মি মাফিয়া পর্ব ৪১
সুমাইয়া সাবিহা
বারান্দায় ছোট একটা দোলনা টাঙানো,প্রায় সময় মন খারাপ হলে এখানেই বসে থাকে আরিয়া ,বাহিরের জগত টা কতটা নিষ্ঠুর সেসব নিয়েই ভাবে । কখনো বা মা বাবার কথা মনে পরে তবে এসব সে ভাবতে চায়না । অতীত নিয়ে কিছু মনে হলেই ইচ্ছে করে ভাবনা পাল্টে ফেলে ।ভিষন ভাবে ঘৃনা চেপে আছে ভেতরে অতীত নিয়ে যেটা কখনো দুর হওয়ার নয় ।
কিন্তু আজ মুলত মন খারাপ নয় সন্ধা রাতের বিষয় টা ভাবাচ্ছে বারবার । আবারো তাকে ছেলেদের খপ্পরে পরতে হলো । সে তো স্ট্রং তাইনা ।তবে কেনো আজ ঐ লোকটার গায়ে আঘাত করতে পারলো না? উল্টো মনে হচ্ছিল খুব অভিমান নিয়ে ঐ লোকটার কাছে কতো কিছু বলতে। কিন্তু কেনো? আগে তো কখনো দেখিনি একে । চোখেও পরেনি আশে পাশে ,হা মানলাম অনেক ছেলে পেছনে একটু দেখার জন্য কথা বলার জন্য বারবার ডাকে তবে এই বিষয় টা স্বাভাবিক নয় । কে লোকটা? আমাকে জানতে হবে । আচ্ছা ঐ বাইকের নাম টা কি ছিলো? ওহ গড কিছুই তো খেয়াল করিনি । যদি নাম টা দেখতাম অন্তত বের করতে এতো ঝামেলা হতো না ।
কিছু টা বিরক্ত হয়েই আরিয়া বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনী দারা কপাল ঘসতে লাগলো ।
তার মধ্যেই নাবিল ভেতরে এসে বললো ,এখনো ঘুমাওনি। কতোবার বলবো তোমায় বৃষ্টি তে ভিজবে না। বৃষ্টির পানি তোমার শরীরে অসুস্থ তা নিয়ে আসে ।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আরিয়া মাথা সোজা করে তাকালো কিন্তু কিছু বললো না ।
নাবিল:আবার যেনো না দেখি । অষুধ খেয়েছিলে?
আরিয়া:হুম ।
নাবিলের চোখে দুটোতে মনে হলো আগুন জ্বলছে এই মুহুর্তে, ধমকিয়ে বললো ,সত্যি করে বলো ঘুমের ওষুধ ও খেয়েছিলে তাইনা? কয়টা খেয়েছো? বলেই আরিয়ার সামনে এসে দাড়ালো ।
আরিয়া:দুটো খেয়েছি সত্যি বলছি ,এর বেশি খাইনি ।আর জরের ওষুধ ও খেয়ে নিয়েছি ।
নাবিল এবার দোলনার একপাশ ধরে এক হাঁটু গেড়ে বসে ধমকিয়ে বলতে লাগলো , দেখলে তো ,তুমি আমার কথা একটুও শুনো না । আর কিভাবে বললে তুমি বুঝবে? ঐ অষুধ সুস্থ মানুষের জন্য নয় শ্রাবনী। শরীরে অনেক সমস্যা হয় বুঝোনা কেনো তুমি ? আমাকে রাগিও না তবে কিন্তু তোমার জন্য ভালো হবেনা ।
আরিয়া কিছুটা ভয় পায় নাবিলের ধমকে। কাঁপা গলায় নাবিলের দিকে তাকিয়ে বললো, আ..আর খাবো না সত্যি বলছি ।
ওটা না খেলে আজ ঘুমোতে পারতাম না ।
নাবিল:তা এখন কোথায় ঘুমাচ্ছো ? শ্রাবনী আমি শান্ত আছি শান্ত থাকতে চাই তোমার সাথে আমার মেজাজ দেখাতে চাইনা, তোমাকে আঘাত করতে আমার খুব কষ্ট হবে ভালো ভাবে বলছি নিজের ক্ষতি করে আমাকে চেন্জ হতে বাধ্য করো না ,বিষয় টা ভালো হবেনা কারো জন্য।
আরিয়া ভয়ে কাঁপছে , নাবিল কে স্বাধারনত ভয় পায়না আরু তবে মাঝে মাঝে কেমন যেনো খুব ভয় করে এমন রুপে টা দেখলে । পুরুষ মানুষ রাগলে কি কি করতে পারে সেটা তার চেয়ে ভালো কেউ জানেনা ।
আরিয়ার এই কম্পিত শরীর দেখে নাবিলের রাগ টা নিমিষেই শেষ হয়ে যায় ।
উঠে দাঁড়িয়ে নিজেকে শান্ত করে বললো ,দেখো শ্রাবনী আমি সরি , কতোবার নিষেধ করেছি ওটা খেতে । কেনো বারবার নিয়ে আসো এটা ? আর কখনো যেনো এমন না হয় বুঝেছো ?
আরিয়া : হুম ।
নাবিল:ভেতরে যাও ,আর ঘুমিয়ে পরো ,আমাকেও যেতে হবে অনেক রাত হয়েছে।
শ্রাবনী: ওকে ।বলে উঠে দাঁড়িয়ে সোজা রুমে গিয়ে কম্বল টা শরীরে টেনে শুয়ে পড়লো আরিয়া ।
নাবিল মৃদু হেসে যাওয়ার সময় দরজা টা লক করে দিয়ে যায় ।
মাঝ রাতে আকস্মিক শরীরে কারো উষ্ণ ছোঁয়া অনুভব হতেই আরিয়া ঘুমঘুম চোখে বিড়বিড় করে বললো , কেউ কি এখানে আছে?
উত্তর আসলো – উহুম,তুমি স্বপ্ন দেখছো ঘুমিয়ে যাও ।
আরিয়া ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে আবারো ঘুমের দেশে চলে গেলো ।
উষ্ণ তা পেয়ে আরিয়া ঘুমের ঘোরেই একদম বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে একদম লেপ্টে মিশে যায় ,আরিয়ার কাছে বিষয়টা উষ্ণ তোলার তুলতুলে কম্বল মনে হলো ।
আফরান যেনো দীর্ঘ দিন পর এমন শান্তি পাচ্ছে ,সব টা দিয়ে একদম আরিয়া কে নিজের সাথে মিশিয়ে জড়িয়ে নিয়ে চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলো । কতোটা মিস করেছে এই মেয়েকে এতোটা বছরে , কিন্তু ভুলের শাস্তি তো পেতেই হবে। দ্বিতীয় বার যেনো এমন করার চিন্তা মাথায় না আসে । আমি জানি আরু খুব ঘৃনা আমায় নিয়ে তোমার ভেতর । আমি কি করবো বলো ,তোমায় কেনো ছুবে অন্য কেউ? সেদিন রাতে তোমার শরীরে প্রতিটা স্থান জানান দিচ্ছিলো অন্য কারো স্পর্শ লেগে আছে ,কিভাবে ঠিক থাকি বলো ,তাইতো নিজের স্পর্শ একে দিলাম পুরো শরীরে ,যেনো কখনো অন্য কিছু করার আগে আমার কথা মাথায় আসে কিন্তু তুমি তো উল্টো কাজ করলে ,যেখানে রাগ ,অভিমান টা আমার সাথে দেখানোর কথা ছিলো সেখানে তুমি সব কিছু ফেলে খুশি টা এই নাবিলের সাথে ভাগ করে নিলে ,এটার শাস্তি টা তুমাকে পেতেই হবে আরু। কি ভেবেছো সব কিছু মেনে নিয়েছি ? ইটস নট রাইট ,ঠিক সময়ে প্রত্যেক টা মানুষ কে নিজের জায়গা কোথায় সব কিছু জানিয়ে দেবো
আর তোমাকেও বুঝিয়ে দেবো আমি ছাড়া তোমার কোনো অস্তিত্ব নেই ,তোমার সব কিছুই হবে আমিতে,সেখানে তুমি যতবার অন্য কারোতে নিজের জায়গা খুঁজতে যাবে ততবারই তোমার সীমাবদ্ধতা কোথায় সেটা দেখিয়ে যাবো , ইচ্ছে করে কেনো শাস্তি গুলো নিজেই বাড়িয়ে নাও ? আবার আমাকেই দোষী বানাও ।
সকালের ঘুমটা ভাঙে ঠিক দিপ্রহরের মাঝামাঝি সময়ে। রোদের তাপে শরীরে হালকা ঘাম জমায় ঘুমটা হালকা হয় ।
পাশ থেকে নাবিল বলে উঠলো , মহারানীর ঘুম ভেঙেছে তাহলে ।
আরিয়া : আজকে অফিস যাবো না প্লীজ।
নাবিল : আজ ফ্রাইডে শ্রাবনী।
আরিয়া : আরেকটু ঘুমাই তাহলে ।
নাবিল:তোমার ইচ্ছা তবে এখন দেড়টার উপরে বাজে ,চাইলে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুমতে পারো ।
আরিয়া হকচকিয়ে লাফিয়ে উঠে বসে বললো ,হুয়াট? এতোটা সময় ঘুমিয়েছি?
নাবিল:নিজেই দেখো ঘরিতে।
আরিয়া পাশে এলার্ম ঘরিটিতে একবার চোখ রেখে বলে ,আজ এলার্ম কেনো বাজলো না ।
নাবিল:ঘুমের জন্য শুনতে পাওনি হয়তো ।
আরিয়া:এলার্ম বাজলে অবশ্যই আমি শুনতাম ,আগেও তো অনেকবার খেয়েছি ঘুমের টেবলেট।
নাবিল:সেটা আমি কি জানি । হয়তো এলার্ম এড করতেই ভুলে গেছো ।
আরিয়া:আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি লাইট অফ করার আগেই এড করেছি । ট্রাস্ট মি।
নাবিল: আচ্ছা মানলাম । এখন যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
আরিয়া: কিন্তু এলার্ম এর …
নাবিল:হয়তো ভুত এসেছিলো ,বলে হালকা শব্দে নাবিল হাসলো ।
-নাবিল জানে হয়তো এলার্ম বেজেছে ঘুমের ঘোরে টের পায়নি তাই কথা বাড়ায়নি বিষয়টা নিয়ে –
নাবিল সেই কখনথেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে দেখছে আরিয়া রেডি হচ্ছে।
আরিয়া হাতের ঘরিটা পরে নিলো ।
নাবিল : আজ কোথাও বেড়োবে?
আরিয়া: বিশেষ কোনো কাজে নয় ।
নাবিল:রেডি হচ্ছো যে।
আরিয়া একটু নদীর তীরে যাবো।তাছাড়াও আমার কিছু কাজ আছে । – ঐ লোকটা কে ছিলো বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় আমাকে তো জানতে হবেই ,ঐ ছেলেকে জেলে না দেওয়া অব্দি আমার শান্তি নেই মেয়েদের সাথে অসভ্যতামীর ফল কি হতে পারে এটা জানা দরকার গোটা পৃথিবীর (মনে মনে)
নাবিল:আমি আসবো?
আরিয়া : প্রয়োজন নেই ,তবে ওখানে আপনার কাজ থাকলে আমার আপত্তি নেই।
নাবিল: ঠিক আছে একাই যাও । তবে সাবধানে থেকো , বৃষ্টি আসলে যদি আজকেও ভিজো তবে কিন্তু…
আরিয়া:ঠিক আছে ভিজবো না আজ।
বলে আরিয়া শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বেড়িয়ে গেলো ।
নাবিল মুচকি হাসে ,সব কিছু তেই তোমাকে এতো ভালো লাগে কেনো বলতে পারবে ? নিজে নিজেই ভেবে হাসলো নাবিল।
জাফর সাহেব অনেকটাই সুস্থ হয়েছেন । সামিরা কাল থেকে যা যত্ন নিয়ে যাচ্ছে সুস্থ না হয়ে উপায় আছে ? তবে হাঁটতে গেলে মনে হয় যেনো মাথা টা এক্ষুনি ঘুরিয়ে পরে যাবো ,চোখেও ঘোলাটে দেখে। এই বুঝি ডঃ,এর কাছে গেলে চশমা টা ধরিয়ে দেবে যেটা খুব অস্বস্তি কর মনে হয় । সেটা ভেবেই আজ অব্দি চোক্ষের ডঃ এর কাছে যাননি জাফর ।
প্রেমা সামিরা মিলে পুরো বাড়ি টা সারাদিন লাগিয়ে সুন্দর ভাবে গুছিয়ে গেছে কিন্তু আকস্মিক এই মুহূর্তে কতগুলো লোক বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলো ।
সামিরা আশ্চর্য হয়ে একজন সার্ভেন্ট কে জিজ্ঞেস করে লোক গুলো কারা? কি করতে এসেছে? সাথে এতো এতো ফুল কেনো? কেউ আসবে? কিন্তু এমন কেউ তো নেই যে তাকে আসলে এমন ফুল দিয়ে বরন করতে হবে।
সার্ভেন্ট একটু আস্তে করে বললো ,আসলে আফরান স্যার এগুলো আনিয়েছেন ,বাড়িতে নাকি পার্টি আছে আজ ।
সামিরা:ভাইয়া বলেছে?
সার্ভেন্ট:না লোকগুলো তো সেটাই বললো ।
সামিরা আর কিছু না বলে ঐ লোক গুলোর কাছে গিয়ে বললো ,কিসের পার্টি জানতে পারি?
একটা লোক বললো ,সেইসব তো জানিনা মেম , কিন্তু মি চৌধুরী যেহেতু এসব করতে বলেছেন নিশ্চয়ই বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান আছেই ।
সামিরা আর কিছু না বলে সোজা জাফর সাহেবের কাছে গিয়ে বলতে লাগলো ,বাবা শুনেছো কিছু? আফরান ভাইয়া নাকি বাড়িতে পার্টির ব্যাবস্থা করছে । এগুলো কি বাড়িতে না করলে হয়না ?
জাফর:আফরান বাড়িতে এসেছে? আমি তো জানিনা ।
সামিরা:কালকেই এসেছে ,তোমার কাছে একবারও আসেনি কতটা নিষ্ঠুর মন ভাইয়া ,আরিয়া মিথ্যে বলতো না দেখলে প্রমাণ হয়ে গেলো আবারো।
আরিয়ার নাম টা নিতেই জাফর সাহেবের মুখ টা কেমন যেনো অসহায়ের মতো হয়ে গেলো ।তার বাড়ি থেকেই অত্যাচারিত হয়ে মেয়েটা এভাবে চলে গেলো ,এর চেয়ে ঘৃন্য তম লজ্জার বিষয় আর কিছু হতেই পারেনা । জাফর সাহেব কথাটা ভাবতেই চোখে জল এসে গেলো ।
সামিরা বুঝতে পেরে বললো ,এসব ভেবে শুধু শুধু কষ্ট পেয়ে লাভ আছে? শুনো না ,কাঁদবে না একদম তুমি ,বলে সামিরা জাফর সাহেবের চোখ মুছে দেয় ।
প্রেমা :জানিস কিছু? কিসের পার্টি রে?
সামিরা : জানলে তো তুই এতক্ষণে জেনেই যেতি তাইনা ।
প্রেমা : হুম আচ্ছা বাদ দে ।সে যাই হোক আমাদের তাতে কি ,সন্ধা হলেই চলে যাবো ।
সামিরা: কালকে যাবো ,চাচা এখনো ঠিক হয়নি ।
প্রেমা : আমিও প্রথমে সেটাই ভেবেছিলাম ,এভাবে চাচাকে ফেলে যাওয়া ঠিক হবেনা ।
আরিয়া অনলাইনে প্রত্যেক মডেলের ছবি দেখছে , দুপুর বেলা নদীর পাড় গিয়ে আর ইচ্ছে করেনি অন্য কোথাও যেতে ,তাই বাসায় চলে আসে ,শুয়ে শুয়ে আগে ঐ বাইকের নাম মডেল সব কিছু জেনে পরে গিয়ে এই কম্পানিতে খোঁজ নেবে এটি তার উদ্দেশ্য। একের পর এক বাইকের ছবি দেখেই যাচ্ছে।
মি মাফিয়া পর্ব ৪০
মাঝেই কারো কল আসে ,আরিয়া বিরক্ত হয়ে নামটার দিকে তাকালো,MS দিয়ে সেভ করা নাম টা দেখেই ফোনটা রিসিভ করে কানে দিলো,এক মিনিটের মাথায় আরিয়া রাগে জিদে ফোনটা হাতে থেকে ফ্লোরে ছোড়ে মারে ,পেয়েছে কি আমাকে ? যেটা নিষেধ করেছি সেটা নিয়ে এতো বাড়াবাড়ি কেনো করতে হবে? ঐ লোকটার সামনে নেক্সট আর যাবো না কালকেই তো শুনিয়ে আসলাম ,তবে আজ কেনো আবারো ? ,মেরে ফেলবো ঐ মহিলা কে ,একজন কেও ছাড়বো না । আরিয়ার শরীর রাগের তোপে কাঁপছে ,চুল গুলো দুহাতে চেপে ধরে মাথা নুইয়ে চুল টেনে রাগ কমানোর চেষ্টা হয়তো । তারপর……