মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৫৫
মির্জা সূচনা
মেহের দরজা আটকে হেসে হেসে বসে পড়েছে। আর ওদিকে রিদ বিছানায় শুয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। হাসতে হাসতে চোখে পানি এসে গেছে।
আর দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রাকিব, লাবিব আর শান্ত দরজা ধাক্কাছে।
—আমাদের পাওনা দে ভাই!
অনেক খন দরজা ঠকঠকিয়েও যখন কোনো কাজ হলো না, তখন…
ওরা দরজায় লাথি মেরে শান্ত বলে ওঠে,
— তোর মেশিনে সমস্যা হোক সালা!
রাকিব বলে,
— তোর যন্ত্র যেন জং ধরে যায় সালা!
লাবিব বলে,
—ব্রো, কাজটা ঠিক করলা না দেইখো, ভাবি তোমাকে উঠতে-বসতে কেলাবে। এটা আমার অভিশাপ।
রাজ হেসে বলে,
— আচ্ছা অনেক হয়েছে এখন তোরা যা গিয়ে ঘুমিয়ে পর।ওদের একা ছেরে দে।
তারপর মেহরিনের দিকে ফিরে বলে,
— চলো বউ।
মেহরিন হাসতে হাসতে চলে যায় রাজের সাথে।
আজ সবাই লাবিবদের ফ্ল্যাটেই থাকবে।
শান্ত বলে,
— ঘুমাব না! বন্ধুর বাসর আর আমরা ঘুমাব—সম্ভব না!
রাকিব বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— একদম!
লাবিব চিন্তিত মুখে বলে,
— ব্রো, এটা কি ঠিক হবে?
শান্ত আর রাকিব ওর গলায় জড়িয়ে ধরে বলে,
— অবশ্যই! চল!
তারপর ওরা তিনজন দরজায় কান পেতে রাখে।
আর ওদিকে মেহের আর রিদ হাসতেই আছে।
রিদ স্থির হয়ে বলে,
—এটা কি করলা তুমি?
মেহের উঠে বলে,
—বেশ করেছি! এখন একটু ভুগতে দিন, সকালে উঠে দিয়ে দিব ওদের পাওনা।
রিদ কিছু বলার আগেই মেহের বলে ওঠে,
—ওমন সং সেজে দাঁড়িয়ে আছেন কেন, এদিকে আসুন। আমাকে সাহায্য করুন।
রিদ বলে,
— কি হেল্প করবো?
মেহের বলে,
—দোপাট্টার ক্লিপ খুলে দিয়ে, উধার করুন।
রিদ চোখ ছোট করে বলে,
—তুমি তো একটা সেলফিও তোলো নাই, এখনই খুলে ফেলবে?
মেহের বলে,
— এখন মুড নাই।
রিদ বলে,
—কী! এই সেলফি তুলবা বলে কান্না করলা না, এখন বলছো সেলফি তোলার মুড নাই?
মেহের রিদের চোখে চোখ রেখে বলে,
— ওটা তো শুধু কথার কথা ছিল। আমার কান্না না করার আসল কারণ তো আপনি।
রিদ স্তব্ধ হয়ে যায়।
মেহের হৃদয়ের চোখে চোখ রেখে শান্ত স্বরে বলে,
—আমি যাকে ভালোবেসেছি, তাকে পেয়েছি। যার সঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছি, তার সাথেই আমার বিয়ে হয়েছে। তাহলে আমি কাঁদবো কেন বলুন তো? অযথা নাটক আমার পছন্দ না। আর তার থেকেও বড় কথা, আমি যদি কাঁদতাম, আব্বু, আম্মু, ফুফি, মেহু, মেহবুবা, মাহির, জেরি, চুমকি, আরফারা—সবাই কাঁদতো। তাই না?
তাই, আমি কাঁদি নাই, আর ওরাও কাঁদেনি। এখন বলুন তো, ঠিক করেছি কিনা?
কান্নার বদলে আমি সবাইকে হাসিমুখে বিদায় দিয়েছি। আমার মতে, সব মেয়ের উচিত, হাসতে হাসতে বাবা-মাকে বিদায় দেওয়া।
রিদ স্লান হেসে মেহেরের কথাগুলোর মর্ম বোঝার চেষ্টা করে।
মেহের নরম গলায় বলে,
— উফফ বর মশাই… হেল্প মি!
রিদ হেসে ফেলে।
মেহেরও হাসে।
রিদ ইশারা করে ঘুরে দাঁড়াতে।
মেহেরও উল্টো ঘুরে দাঁড়ায়।
আর রিদ একে একে দোপাট্টার সব ক্লিপ খুলে দেয়।
আর দরজার ওপাশে কান পেতে রাখা সেই তিন যুবক একে অপরের দিকে তাকায় ওরা স্তব্ধ ওদের কথা শুনে।
লাবিব বলে,
— ধুর, এখনও খোলা-খুলির মাঝেই আটকে আছে!
কথাটা বলেই মুখ চেপে ধরে।ভুল সময়, ভুল জায়গায়, ভুল কথা বলার জন্য নিজের মাথায় ফাটিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে লাবিবের।।
রাকিব আর শান্ত হাসতে থাকে।
রাকিব বলে,
—ভাই, একটু ধৈর্য ধর!
শান্ত বলে,
— একদম ঠিক বলেছিস!
লাবিব বিরক্ত হয়ে বলে,
— আমার বিরক্তি লাগছে।
রাকিব বলে,
— তুই চুপ কর, শুনতে দে!
মেহের হঠাৎ রিদকে ফিসফিসিয়ে বলে,
—কেউ আরি পেতেছে দরজার বাহিরে।
রিদও ফিসফিস করে,
—তাহলে এখন…
মেহের হেসে উঠে দাঁড়ায়,রিদকে চোখ টিপ দিয়ে একটু জোরে বলে,
—বোরিং লাগছে বর মশাই! বাসর-বাসর ফিল আসছে না!
রিদও একই সুরে বলে,
— বলেন বউ রানী, কী করলে আপনার ভালো লাগবে? আপনার জন্য, আপনার বর সর্বদা রেডি!
আর ওদিকে দরজার পাশে থাকা তিনজন—লাবিব, শান্ত আর রাকিব—হাসি আটকাতে কষ্ট হচ্ছে।
লাবিব বলল,
—দেখছো? বিয়ে করেই বিড়াল হয়ে গেছে।
শান্ত বলে,
— মেউউ।
রাকিব শান্তকে এক লাথি মেরে বলল,
—চুপ কর সালা! কথা বললেই বুঝে যাবে আমরা কান পাতছি।
শান্ত মাজা ডলতে ডলতে এসে বসে বলে,
— সালা মারলি কেন?
রাকিব বলে,
তো কী চুমু দিবো সালা?
লাবিব হেসে বলে,
— তোমরা ঝগড়া করা অফ করো শোন।
অদিক থেকে মেহেরের গলা,
—না গো, একদম ভালো লাগছে না।
রিদ চোখ টিপে বলে,
— তাহলে আসো, একটা চুমু দেই। সব ঠিক হয়ে যাবে।তখন দেখবা তোমার কাছে সব কিছু ভালো লাগবে। আসো আসো।
মেহের হেসে হাসি চেপে বলে,
— এত সোজা?
রিদও বলে,
— অধিকার আছে।
মেহের বলে,
— তাই বলে জোর খাটাবেন?
রিদ হেসে বলে,
— তবে সেচ্ছায় অনুমতি দাও।
মেহের হাসে, তারপর একটা গান ধরে—
chhune se Jal jaaoge…!
Samjho Naaa Phool bhphool jhari..!
তারপরই রিদ পরনের শেরোয়ানির একটা কোণা কামড়ে ধরে নাচতে নাচতে গাইতে থাকে,
are re re re giri giri giro giri bijali Giri..!
ispe Giri uspe Giri bijali Giri Lo girPari..!
মেহের লেহেঙ্গার একটা কোণা কামড়ে ধরে নাচতে নাচতে বলে—
he Giri Giri Giri bijali Giri..!
ঘরের ভেতরে নবদম্পতির পাগলামো নাচ আর গানে এক উৎসবমুখর দৃশ্য!
আর বাইরে থাকা তিন ভদ্রলোক একে অপরের দিকে তাকায়।
লাবিব বলল,
— ওরা তো দেখি ফুল মুডে আছে।
শান্ত মাথা নেড়ে বলে,
— হ্যাঁ হ্যাঁ আমি সহবাস।
রাকিব এক লাথি মেরে বলে,
— সালা, ওটা সহমত হবে!
শান্ত লাথি খেয়ে কিছুদূরে গিয়ে পরে, আবার হামাগুড়ি দিয়ে ফিরে আসে, বলে,
— হে হে, ওইটাই ওইটাই সহমত!
লাবিব মুখ চেপে ধরে বলে,
—এদের নাচ-গান শেষ হবে কখন, বল তো?
শান্ত বলে,
— এরা আমার ধৈর্যের সীমা খায়ে ফেলতেছে কিন্ত।
ঠিক তখনই ঘরের ভেতর থেকে কথা একটা শব্দ শুনা যায়।নাচ গান শেষ হয়েছে।
শব্দের কারণ হচ্ছে মেহের এক লাফে বিছানার ওপর উঠে বসে।
মেহের বলছে,
— জাননননন! Give me more more cumma!
রিদ ও হেসে এক লাফে বিছানায় উঠে যায়।
রিদ বলে,
— Yes jaan, why not?
বলেই ঠোঁট উঁচিয়ে একের পর এক চুমু দিতে থাকে।
মেহের মুখে হাত দিয়ে হাসছে, কারণ রিদ তো হাওয়াই চুমু দিচ্ছে!
আর দরজার বাইরে দাঁড়ানো তিন গোয়েন্দা উল্টা পাল্টা ভেবে লজ্জায় লাল-নীল-হলুদ হয়ে যায়।
লাবিব বলে,
— ভাই, এবার চল! আর থাকা যাবে না। Plz চল!
বলেই উল্টো-পাল্টা ভাবে দৌড়ে চলে যেতে গিয়ে তিনজনই একসাথে ২-৩ বার সামনা সামনি পড়ে যায়।
লজ্জায় একেকজন মাথা নিচু করে যেতে থাকে, আর বারবার একে অপরের গায়ে ধাক্কা খায়।
অপরদিকে, তাদের দৌড়ের শব্দ পেয়ে ঘর কাঁপিয়ে হেসে ওঠে মেহের আর রিদ।
হেসে হেসেই বিছানা থেকে নামলো মেহের।
ড্রেসিং টেবিলের কাছে রাখা টুলে গিয়ে বসল।
গহনা এক এক করে খুলছে।
পেছনে রিদ, দুই হাত মাথার নিচে দিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে।
আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকা মেহের হঠাৎ বলে উঠলো,
— শুয়ে না থেকে একটু সাহায্য করুন।
রিদ উঠে এসে পাশে দাঁড়ায়।
— কি সাহায্য?
মেহের বলল,
—চুল থেকে ক্লিপগুলো খুলে দিন।
রিদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
— এত্ত ক্লিপ কে লাগায়! আর চুলের একি হাল? চুল দিয়ে এমন পিরামিড বানায় কে ?
মেহের মুখ ছোট করে তেরামি করে বলল,
—আপনার বউ, সমস্যা আপনার। খুলে দিন, না হলে একাই পারব, দূরে যান।
রিদ হেসে পেছন থেকে মেহেরকে জড়িয়ে ধরে,
— রাগ করো না, নীলয়োনী। আমি তো মজা করছিলাম।
নীলয়োনী নামটা শুনে মেহের এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়।
তারপর আবার বলে,
— এই ছাড়ুন তো যত! সব আদিখ্যেতা, এখন এসেছে প্রেম দেখাতে!
রিদ আবার হেসে বলল,
— আমি প্রেম দেখাই তাই না,তুমি কী জানো প্রেম আসলে কী! কত প্রকার ও কি কি?? আমি যদি না দেখাই, তবে বুঝবে কী করে?
মেহের মুখ ঝামটা দিয়ে আবার গয়নাগুলো খোলায় মন দেয়।
আর সেই সুযোগে রিদ আবার পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে মুখ গুজে দেয়।
মেহের যেনো এক ঝটকায় কেঁপে ওঠে,
প্রথম পুরুষের সংস্পর্শে এসে, তার স্পর্শে যেনো শরীর অবশ হয়ে আসে।
সে নিজেকে সামলে নিতে চায়, কিন্তু নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে।
হাত দিয়ে কাপড় চেপে ধরে বলে ধরা গলায়,
— কি… কি করছেন?
রিদ মুখ তুলে আলতো করে চুমু খাই ঘারে তার পর মৃদু হেসে বলে,
— শেখাচ্ছি… প্রেম কাকে বলে। আমি খুব ভালো শিক্ষক, সবকিছু প্র্যাক্টিক্যালি বোঝাতে পারি। আজ তোমাকেও শেখাবো… ‘প্রেম’ মানে কী!
মেহের তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে,
— একদম না! এখন এসব কিছু হবে না। আমি… আমি…
রিদ তখন তার শেরওয়ানি খুলে ফেলেছে।
জিম করা শরীরের রেখাগুলো স্পষ্ট,
সে হাসে… আর সে হাসি যেনো বিদ্যুৎ খেলে যায় মেহেরের শিরায় শিরায়।
মেহের একদৃষ্টে তাকিয়ে, মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়,
— “ওহ্ তেরি…”
রিদ হেসে বলে,
— এতটুকু দেখেই যদি এমন অবস্থা হয়, তবে সামনে তো আরও অনেক কিছু দেখানো বাকি, ম্যাডাম! রেডি তো তো?
মেহের বলার আগেই রিদ এক ধাপ এগোয়…
নিজের বিপদ বুঝে নিয়ে মেহের এক লাফে গিয়ে বিছানায় উঠে শুয়ে পড়ে।
চোখ বন্ধ করে মুখ গম্ভীর করে বলল,
— গুড নাইট। ঘুম পাচ্ছে আমার!
রিদ হেসে ফেলে, চোখে চোখে দুষ্টুমি খেলে বলে,
— ঘুম তো আসবেই, তবে এখন না। ভোর ৬ টার আগে নো ঘুম।
এই রাতটার জন্যই তো আমি আমার জীবনের এত গুলো রাত অপেক্ষায় ছিলাম…
আর তুমি যদি এইরকম করে রাতটা নষ্ট করো, দিতে চাও তাহলে কিন্তু আমি কোনোভাবেই মেনে নিবো না সোনা।
বলে এক ঝাঁপ দিয়ে উঠে পরে রিদ — সোজা বিছানার উপর।
কিন্তু মেহের জটপট পাশ কাটিয়ে গিয়ে এক লাফে উঠে দাঁড়ায়।
রিদ বিছানায় গিয়ে পড়ল, কিন্তু মেহের না থাকায় খানিকটা হতচকিত হয়ে হেসে ফেলল।
— জতই পালাও, আজ তোমার নিস্তার নেই, বউ রাণী!” — মুচকি হাসি দিয়ে বলে রিদ।
মেহের দৌড়ে পালাতে চাইলে রিদ লাফিয়ে উঠে খপ করে ধরে ফেলল তাকে।
নরম গলায় বলল,
—একবার যেহেতু আমার কাছে বন্দি হয়েই গেছো, তাই ভালোবাসার পরশ না দিয়ে তোমায় আজ ছাড়ছি না…
এই বলেই মেহেরকে নিয়ে বিছানায় লাফ দিল রিদ।
…আর ঠিক তখনই ঘটল বিপত্তি!
ধপাসসসসসসস★★★★
খাট ভেঙে পড়ে গেল দুজনই বিছানা থেকে নিচে!একধাক্কায় মেহের আর রিদ দুজনেই মেঝেতে পড়ে যায়।ঠিক মেঝেতে বলা যায় না। কারণ ওদের মাথা নিচের দিকে আর পা উপরের দিকে। খাটের মাজ বরাবর ভেঙে ভিতরে ঢুকে গেছে তারা। এক কথাই বলা যায় চিৎ পটাং।
এক মুহূর্ত চুপ… তারপরই মেহের মুখ চেপে হাসি আটকাতে না পেরে,
—হাহাহা… হিহিহি… করে হেসে দেয়।
আর বলে,
বাসর করার আগেই খাট ভেঙে ফেললেন। তা বেশ করেছেন..! নিন করুন এবার ‘বাসর’!
রিদ মাথায় হাত দিয়ে পড়ে থাকল,
— এই ছিল আমার কপালে! এই কি ছিল আমার প্রথম রাতের ভাগ্য! বিছানা ভাঙা!
ব্যাপারটা ঠিক অমন হয়ে গেল না? বউকে ধরাছোঁয়ার আগেই বউ প্রেগনেন্ট।বাসর করার আগেই খাট ভেঙে গেল..!তার থেকে বড় কথা কেউ বিশ্বাস করবে যে আমি বাসর করার আগেই খাট ভেঙে গেছে। আল্লাহ জানে!! এই খাট ভাঙা দেখে ওরা আমার নামে কি গুজব গুজব ছড়ায়। আবার এটাও ভাবতে পারে আমি খুব জেন্টলম্যান। তাই প্রথম রাতে নিজের হাতে হাল ধরতে গিয়ে খাট ভেঙেছি। কিন্তু ওরা এটা কখনো জানতেই পারবে না যে আসলে ঘটনাটা কি হয়েছিল।ওরা তো আর জানে না আমার পুরা কপালের কথা।
মেহের হাসতে হাসতেই উঠে দাঁড়ায়,
আর রিদ বেচারা বিছানার দিকে তাকিয়ে ভাগ্যকে গালমন্দ করতে থাকে…
এদিকে,
ধীরে পায়ে ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছিল মেহের। রিদ মেহেরকে ওয়াশরুমের দিকে যেতে দেখে কিছু একটা ভাবে! তারপর তাড়াহুড়ো করে উঠিয়ে দৌড়ে যায় মেহেরের পিছু পিছু।
হঠাৎ পেছন থেকে রিদের দ্রুত পায়ের শব্দ!
মুহূর্তেই বুঝে যায়—সে পিছনেই আছে।
মেহের তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা লাগাতে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই রিদ হাত দিয়ে দরজা আটকে দিল।
এক চুল দেরি হলে বন্ধ হয়ে যেত।
রিদ বিলম্ব না করে ওয়াশরুমের ভিতর ঢুকে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। আর মেহেরের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি।
মেহের রিদের কাজে, আশ্চর্যের সপ্তম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
— আপনি আমার সাথে ভিতরে ঢুকলেন কেন? আমি চেঞ্জ করব, শাওয়ার নেব!
রাগে টগবগ করে উঠল মেহের।
রিদ হেসে বলল,
— শাওয়ার তো এমনিতেই নিতে হবে… সকালে, তাই একেবারে দুজন একসাথে নিলে ক্ষতি কী?
মেহের চোখ কপালে ওঠার উপক্রম।
— এই লোক বলে কী!
কিন্তু কিছু বলার আগেই রিদ তাকে কাছে টেনে নিল,
ঠোঁটের ফাঁকে আদর ছড়িয়ে দিয়ে, নিজের সিগারেটে পোড়া কালো ঠোঁট জোড়া চেপে ধরে মেহেরের গোলাপি রাঙা অষ্টজোড়া।
ধীরে ধীরে তাকে ঠেলে নিলো ওয়াশরুমের দেওয়ালের গায়ে।
মেহেরের শরীর কেঁপে উঠল। মেহেরের নিজেকে পাগল পাগল লাগছে!এই কেমন অনুভূতি ??
ভয়, বিস্ময়, ভালোলাগা… সব মিশে এক অদ্ভুত অনুভূতিতে তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে।
মেহের বেশিক্ষণ নিজেকে আটকে রাখতে পারে না। রাখবেই বা কেন??
সামনে থাকা মানুষটা যে তার স্বামী। এই মানুষটা এখন এই দুনিয়াতে তার সবথেকে বেশি আপন তার আস্থা তার ভালোবাসার মানুষ।তাদের সম্পর্ক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ। এই মানুষটা সম্পূর্ণ অধিকার আছে মেহেরের উপর। এমকি মেহেরের প্রতিটি লোমকূপের উপরে অধিকার আছে, আছে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পুরো অধিকার আছে বৈধতার সাথে অধিকার আছে।তাই মেহের ও সায় দেয় তার স্বামীর আহবানে।
রিদ তার স্বামী—তার অধিকার আছে।
তার ভিতরের এই অনুভূতি গুলোই যেনো বুঝিয়ে দিল, এ বন্ধনে আর কোনও দূরত্ব নেই।
অনেকটা সময় পরে, যখন রিদ তাকে ছেড়ে দিল… দুজনেই হাপাচ্ছে।
মেহেরের মুখে, চোখে লজ্জার ছায়া স্পষ্ট।
চোখ তুলে তাকাতে পারছে না।
রিদ সেই লজ্জাকে আরো একবার মিষ্টি করে ছুঁয়ে বলল,
— লজ্জা পেলে তোমায় খুব সুন্দর লাগে… আচ্ছা, তুমি কি এখন লজ্জা পাচ্ছো?
এ কথা শুনে মেহের মুখ গুঁজে দিল রিদের বুকেই।
রিদ উচ্চস্বরে হেসে বলল,
— বাহ! যে তোমার লজ্জা হরণ করছে তুমি কী না তার বুকে মুখ লুকিয়ে সেই লজ্জা থেকে বাঁচতে চাচ্ছে! বাহ! বাহ!
তার চোখে ছিল দুষ্টু আনন্দের দীপ্তি, আর মেহের লজ্জায় লাল হয়ে উঠছিল একেবারে রক্ত গোলাপের মতো।
মেহের লজ্জায় নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল রিদের বুকে।
কিন্ত রিদ সেই লজ্জার আগুনে আরও এক চিমটে ঘি ঢেলে দিল—
কানে কানে ফিসফিস করে বলল,
— খাট ভেঙেছে বলে ভাবো না, আজ রাত তুমি পার পাবে, খাট ছাড়াও হবে আমাদের বাসর।
মেহের সরে যেতে চাইলো।
কিন্তু সেই চোখের ভাষা, সেই কম্পিত নিঃশ্বাস…
সব যেনো বলে দিচ্ছে, সে ঠিক ‘না’ বললেও আসলে কোনও ‘না’ নেই।
রিদ তার মুখ দু’হাত দিয়ে তুলে তাকিয়ে বলল,
— I don’t… I can’t, Meher… I don’t… can’t… please…
মেহের কিছুই বলে না, শুধু চোখ নামিয়ে নেয়।
এই নীরবতাই যেনো সম্মতির ভাষা।
এই আবেগঘন মুহূর্তে, ভালোবাসা তার সমস্ত দ্বিধা ছাপিয়ে গিয়েছে।
রিদ তখন মেহেরকে কোলে তুলে নেয়।
নিঃশব্দে, আদরের ভারে, ভালোবাসার পরিপূর্ণ চুম্বনে। এলোপাতারী চুমু দিতে দিতে বলে,
— “সবাই তো বাসর করে খাটে, আমরা না হয় করলাম বৃষ্টির মতো জলে,”
বলেই সে শাওয়ার অন করে দেয়।
টুপটাপ বৃষ্টির ফোঁটার মতো পানি ঝরে পড়ে—দুই ভালোবাসার মানুষকে ধীরে ধীরে ভিজিয়ে দেয়।
পোশাক ভিজলেও, চোখ দুটো আগুনে পোড়ে।
ভিজে শরীরের আলতো স্পর্শে আরেক ভালোবাসার অধ্যায় শুরু হয়—
নিঃশব্দে, বিনা শব্দে, শব্দহীন ভাষায়।
রিদ মেহেরকে ফ্লোরে শুইয়ে দেয়, তার গলাই মুখ গুঁজে দেয়।
আর তারপরে…
তারা দু’জনে মিলেমিশে ভালোবাসার সাগরে ডুবে যায়,
যেখানে আর কোনও ভয় নেই, কোনও বাধা নেই—
শুধু আছে অগাধ ভালোবাসা, এবং একান্তই একে অপরের কাছে হারিয়ে যাওয়ার মুহূর্ত।
অন্যদিকে,
মেহরিন সবে মাত্র লম্বা শাওয়ার সেরে বের হয়েছে।
রাজ তখনও বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।
মেহরিনের পরনে রাজেরই ঢিলে থালা t-shirt আর একটা টাওজার।
চুলগুলো ভেজা, যা ঝাড়তে ঝাড়তে সামনে এগিয়ে আসছে মেহরিন।
রাজ এক লাফে উঠে, পেছন থেকে মেহরিনকে জড়িয়ে ধরে।
চুলের ঘ্রাণ নেয় আর বলে,
— আহা! কী সুন্দর গন্ধ…
মেহরিন হেসে ঘাড় ফিরিয়ে রাজের গলায় হাত রেখে বলে,
— তাই বুঝি?
রাজ চোখ বন্ধ করে বলে,
— হুম… বউ, এমন মিষ্টি গন্ধ তো আর কোথাও পাই না। মাঝে মাঝে তো ইচ্ছে করে, তুমার চুলেই ডুবে থাকি চুপচাপ…
মেহরিন মিষ্টি হাসে।
বলল,
—মেয়েদের চুলের ঘ্রাণটা এমনিতেই সুন্দর হয়, বুঝলেন?
রাজ তখন মেহরিনের ঘাড়ে মুখ গুঁজে গভীর শ্বাস নেয়।
তারপর তরাক করে বলে,
— তুমি কী সাবান দাও বলো তো, এত মিষ্টি ঘ্রাণ পাই!
মেহরিন হেসে হেসে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে উঠল,
খাঁটি চন্দন, আর মশ্চেরাইজার সুমৃদ্ধ ও মন মাতানো গোলাপের সৌরভে,
চেনা আদরে.. গোলাপের চাদরে..!
তুমি হৃদয় জুড়ে স্যান্ডেলিনা।
স্যান্ডেলিনা সোপ রূপচর্চায় আভিজাত্য।
রাজ চোখ কুঁচকে বলে,
—ওই… বউয়ের নাটক শুরু! কিন্তু ভালোই তো বললে। দাঁড়া, আমিও ওই সাবানটা মেখে শাওয়ার নিয়ে আসি!
বলেই রাজ হুট করে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।
মেহরিন হেসে হেসে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
পাকা দশ মিনিট পর রাজ ফিরে আসে – গায়ে শুধু টাওয়েল, ভিজে চুলে সাবানের ফেনার ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে।
হাতে-পায়ে সাবান আর গন্ধ মেখে যেন স্যান্ডেলিনা সোপ-এর নতুন এড দিতে এসেছে!
মেহরিনের কাছে এসে রাজ বলে,
মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৫৪
—বউ, এবার দেখো তো, আমার শরীর থেকেও গন্ধ আসে কিনা!
মেহরিনকে একটানে কাছে টেনে নেয়,
রাজের গলায় একটা আলতো চুমু খায়,
তারপর গভীর শ্বাস নিয়ে বলে,
—হুম, না তো। কোনো গন্ধ পাচ্ছি না!
রাজ কপাল কুঁচকে বলে,
— মানে! শালারা সাবানে বেইমানি করলো নাকি!
আর মেহরিন হেসে হেসে অস্থির।