মি মাফিয়া পর্ব ৪৩ (২)

মি মাফিয়া পর্ব ৪৩(২)
সুমাইয়া সাবিহা

আফরান এবার আরিয়ার হাতের নিচ থেকে পেট পেঁচিয়ে ধরে ।
আরিয়া : ছিহ,বলে আফরান এর হাত টা ছুটাতে চাইলো কিন্তু আফরান উল্টো আরিয়ার পেট খামচে ধরে ।
আরিয়া ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে বলে আহ শব্দ উচ্চারণ করে , কি করছেন ভাইয়া , আমার খুব লাগছে তো ,হাত সরান ।
আফরান: ভাইয়া ডাকছেন কেনো মিস ,মি চৌধুরী বলেই ডাকুন।
কথাটা শুনা মাত্রই আরিয়া যেনো স্তব্ধ হয়ে যায় ,কি ভুল টা করে ফেলেছে তার বুজতে বাকি নেই ,শরীর থরথর করে কাঁপা শুরু হয়ে গেছে,তবুও নিজের মধ্যে কনফিডেন্ট নিয়ে ঢোক গিলে কাঁপা গলায় বললো ,সরি মি আসলে ভুলে বলে ফেলেছি,কথা শেষ করেই আবারো আরিয়া ব্যাথায় আওয়াজ করলো । আরো জোড়ে খিচে ধরেছে আফরান আরিয়া পেট ,এই বুঝি রক্ত বের হয়ে আসবে । নিশ্চয়ই এখান থেকে যাওয়ার পর দুদিন হাঁটতে পারবেনা পেটের ব্যাথায় ।

আফরান : হুম বলুন তারপর কি ? আচ্ছা আমি বুঝেছি ভূলে বলে ফেলেছেন । কিন্তু আপনি এমন করে আছেন কেনো? শুনুন মিস একবার যেহেতু বলেছি আপনাকে বিয়ে করবো সো আপনাকেই লাগবে আমার। হবু হাসব্যান্ড এর সামনে এভাবে থাকলে হবে?
আফরানের কথা শুনে মনে কিছু টা স্বস্তি পায় আরু,এখনো বুজতে পারেনি আফরান তাকে এটা ভেবে । কিন্তু এমন করে পেট খামচে আছে কেনো? আচ্ছা সবার সাথে কি উনি এমন করে ? এমন শরীরে যখন তখন স্পর্শ করে? কিভাবে পারলেন আপনি এমন করতে ,কথাটা ভেবেই আরুর চোখ থেকে জল গড়িয়ে।
শরীরের আঘাত কেনো ভেতরের আঘাতের তুলনায় ক্ষুদ্র মনে হয় ?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আরিয়ার নিরবতা দেখে আফরান ব্যাথা তুর জায়গা থেকে হাত হালকা করে উঠে বসে আরিয়ার পিঠের সাথে নিজেকে মিশিয়ে আরিয়ার মাথার উপর নিজের থুতনি রেখে দুহাতে আরিয়ার একটা হাত নিজের বাম তালুতে রেখে ডান হাতে আরুর পান্জাতে স্লাইড করতে করতে বললো ,কষ্ট হচ্ছে? আসলে হয়েছে কি জানেন ,আমি একটু এমনি ,যাকে ভালোবাসি তার অনুপরিমান ক্ষুদ্র জিনিস ও অন্যের সাথে শেয়ার করিনা ,এর বিপরীতে গেলে কি হয় জানেন , যেটাকে আগলে রাখি ওটাকেই ধ্বংস করে দেই ,এতে আমার কিছু যায় আসেনা ,যেটা আমার সেটা আমারি ।আপনাকে আমি প্রথমেই এসব বলে রাখছি নয়তো উল্টা পাল্টা করলে এর সব টা দায়ভার আপনার ।
আরিয়া প্রথমে ছোটার জন্য চেষ্টা করলেও আফরান কথা বলা শুরু করার পর চুপচাপ শুনে গেছে ।

-একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
আফরান:কেনো নয় , অবশ্যই বলুন।
আরিয়া : আপনি তো আমায় দেখেননি তবে কিভাবে নিজের বলে দাবি করে যাচ্ছেন।
আফরান : অন্য কোয়েশ্চন থাকলে বলতে পারেন।
আরিয়া: এটার উত্তরের কি হবে?
আফরান:আমি এটার উত্তর দিচ্ছি না ,তাই বললাম নেক্সট কোয়েশ্চন। নয়তো চুপ করে থাকুন , আমাকে কেউ প্রশ্ন করা এটা আমার পছন্দ নয় ।

আরিয়া: সত্যি করে বলুন তো এর আগে যে মেয়েটাকে পছন্দ করতেন আপনার কথা মতে সে মারা গিয়েছে ,তবে আমার সন্দেহ হচ্ছে শুনেছি আপনি মানুষ মেরে শান্তি পান রিসেন্টলি আপনিই তাকে মেরে দেননি তো?
আফরানের হাত সাথে সাথে আরিয়ার হাতটা চেপে ধরে ,চোখ দুটো বন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে শান্ত গলায় বললো ,বলেছিলাম আমাকে কেউ প্রশ্ন করা পছন্দ নয় তবুও যেহেতু বলছেন তবে আমার উত্তর হচ্ছে, বলতে পারেন তাই হয়েছে ,যে মেয়ের শরীরে অন্য পুরুষের ছোঁয়া থাকবে সে আমার নয় কখনো হতেও পারবেনা সেটা ভুল ক্রমেই হোক না কেনো ,নিজের পার্সোনাল মানুষের শরীরের স্মেল আর ছোঁয়া বুঝে রাখা তার কর্তব্য তাইনা ।
আরিয়া হাতের ব্যাথায় কাতর কন্ঠে বললো,এভাবে চেপে ধরে কেউ ব্যাথা করছে আমার ,ছেরে দিন ।
আফরান : আমারো ভিষন ব্যাথা হয়েছিলো জানেন । যখন আমার কথা শুনেননি ।
আরিয়া এবার আফরানের হাত টা অন্য হাতে ছোটাতে ব্যাস্ত হলো।

আরিয়ার একটু বড় নখের আঁচে আফরান এর হাত খানা লাল হয়ে গেছে তবুও ছাড়ার নাম নেই ।
ছেড়ে দিন না কি করেছি আমি এমন করছেন কেনো? আমি আপনাকে চিনি না জানিনা আপনিও ভালোভাবে আমায় চেনেন না তাহলে এসবের মানে কি মি চৌধুরী?
কিছু টা উঁচু গলায় বললো।
আফরানের মাথা টা মনে হয় আরিয়ার কথা গুলো তে আরো বিগড়ে গেলো ,এবার বাম হাত দিয়ে আরিয়ার পেটের উপর থেকে পেঁচিয়ে ধরে ডান হাতের কনুই এর মধ্যিখানে আরিয়ার গলা পেঁচিয়ে ধরে ,আফরানের কাঁধ বরাবর আরিয়ার মাথা টা,আফরান ও কিছু টা ঝুঁকে আরিয়ার সমান হয়ে কানের কাছে এসে আস্তে করে স্বাভাবিক গলায় বললো , আচ্ছা। চিনতে হবেনা তবে আমার সাথে পরিচয় হয়ে নিন । বলে বাঁকা হাসে আফরান ,অথচ তার আঁখি দ্বয় অগ্নিদগ্ধ হয়ে জল গড়িয়ে পরছে ।

আরিয়ার চোখ উল্টে আসছে বারবার , নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়ে যাচ্ছে ,কথা টাও মুখ থেকে বেরোবার সুযোগ পাচ্ছে না অথচ আরুর কাছে মনে হচ্ছে সে চিৎকার করে কাউকে ডাকছে অথচ কেউ আসছেনা তাকে বাঁচাতে ।
আফরান এর হাত টা গলা থেকে সরাবার জন্য ছোট কোমল দুটি হাত দিয়ে অনবরত থাপরিয়ে যাচ্ছে আরু। কিন্তু নির্দয় হৃদয় হীন লোকটার কি তাতে কিছু যায় আসে?
আরিয়ার চোক্ষু লাল হয়ে আপনার আপনি পানি বেরিয়ে আসে ।
ঠিক সেই মুহূর্তে আফরান আরিয়া কে ছেড়ে দেয় ।

আরিয়া ছাড়া পাওয়া মাত্রই কাশতে শুরু করে । দুহাত গলায় ধরে আছে ভিষন ভাবে জ্বলছে গলাটা ,
আফরান পাশ থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে আবারো আরিয়ার শরীর ঘেসে পেছনে বসেই গ্লাস টা মুখের সামনে ধরে ।
আরিয়া কিচ্ছু টি এখন ভাবতে পারছেনা তবে পানি টা খেলেই বোধহয় স্বস্তি হবে একটু ,তাই পানির গ্লাস টা ধরতে গেলেই আফরান ওটা সরিয়ে নিয়ে বলে ,ওহ আপনার জন্য দুঃখ হচ্ছে জানেন ,তা কেউ একজন নিশ্চয়ই এতো দিন খুব যত্ন সহকারে খাইয়ে দিয়েছে । আজ থেকে এই যত্ন টাও আপনার কপালে জুটবে না মিস শ্রা-ব-নী ,আফরান নাম টা প্রতিটা অক্ষর ভেঙে ভেঙে বলছে।
আরিয়া কেশেই যাচ্ছে, মানুষ এতোটা অন্তরহিন পাষন্ড কিভাবে হতে পারে তার জানা নেই । চোখ দিয়ে পানি পরেই চলেছে ।

মিনিট কয়েক পর আফরান আরিয়ার গলায় হালকা ভাবে স্লাইড করে দিতে লাগলো ,
আরিয়ার আবারো ঘৃনা হচ্ছে এই স্পর্শে ,খুব বাজে এই ছোঁয়া ,সব চেয়ে নিকৃষ্ট ছোঁয়া এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে তার ,তাই আফরানের হাত টা সরিয়ে দিতে চাইলে আফরান বললো , আবারো শাস্তি টা বাড়িয়ে নিয়েন না মিস । যা হচ্ছে হতে দিন ,বলে পাশ থেকে গ্লাস টা এনে ঠোঁটের উপর রাখলো ।
এবার আরিয়া তীব্র ঘৃণায় হাত দিয়ে গ্লাস টা মুখের সামনে থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিলো । চুর্নবিচুর্ন হয়ে ফ্লোরে পরে আছে কাঁচের টুকরো গুলো ।
আফরান এবার ডেভিল হেসে খাট থেকে আরিয়া কে ছেরে দরজার দিকে পা বাড়ায় ।
আরিয়া যেনো জানটা ফিরে পেলো । জোড়ে জোড়ে এবার নিঃশ্বাস নিয়ে বেশ জোড়েই কাশতে লাগলো ,পাশ থেকে জগ টা নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই আকস্মিক লাইট অফ হয়ে যায় ।
আরিয়ার কলিজা টা বেড়িয়ে আসবে এখন মনে হচ্ছে , অন্ধকারে আরিয়ার ভয়ের মাত্রা ছাড়ায় ,এই তিন বছরে কখনো লাইট বন্ধ করে ঘুমায় নি সেই রাতের চিত্র ভেষে উঠে ।
আলিয়ার কাঁপা গলায় নিজে নিজে বলতে লাগলো ,ফো..ন….আ..মার ফোন। লা..ইট.।আ…লো দিন না ।কেউ আ..ছেন..।

কথা গুলো ভাঙা ভাঙা ভাবে কাঁপা গলায় বললো আরিয়া । তারপর সামনে ঘুরে বসে দুহাতে কিছু খোজতে লাগলো ,তার মধ্যেই মনে হলো কেউ একজন খাটে উঠেছে ।
আরিয়া:ক…কে…। মি চৌ…কথা টুকু শেষ করতে পারলো না তার আগেই ঠোঁট জোড়া কেউ একজন দখল করে নিলো ।
আরিয়া ভয়ে আতকে উঠলো কিন্তু তার বুঝার বাকি নেই সামনের লোকটা কে ,এসব কাজ করার দ্বারা সম্ভব এই বাড়িতে ।
আরিয়া নিজেকে সরানোর জন্য প্রস্তুত হতেই আফরান আরিয়াকে একদম নিজের কাছে এনে একহাতে পিঠ পেঁচিয়ে অন্য হাতে আরিরার পেছনের চুল গুলো ধরে আছে খিচে।
যতবার আরিয়া নড়ছে ততবারই আরিয়ার ঠোঁটে কামর বসিয়ে দিচ্ছে ।
আরিয়ার বুজতে বাকি নেই তার ছোটার চেষ্টা চালালেই শাস্তি ডাবল হচ্ছে তাই একদম পাথর হয়ে আছে । চোখ জোড়া নিয়ে অনবরত তখন থেকে পানি পরেই যাচ্ছে,,কিসের সাথে চোখের পানি মিশ্রিত হচ্ছে।
:- আচ্ছা এই কিস কে কি নাম দেয়া যায়?
– হ্যাঁ !কান্না চুমু বলা যায় এটাকে -:

আফরান নিজের কাজে ব্যাস্ত। তবে মনে যেমন ক্ষুভ নিয়ে কিস করেছিলো প্রথমে এখন সেই ক্ষোভ টা নেই মনে হচ্ছে। শান্ত ভাবেই কিস করে যাচ্ছে।
দুহাতে এতোক্ষণ আরিয়া কে যতটা জোড়ে ধরেছিলো এখন ঠিক ততটাই হালকা ভাবে আছে ।
সময় কতোক্ষণ গিয়েছে এর মাঝে কারো জানা নেই ।তবে অনেক টা সময় পার হয়ে গেছে আফরান হবে মাত্র আরুর ঠোঁট ছেড়ে প্রথমেই কপালে চুমু একে দিলো ।
আরিয়া ছাড়া পেয়ে প্রথমেই ঠোঁট মুছে ,বমির মতো ওয়াক থু করে আওয়াজ করলো। আবার পরক্ষনেই আফরানের কলার চেপে ধরে কঠোর গলায় বললো, প্রবলেম কি আপনার? যার তার সাথেই এমন করেন তাইনা । মেয়েদের কি ভাবেন?
আফরানের মুখে কথা নেই তবে দুহাতে আরিয়া দুগাল হালকা ভাবে ধরে বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে চোখের জল মুছে চোখের পাপড়ি তে ঠোঁট ছোয়ালো।

আরিয়া: এতোটা জঘন্য ব্যাবহার করতে কিভাবে পারছেন ? যেকোনো একটা মেয়েকে দেখলেন আর মনে ধরে গেলো আর তার সাথে যা ইচ্ছা করলেন ,খেলনার পুতুল পেয়েছেন? মেয়েদের কে কি মনে হয়?
আফরান হালকা হেসে বললো ,এখানে যে আমিই ছিলাম সেটা কিভাবে বুঝলে? অথচ আমি আওয়াজ করিনি ।
আরিয়া: আপনার এসব নোংরা কাজ অন্য কারো দ্বারা সম্ভব না,এখানে না বুঝার কি আছে?
আফরান: এটা যদি আগে বুজতে তবেই হতো । এতো কিছু হতো না।
আরিয়া: কি বলতে চাচ্ছেন?
আফরান আরিয়ার দুহাত কলার থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো ,ঘুমিয়ে পড়ুন ,আর হ্যাঁ আমার ছোঁয়া যদি নেক্সট টাইম শরীর থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছেন তবে খুব ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে পরতে হবে আপনার । ওয়ার্নিং মনে করতে পারেন অথবা অধিকার। আবার এটা ভাববেন না যে ওয়াশ রুমে গিয়ে শরীরে ডেটল সেভলন এসব দিয়ে নিজেকে আবারো গোসল দেবেন , আপনার সব কিছু আমার দৃষ্টি সীমার মধ্যেই হবে বুঝেছেন । সো বি কেয়ারফুল।এন্ড টেক কেয়ার ওকে ।

মি মাফিয়া পর্ব ৪৩

আর আপনি একদম পালানোর চেষ্টা করবেননা,এখন থেকে এখানেই থাকতে হবে ।নয়তো এবার আপনার কি অবস্থা করবো আপনার কল্পনার বাহিরে।
কথা গুলো বলে আফরান খাট থেকে নেমে চলে যায় । যাওয়ার আগে লাইট টা অন করে দিয়ে যায় ।একবারও পেছনে তাকায়নি ।
আরিয়া জায়গায় বসে মুখের উপর দুহাত রেখে কান্না করতে লাগলো । বারবার কেনো এই লোকটার হাতেই পরতে হয়? আমার জিবন টা কি স্বাভাবিক হবেনা কোনো দিন? কেনো আর পাশটা মেয়ের মতো আমার জীবন টা হলোনা ।? কেনো ?
কথা গুলো আরিয়া ঠাঁয় জায়গায় বসে বলতে লাগলো। তারপর…….

মি মাফিয়া পর্ব ৪৪