মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৩৯+৪০

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৩৯+৪০
ইশরাত জাহান

মায়ার অনেক বোঝানোর পর রিমু রাজি হলো কোর্টে যাওয়ার জন্য।মায়ার উপর সন্তুষ্ট রিমুর বাবা মা।সাথে রাজের কাছেও।
রাতের বেলায় হাসি হাসি মুখ করে হাতে লোশন মাখাতে থাকে মায়া।নীল রংয়ের নাইট ড্রেস পরে আছে।চুলগুলো পিঠ বরাবর।আহামরি বড় বা ছোট না।ছেড়ে দেওয়া স্ট্রেট চুলগুলো পিঠে এলিয়ে আছে।মনটা তার নিজের শরীরের যত্নের দিকেই।মাত্রই গোসল করেছে।এবার একটা ফ্রেশ ঘুম দিবে।কিন্তু রাজ থাকতে কি এটা সম্ভব!রাজ মাত্র বাসায় এসেছে।বাইরে থেকে খেয়েই এসেছে সে।তাই মায়া আজ আর অপেক্ষা করেনি।রাজ ঘরে ঢুকে মায়াকে দেখে মায়ার পিছন থেকেই জড়িয়ে ধরে।মায়ার চুলে মুখ গুজে বলে,”আমার এখন একটু রিফ্রেশমেন্ট চাই মায়াবতী।”

মায়া রাজের দিকে ফিরে রাজের মুখে হাত রেখে বলে,”একটা হট শাওয়ার নিয়ে আসুন। ঘুমটা অনেক ভালো হবে।”
“হট শাওয়ার!”
“হুম,আমি তো শাওয়ার নিয়ে এসে এখন রিল্যাক্স ফিল করছি।”
“আচ্ছা……
“হ্যাঁ।”
“তাহলে চলো।”
“কোথায়?”
“হট শাওয়ার নিতে।”
“আমি নিয়েছি শাওয়ার আর নিবো না।আপনি যান তো।”
“আমি আমার মায়াবতীর উষ্ণতা নিয়ে হট শাওয়ার কমপ্লিট করতে চাই।”
“মন্ত্রী মশাই?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাজ মায়ার নাকে নাক ঘষে মায়ার ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে চুম্বন দিয়ে বলে,”No more word’s.I need only hot shower with you wifey.”
মায়াকে কোলে করে নিয়ে গেলো বাথরুমে।বাথটাবে রেখে মায়ার কোমরে হাত রাখলো রাজ।মায়ার চোখে তাকিয়ে থেকে বলে,”আমার সারাদিনের ক্লান্তি নিবারণের একমাত্র ঔষধ আমার মায়াবতী।”
“আপনি রোমান্সের নামে আমাকে টর্চার করছেন।এই শীতে আবার গোসল করতে ভালো লাগেনা।”
“আমার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টর্চার তোমাকে হজম করতে হবে মায়াবতী।”

বলেই রাজ মায়ার উপর তার টর্চার শুরু করে দেয়।মায়া বাধা দেয়না রাজকে।রাজের সুখে সেও তো সুখী।……
হট শাওয়ার শেষ করে ঘরে এসে শীতে কাপছে মায়া।ওয়াড্রোপ থেকে আরো একটা নাইটি নিয়ে পরে নিলো।শীত এবার একটু বেশি করছে মায়ার।তাড়াতাড়ি লোশন নিয়ে গায়ে মাখতে থাকে।চুলগুলো ভিজে আছে।রাজ এখন উদম শরীর শুধু জিন্স পরা।মায়ার পাশে দাঁড়িয়ে আয়নায় চোখ রেখে বলে,”হট শাওয়ার নিয়ে এভাবে শীতে কাপছো কেন মায়াবতী?”

“শাট আপ!এটা হট শাওয়ার ছিলো না এটা টর্চার শাওয়ার ছিলো।”
“তোমার আমার বাথরুম বিলাস ছিলো।”
“অভদ্র লোক কোথাকার।”
রাজ মায়াকে নিজের বাহুর মাঝে নিয়ে গান গাইতে থাকে,”অভদ্র হয়েছি আমি তোমারই প্রেমে তাই……
মায়া সরে নিবে রাজ আবারও শক্ত করে ধরে গাইলো,”কাছে আসো না আরো কাছে আসো না..
বেশি কথা বলো না,
কোনো কথা বলো না……(বাকিটা ওরাই ভালো জানে)

আজকে রিমুর জন্য সবাই কোর্টে যাচ্ছে। আর মাত্র কিছু সময়।এরপরেই সত্য মিথ্যার লড়াই হবে।রাজ ও মায়া মিলে নিচে এসেছে।মাহমুদ সরদার রাজের কাঁধে হাত রেখে বলেন,”তোমরা জয়ী হয়ে ফিরবে।”
দুজনেই স্মিত হাসি উপহার দেয়।সিয়া হিয়া অন্যান্যরা অন্য গাড়িতে করে একটু পর বের হবে।এখন আপাতত মায়া ও রাজ আগে গিয়ে উকিলের সাথে আরেকটু ভালোভাবে সবকিছু গুছিয়ে রাখবে।গাড়িতে উঠে বসলো দুজনে।ড্রাইভার গাড়ি চালানো শুরু করতেই কিছুপথ পরে রাজের কাছে কল আসে।রাজ রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে জানায়,”আনোয়ার আলী এক্সিডেন্ট করেছেন।”

রাজ যেনো কানে ভুল কিছু শুনল।ভ্রু কুঁচকে বলে,”কি বললে?”
“জি স্যার এক্সিডেন্ট হয়েছে তার।এখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাকে।জ্ঞান নেই লোকটার।”
রাজের কান থেকে ফোনটা পড়ে গেলো নিচে।মায়া অবাকের সাথে পাশ ফিরে রাজের মুখটা দেখে।ড্রাইভারকে বলে গাড়ি থামালো।নিচ থেকে ফোনটা উঠিয়ে বলে,”কি হয়েছে?”
“আনোয়ার আলী এক্সিডেন্ট করেছে।”
“এক্সিডেন্ট হয়েছে নাকি করিয়েছে ওই শয়তান লোকগুলো।”

রাজ বুকে হাত দিয়ে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে।চোখের সামনে ভেসে আসে একটা মানুষের মুখ।নাম তার রোহিনী খান।হ্যাঁ এখন রাজ তার মায়ের কথা ভাবছে।চোখের সামনে মাকে দেখতে পাচ্ছে শুধু।ভেবেছিল মায়ের ধর্ষকদের খোঁজ না পেলেও বর্তমান জারা ধর্ষক আছে তাদেরকে রাজ ঠিকই শাস্তি দিবে।পারল আর কই? উকিলের তো আজকে এক্সিডেন্ট হলো।কোনো কিছুই গোপন থাকেনা।এদিক ওদিক কোনো একদিক থেকে তথ্য পেয়েছে শত্রুপক্ষ।হয়তো রাজের দলেরই কেউ গাফিলতি করেছে।করেই তো এমন অহরহ।রাজনীতির মাঠ এটা।শত্রু অনেক সময় নিজের অতি নিকটেই থাকে।তাকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।রাজ চোখ বন্ধ রেখেই বলে,”বুকের বামপাশটায় চিনচিনে ব্যাথা মায়াবতী।”

মায়ার অস্থির চাহনি সাথে ভালোবাসার হাত ছোঁয়ালো রাজের বুকে।রাজ সঙ্গে সঙ্গে আঁকড়ে ধরে বলে,”হেরে যাব আমি।শাহমীর রাজ হেরে যাবে মায়াবতী।”
“মায়াবতীর ইচ্ছা পূরণ করা মন্ত্রী মশাই কি করে হেরে যায়?মন্ত্রী মশাই যখন তার মায়াবতীর ইচ্ছা পূরণ করতে হাজারও শত্রুর সম্মুখীন হয় তখন এই ব্যাপারটা তো তুচ্ছ।”
“আমার মাকে বাঁচাতে পারিনি কারণ আমি ছোট ছিলাম কিন্তু আজ আজ তো আমি বড়।ক্ষমতায় আছি।তাহলে কেন আমি কোনো সুরাহা করতে পারছি না?শাহমীর রাজ আজ ব্যার্থ হতে চলেছে।সমাজের কাছে সে পরাজিত।”
“লক্ষ্য স্থির রাখুন আপনি।আপনার তো এভাবে ভেঙ্গে পড়া মানায় না।আপনি তো কঠিন পরিস্থিতি খুব সহজেই সামলাতে জানেন।”
“কিছু কিছু বিষয় থাকে যেগুলো সহজভাবে মেনে নেওয়া যায়না।বিষয়টা যদি হয় মা জড়িত তবে তো তা আরো কঠিন।”

মায়া রাজের পরিস্থিতি বুঝতে পারল।মায়ের সাথে যেটা ঘটেছে সেটা মায়া ভালোভাবে জানেনা।কিন্তু হালকা পাতলা আভাস সে পেয়েছে।মায়া নিজের ফোন নিয়ে কল করতে থাকে।নিজের উকিলের কাছে কল দিতেই তার অ্যাসিস্ট্যান্ট রিসিভ করে।মায়া বলে,”মিস্টার জাবেদ আছেন?”
“উনি তো আমেরিকায় গিয়েছেন ম্যাম।”
“ওহ।”

মায়া রাজের দিকে এক পলক তাকালো।রাজ যা বোঝার বুঝে নিলো।আজ কেসে যেটার সম্ভাবনা নেই।মায়ার তবুও একটু শান্তি লাগছে যে দুজন ধর্ষককে নিজের হাতে শেষ করেছে।এখন শুধু একজনের কেস।মায়া মনস্থির করে নেয় এই ছেলেটার যদি আইন কোনো ব্যবস্থা না নেয় তাহলে মায়া ওর সিক্রেট রুমে কারেন্ট শক দিবে।
এরমধ্যেই কল আসে হিয়ার।মায়া রিসিভ করতেই হিয়া বলে,”তোমাদের গাড়ি থামিয়েছো কেন?আমরা ক্রস করে গেলাম মাত্র।”

মায়া সামনে তাকিয়ে দেখে ওদের গাড়িটা চলে যাচ্ছে।
“আনোয়ার আলী এক্সিডেন্ট করেছে হিয়া।রিমুর হয়ে কোনো উকিল পাওয়া যাচ্ছে না।আমার পার্সোনাল উকিল এখন আমেরিকায়।”
হিয়া চমকে উঠে বলে,”তাহলে কি হবে?আমরা হেরে যাবো।”
সিয়া পাশ থেকে বলে,”হারবো কেন আমরা?”
“আনোয়ার আলী এক্সিডেন্ট করেছে।এখন উকিল ঠিক করতে গেলে মিনিমাম এক ঘন্টা লাগবে।আর কোর্টের সময় তো আছে মাত্র বিশ মিনিট।”
সবাই চিন্তায় পড়ে গেলো। রুদ্র বলে ওঠে,”এত চিন্তার কিছু নেই।সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“আপনি এত গা ছাড়া কথা বলছেন কিভাবে রুদ্র ভাই?”
“আরে উকিল রেডি হয়ে যাবে।চিন্তা করতে না কর তো।”
“উকিল কোথা থেকে আসবে শুনি?”
“মার্সিডিজ মেবাক এক্সেলেরো করে আসবে।”
“হেঁয়ালি করবেন না তো।”

রুদ্রকে রাগ দেখিয়ে মায়ার উদ্দেশ্যে বলে,”এখন কি করবে ভাবী?”
“রুদ্রকে দেও তো হিয়া।”
হিয়া মুখে কিছু না বলে ফোন এগিয়ে দিলো।পাশেই ড্রাইভ করছে রুদ্র।ফোনের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে ফোন নিয়ে নেয়।ফোন কানে নিয়ে বলে,”বলুন ভাবীজী?”
“উকিল কি সত্যি আসবে?”
“হান্ড্রেড পার্সেন্ট।”
“সময়ের মধ্যেই আসবে তো?”
“ইয়াপ।”
“ওকে।”
মায়া কল কেটে ড্রাইভারকে বলে,”গাড়ি চালান।চিন্তা করবেন না মন্ত্রী মশাই।ব্যাবস্থা হয়ে যাবে।”

“কিভাবে?”
“নতুন উকিল আসছে।”
“নতুন উকিল?”
“হুম।”
“নাম কি?”
“চিনি না আমি।রুদ্র বলল শুধু আমাকে।”
“রুদ্র যখন বলেছে তখন ব্যাবস্থা একটা হয়েছেই।”
কোর্টের কাছে এসে দাড়ালো সবাই।রাজ কোর্টের বড় দরজার দিকে তাকিয়ে বলে,”আমাদের পক্ষের উকিল কোথায়?ওপর পক্ষের উকিল তো এসেছে।”

রুদ্র চুলগুলো হাত দিয়ে সেট করে বলে,”লুক এট দ্যা মার্সিডিজ ব্রো।”
বড় লোহার গেট দিয়ে ঢুকছে পরপর দুইটি মার্সিডিজ।প্রথমটা কালো দ্বিতীয়টা লাল।সবাই সেদিকে চেয়ে আছে।মায়ারাজ এক সিঁড়ি নিচে দাঁড়িয়ে আছে।সবার আগে তারা।ওপর পক্ষের উকিলও আগ্রহ নিয়ে চেয়ে আছে এই কারের দিকে।এতবড় দামী গাড়িতে কে আসলো এটা দেখার আগ্রহ সবার।মিডিয়ার লোকজন নিজেদের কাজে এগোতে থাকে।রিমুর এই লড়াইয়ে মার্সিডিজ গাড়ি করে কে এসেছে এটাই সবার প্রশ্ন।প্রথম কালো গাড়িটি থামতেই সামনের ড্রাইভার গিয়ে পিছনের দরজাটা খুলে দেয়। সেখান থেকে প্রথমে এক জোড়া কালো বুট পরা পা নামে মাটিতে।এরপর উকিলের পোশাকে দেখা যায় লোকটির পিছন পাশ।

পিকনের লাল গাড়ি দিয়ে বের হলো দুজন।দুজনের চোখেই সানগ্লাস।একজন আরহাম খান বীর আরেকজন এই মাফিয়া বীরের জানেমান জারা।জারার হাত ধরে বীর উপরে উঠে রাজের পাশে দাড়ালো।রাজ এবার একটু রিল্যাক্স হলো।বীরের দিকে ফিরে বলে,”উকিলের জন্য এতটা সুরক্ষার ব্যাবস্থা?”
“আগের উকিলের কিছু হলেও তোর হৃদপিণ্ড এখনও চলাচল করছে এই উকিলের কিছু হলে তোর হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে যাবে।তাই এই উকিলের জন্য এতটা সুরক্ষার ব্যাবস্থা।”
“কে এই উকিল যার কিছু হলে আমার হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে যাবে?”
“একবার মাথাটা ঘুরিয়েই দেখ।”

রাজ মাথাটা ঘোরাতেই যেনো বড় এক ঝটকা খেলো।সাথে করে ঝটকা খেলো সরদার বাড়ির অনেকেই।সিয়া হিয়া চিৎকার দিয়ে বলে,”বাবা!উকিল!”
রাজ হা করে বলে,”কিভাবে কি?”
“ফুফা ওকালতি নিয়ে স্টাডি কমপ্লিট করেছে।এটা অনেকের জানা নেই।”
“রাজনীতিতে ঢুকেছিল কোন দুঃখে?আমার বাবার ব্যাপারে তুই এত জানলি কিভাবে?”
“তোর কাছে এক্সিডেন্ট খবর আসার আগে আমার কাছে আসে খবর।তখন ফুফা আমার সাথে কথা বলে।এর ঠিক কিছুক্ষণ পর রুদ্র জানালো তুই মাত্রই জেনেছিস।পরিস্থিতি সব জানিয়ে দিলো।”
মাহমুদ সরদার এগিয়ে এলো রাজের দিকে।রাজ ঠোঁট বাকিয়ে হাসি দিয়ে জড়িয়ে ধরে মাহমুদ সরদারকে।মাহমুদ সরদারও জড়িয়ে ধরেন নিজের ছেলেকে।রাজ ভ্রুকুটি করে বলে,”বাপের জন্মে কখনও ওকালতি করেছো বাবা,যে আজকে ওকালতি করবে?”

“বাপের জন্মে ওকালতি না করতে পারলেও ছেলের জন্মে এই সুযোগ আমার হয়েই গেলো।”
মিলি চিন্তিত হয়ে বলে,”কিন্তু কাকাই তো অভিজ্ঞ নয়।এটা নিয়ে তো এক্সপার্ট লয়ার প্রয়োজন।”
“আমার ওকালতি করা হয়নি ঠিকই কিন্তু আমি ওকালতি নিয়ে খুব ভালো করে জ্ঞান রাখি।আমার পড়াশোনা থেকে শুরু করে এই জীবন পর্যন্ত অনেক কিছুর অভিজ্ঞতা রেখেছি।”
“রাজনীতি করতে গেলে কোন দুঃখে?”
“তোমার মাকে ভালোবেসেছিলাম।তখন তার জন্য আমার শশুর মানে তোমার নানাভাইকে হাত করতে তার দলে যোগ দেই।এরপরে ওকালতি নিয়ে খোঁজ অনেক রাখলেও কাজে লাগাইনি আমি।আমার কাছে প্রমাণসহ পারমিশন আছে।আমি এখনও ওকালতি করতে পারব।”
সবাই এবার আশার আলো দেখতে পেলো।স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে ভিতরে ঢুকছে সকল সরদার মহলের লোকজন।তাদেরকে দেখে রিমু ও তার পরিবার কষ্টের মাঝেও নিজেদের ভাগ্যকে ধন্য করলো।এদের মত লোক আছে বলেই একতা আছে।সত্যের লড়াই হয়েই থাকে।

বিচারক এসে তার আসনে বসলেন।হাতে নিলামদারের হাতুড়ি(gavel) নিয়ে তিনটা শব্দ করলেন।সমস্ত রুম জুড়ে নীরবতা পালন হলো।বিচারকের সামনাসামনি দুইটি টেবিল।যেখানে একটিতে বসে আছেন মাহমুদ সরদার ও তার অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে আনোয়ার আলীর অ্যাসিস্ট্যান্ট।মাহমুদ সরদারের সামনে বসে আছেন তার বিপরিধ পক্ষের উকিল মিস্টার আলম ও তার এসিস্ট্যান্ট।বিচারকের অনুমতিতে আগে মিস্টার আলম উঠে দাঁড়িয়ে মাথাটা একটু নিচু করে সম্মাননী জানিয়ে তার বক্তব্য শুরু করেন।সাথে কিছু ডকুমেন্ট দিয়ে বলেন,”প্রথমত মিস্টার শাহমীর রাজ সরদারের উকিল আসেননি।দ্বিতীয়ত তারা অপশন হিসেবে নিয়ে এসেছেন তার বাবাকে। যে কি না কখনও ওকালতি করেননি।এটাকে তো আরও বেশি প্রী প্ল্যান বলে ধরা হয় ইওর ওনার।”

বিচারক তার সূক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে সমস্ত কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন।মিস্টার আলম আবারও বলেন,”এছাড়াও রিমুকে নিয়ে ধর্ষনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার স্ট্রং কোনো এভিডেন্স তো নেই।আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে একটা প্রমাণ হাজির করতে পারেননি কেউ।আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি রিমু মেয়েটি গার্মেন্ট কর্মী।যে কি না নিজের টাকা দিয়ে সংসার চালায়।গভীরে খোঁজ নিলে এটা স্পষ্ট জানা যায় আজকাল মেয়েরা বাইরে কাজ করে যে ইনকাম করে তার থেকেও বেশি খরচ হয়ে থাকে।হিসাব মোতাবেক এই অতিরিক্ত টাকাটা আসতে পারে কোথা থেকে তাও আবার একটা মেয়ের ক্ষেত্রে এত নিশ্চয়ই আমাকে বোঝাতে হবেনা।”

এতগুলো লোকের সামনে রিমুর চরিত্রে দাগ লাগলো।অপমান সহ্য করতে পারলো না রিমু সাথে তার বাবা মা।এগুলো তাদের শুনতে হবে এটা কেই বা ভাবে?রাগে ক্ষিপ্ত মায়া।চোখমুখ লাল হয়ে এসেছে।মাথাটা কাজ করা বন্ধ করতে শুরু করেছে।মন তো চাচ্ছে এখনই গিয়ে লোকটার গলা টিপে ধরতে।এদের মত টাকা খেয়ে সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানানোর উকিলকে মায়া ঘৃণা করে।কি সুন্দর অভিনয় এদের।যেনো আসলেই রিমু অপরাধী।
মিস্টার আলম আবারও বলতে থাকে,”রিমুকে নিয়ে যদি বলা হয় তাহলে তার খোঁজ নিলেই সবকিছু জানতে পারবেন।পুরো এলাকা তার বদনাম করতেই থাকে।মেয়েটা ছেলেদের সাথে প্রায়শই দেখা যায় ঘুরে বেড়ায়।অনেকে তো এটাও বলছে রিমু নিত্যদিন ছেলে নিয়ে নিজের বাড়িতেও আসে।এটা একটা প্রমাণও আছে।যেটা এই সিসিটিভি ফুটেজ দেখলে বুঝবেন।”

রিমুরা আগে যে বাড়িতে থাকতো তার কিছুটা দূরেই ফাইভস্টার হোটেল।সিসিটিভি ফুটেজ হোটেলের দরজায় সেট করা।সেই ফুটেজের দূরত্ব অনুসারে রিমুকে একটি ছেলের সাথে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে।এটা দেখে রাজ একবার তাকালো রিমুর বাবার দিকে।রিমুর বাবা বলে ওঠে,”এটা আমাদের প্রতিবেশী রিমুর ভাইয়ের মত।একসাথে রাস্তায় দেখা তাই আমিই বলছিলাম যে আমার বাসায় যেতে দেরি হবে তোমরা একসাথে যাও।”
রাজ এটা মাহমুদ সরদারের কাছে ম্যাসেজ করে দেয়।মাহমুদ সরদার ম্যাসেজ পড়ে রাজের দিকে তাকায়।আশ্বস্ত করলেন চোখের ইশারা দিয়ে।মিস্টার আলম তার কথা শেষ করে বসলেন নিজের আসনে।এবার উঠে দাঁড়ালেন মাহমুদ সরদার।বিচারক তাকে এবার অনুমতি দিয়েছেন।মাহমুদ সরদার উঠে বিচারকের সামনে একটু ঝুঁকে সম্মাননি দিয়ে বলেন,”ইওর ওনার আমার বিপরীত বন্ধুর প্রথম যে অবজেকশন সেটা হলো আমার ওকালতি নিয়ে।আমি সেই সমস্ত বিষয় আগে ক্লিয়ার করতে চাই।”

মাহমুদ সরদার কিছু কাগজ এগিয়ে দিলেন।তারপর বলতে শুরে করেন,”আমার বিপরীত বন্ধুর এটা জানা উচিত ওকালতি না করলেও ওকালতি নিয়ে যারা এডুকেশন কমপ্লিট করে ওদের ওকালতির একটা নির্দিষ্ট বয়স দেওয়া থাকে।আমি ওকালতি করিনি কিন্তু আমি ওকালতি থেকে পদত্যাগ কখনও করিনি।বলতে গেলে আমি অন্যকিছুর প্রতি ঝুঁকেছিলাম।সেটা ছিল রাজনীতি।তবে আমার ওকালতি সম্পর্কে জ্ঞান ও দক্ষতা প্রতি নিয়তই রাখা হতো।”
বিচারক মাহমুদ সরদারের বয়স ও কাগজের সমস্ত তথ্য দেখে বলেন,”আপনি রিমুর হয়ে সাক্ষ্য দিতে পারেন।”

মাহমুদ সরদার এবার মিস্টার আলমের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে চশমা ঠিক করে বলেন,”আমার বিপরীত পক্ষের বন্ধুর সেকেন্ড যে অবজেকশন নো অবজেকশন না কনফিডেন্ট নিয়ে বলা একটা কথা ছিল।গার্মেন্টস কর্মীরা পরিবার সামলায়।রিমু আয়ের থেকেও ব্যয় করে অধিক।এর থেকেও বড় কথা উনি প্রকাশ করতে চেয়েছেন গার্মেন্টস কর্মীরা হলো দেহ ব্যবসায়ী।এটাকে তো সরাসরি এভাবেই ধরা হয় ইওর ওনার।তো আমার প্রশ্ন উনি এটা দ্বারা কতজন নারীকে টার্গেট করলেন?ওনার নিজের মেয়েও তো একজন চাকরীজীবি।ব্যাংকে জব করেন শুনেছি।বেশ ভালো বাড়ি বানিয়েছেন।বেতনের হিসাব অনুসারে এতকিছু তো থাকা সম্ভব নয়।তাহলে কি আমি ধরে নিবো ওনার মেয়েও এমন?”

মিস্টার আলম রেগে গর্জে উঠে দাড়িয়ে বলেন,”ইওর ওনার উনি আমার মেয়েকে পার্সোনাল এটাক করছেন।”
“আপনিও এক নিরুপায় মেয়েকে পার্সোনাল এটাক করেছেন মিস্টার আলম।”
“আমি প্রমাণটাও দিয়েছি বিচারকের কাছে।”
“আমিও দিবো রিমুর বিরুদ্ধে প্রমাণ।একটু অপেক্ষা করুন।”
মিস্টার আলমের থেকে মুখ ফিরিয়ে মাহমুদ সরদার বলেন,”ফুটেজে একটা ছেলের সাথে রিমুকে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে।ছেলেটার সাথে কিন্তু কোনো বাজে ইঙ্গিতে দেখা যায়নি।ইনফ্যাক্ট লক্ষ্য করেই দেখা যায় ছেলে মেয়ে দুজন বেশ ভালই দূরত্ব বজায় রেখেছে।আচ্ছা আমার একটা প্রশ্ন যে,রাস্তা দিয়ে ছেলে মেয়ে হাঁটলেই কি মেয়েটার চরিত্রের দোষ আছে?ছেলে মেয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটলেই আরেকজন এসে মেয়েটাকে ধর্ষণ করার অধিকার রাখে?মেয়েটা কি ছেলেটাকে নোংরা ইঙ্গিত দিয়েছিলো?সবথেকে বড় কথা রিমুকে যে ছেলের সাথে দেখা যাচ্ছে সেই ছেলেকে নিয়েও কিন্তু কোনো কেস আসেনি।এসেছে একজন ধর্ষককে নিয়ে।এটা দ্বারা কি বুঝে নিবো ইওর ওনার আমার বিপরীত পক্ষের বন্ধু খেলাটা ঘোরাতে আরেকটা গুটি ব্যাবহার করছেন না?”

মিস্টার আলম অবাক হয়ে দেখছে মাহমুদ সরদারকে।বিড়বিড় করে তার অ্যাসিস্ট্যান্টকে বলে,”এই লোকটা না রাজনীতি করতো।ওকালতি ছেড়েছিল কেন?উনি তো দেখছি ঠান্ডা মস্তিষ্ক দিয়ে খেলছেন।”
“আসলে স্যার খোঁজ নিয়েছিলাম ওনার।ওনার শশুর একজন কৃষিমন্ত্রী ছিলেন।যেটা এখন ওনার ছেলে।উনি ওনার শ্বশুরের ডানহাত ছিলেন।খুবই চালাক এবং রাজনীতিতে খেলাটা তার কঠিন ছিল।মানুষটা সৎ এবং দেখতে ভোলাভালা হলেও কাজে পটু সে।”
“আরও তো এভিন্ডেন্স আছে রিমুর বিরুদ্ধে।সেগুলো দেখাও।”

অ্যাসিস্ট্যান্ট দিতেই মিস্টার আলম অপেক্ষা করেন মাহমুদ সরদারের বক্তব্য শেষ করার।মাহমুদ সরদার বক্তব্য শেষ করতেই মিস্টার আলম বলতে শুরু করেন,”ইওর ওনার কেস অনুসারে এখানে তিনজন ব্যাক্তি ধর্ষনের সাথে জড়িত কিন্তু ধর্ষক হিসেবে এখানে আনা হয়েছে একজনকে একজনকে।বাকি দুজনকে হত্যা করা হয়েছে।তাদের লাশ একই দিনে একই সময়ে তাদের বাড়ির সামনেই ছিলো।তার কিছু ফুটেজ এখানে দেওয়া হলো।এখানে ফুটেজের সময়টা একবার দেখে নিবেন।”
ছবি ও ছবির ব্যাপারে কিছু তথ্য দেওয়া হলো বিচারকের কাছে।এবার মিস্টার আলম বলেন,”আমি এই আদালতের সামনে ধর্ষিতা হিসেবে যাকে গণ্য করা হয়েছে রিমু তাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই।কাঠগোড়ায় তাকে আনার অনুরোধ রইলো।”

বিচারক সম্মতি দিয়ে বলেন,”রিমুকে কাঠগোড়ায় আনার অনুমতি দেওয়া হলো।”
রিমু অনেক সাহস যোগালো মনে মনে।তাকে হয় সম্মানের সাথে এই আদালত থেকে বের হতে হবে নাহয় এখানে থেকে বের হয়ে নিজের জীবনটাই শেষ করে দিবে।এমনটা মনে মনে স্থির রেখেছে রিমু।গুটি গুটি পায়ে কাঠগোড়ায় গিয়ে দাঁড়ালো রিমু।রিমুকে শপথ করানো হয় সত্য বলার জন্য।এটা মিথ্যাবাদিকেও বলানো হয়।কিন্তু নিয়ম এখনও চলছে একই গতিতে।শপথ শেষ করতেই মিস্টার আলম এসে রিমুকে প্রশ্ন করে,”আপনার বক্তব্য অনুসারে আপনাকে তিনজন ব্যাক্তি মিলে ধর্ষণ করেছে রাইট?”

“জী।”
“আপনি কি তাদের চিনতেন?”
“একজনকে চিনতাম।”
“কিভাবে?”
“চাঁদাবাজির সাথে জড়িত ছেলেটি।আব্বার কাছে অনেকবার চাঁদাবাজি করেছিলো।আমাকে আব্বার কাছে সবজি আনতে দেখে প্রায়ই।”
“আপনার আব্বা একজন সবজিওয়ালা?”
“জী।”
“আপনাকে যেদিন ধর্ষণ করা হয় ওইদিন আপনি রাত বারোটায় কেন বাড়ি যাচ্ছিলেন?”

“আমাদের ফ্যাক্টরিতে এখন চাপ বেশি।একেকটা অনুষ্ঠান চলছে শীতের মৌসুমে।সেই জন্য আমাদের পোশাকের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।ইউনিক কালেকশন জমা পড়েছে।আমি সুতা কাটার কাজ করি।আমাদের এই দলে মেয়েরা একই সাথে কাজ করছিলাম।মায়া ম্যাম উনি ফ্যাক্টরিতে সকালবেলা থাকেন।সিডিউল দিয়েছিলেন পাঁচদিনের।আমরা আসলে এগোতে পারিনি।আমাদের কাছে ম্যানেজারের মাধ্যমে সিডিউল আসে।ম্যানেজার নিজেই এসবের জন্য দায়ী।উনি আগে আমাদের জানালে আমরা এই পাঁচদিনে কাজ শেষ করতে পারতাম।যেহেতু ওইদিনটা লাস্ট ডেট ছিলো তাই আমরা সারাদিন রাত পরিশ্রম করি।আমার সুতা কাটা শেষ হয় এগারোটার দিকে।আমার বাড়ির দিকে যেতে দুইটা অটো ভাগ করে যেতে হয়।একটা অটো নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে আরেকটা অটো ধরতে হয়েছিল।আব্বা এসে পরের অটো করে আমাকে নিয়ে যায়। ওইদিনও আব্বা আসছিল কিন্তু ওরা এসে আমাকে আব্বার চোখের আড়ালে অজ্ঞান করে নিয়ে যায়।আব্বা দেখতে পায়নি আমাকে যখন নিয়ে গিয়েছিল।”

“আপনাকে যে ওরা ধর্ষণ করেছে এটার প্রমাণ কি?”
রিমু চাইলো মায়ার দিকে।ভিডিও ফুটেজ কি আদৌ পেয়েছে?রিমু জানে না।রিমুকে ধর্ষণ করার সময় একজন ওদেরই দলের ছিলো সে মজা করে ভিডিও করে।ভিডিও করে রিমুকে শাসিয়েছিলো।এই ব্যাপারে মুখ না খুলতে।মায়া মাথা দুইদিকে নাড়িয়ে না বুঝালো।রিমু আশাহত হয়ে চুপ হয়ে গেলো।মিস্টার আলম সুযোগের সৎ ব্যাবহার করে।

“ইওর ওনার রিমুর কাছে তো আমার মক্কেলের হয়ে কোনো প্রমাণ নেই।বরং আমি বলতে পারি চাঁদাবাজির কারণে আমার মক্কেল ও তার বন্ধুকে ফাঁসানো হয়েছে।দুইজনকে হত্যা করেছে এরা।একজনকে এখনও হত্যা করতে পারেনি।তাই সে আদালতে হাজির।”
রিমুর চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।মায়া এবার রাগের সাথে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”নিজের মনের মত সাজিয়ে কাহিনী বললেই সেটা সত্যি হয়ে যায়না মিস্টার আলম।”
সবাই অবাক হয়ে তাকালো মায়ার দিকে।বিচারক সবাইকে থাকতে হুকুম দিলেন।মায়ার উদ্দেশ্যে বলেন,”আপনি কিছু বলতে চান?”

মায়ার সোজা উত্তর,”জি।”
“কাঠগোড়ায় এসে বলুন।”
মায়া কাঠগোড়ায় এসে শপথ করে নেয় আগে।তারপর মিস্টার আলমের উদ্দেশ্যে বলে,”আপনি মাত্রই বললেন ধর্ষনের কোনো প্রমাণ আছে কি না।আমার প্রশ্ন আপনি কি করে এটা ভাবতে পারেন একজন ধর্ষিতার কাছে ধর্ষনের প্রমাণ থাকে?যে ধর্ষিতা হয় সে প্রমাণের জন্য ব্যাস্ত থাকে?”

আদালতে থাকা সকল লোকজন হাততালি দেয়।মায়া আবারও বলে,”ইওর ওনার বিচারকের কাছে সত্যটা হাজির করা উচিত।মিস্টার আলমকে আমি নির্দ্বিধায় মিথ্যা সাজাতে দেখছি।এটা কি ঠিক?একজন ধর্ষিতা কি তার মস্তিষ্ক ঠিক রাখতে পারে?সে কি জানতো সে ধর্ষিতা হবে?সে কি জানতো সে তার বাবার সামনে থেকেই গুম হয়ে যাবে?মিস্টার আলমের এসব বানোয়াট প্রশ্ন রিমুকে আরো বেশি অসুস্থ করে দিচ্ছে।মানসিকভাবে দুর্বল বানানোর এক প্রচেষ্টা।”
মিস্টার আলম মৃদু হেসে বলেন,”একজন কেস করবে আসামির হয়ে প্রমাণ দিবেনা এটা কেমন মতামত দিচ্ছেন আপনি ম্যাডাম মায়া?”

“তাহলে আপনি কিভাবে খুন কে করেছে প্রমাণ করতে না পেরে আসামি বের করছেন মিস্টার আলম?”
“এটা তো কথাতেই বের হলো।”
“ঠিক তেমনই এটাও বের হয় যে চাঁদাবাজি করে নেশাখোর ওই ধর্ষকরা রিমুকে জেদের কারণে উঠে নিয়ে ধর্ষণ করেছিল।”
“এতটা আত্মবিশ্বাস?”
“সত্যের হয়ে লড়াই করে দেখবেন আপনিও নিজের উপর আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবেন।”
মিস্টার আলম বোধয় একটু ঘাবড়ে গেলেন।আবার নাও যেতে পারেন।উকিল বলে কথা।
“আপনার ফ্যাক্টরির একটা মেয়ের ধর্ষণ হয়েছে।এটার জন্য তো আপনিও দায়ী তাহলে।”
“আমি কিভাবে দায়ী থাকি?”

“আপনিই তো অত রাত ফ্যাক্টরিতে মেয়েদের কাজের প্রেসার দিয়েছিলেন।”
“আমার তো বলতে হয় আপনি কানে একটু কমই শোনেন।রিমুর বক্তব্য অনুসারে আমি এক রাতের জন্য না আমি পাঁচদিনের অর্ডার দিয়েছিলাম।আমার ম্যানেজার এমন করায় আমি তাকেও আমার কোম্পানি থেকে বের করে দিয়েছি।সে তো আপনার মত মিথ্যাবাদীর হয়েই সাক্ষী দিতে এসেছে।”
মিস্টার আলম মায়ার ইশারায় তাকালো ম্যানেজারের দিকে।মুখে আস্তে করে চ উচ্চারণ করলো মিস্টার আলম।হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দিয়েছে যে মায়া।মায়া বিচারকের দিকে ফিরে বলে,”ইওর ওনার আমি সত্যের হয়ে কথা বলি এবং শেষ নিশ্বাস অব্দি সত্যের পক্ষেই থাকব।সেই সাথে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমি যেকোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।আজকেও আমি অন্যায়কারীর হয়ে বিচার চাইতে আপনার দুয়ারে এসেছি।আশা করি এখানে সততার পরিচয় দেওয়া হবে।টাকার কাছে সত্যকে হারতে হবেনা।”

“এসব সিনেমার কথা ম্যাডাম।এখানে প্রমাণ প্রয়োজন হয়।”
“প্রমাণ ছাড়া মাঠে কেউ নামেনা মিস্টার আলম।”
মাহমুদ সরদারের কথাতে মিস্টার আলম ঘুরে তাকালো।মাহমুদ সরদার উঠে দাড়িয়ে বলতে শুরু করেন,”এই কাঠগোড়ায় আমার পুত্রবধূ মেহেরুন জাহান মায়া যে হাজির সে এসব কথা সাহস ও প্রমাণের ভিত্তিতে বলতে পারছে ইওর ওনার।রিমুকে এতক্ষণ হেনস্থা করার কারণেই আমার পুত্রবধূ চটে যায়।”
“আদালতে চটলে কি চলে মিস্টার মাহমুদ সরদার?”

“পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে।তাদের মধ্যে কেউ আছে ঠান্ডা মাথায় পিছে লাগার।কেউ আছে অন্যায়কে ঠান্ডা মস্তিষ্কে মাটি চাপা দেওয়ার।আবার অনেকে আছে অন্যায়কে সহ্য না করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায়।আমার পুত্রবধূ ঠিক তেমন।কোনো প্রকার অন্যায়কে সে সমর্থন করতে পারেনা।অসহায়ত্বের সুযোগ নেওয়া লোকেদের দিকে তার ঘৃণিত নজর খুব তিক্ততার।এই যেমন এখন আপনার প্রতি দেখানো হচ্ছে।”
মিস্টার আলম শুকনো ঢোক গিলে নিজের কলার ঠিক করে উপরের কালো পোশাকটা ঠিক করে নেয়।মাহমুদ সরদদারের ইশারা পেয়ে মায়া বলে,”আমার বক্তব্য এটকুই ছিলো।”

মায়াকে থামিয়ে দিলেন মাহমুদ সরদার।আসলে তিনি চান এই মিস্টার আলম টাকার কাছে বিক্রি হয়ে কতটা নিচে নেমেছে তা প্রমাণ করতে।
মায়া চলে যেতে মিস্টার আলম বলেন,”আপনি কি আপনার বউমাকে অনেস্ট হিসেবে দাবি করছেন?”
“কোনো সন্দেহ আছে আপনার?”
“ইওর ওনার আমি এই বিষয়ে কথা বলতে আমার বিপরীত পক্ষের বন্ধুর ছেলে মিস্টার শাহমীর রাজ সরদারকে ডাকতে চাই।”

রাজকে ডাকার কারণে একটু অবাক হলো মাহমুদ সরদার।মায়ার বিষয়ে কথা উঠিয়ে রাজকে কেন ডাকছে।তাহলে কি এবার মায়ার কলঙ্ক নিয়েও কথা উঠবে।মনে মনে মাহমুদ সরদার বলেন,”এতক্ষণ বউমার খুনের বিষয়টা ধামাচাপা রাখলেও এখন মনে হয়না আর পারবো।কারণ বউমা তো ক্ষেপে গেলে এই উকিলকে আমাদের সামনেই খুন করে দিবে।শেষ সব শেষ।”
রাজ এসে দাড়ালো কাঠগোড়ায়।নিয়ম অনুযায়ী সেও শপথ করে নেয়।রাজকে প্রশ্ন করে,”আপনার ওয়াইফ মেহেরুন জাহান মায়া ওনার ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে তো আপনি খুব ভালো করেই জানেন তাই না?”
“অফ কোর্স।সি ইজ এ স্টেবলিশ ওমেন।”
“উইদাউট এনি গার্জিয়ান।”
“নো, সি হেজ এ ব্রাদার।”
“কিন্তু তথ্য অনুসারে আসল ভাই না।আপনারই কাজিন হয় সে।আপনার ভাই কিভাবে আপনার বউয়ের ভাই হয়।তাও আবার বায়োলজিক্যাল না।”

“আপনি তো দেখছি নিজের বউ রেখে আমার বউকে নিয়ে তদারকী শুরু করেছেন।”
ভরা আদালতে হাসির শব্দ।বিচারক গাভেল দিয়ে তিনটি শব্দ করে বলেন,”অর্ডার অর্ডার অর্ডার।”
সবাই থেমে যেতে মিস্টার আলম বলেন,”এখানে কেস অনুসারে আমার বউ নেই যে। তাই আপাতত আপনার বউকে নিয়েই পড়ে থাকতে হবে।”
“আমার বউকে নিয়ে আমি কারো কাছে কৈফিয়ত দেইনা।”
“কেস অনুসারে দিতে হবে।”
“আমার বউকে নিয়ে সোজা একটাই বাক্য আমি বলতে জানি।সে কোনো অবৈধ কাজকরবারকে গ্রহণ করেনা এমনকি এই ধরণের ব্যক্তিকে সহ্য করতেও পারেনা।”
“এতটা দৃঢ় বিশ্বাস আপনার বউকে নিয়ে?”

“বিশ্বাস আছে বলেই বউ বানিয়েছি তাকে। অবিশ্বাসের হলে তো আমার বউয়ের স্থানে আমার মায়াবতী থাকতো না।”
“আপনার কি আপনার বউ আর আপনার ভাইকে নিয়ে সন্দেহ হয়নি কখনও?”
মায়ার হাত মুঠ করে রাখে।সাথে বীর রক্তিম চোখ করে।রাজ নিজেও রেগে সামনে তাকায়।কিছুক্ষণ মিস্টার আলমকে দেখে নিয়ে বলে,”যদি আমার বউ এমন কিছু করেও থাকে আপনি কি করবেন?”
“আপনার বাবার দৃঢ়তা ভাঙতে পারবো।আর সেখান থেকে এটাও প্রমাণ করতে পারব আপনার বাবা তার বউমার প্রেক্ষিতে সঠিক বক্তব্য রাখেননি।”

“আমার বাবা মানুষ চিনতে ভুল করেননা।বিচারকের সুবিদার্থে তবুও আমি জানিয়ে দেই,আমার ওয়াইফ মিসেস মেহেরুন জাহান মায়া যখন ছোট ছিলেন তখন সে তার বাবা মা হারায়।আমরা তাকে ও তার বোনকে অনাথ হিসেবে পাই।সে থাকে আমার মামাতো ভাই আরহাম খান বীরের বাংলোতে কিন্তু আমি আর বীর দেশে ছিলাম না।আমরা স্টাডির জন্য লন্ডনেই থাকতাম।এখানে বীরের বোনের অধিকার পেয়ে চলেছে আমার ওয়াইফ কিন্তু এজ এ গার্জিয়ান।এরপর আমরা দেশে আসি।আমি তাকে ভালোবাসতে শুরু করি।বীর এই সম্পর্ক মেনে নেয়।আমাদের মাঝে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে।তারপর বিয়েটা করি আমরা।যেখানে আমরা দুই ভাই এক সাথেই লন্ডনে থেকেছি আর দেশে আসার তিনদিন আগে আমার ওয়াইফ ঢাকা আসে আর ভাই বীর থাকে চট্টগ্রাম সেখানে সন্দেহ করার স্থান কোথায়?”
“এতটা শিওর দিতে পারছেন কিভাবে যে তাদের মধ্যে কোনো অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি!”
রাজ কাঠগোড়ার উপর এক কিল দিয়ে বলে,”সি ইজ মাই ওয়াইফ এন্ড ইউ হ্যাভ নো রাইট টু অ্যাকিউজ হার উইদাউট ইনি এলগেশন.”

“রেগে যাচ্ছেন কেন মন্ত্রী মশাই।আপনার ওয়াইফ আর চার পাঁচটা পরিবারের মত বেড়ে ওঠেনি।তারউপর এতবড় একটা ফ্যাক্টরি তার।এমনকি কোম্পানি করেছে দুই স্থানে।এতকিছুর পিছনে কার সফলতা?”
রাজ চাইলেও বলতে পারবে না এগুলো শাহানা পারভিনের ফ্যাক্টরীর অংশ।কারণ এগুলো পাবলিক হলেই ওদের আরেক শত্রু এলার্ট হবে।এখানে মিডিয়া বাইরে অপেক্ষায় আছে।একটা বার্তা যদি এদিক ওদিক হয় সমস্যা তখনই তৈরি হবে।তাই অনেককিছু সাজিয়ে বলে রাজ,”আমি আমার ওয়াইফকে এতদূর আসতে অনেক স্ট্রাগল করতে দেখেছি।সে নিজের যোগ্যতায় এতদূর এগিয়েছে।”
“সাথে তার ভাই নামক লোকটিও ছিলো রাইট!”
“আপনার মস্তিষ্কে চলা কিটের মত ছিলো না।”
“আপনি আমাকে অপমান করছেন।”

“আর আপনি আমার ওয়াইফকে।যে অধিকার আমি স্বামী হিসেবে আপনাকে একদমই দেইনি।”
“সত্য মিথ্যা যাচাই করতে হলে এগুলো করতেই হয়।”
“আপনার সত্যতা যদি বিচার করতে হয় তাহলে আপনাকে আপনার বউ নিয়ে প্রশ্ন করা হোক।”
“এটা কেমন ধরণের আচরণ?”
“আমার বউকে নিয়ে আমি বুঝে নিতে পারবো।আপনি কেউ না তাকে নিয়ে বোঝার বা দেখার।আমার বউয়ের কি হলো না হলো তার ব্যাপারে আমি কারো থেকে জ্ঞান নিতে প্রস্তুত নই।শুধু বলব স্বামী হিসেবে আমি তার উপর আস্থা রাখি।”

মাহমুদ সরদার এবার বিচারকের দিকে চোখ রেখে বলেন,”ইওর ওনার বিচারসভায় মিস্টার আলম এবার আমাদের পরিবারকে গভীরভাবে আঘাত করতে চাইছেন।তাই আমার মতে এখন আমাদের আর কোন বক্তব্য না রেখে যথাযথ প্রমাণ সরাসরি পেশ করা।”
বিচারকের কথা অনুযায়ী মাহমুদ সরদার কিছু টেস্ট রিপোর্ট ও ছবি দিলো।তারপর বলেন,”এখানে রিমুর কিছু টেস্ট আছে।যেগুলোতে স্পষ্ট তাকে নির্মমভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে।এছাড়া ওই ছবিতে এটাও আছে রিমুর যখন সদর হাসপাতালে রাখা হয় তখন কিছু লোক রিমুকে খুন করতে চায়।এই লোকগুলোর বায়োডাটা দেওয়া আছে।এরা মন্ত্রী শাহমীর রাজ মানে আমার ছেলের বিরোধী দলের লোক।এটারও প্রমাণ এখানে।”

“আপনার ছেলের সাথেও কি এটা জড়িত?”
“জী ইওর ওনার।আমার ছেলেকে রিমুর বাবা সাহায্য করছিলো।বিরোধী দল আরশাদের হয়ে কিছু প্রমাণ দেওয়ার জন্য।তাই তো রিমুর বাবাকে শাস্তিস্বরূপ এই দিন দেখতে হচ্ছে।আজকে আমার বিপরীত পক্ষের বন্ধু সেই দিনের এক অন্যতম চরিত্র পালন করলেন।এছাড়া আরো কিছু প্রমাণ আমি নিজে দিতে পারি।”
“জি হাজির করুন প্রমাণ।”
“রিমুর ধর্ষণকারী একজনকে পাওয়া যায় আর বাকি দুজন মারা যায়।এখানে একটু সন্দেহ আছে তাদের কে মারলো।কিন্তু তার প্রমাণ কি আছে?নেই ইওর ওনার।যে একজন রিমুকে ধর্ষণ করেছে তার পরিবার ও আশেপাশের লোকের থেকে আমরা আরো অনেক কিছু সংগ্রহ করেছি।বাবা মা হিসেবে ধর্ষণকারীর পরিবার নীরব থাকলেও প্রতিবেশী মুখ ঠিকই খুলেছে।আমি তাদেরকে হাজির করে কিছু প্রশ্ন করার অনুমতি চাই।”

“অনুমতি দেওয়া হলো।”
একেক করে কয়েকজনকে আনা হলো।সবার কথা অনুসারে প্রমাণ হয় রিমুকে এরাই ধর্ষণ করছে।সব শুনে বুঝে বিচারক বলেন,”রিমুকে যারা ধর্ষণ করেছে তাদেরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হলো।যেহেতু দুজন ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে তাদের খুনের তদন্ত চলবে।এরপর তাদের হয়েও রায় দেওয়া হবে।আপাতত একজনকেই কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হোক।”

রাজ মনে মনে বলে,”তদন্ত চলতে চলতে খাতাটা বন্ধ হয়ে যাবে তবুও আসামি খুঁজে পাবে না কেউ।”
বিচারক মিস্টার আলমকেও মিথ্যার মামলায় সাসপেন্ড করে দেয়।এটা উপরমহলে পৌঁছানোর আবেদন করেছেন।
মিস্টার আলম এই কারণে ভেঙ্গে পড়েন।চেয়ারে বসে কপালে হাত রাখলেন।মাহমুদ সরদার চোখ থেকে চশমা খুলে বলেন,”আমি ওকালতি করিনি কখনও কিন্তু আমি সত্যের হয়ে লড়তে শিখেছি।”
বলেই চলে যান মাহমুদ সরদার।তার পিছনে তার পরিবারের সকলে ছিলেন।সবাই হাঁটছেন নিজেদের মতো করে।একসাথে দলবদ্ধ হয়ে একটি পরিবার।সাংবাদিক এটাকে ভিডিও করছে।বেশ ভালই প্রশংসা পাচ্ছে রাজ ও তার পরিবার।

অন্যদিকে আসামিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গাড়িতে করে।খুনি দুজনের বাবাও ওখানে উপস্থিত।একজন তো ক্ষিপ্ত হয়ে প্যান্টের পকেট থেকে বন্দুক বের করে।বন্দুকটা রাখলো মাহমুদ সরদারের দিকে।বরাবর সোজা বন্দুক রেখে দিলো।মাহমুদ সরদারকে শেষ করতে ইচ্ছা করছে তার।কারণ তার লড়াইতেই তো এতদূর এগিয়েছে।বন্দুক দিয়ে যেই শুট করে ওমনি এটা রাজের নজরে আসে।বাবাকে বাঁচাতে খুব দ্রুত লাফ দিয়ে মাহমুদ সরদারের সামনে চলে আসে রাজ।গুলিটি এসে লাগে রাজের বুক বরাবর। হঠাৎই সকলের হাসিখুশি মুখের মাঝে রাজের বুকটা ছ্যাৎ করে রক্তের ছিটা বের হয়।রক্ত ছিটকে এসেছে মাহমুদ সরদারের মুখের উপর।ছেলের রক্ত আচমকা বাবার মুখে এসে পড়ল।হাসিখুশি মুখে থাকা একজন বাবা যে কি না পরিবারের সাথে গর্ববোধ করছিলেন আচমকাই তার এমন দৃশ্য তৈরি হলো।মেনে নিতে পারলেন না তিনি।দুই হাতে আগলে নিলেন রাজকে।রাজ বুকে হাত রাখতে গিয়েও ঢলে পড়ে যায়।শরীর নিস্তেজ হয়ে আসে।এর মাঝে আরো একটা গুলি এসে লাগে রাজের বুকের আরো কিছুটা দূরে।মায়া এবার চিৎকার দিয়ে বলে,”মন্ত্রী মশাই!”

রাজ ওর বাবার কোলে ঢলে পড়ে।রুদ্র আশেপাশে তাকিয়ে সোজা দেখতে পায় আসামিকে।দৌড়ে ধরতে নেয় তাদের কিন্তু তারা গাড়িতে উঠে চলে যায় দ্রুত গতিতে।রুদ্র হার মানলো না সেও পিছনে ছুটলো।সাথে ছুটছে পুলিশের গাড়ি।
রাজকে হাসাপাতালে নেওয়ার জন্য গাড়িতে ওঠানো হয়।মায়ার অবস্থা খারাপ।ও রাজের জন্য এবার ছটফট করে।সাথে বাকিরাও।মাহমুদ সরদারের বুক ধড়ফড় করছে।তার প্রথম সন্তান।বাবার কাছে সন্তানের এই দৃশ্য দেখা যে খুব কঠিন।অনেক কষ্টে গাড়িতে উঠলো রাজকে।হাত কাপছে মাহমুদ সরদারের।বীর ড্রাইভ করছে জারা সামলাচ্ছে সিয়া আর হিয়াকে।মায়া উচু সরে বলে,”তারেক!”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৩৭+৩৮

তারেক কাছে আসতেই মায়া বলে,”ওই লোকটার গ্রেফতার হলেও জামিনের ব্যাবস্থা তুমি করবে।”
“কিন্তু ম্যাম?”
মায়া হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলে,”আমার স্বামীকে মেরে ফেলার শাস্তি তাকে আমি নিজ হাতে দিবো।

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৪১+৪২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here