মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৩৫+৩৬
ইশরাত জাহান
সকল ঝামেলা পার করে মাত্র ঘরে আসলো মায়া ও রাজ।ঘরে ঢুকেই মায়া অবাক।ঘরের চারপাশটা বৈবাহিক জীবনের প্রথম রাতের মতই করে সাজানো।মায়া চারপাশ দেখছে আর পিছন থেকে দরজা লাগিয়ে দেয় রাজ।রাজ দরজা লাগিয়ে দিতেই পিছনে ঘুরে মায়া বলে,”আর কত বাসর হবে মন্ত্রী মশাই?”
“বাসরে বাধা যতবার আসবে ঠিক ততবার।”
“বাসর নতুন যুগলদের হয়।”
“আমরা কি পুরাতন?আজকেও তো রিসিভশন পার্টি হলো।”
মায়া এসে বিছানায় ছিটিয়ে রাখা গোলাপের পাপড়ি ছুঁয়ে দেখছে।রাজ মায়ার গা ঘেষে বসে মায়ার গলার কাছে নাক ঘষতে থাকে।মায়া রাজের চোখের দিকে চোখ রাখে।মায়া যে হাত দিয়ে ফুল ছুঁয়ে আছে রাজ ওই হাতটা ধরে মায়ার হাতের উল্টো পিঠে চুম্বন দিলো।মায়ার হাত টান দিয়ে উঠিয়ে দার করলো রাজ।মায়ার কোমড় নিজের দুইহাতের মাঝে নিয়ে নেয় রাজ।মায়া হেসে দিয়ে বলে,”আপনিও না মন্ত্রী মশাই!”
রাজ দুষ্টু হেসে বলে,”আমি কি মায়াবতী?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“অসভ্য একজন।মুখে একটু লাগাম দিতে পারেন না?সবসময় এমন অভদ্র ভাষা প্রয়োগ করেন কেন?”
রাজ মায়ার মুখে চুম্বন দিয়ে মায়াকে আরো শক্ত করে আলিঙ্গন করে বলে,”অভদ্র হয়েছি আমি তোমারই প্রেমে তাই।কাছে আসো না আরো কাছে আসো না।একটু ভালোবাসো না….”
রাজ গান গাওয়ার মাঝে মায়ার কানের লতিতে আস্তে এক কামড় দেয়।মায়াও রাজকে জড়িয়ে রেখেছে।গান শেষ করে রাজ বলে,”যেদিকেই যাই শুধু অশান্তি।বউকে নিয়ে একমাত্র দরজা লাগিয়ে থাকতেই যেন শুধু শান্তি।”
মায়া হেসে দেয় রাজের কথা শুনে।রাজ মায়াকে পাজাকোলে করে নিয়ে বাথরুমের দিকে যেতে নেয়।মায়া বলে,”আজকেও?”
“কি আজকেও?”
দুষ্টুমি করে বলে রাজ।মায়া উত্তরে বলে,”আপনার মাথায় পোকা ধরা বাথরুম বিলাস।”
“ওখানেই তো শান্তি।”
“কি এক পেয়েছেন আপনি।ওখানে কিসের শান্তি শুনি?”
“একবার একটা মুভি দেখেছিলাম।নায়ক নায়িকা মিলে বাথটাবে জাম্পিং জাম্পিং রোমাঞ্চিং মুহূর্ত কাটায়।ওটা দেখেই আমি সিদ্ধান্ত নেই বিয়ের পর আর যাই করি বাথরুম বিলাস ছাড়ছি না।তাই তো বাথরুমে আমার লাখ টাকার বাথটাব রেডি।এবার দ্রুত আমার সাথে চলো মায়াবতী।”
এরপর আর অপেক্ষা করে না রাজ।চলে যায় তার মায়াবতীকে নিয়ে বাথরুম বিলাস করতে।
সকালবেলা সবাই খাবারের জন্য এক জায়গায় এসে হাজির।মাহমুদ সরদার বলেন,”বীর আর জারা আসেনি?”
বলতে না বলতেই ওরা হাজির।বীরের পাশে জারাকে দেখে সোনালী এগিয়ে আসে।জারার কাছে যেতে নিবে বীর জারার সামনে দেয়াল হিসেবে দাড়িয়ে থাকে।সোনালী বিরক্ত হলেও শান্ত হয়ে বলে,”আমি জারার খালামণি।”
“আমি জারার সবকিছু।”
“আমি কি এখন ওর সাথে কথাও বলতে পারব না?”
“আপনার ভাবভঙ্গি হিসেবে না।”
সোনালী আরো কিছু বলতে নিবে মোহন সরদার ও রুবি নিচে নেমে আসে।মোহন সরদার রুবির সাথে হেসে হেসে কথা বলে নামছে।রুবিকে নিজের পাশে বসিয়ে খাবার দিচ্ছে।সোনালী ভ্রু উঁচিয়ে বলে,”বাবার দরদ উতলে উঠেছে নাকি!”
বীর শুনতে পায়।জারার কাধে হাত রেখে যেতে যেতেই বলে,”বাবা হয়।কতদিনই বা আপনার শয়তানি চাল চালবেন?”
সোনালী রেগে গেলো।মুখ ফুটে কিছু বলল না।ভাবছে একটা সুবর্ণ সুযোগের।জারাকে আলাদা পাওয়া বাকি শুধু।ওদেরকে এখন বাদ দিয়ে সোনালী এগিয়ে এগো রুবির পাশে।রুবির কাছে বসে বলে,”একটু পর তোমার পুতুল বর আর মায়া মেয়েটা আসবে।তুমি তোমার পুতুল বরের কাছে যাবে।ওকে ভোলাবে।”
রুবি সোনালীর দিকে ফিরে বলে,”যদি উল্টো পাল্টা কিছু ঘটে যায় তখন?”
“কিছুই ঘটবে না।তুমি শাহানার মেয়ে।রাজ ওর ছোট মায়ের মেয়েকে আগলে রাখবে।ভয় নেই তোমার।”
রুবি ঢোক গিলে বলে,”আমি বাস্তব শাহানার মেয়ে না যে ওই মন্ত্রী আমাকে আগলে রাখবে।ওরা স্বামী স্ত্রী মিলে আমাকে কিমা বানাবে রে শাকচুন্নি মহিলা।”
মায়ারাজ রেডি হয়ে নিচে নামছে।সোনালী কনুই দিয়ে ঘুতা দিলো রুবিকে।রুবি মাথা দুদিকে নাড়িয়ে নাকচ করে।সোনালী কাটা চামচ দেখিয়ে ভয় দেখালো।রুবি শুকনো ঢোক গিলে উঠে দাড়ায়।ছুটে গিয়ে আগেই মায়াকে ধীরে বলে,”সরি ম্যাম।আমাকে শিখিয়ে দিয়েছে।”
বলেই রাজের সামনে গিয়ে বলে,”পুতুল বল।”
রুবির মুখে হাসি কিন্তু অন্তরে ভয়।রুবির হাসি দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে ভয়তে ভয়তে করছে অভিনয়।
রাজ মায়ার বাহু ধরে আছে।রুবির দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি এখন আস্ত এক মানুষ বর হয়েগেছি।এখন সেই পুতুল বরের জামানা নেই পুতুল বউ।”
রুবির পাশ কেটে চলে গেলো রাজ ও মায়া।সোনালী কাটা চামচ নিয়ে খালি প্লেটের উপরে ঘোরাচ্ছে।রুবিকে ইশারা করছে রাজের পাশে বসার জন্য।সোনালীর এই ইশারা নজরে আসে জারার।জারা না খেয়ে তাকিয়ে আছে রুবি ও সোনালীর দিকে।জারাকে খাবার নিয়ে বসে থাকতে দেখে বীর জারার মুখের দিকে তাকালো।জারা একবার সোনালী তো একবার রুবির দিকে তাকিয়ে আছে।বীর ভ্রুকুটি করে প্রশ্ন করে,”ওদেরকে কি দেখছো?”
“দেখছি খাল কেটে কিভাবে মানুষ কুমির আনে।”
“মানে?”
“মানে এই যে আমার খালামণি তার সতীনের মেয়েকে আনলো তাই আর কি।”
জারা যে সবকিছু জানে এটা বীরের কাছে ধরা দিল না।জারা মনে মনে বলে,”যে মেয়েকে তুমি তোমার সতীনের মেয়ে বানিয়ে এনেছো সেই মেয়ে তো তোমার ছেলের গার্লফ্রেন্ড খালামণি।যখন মিহির আসবে তখন দৃশ্যটা কি হবে এটাই ভাবছে।লোকে বলাবলি করবে সৎ ভাইবোন কি না বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড!অবশ্য তুমি তো জানো ওরা সৎ ভাইবোন না।মিহির তো সরদার বাড়ির ছেলেই না।খেলা তো আরো জমে যাবে।”
রাজ ওর চেয়ারে বসতেই রুবি এসে দুঃখ প্রকাশ করে বলে,”তুমি কি আমাকে ভুলে গেছো পুতুল বর?আমাকে আগের মত ভালোবাসো না তুমি?তোমার ছোট মাকেও ভুলে গেছো তুমি?”
রাজ এবার সামনে থাকা গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পানি গিললো।পানিটা পান করেই রুবির দিকে ফিরে বলে,”ছোট মাকে আমি ভুলিনি কিন্তু তার মেয়েকে অবশ্যই ভুলে গেছি।একসাথে এতজনকে মনে রাখতে গেলে তো আমি নিজেকেই ভুলে যাবো।এখন এসব দুঃখ কষ্ট বাদ দিয়ে নিজের বাবার পাশে গিয়ে বসো বোন।”
রুবিকে বোন বলাতে হিচকি উঠলো সোনালীর।মোহন সরদার গ্লাস এগিয়ে দিলো সোনালীর দিকে।জারা মিটমিট হাসছে আর বলছে,”আজকেই এই দশা।দুদিন পর যখন ছেলে আসবে তখন তো আরো বাকি।”
রুবি মনে মনে সরদার বাড়ির চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে।মোহন সরদারের পাশে বসে খাবারে মন দেয়।মাহমুদ সরদার রাজের পাশে বসা থাকেন।তিনি এবার রাজের উদ্দেশ্যে বলেন,”ওদিকটায় কি খবর?”
“দেশে আনা হচ্ছে।এরমাঝে এই নতুন নকল পুতুল বউ কি ঘটিয়ে দেয় কে জানে?”
“তোমার পুতুল বউ ছাড়ো ওই যে মাফিয়া ভাইটা আছে।ওর পাশের নাগিনটাকে দেখো।”
রাজ একবার আড়চোখে জারাকে দেখে বলে,”নাগিন ড্যান্স করার আগেই নেউলে তাকে আকড়ে নিয়েছে।এই নাগিন এখন ড্যান্স দেওয়ার মুডে নেই।”
“সোনালী কিন্তু ছাড়বে না ওদেরকে।এর ভার তোমাকেই বহন করতে হবে।”
“চিল বাবা।বীর আর আমি আছি তো।”
“চিন্তায় আছি সে আসার খবর যেনো কেউ না পায়।”
“পাবে না।এমন প্রস্তুতি নেওয়া আছে।তুমি শুধু দেখো তোমার ভাইয়ের এই দুই নম্বর বউ ও তোমার দুই নম্বর বউ কিছু বুঝতে না পারে।ওরা বুঝতে পারলেই জীবন শেষ।”
“তুমি কি মালিনীকে সন্দেহ করছো?”
“আমি তোমাকেও সন্দেহ করি বাবা।”
“আমি কি করেছি আবার?”
“বউয়ের আঁচল ধরে না আবার ছেলেকেই শত্রুপক্ষ বানিয়ে দেও।”
“কষ্ট করে তোমাকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছি কি এই দিন দেখার জন্য?”
“তুমি যে কষ্ট করে আমাকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছো এই কষ্ট আমিও করছি বাবা।শুধু শুধু নিজের একার কষ্টটা দেখো না।এটা বংশীয় ভিত্তিক ভাবে চলতেই থাকবে।”
“বেয়াদপ!”
“তুমি শুরু করলে আমি শেষ করলাম।এখন বেয়াদপ হয়ে গেলাম!”
“তুমি….
আর কিছু বলার আগে পিয়াশ ও তারেক আসে।দুজন দুজনার আলাদা কাজে আসে। পিয়াশ এসেছে রাজকে নিতে আর তারেক এসেছে মায়াকে নিতে।রাজ খাওয়া শেষ করে টাওয়াল দিয়ে হাত মুছে বলে,”বডিগার্ড রাখা মানেও লস।বউ নিয়ে একটু বাইরে যাবো ঘোড়ার ডিমগুলো ভস্ম না হয়ে পিছনে ঝুলতে ঝুলতে আসে।”
অবলা পিয়াশ ও তারেক মুখটা শুকনো করে দাড়িয়ে থাকলো।এভাবে অপমান করে আবার বিপদে তো তাদেরকেই কাজে লাগায়।চাকরি বাঁচাতে মুখ বন্ধ রাখলো শুধু তারা।নাহলে মুখের উপর মোক্ষম জবাব দিতে ওরাও জানে।
মায়া গাড়িতে বসতেই রাজ মায়ার পাশে বসে দরজা লাগিয়ে দেয়।পিয়াশের দিকে তাকিয়ে বলে,”ওর নাহয় বিয়ে হয়নি তোমার তো হয়েছে।এবার তো অন্তত আমার মনটা বোঝো পিয়ু বেবী।যাও গিয়ে লক্ষী ছেলের মতো পিছনের গাড়িতে বসো।”
বলেই রাজ ড্রাইভ করে।পিয়াশ ভ্রু কুঁচকে বলে,”ব্যাটা মনে হয় বিয়ের পরেরদিনের হামলার কথা ভুলে গেছে।”
তারেক শান্তনা দিয়ে বলে,”মন খারাপ করতে হবেনা।এটা প্রতিদিনের রুলস।এসে এসে মন্ত্রীর বউ নিয়ে আহাজারি শুনেই মাস শেষে বেতন পেতে হবে।”
রাজ ড্রাইভ করছে আর মায়া রাজের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।মায়ার এই চাহনী দেখে রাজ ফিচেল হেসে বলে,”এভাবে তাকাবে না মায়াবতী।আমি ব্যালেন্স হারিয়ে অঘটন ঘটিয়ে দিবো।”
“আপনি কি মুখে লাগাম দিতে জানেন না মন্ত্রী মশাই?”
“আমার মায়াবতী আমাকে যেনো কি নামে ডাকে?”
“লাগামহীন মন্ত্রী মশাই।”
“লাগাম দেওয়ার রাস্তা তুমি নিজেই বন্ধ করে দিয়েছো।”
“আপনি না সত্যিই লাগামহীন।”
“তোমারই তো।”
মায়া মুচকি হাসে।মায়ার ফোনে কল আসে।ওপর পাশ থেকে জানায়,”রিমু নামে যে মেয়েটি আমাদের ফ্যাক্টরিতে কাজ করে সে আত্মহত্যা করেছে ম্যাম।”
“কেন?”
“ওকে অপহরণ করা হয়েছে।এতদিন মিসিং ছিলো কিন্তু আমরা ভেবেছিলাম ও ফ্যাক্টরিতে আসেনি কোনো একটা কারণে।আজকে সকালে খোঁজ পেলাম আরশাদ নেতার দলের তিনজন মিলে ওকে ধর্ষণ করে।ওরাও উচ্চ বংশের লোক।রিমুর বাবা মামলা করলেও কেউ এই বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে না।পুলিশ এফআইআর লিখবে না।”
মায়া চোখটা বন্ধ করে নেয়।ঘৃণা হয় এই সমাজের টাকার মায়ায় চলে জাতিগুলোর প্রতি।মায়া বড় বড় দম নিলো।রাজ গাড়ি ঘোরানোর সময় মায়ার দিকে চোখ রাখতেই দেখলো মায়া এমনভাবে নিশ্বাস ছাড়ছে।রাস্তার একপাশে গাড়ি থামিয়ে মায়ার কপালে হাত রেখে বলে,”তুমি ঠিক আছো মায়াবতী?”
মায়া কানে মোবাইল রেখেই রাজের দিকে ঘুরে তাকায়।এই লোকটা তার এত যত্ন নেয়। মায়া নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে করে এখন।মায়া মাথাটা উপর নিচ করে হ্যাঁ জানিয়ে ফোনের লোকটিকে জানায়,”রিমু এখন কোথায়?”
“হাসপাতালে।”
“কোন হাসপাতালে?”
“সদরে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
মায়া এবার রাজের পাশে তাকিয়ে বলে,”আপনি কাজে যান মন্ত্রী মশাই।আমি একটু ব্যাস্ত আছি।”
“অফিসে যাবে না?”
“উহু।”
“তাহলে?”
“আমাকে আমার একটা কর্মীর কাছে যেতে হবে।ওর এক্সিডেন্ট হয়েছে।সদর হাসপাতালে যেতে হবে।”
“আমিও…
বাকিটা বলার আগেই রাজের কাছে কল আসে।রাজ ধরতেই ওপাশ থেকে জানায়,”কিছুদিন আগে এক বৃদ্ধ লোক আপনাকে সাহায্য করেছিল মনে আছে স্যার?উনি আজ আপনার সাথে দেখা করতে চায়।আমাদের বিরোধী দলের কিছু গুণ্ডা মিলে ওনার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে।তার জাজটিস নিতে চায় সে।লোকটার পিছনে গুন্ডারা ধাওয়া করেছে।ওনার এখন আওয়াজকে অনেক প্রয়োজন স্যার।লোকটা এখন বিপদের মুখে।আপনার সাহায্য লাগবেই।আমি কি করবো এখন?এদিকে আমাদের অফিসের সামনেই দলগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে হাঁটছে।”
রাজ একবার মায়ার দিকে তাকিয়ে পিছনে তাকালো।গাড়ির জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো।পিয়াশ ছুটে আসে রাজের হাত দেখে।রাজ পিয়াশের উদ্দেশ্যে বলে,”মায়াবতীকে সাবধানে পৌঁছে দিবে তোমরা।আমি গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছি।”
“কিন্তু বস আপনাকে একা ছাড়াও তো রিস্ক।”
মায়া আতঙ্কের সাথে তাকালো রাজের দিকে।রাজ সোজা রাস্তার দিকে চোখ রেখে হিংস্রতা প্রকাশ করে বলে,”আমার মায়াবতীর রিস্ক আমার জীবনে সবথেকে বড় রিস্ক।তুমি তাকে দেখো আমি আমাকে দেখে নিবো।”
বলেই রাজ মায়ার কপালে চুম্বন দিয়ে বলে,”আমি একটু ব্যাস্ত মায়াবতী। ফ্রী হয়েই তোমার নিকট হাজির হবো।”
মায়ার থেকে উত্তর না নিয়ে পিছনের গাড়িতে যায় রাজ।যেটাতে তারেক ও অন্যান্য গার্ড আছে।পিছনের গাড়িতে এসে তারেককে উদ্দেশ্য করে বলে,”সামনের গাড়িতে যাও।তোমাদের ম্যামকে দেখে রাখবে।এমনিতেও সে এখন পৃথিবীর নোংরা কিটদের চোখে বিষাক্ত এক নারী।তার সুরক্ষা অতি প্রয়োজন।”
তারেক রাজের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,”আপনি একা যাওয়া রিস্কের হয়ে যাবে না?আপনার উপর যখন তখন হামলা হয়।সেদিনকেও আলান্ড বাহুতে গুলি লেগেছে।”
“দেশ রক্ষাতে পদক্ষেপ নিলে যে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেই নিতে হয়।জীবনে একটা উদ্দেশ্য সফল করতে হলে সেই সফলতা অর্জনের জন্য জীবনটাও দিয়ে দেওয়া শান্তির হয়।এটা সবসময় মাথায় রাখবে।আমাদের দেশের শহীদেরা কিন্তু নিজেদের জীবনটা আমাদের সুখের জন্যই দিয়েছিলো।”
রাজের কথাতে তারেক সামনের গাড়িতে গেলে রাজ ফোন কানে নিয়ে বলে,”আমি আসছি তুমি যেভাবেই হোক ওই লোকটিকে আমার কক্ষে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো।”
রাজ কল কেটে পকেটে রাখতেই দেখলো মায়া গাড়ির দরজা খুলে দৌড়ে তার কাছে আসে।রাজ ভ্রু কুঁচকে গাড়ি থেকে নামে।চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে সাদা পাঞ্জাবির বুক পকেটে রাখে।মায়া এসে রাজের হাত ধরে বলে,”আপনি কেন গার্ড ছাড়া যাবেন?আপনার যদি কিছু হয়?”
“আমার কিছু হবে না মায়াবতী।”
“এই পৃথিবীর বাজে লোকদের প্রতি আমার বিশ্বাস নেই।ওরা যখন তখন ছুরি চালিয়ে দেয়।আমি আপনাকে হারাতে পারবো না।আপনার আমার অনেক শত্রু অনেক।আপনি বাকি গার্ড ডেকে নিন।”
“দেরি হয়ে যাবে মায়াবতী।”
“কেন কিসের দেরি?”
“এক অসহায় বাবা আমার জন্য পথ চেয়ে বসে আছে।মৃত্যুর মুখে থেকেও সে আমার দুয়ারে হাজির হয়েছে।তার জীবনটা ঝুঁকিতে আছে আমার জন্যই।তাকে দেখতে হবে যে।”
“অসহায় বাবা?”
“হ্যাঁ অসহায় বাবা।পরে বলব তোমাকে তার কথা।এখন যেহেতু আমার দুয়ারে সে এসেছে এই শাহমীর রাজের শত্রুর নজরে সেও পড়েছে।তুমি চিন্তা করবে আমার জন্য।তোমার মন্ত্রী মশাই এতটাও দুর্বল না যে নিজেকে রক্ষা করতে জানেনা।”
“আমার এই পৃথিবীর কোনকিছুতে ভয় নেই শুধু আপনাকে হারানো ছাড়া।”
রাজ মায়ার চোখে নিজের জন্য জমে থাকা ভয় দেখে ঠোঁট প্রসারিত করে।মায়ার গাল ছুঁয়ে বলে,”আমার মায়াবতীকে দুর্বলতায় একদম মানায় না।তাকে সবসময় শক্ত মনের কঠোর নারীতেই মানায়।আমি যে আমার হিংস্র মায়াবতীকে বেশি ভালোবাসি।”
“অন্তত পিয়াশকে সাথে করে নিয়ে যান।”
“তুমি এখন যে রাস্তা দিয়ে হাসপাতালে যাবে ওই রাস্তাটায় আমার শত্রুপক্ষের লোকের আনাগোনা বেশি।পিয়াশ বা তারেক একা পারবে না।গার্ড লাগবেই তোমাদের জন্য।আর আমি নিজেকে সামলে নিতে পারবো।”
“এই জন্যই তো গার্ড নিতে চাই আমি।আপনি শুধু রোমান্সের পোকা মাথায় আনেন আর সবকিছু হেলাফেলা করেন।”
“জীবনটা যদি গার্ড দিয়েই ভরে রাখি তো বউ নিয়ে সময় কাটাবো কখন শুনি?”
“ইয়ার্কি করবেন না এখন।”
“সময় কম মায়াবতী।আমাকে দ্রুতই যেতে হবে।নাহলে আমি তার বিপদ মুক্ত করতে পারব না।”
মায়া এবার আর অবুঝের মত করলো না।মায়া নিজেও রিমুর কাছে তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে চায়।রিমুর অবস্থাও ভালো না।গরীব মেয়েটির ওখানে কোনো সুরক্ষা নেই।গার্ড থাকলেও বা কি?সরকারি হাসপাতালে কি আর সেফটি আলাদাভাবে দেওয়া সম্ভব?আলাদা কেবিন নেই যে।মায়া দ্রুত গিয়ে রিমুকে অন্য স্থানে রাখতে চায়।তারপর যা মামলা বিচারের দরকার ভেবে দেখবে।
মায়া হাঁটছে আর বীরকে ম্যাসেজ দিয়ে রাখলো,”মন্ত্রী মশাইয়ের পিছনে কয়জন গার্ড পাঠিয়ে দেও ভাইয়া।সে এখন একা একা যাচ্ছে নিজের অফিসে।”
বীরের তরফ থেকে ম্যাসেজ আসে,”ওকে।”
মায়া শান্তি পেলো দ্রুত উত্তর পেয়ে।বীর নিজের কাজে সবসময় ব্যাস্ত থাকে।বাড়িতে আসে সেই রাতের দিকে।সবসময় ম্যাসেজ বা কল ধরা বীরের দ্বারা সম্ভব হয়না।বীরের থেকে উত্তর না পেলে জারাকে ম্যাসেজ দিয়ে রাখতো মায়া।আপাতত মায়া দীর্ঘশ্বাস নিতেই পিছন থেকে সেই ডাকটা আবার শুনতে পায়।রাজ গলা উঁচিয়ে বলে,”আব্বে এই মায়াবতী।”
মায়ার বুকটা আজকে ছেৎ করে উঠলো।পিছনে ঘুরে তাকাতেই দেখে রাজ সানগ্লাস বুক পকেট থেকে বের করে আবারও চোখে দেয়।তারপর মৃদু হেসে দুই আঙ্গুল দিয়ে নিজের ঠোঁটে নিয়ে মায়ার দিকে তাক করে উড়ন্ত চুমু দিয়ে বলে,”আমার বক্ষে তোমাকে স্বাগতম মায়াবতী।”
মায়া দাড়িয়েই আছে।মুখে মৃদু হাসি।সাহসী মায়ার মনেও আজ তার স্বামীর জন্য আতঙ্ক কাজ করছে।কারণ সেদিনই তো রাজের হাতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখেছিল।রাজনীতির লোকেদের নিয়ে এই একটাই ভয়।শত্রুপক্ষের হামলা হয় যখন তখন।না জানি রাজকে আবারও আজ একা পেয়ে হামলা কে করে।মায়া রাজের দিকে তাকিয়ে থাকলো না আর।চলে গেলো নিজের গাড়ির দিকে।
রাজ দেখছে মায়াকে চলে যেতে।মায়ার গাড়ি চোখের আড়াল হতেই রাজ গাড়িতে ওঠে।রাজ গাড়িতে ওঠার পরেই রাস্তার কিনারায় থাকা গাছগুলোর আড়ালে থাকা একজন লোক বের হয়ে আরশাদকে জানায়,”মন্ত্রী শাহমীর রাজ সরদার এখন একা বস।”
আরশাদ শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,”এটাই তো সুযোগ।এই সুযোগে ওটাকে ওপারে পাঠিয়ে দেও।”
“কিন্তু বস গাড়ি চালানো শুরু করেছে তো।”
“গাড়িটাই এক্সিডেন্ট করিয়ে দেও।ওই ব্যাটা মরলে আমার রাস্তা ফাঁকা।”
আরশাদ কল কাটতেই ওই লোকটা আরো কিছু লোক নিয়ে ট্রাক চালাতে শুরু করে।রাজের পিছনে পিছনে ট্রাক নিয়ে যাচ্ছে ওরা।
রাজ গাড়ি চালানোর মাঝে আয়নার দিকে চোখ রাখতেই দেখতে পেলো ওর পিছনে ট্রাক।প্রথমে পাত্তা না দিলেও পরে যখন দেখে ট্রাক শুধু তার পিছনেই ছুটছে তখন রাজ সব বুঝে নিলো।রাজ গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেয়। ট্রাকটাও তাই করে।রাজ এবার অন্যদিকে গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়।ট্রাকটাও ঠিক রাজের পিছনে একইভাবে চলছে।এভাবে কিছুক্ষন চলতে চলতে ট্রাক এসে রাজের গাড়ির অতি নিকটে ধাক্কা দিবে ঠিক তখনই ট্রাকের চাকায় গুলি ছুড়ে মারা হয়।রাজ দূরে তাকিয়ে দেখে দুটো গাড়ি এসেছে।রাজের জিপিএস অন করা ছিলো।বীরের লোকেদের দেখে রাজ মৃদু হেসে দেয়।ড্রাইভ করতে করতেই বলে,”আমার মায়াবতী শুধু হিংস্রবতী বা রক্তবতী না সে আমার বুদ্ধিমতীও।”
বীরের লোক এসে আরশাদের লোকেদের উপর হামলা করছে।এই সুযোগে রাজ ওর অফিসে চলে যায়।যে করেই হোক রিমুর একটা সুরাহা করতে হবে।
রাজ আর মায়া দুজনে একই মিশনে নামলেও তারা জানেই না যে তাদের মিশন এক।যদি জানতে পারতো তাহলে হয়তো দুজনে একসাথে এই মিশনে থাকতো।রাজ চায় মায়া তার কাজটা সফল করুক।রাজের বিপদে মায়া না জড়াক।মায়া চায়নি রাজকে আর কোনো ঝামেলা দিতে।কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য ইচ্ছা সব একই এটা তাদের অজানা।
হাসপাতালে এসে মায়া দেখে কিছু লোকজন রিমুর আশেপাশে।মায়া ভ্রুকুটি করে বলে,”এনারা কাড়া?”
“আমি খোঁজ নিচ্ছি ম্যাম।”
তারেক গিয়ে রিমুর মায়ের সাথে কথা বলে মায়ার কাছে এসে বলে,”রিমুর বাবা কার কাছে যেন বিচার চাইতে গেছে।সেই পাঠিয়েছে গার্ড।রিমুর মা অতকিছু জানেনা।”
মায়া এগিয়ে এসে দেখে রিমুর অজ্ঞানরত মুখশ্রী।রিমুর চোখের নিচে কালসিটে।গলার কাছে আচরের দাগ।ঢেকে রাখা রিমুর মুখ ও গলার উপর দিয়েই এত এত কামড়ের দাগ দেখা যাচ্ছে।তাহলে ঢেকে রাখা স্থানে কতটা যখম হতে পারে ভাবতেই মায়ার গা শিউরে উঠছে।মায়া রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে রিমুর মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আপনি কি ছেলেগুলোকে চেনেন?”
“না মা রিমুর বাবা চিনে ওদের।আমার মেয়েটার সাথে ওরা ইচ্ছা করে এগুলো করছে।ওর বাবা বাজারে যায়।একজনকে বাঁচাইছে।আর ওরা সেই জন্য আমার মেয়েটাকে আটকায় রাখছিল চারদিন।পরশু দিয়ে গেছে।আমার মেয়ে লোকের কথা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করছে।ওর অবস্থা খুব খারাপ।”
বলেই রিমুর মা কেঁদে দেয়।মায়া রিমুর মায়ের কাছে এসে শান্তনা দেয়।তারেকের দিকে ফিরে বলে,”রিমুর বাবার খোঁজ করো।ইমিডিয়েট তাকে নিয়ে আমার প্রাইভেট হাসপাতালে চলো।রিমুকে এখানে রাখা রিস্ক।আশেপাশে শত্রুপক্ষ এই লোকেদের ভিড়ে ঘিরে আছে।”
এরইমধ্যে পিয়াশ এসে বলে,”ওনাকে স্কয়ার হসপিটালে নেওয়ার জন্য ব্যাবস্থা করা হয়েছে।ওখানে আদ্র স্যার আছেন।”
“আদ্র!”
“জী ম্যাম আমি কথা বলেছি।খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম রিমুর বাবাই সেই লোক যে বসকে সাহায্য করতে গেছিলো।ওই যে আগেরবার ড্রাগ সাপ্লাইয়ের জন্য।তারপর থেকে রিমুর বাবাকে হুমকি ধামকি দেওয়া হয়।সবশেষে রিমুর আত্মসম্মান কেড়ে নিয়েই এই ব্যাবস্থা করেছে ওই লোকগুলো।বস রিমুকে হাসপাতালে রাখতে বলেছে।আর নিজ দায়িত্বে উকিল ঠিক করবে।”
“ওহ তাহলে আমাকে আর ওদিকটা দেখতে হচ্ছে না তাই তো?”
“জী ম্যাম।”
মায়া মৃদু হেসে একবার তারেক ও আরেকবার পিয়াশের দিকে তাকালো।তারপর আলাদা স্থানে গিয়ে কল দিলো নিজস্ব স্পাই ম্যানকে।ওপাশ থেকে ধরতেই মায়া বলে,”আমার এই আইনি ব্যবস্থার উপর কোনো বিশ্বাস নেই।এই যেমন আরশাদ লোকটা ছাড়া পেলো।আজকাল ভালো কে মন্দ ও মন্দ কে ভালো বানিয়ে দেখানো হয় এই সমাজকে।আমি এত দেখানোর ভিতর নেই।তুমি ওই অপহরণকারীদের ধরে আমার কাছে নিয়ে আসবে।ওদের ব্যাবস্থা আমি করে নিবো।”
“ওকে ম্যাম।”
মায়া কথা শেষ করে কল কেটে বাইরে আসতে নিবে।তার আগেই মায়ার সামনে দিয়ে একটি ছুরি সরু আকারে চলে যায়।মায়া মাথাটা নিচু করে নেয়।তারপর পাশ ঘুরে দেখে মাস্ক পরে থাকা একজনকে।মায়ার ঘুরে তাকানো দেখে সে দৌড়াতে নেয়।মায়া রক্তিম চোখে ছুরিটি উঠিয়ে হাতে ঘুরিয়ে নিলো।তারপর নিশানা করে সেই নিশানা বরাবর ছুঁড়ে মারল।ছুরিটা সোজা লোকটির পায়ে এসে আঘাত করে।লোকটা পড়ে যায় সাথে সাথেই।মায়া লোকটার কাছে এসে লোকটার চুল ধরে টান দিয়ে দার করায়।তারেকের উদ্দেশ্যে বলে,”একে এমনভাবে এখান থেকে নিয়ে যাবে যেনো কোনো অসুস্থ রোগীকে সুস্থ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।নিয়ে সোজা আমার সিক্রেট রুমে রাখবে।”
মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৩৩+৩৪
“ওকে ম্যাম।”
তারেক লোকটাকে নিয়ে যেতেই মায়া এদিক ওদিক আবারও ঘুরে তাকালো।এখানে একেকজনের চাহনী একেক রকম।কে যে শত্রুপক্ষ আর কে যে মিত্র বুঝা মুশকিল।
