মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৩১+৩২

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৩১+৩২
ইশরাত জাহান

সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর মায়া কল করে রুবিকে।রুবি জানিয়েছে আজ সোনালী ওদের কোম্পানিতে গিয়েছিল।মায়া ম্যাসেজ করে দেয় সে ফ্রী হলে কল দিবে।পাশে তাকিয়ে দেখলো রাজ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।এই সুযোগে সে ব্যালকনিতে আসে।রুবিকে কল দিতেই রুবি ধরলো।মায়া প্রশ্ন করে,”ওই মহিলা আমার ওখানে কেন গিয়েছিল?”
“আজ উনি এখানে এসে আমাকে মোহনা বলে ডাকে।আমি তো মোহনাকে চিনি না তাই অনেকবার বলেছি যে আমি মোহনা না।আমার নাম রুবি।অদ্ভুত ব্যাপার উনি মানতেই নারাজ।আমি বারংবার বলেছি এই কোম্পানিতে মোহনা বলে কেউ নেই।উনি শেষমেষ আমাকে মোহনা হিসেবেই দেখছেন।”

মায়া মৃদু হাসলো।সোনালীর ইনভেস্টিগেশনে গড়মিল করে ফেলেছে।মায়াকে সরদার বাড়ির বউ হিসেবে জানে আর মোহনাকে খুঁজতে গিয়ে অন্য নারীকে ধরে নিলো।মায়া দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে,”এরপর?”
“অনেক কষ্টে বুঝালাম আমি রুবি।তারপর উনি বললেন আমি নাম পাল্টিয়েছি।হয়তো আমার অভিমান বেড়েছে কি আবোল তাবোল কথা।এরপর আবার অফার করলেন।”
“কিসের অফার?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এই যে আমি আমার হক আদায় করতে সরদার বাড়িতে যাবো।আমার পুতুল বর নাকি বিয়ে করেছে।আমাকে ওখানে গিয়ে আমার বরের থেকে বউয়ের মর্যাদা নিতে হবে।আমার নামে নাকি সম্পত্তিও আছে।ওগুলোর রাজত্ব আমি করব।আমার দাদু নাকি এটা বলে গিয়েছে যে আমার সাথে আমার পুতুল বরের বড় হলে বিয়ে হবে।আই ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড ম্যাম এই মোহনা কে আর এই মহিলা আমার পুতুল বর কোথায় পেলো?অনেক কষ্টে তাকে তারিয়েছি।যাওয়ার সময় উনি বলেছেন আমাকে সময় দিবে।আমি যদি রাজি থাকি তবেই আমাকে উনি হেল্প করবে।এই সমস্ত কথা আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো।তারউপর আমার আম্মুকে প্রশ্ন করাতে সে তো হেসেই দেয়।বলে আমার দাদু এমন কিছুই করেনি।আর আমার পুতুল বর থাকলে এত ঘটা করে পাত্র পক্ষ ডাকতেন না।”

মায়া নিজেও হেসে দেয়।মায়াকে ভেবে রুবিকে মোহনা বলে দাবী করছে সবাই।আসলে খেলাটা ঘুরিয়ে অন্যদিকে যাচ্ছে।সোনালী এখন চায় রাজের জীবনকে ধ্বংস করতে।তাই তো সে মোহনা সরদারকে খোঁজ করছে।এবার সবকিছু পরিষ্কার হলো।মোহনাকে এনে মায়ার সাথে দন্ড বাদানো।সতীন সতীন খেলা খেলতে চায় সোনালী।ঠিক যেমন নিজেও খেলেছিল।মায়া মনে মনে বলে,”এবার তো এই সতীন সতীন খেলা হবেনা মিসেস সোনালী।এবার সতীন সতীন অভিনয় হবে।যেটা দিয়ে আপনাকে বরবাদ করে দিবো।”
রুবি কোনো উত্তর পেলনা।তাই নিজেই বলে,”হ্যালো ম্যাম শুনছেন?”
“হুম শুনছি।শোনো রুবি আমি একটা অফার দিচ্ছি তোমাকে।”
“কিসের অফার ম্যাম?”
“তুমি মোহনা সেজেই ওই মহিলার কথাতে রাজি হও।”
“বাট ম্যাম কে এই মোহনা যে আমি রাজি হবো?”

“ধীরে ধীরে জানতে পারবে।আর একটা কথা তুমি এখানে তোমার পুতুল বর রূপে যাকে দেখবে তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে।শুধু সোনালীর কথাগুলো শুনে আমাকে জানিয়ে দিবে।তোমার কাজ এখন আমার অ্যাসিসট্যান্ট হয়ে আমার ঘরে এসে আমার পিছনে ঘটা কুটকাচালি গুলোর আপডেট দেওয়া।”
রুবির মাথার উপর দিয়ে গেলো সবকিছু।শুধু রুবি এটুকুই বলে,”ওই মহিলা কি আপনার কেউ হয় ম্যাম?”
“আমার স্বামীর কাকার সেকেন্ড ওয়াইফ।”

এত পেঁচিয়ে বলার কি আছে বুঝলো না রুবি।হয়তো নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।তাতে রুবির কি?সে তো যাবে মায়াকে সাহায্য করতে।মাস গেলে মোটা অংকের টাকা পাবে।আর মায়া যেভাবে রুবিকে মাইন্ডলি সাপোর্ট করে এটা অনেকেই করেনা।আজকাল মায়ার মত সাহায্যকারী খুব কম চোখে মেলে।একটু সার্ভিস পেতে গেলে একটু তো কিছু রিটার্ন দিতেও হবে।রুবি পারবেও না মায়ার মুখের উপর না করতে।মায়া যে রাগী।না জানে চাকরি থেকে বের করে দেয়।এমন ভয় হওয়াটাই স্বাভাবিক।তাই রুবি রাজি হলো মায়ার প্রস্তাবে।জানালো,”আমি আসব ম্যাম।”
“কালকেই ওই মহিলাকে কল দিয়ে বলবে তুমি তোমার পুতুল বরের থেকে অধিকার আদায় করতে চাও।”
“ওকে ম্যাম।”
“এরপর কি হয় আমাকে টেক্সট দিও।আর হ্যাঁ আবারও মনে করিয়ে দেই ওই পুতুল বরের কাছে ঘেষার চেষ্টাও করবে না।এর ফল খুব খারাপ হবে।এই মায়া যেমন মায়াবতী হতে জানে ঠিক তেমনি হিংস্রবতী রূপ নিয়ে রক্তবতী হতেও পারে।”

রুবি শুকনো ঢোক গিলে বলে,”মনে থাকবে ম্যাম।আমি আপনার কথার বিরুদ্ধে যাবো না।”
মায়া কল কেটে দেয়।রুবি স্বস্তির দম নিলো। কাল থেকে নতুন রূপে নতুন পরিবেশে যাবে।বেচারি জানেও না সে যেখানে যাচ্ছে ওটা তারই প্রেমিকের বাড়ি।সেই প্রেমিক যে তাকে ধোঁকা দিয়ে ফুর্তি করছে।আর সে যাকে কাল পুতুল বর বলবে সে আসলে মন্ত্রী শাহমীর রাজ।জানলে হয়তো এখনই ভয়কে কেঁপে উঠতো।
পার্লারে এসেছে মায়া জারা সিয়া হিয়া মৌ ও মিলি।গার্লস গ্রুপ সব এক জায়গায় বসে আছে।সবাই সাজবে।এরপর চলে যাবে কমিউনিটি সেন্টারে।সিয়া হিয়া মৌ মিলি এরা অন্যদিকে সাজতে ব্যাস্ত।জারা একাই অনেক ভালো সাজতে পারে তাই সে কারো হেল্প নিলো না।মায়াকে সাজানো শেষ।জারা এটা দেখে বাকিদের দিকে এক পলক তাকিয়ে মায়ার কাছে এলো।মায়া জারাকে দেখে মৃদু হাসলো।জারা কাচের দরজাটা হালকা ভিড়িয়ে বলে,”আমি তো বীরের থেকে কোনো ক্লুই পাচ্ছিনা।এমনি এমনি ধরা দিলাম ওর কাছে।”
মায়া হাতে থাকে চুড়িগুলো দেখছে আর বলছে,”আমার মন্ত্রী মশাই আর ভাই এরা খুবই ধূর্ত।কোনকিছু খুঁজে পাওয়া এত সহজ না।”

“শুধু কি ওরা?ওই আদ্র আর রুদ্র এদের সাথে শামিল আছে।আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।”
“আমরা সবাই পড়ে আছি ওই সোনালীর বরবাদ করতে কিন্তু ওরা চারজন কেন ওদের প্রতি পদে সাহায্য করছে এটাও বুঝতে পারছি না।আমার তো ইচ্ছা করছে এখনই ওই সোনালীকে খুন করে দেই।”
“শুধু তুমি একা না।আমিও চাই ওই কালনাগিনীকে নিজের হাতে শেষ করে দিতে।যে আমার বাবা মাকে খুন করে আমার সম্পত্তি নিজের নামে আত্মসাদ করতে চায়।”
“তবুও তো তোমার বাবার পাওয়ার তুমি পেয়েছো।”
“এটা সম্ভব হয়েছে কারণ তুমিই আমাকে গোপনে সাহায্য করেছো।”
মায়া মৃদু হাসে।জারা এবার প্রশ্ন করে,”তুমি কেন রাজকে সরাসরি প্রশ্ন করছো না?”
“মন্ত্রী মশাই আমাকে কিছুই জানাবে না।তার মাঝে অন্যকিছু ঘুরছে।আমি দেখেছি বিষয়টি।আমি কেন মন্ত্রী মশাইকে একসেপ্ট করলাম কতটুকু কি জেনেছি এগুলো নিয়ে যেন তার আগ্রহ দেখানোই নেই।উল্টো আমি কিছু বলতে গেলে সে এড়িয়ে যায়।”

“প্যানিক নিও না।ঠিক হয়ে যাবে।”
মায়া রাগের সাথে উঠে দাঁড়ায়।সামনে থাকা টেবিলে শক্ত করে বাড়ি দিয়ে বলে,”কিভাবে বলছো প্যানিক না নিতে?তোমার বাবা মায়ের মৃত্যুতে তোমার মধ্যে কি যাচ্ছে এটা আমি অবশ্যই উপলব্ধি করি।কিন্তু আমার মধ্যে দিয়ে কি যাচ্ছে এটা কি কেউ বুঝবে?আমি নিজ চোখে দেখেছি আমার মাকে অত্যাচারিত হতে।আমি আমার মাকে বাঁচাতে গেলে উল্টো আমার উপরেই পাল্টা আঘাত করা হতো।কত সহ্য করেছি তুমি জানো?যে বয়সে বাবা মায়ের একসাথে ভালোবাসা পাবো সেই বয়সে আমি বাবাকে দেখতাম মাকে অবহেলা নির্যাতন করতে।আমার বলতেও বুক কাপে আমার বাবা আমার মাকে কালো বলে অবজ্ঞা করতো।আমার মায়ের প্রেগনেন্ট অবস্থায় আমাদের বাড়ি ছাড়া করে।করুণা করেনি ওই রাতে কেউ।আমাকে লাথি মেরে বের করা হয়।আমার মাকে ট্রাক দিয়ে আমার সামনে মারা হয়।ভাগ্যিস ভাই এসেছিলো।নাহলে তো আমার বোনকে পেতাম না।”

“আমার এখানেই একটা খটকা লাগছে যে আন্টিকে যদি বীর পেয়েই থাকে তাহলে মৌকে বাঁচাতে পারলেও আন্টিকে কোথায় রাখলো?”
“ভাই তো জানালো মাকে নাকি হাসপাতালে রেখে যাওয়া হয়।মায়ের মৃত্যু হয়।বোনকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে ভাই পারেনি মাকে নিয়ে কোনো ব্যবস্থা করতে।এটা সত্যি যে বোনের তখন খারাপ অবস্থা ছিল।ট্রাকের ধাক্কাটা অনেক জোড়েই লাগে।বোনের সমস্যা হয়।সাথে আমিও ভেঙ্গে পড়ি।মানসিকভাবে অনেক ঝামেলা করি।আমাকে এসাইলামে পাঠানো হয়েছিল আর বোনকে নিজের কাছে রেখেছিল।তাই মায়ের কবর কোথায় কেউ জানি না।”
“আমার কেন জানি মনে হয় ভিতরে কিছু তো একটা রহস্য আছেই।নাহলে সব রকম চেষ্টা করেও কেন আমরা ওই মহিলাকে নিজেদের আস্তানায় আনতে পারছি না।কেন বারবার রুদ্র আর রাজ মিলে ওদেরকে বাচাচ্ছে?”

“এটা আমারও মনে হয়।কিছু তো একটা কারণ আছেই।কয়েকবার তুমি আর আমি আড়ালে ওই মহিলাকে ট্র্যাপে ফেলতে চেয়েছি।কিন্তু সব রকম ভাবেই বিফল হয়ে যায়।এটা জানতে হবে আমাদের।তাছাড়া আয়রাকে কেন বিয়ে করতে চেয়েছিল মন্ত্রী মশাই এটাও একটা পয়েন্ট।এগুলো জানতে হবে।কিন্তু কিভাবে জানবো?আমি তো সবার পিছনেই স্পাই লাগিয়েছি।সোনালী ছাড়া কারোর স্পাই সঠিকভাবে তথ্য দিতে পারেনি।শুধু এটুকুই জেনেছি রুদ্র একজন সিক্রেট সিআইডি অফিসার।”
“সেও কি তবে কোনো রহস্যের উদঘাটন করছে।”
“এটা তো শিওর ইনভেস্ট করছে ও কিন্তু কি নিয়ে এটা জানা সম্ভব না।ওদের সবকিছু গোপনে চলে।কেউ কারো সিক্রেট ফাঁস করে না।”

ওরা আরো কিছু বলতে নিবে মৌ এসে দরজা খুলে বলে,”তোমাদের হলো?আমাদের সাজ শেষ।”
“আমাদেরও হয়েছে।”
বলেই বের হয় সবাই।কমিউনিটি সেন্টারের সামনে এসে হাজির হলো সব মেয়েরা।শুধু আসেনি জারা।ও বীরের সাথে আসবে।জারা আসতে চাইছেনা।আসলেই সোনালীর সম্মুখীন হতে হবে।বর্তমানে সোনালীর সম্মুখীন হওয়াটাও বিপদজনক।কারণ সোনালী জানে জারা তার হয়েই কাজ করে।রাজকে নিজের জালে না রেখে পালিয়ে যাওয়ার পর আবার বীরের পাশে জারাকে দেখলে কি রিয়েকশন দিবে এটা ভাবতেই জারার গা শিউরে উঠছে।জারার বাবা মাফিয়া থাকে।সেই সুত্রে জারাও মাফিয়া হয়েছে।সোনালী হতে সাহায্য করেছে।কিন্তু জারার বাবার যে ক্ষমতা ওটা সোনালীর দখলেই বেশি।নাহলে কি আর সোনালী এতকিছু করতে পারত?এই মহিলা অনেক মানুষের জীবন ধ্বংস করেছে।সবকিছুর টার্গেটে ছিলো মায়ার মা মানে শাহানা পারভীন।শাহানা পারভীনকে মোহন সরদার দু চোখেও সহ্য করতে পারত না।এটার সুযোগ নিয়েই মায়ার জীবন ধ্বংস করল সোনালী।

মায়া গাড়ি থেকে নামতেই রাজ এসে মায়ার হাত ধরে নেয়।রাজ সাদা আর গোল্ডেনের কম্বিনেশনে শেরওয়ানি পরেছে।মায়া পরেছে গাঢ় নীল লেহেঙ্গা।দুজনে ফুল দিয়ে সাজানো রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে।চারপাশ থেকে অনেকেই ফুল ছিটিয়ে দিচ্ছে দুজনের দিকে।রাজ আর মায়া একে অপরের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো।এর মধ্যেই রাজ সবাইকে অবাক করে মায়াকে কোলে নেয়।এটা দেখে সবাই অবাক হলেও খুশিতে হাততালি দেয়।ক্যামেরাবন্দি করে নিলো সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যান।সরাসরি লাইভও হচ্ছে।অনেকে অনেক ধরনের মন্তব্য দিচ্ছে।কেউ কেউ বলছে,”মেইড ফর ইচ আদার।”তো কেউ বলছে,”ঢং এগুলো।সব লোক দেখানো কাজ।দুদিন পর তালাক হয়ে যাবে।”

কেউ কারো মন্তব্যে পাত্তা দিল না।মিডিয়ার কাজ তো সাংবাদিক করবেই।তারা পাবলিক ফিগারদের সমস্ত কিছু যেভাবেই হোক ভাইরাল করবে।বাকিটা মন্তব্য দিয়ে রটানো জনগণের মর্জি।
মায়াকে কোলে করে নিয়ে হাঁটছে রাজ।মায়া রাজের বুকে আলতো চাপড় দিয়ে বলে,”লোকজন দেখছে তো।”
“দেখুক।”
“কি বলবে তারা?অনেকে কুটুক্তি করবে তো।”

“অনেকেই অনেককিছু বলে মায়াবতী।কান দেওয়ার সময় আমার নেই।আমি তো আমার বউকে নিয়ে প্রতিটা মুহূর্ত আলাদাভাবে কাটাতে চাই।এই ছোট্ট জীবনটাতে লোকের পরোয়া করে সুখ কেন তাড়িয়ে দিবো?”
মায়া কোনকিছু বলল না।সেও তো লোকের পরোয়া করেনা।মায়া রাজের কোলে করে সেন্টারের ভিতরে ঢুকছে আর কল্পনা করছে, দূরে দাঁড়িয়ে আছে শাহানা পারভীন।মায়ার চোখ চিকচিক করে।পানি জমেছে।রাজের বুকে মুখ গুঁজে জমে থাকা পানিটা মুছে নেয়।অনেকেই এটা দেখেও মন্তব্য দিয়ে দিলো।ভিতরের যন্ত্রণা বুঝছে শুধু মায়া একাই।রাজ তার বুকে শীতল ভাব অনুভব করে।মুখে কিছু না বললেও মায়ার পিঠের কাছে থাকা হাতটা শক্ত করে ধরে মায়াকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।মায়া মাথা উঁচিয়ে রাজের দিকে তাকালো।রাজ হেসে দিয়ে বলে,”আমি আমার মায়াবতীর পাশে সবসময় আছি।তার চোখের পানি মুছে মুখের হাসির কারণ হতে।”
মায়াকে ওর আসনে বসিয়ে পাশের আসনে বসলো রাজ।একেক করে সবাই উপস্থিত হলো।তারা ফুলের তোরা দিয়ে দুজনকে স্বাগতম জানাচ্ছে।

সামনে থাকা স্টেজে উঠে এলো এক যুবক।এই সেন্টারের কেউ হবে।মাইক হাতে এনাউন্স করছে,”লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যান।আপনাদের মাঝে এখন আমাদের হার্ট টাচিং কাপলদের জন্য ড্যান্স পারফরম্যান্স করে দেখানো হবে।শুরুতেই ড্যান্স করতে আসছে আমাদের সরদার মহলের ইয়ং হার্ট টাচিং বয় রুদ্রদীপ রুদ্র।”
বলেই যুবকটি চলে যায়।স্টেজের দিকের আলো নিভে গেলো।সাথে সাথে রং বেরঙের বাতি জ্বলতে থাকে।এরপরই মিউজিক বেজে উঠলো।মিউজিকের তালে স্টেজে কয়েকজন যুবক যুবতী এসে দাড়ালো।ওদের মাঝখানে থেকে মিউজিকের সাথে পিছন দিক থেকে পা ঘুরিয়ে সবার সামনে ফিরল রুদ্র।সবাই হাততালি দিলো রুদ্রকে দেখে।অনেকে তো আছে রুদ্রকে দেখে সিটি বাজালো।প্রায় যুবতীর মনের মাঝে বাস করা যুবক স্টেজে এসেছে বলে কথা।আগুন জ্বললো একজনের মনে।সে আর কেউ না এই নষ্ট পুরুষের হিয়াপাখি।রুদ্র সবাইকে একবার দেখে নিয়ে গানের সাথে তাল মিলিয়ে নাচতে থাকে,

গুরিও কা নেশা পেয়ারে,
নেশা সাবছে নাশিলা হে।
জিসে দেখু,ইহা বো হুসনে কি বারিশ কা গিলা হে।
ইশাক কে নাম পে কারতে সাবি আজ রাসলীলা হে।
মে কারু তো সালা ক্যারেক্টার ঢিলা হেয়,
হোওও মে কারু তো সালা ক্যারেক্টার ঢিলা হে।
গানটার সাথে ড্যান্সের সময় রুদ্র বারবার তাকিয়েছে হিয়ার দিকে।যেনো হিয়াকেই ইঙ্গিত দিয়ে ড্যান্স করছে।এরমাঝে রুদ্রের পাশে এসে ড্যান্স করছে জেসি।হিয়ার দেহে তো এবার আগুন লেগে গেলো।গা শিউরে উঠছে রাগে।সহ্য করতে না পেরে অন্যদিকে ফিরে চশমা ঠিক করলো।তাকাবেই না এই যুবকটির দিকে।

রুদ্র ড্যান্স শেষ করে সোজা মায়া রাজের দিকে এলো।রাজকে জড়িয়ে ধরে বলে,”কংগ্রাচুলেশন ব্রো।”
রাজ মৃদু হেসে বলে,”নেক্সট টাইম ইওর লাক।”
রুদ্র মৃদু হেসে এদিক ওদিক তাকালো।হিয়াকে কোথাও পেলো না।হিয়াকে দেখেছিল সে।কি সুন্দর অভিনয় তার হিয়াপাখির।নিখুঁত অভিনয় করে এড়িয়ে গেলো রুদ্রকে।কিন্তু সবকিছুই পরখ করে রেখেছে রুদ্র।হেসে দিয়ে অন্যদিকে চলে গেলো রুদ্র।

রুদ্র যেতেই রাজ মায়ার দিকে এগিয়ে এলো পিয়াশ ও মৌ। পিয়াশ রাজকে জড়িয়ে ধরে আর মৌ মায়াকে।রাজ পিয়াশের উদ্দেশ্যে বলে,”আজকে তোমাদের ওয়েডিং পার্টি করলে সমস্যা কি ছিলো?এখানে আমাদের সাথে তোমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানটা হলে আমার মায়াবতী আরো বেশি খুশি হতো।তুমি রাজি হলে না।”
পিয়াশ মৃদু হেসে দেয়।সে যতই কেউ তাকে দয়া দেখাতে আসুক নিজের ক্ষমতার বাইরে যাওয়াটা তো বিবেকের ব্যাপার।পিয়াশ এতটা বিলাস জীবন কাটায়নি কখনও।মৌকে তার স্বল্প আয়ের জীবনে চালাতে পারবে।এখন বিয়ের পরপর যদি অন্যের আশ্রয়ে বিলাসিতা পায় তাহলে মৌকে স্বামী হিসেবে সে কিছুই দিতে পারেনা।এসব আরো নানান চিন্তা করেই পিয়াশ আজকে নিজেদের নামটা অনুষ্ঠানে রাখতে চায়নি।পিয়াশের পরিকল্পনা ছোট।সে ভেবে রেখেছে নিজের বাসায় মোটামুটি কিছু রান্না করে শুধু এই সরদার পরিবারকে খাওয়াবে।এটা মৌকে রাতেই বলেছে।মৌ তাতেই সন্তুষ্ট। পিয়াশ রাজের কথার উত্তর না দিলেও মৌ বলে,”আমার স্বামীর যতটুকু সাধ্য আমি তাতেই সুখে থাকতে চাই জিজু।আমরা আমরা যে ছোট অনুষ্ঠান করবো তুমি নাহয় তাতেই শামিল থাকবে।”

রাজ গোল মুখভঙ্গি করে বলে,”ওওওও তারমানে তোমাদের প্ল্যান আছে?আমি তো ভেবেছি আমার পিয়ু বেবী নিরামিষ।এসব বিয়ে প্রেম বউকে হ্যাপি বুঝেই না।আমি আমার পিয়ু বেবীকে ট্রেনিং দিবো।এখন তো দেখছি আমার পিয়ু বেবীর পেটে পেটে অনেক কিছু।”
সবাই হেসে দেয়।মৌ মায়ার হাতে একটা রেপিং করা বক্স দিয়ে বলে,”আমাদের তরফ থেকে ছোট্ট উপহার আপু।”
মায়া উপহার নিয়ে বলে,”আমার বোনের ভালোবাসা আমার কাছে অনেক বড়।”
সামনে স্টেজে যুবকটি এসে এনাউন্স করছে,”এখন আপনাদের মাঝে ড্যান্স করবেন সরদার পরিবারের আরো এক সিঙ্গেল যুবক।যে তার সেবা দ্বারা মানুষকে রাখে সুস্থ।যার নীরবতায় থাকা মুচকি হাসিতে ঘণ্টা বাজে নারীর মনে।তাহলে আর দেরি না চলে আসুন ডক্টর অহর্নিশ আদ্র।”

সিয়া অবাকের সাথে তাকালো স্টেজের দিকে।আদ্র ড্যান্স করবে।কই সে তো জানে না।আদ্র বেশ কিছুদিন সিয়াকে এড়িয়ে যাচ্ছে।এসে ধরে আদ্রর সাথে কথা বলছে না বললেই চলে।হসপিটালে সিয়া ক্লাস করার পর আদ্রর আশেপাশে ঘোরে।আগের মত আদ্র আর সিয়াকে পাত্তা দেয়না।অবশ্য আদ্র এমনই করে।হুট করে মুড দেখিয়ে আবার কখন জানি নিজে থেকে না পেরে চলে আসে।সিয়া তো প্রায়ই আদ্রকে সন্দেহ করে। খোঁজও নেয় আশেপাশে।নাহ বাজে কোনো দিক নেই আদ্রর মাঝে।কোনো নারী নেশা নেই।রুদ্রের মত প্লে বয় না আদ্র।তাও কেন যে এমন করে বুঝে আসে না সিয়ার।

আদ্র ড্যান্স ফ্লোরে আসে।সাথে দুইপাশে দুটো মেয়ে।এই প্রথম আদ্র ডিজে মিউজিকের সাথে ড্যান্স করছে।মিউজিকের সাথে ড্যান্স করতে করতেই গান বেজে উঠলো।গানের তালে সানগ্লাস চোখে দিয়ে ড্যান্স করছে আদ্র।আদ্র সানগ্লাস রাখার কারণে ওর দিকে লাইটের আলো বেশি রাখা হয়েছে।কালা চশমা গানেও যে আদ্র এভাবে আশেপাশে সবার মন জয় করতে পারে এটা ভাবনার বাইরে ছিল সিয়ার।সিয়া মনে মনে ফুসলো।চোখ এড়ালো না রাজের।হিয়া আর সিয়া তার দুই বোন আজ তার বিয়েতে জ্বলছে।এদেরকে জ্বলতে দেখে রাজ মুচকি হাসলো শুধু।আদ্র ড্যান্স শেষ করে রাজ মায়ার দিকে এসে বলে,”কংগ্রাচুলেশন ব্রো এন্ড মায়াবতী।”

“মায়াবতী ওনলি ফর মি।”
“নো, ইউ মিস্টেকলি সেইড ইট।দাদু আমাদের সবাইকে মায়াবতী বলতে শিখিয়েছে।শুধু তোমার নজরে সে তোমার বউ আর আমাদের নজরে আমার কলিজার বোন।”
রাজ মৃদু হাসে।মায়া ওদের কথা শুনে স্পষ্ট মায়া তাদের কাছে আগে থেকেই ধরা পড়ে আছে।কিছুই বলল না মায়া।শুধু আদ্রর কাছ থেকে উপহার নিলো।আদ্র চলে গেলো নিজের কাজে।রাজ দেখছে সিয়া অদ্রকে দেখছে আর রাগে ফুঁসে উঠছে।সিয়া রাগ নিবারণ করতে না পেরে অন্য দিকে চলে গেলো।হিয়াকে তো অনেক আগেই যেতে দেখেছে ওই দিকটায় এখন আবার সিয়া।রাজ বিড়বিড় করে বলে,”এই দুটো আবার কোন ঝগড়া বাদাবে আল্লাহ জানে।আমিই গিয়ে সামলাই নাহলে ঝামেলা আছে।”
রাজকে উঠে অন্য কোথাও যেতে দেখে মায়া প্রশ্ন করে,”কোথায় যাচ্ছেন?”
“একটু ঘুরে আসছি।”

মাহমুদ সরদার চোখ রাঙিয়ে বলেন,”তোমার বিয়ের অনুষ্ঠান আজ।একটু স্থির হতে পারো না?যে বউ বউ করে কান ফাটিয়ে দেও আজ আবার তাকে ছেড়েই উঠে যাচ্ছো।”
রাজ চ বোদক উচ্চারণ করে বলে,”এমনভাবে বলছো যেনো আমার বউকে রেখে আমি আরেকটা বউ আনতে যাচ্ছি! বউ সমেত অনুষ্ঠান যেনো সুষ্ঠুভাবে হয় তারই ব্যাবস্থা করতে যাচ্ছি।এখন লক্ষী বাবার মত এদিকটা দেখো আমি আসছি।”

মাহমুদ সরদার চাইলেও পারছেন না রাজকে কিছু বলতে।অবশ্য তিনি বলেনই বা কখন?কিছু একটা বলতে নিলেই রাজ পাল্টা জবাব এমনভাবে দেয় যেন তার মুখটাই বন্ধ হয়ে যায়।
সিয়া এসে হিয়ার পাশে দাঁড়ালো।দুজনেই সেন্টারের এক কোনায় রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে।হিয়ার নিশানা দূর আকাশের দিকে।চশমা চোখে আকাশটা দেখতে ব্যাস্ত।সিয়া ওর পিছনে এসে উল্টো দিক হয়ে আঙুল খুঁটছে।কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে সিয়া বলে,”এরা দুইভাই নিজেকে কি ভাবে বলতো?”
ভ্রুকুটি করে হিয়া বলে,”দুইভাই কোথায়?একা ওই লম্পট লোকটা নিজেকে মহান কিছু ভাবে। দেখলি না কেন ধেইধেই করে নাচলো?”

“তুই তো শুধু তার নাচ দেখেই চলে এলি।আমি তো এতদিন যাকে নিরামিষ ভাবতাম তাকেও নাচতে দেখলাম।”
হিয়া আশ্চর্যের সাথে পিছনে ফিরল।সিয়ার মুখটা দেখে হেসে দিয়ে বলে,”আরো গর্ব কর তুই।তোর হবু স্বামী নাকি অনেস্ট।কতবার বললাম পুরুষ মানুষ মানেই ঝামেলার।”
“খোচা মারলি তুই?আমি তোর কাছে আমার কষ্ট শেয়ার করতে এসেছি।”
“তোকে আমি আগেই সতর্ক করেছি।”
“আমারই ভুল।তোর মত বান্দরমার্কা বোনের কাছে মনের কষ্ট শেয়ার করতে আসা।”
“আসতে গেলি কেন রে আমার কাছে?আমি বলেছিলাম আসতে?”
রাজ দৌড়ে এসেই এদের ঝগড়া দেখে মাথায় হাত।তাও একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয় কারণ ঝগড়ার সূচনা হলো মাত্র।মাত্রাতিরিক্ত কিছু হয়নি।সিয়া পাল্টা কিছু বলতে নিবে রাজ হাততালি দিয়ে বলে,”আরে বাহ!আমার দুইবোন দেখি সেই বুদ্ধিমান।আমার বোন হয়ে নাকি গোবরঠাসা তোদের মাথায়।আমি তোদের নিয়ে গর্ববোধ করবো কি করে বলতো?”

হিয়া চশমা ঠিক করে রাজের দিকে ফিরল সিয়া রাজকে উদ্দেশ্য করে বলে,”ও ঝগড়া বাদালে আমি কি করবো?”
হিয়া কিছু বলতে নিবে রাজ বলে,”আমি জানি তোরা কেন কষ্ট পেয়েছিস।”
দুজনেই অবাক চাহনি দিলো।রাজ মৃদু হেসে বলে,”বিয়ে করেছি মানে এই না যে বউ বউ করতে করতে বোনেদের ভুলেই যাবো।”

ওরা দুইবোন এসে রাজের দুই বাহুতে জায়গা করে নেয়।রাজ দুইবোনের মাথায় হাত রেখে বলে,”তোরা দুইবোন আমার কলিজার একাংশ।আমার বোনের অনেক শখ ছিল।যেটা তোরা দুজনে এসে পূরণ করে দিলি।”
দুইবোন মুচকি হাসে।মাহমুদ সরদার আড়াল থেকে এই দৃশ্য দেখে ভিতরে চলে যান।এসেছিলেন রাজকে আড়ালে কিছু বলতে।রাজ যে এই দুই বোনের মন ভালো করতে এসেছে এটা বুঝতে পারেননি প্রথমে।মাহমুদ সরদারের মনে পড়ে পুরোনো এক স্মৃতি।তখন রাজের বয়স ছয়।বাড়িতে তখন ছিলো রোহিনী খান।মালিনীর যমজ বোন।রাজের আপন মা।শাড়ি পরে বাড়িতে ঘুরঘুর করতো রোহিনী।এখন যেটা ওদের মিটিং রুম ওই রুমটায় এক সময় রোহিনী কাজ করতো।ফর্মুলা নিয়ে ওখানে তার সব কাজ।রোহিনী মাটিতে ব্যবহারের জন্য সার বানাতে থাকে তখন রাজ এসে রোহিণীর শাড়ির আচল টেনে টেনে বলতো,”মা মা আমাকে একটা বোন এনে দেও না।আমি বোন নিয়ে খেলা করবো।আমার একা লাগে মা।”

রোহিনী হেসে দিয়ে বলতো,”আল্লাহ চাইলে আমার শাহমীর বাবার একটা না দুইটা বোন আসবে কিন্তু এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে তোমাকে।আমি যে এই ফর্মুলা বানাচ্ছি এটা যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।”
রাজ প্রশ্ন উকি দিয়ে দেখে নাকে আঙুল দিয়ে বলে,”কি বিশ্রী গন্ধ।এটা দিয়ে কি করে?”
“এটা কৃষিকাজে ব্যবহার করতে হয়।মাটিতে দিলে গাছ বৃদ্ধি হতে সময় নিবেনা।যে সবজি আমরা পাবো ওগুলো ভেজালমুক্ত।আজকাল সবজিতে ফলে কত ভেজাল।এগুলো থেকে রেহাই পেতেই এই ফর্মুলা। আর এই যে শিশি দেখছো এটা পানিতে দিতে হবে।মাছ চাষের জন্য।এখানে একেক শিশি একেক কাজের।”
“এই পঁচা গন্ধের জন্য বোন আনবে না তুমি?”

রোহিনী খান হেসে দেয় উচ্চস্বরে।সাথে দরজার আড়ালে দাড়িয়ে থাকা মাহমুদ সরদার হেসে দিতেন।কত মূল্যবান জিনিস আর তার ছেলে তখন নক সিটকাতো।আজ ওটার উদ্ধরেই রাজের যত সময় ব্যয়।সেই সময়টা কতই না মধুর ছিলো।মাহমুদ সরদার নিজের কাজ সেরে বাড়িতে এসে বউ সন্তান নিয়ে হাসি আনন্দে দিন কাটাতেন।এক দুর্ঘটনা সব পরিবর্তন করে দেয়।রোহিনী মারা যায়।রাজ নিশ্চুপ হয়ে যায়।মাহমুদ সরদার বাড়িতে আসতে চাইতেন না।স্ত্রীর স্মৃতি তাকে কুরেকুরে খেতো।না পেরে মহসিন সরদার মালিনীর সাথেই বিয়ে দিলেন মাহমুদ সরদারকে।বিয়ের পরেও মাহমুদ সরদার বাড়িতে তেমন আসতেন না।একই রূপে বউ পেলেও ভালোবাসা তো একজনের মাঝেই ছিলো।রাজ না পেলো তখন মায়ের ভালোবাসা আর না পেলো বাবার।

কষ্টে কষ্টে ছেলেটা তার একা একা জীবন কাটায়।এরপর আহান সরদারের স্ত্রী অবনী তার বান্ধবী শাহানা পারভীনের সাথে মোহন সরদারের বিবাহ ঠিক করে।বিয়েটা ঠিক মূলত মহসিন সরদার করেন। অবন্তী শুধু সাহায্যকারী ছিলো।শাহানা পারভীন আসার পর সবকিছু স্বাভাবিক হয়।রাজ এক মাতৃত্বের স্বাদ পায়।শাহানা পারভীন রাজকে আগলে রাখে।ভাইয়ের বিয়ের কারণে মাহমুদ সরদার কয়েকদিন বাড়িতে থাকতেন।এছাড়া প্রায়ই তিনি রোহিণীর কবরস্থানের আশেপাশে আর কাজ নিয়েই থাকতেন।মোহন সরদারের বিবাহের বছর এক পর মহসিন সরদার মারা যান।এভাবে কি থেকে কি হয়ে গেলো সময়ের কারণে যেনো কেউই ধরতে পারল না।

চোখের পানি মুছে মাহমুদ সরদার বর্তমান নিয়ে ভাবলেন।ভেবেই দীর্ঘশ্বাস নিলেন।রাজ কার থেকে বোন চেয়েছিল আর কার থেকে পেলো।সবই যে নিয়তি।মাহমুদ সরদার আজও তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে ভুলতে পারলেন না।রোহিনী খান যে কি না নিজের স্বপ্ন পূরণের সাথে ঘর সংসার সামলাতে পারতো আর তারই বোন মালিনী খান।তারই বিপরীত চরিত্র।কোনোদিকে তার মনোযোগ নেই।কেমন যেনো নিজ ভাবনার ব্যাক্তি তিনি।এমন না যে মাহমুদ সরদার তাকে বুঝতে চায়নি।স্বামী হিসেবে তিনি মালিনীকেও যথেষ্ঠ সম্মান দিতে চেয়েছিলেন।নিয়তিকে মেনে নিয়েছিলেন।কিন্তু মালিনীর ব্যাবহার তাকে বিষন্ন করে দিতো।মাহমুদ সরদার চশমা চোখে দিয়ে আবারো চলে গেলেন অনুষ্ঠানের দিকে।রাজ দেখলো তার বাবাকে যেতে।

রাজ মৃদু হেসে বলে,”তোদেরকে আমি একটা জিনিষ শিখিয়ে দেই।কেউ যদি দেখবি একটু আঘাত করছে তোদেরকে তোরাও তাকে একই নিয়মে পাল্টা আঘাত করবি।”
দুইবোন অবাক হয়ে বলে,”মানে?”
“আরে বোকা বোনেরা আমার।তোদেরকে যে বিষয়টি আঘাত করেছে তোরা কি চাসনা তারাও আঘাত পাক?”
হিয়া চুপ থাকলেও সিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে বলে,”হ্যাঁ চাই তো।আমি তো ওনার এসব ব্যবহারে বিরক্ত।”
“তুইও এবার তাকে বিরক্ত করে দে।”
“কিভাবে?”
“যেভাবে তোকে রাগিয়ে দেয়।ঠিক সেই ভাবে।”
সিয়া কিছুক্ষণ ভাবলো।ভেবে বলে,”ড্যান্স করবো নাকি?কিন্তু আমি তো একটু গুলুমুলু।হিয়ার মত স্লিম হলেও নাহয় মানাতো।”

“একটু গুলুমুলু তাতে কি এমন হয় শুনি?ঢেপসি মোটাও তো না।”
হিয়ার থেকে প্রশংসা পেয়ে সিয়া অবাক।রাজ হাসলো শুধু।সিয়া হিয়ার হাত ধরে বলে,”তাহলে তুইও পার্টনার নিয়ে নাচ করবি।”
“আমি কোন দুঃখে নাচতে যাবো?আমার মনে থোরাই না আগুন জ্বলে।”
রাজ দুজনের মাঝে হাত উঁচিয়ে দুজনকে শান্ত করে বলে,”তোরা এবার ঠিক কর একা না দোকা নাচ করবি আমি গেলাম।কিন্তু আমার বিয়ের মত এই অনুষ্ঠান ভন্ড করবিনা বলে দিলাম।”
বলেই রাজ চলে গেলো।সিয়া রাজকে যেতে দেখে বলে,”তুই যে রুদ্র ভাইকে দেখে জ্বলিস এটা মনে হয় আমি জানি না!”

“ফালতু কথা বলবি না।তোর ওই নষ্ট হবু দেবরের জন্য আমি জ্বলি না।”
“নাটক করবি না কিন্তু হিয়া।আমি কিন্তু তোর বোন হই।তোর মন পড়তে জানি।”
“কি এমন উদ্ধার করেছিস মন পড়ে?”
“শোন হিয়া ভাইয়া কিন্তু ভালো বলেছে।আমাদের এটাই করা উচিত।নাহলে ওরা শুধু কষ্ট দিয়েই যাবে আর আমাদের কষ্ট পেতেই হবে।এখন আমি অন্তত বারবার কষ্টে থাকতে চাইনা তাই আমি নাচতে যাচ্ছি।তুই কি করবি তোর ব্যাপার।”
“পার্টনার কোথায় পাবো শুনি?”
“অহরহ জেন্টেলম্যান আছে এই পার্টিতে।তোর কি নজরে নেই।”
মনে মনে হিয়া বলে,”একজনকে দেখেই কুল পাইনা বাকিদের কি দেখবো!”
স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে,”খেয়াল করিনি আমি।চল তাহলে।”
সিয়া আর হিয়া পার্টনার খুঁজতে থাকে।এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো ওদের দিকেই দুজন যুবক চেয়ে আছে।দৃষ্টি এমন যে এরা শুধু অনুষ্ঠানে সিয়া আর হিয়াকেই চেনে।সিয়া এবার হিয়ার কাধে হাত রেখে বলে,”ওদেরকে দেখছিস?”

হিয়া পরখ করে দেখে বলে,”সামনেই তো আছে।কেমন যেনো লুচ্চা লুচ্চা দেখতে।”
“আরে রাখ তোর লুচ্চা।ড্যান্স তো পারবে।”
“আরে!কেমন বাজে নজরে আছে দেখতে পাচ্ছিস না নাকি আমার মত তোরও চশমা লাগবে?”
“শোন হিয়া,লুচ্চা ছেলেরা ড্যান্স করে অনেক সুন্দর।আর পাঁচ মিনিটের জন্যই তো ড্যান্স। তুই আর আমি আহামরি নাচতে জানি নাকি?পারফেক্ট নাচতে ওরা আমাদের সাহায্য করবে।”
“ঠিক হবে কি সিয়া?”

“আলবাত হবে।আর ওরা আমাদের সাথে অসভ্যতা করতেও পারবে না।মন্ত্রীর বোন আমরা।কিছু করলে ভাই ওদের হাত টুকরো টুকরো করে দিবে।”
“দুনিয়ার সব মানুষ জেনে রাখছে আমরা কার বোন?”
“জানা দরকার চলতো।”
সিয়া আর হিয়া ওদের কাছে গেলো।রুদ্র ভ্রু উঁচিয়ে দেখছে দুজন যুবকের সাথে সিয়া আর হিয়াকে কথা বলতে।রুদ্র ইশারা করে আদ্রকে করে বলে,”ওরা ওখানে কি করছে?”
“গন্ডগোল পাকাতে চাইছে হয়তো।”
“ছেলে দুজন সুবিধার না ভাই।একটাকে আমি চিনি খুব ভালো করে।বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া ছেলে।রোজ রাতে নষ্টামি করে।”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ২৮+২৯+৩০

“তার সাথেই তোর হিয়াপাখি কথা বলছে।এদিকে তোকে যেনো কি বলে?”
“নষ্ট পুরুষ।”
মুখটা পাংসুটে করে বলে রুদ্র।আদ্র মৃদু হাসে।রুদ্র হিয়ার দিকে তাকিয়েই বলে,”অন্যরা করলে প্রেমলীলা,আর আমি করলেই ক্যারেকটার ঢিলা!”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৩৩+৩৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here