মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৬৯+৭০
ইশরাত জাহান
হিয়া এগিয়ে এসে রাজকে আগে জড়িয়ে ধরে বলে,”I miss you ভাই।”
মাহমুদ সরদার মুখটা পাংসুটে করে বলেন,”তোমার বাবাকেও একটু দেখো।সেও তো তোমাকে নিয়ে চিন্তায় ছিলো।”
হিয়া মৃদু হেসে মাহমুদ সরদারের দিকে চেয়ে বলে,”তুমি তো মায়ের সাথে ঝগড়া করতে।আমাকে নিয়ে ভাবতে কখন?”
রাজ হেসে দিয়ে বলে,”একেই বলে এক হাতে সব সামলানো বাবা।আমি আমার পুরো পরিবারকে নিজের বুদ্ধি দিয়ে সামলে চলি।”
“হয়েছে!নিজের গুণগান আর করতে হবেনা।এবার এটাকে নিয়ে বিদায় হও।”
বিভান খানের উদ্দেশে বলেন মাহমুদ সরদার।রুদ্র ইশারা করে জেসিকে।নজরে আছে হিয়ার কিন্তু ইঙ্গিতটাকে ভালো দিকে নিলো না।বেচারা রুদ্র একটু ভ্রু উচু করে জেসিকে ইশারা করে চোখ টিপ দেয় আর হিয়া ভেবে নিলো রুদ্র ফ্লার্ট করছে।বরাবরের মতো চোখের চশমা ঠিক করে নাক টেনে বলে,”নষ্ট পুরুষ।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কথাটা কানে গেলো রাজের।হিয়ার দিকে চোখ রেখে দেখতে পায় হিয়ার চাহনি রুদ্রের দিকে।ব্যাপার কিছুই বুঝলো না রাজ।এই নষ্ট পুরুষ বলার কারণটা আবার কি!জেসি এগোতে নিবে ওমনি বিভান খান তার পাশে লুকিয়ে রাখা ক্রস ফায়ার নিয়ে এদিক ওদিক চালাতে শুরু করেন।এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা সবাই এদিক সেদিক ছুটছে।সবাই নিজেদের জীবন বাঁচাতে পালিয়ে গেলো।মাহমুদ সরদার,রাজ,রুদ্র,জেসি একদিকে মালিনী খান,হিয়া,মায়া আরেকদিকে।এরা পিছন থেকে দেখতে পায় সামনের লোকেদের।অন্যদিকে লুকিয়ে পড়ে আদ্র ও সিয়া। সিয়ার হাত ধরেই পালায় আদ্র।মেয়েটা যে ভীতু গুলির শব্দে এক জায়গায় ভয়ে দাড়িয়ে থাকবে কিন্তু পালানোর সাহসটাও পাবেনা।তাই আদ্র হাত ধরে নিয়ে আসে। তাজ আছে জারার পাশে।জারার যখন লুকিয়ে গেলো ঠিক তখনই তাজ কি করবে বুঝতে না পেরে দৌড় দেয়।মোহন সরদার ও আহান সরদার সাথে রুদ্রের ফোর্স লুকিয়ে আছেন টেবিলের নিচে।তার পাশ দিয়েই ক্রস ফায়ার শুরু হয়েছে।মাহমুদ সরদার রাজের দিকে ফিরে বলেন,”এখানে কি খালি হাতে এসেছিলে?”
“হ্যাঁ,কেন মিষ্টি হাতে আসার কথা ছিল নাকি?”
“হতচ্ছাড়া!মাফিয়ার সাথে যুদ্ধ করতে এসেছো খালি হাতে।এবার নিজেকে রক্ষা করবে কিভাবে?”
“আরে বাবা সিআইডি অফিসার থাকতে আমি আবার আমার গ্যাং আনব কেন?আব্বে ব্যাটা রুদ্র তোমার ফোর্স কোথায়?”
“ওরা আমার পারমিশন ছাড়া একশন নিতে পারবে না।”
“তো দেও পারমিশন।”
“দুঃখিত ব্রো!আমি যাকে পারমিশন দেই সে আমার পিছনে দাড়িয়ে।”
রাজ দেখলো জেসি ওর পিছনে।জেসি রুদ্রের কানে কানে বলে,”আমার ব্লুটুথ কান থেকে পড়ে গেছে এদিকে আসবার সময়।ওদেরকে তো জানানো পসিবল না স্যার।”
হিয়া দেখছে আর রাগে ফুঁসছে।এই নষ্ট পুরুষের এখানেও নষ্টামি করতে হবে!হিয়া ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,”সব জায়গায় মেয়েবাজি করতে হয়।নষ্ট পুরুষ একটা।”
রুদ্র যখন শুনল জেসির ব্লুটুথ নেই তখন বুঝলো তাকেই জীবনের ঝুঁকি নিতে হবে।এই মেয়ে যে এমন কান্ড ঘটাবে বুঝতে পারেনি।রাগ বাড়লো রুদ্রের।জেসি অপরাধীর মত কান ধরে বলে,”সরি স্যার।”
হিয়া চোখ বড়বড় করে বলে,”আবার কান ধরে!ঢং।”
মালিনী কিছু বুঝতে পারছে না।হিয়া এমন করছে কেন?তাই হিয়ার দিকে ফিরে বলে,”তোর কি হলো?”
“কিছু না মা।ওদিকে তাকাও তোমার ভাইকে দেখো।”
রুদ্র বের হতে নেয় হিয়া দেখেই হাত লম্বা করে। ভয়ে তার বুক কেঁপে ওঠে।কিন্তু রুদ্র এক পা যেই বার করে জেসি আটকে নেয়।রুদ্রের হাত ধরে বলে,”রিস্ক নিবেন না স্যার।ওটা ক্রস ফায়ার।”
হিয়া কাদো কাদো মুখ করে দেখছে।মায়া এবার দেখলো সবার দিকে।হাতে থাকা ফোন দিয়ে রাজকে ম্যাসেজ দেয়,”টেবিলের নিচে মেজো বাবা আছেন।রুদ্রকে বলুন ওনাকে ম্যাসেজ দিতে।তাহলেই কাজটা সহজ হবে।”
রাজ ম্যাসেজ দেখালো রুদ্রকে।রুদ্র ঠিক তাই করে।আহান সরদারকে ম্যাসেজ দিয়ে জানায়।আহান সরদার যেই সবাইকে জানান সবাই একশন নিতে যাবে ওমনি বিভান খানের পিছন থেকে তাকে কেউ গুলি চালালো।বিভান খানের হাত থেমে যায়। ঘাড় কাত করে পড়ে যেতে নিলেও টেবিলে ভরকরে পিছনে ঘুরে দেখেন জারা দাড়িয়ে আছে।মুখে হাসি ফোটালেন বিভান খান।জারা গুলি করেই যাচ্ছে। বিভান খানের বুক বরাবর গুলি করা হয়।জারা কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে বলে,”আমার বাবাকে খুন করার অপরাধ ও আমার মাকে ধর্ষণ করে খুন করার অপরাধ হিসেবে আপনি সামান্য শাস্তি পেলেন।”
বিভান খান মাটিতে পড়ে যায়।বেরিয়ে আসে একেক করে সবাই। বিভান খানকে দয়া দেখানোর এখানে কেউই নেই। সবাই তার নির্মম অবস্থা দেখে চুপ করে আছে।নিজের বোনটাও শান্তি পাচ্ছে ভাইয়ের মৃত্যুতে। বিভান খানের কাছে এসে মালিনী বলে,”কর্মফল এমন পেয়েছো যে আজ তোমার বিদায়বেলায় কারো মনে তোমার জন্য হাহাকার নেই।তোমার বিদায় দেখে সবাই শান্তি পাচ্ছে ভাই।নিজের পরিচয় এমন করেছো যে কেউই তোমার শেষ যাত্রায় এসে একটু কান্না করলো না।এই জীবনের মূল্য কোথায়?”
বলেই উঠে চলে আসে মাহমুদ সরদারের পাশে। বিভান সরদারের নিশ্বাস চলছে।জারা এগিয়ে এসে রুদ্র ও জেসির সামনে দাঁড়ায়।সবারদিকে তাকিয়ে বলে,”আমাকে আদালতে নিলেও আমি আপত্তি করবো না।”
রুদ্র জেসিকে ইশারা করে। জেসি ওর লোকেদের জানায়,”এই কেসকে এমনভাবে সাজাও যেনো মিসেস জারার কোনো অন্যায় নেই।”
“ওকে ম্যাম।”
হিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকালো।তারমানে জেসি কোনো অফিসার!মনে মনে বলে,”বাব্বা!নষ্ট পুরুষ তাহলে একটা অফিসারের সাথে ডেটিং করে।তাতে আমার কি?আমি ওর থেকেও ভালো কাউকে জুটাবো।অনেক হয়েছে নিজেকে একা রেখে শাস্তি দেওয়া।আমি এবার উল্টো নিজের সুখ দেখব।”
রুবি ভিতরে এসে বলে,”ভিডিও করেছি আমি।এগুলো এডিট করে পাঠিয়ে দিবো।”
সবাই একেকজনের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে নেয়।রুদ্র যেই হিয়ার দিকে চোখ রাখে হিয়া মুখ ভেংচি দিয়ে মায়ার কাছে এসে বলে,”শেষমেষ ভাইয়ার মায়াবতীর ইচ্ছা পূরণ হলো।এবার দ্রুত চলো আমার ভাগ্নের কাছে যাবো তো।”
যে যার মত কথা বলছিল।মোহন সরদার চেয়ে আছেন মায়ার দিকে।তার বাবার ইচ্ছা অনুসারে মায়ারাজের মিলন হয়েছে।সবাই সবার স্থান থেকে ঠিক ছিল শুধু তিনিই ভুল ছিলেন।আজও মনে আছে মায়া মানে তার মেয়ে মোহনার আর্তনাদ।নিজেকে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রাখলেন এক জায়গায়।এদিকে বিভান খানকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।নিশ্বাস আছে এখনও তার।বিভান খান এবার সুযোগ বুঝে একজনের পকেট থেকে রিভলবার নিয়ে তাক করে মায়ার দিকে।মায়ার উদ্দেশে হাঁফিয়ে বলেন,”আমার জীবনের বড় শত্রু তুই। তুই আসার পর আমার রাস্তার কাটা বেড়েছে।এর আগে কেউ পারেনি আমার বরবাদ করতে।আজকে আমি শেষ হলেও তোকে শেষ হতে হবে।”
বলেই যেই ট্রিগার চাপ দেয় ওমনি রাজ আসতে নেয় মায়ার সামনে কিন্তু মায়া রাজকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।এর মধ্যেই মোহন সরদার দ্রুত এসে দাঁড়ালেন মায়ার সামনে।ঠিক তখনই শাহানা পারভীনকে হুইল চেয়ারে করে আনে আয়রা।আদ্র একবার জানিয়েছিল বিভান খানের খেল খতম।শাহানা পারভীনকে নিয়ে এজন্যই আসে।শাহানা পারভীন আদো আদো কণ্ঠে জানায় সে এখানে আসবে।নাহলে অস্থির হয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।নীরব পরিবেশে হুইল চেয়ারের শব্দ পেয়ে সেদিকে চোখ রাখে মায়া।মোহন সরদার নিজেও আহত অবস্থায় ভাঙ্গা কাঠের দরজার দিকে চোখ রাখেন।নিজের প্রথম বউকে দেখে তিনি নিজের দিকে একবার তাকান।শাহানা পারভীন সেদিন হাঁফাতে হাঁফাতে বলেছিলেন,”সন্তানের দিকে তাকিয়ে সংসার করি মোহন।বিয়ে যখন করেছো এটাকে ধরে রাখতে হয়।আমার তো দোষ নেই।তুমিই তো নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করেছিলে।এখন আমাকে ছেড়ে দিতে চাও কেন?মেয়েদের নিয়ে আমি কোথায় যাব?”
এত অনুরোধের পরও মানতে নারাজ ছিলেন।শেষদিন শাহানা পারভীন চ্যালেঞ্জ করেছিলেন,”আজ তুমি যাদের জন্য আমাকে অত্যাচার করেছো ওরাই তোমার ধ্বংসের কারণ হবে মোহন।তোমার বংশ রক্ষার্থে যে ছেলেকে নিয়ে তুমি অহংকার করছো ওই তোমার বংশের মর্যাদা ডুবিয়ে দিবে।তোমার এই বংশ ধরে রাখার যে খনি তাকে তুমি হারালে। পস্তাবে তুমি খুব বাজেভাবে পস্তাবে।হাহাকার হবে তোমার মধ্যে।এই মেয়ের জন্যই হাহাকার হবে।ছেলেরাই বংশের দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে যেতে পারেনা মেয়েরাও পারে।এটা প্রমাণ করবে আমার মেয়ে।”
মোহন সরদার এখন বলতে চান,”তুমি ঠিক ছিলে শাহানা।আমার জীবনের দুটো অহংকার।দুটোই আমাকে চুরমার করে দিলো।আমি চেয়েছিলাম সুন্দরী বউ নিয়েছিলাম সে আমাকে ধ্বংস করে দেয়। আমি চেয়েছিলাম ছেলে সন্তান। আর দুটো ভাইয়ের মত আমারও ছেলে হয়ে আমার হাত ধরুক।পূরণ হয়েছিল ভেবেছিলাম কিন্তু নিয়তির খেলা ভিন্ন ছিলো।আমাদের মেয়েটাও আমাকে প্রতি পদে হারিয়ে দিতো।আমি ওর চোখে আমার প্রতি বিষাক্ত এক রূপ দেখতে পারতাম।আমি বুঝতে পারছি আমি কতবড় অন্যায় করেছি।আমার পাপ আমাকে ধ্বংস করে দিল।”
মাহমুদ সরদার ভাইয়ের কষ্ট দেখে এগিয়ে এলেন।জেসি লাথি দিয়ে বিভান খানের হাত থেকে রিভলবার সরিয়ে দিলো।অতঃপর বিভান খানের বুক বরাবর লাথি দিয়ে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।ক্ষত স্থানে জোরে লাথি লেগে এবার বিভান খান পুরোই নিস্তেজ।তার দিকে কারো নজর নেই।নজর শুধু মোহন সরদারের দিকে।শাহানা পারভীনের হুইল চেয়ার এসে থামে মোহন সরদারের সামনে।মাহমুদ সরদার কান্না করে ডাক দেন,”ভাই?কথা বল ভাই।”
মোহন সরদার চেয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।মায়া ও শাহানা পারভীনের দিকে।মায়া হতভম্ব হয়েছিল কিন্তু মাকে দেখে পুরোনো সব মনে করে।পিছু ফিরে রাজের উদ্দেশে বলে,”আমি হাসপাতালে যাচ্ছি মন্ত্রী মশাই।”
মোহন সরদারের চোখ গড়িয়ে পানি পড়ছে।শাহানা পারভীন মাথা কাত হয়ে আছেন।ঠোঁটে হাসি নেই কিন্তু কিছু একটার ছাপ তো আছেই।চোখ তার স্থির মোহন সরদারের দিকে।মাহমুদ সরদার কান্না করছেন দেখে সিয়া ও হিয়া এগিয়ে আসে।বাবাকে ধরে রাখে কিন্তু ভাই যতই অন্যায় করুক ভাইয়ের মৃত্যু সহ্য করার ক্ষমতা যে তার নেই।একই মায়ের পেটের ভাই।মাহমুদ সরদার যেমনই করুক না কেন সে তো তার ভাইকে ভালোবাসেন।পারছেন না পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে। এম্বুলেন্সের শব্দ আসছে।বাইরে থেকে মায়া সেই শব্দ পেলো। এম্বুলেন্স এর দিকে চোখ রেখে অজান্তেই চোখ থেকে দুফোঁটা পানি ফেলল।বাইরে আসার মূল কারণ এটাই।তার চোখে পানি জমেছে। লোকে জানে মায়া তার বাবাকে কতটা ঘৃণা করে কিন্তু মায়া কি আসলেই বাবার মৃত্যু দেখার মত ঘৃণাটা করে?উহু। আর সবার লাশ দেখলেও একজন বাবার লাশ দেখা সম্ভব না সন্তানের পক্ষে।সোজা রাস্তায় বিদ্ধস্ত হয়ে শাড়ির আঁচল ধরে হাঁটছে।কল্পনা করে শৈশবের প্রথম হাসিখুশি মুহূর্ত।মোহন সরদার বাড়িতে এসে মায়াকে কোলে নিতো।
মায়া ফোকলা দাঁতে হাসত।খাবেনা বলে মায়ের কাছ থেকে ছুটে এসে বাবার কোলে আশ্রয় নিতো।বাবা বাসায় আসলেই মায়া আগে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলতো।হাত পাতলেই মোহন সরদার তাকে চকলেট দিয়ে খুশি করতো।সেগুলো কি ভোলা যায়?রাস্তার এক কোণায় দাঁড়িয়ে পড়ল।মাথা চিনচিন ব্যথা করছে। হঠাৎই হাঁটুগেড়ে বসে দিলো চিৎকার।এই চিৎকারে যেনো গাছের মধ্যে বাসা বেঁধে বাস করা একঝাঁক পাখিগুলো ঘুম থেকে উঠে উড়তে থাকে এদিক ওদিক।মায়া এখনও কান্না করছে।চোখের পানি গরগর করে পড়ছে চোখ থেকে।কেউ দেখতে পাচ্ছে না কিন্তু এই জায়গাটা তার কান্নার সাক্ষী।
মায়া কান্নামাখা কণ্ঠে বলতে থাকে,”আমার এক সময় বাবার দরকার ছিল,যে রাতে এসে বলবে ভয় পাস না মা।আমি আছি তো তোর পাশে।ভাঙা স্বপ্ন যখন চোখে জল আনে,তখন শক্ত একটা বুক লাগত।কিন্তু ভাগ্য আমার হারিয়ে দিল।বাবা থেকেও আমি বাবাহিন এক পাথর মানবী।বাবা তো মাকে ভালোবাসতো না তাহলে কেন আমাকে জন্ম দিয়েও আমাকে দূর করে দিলো।আমি তো তারই সন্তান তার রক্ত বইছে আমার শরীরে তবুও কেন আমাকে নিয়ে একবারও ভাবলো না?মা বাবার বিচ্ছেদে কেনো সন্তানের জীবনটা পাল্টে যায়?”
মায়ার এই কথাগুলোর উত্তর নেই।এগুলো যে মানুষের মানসিক সমস্যার কারণে ঘটতে থাকে।কতশত পরিবার আজ বিচ্ছেদের রূপ নেয়।এই বিচ্ছেদের কারণেই ভুগছে তাদের সন্তান।সেই সন্তান বড় হয়ে তাদেরকেই ঘৃণা করে।কারণ সন্তানদের এই বিষাক্ত জীবনের কারণ বাবা মাই হয়ে থাকে।এটা কেউ মানতে চায়না কিন্তু এটাই বাস্তব।বাস্তবকে এড়িয়ে সবাই নিজ স্বার্থ দেখবে।এটাই ধরণীর খেলা।
কেটে গেলো চার সপ্তাহ যার গণনায় হিসাব করে পুরো একমাস।মোহন সরদার আর নেই সাথে বিভান খান।মেহরাজ দুদিন হলো সরদার মহলে এসেছে।আজকে তাদের আকীকা।মেহরাজ ও প্রলয়ের।পিয়াশ এখন সরদার মহলে থাকে।মিলি সবকিছু দেখেছে।এখন সেও এক ঘরে নিজেকে আটকে রাখে।বাইরে যায়না বন্ধু বান্ধবের সম্মুখীন হয়না।লজ্জা পায় সে।তারেকের সাথেও যোগাযোগ করেনা আর।নিজেকে যত পারে মুখ লুকিয়ে রাখে।বাবা মায়ের নোংরামিতে নিজের বদনাম বাড়ল।এগুলো সময় থাকতে আমরা বুঝব না।আজ আমরা একাকীত্বের জোরে লালসায় ভুগবো পরবর্তীতে আমাদের ভবিষ্যত সন্তান এসবের জন্য ভোগ করবে।দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ আসছে।মিলি চোখ তুলে তাকালো।ঘরজুড়ে অন্ধকার।বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলতেই দেখলো মায়া দাড়িয়ে।অনুমতি ব্যতীত ঘরে ঢুকে চারপাশ দেখলো।মেহরাজ কোলে আছে।মায়া কোনো কথা না বলে মেহরাজকে মিলির কোলে দিয়ে বলে,”আমার ওকে নিতে কষ্ট হয়।তুমি ওর দেখাশোনা করবে।সবাই ব্যস্ত নিজ নিজ কাজে।তুমি তো মনে হয় পরীক্ষাটাও দিবেনা এবার।তাহলে মেহরাজকে দেখো নাহয়।”
মিলি হাবলার মত চেয়ে আছে।মেহরাজ কান্না করেনা শুধু তাকিয়ে আছে গুটি গুটি পা হাত
দুটো নাড়িয়ে গালের কাছে আনছে।মুখ থেকে লালা বের হয়।মিলি নীরবে রাজি হলো।মায়া ছোট করে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,”ওকে রেডি করে দিও।আর হ্যাঁ তোমার জন্যও একটা শাড়ি আনা আছে।ওটা পরে নিচে আসবে।”
“আচ্ছা।”
মায়া চলে গেলো ঘর থেকে।নিচে নামতেই দেখতে পায় তারেককে।তারেক হাতে কাগজ কলম নিয়ে ডেকরেটরদের সাথে কথা বলছে।মায়াকে দেখে এগিয়ে এসে হিসাব দিতে গেলে মায়া বলে,”মিলিকে ভালোবাসো?”
তারেক থমকে গেলো।মায়া ভ্রু নাচিয়ে বলে,”উত্তর দেও।”
“ম্যাম!”
“ভালোবাসলে আজকে সাহস দেখিয়ে প্রোপোজ করে বিয়ে করবে।না বাসলে আমাকে জানিয়ে দিবে আমি ওর জন্য ভালো পরিবার থেকে পাত্র দেখবো।তোমার সময় খুব কম।আমার ননদকে কষ্টে থাকতে দিতে পারিনা।এই ঝড় ঝামেলায় তার জীবনটাই জীবিত থেকেও মাটি।তাও আমার মাধ্যমে। আমিই ওর সুখ ফিরিয়ে দিতে চাই।”
বলেই মায়া হাটা দিল।মায়া চলে যাওয়ার পর রাজ এসে তারেকের কাঁধে হাত রেখে বলে,”আমার মায়াবতী এমনই।কোনকিছু সুন্দরকরে সাজিয়ে বলতে পারেনা।সোজাসুজি সংক্ষেপে বলে দিবে।”
“আমি জানি স্যার। ম্যামকে আমি বুঝি বলেই রেসপেক্ট করি।”
“মা বাবাকে এনে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দেও।বেশি দেরি করলে কিন্তু আবার হারাতেও পারো।মনে রেখো এটা কিন্তু আমার মায়াবতীর ইচ্ছা।পূরণ করতে কিন্তু আমিও সাথে আছি।”
বলেই চলে যায় নিজের ঘরে।ঘরে বসে অপেক্ষা করছে মায়ার জন্য।মায়া এসে রাজকে এখনো গোসল করতে না দেখে বলে,”আপনি শাওয়ার নেননি কেন?দেরি হয়ে যাচ্ছে।লোকজন আসছে তো।”
“আই নিড হট শাওয়ার।”
“গিজার অন করে দিচ্ছি।”
“নো,আমি হট শাওয়ার চাই তাও বাথরুম বিলাস করে।”
“হাতে সময় নেই মন্ত্রী মশাই।”
রাজ ঘড়ি দেখে বলে,”এখনও দেড়ঘণ্টা সময়।আমি আরাম করে বাথরুম বিলাস করতে পারব চলো।”
“আমাদের ছেলের আকীকা।”
“চলো এখন আরেকবার বাথরুম বিলাস করি যেনো পরেরবার আরো একটা আকীকা দেওয়া হয়।”
“মন্ত্রী মশাই!”
“কোনো কথা না মায়াবতী।এখন শুধু আমাদের বাথরুম বিলাস হবে।”
বলেই মায়াকে নিয়ে গেলো বাথরুমে।রাজের লাখ টাকার বাথটাবের মাঝে নিজের সুখ খুঁজে নিতে।
একেক পর এক কল করে যাচ্ছে হিয়া।ওপর পাশের ব্যাক্তির কোনো খোঁজ নেই।কিছুদিন হলো ফেসবুকে একটা হ্যান্ডসাম ছেলের সাথে টাইমপাস করছে।ছেলেটা ভালো দেখতে আচরণেও তাই।একবারই সাক্ষাৎ হয় দুজনের।মাহমুদ সরদারকে জানিয়েছে এই ব্যাপারে।আজকে আসতে বলেছেন মাহমুদ সরদার।ছেলেটি আসবে জানিয়েছে।এখন সময় পার হয় কিন্তু ছেলেটার খবর নেই।দূরে দাঁড়িয়ে হাত মুঠ করে দেখে যাচ্ছে রুদ্র।হিয়ার আপ্রাণ চেষ্টা দেখে খানিক পর এগিয়ে এসে বলে,”ওপর প্রান্তের তোর আশিককে পাচ্ছিস না হিয়াপাখি?”
হিয়ার পিছনে ঘেষে কথা বলাতে রুদ্রের মুখের নিশ্বাস পিঠে এসে বাড়ি খায়।আজকে হিয়া শাড়ি পরেছে।আহামরি ভারী না মায়ার ফ্যাশন হাউজ থেকে হালকা সিল্কের শাড়ি। পিঠ কিছুটা দেখা যাচ্ছে।সেখানেই বাতাস পেলো।পিছনে ঘুরে চশমা ঠিক করে রাগ দেখিয়ে বলে,”আমার আশিক না আমার হবু বর।”
“কোথায় সে?”
“জাহান্নামে,আপনার কোনো সমস্যা?”
“না,জাহান্নামে থাকলে আমার ভালই হবে।জান্নাতের দিকে যেনো নজর না দেয় তাহলে আবারও জাহান্নামে পাঠিয়ে দিবো।”
“কি বুঝাতে চাইছেন?”
“ধরেছে।”
“কি!”
“ওই দেখ কল ধরেছে।”
হিয়া মোবাইল কানে নিয়ে হেলো বলতেই ওপাশ থেকে জানায়,”আমি খুব অসুস্থ।আমার হাত পা সব জায়গার হার ভেঙ্গে গেছে।আমি হাটতে পারছি না।”
“তোমার এই অবস্থা কিভাবে হলো?”
“গাড়ি করে আনন্দের সাথে বাবা মাকে নিয়ে আসছিলাম।হুট করে দুটো গাড়ি সামনে এসে আমার উপর বিনা কারণে উদুম কেলানি দিতে থাকে।জানো তো আমার আর চাকরিতে যাওয়া হচ্ছে না।এজন্য ওরাই আমাকে চাকরির ব্যবস্থা করে দিবে।এমনকি ফ্রিতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিলো।এ কেমন অদ্ভুত ডাকাত!নিজেরা মেরে নিজেরা সার্ভিস দেয়।”
হিয়া বলে,”তাহলে আমি আসছি।তুমি কোন হাসপাতালে আছো?”
“না না তুমি এসো না।তুমি আমার জীবনে না থাকলে ডাকাত দল আরো বেশি সার্ভিস দিবে।তুমি থাকলে আমাকে চাকরি তো হারাতে হবেই কবে জানি জীবনটাও হারিয়ে যায়।ডাকাতের নজর আমার দিকে।তুমি আর নজর দিও না।”
হিয়া রাগে গজগজ করে বলে,”তুমি বলেছিলে জমের দুয়ারে গেলেও তুমি আমার হাত ছাড়বে না।সামান্য ডাকাত আসাতেই ছেড়ে দিচ্ছ?”
“ডাকাত তো জমকে ছাড়িয়ে আমাকে সোজা কবরস্থানে পাঠিয়ে দিতে চায়।জমের দুয়ারে গেলেও বুঝেশুনে যেতে পারতাম।এটা তো বিনা টিকিটে সার্ভিস দেওয়া ডাকাত।এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনা।”
একবার রুদ্রের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,”কাপুরুষ!রাখ তোর ফোন।”
হিয়া ফোন রাখতেই রুদ্রের শিষ বাজিয়ে বলে,”এটাও গেলো?”
“একটা গেলে আবার আসবে।আমি মন্ত্রীর বোন।আমার জন্য ছেলেদের লাইন লেগে থাকে।”
“আমি থাকতে লাইন!কোথায় দেখা তো মন্ত্রীর বোনের সেই লাইন?”
“আপনি থাকতে মানে?কি করেছেন আপনি?”
“কিছুই করিনি।আমি তো জাস্ট বলছিলাম আর কি।”
মেহরাজকে নিয়ে নিচে নামে মিলি।রুদ্র উপরে তাকাতেই হিয়াকে ইশারা করে বলে,”আজেবাজে দিকে মন না দিয়ে এই বোনটাকে একটু সময় দে।অন্তত হ্যাপি ফ্যামিলি হতে পারব আমরা।”
হিয়া হেঁটে এগিয়ে গেলো মিলির কাছে।মিলিকে দেখে বলে,”তোমাকে তো পুরো টেডি বিয়ার এর মত লাগছে মিলি আপু।”
তারেক তাকালো মিলির দিকে।আসলেই শাড়িতে গৃহবধূর মত লাগছে।মিলির দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।মিলি যেই পাশে তাকালো চোখ সরিয়ে নিলো তারেক। মিলি অপ্রস্তুত হয়ে মেহেরাজকে নিয়ে বলে,”ওকে একটু কোলে নে।আমি প্রলয়কে দেখে আসছি।”
হিয়া নিলো মেহরাজকে।রুদ্র অবাক হলো। মেহরাজ হিয়ার কোলে এসে রুদ্রকে চোখ পিটপিট করে কিছু ইঙ্গিত করছে যেনো।গাল হা করে হাসছে পা লাফিয়ে।হাতদুটো হিয়ার থুতনি ধরে আছে।এতক্ষণ তো এমন করছিল না মেহরাজ।হিয়ার কোলে এসে এমন করছে কেন?তাও আবার রুদ্রের দিকে তাকিয়ে!
সবাই উপস্থিত মেহরাজ সরদার ও প্রলয় সরদারের আকীকার দাওয়াত খেতে।এখন রাত নয়টা।আকীকার অনুষ্ঠান শেষ।অতিথিরা সবাই চলে গেছে।এখন শুধু সরদার মহলের সবাই আর বাইরের বলতে বীর ও তারেক আছে।বীরের দিকে তাকিয়ে রাজ বলে,”তোর মন খারাপ রাখার দরকার কি তাই তো বুঝতে পারছি না।যেটা হয়েছে ওটাতে মামার দোষ ছিল তোর না।তোর বউকে ফেরত আন।”
“হুট করে বললেই হয়না রাজ।পরিস্থিতি এমন যে এখন আমি জানেমানকে ফেস করতে পারছি না।”
“আর সে তোমাকে ফেস করতে লজ্জা পাচ্ছে।কারণ তোমার বাবাকে খুন করেছে তাই।”
বীর চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে মায়া এসেছে মেহরাজকে নিয়ে।বীর কোল পাতলো। মেহরাজকে বীরের কোলে দেওয়া হলো।অতঃপর মায়া বলে,”জারাকে আন্টি মেনে নিবে কিনা এটা নিয়েই জারা বিষন্ন।ওর কাছে মনে হয় তুমি ওকে মানবে না ভাই।”
“তোকে ও নিজে থেকে বলেছে?”
মায়া মাথাটা নাড়ালো।যার অর্থ হ্যাঁ।বীর ভ্রুকুটি করে বলে,”আমি তো ওকে বলেছি পরিস্থিতি যেমনই হোক আমাকে জানাতে।”
“ভাই এটা তোমাদের নিজস্ব বাবা মায়ের ব্যাপার ছিল।জারা তোমাকে প্রথমে ব্যবহার করতে চেয়েছিল কিন্তু ও আসলে তোমাকে ভালোবাসে।তুমি মনে করো ও শুধু প্রতিশোধ নিয়েছে কিন্তু ও তোমাকে ভালোও বেসেছে।ভালোবাসা না থাকলে এই প্রতিশোধ এতদূর এগোতো না।বরং এই কাজগুলো আমরা অনেক আগেই নিজেদের মাধ্যমে শেষ করে দিতাম।আমাদের উদ্দেশ্য ছিল প্রতিশোধ। নেওয়া কিন্তু জারা যখন জানতে পারে তোমার এই দেশের প্রতি কিছু করার আগ্রহ আছে তখন আগে ও তোমার কাজটাকে মূল্য দিয়েছে।জারার প্রতিশোধ নেওয়াটা একটা নেশা ছিল কিন্তু জারার ভালোবাসা তার কাছে ব্যর্থ জীবনের এক অংশ।আমার আর মন্ত্রী মশাইয়ের জীবনটাও এতটা টক্সিক না যতটা তোমাদের জীবনে।আমাদের বাবা মা নিয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ নেই কিন্তু তোমাদের আছে।এই সবকিছু ভেবেই জারা দূরে সরে গেছে।ও চায়না তুমি বা আন্টি জারাকে নিয়ে কম্প্রোমাইজ করো।”
রাজিয়া এগিয়ে এসে বলেন,”আমি তো চাইনি মেয়েটা এভাবে আমার ছেলেকে দূরে দূরে রাখুক।আমি কোথায় কম্প্রোমাইজ করলাম?আমার ছেলে যদি সুখে থাকে তাহলে আমি বাঁধা দেওয়ার কেউ না।আমার ভাগ্য খারাপ তাই আমার স্বামী একটা কাপুরুষ বের হয়।এরজন্য মেয়েটাকে দোষ দেওয়া যায়না।অবশ্যই সে তার জায়গায় ঠিক।আমার বাবা মাকে এভাবে কেউ নির্যাতন করলে আমি তাকেও ছেড়ে দিতাম না।এখানে তো লোকটা নিজের বাবা বোন এদেরকেও শেষ করে দেয়।ওকে তো মেরে ফেলাই উচিত।আমি কেন কষ্ট পাবো?”
মায়া মৃদু হেসে বলে,”তাহলে আপনার ছেলেকে বলুন তার জানেমানের কাছে যেতে।”
“কোথায় ও?”
“নিজের বাসায় আছে জারা।গেলেই দেখতে পাবে।”
মেহরাজকে নিয়ে উঠে দাড়ালো বীর।হাতের কাছে রুদ্রকে পেয়েছে তাই রুদ্রের কোলে দিলো।তারপর সোজা চলে গেলো।এদিকে মেহরাজ রুদ্রের মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।রুদ্র নিজেও হাসে কিন্তু আচমকা হিসু করে দিলো রুদ্রের কোলে।প্যাম্পাস পরানো নেই মেহরাজের।একটু আগেই মায়া প্যাম্পাস খুলে দেয়।বাচ্চাদের অতিরিক্ত প্যাম্পাস পরানো উচিত না তাই।এদিকে মেহরাজ এই আকাম করে দিবে এটাও ভাবতে পারেনি কেউ।গন্ধে রুদ্র নাকমুখ কুঁচকে বলে,”ব্রো তোমার ছেলে আমার কোলে হিসু করে দিয়েছে।”
হিয়া মিটমিট হাসলো।বিড়বিড় করে বলে,”ঠিক কাজ করেছিস।”
মেহরাজ কান্না শুরু করে দেয়।ভেজা গায়ে বাচ্চারা থাকতে পারেনা।মেহরাজ হিসু দেবার পরেই কান্না করে দেয়।এদিকে মেহরাজ কান্না করলে প্রলয় নিজেও কান্না শুরু করে।মায়া দ্রুত এসে মেহরাজকে নিয়ে জামা পাল্টে দেয়।প্রলয়কে সামলাচ্ছে মৌ।মিলি এসে প্রলয়ের কাছে দাঁড়াতেই তারেকের মা মানে মায়ার হাসি মা উপস্থিত হয়।মায়া পোশাক পাল্টিয়ে নিচে এসেই দেখলো উনি ঢুকছেন।মায়া মৃদু হেসে রাজকে ইশারা করে।রাজ এগিয়ে গিয়ে স্বাগতম জানিয়ে বলে,”আপনি তো দেরি করে ফেললেন।”
তারপর সার্ভেন্টদের ইশারা করে নাস্তা দেওয়ার জন্য।হাসি মা এসে মায়ার কাছে দাঁড়িয়ে মেহরাজকে দেখে বলে,”মাশাআল্লাহ বাচ্চাটা।”
“তুমি কেমন আছো হাসি মা?”
“আমি ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?”
“এই তো ভালো।নেও তোমার নাতিকে কোলে নেও আর দেখো আমার মাও তোমার সাথে দেখা করবে বলে অপেক্ষা করছে।”
শাহানা পারভীনের দিকে ইশারা করে মায়।হুইল চেয়ার করে এসেছেন শাহানা পারভীন।কথা বলতে পারেন এখন।সবকিছু বোঝেন কিন্তু হাঁটতে পারেন না।প্যারালাইজড আছেন তিনি।হাসি মা সালাম দিতেই উত্তর দিলো শাহানা পারভীন।তারপর বলেন,”আমি কিন্তু কনের মা হই।তাই আমাকে আপনার বেয়াইন ভাববেন।”
মিলি নরম চাহনি দিয়ে দেখছে।চোখটা তার তারেকের দিকে।হাসি মা ম্লান হেসে বলেন,”আমার ছেলেটার সবকিছু জেনেও যে আপনরা আপনাদের মেয়ের জন্য নিতে রাজি এটাই তো সৌভাগ্য।”
মিলি একবার করে সবার দিকে তাকালো।হাসি মা আবারও বলে,”তাছাড়া আপনাদের মেয়েটা আমার ছেলেকে এমন অতিষ্ঠ করেছে যে এখন সে ঘুমের মধ্যেই বলে আজকে কোথায় ঘুরতে যাবেন?ম্যামের অনুমতি নিতে হবে।এভাবে লাফালে পড়ে যাবেন মিলি।আমাকেও তো দেখতে হবে কে সেই মিলি?”
মিলি চমকে উঠলো।মালিনী খান এসে মিলিকে নিয়ে দাঁড়ালেন হাসি মায়ের সামনে।হাসি মা বুঝে নেয় এটাই তার ছেলের মন জয় করা মেয়ে।হাসি মা মিলির থুতনি ধরে বলে,”এই তাহলে সেই মেয়ে যে আমার ছেলেকে ব্ল্যাক ডায়মন্ড বলে মাথা খেয়েছে!”
সবাই হেসে দেয়।লজ্জা পায় মিলি।তারেকের দিকে আবারও চোখ রাখলো।তারেক চোখ নিচে রেখে নিজেও হাসে।হাসি মা প্রস্তাব দিলেন,”আমার বউমা হয়ে থাকতে আপত্তি আছে নাকি?”
মিলি মিশে গেলো মালিনী খানের মধ্যে।মাহমুদ সরদার হেসে দিয়ে বলেন,”আপত্তি করবে কেন?আমরা তো তার মনকে বুঝেই পদক্ষেপ নিয়েছি।এই দোটানা আর ভালো লাগেনা।ছেলে মেয়েরা মনখুলে আমাদের সামনে চলাফেরা করবে এটাই তো আমাদের ভালোলাগা।মিলি মায়ের সুখ এখন আমরা দেখবো।তার সুখ আপনার ছেলের মাঝেই।তাই আমরা ধুমধাম করে আয়োজন করতে চাই।”
মিলি বাঁধা দিয়ে বলে,”না বড় বাবা।”
ভ্রু কুঁচকে গেলো সবার।তারেক আতঙ্কের সাথে তাকালো।রাজ জিজ্ঞাসা করে,”কেন?”
“আমি কোনো অনুষ্ঠান করে বিয়ে করতে চাইনা।”
রাজ নিখুঁত দৃষ্টি দিয়ে দেখছে মিলিকে।এই মেয়ের কত পরিবর্তন।সব ওই বাবা মায়ের কর্মফল।রাজ বুঝতে পারে মিলি সমাজকে ভয় পাচ্ছে।সমাজের সম্মুখীন হতে মিলির বিবেকে বাঁধছে।তাই রাজ নিজেই জানায়,”বিয়েটা আনুষ্ঠানিকভাবেই হবে।ফাইভস্টার হোটেল বুক করা হবে।আমাদের সরদাররা কোনো কিছুতে কমতি রাখেনা।এবার শুধু মা বাবারা মিলে তারিখ ঘোষণা করে দিও।”
“কিন্তু ব্রো!”
হাত উঁচিয়ে মিলিকে থামালো রাজ,”তুমি যে সমাজকে ভয় পাও সেই সমাজ আমার ইশারায় চলে।তাই এতটা আতঙ্কে জীবন যাপন করার কোনো মানেই নেই।”
মিলির একপাশে মালিনী খান ছিল এখন মায়া এসে আরেকপাশে দাঁড়িয়ে বলে,”তোমার আমার জীবন একই রাস্তার দিকে এগিয়ে গেছে।কিন্তু আমাদের চলার রাস্তাটা ভিন্ন ছিলো।আমার জীবনে যেমন মন্ত্রী মশাই এসে সবকিছু সোজাসাপ্টা করে দেয় ঠিক তোমার ব্ল্যাক ডায়মন্ড তো আছেই তোমাকে আগলে নিতে।তোমার রাস্তাটা সোজাসাপ্টা করে দিতে।ভয় না মিলি মজবুত এক আত্মবিশ্বাস রাখো নিজের মধ্যে।সততার সাথে সম্মুখীন হতে শিখো।কেউ তোমাকে কষ্ট দিতে পারবে না।”
সিয়া আর হিয়া দুজনেও মন দিয়ে শুনছে।কথাগুলো সবার মনকে ছুঁয়ে নেয়।মাহমুদ সরদার এবার হিয়ার দিকে ফিরে বলেন,”তোমার হবু বর কোথায়?”
“জাহান্নামে।”
রাজ পাশ থেকে হেসে দিয়ে বলে,”তোমার নাতি তোমার হবু জামাইয়ের গায়ে হিসু করেছে তাই পাঞ্জাবি পাল্টাতে গেছে বাবা।”
“আমি আসলটার কথা বলছি না যেটাকে আমার মেয়ে আনতে চেয়েছিল ওটার কথা বলছি।”
“তোমার মনে হয় আমার মত মন্ত্রীর বোন হয়েও যার পিছনে একটা ছেলে ব্যতীত আর কোনো লাইন নেই,তার হয়ে কোনো পাত্রপক্ষ এই বাড়ি তো দূর এলাকার ত্রিসীমানায় আসবে?”
“ওটাকেও কি হাসপাতালে পাঠিয়েছ?”
“আমি নাকি!আমার খেয়ে কাজ নেই নিজের বউ রেখে অন্যের হবু বউ নিয়ে পড়ে থাকব।যার হবু বউ সেই পাঠিয়েছে হাসপাতালে।”
মাহমুদ সরদার এবার সামনের দিকে তাকিয়ে বিয়ের ডেট ঠিক করতে ব্যাস্ত।
নিজ ঘরে বসে আছে জারা।মুখটা জানালার দিকে।বিষন্ন মনে স্থির নয়নে।আচমকা জারার পিছনে থেকে কেউ তাকে আষ্টেপিষ্টে আঁকড়ে নেয়।জারার কানের লতিতে কামড়ে ধরে।জারা চোখ বন্ধ করে বলে,”হ্যান্ডসাম!”
জারাকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে জানালার গ্রিলে দুইহাত নিজের একহাতের মাঝে ধরে নেয় বীর।জারা কিছু বলতে নিবে তার আগেই জারার ঠোঁট আঁকড়ে নেয় নিজের ঠোঁট দিয়ে।জারার চোখ আবারও বন্ধ হয়ে গেল।বীর নিজের কাজ শেষ করে বলে,”বলেছিলাম না আমার থেকে পালানোর চেষ্টা করবে না,কেন পালালে?”
জারা চোখ মেলে কিন্তু ঠোঁটের পাতা দুটো বন্ধ করে রেখেছে।বীর হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,”উত্তর দেও।”
“আমার কিছু করার নেই যে।”
“কিছু করতে কে বলেছে?শুধু আমার সাথে থাকতে বলেছি তোমাকে।আমার থেকে দূরে যাওয়ার কল্পনা নেক্সট টাইম করলে তোমার ঠ্যাং আমি ভেঙ্গে রাখব।”
“খোড়া হয়ে যাবো তো!”
“এমন পালাই পালাই করতে থাকা বউয়ের থেকে ভালো খোড়া বউ করে নিজের কাছে রাখা।অন্তত পালাতে সাহস পেলেও পালাতে অক্ষম থাকবে।”
“মা মানবে না আমাদের।”
“মানবে।”
“তোমাকে বলেছে?”
“হুম।”
“হ্যান্ডসাম?”
“হুম।”
“I love you.”
“হুম।”
“উত্তর দিবে না?”
“না।”
“কেন?”
“কারণ আমি উত্তর দিবো না তাই।”
“ভালোবাসি জানাতে আপত্তি কোথায়?”
“সবাই তো ভালোবাসি বলে সংসার করে আমি নাহয় ভালোবাসি না বলেই সংসার করি।”
“আমাকে কষ্ট দিচ্ছ তুমি।”
গা ঝাড়া দিয়ে দূরে সরিয়ে বলে জারা।ঠোঁট প্রসারিত করে বীর জারার দিকে শীতল চাহনি দিয়ে দেখলো।জারা কাপছে চোখ থেকে পানি ঝরছে।জারার হাত ধরে হ্যাঁচকা টানে নিজের বুক বরাবর এনে জারার গলার কোণায় মুখ গুজে নিশ্বাস নেয়।বীরের একেক নিশ্বাস জারাকে উন্মাদ করে দিচ্ছে।হালকা কেঁপে উঠছে জারা।বীর মাথা উচু করে বলে,”কষ্টটা কি কমেছে মিসেস খান ওরফে আমার জানেমান?”
জারা উত্তর না দিয়ে সোজা বীরের ঠোঁট আঁকড়ে নেয়।আজ মিলন হলো বীর জারার।
পনেরো দিন পর আজ মিলি ও তারেকের বিয়ে।মিলির অনুরোধে ফাইভ স্টার বুক করেনি রাজ।বাসায় ধুমধাম করে বিয়ের ব্যবস্থা করা হলো।সকালে গায়ে হলুদ দিয়েই রাতে বিয়ে।অন্যান্য অনুষ্ঠান করবে না মিলি।পরিবারের সাথে নিজের মত সময় দিবে জানিয়েছে।অনুষ্ঠান করলে সবার ব্যস্ততা বাড়ে।বিয়ের আগে মিলি চায়না তার আশেপাশের সবাই ব্যস্ত থাকুক।যতটুকু সময় আছে তার কাছেই থাকুক।মিলির মনের অবস্থা এমন যে ও শুধু আড্ডা দেওয়ার মানুষ চায়।এই কয়েকদিন ধরে মায়া,মৌ,সিয়া ও হিয়া অনেক সময় দেয় মিলিকে।মিলির কষ্ট অনেক কমেছে।কিন্তু মনের মধ্যে কিছু তো জমা আছে।মা বাবাকে হারানোর কষ্টটা অপ্রকাশ্য।একাকিত্বে মনে ঠিকই আসে।
বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু।বরপক্ষ এসেছে মাত্র।বরপক্ষ বলতেই তো তারেক,হাসি মা,মায়া ও বীরের গার্ডগুলো।পরপর দুটো দোলনা রাখা।ওখানেই আছে সরদার বংশের দুই রত্ন।মেহরাজ সরদার আর প্রলয় সরদার।মাহমুদ সরদারের দুই রত্ন একে অপরের সাথে এই সময় থেকে মিলেমিশে আছে।দুইভাই একসাথে হাসে আবার একসাথে কান্না করে।তবে মেহরাজ কান্না করলে প্রলয় ঠোঁট উঁচিয়ে এগিয়ে এসে মাম দেয়।মেহরাজ কান্না না থামালেও প্রলয় এমন করবেই।এগুলো মাহমুদ সরদার ও মালিনী মিলে দুই নাতিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে অভ্যস্ত করেছে।ওদেরকে দেখে অনেকেই কানে কানে হেসে হেসে কথা বলছে।মিলি ও তারেককে দুই ঘরে রাখা।
ওদেরকে কবুল পড়ানোর পর একসাথে আনা হবে।তাই সবাই এখন একটু একটু করে প্রলয় ও মেহরাজকে দেখতে যায়।দুই ভাইয়ের ছোট্ট ছোট্ট শরীরে আজ ছোট্ট সাদা পাঞ্জাবি।কিন্তু দুজনেই থাকে শুইয়ে নাহলে কারো কোলে।বিয়ে শেষ হলে মিলিকে নিচে নিয়ে আসে সিয়া ও হিয়া।মিলিকে বউয়ের আসনে বসিয়ে দেয়।তারেককে বসানো হয় মিলির পাশেই বরের আসনে।দুজনের একসাথে বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছবি তোলা হচ্ছে।এরমধ্যে জানানো হয় কনের বাড়ির তরফ থেকে ড্যান্স পারফরমেন্স করতে আসবে রৌদ্রদ্বীপ রুদ্র।যেটা শুনে হিয়া মুখ ভেংচি দিয়ে পাশে তাকাতেই দেখে জেসি।আজকে মেয়েটা লেহেঙ্গা পরেছে।দেখতেও আকর্ষণীয়।নিজের মুখে হাত দিয়ে অনুভব করছে কোনকিছু কমতি আছে কিনা।কনুই দিয়ে সিয়াকে ঘুতা দিয়ে বলে,”আমার মুখে সব ঠিক আছে?”
“হ্যাঁ আছে তো।সুন্দর লাগছে তোকে।”
“বাব্বাহ!ভুটকি আজকে দেখছি আমার প্রশংসা করছে।”
“থাপড়ে গাল করে দিবো লাল।আমি এখন শুকিয়েছি দেখতে পাচ্ছিস না?”
“তোর বাবার সম্পত্তি পেয়েছিস আমার গালকে যে লাল করবি?”
“আমার বাবার সম্পত্তি না তো কি?বাবা তোকে পৃথিবীতে আনতে না চাইলে তুই আসলি কিভাবে?”
“মূর্খ ডাক্তার।”
“চুপ।”
“তুই চুপ।”
“সর তুই।তোর সাথে কথা বলার রুচি আমার নেই।”
“যা ভাগ এখান থেকে।রুদ্র ভাই ড্যান্স করবে দেখবো আমি।”
“তোর দেবর হয়।”
“তো!”
“তোর হবু জামাইয়ের দিকে চোখ রাখ।”
“তোর সমস্যা কি রে?”
“আমার সমস্যা তোর নজরে দোষ আছে দেখে।”
“যা ভাগ সামনে থেকে।নিজের শখের পুরুষ ড্যান্স করবে দেখে জেলাস!”
“জেলাস মাই ফুট!”
“দেখাই যাচ্ছে।”
হিয়া আরো কিছু বলতে নিবে এর মাঝেই হলরুম জুড়ে বাজতে থাকে,
“কবে আইবে আমার পালা রে?
কবে দিমু গলায় মালা রে?
………………………..
মনের যে নাই কোনো কাম ও বন্ধু..
মনের যে নাই কোনো কাম।
তোর পিঁড়িতে দিবানিশি,থাকে আমার মন উদাসী
প্রেমের জ্বালা বড়ই জ্বালা রে…
এই বুকের মাঝে আগুন জ্বলে,নেভে নারে জ্বলছে তারে
কবে দিমু গলায় মালা রে..
আরে!কবে কবে কবে আইবে পালা রে?
কবে দিমু গলায় মালা রে?
রুদ্র ড্যান্স করে ছুটে আসে হিয়ার পাশে।হিয়াকে উদ্দেশ্য করে গানের তালে ড্যান্স করে।হিয়া অবাক হয়ে দেখছে।অবশেষে ড্যান্স শেষ করে আচমকাই সবার সামনে একটা গোলাপ দিয়ে হাঁটুগেড়ে বসে রুদ্র বলে,”Will you marry me,Hiyapakhhi?”
হিয়ার যেনো সবকিছু অন্যরকম লাগছে।রুদ্র যে এমন কান্ড ঘটাবে বুঝতে পারেনি।আশেপাশের সবাই উৎসাহ দিয়ে বলে,”সে ইয়েস।”
হিয়া রুদ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।রুদ্রের ঠোঁটে হাসি।জারা উৎসাহ দিয়ে বলে,”আরে রুদ্রের হিয়াপাখি হ্যাঁ বলে দেও। কি সুন্দর করে ডাকছে হিয়াপাখি।”
হিয়া ঠোঁটে হাসি রেখে যেই হ্যাঁ বলতে নিবে ওমনি সামনে জেসিকে দেখে ফোন টিপতে টিপতে এদিকে আসছে।জেসির এদিকে কোনো মন নেই।সে তার মত নিজের হবু বরের সাথে ম্যাসেজ করছে কিন্তু হিয়ার মাঝে তো অন্যকিছু জানা ছিল।হিয়া চিৎকার দিয়ে জানায়,”না,আমি আপনাকে বিয়ে করব না।”
সিয়া এসে হিয়ার মাথায় চাপড় মেরে বলে,”বলদ!রুদ্র ভাই তোকে ভালোবাসে তুইও ভালোবাসিস রুদ্র ভাইকে।তাহলে বিয়ে করতে আপত্তি কোথায়?”
“তোর রুদ্র ভাই আমাকে ভালোবাসে?নষ্ট পুরুষ কাউকে ভালোবাসতে জানে?”
“জানে,তার হিয়াপাখিকে ভালোবাসতে জানে এবং তার জন্য ছটফট করতেও জানে।”
“ঘোড়ার ডিম জানে।”
আহান সরদার কিছু না বুঝে মাহমুদ সরদারের দিকে তাকালেন।মাহমুদ সরদার এসে রাজকে বলেন,”আহান অপমান হচ্ছে।এটা কিন্তু মেনে নেওয়া যায়না।”
রাজ একবার মাহমুদ সরদারের দিকে চেয়ে আবার এগিয়ে এসে হিয়াকে বলে,”তোর কি দেখে মনে হলো রুদ্র নষ্ট পুরুষ?”
হিয়া যে সকলের সামনে রাগ ক্ষোভ নিয়ে নিজের মনের কষ্ট ঝেরেছে এটা সে মাথায় রাখেনি।সবার দিকে চোখ রেখে আহান সরদারকে বলে,”আই এম সরি মেজো বাবা।তুমি আমার ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছো জানি কিন্তু আমি তোমার কাছে মাফ চাইছি।তোমাকে আঘাত করতে চাইনি।”
এতগুলো বছরে আহান সরদার হিয়াকে খুব ভালোভাবে চিনেছে।হিয়া খুবই শান্ত ভদ্র চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে।উপন্যাসে মগ্ন থাকা মেয়েটি খুব কম নিজের বুদ্ধিমত্তা প্রকাশ করে।হুট করেই যে নিজের ছেলেকে নষ্ট পুরুষ বলবে এমন মেয়ে হিয়া না।আবার নিজের ছেলের প্রতিও বিশ্বাস আছে।এখানে যে কাহিনী ভিন্ন অনুমান করতে পেরে হিয়ার মাথায় স্নেহের হাত রেখে বলে,”তোমার কেন মনে হলো আমার ছেলে তোমাকে ভালোবাসে না?”
হিয়া সরাসরি সবার সামনে বলে দেয়,”কারণ আমি দেখেছি উনি ওই অফিসারের সাথে ডেট করে।তাছাড়া….একটু কান পাতো।”
আহান সরদার ও বাকিরা ভ্রু কুঁচকে তাকায়।হিয়া বলে কান নিচে করো নিচে করো।আহান সরদার ঝুঁকে কান পাতলেন।সবাই অবাকের সাথে তাকালো।হিয়া কানেকানে বলে,”আমি যেখানেই যাই একেক মেয়ের সাথে তোমার ছেলেকে দেখি।শুধু ওই অফিসারকে ডেট করেনা আরো আছে।আজেবাজে জায়গায় যায় তোমার ছেলে।ওসব ছাইপাশ খায়।এমন ছেলেকে নষ্ট পুরুষ বলব না তো কি বলব?”
“আমাকে কেন আগে বলোনি এগুলো?এই ছোকরাকে আমি ঘর থেকে তেজ্য করে দিতাম।”
সবাই অবাক!রুদ্র উঠে দাড়িয়ে বলে,”আমি আবার কি করলাম?”
“নষ্টামি করে বেরাও বাইরে তুমি?নষ্ট পুরুষ হয়েছো দিনদিন।”
“কি!”
“একেকদিন একেক মেয়েদের সাথে বাইরে ঘোরো আবার এখন একটা ফুলের মত নিষ্পাপ মেয়ের জীবন নিয়ে খেলতে চাইছো?সাহস তো কম না।”
“আমার ভার্সিটিতেও যায় মেয়েদের সাথে গল্প করতে।”
আহান সরদার চোখ বড় বড় করে রুদ্রের দিকে ফিরে বলে,”ছিঃছিঃছিঃছিঃ ছিহ্।”
রুদ্র এবার মুখ খুলে,”আআরে বাবা কিচ্ছু বলার আগে জেনে তো নেও।আমি ইনভেস্টিগেশনের জন্য যাই।ওরা ক্রিমিনাল ছিলো।”
“দেখেছো মেজো বাবা তোমার ছেলে ক্রিমিনালদের সাথে ডেট করে!”
একটু থেমে হিয়া নিজ মুখে আওড়ায়,”ক্রিমিনাল!”
“হ্যাঁ ক্রিমিনাল।”
রাজ পাঁচফোড়ন দিতে বলে,”শেষমেষ ডেট করতে ক্রিমিনাল খুঁজে পেলি ভাই!মেয়ের কি অভাব ছিল?”
“ঘর পোড়ার মধ্যে আলু পোড়া দিওনা ব্রো।আসামি ধরতে এমন একটু করতেই হয়।”
“আমাকে তো বউ ছাড়া কোনো নারীর সাথে থাকতে হয়নি আসামি ধরতে।”
“তুমি তো ঘোষণা দিয়ে ঘরে বসে থাকো।তদারকী তো আমাকেই করতে হয়।যদি বাইরে না ঘুরতাম তাহলে তোমার আসামিদের বের করতাম কিভাবে?”
হিয়া সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আসলে কাহিনীটা কি?”
মায়া এগিয়ে এসে বলে হিয়াকে।হিয়া সব শুনে রুদ্রের দিকে এগিয়ে এসে দাঁড়ালো।রুদ্রের হাতের ফুলটা নিচের দিকে ঝুঁকে রাখা।সেই ফুল নিজ হাতে নিয়ে মাহমুদ সরদারের উদ্দেশ্যে বলে,”তোমার মেয়ের জা বানাতে আপত্তি আছ নাকি বাবা?”
“ঘুরিয়ে ফিরিয়ে না বলে সরাসরি বলেই দে রুদ্র ভাই আলাবু।মেরে দিলমে লাড্ডু ফুটা।”
রাজের কথা শুনে সবাই হেসে দেয়।মাহমুদ সরদার জানান,”আমার তো আরো ভালো।দুই মেয়েই এখন আমার বাসায় থাকবে।এর থেকে আনন্দের কিছু হয় নাকি?”
মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৬৭+৬৮
আহান সরদার হেসে দিয়ে বলেন,”হিয়া মামনির তো পরীক্ষা চলছে।এই একমাস পরীক্ষা দিয়ে নিক।আমরা নাহয় এর মধ্যে বিয়ের কাজ শুরু করে দিবো।”
সিয়া তাকালো আদ্রর দিকে তারপর আহান সরদারের উদ্দেশ্য করে বলে,”আপনার বড় ছেলে কি এবার বিয়ে করার সময় পাবে নাকি এখনও তার কাজ আছে?আগে এটা শিওর হয়ে নিন।বারবার ডেট দিয়ে পিছিয়ে রাখার থেকে একবারে তার থেকেই ডেট নিবেন।”
বলেই সিয়া উপরে চলে যায়।আহান সরদার এবার আদ্রের উদ্দেশ্যে বলেন,”নেও এবার অভিমান ভাঙ্গাও।”
