মি মাফিয়া পর্ব ৪০
সুমাইয়া সাবিহা
ভার্সিটির ক্লাস শেষে প্রেমা আর সামিরা হুট করেই সিদ্ধান্ত নেয় চৌধুরী বাড়ি যাবে । অনেক দিন হয় ঐ বাড়িতে যাওয়া হয়না । সেই তিন মাস আগে একবার গিয়েছিলো,,প্রেমা অবশ্য আরিয়ার হারিয়ে যাওয়ার পর দু থেকে একবারের বেশি ঐ বাড়ি যায়নি । আজ যেহেতু সামিরা বলছে যেতে তাই রাজি হয়েছে । আর তাছাড়া বিশেষ কোনো এক কথা বলার আছে জাফর সাহেবের সাথে ।
কলিং বেল বাজানোর সাথে সাথেই দরজা খুলে দেয় । সামিরা কে দেখে দুজন লোক মুখে হাসি রেখে বললো ,আপনি এসেছেন ম্যাম সাহেব । কতোদিন আপনি এখানে আসেন না । বাড়িটা একদম ফাঁকা হয়ে গেছে । আরিয়া মেম যাওয়ার পর বাড়িটা কেমন যেনো শুনশান নীরবতা পালন করে ।
পাশ থেকে একজন সার্ভেন্ট বললো ,তোমাদের মুখে আরিয়া মেয়ের যত কথাই শুনি ভালো লাগে অথচ আমার কি দুর্ভাগ্য যে সেই সময় আমি ছিলাম না । এখন এই ভুতুড়ে বাড়িতে পরে আছি সেটাও বাধ্য হয়ে ।
লোকটার কথায় সামিরা মৃদু শব্দে হেসে ভেতরে এসে বললো , বাবা কখন আসবে?
সার্ভেন্ট: আসলে বড় সাহেব একটু অসুস্থ তাই আজ অফিসে যায়নি ।
সামিরার মুখ টা সাথে সাথে মলিন হয়ে যায় ,বলতে লাগলো ,কি হয়েছে বাবার? আমাকে কেনো একটা বার কল করে জানায়নি ।
সার্ভেন্ট কোনো কথা বললো না ।
সামিরা এখানে আর না দাঁড়িয়ে থেকে উপরে জাফর সাহেবের রুমের দিকে পা পা বাড়ায় । সাথে প্রেমাও সামিরার অনুসরণে কদম মিলায় ।
সামিরা রুমের সামনে গিয়ে দরজা তে নক করেই ভেতরে চলে আসে ।
-বাবা তুমি আমাকে…. কথা টুকু শেষ করা আগেই খেয়াল করে আয়শ জাফর কে মাথায় পট্টি দিচ্ছে। আয়শ কে দেখে প্রথমে চুপসে গেলেও আবারো মুহূর্তে খানিক পর সামনে এগিয়ে অপর পাশে গিয়ে বসে বলতে লাগলো , বাবা আমাকে একটি বারের জন্য ও জানানোর দরকার মনে করেননি ,এই বুঝি আপনি আমাকে মেয়ে ভাবেন । তবে কেনো জানালেন না ?
জাফর সাহেব এতোক্ষণ চোখ বন্ধ করে ছিলো ।
সামিরার আওয়াজ পেয়ে চোখ খুলে মুখে হাসি রেখে বললো , তুমি কখন আসলে মা ?
সামিরা: আপনার কি হয়েছে? জর হয়েছে? বলে কপালে হাত রাখতে যায় কিন্তু চোখ যায় একজোড়া কাঠিন্যতায় ঘেরা দৃষ্টি তে,এমন করে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে এখনি গিলে খেয়ে ফেলবে । সামিরা ভয়ে হাত নামিয়ে নেয় ।
সামিরার অবস্থা বুঝে প্রেমা বললো ,ভাইয়া আপনি এখন একটু রেস্ট নেন ,আমরা আছি এখানে ।
আয়শ: আসতে কে বলেছে? এই বাড়িতে আসার ইচ্ছা হলে তুমি একাই আসবে প্রেমা ,ওটাকে নিয়ে আসার মানে আছে?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
জাফর সাহেবের মনে হয় আয়শের কথাটা পছন্দ হলো না । সামিরার ও মুখখানা দেখার মতো হয়েছে ,ভেতর টা মুচরে উঠে । আর কতো? আর কতো অবহেলা সহ্য করবে? সঙ্গে সঙ্গে চোখের কোনায় মেঘ জমে ।
জাফর সাহেব : আয়শ সীমা লঙ্ঘন করো না নিজের ভাইয়ের মতো ,তবে তোমার আর ওর মাঝে কোনো পার্থক্য থাকবেনা ।
আয়শ আর কিছু না বলে উঠে দাড়ালো ফুঁসতে ফুঁসতে।
আয়শ বের হওয়ার পর সামিরা জাফর সাহেবের কপালে হাত রাখলো , মুহূর্তেই যেনো হাত খানা গরমের তাপে ঝলসে উঠে ।
-বাবা তোমার তো মনে হচ্ছে ভিষন রকমের জর উঠে আছে । বলে অপর পাশে গিয়ে ভেজা পট্টি টা হাতে নিয়ে কপালে রাখলো । প্রেমা গিয়ে একটা তোয়ালে ভিজিয়ে এনে পাশে বসে হাত পা মুছে দিতে লাগলো ।
সামিরা:খাবার খেয়েছিলে?
জাফর: উঠতেই তো পারিনি ।
সামিরা:উনি নিয়ে আসেননি ?
জাফর: ও ছেলে মানুষ এতো কিছু বুঝে নাকি?
সামিরা আর কিছু না বলে রুম ছেড়ে নিচে গেলো ।
কাজের মহিলা লতাকে তো সেই আড়াই বছর আগেই আসতে নিষেধ করে দিয়েছিলো । মানুষ নেই থেকে কাজের মহিলা রেখে লাভ কি? জাফর সাহেব আয়শ তো বাহিরেই খেয়ে নেয় । পুরো বাড়িতে একটা মহিলা ও নেই সেখানে কাজের মহিলাকে কিভাবে রাখে?
সামিরা গিয়ে একজন সার্ভেন্ট কে কিছু লিষ্ট লিখে দিয়ে এগুলো নিয়ে আসতে বললে প্রায় ১০/১৫ মিনিটের মাথায় ওসব নিয়ে আসে । ততক্ষণে রান্না ঘর টা পরিস্কার করে নেয় সামিরা ।
আধ ঘন্টার মধ্যেই খিচুড়ি বানিয়ে নেয় ,এই মুহূর্তে মনে হয় এটাই বেষ্ট মনে হয়েছে সময়ের দিক দিয়ে তাছাড়া হালকা ঠান্ডা ও পড়ছে ।
জাফর কে শুয়া থেকে কোনো রকম উঠিয়ে খাটের সাথে হেলান করে বসিয়ে খাইয়ে দিতে লাগলো ।
কখন হয়েছে এতো অসুস্থতা?
জাফর সাহেব: কাল রাত থেকে শরীর টা খারাপ করছিলো ।
সামিরা: ওষুধ আনিয়েছো?
জাফর: আয়শ এনেছিলো ।
সামিরা: কোথায় ?
জাফর সাহেব ইশারা করে দেখিয়ে দিতেই সামিরা গিয়ে উঠে ওষুধের বাক্সটা নিয়ে এসে খাবার শেষ করে খাইয়ে দেয় ।
তারপর শুইয়ে দিয়ে বললো , একটু ঘুমাও ভালো লাগবে।
জাফর:আজ কে থাকবি মা?
সামিরা: না থেকে উপায় আছে? কে দেখবে তোমায়?
জাফর শব্দ করে হাসার চেষ্টা করে প্রেমা কে বললো , তুমিও আজ থেকে যাও ।
সামিরা: না চাইলেও রেখে দিবো চিন্তা করোনা। তুমি ঘুমাও ঠিক আছে । আর ঘুম ভাঙলে ডেকো ঠিক আছে ।
জাফর সাহেব সম্মতি দিলে সামিরা প্রেমা রুম থেকে যাওয়ার সময় দরজা টা একটু টেনে দিয়ে চলে যায় ।
প্রেমা :যেটার জন্য আসলাম সেটাই তো হলো না সামু।
সামিরা: চাচা সুস্থ হোক তারপর বলবো ।এখন বললে আগ্রহ নিয়ে নিজের কথাই ভুলে যাবে । তবে আমি চাচ্ছি আগে আমরাও শিউর হই যে ,আসলেই ঐ মেয়েটা কি এসকে কম্পানির সি ইউ নাকি । নাকি অন্য কেউ? কেনো জানি বারবার মন টা বলছে ,ঠিক আরুর মতো দেখতে,চোখ জোড়া দেখিসনি সেদিন ?
প্রেমা:সেটাই তো ,দেখতে আরুর মতো কিছু টা কিন্তু আরু যদি হয় নিশ্চয়ই এধরনের খোলা মেলা ভাবে চলবেনা । ফোনে দেখিসনি,শতশত নিউজ মেয়েটার ব্যাপারে।
সামিরা: হুম আবার দেখলাম আফরান ভাইয়ার কম্পানির শেয়ার দিয়েছে । ওহ গড মাথায় ইছু ঢুকছে না।
কথা টা ভাবার মাঝেই কানে আওয়াজ আসলো ,কখন আসলি?
প্রেমা সামিরা আগ্রহ নিয়ে নিচের দিকে তাকায় । আফরানকে দেখে অবাক হয় । অবশ্য গত পরশু এসছে সেটা ফোন ঘাঁটলেই সামনে আসে ,ভাইরাল নিউজ , প্রফ্যাশনাল বিজনেস ম্যান মি চৌধুরী দীর্ঘ তিন বছর পর দেশে ফিরেছেন ।
আফরান আয়শের কথার উত্তর না দিয়ে উপরের দিকে পা বাড়ায় ।
আয়শ: কিছু তো বল । এসেছিস তো পরশু বাড়ি আসিসনি কেনো? আর দেখলাম এসকে গ্রুপের সাথে হত মিলিয়েছিস। অথচ আমার যতটুকু জানা ঐ মহিলা তোর বিরুদ্ধে কাজ করেছে সব সময়।
আফরান :আমার যেটা ইচ্ছে হয়েছে করেছি ,আমার প্রফ্যাশন নিয়ে কেউ কথা বলা আমার পছন্দ না । বলে রুমে যেতে নেয় কিন্তু মাঝে সামিরা পেছন থেকে প্রশ্ন করে বসে ভাইয়া আরিয়া কোথায় আছে কিছু জানেন?
আফরান বিরক্ত হয়ে পেছন না ঘুরেই বললো ,আমার তো মনে হয় ওটা মরে গেছে এতো দিনে বেঁচে থাকার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না ,বলে বাঁকা হেসে ভেতরে ঢুকে।
আফরান এর কথাটা এখানে কারো পছন্দ হলোনা মনে হয় ,তবে কথার মধ্যে কেমন যেনো কোনো দ্বিধা হিনতা,তার মানে আরিয়া কোথায় আছে সেটা ভাইয়া জানে নয়তো এমন স্বাভাবিক আচরণ কখনো করতো না ,সামিরা এইটা নিয়ে একদম শিউর। কিন্তু যদি মেনেই থাকে তবে বাড়ি কেনো নিয়ে আসছেনা? কি চাচ্ছে ভাইয়া?
ভাবনায় হারিয়ে যায় সামিরা ঘোর ভাঙে প্রেমার কথায়। কিরে কি ভাবছিস এতো?দেখলি ভাইয়া কতোটা নির্দয় ।আরিয়া এই কারনেই ভাইয়াকে সহ্য করতে পারতো না।
সামিরা : চুপ করতো তোকে পরে বুঝিয়ে বলবো এখন আস।
প্রেমা:কি বলবি?
সামিরা উত্তর করলো না।
সময় টা বোধহয় বিকেল টাইম হবে। অনেক্ষণ হয়েছে প্রেমা সামিরা একবার ছাদে একবার বাগানে আড্ডা দিচ্ছে ।হাঁটছে ,অতীত নিয়ে আরু সহ মজার মজার কথা গুলো আজ ভিষন করে মনে পরছে সেগুলো মুখে বলাবলি করছে দুজনেই।
প্রেমা : এই শুন না ,আমি আবার আসবো রাতে এখন যেতে হবে।
সামিরা : কেনো?
প্রেমা: গোসল দিয়ে আসিনি তো ।কেমন যেনো লাগছে।
সামিরা:ওহ ,সেইম অবস্থা,শুন আমার কিছু সেট জামা আছে এখনো এই বাড়িতে ।চল এগুলো পরি দুজন। তোর সমস্যা নেই তো? আবার যাবি আবারো আসবি বেশি রানিং হয়ে যাবেনা?
প্রেমা: ওকে চল সমস্যা নেই । আমারো এখন যেতে ইচ্ছে করছেনা ।একা একা ভালো লাগেনা আর ।
সামিরা প্রেমা ভেতরে গেইয়ে সোজা আয়শের রুমে গেলো । একটু আগেই আয়শ বেড়িয়েছিলো । তাইতো ভয় নেই ভেতরে ।
কবার্ড খুলে কপাল কুঁচকায় সামিরা ,জামা কাপড় তো একটাও নেই । অবশ্য না থাকি কথা এতো দিন কি উনি আর রেখে রেখে চোখের সামনে ইচ্ছে করে বিরক্তিকর জিন্স দেখবেন নাকি । কিন্তু কোথায় রেখেছে?
সামিরা পুরো কবার্ড চেক করছে আয়শের জামা কাপড় গুলো এক এক করে নামিয়ে খাটের উপর রাখছে আর নিজের জামা কাপড় খোঁজে বেড়াচ্ছে চোখে তো পরছেই না তার জামা গুলো।
আরে ভাই মানলাম আমি বিরক্তিকর মানুষ তাই বলে কি জামা গুলো ডাস্টবিনে ফেলে দিবি ? উচরেপোকা লোক একটা ,যতই পজেটিভ চিন্তা করি ততই আরো দুরে সরিয়ে দেয় ।
কথা টা ভাবতেই পেছন থেকে বলে উঠে ,এসব হচ্ছে কি এখানে ? আমার রুমে মেয়ে মানুষ কেনো? আর এসব কি করছো?
প্রেমা ভীত চোখে তাকায় আয়েশের দিকে। যদিও লোকটা ক্রাশ খাওয়ার মতো ,প্রথম তো এই লোকটার প্রতি তার এক আকাশ সমান ভালোলাগা ছিলো কিন্তু আস্তে আস্তে ব্যাবহার গুলো দেখে মন থেকে ভাইয়া ভাবতেও ইচ্ছে হয়না এখন । সব ছেলেরাই কি এমন? হয়তো না ,সাদেক ভাইয়ার সাথে সম্পর্ক টা একটু দুরের হতে পারে কিন্তু কখনো খারাপ ব্যবহার পাইনি আমি ।
আয়শ ভেতরে ঢুকে সামিরার দিকে তাকিয়ে বললো ,আমার রুমে
কেনো আসলে? আর কোনো রুম চোখে পরেনি? আর এসব কি করছো? না বলে এটাতে হাত দিয়েছো আবার জামা কাপড় গুলো এমন এলো মেলো করছো । এর জন্য কি করতে পারি তুমি জানো?
সামিরা ভয় ঢোক গিলে । উনি তো চলে গিয়েছিলেন কখন আসলেন?
প্রেমা: আসলে হয়েছে কি ভাইয়া…. এটুকু বলতে আয়শ বললো ,তুমি এখন আসতে পারো আমার ঐ মেয়ের সাথে কথা আছে ।
প্রেমা ভয়ে আর কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।
প্রেমা যেতেই আয়শ দরজা টা আটকে দেয় ।
সামিরা :দেখুন , সত্যি বলছি আমার কিছু জামা কাপড় ছিলো এখানে তাই এসেছি । পাচ্ছিলাম না ।
আয়শ কপাল কুচকে আস্তে ধীরে আসতে আসতে বললো,তোমার কি মনে হয় দুই বছর আগের জামা এখনো এখানেই থাকবে?
সামিরা:দুই বছর আগের না তো ,কিছু মাস আগে যখন একবার চাচা অসুস্থ হয়েছিলো তখন এনেছিলাম ।
আয়শ : তোর কি মনে হয় যে ,তুই এখানে জামা রাখবি আর আমি সেগুলো গুছিয়ে রেখে দেবো যত্ন সহকারে?
আয়শ কে এমন ভাবে দেখে সামিরার কপালে ঘাম জমে ,দুকদম পিছিয়ে বলতে লাগলো ,ও আসলে আমি বুঝিনি ,ভূলে গিয়েছিলাম । ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি ।বলে আয়শ কে পাশ কাটিয়ে দ্রুত পায়ে দরজার দিকে যেতে নিলে আয়শ এক হাতে ধরে বললো ,কোথায় যাচ্ছিস? এগুলো কি আমি ভাঁজ করবো? তুই অগুছালো করবি আর আমি এসে এসব ঠিক করবো?
সামিরা কাঁপা গলায় বললো:আ…আসলে আমি ঠিক করে দিচ্ছি তো । বলে আয়শের থেকে হাত টা ফুটাতে চাইলো কিন্তু আয়শ উল্টো সামিরা সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁত কটমট করতে করতে বললো ,কার থেকে বলে বাড়ি ছেড়েছিলি? আমি তোকে বলেছিলাম চলে যেতে?
সামিরা: আ..আমি তো …
আয়শ সামিরা কথা কেড়ে নিয়ে বললো : আমার থেকে বলে গিয়েছিলি? কলিজা টা কতো বড় হয়েছে দেখি , আমাকে ডিভোর্স নোটিশ পাঠাতে চেয়েছিলিস। বল বল কতো বড় কলিজা হয়েছে তোর?
সামিরা ভীত কন্ঠে জবাব দিতে লাগলো:আ…আপনি তো বলেছিলেন চলে যেতে মনে নেই? আর তাছাড়া আপনি তো আমাকে সহ্য করতে পারেন না তাইতো গিয়েছি ,আর আরুও নেই কি করবো থেকে?
আয়শ:এই বাড়িতে আরুর জন্য এসেছিলি? তোকে আরু বিয়ে করে এনেছিলো?
সামিরা: ছি ,কি সব বলছেন আপনি ।
আয়শ:তাহলে কেনো বললি আরু নেই তাই চলে গিয়েছিস।
সামিরা : আরে এর আগের শব্দ টা শুনেননি? এই বাড়িতে আমার কেউ নেই বাবা ব্যাতীত। আর বাবা কতক্ষন বা বাড়িতে থাকে?
আয়শ:আমি কি চাঁদের দেশে থাকি? চোখে পরে না?
সামিরা:আজব তো এভাবে কথা পেছাচ্ছেন কেনো? আমি তো বললাম আমি আপনার চোখে বিষাক্ত হতে চাইনা তাই।
আয়শ:আমি তোকে সেটা বলেছিলাম?
সামিরা : আবারো কিন্তু উল্টো কথা শুনিয়ে যাচ্ছেন।
হাত ছাড়ুন,এগুলো গুছিয়ে চলে যাবো । আর আসবো না আপনার রুমে ।
আয়শ:ওহ তা আর কার বেড রুমে যাওয়ার ইচ্ছা আছে?
সামিরা:আপনি কিন্তু খুব বাজে কথা বলে যাচ্ছেন তখন থেকে ।
আয়শ: যখন বাড়ি ছেড়ে গিয়েছিলি একবারও নিজেকে এই বাড়ির বউ মনে করেছিস? কখনো দেখেছিস বাড়ির বউরা এমনি করে হাসব্যান্ড থেকে না বলে বাপের বাড়ি চলে যায় ।
সামিরা নিরুত্তর হয়ে আয়শের দিকে চোখ রাখে এবার ।
আয়শ:এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? ভুল কিছু বলেছি? এইটুকু বকা সহ্য করতে না পেরে চলে গেলি ,মাথায় কিছু আছে তো আদৌ তোর?
সামিরা : দেখুন আপনার কাছে একটু হতে পারে আমার কাছে আপনার সামান্য বকা টুকু বিশাল মনে হয় ,আমার খুব খারাপ লাগে আপনি কিভাবে বুঝবেন প্রিয় মানুষ টির থেকে অবহেলা পেলে নিজেকে কেমন লাগে । যখন আপনি কাউকে ভালোবাসেন মন থেকে সেদিন বুঝবেন অবশ্য সেটা বিয়ের পরেই বেশি উপলব্ধি হয় । যখন নতুন ভাবে আবার বিয়ে করে সংসার করবেন তখন বউ থেকে …… কথাটা শেষ করার আগেই আয়শ সামিরা কে আকস্মিক এক ঝটকায় দেয়ালের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো ,, তুই চাস আমি বিয়ে করি?
সামিরা ভয়ে কাঁপছে,এই দুই ভাইয়ের রাগ কি এমনি ,চাচা তো সরল তবে রাগ টা কার মতো পেয়েছে এরা?
আয়শ: কি হলো চুপ করে আছিস কেনো বল ।
সামিরা : এভাবে বলছেন কেনো? আমাকে এখান থেকে যেতে দিন পরে বলছি।
আয়শ: তিনটা বছর অপেক্ষা করিয়ে রেখেছিস আর কতো? আমাকে কি মনে হয় হ্যাঁ? যা ইচ্ছা করে যাচ্ছিস, কিছু বলছি মানে এই নয় আমার কান অবদি কিছু আসেনা।
সামিরা: আপনার কথা কিন্তু কিছু বুঝতেছি না আমি । বাবা উঠে যাবে যেতে দিন আমায় ।
আয়শ এবার দেয়াল থেকে হাত সরিয়ে কিছু টা শান্ত হওয়ার চেষ্টা করে সামিরার সামনে থেকে সরে দাঁড়ায়।
সামিরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আয়শ এবার শান্ত গলায় বলে উঠে ,, এগুলো ঠিক করে দিয়ে যা ।
সামিরা দেরী না করে এগুলো চট করে গুছাতে শুরু করে ,মিনিট কয়েক পর আয়শ এক সেট সেলওয়ার কামিজ সামিরার সামনে হাত বাড়িয়ে ধরে।
সামিরা অবাক হয় , আয়েশের দিকে তাকিয়ে বলে ,কোথায় রেখেছিলেন?
আয়শ: একদম অতিরিক্ত প্রশ্ন করবি না ।
সামিরা কথা না বাড়িয়ে কাপড় হাতে নিয়ে এক সাইডে রেখে আয়শের জামা গুলো ভাঁজ করতে লাগলো ,
আয়শ : এসব রেখে , গোসলে যা আবার রাত করে গোসল দিয়ে জল বানাবি নিজের তখন এর দায় কে নিবে?
সামিরা কথা বারায় না জানেই বৃথা যাবে ,নিজের কাপর গুলো হাতে নিয়ে বললো ,আরেক সেট থাকলে দিন প্রেমাও…
মি মাফিয়া পর্ব ৩৯ (২)
আয়শ চুপচাপ গিয়ে কবার্ড থেকে আরেক সেট নিয়ে আসলো ,সামিরা কিছু টা অবাক হয় কারন আয়শের পার্সোনাল যেই রেক টা ওটার থেকে জামা বের করেছে । যেখানে সামিরা কখনো কিছু রাখেনি কারন এটা আয়শের পার্সোনাল আগেই নিষেধ করে দিয়েছে ধরতে তাই।
আয়শ কপাল কুঁচকে হাতে জামা টা ধরিয়ে দিয়ে রুম ছাড়ে ।