মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৫৯+৬০

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৫৯+৬০
ইশরাত জাহান

অনেক কথা কাটাকাটির পর বীর এলো মাহমুদ সরদারের ঘরে।বীরকে দেখে মালিনীর যেনো সাহস বাড়লো।বীরের কাছে এসে মালিনী কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলে,”দেখ বাবা এই মেয়েটা আমার সাথে কেমন করছে?আমার সংসারে আগুন লাগাতে চায় এই মেয়ে।”
বীর তাকালো মায়ার দিকে।মায়া ডোন্ট কেয়ার নিয়ে বসে আছে।বীর এবার রাজের দিকে তাকালে রাজ ইশারা করে বুঝিয়ে দেয়,”তেমন কোনো ব্যাপার না।”
বীর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে,”ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে এই বয়সে ঝগড়া কেন করো তোমরা?আমরাই বা কিভাবে শিখবো সংসার সামলানোর ব্যাপারে?”

“এই লোকটার মত স্বামী পেলে সংসার কোনোদিন সুখের হয়ই না।”
রাজ হতাশ চাহনি দিয়ে মাহমুদ সরদারের উদ্দেশ্যে বলে,”তুমি তোমার বউকে সুখে রাখতে পারছো না কেন বাবা?”
মাহমুদ সরদার চোখ রাঙিয়ে বলে,”চুপ করো হতচ্ছাড়া।”
মায়া বিরক্ত প্রকাশ করে বলে,”কতবার বলছি যে আমার শ্বশুরকে আরেকটা বিয়ে করতে দিন।দেখবেন আপনিও টাটা বাই বাই হয়ে এই সরদার মহলে শান্তি ফিরে আসবে সেই সাথে আপনিও শান্তিতে সুখে সংসার করতে পারবেন।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মালিনী ক্ষেপে বীরের দিকে ফিরে বলে,”দেখেছিস মেয়েটা কিভাবে আমার সাথে কথা বলে?এই মেয়েকে বোনের মর্যাদা দিয়েছিস আর এ কি না তোর ফুফুকেই সংসার ছাড়তে বলে।”
বীর বিরক্ত প্রকাশ করে বলে,”রাত কয়টা বাজছে দেখেছো?একটা তারিখ পেরিয়ে আরেকটা তারিখে পা দিয়েছি কিন্তু শান্তিতে ঘুম দিতে পারলাম না।তোমরা এভাবে চললে ওরাও তো তোমাদের নিয়ে মজা নিতে থাকবে।এবার তোমরা শান্ত হও। আর তোরা দুটো ঝগড়া না থামিয়ে কি শুরু করলি?”
“আব্বে শালা!বাবা হবার বয়সে এসে নসিবে যদি দেখা মেলে বুড়ো বাবার সংসারের গেঞ্জাম তাহলে কি আর সুযোগ মিস করা যায়!”
মালিনী চোখের পানি মুছে বলে,”কাল ভাই এলেই আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাব।এই বাড়িতে আমাকে কেউ মূল্যায়ন করে না।”

“কষ্ট করে এই রাতটুকু কেন এই বাড়িতে সময় ব্যয় করবেন শাশু মা?আপনার মূল্যবান সময়ের সাথে মূল্যায়ন পেতে এখনই বেরিয়ে যান।আমি আমার নেক্সট শাশু মা দেখে নিচ্ছি।”
মালিনী চোখ বড় বড় করে তাকালো।বীর হতাশ হয়ে বলে,”আজকের মত এখানেই থাম বোন।এখন তুইও ঘুম দে।ডাক্তার তোকে প্রপার রেস্ট নিতে বলেছে।”
“দুঃখিত কিন্তু বলতে বাধ্য এমন শাশুড়ি যে বাড়িতে থাকে সেই বাড়িতে প্রপার রেস্ট আসেনা।আসে তো শুধু রেস্টের মধ্যে স্ট্রেস।”

মায়া হাটা শুরু করে দরজার কাছে গিয়ে পা থামিয়ে বলে,”আর একবার যদি অশান্তির আওয়াজ আমি পাই তবে এবার মুখে ওয়ারনিং দিলেও পরবর্তীতে কাজে করে দেখাবো।এই মায়াবতী তার ইচ্ছা পূরণে ঘাটতি রাখেনা।”
মায়া চলে গেলো।মাহমুদ সরদার এবার রাজের দিকে ফিরে বলে,”বউ তো গেলো।তুমি আপদ কখন যাবে?”
“আমাকে বিদায় দেওয়ার এত তাড়া কেন বাবা?বউয়ের মান তো এমনিতেই ভাঙাতে পারবে না।”
“অপদার্থ ছেলে কোথাকার!তুমি আগে হয়েছো নাকি আমি আগে।”
“ব্যাপারটা এমন না যে কে আগে কে পরে হয়েছে।ব্যাপারটা হলো এমন যে কে কার বউকে কতটা মানিয়ে নিয়ে চলে।বাবা ও ছেলের দুজনের বিবাহিত জীবনে ছেলে এতটাও ডিপ্রেশনে নেই যতটা বাবা আছে।এটা বড্ড হাহাকার জনিত ব্যাপার একজন বাবার জন্য।”
রাজের খোঁচা মেরে কথা বলাতে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন মাহমুদ সরদার।রাজ হাত দিয়ে বাতাস দিয়ে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।বীর নিজেও চলে এলো ঘরে।দরজার কাছেই এসে দেখে জারা হেলান দিয়ে আছে। বীর ভ্রুকুটি করে বলে,”হোয়াট?”

জারা মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,”নাথিং হ্যান্ডসাম।”
বলেই চলে যায় ঘরে।বীর কিছু না বুঝে ঘরে ঢুকে জারা গলা থেকে ওড়না সরিয়ে বিছানার ওপর রাখে।অতঃপর বীরের কাছে বীরের হাত ধরে নিজের কাধে রেখে ঘাড় বেকিয়ে ড্যান্স করতে থাকে।বীর বুঝতে পারছে না জারার মাঝে এত প্রেম উতলে আসলো কোথা থেকে!এই মেয়ে তো ভয়তে পালাই পালাই করতো।একটু বেশি আশকারা পেলো নাকি!অবশ্য প্রণয়ের শুরুতে তো জারা এমনই করতো।বীরের এখন জারাকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।আবার হারাতেও চায়না।তাই চুপচাপ জারার কান্ড দেখছে।জারা ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলে,”আই ওয়ান্ট ইউর লাভ হ্যান্ডসাম।”

বীর ভ্রুকুটি করে বলে,”হঠাৎ এতটা আকুলতা কেন আমাকে নিয়ে?”
জারা বীরের চোখের দিকে চোখ রেখে বলে,”যেন এই ছোট ছোট স্মৃতি নিয়ে বাকি জীবন পার করতে পারি।দুজন দুদিকে হারিয়ে গেলেও যেনো আমাদের মাঝের এই প্রণয় মুহূর্ত আমাদের মন থেকে আলাদা করতে না পারে।”
জারার কথার ইঙ্গিত বুঝে বীরের মাথা গরম হলো।জারার টুটি টিপে জারার চোখের দিকে রক্তিম চাহনি দিয়ে বলে হিশহিশিয়ে বলে,”তোর আর আমার আয়ু যতদিন আছে কেউ পারবে না তোকে আমার থেকে আলাদা করতে।মনের সাথে আস্ত দেহটাও আমাদের একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকবে।তানাহলে এই বীর সব তছনছ করে দিবে।”
জারার চোখের কোণা বেয়ে পানি পড়ে তাও ঠোঁটে হাঁসি।চোখ ভিজে আসার কারণ বীর জানেই না সে জারাকে কিছুদিন পর কতটা ঘৃণা করবে আর ঠোঁটে হাঁসি কারণ বীরের দৃষ্টিতে জারার প্রতি অঢেল ভালোবাসা প্রকাশ পায়।বীরের এই শক্ত করে চেপে ধরার মাঝে জারা খুব সহজেই বীরকে জড়িয়ে ধরে।ঠোঁটের হাসিটা আরো চওড়া করে বলে,”তোমার থেকে সমস্ত শাস্তি আমার মঞ্জুর।”

পরদিন সকালে সবাই একটু দেরি করেই ঘুম থেকে উঠেছে।যে ধকল গেলো সাথে তো আবার রাত জাগা পড়েছে।এই পরিস্থিতিতে মন মস্তিষ্ক প্রফুল্ল করা ঘুম তো প্রয়োজন।সবার আগে ঘুম ভাঙ্গলো রাজের।কারণ তার মোবাইল বেজেই চলেছে ঘণ্টা আধা ধরে।ঘুমের মাঝে অনেকক্ষণ ধরে রিংটোন উপেক্ষা করে ঘুমকে প্রাধান্য দেয় সে।কিন্তু লাভের লাভ শূন্য।এই ফোনের কাজ হলো বেজে যাওয়া।তার তো দোষ নেই।দোষ হলো ওপর পাশের ব্যাক্তির।বেক্কলের মত রাজের ফোনে কল দিবে কেন?বউ নিয়ে আরামে ঘুমটাও হচ্ছে না তার।বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে একটু নড়তেই রাজের নাক ঘষা খেলো মায়ার গলায়।মায়া পিটপিট করে চেয়ে মাথা উঁচিয়ে রাজকে দেখে বলে,”এই যে মন্ত্রী মশাই!ঘুম থেকে উঠুন।আপনার ফোন বেজেই চলেছে।”

রাজ ঘুমঘুম কণ্ঠে বলে,”ফোনের কাজ ফোন করছে আমার কাজ আমি করছি।শান্তিতে ঘুমাতে দেও একটু।তোমাকে জড়িয়ে শান্তির ঘুম দেইনা কতগুলো দিন হয়ে গেলো।”
রাজের চুলগুলো হাত দিয়ে ছুঁয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে মায়া বলে,”প্রয়োজনীয় কলও তো হতে পারে।”
“জনগণের প্রয়োজন তো একটাই আমার বউ থেকে আমাকে আলাদা করা।নাহলে এই সাত সকালে আমার ফোনেই ওদের ডাক দিতে হয় সব সময়?”
মায়া হেসেই দেয়।রাজের মুখে একটু শক্ত করেই হাতটা রেখে বলে,”উঠে দেখুন কে দিলো কল।”
রাজ এবার চোখ খুলে বিরক্তি প্রকাশ করে বলে,”ধুর হালারপুতের সবগুলোর মরণ ওঠে আমার বউ নিয়ে ঘুমের সময়।”

মায়া চোখ বড় বড় করে চাইলো।ইদানিং রাজ কিসব ভাষা প্রয়োগ করে!এগুলো শুনলে মায়া যেনো রাজকে চিনতেই পারেনা।রাজ ফোনটা না দেখেই সুইপ করে রিসিভ করে কানে নিয়ে বলে,”আব্বে কে রে সাত সকালে আমার ঘুমের বারোটা বাজায়?”
ওপাশ থেকে কর্কশ কন্ঠে ফাটা বাঁশের মত করে বলে,”হতচ্ছাড়া আমি তোর জন্ম দেওয়া বাপ।”
রাজ এবার ফোনটা দেখে।জ্বলজ্বল করছে স্ক্রিনে “জীবনের বাঁশ” মানে তার বাবা মাহমুদ সরদার।রাজ অনেক কষ্টেই বাবার নামটা এই নামে সেভ করেছে।এই বাবা তাকে যে কয়বার কল দিয়ে জ্বালায় এই জীবনে সে কয়বার বউ নিয়ে ঘুরলে এতদিনে বাবা ডাক শুনতে পারতো বলে রাজ মনে করে।সেই বাবা ডাক থেকে দূরত্ব ধরে রেখেছে মাহমুদ সরদার।তাকে কিভাবে জীবনের বাঁশ না দিয়ে অন্য নাম দেয়?রাজ চোখটা একটু ডলে হামি তুলে বলে,”সাত সকালে ভুলভাল ইনফরমেশন দিতে কল দিয়েছো নাকি?তুমি আমাকে জন্ম দিলে কিভাবে?আমাকে আমার মা জন্ম দিয়েছে।”

“ওড়ে হতচ্ছাড়া আমি না থাকলে তোর মা তোকে জন্ম দিতো কিভাবে?”
“আরেকজনকে বিয়ে করে।”
রাজের কথা শুনে মাহমুদ সরদার তাজ্জব হয়ে গেলো।অতঃপর বলেন,”সাত সকালে তোমার বউ কি শুরু করেছে?”
রাজ পাশে তাকিয়ে বলে,”আমার বউ তো আমার পাশেই ঘুমিয়ে আছে।এখনও তো কিছু শুরু করেনি বাবা।তবে হ্যাঁ ঘুম থেকে উঠলে শুরু করতে পারে।”
“হতচ্ছাড়া লজ্জা করেনা এই বয়সে এসে বউকে দিয়ে বাবার জন্য পাত্রী খোজাতে?”
রাজ যেনো চারশত চল্লিশ ভোল্টের ঝটকা খেলো।মাথা ঝাকিয়ে মস্তিষ্ক একটু জাগ্রত করে বলে,”খুলে বলতো তো কাহিনী কি?”

“বাংলাদেশ প্রতিদিনের এক কোনায় জ্বলজ্বল করছে,মন্ত্রী শাহমীর রাজ সরদারের পিতার জন্য বিবাহযোগ্য কোনো রমণী প্রয়োজন।ডিভোর্সী অথবা বিধবা হলেও চলবে কিন্ত মন মানসিকতা ভালো হওয়া লাগবে।সাংসারিক হতে হবে কূটকচালি বুদ্ধি রাখা যাবে না।মাহমুদ সরদারের বায়োডাটা,
নাম:মাহমুদ সরদার
পিতা:মহসিন সরদার
মাতা:আনোয়ারা সরদার
বর্তমান বউ:মালিনী খান
প্রাক্তন বউ:রোহিনী খান
বড় পুত্র:শাহমীর রাজ সরদার
বউমা:মেহেরুন জাহান মায়া
মেজো কন্যা:সিয়া সরদার
ছোট কন্যা:হিয়া সরদার(দুজনে যমজ)
ধর্ম:ইসলাম
বয়স:৬৯
পেশা:প্রাক্তন রাজনীতিবিদ,ল নিয়ে পড়েছে কিন্তু জীবনে একবার আদালতে ঢুকেছে।
এটা কেমন বায়োডাটা?”

মাহমুদ সরদারের শেষের হুংকার শুনে যেনো রাজের কান গেলো।রাজ মায়ার দিকে তাকাতেই মায়া হাঁসি দিলো।রাজ বুঝেও নিলো সব।শশুর শাশুড়িকে রাগাতে মায়ার এই কৌশল।তাই রাজ বলে,”দেখো বাবা আমি নিজেও চাইনা তুমি এই বয়সে এসে তিন নাম্বার বউ জুটিয়ে আমার ইজ্জত খাও।তাই বলছি তোমার দুই নাম্বার বউকে একটু বোঝাও।দুজনে হাসিখুশি সংসার করো আমরা ছেলে বউ তোমাকে নিয়ে আর ডিপ্রেশনে না গিয়ে হানিমুনে যেতে পারব।”
“আমার ছেলে আমাকে নিয়ে ডিপ্রেশনেও যায়!এ যেনো আমার কানকে অবিশ্বাস্য কিছু শুনিয়ে দিলো।”
“মানো বা না মানো তোমার ভুলের কারণেই তো আমার জন্ম।জন্ম যখন হয়েছে বাবাকে নিয়ে চিন্তা তো হবেই।বয়স বেড়েছে কিন্তু বাবার সংসার সুখের না।এমন বউ কে রাখে। যে কিনা মাঝরাতে স্বামীকে ঘরের বাইরে বের করে দেয়?”

“একদম আমাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে তুমি বাহাত ঢুকাবে না।”
“আমি তো চুপ ছিলাম।তোমরাই উইদাউট মাইক আমাদের কাছে সব এনাউঞ্চ করে দিয়েছো।তোমার বউমা যে সে মেয়ে নয় বাবা।এ হলো আস্ত এক বাঘিনী।যাকে দেখতে লাগে মায়াবতী কিন্তু কাজে প্রকাশ পায় সে কতটা হিংস্রবতী।তাই বলছি তোমার দুই নাম্বার বউটাকে একটু সামলে চলতে বলো।আমি কিন্তু আমার মায়াবতীর ইচ্ছা পূরণে ঘাটতি রাখব না।”
“তোমার বউ বউ,আমার বউ কি ফেলনা?”

“ফেলনা মনে না হলে নিজের সিংহাসনের রানী করে রাখার জন্য এবার একটু কঠোর চেষ্টা করো।নারীদের দু একটা শক্ত কথাতে ভেঙে পড়ে মনের মধ্যে আঘাত পুষে রাখলে সে সংসারে বউরা এক সময় অন্যদের চোখে ফেলনা হয়ে যায় বাবা।তুমি তোমার বউকে যেভাবে করে আগলে রাখবে অন্যরা তোমার বউকে ঠিক সেভাবেই ট্রিট করবে।”
মাহমুদ সরদার থমকে গেলেন।রাজ কথাটা স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে।যেটা একদম সঠিক একজন স্বামীর দায়িত্ব হিসেবে।মেয়েরা একেকরকম হয়।কেউ মানসিক দিক থেকে খারাপ থাকে তো কেউ ভালো।আবার কোনো কোনো মেয়েরা এমনও আছে যাদের বোঝা বড় দায়।মালিনীর ব্যাপারে মাহমুদ সরদার হেলাফেলা করেন এমন না কিন্তু কখনও কাছে আগলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেননি।এতগুলো বছরে সংসারে মালিনীর রাগ ভাঙ্গিয়েছেন কিছু উপহার দিয়ে।কিছু হারানোর বিনিময়ে অন্যকিছু দিয়ে কিন্তু বুকে আগলে নিয়ে তো একটু মনকে শান্তি দেননি তিনি।মাহমুদ সরদারও যে এগুলো পেয়েছেন তাও না।কিন্তু তাকে নিয়ে এদিক ওদিক চলার মত তার সন্তান ও অন্যান্যরা ছিল যেটা মালিনীর বেলায় ছিল না।এক দৃষ্টিতে আমরা মালিনীকে ভিলেন হিসেবে দেখলেও রাজের দৃষ্টিতে তাকেও আগলে নিয়ে ভালো পথে আনার চেষ্টা করা যায় এমন মনে হয়।রাজ চায় তার বাবা মা সুখে থাকুক।আপন মা না হোক কিন্তু বাবা ও বোনেদের জন্য শ্রেষ্ঠ বউ ও মা হয়ে উঠুক।এটা তাদেরকেই চেষ্টা করতে হবে।

প্রায় ঘন্টা দুই ধরে মনে সাহস সঞ্চয় করে নিলেন মাহমুদ সরদার।এখন মালিনীর কাছে যাবেন তিনি।সেই সকাল থেকেই নিউজ দেখার পর থেকে নাকে কান্না করে যাচ্ছে মালিনী।দরজার কাছে এসে একটু উকি দিতেই দেখতে পান মালিনী টিস্যু নিয়ে নাক টানছে।মাহমুদ সরদার দোয়া পাঠ করে বসলেন মালিনীর পাশে।টিস্যু বক্স থেকে একটা টিস্যু পেপার নিয়ে মালিনীর চোখের নিচে ধরে বলে,”এভাবে কান্না করলে তোমার শরীর খারাপ করবে তো।”
মালিনী দূরে সরে গিয়ে হুংকার ছেড়ে বলে,”সেটা তোমার আদরের বউকে দিয়ে ঘটকালি করানোর সময় মনে ছিল না?”

“এই দেখো আমি কিন্তু ওকে দিয়ে একবারও কোনো পাত্রী দেখার আবেদন করিনি।মেয়েটা নিজে থেকেই আমার দুঃখ বুঝে….
বলতে গিয়ে মালিনীর ডাগর ডাগর চাহনি দেখে থেমে শুকনো ঢোক গিলে আবার বলেন,”মানে মেয়েটা নিজের মত মনগড়া ভেবে নিয়ে এমন করেছে।আমি নিষেধ করেছি ওদেরকে।ব্যাপারটা ধামাচাপা দেয়া হবে।”
মালিনী এখনও কান্না করে যাচ্ছে।মাহমুদ সরদার এবার হাত বাড়িয়ে আলতো করে তার মুখ ধরে নিজের কাছে আনতে নেয়।একটু বক্ষেতে জায়গা দিতে চেয়েছিল বউকে।বেচারার এখানেও ইজ্জতের ফালুদা হতে হলো।মালিনী ঝাটকা দিয়ে বলে,”চুবেনা আমাকে।হঠাৎ করে ছেলের মত হয়ে গেলে কেন?নাকি ছেলে পরামর্শ দিয়েছে বলেই এখন প্রেম প্রেম জেগেছে।”

“এইই!ছেলেকে আমি জন্ম দিয়েছি।আমার আগে ছেলে হয়নি যে তার থেকে পরামর্শ নিতে হবে।”
“একদম চুপ।তুমি তোমার ছেলেকে জন্ম দিলেও তোমার ছেলের বউ ধরে রাখার ক্ষমতা আছে।সে জানে কিভাবে বউকে কাছে আগলে রাখতে হয়।সে জানে মানুষের সামনে বউকে কিভাবে সম্মান করতে হয়।সে জানে কিভাবে বউকে কষ্ট না দিয়ে একসাথে হাসিখুশি সংসার করতে হয়।”
“আমার ছেলেকে নিয়ে ভালই পিএইচডি করেছো দেখছি।”
“ছেলেটা আমার সামনেই থাকে।দেখতেই পাই বউয়ের প্রতি কতটা যত্নশীল।তাই তো ওদের মাঝে এখনও ঝগড়া ঝাটি দেখা যায়নি।”

“হঠাৎ করে ছেলের এত সুনাম করছো কেন?”
“সত্যিটা বলছি শুধু।তোমার ছেলের যোগ্যতা আছে বউকে রানীর মত করে বুকে আগলে রাখার।বাবা হয়ে এই যোগ্যতা তোমার এখনও হয়নি।পুরুষ মানুষ বাইরে কাজ করেই নিজেকে বাহাদুর ভাববে এমনটা ভুল প্রমাণ করে দেয় তোমার ছেলে।আসল বাহাদুর তো রাজ।যে কিনা দেশের সেবা করেও বউকে সেবা করে।বউ হাসপাতালে ভর্তি ছিল সময় দেখেছি ওর আশেপাশে চাতক পাখির মতো ঘিরে ছিল।মায়া প্রেগনেন্ট শুনে এই পর্যন্ত ডাক্তারের থেকে তিনবার কাউন্সেলিং করে রেখেছে কিভাবে মায়ার যত্ন নিবে।বেবী আর মা সুস্থ থাকবে কিভাবে তার জন্য চব্বিশ ঘণ্টায় তিনবার ডাক্তারের সাথে কথা বলে।বুঝতেই পারছো ছেলেটা তার বউকে নিয়ে কতটা চিন্তিত।আরেক হলে তুমি।কখনও আমার জ্বর এসেছে কিনা জেনেছো?”

“আমি তোমার জ্বর সারাতে নিলে তুমিই দূরে সরে যেতে মালিনী।ভুলে যেও না সম্পর্কে আমি একা দূরে সরে যাইনি তুমিও দূরে ঠেলেছো আমাকে।তোমার প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে আমর রোহিনীকে নিয়ে মিথ্যা সম্পর্ক কল্পনা তুমি করেছিলে।তোমরা ব্রেকআপ করেছো ভালো কথা কিন্তু আমার সংসারে সেই অশান্তি ভোগ করতে হয়।এগুলো ওই রাজের নজরেই বেশি আসে।রাজ দেখেছে তোমার নিকৃষ্ট ব্যাবহার।তাও কি না ছেলেটার বয়স তখন ছিল ছোট।”
“সময়টা আমার জন্যেও ভালো ছিল না।যাকে ভালোবেসে এসেছি সাতটা বছর তার সম্পর্কে বাজে খবর পেলে আমি কিভাবে ঠিক থাকি?”

“এরপর যখন সবকিছু ঠিক হয়ে যায় তখন তো তুমি ঠিক ছিলেনা।তার মৃত্যুর পর আমার রোহিনী মারা গেলো।রাজের মনে দাগ কেটেছে তার খালামণি তার মাকে রাগ দেখাতো বলেই মারা গেলো।এটা তো বাচ্চাটার মধ্যে আসবে স্বাভাবিক ব্যাপার। যা একটু সব ঠিক করতে আমাদের বাবারা আমাদের বিয়ে দিলো তুমি কিন্তু বিয়ের আগে আমার কাছে রোহিনীর জন্য ক্ষমা চেয়েছিলে।আমি ভুল ছিলাম যে বিশ্বাস করি তুমি সব মেনে নিয়েছো কিন্তু বিয়ের পর নতুন সংসার করতে নিলে বুঝতে পারি তুমি আমাকে নিয়ে সুখে নেই।”
“আমি তো মিনারকে ভুল বুঝেছিলাম। যখন ওর মৃত্যু হয় তখন সত্যিটা জানতে পারি আর রোহিনীর মৃত্যুর জন্য আমি কোনো না কোনোভাবে দায়ী এটার জন্য আমি ক্ষমা চাই।কিন্তু তোমাকে বিয়ে করাটা আমার মনের থেকে ছিলো না।বাবার চাপে আমাদের বিয়েটা হয়।মিনারের কষ্ট যেমন আমার মধ্যে ছিল রোহিনীর কষ্ট তোমার মধ্যেও ছিল।”

“হ্যাঁ কিন্তু মনকে শক্ত করে বুঝিয়ে হলেও আমি এগিয়ে আসি তুমি পিছিয়ে যাও। যা একটু এগিয়েছিলে সব গেলো আমাদের প্রথম সন্তান হারানোর পর।তোমার কি মনে হয় পুরুষ মানুষ বলে আমার কোনো কষ্ট নেই?আমার একটা ছেলে প্রতিবন্ধী হলো যদিও রাজ সুস্থ কিন্তু তাজের কষ্ট আমার আছে।আরেকটা ছেলে হয়ে হারিয়ে গেলো।বাবার কষ্টটা তোমরা মায়েরা বুঝবে না।বাবার কষ্ট বুঝবে যারা বাবা হয়েছে শুধু তারাই।জীবনের এই পথ চলায় সবার কষ্টের মাপকাঠি আছে শুধু আমার নেই।মায়া মেয়েটা আমার সেই কষ্ট বুঝেছে।”
“হ্যাঁ তাই তো তোমার জন্য আরেকটা বউ আনতে চায়।”
“কথার উল্টো মানে করো কেন?পুরোটা তো শুনবে নাকি?”

“কোনো কথা শুনতে চাইনা।আমার ভাই আসবে একটু পর।ওখানেই ফয়সালা হবে।”
“শালাটা আমার এতগুলো বছর পর আসবে।তাকে এভাবে চাপ দিলে হয়!তাও যদি নব দম্পতি হতো।বুড়ো বুড়ির সংসারের আবার কিসের ফয়সালা?”
“তোমার মুখে আমি কোনো কথা শুনতে চাইনা।জন্ম না দিয়েও রাজ আমাকে যতটা বোঝে স্বামী হয়েও তুমি ততটা বোঝোনা আমাকে।”
“নারী জাতির মারপ্যাঁচ এত বেশি যে আমার মত সহজ মাথায় এগুলো আসেনা।ওই হতচ্ছাড়া ছোকড়াটা সব মারপ্যাঁচ ভালো বোঝে।যত জ্বালা আমার।ছেলের থেকে পরামর্শ না নিয়ে বউমার পরামর্শে চলা উচিত।আসলেই সুখে থাকবো আমি।”

রাগের বসে কি থেকে কি বললেন কিছুই মাথায় নেই মাহমুদ সরদারের।মালিনী হতবাক চাহনি দিয়ে দেখছে শুধু।মাহমুদ সরদার কথা থামিয়ে মুখে হাত দিয়ে দাঁড়ালেন।মালিনী ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,”তুমি এখনই এই ঘর থেকে বের হও নাহলে আরো একদফা ভাংচুর হবে।বের হও!”
চিৎকার করে বলার কারণে মাহমুদ সরদার একটু কেঁপে উঠলেন।ঘর থেকে বের হতে হতে মিনমিন করে বলেন,”বউদের অভিমান ভাঙ্গানো সহজ কিন্তু জঞ্জাল বউদের না।আমার বউমার মত বউ হলে সবার মন বুঝতো।”

বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স থেকে নামলো বিভান খান ও তার স্ত্রী রাজিয়া খান।তাদের পিছনে আছে গার্ড।বিভান খান নেমে প্রকৃতি দেখতে ব্যাস্ত।রাজিয়া একটি কাপছে।বাবা ছেলে এক জায়গা হলেই তো গলা আটকে আসা পরিবেশ।বাবার কথার উল্টো চলে ছেলে।বীরের সাথে কোনো কথার মিল নেই বিভান খানের।রাজিয়াকে চিন্তিত দেখে বিভান খান বলেন,”কি ব্যাপার চিন্তিত কেন?”
“না মানে বীরের রিয়েকশন কেমন হয় তাই ভাবছি।”
“তোমাকে দেখে ছেলেটা খুশীই হবে।”
রাজিয়া আলতো হেসে বলে,”তোমাকেও।”
বিভান খানের ঠোঁটে বিদ্রুপের হাসি।বোঝাই যাচ্ছে রাজিয়া ভুল কিছু বলেছে বলেই এই হাসিটা তার ঠোঁটে।

হলরুমের সোফায় বসে এখনও কান্না করে যাচ্ছে মালিনী।আজ যেনো তার কান্না ফুরাবে না।মাহমুদ সরদার বুঝে নিলেন এই মহিলা আজ তার ভাইকে দেখানোর জন্য কান্নার বন্যা তৈরি করছে।মায়া সকালবেলা উঠে অফিসে যায়।মাত্র আসলো বাসায়।জারার থেকে শুনেছে বিভান খান এসেছে এয়ারপোর্টে।মায়াও হাজির অতি দ্রুত।রাজ নেই এখানে সেই সাথে বীর।তবে রুদ্র আছে।মায়া এসে মালিনীর দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপের সুরে বলে,”রিল্যাক্স শাশু মা আপনার সতীন এখনও আসেনি।একটু বাড়াবাড়ি করলে আসবে।”

মালিনী উত্তর দিলো না।শুরু ফুঁসে উঠেছে মাত্র।পিছন থেকে বুটের আওয়াজ পাওয়া গেলো সেই সাথে মোটা কন্ঠ,”আমার বোনের সতীন আনা কি এত সহজ?কার এত বড় সাহস যে আমার বোনের সতীন আনতে চায়?”
মাহমুদ সরদার সোফার এক কোনায় ফোনটা লুকিয়ে ম্যাসেজ দিলেন,”হতচ্ছাড়া দ্রুত বাড়িতে আসো।তোমার বউ আর মামা মুখোমুখি হয়েছে।”
ওপাশ থেকে ম্যাসেজ আসলো সাথে সাথে।ফোন ভাইব্রেট হলো।মাহমুদ সরদার খুশিমুখে ফোনটা নিয়ে যেই স্ক্রিনে চোখ রাখলেন দেখলেন চুমুর ইমোজি দেওয়া।তাও কিনা আবার ছেলের আইডি থেকে।বিরক্তিতে ফোনটা পাশে রেখে সামনে তাকালেন।

বিভান খানের কথা শুনে মায়া এক ভ্রু উচু করে পিছনে ঘুরলো।বিভান খানকে দেখে প্রথমেই মায়ার মনে যে ভাবনা আসলো তা হলো লোকটাকে নিজের সিক্রেট রুমে নিয়ে কারেন্ট শক দেওয়া।এদিকে জারার মন তো চাচ্ছে তার মায়ের ধর্ষককে এখনই গুলি করে খুন করে ফেলা।বুকে হাত ভাঁজ করে দাঁত কিড়মিড় করে দেখছে বিভান খানকে।মায়া ইশারা করে রিল্যাক্স হতে বলে এগিয়ে আসলো বিভান খানের দিকে।মৃদু হেসে বলে,”আপনার বোনের সতীন আনার সাহস কোনো সাধারণ মেয়ে দেখাচ্ছে না মামা শ্বশুর মশাই।এই দেশের একমাত্র কৃষিমন্ত্রীর বউ যে কিনা চারটা কোম্পানির মালিক।এমন মেয়ের সাহস থাকবে না তো কার থাকবে?”

বিভান খান তাকালেন মায়ার চোখজোড়ার দিকে।কতটা আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলছে মায়া।মৃদু হেসে বলেন,”নাইস কনফিডেন্ট কিন্তু ওভার কনফিডেন্ট ভালো না মেয়ে।”
মায়া এবার ভিলেনি হাসি দিয়ে বলে,”যেই কনফিডেন্ট রেখে জীবনের শেষ বয়সে এসেও সফলতা অর্জন করা যায়না ওই কনফিডেন্ট ভালো নাকি সেই কনফিডেন্ট ভালো যেটাতে চুটকি মেরে সফলতা অর্জন করা যায়?”
বিভান খান কিছু বুঝলেন না রাজিয়া এসে মায়াকে জড়িয়ে ধরে বলে,”তুমি রাজের বউ।আমার রোহিনীর বউমা একদম রোহিনীর মতো সাহসিকতা।”
“সেই সাথে দাম্ভিকতাও আছে মেয়েটার।”

বিভান খানের কথা শুনে মায়া মৃদু হেসে বলে,”আমি আমার শ্বাশুড়ির মতো সাহসী আর দাম্ভিকতা বজায় রেখে চলি বলেই আমার মন্ত্রী মশাই আমাকে মায়াবতী রূপে গ্রহণ করেছে।”
মালিনী দৌড়ে এসে বিভান খানের সামনে দাড়িয়ে বলে,”ভাইয়া তুমি এসেছো।আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও।আমার দিন একদম খারাপ যাচ্ছে।প্রথমে হিয়াকে হারিয়েছি এখন সোনালীকে পাওয়া যাচ্ছে না।আমার সংসার ভাঙতে চলল।আমি থাকবোই না এমন সংসারে।তালাকের ব্যাবস্থা করো দ্রুত।”
মাহমুদ সরদার খুক খুক করে কাশলেন।মায়া ফিচেল হেসে বলে,”এরপরেও বলবেন যে আমি আমার শ্বশুরকে আরেকটা বিয়ে দিতে পারব না।শ্বশুরের যদি তালাক হয়ে যায় তাহলে তার আরেকটা বিয়ে কেন দিবো না আমি?”
“শোনো মেয়ে তুমি ছোট মানুষ তাই অনেক কিছু জানো না।আমার বোন অনেক কষ্ট সহ্য করেছে জীবনে।”

“আর আমার শ্বশুর!সে কি আনন্দে প্রতিটা দিন ঈদ পালন করেছেন?সে পুরুষ মানুষ তার জীবনটা শক্ত মনের করে কোনো রকমে কাটালো মানেই কি সব মিটমাট?আজও সে তার কষ্ট ভুলতে যায় কবরস্থানে।সেখানেই মাঝেমাঝে স্থির চোখে নিজের বাবা আর বউয়ের কবরটা দেখে মনকে শান্তি দেয়।একবারও ভেবেছেন কেউ এটা কতটা কষ্টকর?”
সবাই নীরব দর্শকের মত মায়ার কথা শুনলো।রুদ্র পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে এসে বলে,”হাই আমি রুদ্র।”
বিভান খান এবার রুদ্রের সাথে সাক্ষাৎ করেন।রুদ্র বলে,”বসে কথা বলি আমরা।মুন্নি নাশতা আনো গেস্ট এসেছে।”
সার্ভেন্টকে কথাটা বলেই বিভান খানকে বসতে বলে রুদ্র।বিভান খান সোফায় বসতেই বাকিরাও নিজ জায়গায় বসে।মায়া বসলো আলিশান আসনে। বিভান খান সেদিকে চোখ রেখে বলেন,”এখানে নাকি মোহনা বসার অধিকার রাখে।মোহনা তো শুনলাম ফিরেও এসেছে।কোথায় সে?”

মায়া ম্লান হেসে বলে,”ভাবী আসার পর ননদের স্থান কি এখানে আর থাকে বলুন?আমি এসেছি তো তাই আমার ননদ এই আসনের অধিকার হারিয়েছে।এখন এই আসন রাজার একমাত্র রানীর।”
বিভান খান কথাগুলোতে পাত্তা না দিয়ে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলেন,”হায়ার এডুকেশন কমপ্লিট করেছো শুনলাম।এখন কি করো তুমি?”
“জি স্টাডি কমপ্লিট করে এখন আমি টোটো কোম্পানি চালাই।”

এমন মুহূর্তে ফিক করে হেসে দেয় জারা।রাজিয়া নিজেও একটু হাসে।মালিনী চোখ দিয়ে ইশারা করে বুঝিয়ে দেয়,”এই পরিবার সব এক।রক্তের দোষ আছে তো।”
বিভান খান হালকা কেশে ভদ্রতার সাথে বলেন,”তাহলে এবার নিজের মত কিছু করো।এই যেমন রাজ নিজের রাজনীতিকে বেঁচে নিয়েছে।বীর মাফিয়া জগৎ বেঁচে নিয়েছে রাজের সাথে থেকে দেশের সেবা করতে।তোমার ভাই আদ্র তো নামকরা সার্জেন্ট।তুমিও এমন কিছু একটা করে সুনাম অর্জন করো।”
“জি এটার আশাতেই আছি।একদিন এমন একটা কান্ড ঘটিয়ে দিবো যেনো আপনারা সবাই ঝটকা খেয়ে আমার সুনাম করেন।”

“তুমি চাইলে তো তোমার বাবার ব্যবসা দেখতে পারো।এভাবে বেকার থাকলে নিজেরই তো খারাপ লাগবে।”
“আমার কর্মক্ষমতা সম্পর্কে অবগত থাকার কারণে আমার বাবা তার ব্যবসায় আমাকে নিতে চায়না।বলা তো যায়না পুত্র হয়ে আমি কখন বাবার ব্যবসায় লাল বাতি জ্বালিয়ে দেই।আপনি চাইলে আমি আপনার ব্যবসায় যোগ দিতে পারি।আপনার তো দেখছি আমার উপর আস্থা আছে।আপনার ব্যবসায় ঢুকলে আমি কিছু শিখতেও পারবো আর কিছু জানতেও পারবো।”

রুদ্রের কথা শুনে মৃদু হাসলেন বিভান খান।রুদ্র যে কিছু ইঙ্গিত করেছে এটা বুঝলেন না তিনি।মায়া একটু বুঝলো সাথে জারা।তাই তারা চোখাচোখি করছে।রাজ ও বীর এসেছে এর মাঝে।দুজনে এসেই দুজনের বউয়ের চোখের দিকে চোখ রাখে।রাজ মায়াকে দেখে বীরের উদ্দেশ্যে বলে,”জট পাকিয়ে তোলার আগে জট ছাড়ার ব্যাবস্থা কর ভাই।এই বয়সে এসে আমি আমার বাবার ডিভোর্স দিতে চাইনা।আমাদের বউদের মতলব কিন্তু ভালো না।”
“তোর বউকে তুই সামলা।আমার বউ ঠিকই আছে এখনও।জানিনা ভিতরে ভিতরে কি পাকাচ্ছে।”
বীর যখন রাজিয়ার দিকে চোখ রাখলো চোখটা যেনো একটু ভিজে এলো।কন্ঠ নরম করে বলে,”মা।”
সবাই রাজ বীরের দিকে চোখ রাখলো। রাজিয়া ছুটে এসে বীরকে জড়িয়ে ধরে বলে,”মাকে তো দেখার ইচ্ছা করেই না।আমাকে একেবারে ভুলে গেলি?”

“মাকে কি ভোলা যায়? জানোই তো আমার কাজের প্রয়োজন ছাড়া দেশের বাইরে যেতে ইচ্ছা করেনা।দাদুর স্মৃতি আঁকড়ে ধরে রাখতে আমার ভালো লাগে।দাদুর খুনিকে আমি বের করতে এখনও ব্যাস্ত।এখন তো আবার আমার মন্ত্রীর লাইফ রিস্ক চারদিকে থেকে।তার বউ মা খুশির সংবাদ দিয়েছে।চারদিকে থেকে শত্রুদের নজর লেগেছে তো।”
রাজিয়া হালকা হেসে বলে,”আমার বউমা কোথায়?”
বীর চোখের দৃষ্টি দিয়ে দেখালো জারাকে।জারা এগিয়ে আসছে।রাজিয়া তাকালো জারার দিকে।গোলাপী রঙের লম্বা গোল জামা,হাতা কাটা আর ওড়না এক কোণায় ঝোলানো।ছোট চুলগুলো স্ট্রেট হয়ে আছে।চোখটা একটু ঘোলা।মুখে মেকআপ আছে সাথে চোখে কাজল ও ঠোঁটে হালকা নুড কালারের লিপস্টিক।রাজিয়া খুশি হয়ে হাত এগিয়ে দিলো।জারা হাতটা ধরে রাজিয়াকে জড়িয়ে ধরে।জারা চুপ করে জড়িয়ে ধরে আছে রাজিয়াকে।রাজিয়া জারার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”অনেক সুন্দর হয়েছে আমার বউমা।ছেলে বউমা দুজনকেই মানিয়েছে।”

রাজ এগিয়ে এসে বিভান খানের সাথে হ্যান্ডশেক করে বলে,”কেমন আছো মামা?”
“আমি তো ভালই আছি।তুমি কেমন আছো?”
“এমনিতেই ভালো থাকি এখন বাবা হবার খুশিতে দ্বিগুণ ভালো আছি।”
“তোমার বউ তো আমার বোনের সংসার ভাঙতে চায়।”
“আধা ভাঙ্গা সংসার গড়তে পারেনা যেখানে ওটা আলাদা করে ভাঙার প্রয়োজন হয়না মামা।নিজে থেকেই ভেঙে যায়।আমার বউ শুধু নতুনরূপে গড়ার চেষ্টা করছে।”
“বাবাহ্!বউয়ের হয়ে সাফাই গাইছো।”

“সত্যি কথা বললেই তোমাদের মত কিছু তৃতীয় ব্যাক্তি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে কিছু তিক্ত বুলি ছিটিয়ে দেও।এই যেমন আমি আমার বউয়ের হয়ে কিছু বলেছি বলে তোমার কাছে সাফাই গাওয়া অনেকের ভাষ্যমতে বলা হয় বউয়ের আঁচলের নিচে মুখ লুকানো।আমি অবশ্য এগুলোতে কান দেইনা।আমার সুখ আমার কাছে।যার জ্বলবে সে তো আগুন ছিটাতেও চাইবে।আমি নাহয় ঠান্ডা পানির বর্ষণ দিয়ে আগুন নিভিয়ে দিবো।”
বিভান খান আরও কিছু বলতে নিবে মালিনী আড়ালে হাত টিপে ধরে। বিভান খান একটু থেমে প্রসঙ্গ পাল্টে বলেন,”আমি এসেছি যেহেতু আমার ছেলে বউমার বিয়ে উপলক্ষে এবার একটা গ্র্যান্ড পার্টি হবে।”

“সে তুমি আসবে বলেই আমরাও অনুষ্ঠান করিনি মামা।”
“গ্রেট তাহলে কাল পরশুর মধ্যে অনুষ্ঠান করা হোক।”
মায়া বাঁধা দিয়ে বলে,”আপনি হয়তো জানেন না আমাদের পরিবারের অবস্থা এখন ভালো না।আমার ননদ হারিয়ে গেছে।আমার কাকি শাশুরি হারিয়ে গেছেন।আমার দুটো দেবরও হারিয়ে গেছে।একেক করে অবশ্য এই মহলের সবাই হারাতেই থাকে।যাই হোক শেষমেষ আমার শশুর শাশুড়ি সংসারটা হারাতে বসেছে।এর মধ্যে ওয়েডিং পার্টি রাখাটা শোভা পায়না।”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৫৭+৫৮

বিভান খান কিছু বলতে নিবেন তার আগে রাজ বলে,”শোভা পাবে মায়াবতী।যারা হারিয়ে যাওয়ার তারা হারিয়ে গেছে কিন্তু বাকিরা তো সুখে থাকবেই।”
মায়া চোখ বড়বড় করে চাইলো।রাজ মৃদু হেসে বলে,”অনুষ্ঠানের ব্যাবস্থা করা হোক।”
জারা এবার বীরের দিকে তাকালো।বীর কিছু না বলে রাজিয়াকে আগলে নিয়ে ওদের কথা শুনছে।মায়া ভ্রুকুটি করে জারাকে ম্যাসেজ দেয়,”এদের কথা শেষ হলে উপরে এসো।”
জারা ম্যাসেজ পড়ে লেখে,”ওকে।”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৬১+৬২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here