মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৪১+৪২

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৪১+৪২
ইশরাত জাহান

রাজকে হাসপাতালে আনা হয়েছে ঘণ্টা খানিক হয়ে গেলো।অপারেশন রুমের বাইরে বসে মেঝেতে মাথা করে রেখেছেন মাহমুদ সরদার।ছেলের জন্য দুশ্চিন্তায় মাথা কাজ করছে না।সেই সাথে মাথা কাজ করা বন্ধ করেছে মায়ার।মাহমুদ সরদার চোখের পানি ফেলতেই সিয়া আর হিয়া দুইপাশে বসে বাবার চোখের পানি মুছে দেয় দুজনে।হিয়া ওর বাবার দিকে ফিরে বলে,”এভাবে কান্না করো না বাবা।সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“আমার ছেলেটা আমাকে বাঁচাতে তার জীবনের ঝুঁকি নিয়েছে।নিজের জন্য ছেলেকে আজ মৃত্যুর মুখে দেখেছি।এর থেকে কষ্টকর আর কি হতে পারে?”

“ভাইয়া তোমাকে অনেক ভালোবাসে বাবা।তোমার কষ্ট ভাইয়া সহ্য করতে পারবে না।”
“আর তোর ভাইয়ার কষ্ট বুঝি আমার সহ্য হয়?ছেলেটা বেশ সুস্থ স্বাভাবিক জীবন পেয়েছে।কয়েকদিন ধরে আবার রোহিনীর কথা মনে করে করে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।ওর আড়ালের চোখের পানি আমি দেখতে পাই।”
মায়া এবার প্রশ্ন ছুড়লো,”কি হয়েছিল ওই সময়টায় যে মন্ত্রী মশাই ভেঙ্গে পড়ে?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমার প্রথম স্ত্রী রোহিনী খান।মালিনী খানের যমজ বোন।ওকে আমি প্রথম দেখি রাজের নানাভাইয়ের সাথে।ওই সময় একটা রাজনৈতিক বিষয়ে আমার সাথে সাক্ষাৎ হয় তার।আমি আইনি বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে কিছু রাজনৈতিক বিষয়ে খোঁজ নিতে আগ্রহ দেখাই।এর মাঝেই রোহিনী খানের প্রতি আমি আসক্ত হই।এরপর রাজনীতিতে নাম দেই।বিশেষ করে ওদের নানাভাইকে পটাতে।সফল হয়েছি আমি।আমার আর রোহিনীর বিয়েও হয়।রোহিনী একজন কৃষিবিজ্ঞানী।বাংলাদেশের খাদ্য অবস্থার যে দুর্গতি সেটার সুরহা চেয়েছিল সেই সময়।একটা ফর্মুলা নিয়ে কাজ করছিল ওই সময়।কিন্তু ওই ফর্মুলা নিয়ে কাজ করতে গেলেও কুনজর পড়ল কিছু শয়তানের।রোহিনীর ফর্মুলা নিয়ে তারা বিদেশে বৈজ্ঞানিকদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করতে চেয়েছে।

আমাদের দেশে এমন একটা ফর্মুলা থাকলে অন্তত আমরা খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারবো। খাদ্যের অভাব থাকবে না এবং বাজারে প্রত্যেক সবজি মাছ মাংস অধিক মূল্যের হবেনা।আজকাল তো মাটি ও সারের অভাবে সবজির দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে।এটা যেনো আমাদের আর ভোগ না করতে হয় তারই চেষ্টা করছিল রোহিনী।দেশের কথা চিন্তা করতে গিয়ে তাকে হারাতে হলো সম্মান।আমি ওইদিন মিটিংয়ে থাকি।মিটিং শেষে রোহিনীর কাছে যাই।কিন্তু তার আগেই দেখতে পাই ওর নিথর দেহ।পুরো মুখে কামড়ের দাগ ও শরীরের অবস্থা পুরো বাজে।এগুলো আমি মুখে বলতে পারব না।ওই সময় সিসিটিভি ক্যামেরা ছিলো না।

তাই আমরা কিছু ধরতেও পারছিলাম না।অনেকবার তদন্ত করেও কেসের খাতা বন্ধ করা হয়েছে।আমার রাজ সেদিন ওর মায়ের ওই দেহ দেখে নীরব হয়ে ছিলো।ও প্রথমে বুঝতেও পারেনি ওর মায়ের দেহে এত জখম কেন।ওর মস্তিষ্কে তখন একটাই কথা,ওর মা আর বেঁচে নেই।সেদিনও ছেলেটা কান্না করেনি।পুরো বোবা হয়ে ছিল।এর ঠিক দুইদিন পর ও যখন শুনতে পায় ওর মাকে ধর্ষণ করা হয়েছে তখন থেকে ও পুরো ঘরজুড়ে হাউমাউ করে কান্না করে।বারবার একটা কথাই বলে,”আমার মাকে যারা খুন করেছে তাদেরকে আমি শেষ করে দিবো।এই পৃথিবীতে তাদের অবস্থা আমি আমার মায়ের থেকেও বাজে করে দিবো।তিলে তিলে মারবো আমি তাদের।”

সেই থেকে রাজ কোনো ধর্ষিতা মেয়েকে দেখলে ভেঙ্গে পড়ে।ওর মায়ের কথা মনে পড়ে।এর আগেও একবার ওর মানসিক আঘাত লাগে।তাই আমরা ওকে এসব কথা মনে না করানোর চেষ্টা করি।আমি যদিও পারিনা।এগুলো আমার বাবাই পারতো।এরপর শাহানা পেরেছিল।কিন্তু শাহানা ও অন্যান্যদের ইচ্ছায় রাজকে লন্ডন যেতে হয়।এরপর রাজ একটু একটু করে স্বাভাবিক হয়।এই যে রিমুকে দেখেছে আমি বুঝতে পারছি রাজের ঠিক কোথায় কষ্ট হচ্ছে।ও যে ওর মাকে মনে করে মনে মনে আঘাত পাচ্ছে।”

“মন্ত্রী মশাই কি এখনও তদন্ত করছেন?”
“ও তো তদন্ত কয়েকবার করেই চলেছে।আসামিদের বের করতে হলে একটা রাস্তা জানা লাগে।সেই রাস্তাটাই তো পাওয়া যাচ্ছে না।”
“আপনাদের কারো প্রতি সন্দেহ হয়নি?”
“কাকেই বা সন্দেহ করবো?রোহিনী তো কারো সাথেই মেশে না।”
“ফর্মুলা কোথায়?”
“ওটার সন্ধান এখনও চলছে।রাজের দাদু কোথায় রেখে গিয়েছেন কেউ জানেন না।”
পিছন থেকে বলে মালিনী।সাথে আছে সোনালী,মোহন সরদার ও রুবি।মায়া ওদেরকে দেখে শান্ত দৃষ্টি দিলো।
পিয়াশ দৌড়ে এসে বলে,”একটা ঝামেলা হয়ে গেলো।”

“কিসের?”
“কাল স্যারের শুনানি দেওয়ার ছিলো।যে উদ্যোগে শুনানি উদ্যোগটা স্যার নিজে দরখাস্ত করেছিলো বছর পাঁচ কি ছয় ধরে।অনেক প্রচেষ্টার পর অনুমতি পেয়েছে। সিডিউলে কালকেই এটার বিষয়ে শুনানি আছে।কিছু জ্ঞানী ব্যাক্তি আসবেন বাইরে থেকে।সাথে আসবেন আরো কিছু মিনিস্টার।জনগণ উপস্থিত হবে সেখানে।বিশেষ করে কৃষকদেরকে আনা হবে।”
মায়া কথা থামিয়ে দিলো।এখানে কৃষক মানে কিছু হলেও মায়ার মস্তিষ্ক কিছু জানান দিলো।তাই বলে ওঠে,”কাগজটা দেখি।”

পিয়াশ এগিয়ে দিতেই মায়া দেখে তাতে আছে দেশের কৃষি ব্যবস্থার কিছু নিয়ম।যেটা রাজকেই শুনানি দিতে হবে পুরোপুরি বুঝিয়ে।মায়া এটা দেখে বলে,”মন্ত্রী মশাই তো …..
“ওনার বিপরীতে কেউ চাইলে সেও শুনানি দিতে পারবে ম্যাম।তবে তাকে শাহমীর রাজ সরদারের মত বিশ্বস্ত হতে হবে।”
এর মাঝে অপারেশন রুম থেকে বের হয় আদ্র।আদ্রকে দেখে সিয়া দৌড়ে আসে।কারণ সে একেবারে দরজার কাছেই ছিল।প্রশ্ন করে,”ভাইয়া কেমন আছে?”

“অবস্থা ভালো না।রক্ত লাগবে দুই ব্যাগ।অনেক রক্ত ঝড়েছে শরীর থেকে।আমরা রক্তের ব্যাবস্থা করেছি।কিন্তু ব্রোর মানসিক অবস্থা খারাপ।সে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় থাকে।যার কারণে আরো বেশি দুর্বল হয়ে পড়েছে।”
সবাই বুঝলো ব্যাপারটা।তাই কেউ কথা বাড়ালো না।মায়া এবার প্রশ্ন করে,”রিকোভার হতে কতদিন লাগবে?”
“কমপক্ষে হলেও সপ্তাহ তো লাগবেই।আপাতত হাসপাতালে রেখে সেলাইন চলবে।”
“আচ্ছা।”
মায়া এবার মাহমুদ সরদারের দিকে ফিরে তাকায়।তার অবস্থা ভালো না।পিয়াশ বলে ওঠে,”বসের হয়ে কে যাবে ম্যাম?”

“তার দলের কোনো লোক।”
“আসলে ম্যাম বস তো এগুলো তেমন কারো হাতে দিতে চায়না।এটা একান্তই সে তার কাছে জমা রেখেছে।”
সোনালী এগিয়ে এসে বলে,”আমার মনে হয় এসব কাজে মোহনা যাওয়াটা ভালো হবে।ভাইজান তো এখন মানসিকভাবে অসুস্থ।বাবাও তো সবাইকে বলে গেছেন,রাজ আর মোহনা হলো একে অপরের ঢাল।রাজের এই বিপদে নাহয় মোহনা যাক।”
মায়া ভ্রুকুটি করে বলে,”মন্ত্রী মশাইয়ের ঢাল হিসেবে প্রথম স্থান বাবা দ্বিতীয় স্থান বউ রাখে।এখানে তৃতীয় ব্যক্তিকে আমি অন্তত সহ্য করব না।”

“তাহলে কে যাবে শুনানি দিতে?”
“কেন আমাকে কী আপনার চোখে পড়েনা?”
সোনালী হেসে দেয়।বলে,”কিভাবে শুনানি দিবে তুমি?কতটুকু যোগ্যতা আছে তোমার?”
“আপনার থেকে একটু বেশি যোগ্যতা আছে আমার।নাহলে কি এই কয়েকমাসে আপনাকে টপকাতে পারতাম!”
“তোমার স্বামী হাসপাতালে ভর্তি।তার সেবা করতে হবে তো।”
“স্বামীর সেবা করার লোকের অভাব নেই।তার দুই বোন আছে তার বউ আছে তার বাবা আছে।আমি যে সময়টুকু থাকবো না তার বোনেরা তো দেখতে পারবেই।কি সিয়া হিয়া পারবে না দেখতে ভাইকে?”
“হ্যাঁ ভাবী পারবো তো।কেন পারবো না?আমরা আমাদের ভাইদের জন্য এটুকু তো করতেই পারি।”
“তাহলে আর কি কাকি শাশু মা!কাল আমিই যাচ্ছি শুনানি দিতে।”
সোনালীকে কথাটুকু বলেই আদ্রকে বলে,”মন্ত্রী মশাইয়ের সাথে দেখা করা যাবে কি?”
“গভীর ঘুমে আছে।এমনি দেখা করতে পারো কিন্তু জাগানো যাবেনা।”
“আচ্ছা।”

মায়া অপারেশন রুমের দিকে পা এগোতে নিয়েও একবার থেমে পিছনে ফিরে বলে,”স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক মজবুত থাকে ঠিক ততক্ষণ,যতক্ষণ সেখানে তৃতীয় ব্যাক্তি না আসে।তৃতীয় ব্যক্তি সহানুভূতি নিয়ে আসবে আমরা সহানুভূতি দেখাবো।এরপর ঠিক কি হবে?সংসারটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।এটা তো আমি কখনও হতে দিবো না।এই মায়া যেমন হিংস্র হতে জানে ঠিক তেমন সংসার বাঁচাতেও জানে মাইন্ড ইট।”
মায়ার হিংস্র চাহনি দেখে চুপ হয়ে গেলো সোনালী।মায়া ভিতরে চলে যায়।রাজের ঘুমন্ত মুখ হাতে কেনোলা।দেখে মায়া রাজের উষ্কখুষ্ক চুলে হাত বুলিয়ে বলে,”আমি আপনার পাশে সবসময় থাকব মন্ত্রী মশাই।আপনার বিপদের সঙ্গী ভালোবাসার সঙ্গী আপনার সমস্ত চাওয়া পাওয়ার সঙ্গী হয়ে আমি থাকবো আপনার সাথে।শুধু একা আপনি কেন আমার কষ্ট দূর করবেন?আমিও এই সুযোগ ডিজার্ভ করি।”

রাজের ঘুমের মাঝেই সুযোগ নিলো মায়া।রাজের কপালে চুম্বন দিয়ে বলে,”আপনার দুষ্টু কথা থেকে বাঁচতে আপনার ঘুমের সুযোগ নিলাম মন্ত্রী মশাই।”
চোখের পানি মুছে মায়া বাইরে এসে বলে,”আমাকে একটু বাসায় যেতে হবে।রাতে আমি এখানেই থাকবো।কিছু জিনিস আনতে হবে।”
মাহমুদ সরদার বলেন,”তারেক একা সাথে গেলে হবেনা।তোমার সাথে গার্ড লাগবে তো।”
বীর এতক্ষণ চুপচাপ বসেছিল।এবার বলে ওঠে,”আমি যাচ্ছি বোনের সাথে।”
মায়া বাঁধা দিয়ে বলে,”দরকার নেই ভাইয়া।আমি গার্ড নিয়ে যাবো আর আসবো।তুমি আমাদের হবু ভাবীর সাথে থাকো। বলা তো যায়না তাকে কে কখন উড়াল দিয়ে নিয়ে যায়।”

মায়ার চোখের ইশারা বুঝিয়ে দিলো সোনালীকে ইঙ্গিত করে বলছে মায়া।বীর জারার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে বলে,”চিন্তার কিছুই নেই।এই মেয়েটা আমার থেকে কোথাও যেতে পারবে না।যদি কেউ আমাদের দিকে কুনজর দিতে আসে তাকে সোজা কবরস্থানে পাঠানো হবে।”
সোনালী ভ্রু কুঁচকে আছে।মনে মনে বলে,”এই মেয়ে বড়ই দুরন্ত।একে হারাতে হলে আমাকে আবার পাওয়ারফুল হতে হবে।তাকেই এবার দরকার আমার।আবারও পুরনো সম্পর্কের জাগ্রত করবো দেখছি।”
সোনালী রুবির উদ্দেশ্য করে রুবির কানে কানে বলে,”কেমন মেয়ে তুমি? তোমার পুতুল বরকে নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তা করছে আর তুমি কি না কোনো চিন্তাই করছ না।”

“আসলে আমার তো কিছুই মনে নেই।আপনি যেগুলো বলছেন সেগুলোই মনে করতে পারিনা পুতুল বর মনে করব কিভাবে?”
“তাড়াতাড়ি সবকিছু মনে করো।তোমার দাদা তোমার মায়ের হাতেই ফর্মুলা দিয়েছিলো। সেটা তো তোমার অধীনেই এখন।”
“কিসের ফর্মুলা?”
“ওটা তোমার স্মরণ শক্তি ফিরলেই মনে পড়বে।”
“স্মরণ শক্তি আমার ঠিকই আছে কিন্তু আসল মানুষটাই আমি না।তাই তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”
মনে মনে বলে রুবি বলে,”আপনিই নাহয় বলে দিন।”
“পরে বলব এক সময়।এখন না জানলেও চলবে।”

রুবি রেগে গিয়ে মনে মনে বলে,”বলবি তো বল না বলবি তো না বল।এমন নাটক করার কি আছে?”
মায়া গাড়িতে উঠতে নেয় পিয়াশ আর তারেক থাকে মায়ার সাথে।এর মধ্যেই পিয়াশের কাছে কল আসে।মৌয়ের নাম্বার থেকে কল এসেছে। পিয়াশ ধরতেই ওপাশ থেকে কাজের মহিলা বলে,”ভাইজান আমি। আপায় অসুস্থ হয়ে অজ্ঞান হইছিলো।আমি ডাক্তার ডাকছি।আপনি তাড়াতাড়ি আসেন।”
পিয়াশ বলে ওঠে,”আমি আসছি তুমি রাখো।”
মায়া সন্দেহ করে বলে,”কি হয়েছে?”
“মৌ অসুস্থ হয়েছে ম্যাম।আমাকে যেতে হবে বাসায়।আমি দুঃখিত ম্যাম আপনার সাথে যেতে না পারায়।”
“বোন অসুস্থ?আমাকে আগে নিয়ে চলো ওখানে।এরপর বাসায় যাবো।”
“কিন্তু ম্যাম দেরি হয়ে যাবে তো।”
“আমার বোন অসুস্থ পিয়াশ।আমার স্বামীকে যেমন দেখে রাখছি বোনকেও আগলে রাখব।দুজনই মূল্যবান ব্যাক্তি আমার জীবনের।”

পিয়াশ অপেক্ষা না করে গাড়িতে ওঠে।গাড়ি চালায় তারেক।মায়া পিছনে সিটে বসে আছে।বাসায় পৌঁছাতেই তিনজনে দেখে এখন মহিলা ডাক্তার এসেছে।উনি মৌয়ের সামনেই বসে আছেন।মৌ বিছানায় শুয়ে আছে।মায়া এগিয়ে এসে বলে,”কি হয়েছে বোনের!”
ডাক্তার মৃদু হেসে বলেন,”লক্ষণ তো বলছ আপনার বোন আপনাকে খালামণি ডাক শুনাতে চলেছে।”
মৌ লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে ফিরলো।মায়া খুশি হলো সাথে সাথে।ডাক্তার জানালো,”কাল হাসপাতালে থেকে টেস্ট করাবেন।এছাড়া আমিও একটা কিট সাজেস্ট করছি।ওটা কালকে খালি পেটে দেখলেই হবে।”
পিয়াশ হতবম্ব চাহনি দিয়ে আছে।বিয়ে করেছে মাস দুই মত।এত তাড়াতাড়ি বাবা ডাক শুনতে চলেছে।কেমন যেনো সব অতি দ্রুত তার মাথার উপর দিয়ে যাওয়ার আগে দিয়ে যাচ্ছে।রাজ শুনলে আরেক বিপদ।আংকেল হওয়ার খুশির সাথে দু চারটে লাগামহীন বাক্য তো রাজ দিবেই।আগেভাগে ভেবে নিয়ে পিয়াশ বলে,”এই ব্যাপারে বসকে কিছু বলবেন না ম্যাম।”

ভ্রুকুটি করে মায়া বলে,”কেন?”
“উনি জানতে পারলে পরে আমি আর তাকে মুখ দেখাতে পারবো না।তার লাগামহীন কথাতে আমি শেষ হয়ে যাবো।”
উচ্চস্বরে হেসে দিল মায়া,মৌ ও তারেক।বুঝতে পেরেছে পিয়াশ মূলত ভয় পেয়েছে।বেচারা রাজ!অসুস্থ থেকেও সবাইকে লাগামহীন কথাবার্তার জন্য আতঙ্কে রাখে।
বাসায় এসে মায়া রাজের আলমারি খুলে কাগজপত্র দেখছে।দরজার কাছে তারেক পাহারা দিচ্ছে।কাগজপত্র সব দেখে বলে,”তারমানে ফর্মুলার ডকুমেন্ট সব মন্ত্রী মশাই কালেক্ট করেছে।এবার শুধু ফর্মুলা উদ্ধার করা বাকি।কিন্তু ওটা তো মায়ের কাছে ছিলো।মা আমাকে কি যেনো একটা ক্লু দিয়েছিলো তাই তো মনে পড়ছে না।আমাকে দ্রুত মনে করতে হবে।আর ফর্মুলা উদ্ধার করে ওই সোনালীর জীবনকে আমি শেষ করে দিবো।”

একটু ভেবেই মায়া থেমে গিয়ে নিজেকে বলে,”ওয়েট!আমার মাকে ওই রাতে মারার কারণটা তো ফর্মুলাও ছিলো।শুধু তো মোহন সরদার ও তার সম্পত্তিকে ভোগ করা না।মা তো আমাকে ওই রাতে বলেছিলো এই ফর্মুলা কারো আমানত।এটাকে রক্ষা করতে হবে।তারমানে কি এইসবকিছু সোনালী করিয়েছে?আমার প্রথম শাশুড়িকে ওই সোনালী খুন করেছে।তাও আবার ধর্ষণ করিয়ে।ছিঃ!এই মহিলা কতটা খারাপ।এই বিষাক্ত মহিলাকে তো আমি বিষ খাইয়ে খাইয়ে মারবো।মন্ত্রী মশাইয়ের কথাটাই আমি রাখব।ওকে আমি তিলে তিলে মারবো।শুধু ফর্মুলার সন্ধান করা বাকি।”

সংসদে শুনানির সকল কাগজপত্র নিয়ে মায়া চলে আসে হাসপাতালে।এসেই বাইরে শুধু দুজন গার্ডকে দেখতে পায়।তারেকের দিকে তাকিয়ে মায়া বলে,”তুমি বাসায় চলে যাও।”
“নো ম্যাম।আমি এখানে আপনাদের পাহারা দিবো।রিস্ক নিতে চাইনা আপনাদের নিয়ে।”

মায়া মাথাটা উপর নিচ করে ভিতরে চলে যায়।ভিতরে আসতেই মায়ার মাথা গরম হয়ে গেলো।রাজের সামনে দাড়িয়ে আছে মেয়ে নার্স।রাজের গা উদোম হয়ে আছে।ব্যান্ডেজ করা বুকটা ফাঁকা রাখা প্রয়োজন।ওখানে জখম হয়ে আছে।কিছু মেডিসিন দেওয়া প্রয়োজন।তাই নার্সের আসা।কিন্তু নার্সের সেবা দ্বারা ভিন্ন কিছু প্রকাশ পায়।রাজের সেবার সাথে যেনো সিডিউস করার এক কৌশল নার্সের হাতের ভঙ্গিতে।লাল লিপস্টিক দেওয়া ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে রাজের উপর ঝুঁকে পড়ল মাত্র।রাজ একটা নাইফ নিলো হাতে।সেও হয়তো কিছু একটা করতে নিয়েছিল।মায়া এটা দেখে খুশিই হয়।তার স্বামী এমন মেয়েদেরকে গায়ে ঘেঁষতে দেয়না।

তাই দরজার কাছে দাড়িয়ে দেখছে।কিন্তু মায়াকে হতাশ করে রাজ নাইফ নেওয়ার পর পাশের টেবিলর উপর একটি প্যাকেটে আনা ফলগুলোর মাঝে থেকে আপেল নিলো।তারপর নাইফ দিয়ে আপেল কাটছে।মায়া এবার রাগে গজগজ করে উঠলো।রাজ না দেখেও ঠোঁট প্রসারিত করে আছে।আসলেই কি রাজ দেখেনি মায়াকে?এমন কি সম্ভব!রাজের সোজাই তো দরজাটা।সেখানে তার বউ এসে দাঁড়াবে আর সে দেখবে না এটা হয় নাকি?রাজ মায়াকে দেখেই নাইফটা কাজে লাগালো না।দেখতে চায় বউ তার মায়াবতী রূপ ধারণ ছেড়ে কিরূপ ধারণ করে?নার্স রাজের বুকের উপর ক্ষততে হাত বাড়িয়ে দিলো।একটু ব্যথায় রাজ বলে,”আউচ!”

“খুব লেগেছে স্যার?আমি আস্তে করে মেডিসিন দিয়ে দিচ্ছি।দেখবেন ব্যাথা লাগবে না।”
আহা কি দয়ালু নার্স।পুরুষ মানুষকে সিডিউস করতে এরাই তো এক্সপার্ট।রাজ মায়ার দিকে চোখ টিপ দিয়ে নার্সের উদ্দেশ্যে বলে,”এখনও কোনো ব্যাথা লাগেনি তবে লাগবে।”
“মানে?”
“বোম রেডি হয়েগেছে এখন শুধু ফাটার অপেক্ষা।”
“বুঝতে পারলাম না স্যার।”
“আমার বউটা আস্ত একটা বোমা।যে ফাটলে জীবন হয়ে যাবে কয়লা।”
নার্স মৃদু হাসলো।রাজ আবারও বলল,
“বাঘিনী দেখেছো কখনও?”
“চিড়িয়াখানায় ছোটবেলায় যেতাম।তখন একটু বাঘ দেখা হতো কিন্তু বাঘিনী ছিলো কি না মনে পড়ছে না।”
“চিড়িয়াখানায় বাদেও মানুষরূপী একটা বাঘিনী আছে।যার কবলে পড়লে আর জীবন বাঁচানো সম্ভব না।”
“কে সে?”

“My one and only wifey…look at her!She is now in a killing mood.”
নার্স পিছনে ঘুরে তাকালো।মায়াকে দেখেও স্বাভাবিক আছে।মায়াকে তো আর চেনে না।তবে রাজের কথা শুনে একটু ভ্রু কুঁচকে আসে।মায়া মৃদু হেসে এগিয়ে আসে।রাজ মায়ার এই মৃদু হাসির সাথে এগিয়ে আসা দেখে ঘাড় কাত করে বলে,”মেরা বিবি হাসি তো সামনে বালো ফাঁসি।আব কেয়া কারোগী নার্স বেহেনজি?”
মায়া এগিয়ে এসে এক পলক রাজের দিকে চোখ ঘুরিয়ে আবারও নার্সের দিকে ফিরে বলে,”রোগীর সেবা করতে এসে সিডিউস করতে আসাটা একটা আর্ট হয়ে গেছে তাই না?”

“সরি ম্যাম!”
“ছেলেদের জন্য কি মেয়ে নার্স আছে শুধু? ছেলে নার্সরা নেই?”
“আছে ম্যাম অন্যান্য কাজে ব্যস্ত।এখন সিডিউল অনুসারে আমি এখানে আছি।”
“আপনি অন্য রোগী দেখুন আমার স্বামী ব্যতীত।”
“তাহলে স্যারের ইনজিউর্ড?”
“ছেলে নার্স পাঠাবেন।”
“ওকে ম্যাম।”
নার্স চলে যেতে নেয়।রাজের দৃষ্টি শুধু মায়ার দিকে।মায়া ফলের পাশে কিছু নতুন গ্লাভস দেখে।যেটা কেউ ব্যাবহার করেনি।ওখান থেকে এক জোড়া গ্লাভস নিয়ে হাতে ঢুকিয়ে গলা উঁচিয়ে বলে,”ওয়েট!”
নার্স থেমে পিছনে ঘুরে বলে,”আমাকে বলছেন ম্যাম?”

“ইয়াপ।”
“জি ম্যাম বলুন?”
মায়া পার্স থেকে টাকা নিলো।নার্সের সামনে এসে নার্সের বামহাত ধরে টাকাগুলো দিয়ে বলে,”এখানে কিছু টাকা আছে।টাকাটা দিয়ে নিজের ট্রিটমেন্ট করবেন।”
ভ্রুকুটি করে নার্স বলে ওঠে,”আমার ট্রিটমেন্ট মানে?আমার তো কিছু হয়নি ম্যাম।”
“এবার হবে।”
বলেই মায়া নার্সের হাত মচকে পিছনে ঘুরিয়ে শক্ত করে এক টান দিলো।মেয়েটি এবার ব্যথায় কুকড়ে ওঠে।রাজ ব্যঙ্গাত্মক করে মুখটা আউচ করে ওঠে।নার্স চিৎকার দিয়ে বলে,”খুব লাগছে ম্যাম।”
“অন্যের স্বামীর দিকে নজর দেওয়ার আগে ভাবা উচিত যে কারো সংসারের মধ্যে নিজেকে বে*শ্যা হিসেবে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি।ঘরের বউ যেমনই হোক সে কিন্তু বৈধ।বাইরের মেয়েরা কিন্তু রাস্তা অব্দি সীমাবদ্ধ। আর রাস্তার মেয়েকে রাস্তাটা আমি খুব ভালোভাবে বুঝিয়ে দেই।”

মায়া আরো জোড়ে মুচড়ে ধরেছে মেয়েটির হাত।মেয়েটার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।ভাবতেই অবাক লাগে।নতুন কেউ এমন দৃশ্য দেখলে মেয়েটার প্রতি দয়া দেখাবে।কিন্তু এই মেয়ে যে একটু আগেই কাউকে নিজের দিকে আকর্ষিত করতে চাইছিল এটা একবারও বুঝতে চাইবে না বা জানার আগ্রহ হয়তো দেখাবে না।সমাজের লোকজন এমনই হয়।উপরের অংশ দেখে গভীরের গল্পটা জানতে চায়না।মায়া কাউকে জানানোর দায় রাখেনা আর মায়ার স্বামী?সেও মায়াকে দায়ভার বইতে বলেও না।নার্স মেয়েটিকে মেঝেতে ছুঁড়ে মারে মায়া বলে,”শুধু মাত্র আমার স্বামী না প্রত্যেক মেয়ের জীবনে আসা পুরুষদের দিকে নষ্টামির নজর দিতে দেখা নারীদের আমি ঘৃণা করি। দু চার টাকার জন্য যারা একটা মেয়ের সংসার ভাঙতে পারে আর যাই হোক তারা কখনও পতিতার বাইরের কেউ নয়।”

মেয়েটা ভয়তে কুকড়ে গেলো।মায়া জোরে চিল্লিয়ে বলে,”Now get lost.”
এবার মায়া ঘুরে তাকালো রাজের দিকে।এক ভ্রু উচু করে বলে,”তো মন্ত্রী মশাই!খুব মজা নিচ্ছিলেন মেয়ে নার্সের সার্ভিস?”
রাজ ঠোঁট কামড়ে হাসে।নার্স মেয়েটি কোনরকমে উঠে দাড়িয়ে ক্ষোভ নিয়ে তাকালো মায়ার দিকে।নিচে পড়ে থাকা স্পঞ্জ দেখে হাতে উঠিয়ে নেয়।রাজের ক্ষত স্থান পরিষ্কার করার জন্য কিছু যন্ত্র আনা হয়।সেখানে এই স্পঞ্জ প্রয়োজন হয়।ওই স্পঞ্জ নিয়ে মায়ার পিছন থেকে আঘাত করতে নেয় মেয়ে নার্স।মায়া রাজের দিকে ফিরে ছিলো।তাই সে দেখতে পায়না।যেই মায়াকে স্পঞ্জ দিয়ে আঘাত করতে নিবে রাজ ওর হাতে থাকা নাইফ দিয়ে মেয়েটির হাত বরাবর আঘাত করে।মেয়েটির হাত থেকে আবারও পড়ে যায় স্পঞ্জ।কুকড়ে বলে ওঠে,”আহ্!”

“আমার বাঘিনীকে একা দেখলে হবে?তার সাথে থাকা বাঘকেও তো দেখা লাগবে।”
মায়া তিরস্কার করে হেসে গলা উঁচিয়ে ডাকে,”তারেক।”
তারেক আসতেই মায়া বলে,”ওকে নিয়ে যাও।”
তারেক নার্সকে নিয়ে যায়।রাজ বলে ওঠে,”ওর চাকরি থেকে বের করে দেও।”
“কিন্তু স্যার….
“আমার একটামাত্র বউকে আঘাত করতে চেয়েছে।ওকে তো ভুগতেই হবে।”
“মেয়েটা অলরেডি আহত।”
“তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে ওর জন্য?বিয়ে করে নিতে পারো।সুন্দরী আছে কিন্তু দুশ্চরিত্র।বলা যায়না তোমার চোখের আড়ালে কখন অন্যের স্বামীকে দুষ্টু ইঙ্গিত দেয়।”
“না স্যার নিয়ে যাচ্ছি এমন মেয়েকে।”

মায়া রাজের দিকে ফিরে একটু ঝুঁকে রাজের মুখের উপর চোখ ঘুরালো।রাজ ওর ঠোঁট পাউট করে মায়াকে চুমু দিতে এগিয়ে আসতে নিলেই মায়া রাজের বুকের জখমের স্থানে আঙুল দিয়ে শক্ত করে চেপে রাখে।রাজ ব্যথায় কুকিয়ে উঠে বলে,”মারবে নাকি?”
“আপনি হ্যাংলার মত চেয়ে ছিলেন কেন ওই মেয়েটার দিকে?”
“নার্সের সেবা নিতে।”

দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বলে রাজ।মায়া দাঁত কটমট করে বলে,”এবার আমি দিবো আপনাকে সেবা।”
“অলরেডি দিয়েছো সেবা।এবার একটু চুমু দেও।জখমে চুমু পেলে মলম লাগবেনা আর।”
বলেই মায়াকে নিয়ে নিজের আরো কাছে ঝুঁকিয়ে দেয়।ঠিক তখনই কেবিনে ঢুকলো আদ্র রুদ্র সিয়া ও হিয়া সহ আরো অনেকেই।রুদ্র গলা খাকারি দিয়ে বলে,”আমরা আছি ব্রো।”
রাজ হালকা ঝুঁকে শুধু চারজনকে দেখে নেয়।বিরক্ত প্রকাশ করে মায়ার দিকে চোখ রেখে বলে,”বাচ্চারা চোখ বন্ধ করো।তোমাদের মন্ত্রী মশাই এখন প্রেম করবে।”

সাথে সাথেই আরেকটা কন্ঠ ভেসে আসে,”হতচ্ছাড়া তোমার বাপকে চোখে পড়েনা?”
রাজ অবাকের সাথে আবারও সামনে তাকালো।মাহমুদ সরদার কোথা থেকে এলো!রাজ তো সত্যিই তাকে দেখেনি।মায়া উঠে দাঁড়াতেই রাজ কোনরকমে ঘাড় উচু করে বসে বলে,”তুমি আসতে গেলে কেন?”
“তোমার বাপ হয়ে করেছি আমি পাপ।তাই তো ছেলেকে দেখতে এসে লজ্জায় পড়তে হয়।”
মাহমুদ সরদারের সাথে ছেলে নার্স ঢুকে রাজের বুকের ক্ষত পরিষ্কার করে।রাজ ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমার বয়স শুধু সংখ্যায় বেড়েছে বাবা,বুদ্ধিতে না।নাহলে এটা বুঝতে ছেলে আর বউমা যেখানে এক ঘরে সেখানে এমন একটু লজ্জাজনক পরিস্থিতি তো থাকবেই।”

মায়া রাজের দিকে চোখ রেখে বলে,”শাট আপ মন্ত্রী মশাই।”
সেই সাথে মাহমুদ সরদারও বলেছিলেন।বাবা আর বউ একসাথে ধমক দিচ্ছে রাজকে।রাজ আহত দৃষ্টি দিয়ে বলে,”আমার বাপ আর বউ হলো আমার জীবনের রোমান্সের দেয়াল।”
“বাপ দেয়াল এটা বুঝলাম কিন্তু বউ দেয়াল হয় কিভাবে?সেই তো রোমান্সের এক অংশ।”
“ব্যাটা রুদ্র বউ যদি হয় ঝাঁজে ভরা তো দেয়াল না চাইতেও দেয়াল তৈরি হয়।”
আদ্র আড়চোখে ইশারা করে রুদ্রকে চুপ করতে বলে।রুদ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রাজের কাছে এসে বলে,”তোমার বউ ক্রিমিনালদের জামিন করিয়েছে।”

“কি বলিস?বউ আমার শত্রুকে জামিন করিয়েছে।”
“হুম।”
“তাহলে আর কি!আমার বউ এবার গরীব দুঃখীদের মিলাত খাওয়ার সুযোগ করে দিবে।”
“তোমার বউ এক পিচ ব্রো।তোমাকে জাস্ট আহত করেছে তাই তোমার বউ তাদেরকে পরপারে পাঠিয়ে দিবে!”
“এমন বউ পেতেও পরিশ্রম করতে হয় রে ভাই।”
“আমার এমন বউ তো চাইনা।আমার চাই ….
“আমার বোনের মত চশমা পড়া ইনোসেন্ট বই পড়ুয়া।”
রুদ্র দাঁত বের করে হেসে দিয়ে বলে,”এক্সাক্টলি।”
“বউ বানানোর আগে মন জয় করতে শেখো।আমার বোন তোমার এই ফুটফুটে চরিত্র কোনোদিন মেনে নিবে না।”
“তুমিই নাহয় আমাদের চারহাত এক করে দেও।”

“হ্যাঁ তারপর বোনের চোখে ভাই ভিলেন হোক।আগে নিজেকে আমার বোনের চোখে শুদ্ধ পুরুষ বানিয়ে দেখাও।বোন আমার এমনিতেই তোমার দিকে চুম্বকের মতো এগিয়ে যাবে।”
“তোমার এই সিক্রেট মিশনে আমি কিভাবে নিজেকে শুদ্ধ বানাবো?”
“তাহলে মিশন শেষ করা অব্দি অপেক্ষায় থাকো।”
রুদ্র আরো ফিসফিস করতে নিবে মাহমুদ সরদার এসে রুদ্রের কলার ধরে দাঁড় করিয়ে সরিয়ে দিলো।নিজে সেখানে বসে বলে,”বড়টা তো হয়েছেই এক লাগামছাড়া ছোটটাও হবার অপেক্ষা।”
“ওর আর অপেক্ষা করতে হবে না নাই।এটাও ওমন হয়েছে।”

আহান সরদার ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে ছোট ছেলের বদনাম শুরু করলেন।রুদ্র চ শব্দ করে বলে,”প্রেমে যদি হাজির হয় বাপ,তখন সবকিছুই দেখতে লাগবে পাপ।”
হিয়া চশমা হাত দিয়ে ঠিক করে ভ্রুকুটি করে বলে,”নষ্ট পুরুষ সবসময় নষ্ট কথা বলে।”
পিয়াশ আর মৌ এসেছিল ডাক্তার দেখাতে।ওরাও ভিতরে এসে সবার সাথে সাক্ষাৎ করে।মায়া মৌয়ের কাছে এগিয়ে এসে বলে,”রিপোর্ট দিয়েছে?”
“হ্যাঁ,কালকে আর স্টিক টেস্ট করতে হবেনা।”
“কি জানালো?”
“পজেটিভ।”
বলেই মাথা নিচু করে লাজুক হাসে মৌ।রাজ ভ্রু কুঁচকে দেখছে ওদের।মায়া খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে,”মিষ্টি আনা হোক।আমার বোন আমাকে খালামণি ডাক শুনাবে।”
রাজ মৌয়ের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে তাকালো পিয়াশের দিকে।অবাকের সাথে বলে,”বিয়ে হলো না ঠিকমত গুণে গুণে দুইমাস।এর মধ্যেই তুমি জীবনে ডেকে আনলে আরেক সর্বনাশ!”

“সর্বনাশ!”
মায়ার কথা শুনে রাজ বলে,”মধুচন্দ্রিমা করবে স্বামী স্ত্রী কিছু সময় ঘুরবে ফিরবে ক্যারিয়ার গড়বে।সেগুলো তো দরকার নাকি?”
“যারা মা বাবা হতে চলেছে তাদের আপত্তি নেই আপনি কেন আপত্তি করছেন?”
“শালির বিয়ের খানাই এখনও হজম হলোনা শালির সন্তানের মুখটা দেখার সময় হয়ে গেলো।এদিকে আমি দুলাভাই হয়ে শালির বিয়ের একমাস আগে বিয়ে করেও হতে পারলাম বাপ।”
“মন্ত্রী মশাই!”
সবাই মিটিমিটি হাসছে।মাহমুদ সরদার বুঝলেন ছেলে আরো কিছু ভাষণ দিবে তাই তিনি আহান সরদারকে বলেন,”আমরা দুই ভাই মিলে মিষ্টি আনি চলো।”
মাহমুদ সরদার চলে যেতে নিলে মৌ মাথায় কাপড় দিয়ে সালাম করতে নেয়।মাহমুদ সরদার বাধা দিয়ে বলেন,”এগুলো করতে নেই।”

“গুরুজনদের দোয়া নিতে হয়।”
“আমরা এমনিতেই দোয়া দিবো।পা ধরে সালাম করতে হবেনা।”
মৌ এবার আহান সরদারের দিকে ফিরলে তিনিও একই কথা বলেন,”এগুলো পুরাতন মানুষদের মুখের বুলি।এগুলো বিশ্বাস করতে নেই।আমরা মনভরে তোমাদের জন্য দোয়া করব।”
মৌ খুশি হলো।মাহমুদ সরদার আর আহান সরদার বের হলেন মিষ্টি আনতে।রাজ হিসাব করছে ওদের বিয়ের কতদিন হলো।হিসাবে আসলো দুইমাস হতে আর একটা সপ্তাহ মত আছে।না না এক সপ্তাহ না পাঁচদিন আছে।রাজ হেসে দিয়ে বলে,”কি ব্যাপার পিয়ু বেবী? একে একে ছক্কা মেরে দিচ্ছ যে তুমি।বসকে হিংসা হয় নাকি যে বিয়ের বছর পেরুবার আগেই বাবা হলে।”
অসুস্থ রাজ যার কি না বেড রেস্ট প্রয়োজন সে এখন বউ নিয়ে রোমান্স করে তারপর আবার যাকে পারে তাকেই লজ্জায় ফেলে। পিয়াশ চুপ করে থাকলে মায়া বলে,”আপনি আমার বোনাইকে লজ্জায় ফেলছেন মন্ত্রী মশাই।”
“তোমার বোনাই যে আমার পরে বিয়ে করে আমার আগে বাবা হয়ে আমাকে লজ্জায় ফেলছে তার বেলায় কি হবে মায়াবতী?”

“মন্ত্রী মশাই!”
“আচ্ছা আচ্ছা আমি আর কিছুই বলব না।”
বলেই রাজ মায়াকে একটু ইশারা করলো।মায়া রাজের দিকে একটু ঝুঁকে গেলো।রাজ বলে,”খালামণি হবার খবর পেয়েছো।বাবা নাহয় মিষ্টি আনতে গেছে।তুমি কিছু দিবেনা?আমি নাহয় রোগী হয়ে বিছানায় পড়ে আছি।”
“টাকা দেওয়া কি উচিৎ হবে?”
“ওই ড্রয়ারে দেখো মানিব্যাগে একটা স্বর্ণের চেন আছে।আমাকে অপারেশনের জন্য সবকিছু নিয়ে ওখানে রাখা হয়েছে।চেনটা আমার মায়ের আমার মানিব্যাগে সবসময় রেখে দিতাম।আজ নাহয় মৌকে দিলাম।”
“এটার দরকার নেই।আমি কালকে ওকে কিছু উপহার দিবো।”
“উহু,খুশির খবর পেতে গেলে কিছু দিতে হয়।এটা সরদার পরিবারের আলাদা ভালোবাসা।তুমি দিয়ে দেও।”
“আচ্ছা।”

মায়া ড্রয়ার খুলে রাজের মানিব্যাগ নিয়ে দেখে ওখানে মায়ার ছবি।মায়া হাসিমুখে একপাশ থেকে চেন নিয়ে মৌকে বলে,”এদিকে আয় বোন।”
মৌ এগিয়ে আসতেই মায়া চেন পরিয়ে দিয়ে বলে,”তোর দুলাভাইয়ের তরফ থেকে উপহার।আমারটা কাল পাবি।”
“এটার দরকার ছিল না আপু।”
“ভালোবাসা হিসেবে এটা দরকার আছে বোন।”
মৌ পিয়াশকে ইশারা দিয়ে এগিয়ে আসতে বলে। পিয়াশ আসতেই দুজনে রাজের পায়ের কাছে এসে যেই হাত রাখতে যাবে রাজ অসুস্থ শরীর নিয়ে কোনরকমে পা সরিয়ে বলে,”আমি নিজেই তো এখনও বাবা হইনি। তোমাদের কি আমাকে দেখতে বুড়ো বুড়ো লাগে?সালাম করছ কেন?”

“আপনি আমার দুলাভাই।সালাম করবো না?”
“শালী সবসময় হয় হৃদয়ের রানী।তাকে কি করে ধরতে দেই আমার পাখানি?”
সবাই হেসে দেয়।সিয়া হিয়া এসে জড়িয়ে ধরে মৌকে।সবাই শুভেচ্ছা জানায়।মাহমুদ সরদার ও আহান সরদার ফিরে এসেছেন মিষ্টির বক্স হাতে নিয়ে।সবাই মিষ্টি মুখ করতে ব্যাস্ত।এর মাঝেই মায়ার কাছে কল আসে।মায়া ফোনে তাকিয়ে দেখে রুবি।মায়া রিসিভ করে বলে,”বলো?”
“ম্যাম মিসেস সোনালী আজকে তার বোনের মেয়েকে নিয়ে চট্টগ্রাম যাচ্ছেন।”
“হোয়াট?”

“ইয়েস ম্যাম।আসলে উনি আপনাদের হারাতে আর কি কি যেনো কারণে যেনো জারা ম্যামকে বীর স্যারের থেকে আলাদা করার প্ল্যান করছে।কালকেই কোন বিজনেসম্যানের সাথে জারা ম্যামের বিয়ে দিবে।”
“জারা কি রাজি?”
“এটা জানি না ম্যাম।বীর স্যার কোনো এক মিটিংয়ে বিজি।এই সুযোগ মিসেস সোনালী নিয়ে যাচ্ছেন জারা ম্যামকে।”
“বিয়েটা কোথায় হচ্ছে এটার আপডেট আমাকে দিবে।আর তুমি কি ওদের সাথে?”
“হ্যাঁ ম্যাম।”
“গ্রেট!তাহলে তোমার জিপিএস অন রাখো।”
“ওকে ম্যাম।”
মায়া কল কাটতেই মাহমুদ সরদার ভ্রুকুটি করে বলে,”কি হয়েছে?”

“জারাকে নিয়ে চট্টগ্রাম যাচ্ছে মিসেস সোনালী।কোনো এক বিজনেসম্যানের সাথে বিয়ে দিবে জারাকে।”
“বীর কোথায়?”
“ভাই আজকে একটা কাজে ব্যস্ত। কাল সংসদে আমার যেনো কোনো ক্ষতি না হয় তারই ব্যাবস্থা করছে।”
“সোনালীকে আটকাতে হবে তো।”

“ভাইকে জানিয়ে দিচ্ছি।ও এখনই বের হোক।”
মৌ ভয়তে বলে,”আর তোমার সংসদ?”
রুদ্র এগিয়ে এসে বলে,”আমি আছি তো।”
হিয়া সন্দেহ দৃষ্টি দিয়ে বলে,”আপনি কি করবেন শুনি?”
“ভাবিজিকে পাহারা দিবো।”
“তাহলে ভাবীর রিস্ক আরো বাড়বে।”
“তোর ছোট মস্তিষ্কে এত চাপ দিতে হবেনা।তুই বই নিয়ে পড়ে থাক।”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৩৯+৪০

“আহা সিরিয়াস সময়ে ঝগড়া করো না তোমরা।”
“তোমরাও প্যানিক নিও না।বীরকে যখন ক্ষেপিয়ে দিয়েছে বীর কাউকে ছাড়বে না।একটা একশন তো বিয়েতে হবেই।জারা বেইবীর বিয়েটা আমি মিস করবো ইশ!”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৪৩+৪৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here