মি মাফিয়া পর্ব ৬

মি মাফিয়া পর্ব ৬
সুমাইয়া সাবিহা

আয়শ সামিরা কে চোখ ঘুরায়
আরিয়া:আরে কি বলছো ভাইয়া আমাকে এটা দিয়েছে ,,প্রেমিক কেনো দিবে?
সামিরা হুঁ হুঁ করে হেসে বললো তোমার মাথায় তো দেখছি বুদ্ধি একটু কম আছে।
আরিয়া :আমি আবার কি করলাম আমার মাথায় বুদ্ধি কম হতে যাবে কেন আমিও বুদ্ধিমতি ।
ভাইয়া আমাকে ফোনটা দিয়েছে কারন আমার একা ভালো লাগেনা আর প্রয়োজন ও তো হয় তাছাড়া ভাইয়া প্রেমিক কি করে হবে?ভাইয়ারা কখনো প্রেমিক হয় নাকি
আয়শ আরিয়ার কথায় থতমত খায়,এটা বুজে গেছে আরিয়া ভাইয়া বলতে ভাইয়াই বুজে ।আর বেশি কিছু না সেটা অন্য ভাই আর নিজের ভাইয়ের মধ্যে পার্থক্য একটু কম বুজে‌।আর তার তো কোনো ভাই নাই আফরান আর আয়শ ই তাও চাচাতো ভাই।

সামিরা : আচ্ছা থাক আর কথা না বাড়াই আরেকটু বড় হোও বুঝবে।
আরিশা:আমি আর তুমি তো সেম তাহলে আমাকে বুজতে বড় হতে হবে কেনো হ্যাঁ?
আয়শ আর সামিরা হো হো করে হেসে উঠলো। আরিয়া অভিমানী চোখে চোখ অন্য দিকে ঘুরালো।
সামিরা আরিয়ার ডান হাত ধরে বললো ,আরে রাগ করোনা আগে শুনো তো ,,
আরিয়া:শুনবো না
সামিরা :চলো ছাদে গিয়ে গল্প করি
আরিয়া এবার লাফিয়ে উঠলো বললো , সত্যি? চলো অনেক দিন হয় পেটে কথা ঘুরঘুর করে কিন্তু বলতে পারিনা ।
সামিরা বিদ্রুপ হেসে বলে :আহারে আমার বেচারী বোন টা গো ।
-আমিও কি তোমাদের সাথে আড্ডায় জয়েন হতে পারি ?
সামিরা পেছন ঘুরে তাকিয়ে বললো , নাবিল ভাইয়া এটা কি করে হয় হুম মেয়েদের মাঝখানে তুমি কি করবে ।
নাবিল:কি করবো আর তোর বান্ধবীর সাথে লাইন মারার চেষ্টা করবো ,হা হা
আরিয়া নাবিলের কথায় লজ্জা পেল মনে হলো চোখ দুটো দেখেই বুঝা যাচ্ছে ।
আয়শ নাবিলের দিকে ভ্রূ কুচকায়।
নাবিল:আরে এভাবে তাকানোর কি আছে আমি তো মজা করলাম কারো জিনিস আমি নিয়ে কি করবো হা?
সামিরা হাসলো।
আরিয়া সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো কিন্তু বোধ গম্য হলোনা কিছুই।
সামিরা: আচ্ছা চল যাই ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বেশ অনেক্ষণ ধরে আড্ডা দিয়েছিলাম অনেক দিন পর এভাবে আড্ডা দিতে পেরে সত্যি আজ ভালো লাগছে । সবাই কতো মিশুক এই কথাটা ভাবতেই ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি বেরিয়ে আসলো।
এখন মুলতো আমি ঘুমাবো রাত ১২ পর উপরে বাজে । দুই দিন ধরে স্কুলে যাওয়া হচ্ছে না ।কাল তো যেতেই হবে । ভেবেই চোখের পাতা এক করলাম ।
সকাল বেলা উঠলাম সামিরার ডাকাডাকি তে।আরে ভাই এভাবে কেউ ডাকে নাকি ।
আমি চোখ না খুলেই উঠে বসলাম ,কি হয়েছে এভাবে ডাকছো যে, কিছু হয়েছে?
সামিরা : কিছু হয়েছে আবার কি জানিস না আজকে স্কুলে অনুষ্ঠান আছে ? আমি চোখ কচলে সামিরার দিকে তাকালাম।
সামিরা :চাচা বললো তুইও নাকি…ঐ স্কুলে পড়িস আমিও তো সেম ক্লাসে তোর সাথেই ঐ স্কুলেই পড়ি ।
আমি হকচকিয়ে বলে উঠলাম সত্যি বলছো? তাহলে ঐদিন কথা বললে না কেনো?
সামিরা কপালে একহাত রেখে বললো ,আমি কি তোকে চিনতাম নাকি হ্যাঁ? আর তাছাড়া আমাদের কি দেখা হয়েছিলো নাকি

আমি:ওহ তাইতো। কিন্তু আজ কিসের অনুষ্ঠান রে?
সামিরা আগে রেডি হো জলদি , যেতে যেতে বলবো তখন শুনিস।
আমিও কথা না বাড়িয়ে চলে যাওয়ার জন্য উঠতে যাবো হঠাৎ করে মাথা ঘুরে পড়ে যাই
সামিরা চমকে বলে উঠলো:আরিয়া কি হলো তোর বলে আমার হাত ধরলো । চোখ গেলো হাতের কাটা যায়গা টা তে।বেন্ডেজ তো ছিলো হাতে তার উপর দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে এটা কিভাবে সম্ভব কাল তো বেটার ফিল করছিলাম তাহলে কি হলো।
সামিরা ভয় পেয়ে আমাকে বলতে লাগলো,আরিয়া ,এই আরিয়া তোর হাত থেকে এতো রক্ত পড়ছে কেনো এতোক্ষণ লক্ষ্য করিনি ।
আমি:হ্যাঁ সেটাই তো ঘুম থেকে ব্যাথা অনুভব করছিলাম কিন্তু বুঝিনি এমন হচ্ছে তাছাড়া আমিও তো এতোক্ষণ খেয়ালই করিনি বলে কান্না করতে লাগলাম।
সামিরা খাট ছেড়ে দৌড়ে নিচে গিয়ে সবাইকে ডাকতে লাগলো । কাজের খালা (লতা ):কি হয়েছে আফামনি?এমনে কেন চিল্লাচিল্লি করতাছেন? স্যার তো আজ সকাল সকাল চলি গেছেন অফিশে।সামিরা কিছু না বলে হাঁপাতে লাগলো।

রাবেয়া বেগম(সামিরার মা):কি হয়েছে টা কি এভাবে চেঁচাচ্ছিস কেনো?
সামিরা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো ,মা আরিয়া ..আরিয়া..বলে হাঁপাতে লাগলো।
রাবেয়া বেগম সামিরার আর কোনো কথা না শুনে দৌড়ে উপরে যান।তার পেছনে সবাই গেলো উপরে আরিয়ার রুমে ।গিয়েই দেখলো আরিয়ার হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে মনে হচ্ছে কয়েক ঘন্টা আগে থেকেই রক্ত ঝরেছে বিধায় এমন কিছু জায়গা শুকিয়ে কাট কাট হয়ে আছে বিছানা টা আর আরিয়ার হাতের নিচে ভেজা রক্ত।
রক্তাক্ত অবস্থায় আরিয়া এভাবে পরে আছে দেখে আয়শ দৌড়ে এসে আরিয়া কে ধরলো ,এই আরিয়া কি হয়েছে তোমার কথা বলো ,চোখ খুল আরিয়া ।
সামিয়া অবাক প্রায় এইতো দেখে গেলো আরিয়া বসে আছে কথা বলছে এখনি দেখছে চোখ বন্ধ করে মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে আছে ,হ্যাঁ ঘুমিয়ে আছে আরিয়া কিন্তু সেটা কি আদৌ পৃথিবীর ঘুম নাকি অপর প্রান্তে যারা আছে তাদের মতো ঘুম?
সবার চোখে জল গড়গড় করে পরেই চলছে ,রাবেয়া বেগম তার হাসবেন্ড আজমল সাহেব নিজেকে শক্ত করে বলে উঠলেন ,আয়শ হচ্ছে টা কি এখানে ,আগে চেক করো ফার্স্ট জ্ঞেন হারিয়েছে আমার মনে হচ্ছে।
আয়শ মুহূর্তেই আজমল সাহেবের কথায় ধ্যান ভেঙ্গে বলে উঠলো, হ্যাঁ? হ্যাঁ;করছি আমি এখনি ,আরিয়ার কিছু হতে পারেনা ।ওর কিছু হবেই না ,, আল্লাহ আমার সাথে এমন অন্যায় করতেই পারেননা আমি জানি বলেই আরিয়া হাত চ্যাক করে বলে উঠলো , বাবা ফার্স্ট এম্বুলেন্সের ব্যাবস্থা করো । (আজমল সাহেব কে আয়শ বাবা বলেই সম্বোধন করে)
আজমল বুজতে পারলেন এখনো সময় আছে ,,ভেবেই ফোনের স্ক্রিনে নাম্বার ডায়াল করলো –

আরিয়া গোসল করছে আর আর গায়ের কাটা ছেড়া দাগ গুলোর দিকে তাকাচ্ছে। সব গুলো দাগ ব্লেড দিয়ে আঁকা,হ্যাঁ দাগ গুলো সেদিনই দেখেছিলো কিন্তু কাউকে বলার সাহস পায়নি আরিয়া ।দাগ গুলোর উপর আবার চিকিৎসা নামক হালকা মেডিসিন আর ওয়ান টাইম বসানো ছিলো ।
কেনো করলেন এটা আমার সাথে ভাইয়া আমি কি করেছিলাম ,আমি তো আপনার সামনে পর্যন্ত যাইনি ,তাহলে কি অন্যায় করেছিলাম যে এভাবেই আমাকে শাস্তি দিতে হলো আপনার।হাতের দাগটাও এখনো দেখা যায় আপনি ব্লেড দিয়ে একি জায়গায় দ্বিতীয় বার আঘাত করেছিলেন ।ভূলিনি কিছুই ভূলিনি ভাইয়া তবে আর বেশিদিন আমি এ বাড়িতে থাকবো না এই তো এই বছর টা শেষ হলেই দেশে চলে যাবো আবার ।
এই চার টা বছর এভাবেই এই বাড়িতে কাটিয়ে দিয়েছে আরিয়া রাগ করে বাড়িতেও আর যাওয়া হয়নি ।
তবে আরিয়ার মা বাবা আস্তে চেয়েছিলেন আরিয়া জোড় গলায় বলেছিল যদি আসে তাহলে আরিয়া কোনো দিকে চলে যাবে আর পাবেনা তাকে।

এখন আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। সেদিন যদি মা বাবা জোড় করে আমাকে এখানে না পাঠাতো তাহলে ভাইয়া নিশ্চয়ই আমাকে এমন নির্মম ভাবে আঘাত করতে পারতো না । এই সব কিছুর দায় আরিয়া তার মা বাবাকে মনে করে । তবে আর এ বছর পর সে আর পড়বে না বলে ঠিক করে নিয়েছে । এই বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে টিউশনি করবে নয়তো অন্য কিছু করবে তবুও এই বাড়িতে আর থাকবেনা ।কারন আফরান ভাইয়া সেদিনই দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে গিয়েছিল কোনো এক কারনে তারপর আজও বাড়ি ফেরেনি একটা দিনের জন্যেও কল দিয়ে দেখনি কিন্তু যদি আবারও ফিরে আসে? সেই ভয়ে এখানে আর থাকবেনা ভেবে ঠিক করেছে আরিয়া । সেদিনের আঘাত গুলো আফরান আরিয়া কে করেছিল সেটা আর কেউ না জানলেও আরিয়া জানে কারন সামিরা যখন নিচে গিয়েছিল আফরান ঠিক সে সময় আরিয়ার কাছে গিয়ে কাটা হাত জোড়ে চেপে ধরে বলেছিল ,তুই যতো কষ্ট পাবি আমি ততই ভালো থাকবো এগুলো তো কিছুই না আরো ভয়ংকর কিছু দেখবি যতদিন থাকবি আমার জীবনে আমার কাছাকাছি ঠিক ততদিন এমন ভাবেই ব্যাথা দিবো আর যদি আমায় বাধ্য করিস তো মেরেও ফেলতে পারি এই বাড়ি থেকে চলে যা ভালোয় ভালোয় বলছি । কথা গুলো বলে আফরান সবাই আসার আগেই আবার নিজের রুমে চলে যায় ।

মি মাফিয়া পর্ব ৫

আরিয়া বাথ টেবে পানিতে ডুবে আছে এখনি সুইসাইড করবে ভেবেছিল কারন যখন তার ঐ দিনটার কথা মনে হয় আর‌ নিজের গায়ের এই ব্লেডের দাগ গুলো দেখে প্রতিদিন গোসলে নিজের প্রতি নিজের ঘৃণায় সুইসাইড করার চেষ্টা করে কিন্তু দম আটকে আসার আগে মুহূর্তে ই মাথা তুলে ফেলে । নাহ তাকে বাঁচতে হবে আরও কিছু দিন সহ্য করে নিক পরে এই বাড়ি ছেড়ে সব আপন মানুষ ছেড়ে চলে যাবে সে । তারপর….

মি মাফিয়া পর্ব ৭