মি মাফিয়া পর্ব ৩
সুমাইয়া সাবিহা
আজ আমার ঢাকা শহরে প্রথম ক্লাস। কিছু চিনি না তাই আমাকে চাচা তার একজন গার্ড সহ স্কুলে পাঠিয়েছে । ক্লাস করেছি টিচার সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে আমি তাই বুঝছি। কিন্তু কথা হলো আমার পড়তে একদম ভালো লাগেনা । টিচার ক্লাস থেকে বের হওয়ার পর একা একা বসে ভালো লাগছিল না তাই ক্লাস থেকে বের হয়ে গিয়ে গার্ড কে বললাম,
__ আজ আর ক্লাস করবো না আমি । কাউকে চিনি না একা ভালো লাগেনা গো ।
গার্ড বললো,
__সরি ম্যাম স্যার বলেছে ক্লাস শেষ করে ফিরতে নয়তো আমাকে কথা শুনতে হবে।
__আমি বুঝিয়ে বলবো, আপনিও তো আমার চাচা জানের মতো ।
অনুরোধ করে বায়না ধরলাম আর ক্লাস না করার জন্য । হঠাৎ চোখে পরল সামনে অনেক ছাত্র ছাত্রীদের ভীর । তা দেখে আমি গার্ড কে জিজ্ঞেস করলাম
__চাচা এখানে কি হচ্ছে গো ? এতো মানুষ কেনো?
__তা তো আমি জানি না ম্যাম।
___আমাকে তুমি আর ম্যাম ডাকবে না ওকে? আমি তো তোমার মেয়ের মতোই আমাকে মামনি ডাকবে নয়তো নাম ধরে ডাকবে।
কথা টা বলে শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ্য করলাম লোকটার চোখে জল টলমল করছে। বললাম,
__ কি হলো চাচা? কাঁদছো কেনো?
__আসলে কিছু না মামনি।
আমি খিলখিল হেসে বললাম,
__ এইবার ঠিক আছে এটাই সুন্দর। আচ্ছা তুমি একটু এখানে দাঁড়াও আমি আসছি একটু
___কোথায় যাবে?
আমি কথার উত্তর না দিয়ে ঐ ভীরের দিকে তাকিয়ে সেদিকেই যেতে চাইলাম কিন্তু মাঝ পথে হঠাৎ আমার হাত আটকে ধরলো একটা মেয়ে। তাকিয়ে দেখলাম ক্লাস রুমে আমার পাশে যে মেয়েটি ছিল ঐ মেয়ে টিই। বললাম ,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
___ আমাকে আটকালে কেনো?
মেয়েটি ভিতু নজরে হাঁসফাঁস করতে করতে আমাকে বললো,
__এদিকে কোথায় যাচ্ছ তুমি?এখানে নতুন এসেছো তাই তুমি কিছু জানো না । সেখানে যেও না তোমার বিপদ হতে পারে ।
আমি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
__কেন? ওখানে কি এমন হচ্ছে যে আমার বিপদ হবে?
মেয়েটি বললো,
___পরে বলবো এখন আসো আমার সাথে ।
আমি জিদ ধরে বললাম,
__ হয়তো এখন বলো নয়তো আমি সেখানেই যাবো।
কথাটা বলে ওর থেকে হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে ওদিকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে এককদম ফেলতেই আমার চোখে পড়লো একটা ছেলে মারপিট করছে স্কুলের আরেক জন ছেলের সাথে ছেলেটি আমার সিনিয়র হবে, এই তো সকালে যখন পা রাখলাম স্কুলে তখন তো এই ছেলেটিই আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিল। নতুন এসেছি তাই পরিচয় হতে চেয়েছিল কিন্তু তখন ক্লাসের ঘন্টা পরে যাওয়ার কারনে আর পরিচয় হওয়ার সময় পাইনি বিধায় বলেছিলাম— ক্লাস শেষে কথা বলবো।
কিন্তু তার সাথে যে ছেলেটির হাতাহাতি হচ্ছে সে আর কেউ না মি.মাফিয়া আই মিন আমার চাচা জানের বড় ছেলে আফরান ভাইয়া। কিন্তু এভাবে মারামারি করছে কেনো তিনি ছেলেটার সাথে ? আমার ভাবনার মাঝেই হঠাৎ করে মেয়েটি আমাকে আবার আটকিয়ে বললো ,
__ঠিক আছে আমি বলছি ।
__আগে শুনো …
আমি কিছু বলার আগেই মেয়েটি বলতে শুরু করলো ,
__আমি প্রেমা ,তোমার সাথে একই ক্লাসে পড়ি । তুমি ওখানে যেও না, ঐ যে দেখছো, যে ছেলেটা মার খাচ্ছে সে আমাদের সিনিয়র ভাই । আর ঐ যে যে মারপিট করছে ইচ্ছে মতো সে একজন মাফিয়া বা গ্যাংস্টার লোকও বলতে পারো । সব সময় শুধু মারামারি করে কিন্তু কেনো এতো সব করে কেউ জানেনা । ছেলেটাকে এই ঢাকা শহরের মানুষ চেনেনা তা ৫% ও হবেনা । এর সামনাসামনি হওয়া মানে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনা তাই ওনাকে আটকাবার মতো কেউ নেই । উনি এক প্রকার উন্মাদ বলতে গেলে কিন্তু একটা কথা কি জানো? মাফিয়া হলেও প্রথম দেখায় হাজার হাজার মেয়ে ক্রাশ খেয়ে যায় বলতে পারো কিন্তু পড়ে সত্যি জানার পর কে বা তার আশা রাখবে বলো? দেখতে স্মার্ট আছে চেহাড়া টা নিষ্পাপ মনে হয়। কেউ কি বলতে পারবে ইনি মাফিয়া তাও নরমাল নয় অন্য রকম একদম অন্যরকম।
আমি কপাল কুঁচকে বললাম এই লোকটাকে দেখে নিষ্পাপ মনে হয় তোমার কাছে ? আমি তো দেখেই বুঝে ফেলেছি এই ছেলে পুরাই মাফিয়া । একদম বাজে লোক একটা ।
প্রেমা আমার কথা শুনে বললো ,
__ আল্লাহ ! আস্তে বলো শুনে ফেললে তোমাকে আস্ত রাখবে না
আমি কথা বাড়ালাম না । প্রেমাই বলল,
__তা তোমার নাম কি?
__আরিয়া
__বছরের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ কেন ভর্তি হলে ?
__ব্যাক্তি গত কারনে শহরে চাচার বাড়ি আসলাম গ্রাম থেকে ট্রান্সফার করেছে এই স্কুলে।
__ওহ! আচ্ছা এখন ক্লাস শুরু হয়ে যাচ্ছে যাবেনা? ক্লাসে চলো ।
__ভালো লাগেনা ক্লাস করতে তাছাড়া আমি এখন বাসায় চলে যাবো।
__ পড়তে তো কারোই ভালো লাগেনা কিন্তু পড়তে তো হবেই ।
বলে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল প্রেমা।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে আবারো মাঠের সেই জায়গাতে তাকালাম ।—কোথায়? সবাই কোথায় গেলো হঠাৎ করে ?
আমাকে বিচলিত হতে দেখে প্রেমা জিজ্ঞেস করলো,
__কি দেখছো?
___এই যে এতোক্ষণ মারামারি হলো তারা কোথায় গেলো ?
প্রেমা হাফ ছেড়ে বাচল বোধ হয় ।বললো,
__এতক্ষণে ফয়সাল ভাইয়াকে মেরে বোধয় হসপিটাল পাঠিয়ে দিয়েছে আফরান ভাই ।
প্রেমার মুখে নাম টা শুনে কলিজা টা ছ্যাত করে উঠলো মনে হয় । বললাম,
__তোমার ভাইয়া হয় ?
__আরে ভাইয়া কেনো হবে ? এমনি সব মেয়েরাই উনাকে ভাই বলেই ডাকে কিন্তু মনে মনে সবাই
জামাই এর চোখেই দেখে উনাকে। বলে মুচকি হাসলো প্রেমা
আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম,
__কিহ! এই অদ্ভুত লোক টাকে জামাইর চোখেও দেখে সবাই ?
__ তা নাহলে কি নজরে দেখবে ? যতই মাফিয়া গুন্ডা হোক কথা হলো তার স্টাইল, তার ফেস ,তার চালচলন,তার স্লীম শরীরের আকর্ষনীয় বডি,তার শরীরের রং,তার মুখের হালকা চাপ দাড়ী গুলো কি আর গ্যাং স্টার বা মাফিয়া উপাধী দিতে মন শায় দেয়?
আমি বিরক্তির শ্বাস ফেলে বললাম
__ থাক আর বলতে হবেনা । আমি এখন যাই।
কথাটা বলে হাটতে লাগলাম। প্রেমা চিৎকার করে আমাকে ডেকে বললো,
__এই আরিয়া আজ থেকে কিন্তু আমরা ফ্রেন্ড ওকে?আমি একবার পেছনে তাকালাম তবে কিছুই বললাম না।
রাত প্রায় ২ টার উপরে । নতুন বাড়ি নতুন জায়গা বিধায় আমার ঘুম টা একটু কম হচ্ছে । তবুও যেনো একটু চোখ টা লেগে এসেছিল কিন্তু হঠাৎ ই কানে বাজল নিচের গেইটের খটখট আওয়াজ । ঘুমটা হালকা হয়ে আসলো তাই চোখ দুটো কচলিয়ে নিলাম। আবারো আওয়াজ পেয়ে ভয়ে ধরফড়িয়ে উঠে বসলাম। এতো রাতে কিসের আওয়াজ বাড়িতে নিশ্চিত চোর এসেছে । ভাবতে লাগলাম কি করবো ? কাকে ডাকবো এখন তো সবাই ঘুমুচ্ছে । আমি বার কয়েক বুঝার চেষ্টা করলাম আওয়াজ টা কোথা থেকে আসছে।
আওয়াজের দিক বুঝে নিয়ে দরজা টা খুলে এসে বাহিরে দাঁড়ালাম । কেউ বাহির থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছে কখন থেকে কিন্তু এতো রাতে কে হবে ?গেইটের দারোয়ান চাচা হয়তো ? কিছু হয়েছে কি ? চাচা কে একবার ডেকে দেখি ? আবার নিজেই ভাবলাম নাহ থাক চাচা ঘুমাচ্ছে ঘুমিয়ে থাক আমিই বরংচ প্রথমে দেখে আসি।
আস্তে আস্তে পা পা করে গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ালাম একটু দোয়া পড়ে নিলাম। আল্লাহ যেনো কোনো চোর ডাকাত না হয় । তারপর আস্তে করে দরজাটা খুলে দিলাম । দরজা খুলতেই কেউ একজন আমার উপর ঢলে পরলো।টাল সামলাতে না পেরে আমি কয়েক কদম পিছিয়ে যাই ।
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম ।বললাম,
__এই কে আপনি? আশ্চর্য তো এতো রাতে এখানে….. কথা শেষ না করতেই আমার উপর থেকে সরে দাঁড়াল লোকটি । ফেস দেখেই আমি ভয়ে হাঁসফাঁস করতে লাগলাম।ভয়ে আমার মুখের কথা যেনো হাওয়ায় ভেসে গেলো তবুও কিছু বলার চেষ্টা করলাম,
__আ…আপনি এখানে ? এ..এতো রাতে কেনো ,,?
আমার কথার ভাইয়া কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না বরং চোখ বন্ধ করে ঢুলে ঢুলে হাঁটতে লাগল মনে হচ্ছে , এখনি পরে যাবে । যেই ভাবলাম কথাটা অমনি আবার পড়ে গেলেন উনি । আমি অবাক হলাম , কি হয়েছে উনার আজ ? এমন করছে কেনো আজব তো ? আমি উনার পাশে দু’পা উঁচু করে বসে বলতে লাগলাম,
__এই যে মি.মাফিয়া হঠাৎ কি হলো আজ এমন করছেন কেনো ?
আমার কথার কোনো উত্তর আমি পেলাম না তাই আর কিছু না ভেবে দরজা আটকিয়ে উপরে উঠতে উঠে যেতে লাগলাম । যা ইচ্ছা তাই করুক তাতে আমার কি ? যেখানে ইচ্ছা সেখানে ঘুমাক তিনি তাতে আমার কি ? ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়লো সেই ছোট বেলার কথা।
আমার যখন ৬/৭ বছর বয়স তখন আমি পিছলে পড়ে ব্যাথা পেয়ে উঠতে পারছিলাম না ,তখন ভাইয়ার প্রায় ১৪কি ১৫ বছর হবে হয়তো । সেই সময় তিনিই তো আমাকে উঠিয়ে কোলে করে রুমে নিয়ে গিয়েছিলেন । উনি তো আমাকে আদর করতোই । হয়তো এখন কোনো একটা বিষয় নিয়ে আমাদের ভাই বোনের সম্পর্কটা শেষ হয়ে গিয়েছে কিন্তু আগে তো এমন ছিলো না । এটা ভেবেই বুকের ভেতর টা যেনো চিনচিন করে উঠলো । একবার উনার দিকে তাকালাম, কি সুন্দর মায়া মায়া লাগল ওনার সুদর্শন চেহারা খানা । শরীরে সাদা শার্ট ,হাতা দুটো কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা , কালো পেন্ট পরা ,পাশেই মেঝেতে পড়ে আছে একটা কালো কোট ।
ভাবান্তর হয়ে নিজেই নিজেকে শাসালাম,
__আজ আমার কি হলো এই লোকটাকে এভাবে দেখার কি আছে আজব তো!
অনেক কষ্ট করে সব টা শক্তি খরচ করে ভাইয়াকে উপরে রুমে নিয়ে আসলাম । আমার মতো ছোট একটা মানুষ যে এই লোকটাকে উপরে নিয়ে আসছে এই তো বেশি তাই না ? কিন্তু আমি এখনো বুঝতে পারলাম না ভাইয়ার কি হয়েছে । আজকে দিনেই তো মারামারি করলো স্কুলে দেখলাম, আচ্ছা ভাইয়া কি কোনো কিছু খেয়েছে মানে ঐযে বড়লোক রা যে খায় না ? —লাল পানি এগুলো?
শুনেছি এগুলো খেলে মানুষ নিজের স্থান ভুলে যায় , বেশামাল হয়ে যায় , হ্যাঁ এতক্ষণে বুঝলাম তাই হবে হয়তো ।
ভাবনা থেকে বের হয়ে ভাইয়ার মুখের দিকে তাকালাম —ছেহ ! কি গন্ধ মুখে ওয়াক থু …
এই যে শুনছেন এবার সরুন না এসে গিয়েছি রুমে । ভাইয়ার কোনো উত্তর পেলাম না যেমন ছিলো এমনি আছে আমার কাঁধে এক হাত জড়িয়ে। মনে হচ্ছে এখনি পরে যাবে এমন ভাবে দাড়িয়ে আছে । ভাইয়াকে শক্ত করে ধরেছিলাম যেনো না পড়ে যায়।
আমি আমার কাঁধ থেকে ভাইয়ার হাত টা ছাড়িয়ে যেই না নামাতে যাবো তার আগেই ভাইয়া ঠাস করে আমাকে নিয়ে পরে গেলো খাটের উপর ।
আমি অবাক হয়ে তাকালাম, আমি কোথায় আছি তা বুঝার চেষ্টা করলাম,
__আহ..ব্যাথা পাচ্ছি তো ছাড়ুন আমাকে ।
আসলে ভাইয়া আমার উপর পড়ে আছে এই মুহূর্তে। এই বলিষ্ঠ ওজন সহ্য করতে না পেরে বারবার বলতে লাগলাম ,
___আমি ব্যাথা পাচ্ছি তো আলুভর্তা বানিয়ে দেবেন তো একদম ।
কিন্তু এই লোকের কি খবর আছে ? আমি নিচ থেকে উঠার চেষ্টা করতে লাগলাম কোনো রকম ওনাকে এক পাশে সরিয়ে উঠতে সক্ষম হলাম আমি।
মি মাফিয়া পর্ব ২
__আহ গড!
বলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। যাওয়ার আগে ভাইয়ার পায়ের জুতা গুলো খুলে দিলাম ।
রুম থেকে চলে যাওয়ার সময় গুনগুন শব্দ শুনতে লাগলাম কিন্তু কি বলছে তা এখান থেকে বুঝার বোধগম্য আমার নেই তাই কাছে গিয়ে তার মুখ বরাবর তাকালাম যেহেতু ভাইয়া চিত হয়ে শুয়ে ছিল তাই শব্দ টা মুখের চাপে হালকা এবরো শুনা গেলো ।
__প্লীজ আমাকে যেতে দিস না আমি চলে গেলে আর ফিরবো না । দেখ সত্যি বলছি আর ফিরবো না চলে গেলে…
আরো কি যেনো বলছিলো তা বুঝার কোনো উপায় নেই যেটুকু বুঝলাম তাও মাথায় যেনো কিছুই ঢুকলো না । তারপর….