মি মাফিয়া পর্ব ৫০

মি মাফিয়া পর্ব ৫০
সুমাইয়া সাবিহা

ভার্সিটি তে যাওয়ার জন্য সামিরা রেড্ডি হচ্ছে,অনেক দিন ক্লাস করা হয়না ,,, আসার সময় প্রেমা কেও নিয়ে আসবে এটাই উদ্দেশ্য। কিন্তু আরু কি যাবে? আচ্ছা সব কিছুর মধ্যে তো ভুলেই গিয়েছিলাম আরুর পড়া লেখার বিষয় টা নিয়ে ,গত দু বছর কোথায় স্টাডি করেছে? আচ্ছা সেদিন তো আরুই গিয়েছিলো ভার্সিটি ,কথা টা ভাবতেই নিজে নিজে হাসির আশর বসায় সামিরা।

আরিয়ার সেদিনের এটিটিউড মার্কা এন্ট্রি টা জোস ছিলো । ভেবেই সামিরা হাসতে থাকে ,
পাশ থেকেই সাদেক যাওয়ার সময় হাসির আওয়াজে দাঁড়ায় ,দরজা খোলা থাকায় ডান পাশে তাকায় ,সেই প্রথম দিনের মতোই মনে হয় আজকেও আরেক বার সামিরা কে দেখলো মুগ্ধতায় ভরা চেহারা খানায় ,এই হাসি টার নাম কি রাখা যায়? এই হাসি যে কাউকে মাতোয়ারা বানানোর জন্য যথেষ্ট,,, কিন্তু সবার ভাগ্যে কি আর সব কিছু থাকে ? পরক্ষনে প্রেমার কথা মনে আসতেই নিজের অনুভূতির অবসান ঘটায় সাদেক।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চুল গুলো বারবার কপালের সামনে এসে পরছে সামিরা হাত দিয়ে ঠিক করে দিচ্ছে, মিনিটের মাথায় আবার নিজে নিজে চুপসে যায় ,বের হওয়ার আগে শেষ বারের মতো আয়নার সামনে গিয়েই একটু শকট খায় সামিরা , দরজার সামনে সাদেক কে দেখা যাচ্ছে বিশালাকারের আয়না টাতে।
সাথে সাথে পেছনে ঘুরে উরনা টা একহাতে ঠিক আছে কিনা সেদিকে খেয়াল করে ,বললো – আরে ভাইয়া কখন এসেছেন? ভেতরে আসুন না।
সাদেক এতোটাও আবার মত্ত হয়ে যায়নি যে ,একটা মেয়ের রুমে কেউ নেই যেনেও ভেতরে ঢুকে যাবে ,,,মুচকি হেসে জায়গায় দাড়িয়েই বললো , আজ ভার্সিটি যাবে?
সামিরা: হুম ,অনেক দিন হয় ক্লাস করিনা ভাবলাম আজ একটু দেখে আসি তাছাড়া প্রেমা কেও নিয়ে আসবো ভাবছি ।

সাদেক নিজেকে স্বাভাবিক রেখেই বললো ,,উনি ঠিক আছেন? আই মিন সুস্থ আছেন?
সামিরাও ঠোটে হাসি ফুটিয়ে বললো : একদম ঠিক আছে ।আপনি এসেছেন প্রেমা জানে?
সাদেক: সন্ধায় তো এসেছিলাম মাঝেই আয়শ দেখে একদম জোড় করেই নিয়ে আসলো কাজ টাও করতে পারলাম না ,
সামিরা: ওহ , ইদানিং দেখছি একটু বেশি আপনার রানিং চলছে ।
সাদেক: আসলে ইন্টারভিউ দিচ্ছি ,আমি চাচ্ছিলাম ,চাকরিটা এদিকে কোথাও নিয়ে মা কে সহ শহরেই নিয়ে আসবো ,কারন মায়ের অসুস্থতার কারণে প্রায় আসতে হয় তাই এটাই ভালো হবে ভাবছি।
সামিরা: একদম ঠিক ভেবেছেন ,তাহলে তো সব সময় দেখা মিলবে তাইনা‌
সাদেক হাসলো ।

সামিরা: আরে কি হলো আসুন না ভেতরে কখন থেকে বাহিরেই দাঁড়িয়ে……শেষ করার আগেই সাদেকের পেছনে আয়শ এসে দাড়িয়ে সামিরার দিকে দুচোখ একটু ছোট করে তাকালো ।
আয়শ কে দেখে সাদেক বললো ,তুই কখন উঠলি ? এতো জলদি তো তুই উঠিস না ।
আয়শ সামিরার দিকে তাকিয়ে বললো :বাড়িতে এতো মানুষ থাকলে কি ঘুম হয় ? তার উপর যদি সুন্দরী……
সাদেক হেসে : হ্যাঁ তাইতো ,,,বউকে একা রেখে কি আর ঘুম হয় ?
আয়শ: বাজে কথা ছাড় তো তুই ।আমার বউ আছে নাকি থাকলে কি একা ঘুমোতে হয় ।
সাদেকের কথায় সামিরা মনে হয় একটু আনকম্পোটেবল করলো , হাঁসফাঁস শুরু করে দিলো ।
আয়শ: এমন করছিস কেনো ? চুলকানির অসুস্থতা আছে নাকি ?

সামিরা এবার একটু বিরক্ততা নিয়ে বললো ,আমি যাবো ।
আয়শ: কেউ ধরে রেখেছে ?
সামিরা : আপনি সব সময় এমন উল্টো পাল্টা কথা কেন বলেন হ্যাঁ?
আয়শ : সোজা কথা তোর পছন্দ?
সাদেক : তোদের মাঝে আমি হাড্ডি হয়ে থাকতে চাইনা ,বলে আয়শের হাত টা কাঁধ থেকে নামিয়ে দ্রুত হেঁটে চলে গেলো ।
আয়শ ভেতরে আসতে আসতে মুখে হালকা ব্যাথার ছাপ একে বললো ,,, আমি হাসব্যান্ড হিসেবে এতোটাই বাজে ?
সামিরা আয়শের কথার উত্তর না দিয়ে খাট থেকে ছোট পার্স ব্যাগ টা হাতে নিয়ে বললো ,আমার লেট হচ্ছে আসছি ওকে ।

আয়শ সামিরার কাছে এসে একহাত দুরে দাঁড়িয়ে পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললো ,,, সাদেকের সাথে কি বলছিলি যেটা আমার সাথে বলতে পারিসনি ? সাদেক কি হয় তোর?
সামিরা: আপনি ঠিক কি মিন করতে চাচ্ছেন?
আয়শ: ডিরেক্ট বললে নিতে পারবি তো?
সামিরা গড়া ক্লিন করে বললো ,দেখুন বাজে কথা বলবেন না , আপনার মুখে এগুলো মানায় না ।
আয়শ: দেখ সামু ,আগে যা হয়েছে বাদ দে এখনের দিক টা খেয়াল কর।
সামিরা আয়শের চোখে দৃষ্টি পাত করে ভাবানাহীন।
আয়শ : আমি কি বলছি তুই বুজতে পারছিস ?
সামিরা এক হাত শরীরের জামায় খিচে ধরে , সব সময়ের মতোই ভেতরে কেমন যেনো হচ্ছে,হৃদপিন্ড টা ভেতরে স্থীর থাকতে পারছে না মনে হচ্ছে।

আয়শ সামিরার দিকে একটু এগিয়ে এসে বললো ,,,চল ,লেইট হচ্ছে ।
সামিরা : আপনিও যাবেন? আপনার তো অফিস…
আয়শ: আমার সাথে যেতে চাস না এটাই বুঝাচ্ছিস ? ওকে যেদিন নিজে থেকে বলবি সেদিন যাবো । কথাটা বলে আয়শ রুম থেকে বের হতে যায় সামিরা পেছন ডেকে চট করে বলে ফেললো , যাবো ।
এমন ভাবে কথা টা বললো যেনো দম টা আটকে ছিলো এতোক্ষণ,কথা টা শেষ করেই কয়েকবার ঢুকে গিলে একটু জোরে নিঃশ্বাস নিলো ।
আয়শ স্মীত হেসে পেছনে না তাকিয়েই বললো ,এসো আমার সাথে ।
সামিরা পেছনে পেছনে যেতে লাগলো ।

সামিরা যাওয়ার আগে জাফর সাহেবের কাছে বলেই বের হয়েছে তবে আয়েশের সাথে যাবে এটার ব্যাপারে কিছু বলেনি জাফর সাহেব সামিরার হাতে কিছু টাকা দিয়ে‌ বললেন , কিছু যদি দরকার পরে কল দিও ওকে ,আর সাবধানে থেকো‌।প্রেমা কেও নিয়ে এসো ।
সামিরা সম্মতি জানিয়ে বেরিয়ে আসে ।
কখন থেকে আয়শ গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে একদম‌ স্লোলি ,সামিরা বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে শান্তিময় স্নিগ্ধ বাতাস অনুভব করার মধ্যেই কখন যে চোখ টা লেগে এসেছে খেয়ালই করেনি ,সিটের সাথেই হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো ,আয়শ এতোক্ষণ মিরোরে দেখছিলো ,ঘুমিয়ে যাওয়ার পরে একরাশ হাসি টেনে বা হাতে মুখের উপর দুল খাওয়া চুল গুলো সরিয়ে দিতে লাগলো , কিন্তু বিরক্ত হয় তখন ,যখন দেখলো চুল গুলো বারবার ডিস্টার্ব করেই যাচ্ছে,একটু ভালোভাবে দেখতেও পারবেনা নাকি বউ টাকে আজব তো ।

তাই স্প্রিডে গাড়ি চালিয়ে একটা জনমানবহীন ফাঁকা ভাঙা রাস্তায় নিয়ে যায় গাড়ি টা ইচ্ছে করেই , চারদিকে গাছ পালা ,পাখির কিচিরমিচির শব্দ,এটুকু বুজতে পারছে নিজস্ব এড়িয়া পেরিয়ে গিয়েছে আয়শ হয়তো কোনো গ্রাম অঞ্চলের আশে পাশে হবে জায়গা টা । আজ শুধু এই নিষ্পাপ মায়াবী পিচ্চি মেয়ে টাকে দেখবে আর নতুন ভাবে প্রেমে পড়বে এটাই উদ্দেশ্য আয়শের ।
ঘুমের মধ্যে মেয়েটাকে এতো সুন্দর লাগে আগে জানলে তো সারাদিন ঘুমের মধ্যেই দেখতো ,উফস । ভেবে মুচকি হাসলো ,

সামিরা ঘুমের মধ্যেই একটু নড়েচড়ে মাথাটা আয়শের কাঁধের উপর ফেললো অজান্তেই ।
প্রথমে বিষয়টা ভালো লাগেনি আয়শের কারন এখন তো দেখতে পারবে না এই মেয়েটাকে । কিন্তু যখন মেরুরে আবারো দেখতে পেলো তখন প্রথমের ভাবনা টা ভুল প্রমানিত হলো ,এখন তো দুইটা লাভ মনে হচ্ছে,একে তো দেখতেও পারবে দ্বিতীয়ত তার ছোঁয়া টাও কাছ থেকে অনুভব করতে পারছে ।
আজ ইচ্ছে করছে কিছু লাইন কাব্য এই মেয়েটাকে নিয়ে প্রকাশ করতে , কিছু অনুভূতি ঘিরে আছে আয়শ কে । মুহুর্ত টা নিজের মতো করে উপভোগ করে যাচ্ছে ,
ফর্সা চামড়ায় সোনালী রঙের কানের দুল টা কি সুন্দর ভাবে মানিয়ে ,আয়শ মেরুরে দেখার পর একটু মাথাটা ঘুরিয়ে তাকালো এটা তো খেয়াল করেনি কখনো । কানের দুলেও মেয়েদের এতোটা রহস্যময়ী মনে হয় ? নাকি শুধু মাত্র এই মেয়েটাকেই মনে হচ্ছে রহস্যময়ী দৃষ্টি তে ঘায়েলকারীনী ।আজ বিভিন্ন প্রশ্ন যোগ করছে সামিরা কে নিয়ে আয়শ ।

আরিয়া সেই সকাল থেকে অপেক্ষা করছে কখন উঠবে আফরান ,মন টা বারবার উতলা হয়ে উঠছে ,খাবার শেষে মা বাবার সাথে একটু সময় কাটিয়েছে ,
উপরে আসার মাঝেই আবার ছায়া আটকে দিয়েছে খেলবে বলে ,বোনের আবদার ফেলতে পারেনি তাই ছায়া কে নিয়ে গার্ডেনে গিয়েছে ,ছায়া একের পর এক প্রশ্ন করছে ,আপু তুমি কোথায় ছিলে? কোথায় পড়েছিলে? তুমি অনেক কিউট হয়ে গেছো আগের থেকে ,আরিয়ার যদিও এই সময় টা তে এই প্রশ্ন গুলো ভালো লাগছেনা তবে মন রক্ষায় মুখে হাসি ফুটিয়ে যেমন করে উত্তর দিলে ছায়া বুঝবে ঠিক তেমন করেই উত্তর দিচ্ছে ।
অনেক টা সময় পর ছায়া গল্প শেষ করে দোড়ে ভেতরে চলে যায় ,আরিয়া ও ভেতরে যাচ্ছিলো হঠাৎ করেই মাথায় আসলো অন্য কিছু,ফোন টা নিয়ে মায়ার নাম্বারে ডায়াল করলো ,,,,

রিং হতেই সাথে সাথে মায়া রিসিভ করলো,
আরিয়া: উনার নাম্বার আছে তোর কাছে?
মায়া হয়তো ঠিক বুঝলো না ,,,
তাই আরিয়া আবার রিপিট করে একবার ঢোক গিলে বললো ,মি চৌধুরীর নাম্বার আছে ?
মায়া: সরি ম্যাম,উনার নাম্বার তো নেই।
আরিয়া: ১৫ মিনিটের মধ্যে নাম্বার সংগ্রহ চাই।
মায়া : কিন্তু ম্যাম…. মায়ার কথা শেষ না করতে দিয়ে আরিয়া কলটা কেটে দেয় ।
ঠিক ১৫ মিনিটের মাথায় আরিয়ার ফোনে কল আসে ,

– ফার্স্ট নাম্বার টা বল…
– মায়া : ম্যাম স্যারের পার্সোনাল নাম্বার পাবলিক রা নেই ,যেটা পেয়েছি সেটা অফিসের ।
– আরিয়া ফুঁসতে ফুঁসতে কল টা কেটে দিয়ে ভেতরে যাবে তার মধ্যেই গেইটের কাঁছ থেকে কেউ বলে উঠে ,হেয় .. গুড ,আমারো সন্দেহ হয়েছিলো সেটা তুমি ছিলে ।
– আরিয়া থেমে গিয়ে গেইটে তাকায় স্নেহা কে আসতে থাকতে দেখে মাথা টা যেনো আরো গরম হয়ে গেলো ,এই মেয়ের জন্য কতো ভুল বুঝা বুঝি হয়েছে আমাদের । আরিয়ার হাত দুটো নিজে নিজে মুঠো বদ্ধ হয়ে আসে ।
– স্নেহা আরিয়ার কাছে এসে বিদ্রুপ করে নাক ছিটকে বললো ,এই মেয়ে তোমার মধ্যে কি আছে যা আমার মধ্যে নেই ?

আরিয়া: এখানে কেনো এসেছো? আবারো কিছু করার প্লেন আছে নাকি? তোমাকে কেনো কম্পানির থেকে বের করে দিচ্ছেনা? যতোসব বিরক্তিকর এডভান্সেড ।
স্নেহা: দম বেড়েছে দেখছি তোমার , তা আফরান চৌধুরী কে কি দিয়ে নিজের কাছে টানো বলতে পারো?
আরিয়ার শরীর জ্বলছে,আচমকাই স্নেহার ডান হাত টা শক্ত করে ধরে মচকে দিয়ে বললো ,একদম কথা বাড়াবে ,নেক্সট টাইম যেনো এই বাড়ির ধারেকাছেও না দেখি ওকে ।
স্নেহা: আহ করছো কি ,হাত ছাড়ো বলছি।
আরিয়া এক ধাক্কায় স্নেহা কে ফেলে দিয়ে বললো ,গেট আউট।
স্নেহা নিচ থেকে উঠতে উঠতে বললো ,আরে আমি তো দরকারে এসেছি ,আফরান স্যারের আজ মিটিং আছে কল দিয়ে যাচ্ছি ধরছেই না ।
আরিয়া গিয়ে স্নেহার বাম গালে ঠাস করে চর বসিয়ে দিয়ে বললো ,একদম উনার নাম টাও মুখে নিবে না,,মাইন্ড ইট ,,

কথাটা বলে স্নেহার হাত থেকে ফোন টা টান দিয়ে নিয়ে গেলো ।
স্নেহা:এই মেয়ে করছো টা কি আশ্চর্য তো ,আমার ফোন দাও ।
আরিয়া স্নেহার ফোনটা খুলে ডায়াল পেডে গিয়ে আফরানের নাম্বার টা চেক করে একদম সবার উপরেই ছিলো , নাম্বার টা নিজের ফোনে তুলে নিয়ে স্নেহার ফোন থেকে ডিলিট করে দিয়ে ফোন টা স্নেহার দিকে ছুরে মেরে বললো ,গেট লস্ট।
স্নেহা:তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?
আরিয়া কথা না বাড়িয়ে কেয়ার টেকার ডেকে বললো ,এই মেয়ে যেনো আর কখনো এই বাড়ির তৃসীমানায় না আসে ওকে ।

কথা টা বলে আরিয়া বাড়ির দিকে হাঁটা ধরে তার মধ্যেই আফরান ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে ,, আফরান কে দেখে আরিয়ার পা দুটো থমকে যায় ,,,ভেতর থেকে উৎফুল্লতা ঘিরে নেয় চেহারায় , কিন্তু তার চেয়েও ভয় টা বেশি , আচ্ছা কয়টা থাপ্পড় খাবো? ২ টা নাকি ৪ টা? নাকি এই তিন বছর বাড়িতে থাকলে ঠিক যতোটা এতো দিনে খাওয়া হতো সব গুলো উশুল করবে? প্রশ্ন গুলো আরিয়ার মনে মনে উশখুশ করছে,,হাত দুটো কাঁপছে ।
কিন্তু আরিয়ার ভাবনা টা মুহুর্তেই মিথ্যা প্রমানিত করে দেয় আফরানের নিশ্চুপতা,আরিয়া কে মনে হয় দেখলো না চুপচাপ সামনের দিকে তাকিয়ে পেন্টের কালো বেল্ট টা ঠিক করতে করতে স্নেহার কাছে গিয়ে কিছু একটা বললো যেটা দুর থেকে বুঝার ক্ষমতা হলোনা আরিয়ার। সঙ্গে সঙ্গে ঠোঁট উল্টে নিশ্বব্দে কান্না করে দেয় । সে তো ভেবেছিলো হয়তো ব্যাস্ততার কারনে তার সাথে কথা বলছে না কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে ইচ্ছে করে এভোয়েট করছে । কথা টা ভাবতেই আরো বেশী কষ্ট অনুভব হয় বুকের পাশ টায় । জায়গায় দাঁড়িয়ে আফরানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে ।
আরিয়া এতোক্ষণ স্নেহার কথা তো ভুলেই গিয়েছিলো তাই খেয়ালই করেনি স্নেহার অবস্থা টা ।

সূর্য তার আলোক রশ্মি কেড়ে নিয়ে অন্ধকারে পরিনত করেছে পৃথিবী কে , একটু চাদের আলো প্রকাশ পেয়েছে আকাশজুড়ে। কিছু তারাও যেনো চোখে ধরা পরছে , পরক্ষনেই আবার উবে যাচ্ছে। এই শিতল মৃদু আবহাওয়া টা দিয়েই আফরান বাড়িতে ঢুকে । পেটের ক্ষত জায়গা টায় ভিষন ব্যাথা করছিলো তাই ফিরে এসেছে , অবশ্য সব গুলো ফাইল এখনো চ্যাক করা শেষ হয়নি ,কাল চ্যাক করা যাবে এতোটা ইমপোর্টেন্ট ও নয় ।
ধীর পায়ে ড্রয়িং রুমে এসে উপরে যেতে যেতেই আড়চোখে রুম টা একবার পরখ করে নিয়ে কপাল কুচকায় , সবাই আড্ডা দিচ্ছে,আয়শ সামিরা,প্রেমা সাদেক এমন কি জাফর সাহেব খলিল রহিমা সবাই মিলে বসে আছে ।
কিন্তু এখানে হয়তো শুধু আড্ডা নয় একটু খেল তামাশাও হচ্ছে কারন ছোট একটা বালিশ হাতে একে একে সবাই হাতে নিচ্ছে রহিমা বেগমের হাতে গিয়ে থেমে যায় এ পর্যায়ে সবাই হুঁ হুঁ শব্দে হেসে উঠে ।
আয়শ বললো : কাকী উঠো উঠো আর কতো বসে থাকবা।

আয়ের কথায় খলিল সাহেব বললেন ,একদম ঠিক হয়েছে ,বয়স্ক মানুষ আমাদের মাঝে থেকে লাভ নেই ।
খলিলের কথায় সবাই হাসলেও রহিমা গাল ফুলিয়ে বললো ,আমি বয়স্ক হলে তোমরা কি কচি খোকা ? যতো আজগুবি কথা বললেই হলো ।
এদের অবস্থা দেখে আফরানের বুঝতে বাকি নেই সবাই যে কিছু একটা গেমে আছে ,,, কপাল কুঁচকে আবারো তাকায় কিন্তু কিছু একটা খুঁজে চলছে । পরমুহূর্তেই আবার জলদি করে উপরে উঠে হাত থেকে ফোন টা নিয়ে কিছু একটার ভিডিও প্লে করলো ,এটা দেখতে দেখতে নিজের রুমের কাছে গিয়ে ভেতরে না ঢুকেই ভ্রু জোড়া কুঁচকে চোখ দুটো তে বিরক্তিতা নিয়ে উপরের দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে বললো ,সাহস হয় কিভাবে ওর ।
তারপর রুমের ভেতরে ঢুকে কোট টা খুলে বিছানায় ছুড়ে মারে ।
আরিয়া চোখ বন্ধ রেখেই বিরক্ততা নিয়ে মুখের উপর থেকে কাপর টা সরিয়ে কম্বল টা আরেকটু টেনে নেয় নিজের উপর ।

আফরান নিজে নিজে ফুঁসতে ফুঁসতে মনে মনে বলতে শুরু করে : – এই মেয়ে আমার রুমে কি করছে? কে অনুমতি দিয়েছে এটাকে ? আমি বলেছি আসতে আমার রুমে? লাগবে না আমার এমন বউ , যা ইচ্ছা করে বেরাবে আমি কিছু বলতেও পারবোনা , বারবার পালিয়ে বেরাবে আমার থেকে দুরে যেতে চাইবে এমন বউ আমি চাইনি । পরপুরুষের কাছে গিয়ে হেল্প চাইবে এমন বউ লাগবেনা আমার । তিন টা বছর দুরে থাকার পরেও পালাতে চায় এতো সাহস কে দিয়েছে ওকে? ।

মি মাফিয়া পর্ব ৪৯

আরিয়া সন্ধ্যা বেলা মন খারাপ করেই বসে ছিলো কতোবার কল দিতে চেয়েছে কিন্তু সাহস হয়নি ,সবাই যখন গেম টা শুরু করে আরিয়া খেলবে না বলে উপরে এসে সোজা আফরানের রুমের কাছে আসে,দরজা খোলা পেয়েই ঢুকে পরে উৎফুল্ল হয়ে , কতোদিন হয় এই রুম টা দেখা হয়না তার ,আগের মতোই আছে রুমটা ,আগের মতো গুছানো,ফ্রিজ টাতেও দুচারটা বিয়ারের বোতল ছাড়া আর কিছু নেই । ছাদের মতো বিশাল বারান্দা টাও একটু ঘুরেছিলো কিন্তু শীতল হাওয়া শরীরে পরতেই কিছু সময় পর চোখে ঘুম চলে আসে , তাই এতো কিছু না ভেবে বিছানায় নিজেকে এলিয়ে দিলো সন্ধ্যারাতে । তারপর……

মি মাফিয়া পর্ব ৫০ (২)