থাকার সাথে বউয়ের সুখ দুঃখের ব্যাপারটা কোথায় থেকে আসে?”
“আমার বউ আমার মায়াবতী।তার সুখ তার দুনিয়া একমাত্র তার বোন।সেই বোন তো আমার শালী।শালীর জীবনে যখন আলোর খেলা শুরু হবে আমার মায়াবতীর মুখে এক চিলতে হাসির রেখা দেখা দিবে।এটাই যে স্বামী হিসেবে আমার প্রশান্তি।”

“আপনি আমার ছোট ছোট সুখগুলো কি সুন্দর গুছিয়ে দিচ্ছেন মন্ত্রী মশাই।”
“তোমার মন্ত্রী মশাই তোমার জন্য সমস্ত সুখ জমিয়ে রেখেছে মায়াবতী।”
“আমি আপনার মায়াবতী সাথে আমি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করি।এমন স্বামী সকল নারীর নসিবে থাকলে নারীরা আজ সুখে জীবন কাটাতো।”
“মায়াবতীর মুখে নিজের জন্য ভাগ্যবতী শুনে বক্ষস্থল জুড়িয়ে গেলো।”
মায়া হেসে দিয়ে রাজের হাতে হাত মিলিয়ে চলে গেলো ভিতরে।মায়া সিটে বসতে নিবে দেখতে পেলো দুইটা সিট বাদে বাকিগুলোতে সরদার বাড়ির অনেকেই আছে।সিয়া,হিয়া,মিলি,মাহমুদ সরদার।এদেরকে দেখে মায়া হেসে দিল।মায়া ওদেরকে উদ্দেশ্য করে বলে,”তোমরা না শপিং মলে যাবে?”

“ওখানে বিকালেও যাওয়া যাবে ভাবী।আর আদ্র ভাইয়ের হাসপাতালে কাজ আছে রুদ্র ভাই কি একটা কারণে বাইরে।তাই আমরা এখান থেকে বের হয়ে লান্স করে শপিংয়ে যাব।”
মিলির কথা শেষে মায়া বসতে নিবে পিছনে চোখ যেতেই যাকে দেখলো তাকে দেখেই চোখটা বড় হয়ে গেলো।বীর বসে আছে সাথে বসে আছে জারা।বীরকে কেউই লক্ষ করেনি এতক্ষণ।মায়া বীরকে দেখে বলে,”ভাইয়া তুমি এখানে?কখন এলে?”
বীর আলতো হেসে বলে,”এসেছি পাঁচ কি দশ মিনিট হবে।বোনের একটা বিশেষ দিন আমি আসব না?”

“আমাকে তো জানালে না!”
“সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।যদিও এখন না একেবারে প্রতিযোগিতার ফলাফল পাবার পর।”
মাহমুদ সরদার একবার পিছনে ঘুরে তাকালেন।বীর সালাম দিয়ে বলে,”আসসালামু আলাইকুম ফুফা।”
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম।”
বলেই বিড়বিড় করে বলেন,”সারপ্রাইজ দিতে নাগিন আনার কি দরকার ছিল!এবার তো বিষের ফনা তুলবে এই নাগিন।”

জারা একবার বীরের দিকে তাকিয়ে রাজকে উদ্দেশ্য করে বলে,”হাই রাজ বেইবী।কেমন আছো তুমি?”
রাজ একবার মায়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,”বারোটা বাজিয়ে দিলো বুঝি!”
এবার জারার দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি ভালোই আছি।তুমি কেমন আছো যারা বেইবী।”
মায়া চোখ গরম করে ওর সিটে বসে ছিল।রাজ বসতেই মায়া ওর হিল দিয়ে রাজের পায়ের উপর চাপ দিলো।রাজ ব্যাথা পেলেও সহ্য করে নিলো।জারা এবার বীরের দিকে লক্ষ্য করলো।বেচারা ফুঁসে উঠেছে।জারা এবার আরেকটু জ্বালিয়ে দিলো বীরকে।রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”আই মিস ইউ সো মাচ রাজ বেইবী।”
“হবু বরকে পাশে রেখে আমাকে কেন দিচ্ছো বাঁশ জারা বেইবী।”
মায়া রাজের দিকে রক্তিম দৃষ্টি দিয়ে আছে।মাহমুদ সরদার এতদিন পর রাজের অবস্থা দেখে তৃপ্তির হাসি দিলেন।বিড়বিড় করে বলেন,”সাপে নেউলে এক জায়গায়।এবার বোঝ ঠেলা।”
বীর জারার ডান হাত শক্ত করে ধরে নিজের কাছে এনে বলে,”খুব শখ না অন্য পুরুষকে বেইবী বলে ডাকা?”

“আর ইউ জেলাস হ্যান্ডসাম।”
“শাট আপ এন্ড গেট প্রিপেয়ার ফর টুনাইট।”
জারা এবার শুকনো ঢোক গিলে।কি যে হবে কে জানে!মাইকে এনাউন্স হতেই একেক করে প্রতিযোগিতার সবাই চলে আসে।সারিবদ্ধভাবে পেইন্টিংয়ের ব্যাবস্থা করা।মৌ স্টেজে দাড়িয়ে সামনের দিকে চোখ রাখে।মায়াকে দেখে পিয়াশকে খুঁজছে।ওদের পাশেই মৌয়ের দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে ছিল পিয়াশ।মৌ মিষ্টি হাসলো শুধু।অতঃপর চোখ গেলো বীরের দিকে।বীর সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দিলো,”বেস্ট অফ দ্যা লাক।”
মৌ মুখ ভেংচি দিয়ে চোখ সরালো।বীরের হাসিহাসি মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো।পাশ থেকে হেসে দিলো জারা।বীর জারার দিকে তাকালো।জারা সাথে সাথেই মুখটা বন্ধ করে নিলো।

সবাই পেইন্টিংয়ে ব্যাস্ত।এদিকে মায়া একবার হাতঘড়ি দেখে নিলো।এর মাঝেই মায়ার কাছে আসলো তারেকের ম্যাসেজ।তাতে লেখা,”মিসেস সোনালী শিবচরের দিকে রওনা দিয়েছেন।”
মায়া ভ্রুকুটি করে লিখলো,”আমি মন্ত্রী মশাইয়ের পাশে বসে আছি।এখন বের হওয়া সম্ভব না।তুমি স্পাই ম্যানকে কল দিয়ে বলো পিছু নিতে।আমি তার একাউন্টে টাকা দিয়ে দিচ্ছি।”
তারেকের উত্তর আসলো,”ওকে ম্যাম।”

পেইন্টিং শেষ হতেই জাজেজ দেখলো সবার পেইন্টিং।জাজেজদের মধ্যে একজন ছিলেন ফরেইনার।তিনি আসল মতামত দিবেন।সবশেষে তিনি জানানেল বিজয়ী অন্য একটি মেয়ে।আর দ্বিতীয় হয়েছে মৌ।এটা শুনে মনটা ক্ষুণ্ন হলো মৌয়ের।তবে বেশিক্ষণ মনক্ক্ষুণ্ন থাকলো না।পিয়াশ বসা থেকে দাড়িয়ে হাততালি দিলো।এটা দেখে হেসে দিল সকলে।পিয়াশ গিয়ে দাঁড়ালো মৌয়ের পাশে।মৌয়ের কানে কানে বলে,”বলেছিলাম না পাশে থাকব।প্রথম হও বা না হও।আমার সমস্যা নেই।তুমি নিজ চেষ্টা করেছো এটাই আমার জন্য অনেক।”

মৌ হাসলো শুধু।মায়া,রাজ,বীর,জারা এরা এগিয়ে আসলো।মৌ হাতে সেকেন্ড হওয়ার ট্রফি নিয়ে দাড়িয়ে আছে।সবাই সবার পরিবারের সাথে এখন কথা বলতে ব্যাস্ত।মিলি আর জারা একসাথে হয়ে কিছুক্ষণ ছবি তুলল মন ভরে।দুজনেই যেন একই রকম।সাজগোজ আর সেলফি নিয়ে আলাদা জগতে চলে যায়।ছবি তোলা শেষ করে মিলি বলে,”তুমি কোথায় চলে গিয়েছিলে জারা আপু?আমি তোমাকে অনেক মিস করেছিলাম।”
জারা এবার বীরের পাশে গিয়ে বীরের বাহু ধরে বলে,”ক্যানাডা গিয়েছিলাম।ওখান থেকেই আমার দেখা হলো আমার হ্যান্ডসামের সাথে।”

“ওহ হো!লাভি ডাভি মোমেন্ট?”
“ইয়া।”
“মম অনেক খুঁজেছে তোমাকে।এখনও লোক লাগিয়ে রেখেছে খুঁজেই পায়না।”
“কিভাবে পাবে শুনি?আমার পাশে কে আছে জানিস?ওয়ান এন্ড ওনলি মাফিয়া আরহাম খান বীর।যার খাঁচা থেকে আমাকে মুক্ত করা সম্ভব না।”

হেসে দিল মিলি।মায়া জারার মুখের দিকে তাকালো।জারার মুখে যে হাসি ফুটে উঠেছে ওটা বীরের জন্য সত্যিকারের ভালোবাসা প্রকাশ পায়।তবে কি জারা সত্যি বীরকে ভালোবাসে নাকি স্বার্থ সিদ্ধির পর ছেড়ে দিবে?মায়া এটা শিওর জানে যে রাজের সাথে জারা শুধু মজা নিয়েছিল।ওটারও কারণ আছে।এক সময় সোনালী জারাকে রাজের পিছনে লেলিয়ে দিয়েছিলো।জারাকে উস্কানি দিয়েছিলো রাজের আগে পিছে থাকতে।তাই তো জারা সবসময় রাজকে বেইবী বলতে বলতে এখন মুখস্ত হয়ে গেছে।এদিকে রাজ জারাকে দুই টাকার পাত্তা না দিলেও জারাকে নিয়ে মজা উড়াতো খুব।এগুলো মায়া খুব বেশি না জানলেও পারিবারিক যোগাযোগের কারণে অনুমান করতে পারছে।

সন্ধ্যায় সবাই মিলে চলে এলো সপিং মলে।সবাই আসলেও এখানে আসতে পারেনি মালিনী সোনালী মোহন সরদার ও আহান সরদার।তাদের নিজস্ব কাজ পরে গেছে। ওনারা আসেনি বলেই মাহমুদ সরদার নিজেও আসেননি।তিনি আজ তার বাবা ও প্রথম স্ত্রীর কবরস্থানের দিকে গেছেন।ওখান থেকে তাজের সাথে দেখা করবেন।সবাই শপিং মলে এসে নিজেদের মত এদিক ওদিকে জিনিসপত্র দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল।সবার প্রথমে মেয়েরা মিলে পোশাকের দিকে নজর দিলো।মায়ার প্রিয় রং অনুসারে সবাই নীল রংয়ের শাড়ি আর লেহেঙ্গা দেখছে।মায়ার সামনে একেকটা লেহেঙ্গা এনে দেওয়া হচ্ছে।রাজ প্রত্যেকটাতেই না না করছে।এবার হিয়া একটা লেহেঙ্গা দিয়ে বলে,”এটা অনেক সুন্দর।ভাবীকে মানাবে।”

রাজ নাকমুখ কুচকে বলে,”নাহ এটা ভালো লাগছে না।”
এরপর সিয়া আরেকটা বেনারসি শাড়ি এনে মায়ার গায়ের উপর দিয়ে বলে,”এটাতে তো পুরো বউ বউ লাগছে।”
“আমার বউ কি তোদের কাছে অবিবাহিত মনে হয়?”
সিয়া আহম্বক হয়ে গেলো।আদ্র মৃদু হাসলো সিয়ার এমন কথা শুনে।হিয়া তো জোরে জোরেই হেসে দেয়।সিয়া চোখ বড় বড় করে বলে,”হাসবি না তুই।তোর কাজ কর।”
“তোর কথা শুনে হাসি পায়।কেমন ডাক্তার হবি তুই।তোর কথা শুনলে তো এখনই সবাই হেসে দেয়।”
“তোকে ভাবতে হবেনা আমার ডাক্তার হওয়া নিয়ে।আসছে আমার ডাক্তার হওয়া দেখতে।নিজে তো কোনো ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবে না আবার আমার ক্যারিয়ার নিয়ে খোচা মারে।”
“আমার ক্যারিয়ার নিয়ে ভাববো না আমি।তাতে তোর বাপের কি?”
“আমার বাপটাই যে তোর বাপ তাই আমার যত চিন্তা।”
“আসছে আমার বাপকে নিয়ে চিন্তা করতে।কি এমন করবি ডাক্তার হয়ে শুনি?বাবাকে কয় বেলা চিকিৎসা করবি বসে বসে?”

“বাবাকে চিকিৎসা করব সাথে অন্যদেরকেও চিকিৎসা করে বাবার পাশে দাঁড়াবো।তোর মত উপন্যাসের বই নিয়ে বাবার পাশে বসে থাকবো না।বাবার কোনো কাজে এলি না।শুধু শুধু আমার সাথে তোকে আনা।”
“কি বলতে চাচ্ছিস তুই?”
“এটাই যে আমি একা আসলেই ভালো হতো।আগাছা হয়ে এলি কোন দুঃখে।আমার ঠিক পাঁচ মিনিট পর তোকে কেন আসতে হলো?”
সবাই হা হয়ে এদের ঝগড়া দেখছে।রাজ বিড়বিড় করে বলে,”পাপ করল আমার বাপ। ঝগড়া লাগাচ্ছে তার কন্যারা!”
রুদ্র এবার আদ্রর কানে কানে বলে,”এরা দুইবোন যেভাবে ঝগড়া লাগিয়ে দিয়েছে মনে তো হয়না আমরা ভাইয়েরা বিয়ের পর বাড়িতে টিকতে পারব।দুই বোন হয়ে যাবে আবার দুই জা।”
“এরাই বাড়িটাকে প্রাণ ফিরিয়ে দিবে।আমরা সবাই তো কাজে ব্যস্ত থাকি।দিনশেষে এদের এই খুনসুটি দেখলেও শান্তি পাবে বাবা।”

রুদ্র হাসলো শুধু।আদ্রর কথার মাঝে ভুল কিছু ছিলো না।এরা দুইবোন একসাথে থাকলে আসলেই বাড়িটাকে আনন্দে ভরিয়ে রাখবে।এছাড়া তার হিয়াপাখিকে সে যেমন ভালোবাসে আদ্র ঠিক তার প্রেয়সীকে ভালোবাসে।
দুই বোনের ঝগড়া বাড়তেই থাকে।এক সময় না পেরে রাজ উঠে ওদের দিকে এগিয়ে এসে বলে,”বইন তোরা সর আমি আমার বউয়ের জন্য ব্রাইডাল ড্রেস সিলেক্ট করব।”
বীর খোচা মেরে বলে,”এটা আগে করতে পারলি না?”
“আব্বে শালা!বোনেদের প্রায়োরিটি দিতে গিয়ে যে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে যাবে এটা কি জানতাম?”
সিয়া আর হিয়া আবারও শুরু করলো।হিয়া বলে ওঠে,”তোর জন্য এগুলো শুনতে হলো।”
সিয়াও কি কম নাকি?সেও বলে,”তোর জন্য শুনতে হয়েছে।তুই আমাকে খোচা মেরে কথা বলেছিস।”
“তুই কি আমাকে ছেড়ে দিয়েছিস?তুইও আমাকে আগাছা বলেছিস।তোর লজ্জা করে না তোর বোনকে অপমান করতে?”

“তোর যদি লজ্জা না করে তাহলে আমি একা লজ্জা করে কি করবো?”
হিয়া আবারও কিছু বলতে নিবে রাজ বলে,”আবার শুরু হয়ে গেলো!”
মায়া এবার দুজনকেই থামিয়ে বলে,”আমি একেকটা দেখছি।তোমরা বলো কোনটা ভালো লাগছে।মন্ত্রী মশাইয়ের পছন্দ বাদ।”
“তাহলে আমার আর রিসিভশন পার্টি করা লাগবে না।এক রাত এখানেই পার করতে হবে।দুই বোনের একজন আরেকজনের পছন্দকে মূল্যায়ন করে না।”

মিলি জারা আর মৌ এদের কান্ড দেখছে আর হাসছে।মিলি আর জারা এদের কান্ডে অবগত।কারণ এর আগেও এমন অহরহ ঘটনা দেখেছে এরা।অবগত না শুধু মৌ।মায়াও কয়েকদিন ধরে দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেলো।
অনেক কষ্টে একটা লেহেঙ্গা পছন্দ করলো সবাই মিলে।এদের এই ড্রেস নিতে গিয়ে যে কান্ড ঘটালো তাতে শোরুমের লোকেরা বিরক্ত।ওরাই এবার সাহায্য করলো মায়ার ড্রেস বাছাইয়ের কাজে।

সবার জন্য ড্রেস নিয়ে এবার সবাই কসমেটিকসের দিকে গেলো।যে যার মতো পছন্দের প্রোডাক্ট নিতে ব্যাস্ত।জারা একটা লিপস্টিক নিয়ে আয়নার সামনে এসে ঠোঁটে দিয়ে চেক করছে।মুখটাকে একটু পাউট করে নেয় জারা।চুম্বন আকৃতির করে নিজেকে আয়নায় দেখার কারণে অনেক মানুষই তাকিয়ে আছে সেদিকে।বীর হিংস্র হয়ে যায় সাথে সাথে।রাজের নজর বীরের দিকে যেতেই রাজ লক্ষ্য করে তাকালো বীরের নিশানা অনুযায়ী।জারাকে এভাবে করতে দেখে রাজ বুঝে গেলো।অতঃপর মায়ার দিকে তাকিয়ে মায়াকে দেখে মৃদু হেসে গাইলো,”জারা জারা কিস মি কিস মি কিস মি,জারা জারা…”

বাকি গানটুকু গাওয়ার আগেই রাজের পায়ে লাথি মারলো বীর।রাজ নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে,”আউচ!আব্বে শালা মন্ত্রী হই আমি।সম্মান কর তোর দুলাভাইকে।”
“রাখ তোর মন্ত্রী।তুই মন্ত্রী তো আমিও মাফিয়া।তোর সাহস হয় কিভাবে আমার জানেমানকে নিয়ে গান গাওয়ার।তাও আবার নোংরা ইঙ্গিতে।”
কিছুক্ষণ অবাক চাহনি দিয়ে বাকিটা বুঝতে পেরে রাজ টেডি হাসি দিয়ে বলে,”শালাবাবু আমি তো আমার বউকে ইঙ্গিত দিয়ে দুষ্টু মনে মিষ্টি গান থুড়ি মিষ্টি মনে দুষ্টু গাচ্ছিলাম।তোর বউয়ের নাম যদি গানের লাইনে থাকে এতে আমার দোষ কিসের?এটা রাইটারের দোষ।”
“তুই শালা আসলেই লুচ্চা।”

জারা বীরের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় বীর কতটা রেগে আছে।বীরকে আরো রাগিয়ে দিতে জারা রাজকে উদ্দেশ্য করে বলে,”রাজ বেইবী,আমাকে এই লিপস্টিকে কেমন লাগছে?”
রাজ মায়ার দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে বলে,”আমার বউকে দেখেই কুল পাইনা তোমাকে দেখতে যাবো কোন দুঃখে শুনি।তোমার মাফিয়াকে জিজ্ঞাসা করলেই পারো।”
জারা মুখ ভেংচি দিয়ে বলে,”ওই মাফিয়া এসবে ইন্টারেস্ট থোরাই না দেখায়।ওনার তো খালি গুলি নিয়ে মানুষের খুলি উড়ানোতেই শান্তি।”

মায়া এবার ফুঁসে উঠেছে।সেও কি কম কিছুতে?মোটেই না।মায়া এবার আশেপাশে তাকালো।বেশ হ্যান্ডসাম হ্যান্ডসাম যুবক আছে এই মলে।তাদের নজর কিছুটা হলেও এদিকে আছে।মায়া লিপস্টিক নিয়ে নিজেও আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে দেখছে।মায়া ইচ্ছা করেই কিছু যুবকের সামনে নিজেকে লিপস্টিক দিয়ে চেক করে নিচ্ছে।আশেপাশের যুবকরা তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে।এটা দেখে রাজ হাত মুঠ করে উঠে দাড়ালো।মায়ার কাছে এসে মায়াকে পিছন থেকে আলতো আলিঙ্গন করে আয়নায় তাকায়।এই বিষয়টা সম্পর্কে ধারণা হয়ে গেলো সবার।রাজ যে জেলাস এটা বুঝতে অসুবিধা হলো না কারোর।মায়া মৃদু হেসে রাজের দিকে ঘুরে বলে,”এই লিপস্টিক নিলে কেমন হবে মন্ত্রী মশাই?”

রাজ মায়ার ঠোঁটের দিকে তাকালো।অতঃপর মায়াকে নিজের কাধে করে নিয়ে চলে গেলো ট্রায়াল রুমে।যাওয়ার সময় হাতে একটি পারফিউম নিলো।ট্রায়াল রুমে ঢোকার আগে যুবকগুলোর দিকে স্প্রে করে দিলো।তাও আবার সবার চোখে।যুবক তিনজন চোখ বন্ধ করে ছোটাছুটি করছে।পিয়াশ আর তারেক এসে ওদের সাহায্য করে।
ট্রায়াল রুমের ভিতরে এসে রাজ দরজা বন্ধ করে দেয়।মায়া ভ্রু কুঁচকে বলে,”এখানে আনলেন কেন?ড্রেস তো সিলেক্ট হয়েই গেছে।”

“লিপস্টিক সিলেক্ট বাকি আছে।”
বলেই রাজ মায়ার ওষ্ঠ আঁকড়ে নেয়।মিনিট পাঁচ পর ছেড়ে দিয়ে বলে,”টেস্ট গুড।এই ব্র্যান্ডের লিপস্টিক নিবে।স্ট্রবেরি ফ্লেবার আছে।তোমার ওষ্ঠের সাথে স্ট্রবেরি টেস্টটাও হয়ে যাবে।”
মায়া কিছু বলল না।রাজ মায়ার মুখটা দুইহাত নিয়ে আলতো করে ধরে কপালে ওষ্ঠ ছুঁয়ে বলে,”তুমি ব্যতীত অন্য কোনো নারীর দিকে আমি চোখ তুলেও তাকাতে পারিনা মায়াবতী।আমার জীবনের সর্বস্ব জুড়ে এই এক নারীই জায়গা করে নিয়েছে।”
মায়া হেসে দেয়।রাজ মায়ার নাকে নাক ঘষে বলে,”তুমিহীনা আমি শূন্য,তুমি আছো বিধায় আমি পূর্ণ।”
“আমিও মন্ত্রী মশাই।”
রাজ মায়াকে ছেড়ে দিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো।হিয়া অবাক হয়ে বলে,”লিপস্টিক চেক করতেও ট্রায়াল রুমে যাওয়া লাগে?”

হিয়া কথাটি আস্তে বললেও পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রুদ্র শুনে নেয়।হিয়ার দিকে তাকিয়ে ধীর কণ্ঠে বলে,”তুই চাইলে আমিও তোর লিপস্টিক সিলেক্ট করে দিতে পারি।ঠিক ওদের মতোই।”
হিয়া রাগী দৃষ্টিতে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে,”নষ্ট পুরুষের কথাবার্তা নষ্টই হয়।পাশ থেকে সরে যান।”
বলেই অন্যদিকে চলে যায় হিয়া।রুদ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে নিজের জন্য কিছু সিলেক্ট করে।এরপর একেকজন নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে নেয়।

যে যার মত বাসায় চলে এসেছে।বীর আর যারা বাগান বাড়িতে এসেছে।বাড়িতে এসেই জারাকে সোফায় ফেলে তার উপর বীর ঝুঁকে রক্তিম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।জারার দুইহাত শক্ত করে ধরে রেখেছে বীর।জারার মুখের দিকে রাগী দৃষ্টি দিয়ে বলে,”তোকে অতিরিক্ত ভালোবাসি বলে গায়ে হাত তুলতে পারিনা। আর এখনও বিয়ে করিনি বলেই তোর সাথে জোর জবরদস্তি দেখাচ্ছি না।কিন্তু জানেমান তোর ডানা তো দেখছি একটু বেশি উড়ছে।ভুলে যাচ্ছিস আমি কে?”
“মাফিয়া আরহাম খান বীর।যে মানুষের জীবন নিয়ে নেয় এক তুড়িতে।তবে আমাকে কিছুই করতে পারে না।”
বীর জারাকে আরো শক্ত করে ধরে।জারা চোখ খিচে বন্ধ করে।বীর এবার হিসহিসিয়ে বলে,”একবার ওদের অনুষ্ঠান শেষ হোক এরপর তোকে পার্মানেন্ট আমার করে নিবো।”
“পারবে না তুমি।আমার আর তোমার মাঝে দেওয়াল আছে বীর।”
“আমার ক্ষমতা সম্পর্কে তোর ধারণা নেই তাই তো?যত বড় শক্ত দেওয়াল আমাদের মাঝে থাকুক সব ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিবো।”

“জোর করে ভালোবাসার অধিকার কেন চাও?”
“কারণ তুমি আপনাআপনি ভালোবাসা দিবে না তাই।”
বীরের কন্ঠ স্বাভাবিক হয়ে এল।তাই জারাও নরম কণ্ঠে বলে,”কেউ দূরে যেতে চাইলে তাকে দূরে যেতে দিতে হয়।”
“তাহলে যে শূন্যে হারিয়ে নিজেকে নিঃস্ব করে দেওয়া হয়।আমি হতে চাইনা এই নিঃস্ব জীবনের মালিক।”
“একদিন আফসোস করবে এই নিঃস্ব জীবনের জন্য।তুমি আমাকে চাইবে না বরং গ্রহণ করবে নিঃস্ব জীবনকে।”
“সেই একদিন আসার আগে যেন আমার মরণ ঘটে।”
“বীর!”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ২৬+২৭

বীর কোনো কথা না বলে জারাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের ঘরের দিকে যেতে যেতে বলে,”আমার ভালোবাসা থেকে পালাই পালাই করবে না।তাহলে পাবে আমার থেকে মরণব্যাধি যন্ত্রণা।”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৩১+৩২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here