মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৫৬
মির্জা সূচনা
রাত তখন তিনটের গণ্ডি পেরিয়েছে।
বাড়ির সবাই গভীর ঘুমে ডুবে—তাদের রাজ্য জুড়ে শুধু নিস্তব্ধতা।
রাজ চোখ মেলে তাকাই আর তাকাতেই প্রথম যে জিনিসটা সে টের পায়—তা হলো, নিজের বুকের ওপর ভারি কোনো অস্তিত্ব।
সে হেসে ফেলে—মিষ্টি, তবে গম্ভীর একটা হাসি।
কারন তার বুকের ওপরে যে গুটি-সুটি মেরে শুয়ে আছে তার প্রাণপ্রিয় মানুষটা—তার বউ।
রাজ দেখে, কিছু চুল মেহরিনের মুখে এসে বারবার লেগে তাকে বিরক্ত করছে।
রাজের নিজেরও তখন বিরক্ত লাগছে ওই চুল গুলোর উপর।রাজের হাসি হাসি মুখটা
হঠাৎ করেই গম্ভীর হয়ে যায়। সে ধীরে ধীরে চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলে ওঠে—
— আমার বউকে বিরক্ত করছো কেন রে চুলের দল? কোনো ভদ্রতা নেই তোমাদের? আমার বউকে বিরক্ত করার আগে অনুমতি নিছো? আর নিলেও বা কী… আমি দিবো?
একদম থাপড়ে ভদ্রতা শিখিয়ে দেবো!
বেয়াদব চুলের দল! আমার বউকে শুধু জ্বালায়!তোমাদের নামে ইভটিজিং মামলা করব আমি।
এই তোমাদের পরিবারে কি কেউ ভদ্রতা শেখায়নি?জানোনা অন্যের বউকে বিরক্ত করতে নেই!!
আরেকবার যদি দেখি আমার বউকে জ্বালাচ্ছো… একদম শূলে চড়াবো বেয়াদব চুলের দল।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রাজ এমনভাবে চুলদের বকা দিতে থাকে, যেনো সত্যি ওরা অপরাধ করেছে।শুধু অপরাধ বললে ভুল হবে মস্ত বড় অপরাধ করেছে। চুলের দল কেউ বলি হারি যাই গ্যাংস্টার রাজ শিকদারের বউকে নাকি বিরক্ত করছে!! ভাগ্য ভালো ওরা মানুষ না মানুষ হলে ওদের যে কি হতো। তা একমাত্র উপরে আল্লাহ আর নিচে রাজ শিকদারই জানে।
জানি না কেউ জানলে কী বলতো—যদি কেউ জানতো, রাজ শিকদার তার বউয়ের চুলকে নিয়ে রীতিমতো কোর্টে কেস চালাচ্ছে!আবার নাকি শুলেও চড়াবে।
এগুলো জানলে কেউ নিশ্চিত ওর একটা অস্কার উঠেই যেত মাথায়!
তবুও যখন রাজ তার ঘুমন্ত বউয়ের দিকে তাকায়—সব রাগ মিলিয়ে একরাশ ভালোবাসা এসে হানা দেয় রাজের তনুমনে।
সে হাসে।
তার মুখে প্রশান্তির ছায়া।
এই একজন মানুষ, যার কাছে রাজ শিকদারও হার মানে—যে রাজ শিকদার মানুষ মারতে দুবার ভাবেনা, সে কিনা তার বউকে ভয় পায়। এই কথা খানা কি বিশ্বাসযোগ্য?বিশ্বাস না করে উপায় নেই, শুধু রাজ শিকদার কেন পৃথিবীর সকল স্বামী তার বউকে দেখে ভয় পায়।এই কথা খানা কেউ স্বীকার করে কেউ চেপে যায় তবে এই কথাখানা সত্যি।
তবে এই একটা মানুষ যার কাছে রাজ পরাজিত হয়। যার রাগ ভয় পায় রাজ, যার অভিমান ভয় পায় রাজ।
যার একটুখানি রাগ মানে ছোট্ট একখানা ঝড়,
আর মান ভাঙানো মানে টুকরো টুকরো কবিতা।
রাজ মেহরিনের কপালে একটা চুমু খেয়ে ধীরে ধীরে বলে,
— “আমার Moonbem… আমার বউজান… আমার অ্যারিওনা…”
হঠাৎ করেই তার হাসি মিলিয়ে যায়। মুখটা হয়ে ওঠে হিংস্র।
সে উঠে পড়ে।
মেহরিনের গায়ে ভালো করে কম্বল গুজিয়ে দেয়,
এসি’র পাওয়ারটা কমিয়ে দেয়।
তারপর ক্যাবার্ড থেকে একটা টিশার্ট বের করে পরে,
মোবাইলটা হাতে নেয়,
মেহরিনের পাশে এসে বসে আবার কপালে একটা চুমু খায়।
— আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো জান,
কয়টা ক্ষুধার্ত কুকুর আছে…
ওদের একটু খেতে দিয়ে আসি।
তুমি তো জানোই, তোমার হাজবেন্ডের মানবতা একটু বেশিই। দেখোনা কতগুলো কুকুর না খেয়ে আছে, ওদেরকে কি অভূক্ত রাখাটা ঠিক হবে বলতো ??
মানবতা বলে তো একটা জিনিস আছে না?
এই বলেই মেহরিনের চোখ, নাক, কপাল জুড়ে চুমু খেতে খেয়ে,
বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।
রাজ ঘর থেকে বের হতেই মেহরিন চোখ খুলে তাকায় দরজার দিকে।
তার চোখে তখন রহস্যময় হাসি।
সে উঠে বসে, চুল ঝাঁকায়ে হাত খোপা করে,তার ঠোঁটের কোণে চাপা হাসি নিয়ে ফিসফিস করে বলে—
— “উফ্ফ্… আমার বরটা আমাকে এত ভালো কেন বাসে।
মাঝেমধ্যে ভয় হয় কখন জানি কোন ডায়নির নজর লেগে যায়।
তারপরে হেসে আবার বলে,
তবে যাই হোক আমার বরটা আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে। এমন ভালোবাসা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আমি বড়ই ভাগ্যবতী এমন পাগলাটে একটা বর পেয়ে।
মাঝে মাঝে তো মন চায়…
চুম্মাইতে চুম্মাইতে অজ্ঞান করে ফেলি। এত ভালো কেউ বাসে।
কথা শেষে! ঝটপট উঠে পড়ে মেহরিন। পরনের ঢিলে ঢালা টাওজার আর টিশার্ট পালটে একখানা লেডিস প্যান্ট আর আরামদায়ক টিশার্ট পরে নেয় মেহরিন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো আলতোভাবে গুছিয়ে নেয়। তারপর চুপিচুপি বেরিয়ে পড়ে সে।
অন্যদিকে রাজ পৌঁছে গেছে তার গন্তব্যে।জায়গাটা একটু শুনশান কোলাহল শূন্য, এটা মূলত রাজের গুদাম। সবার চোখে যেটা স্রেফ মালামাল রাখার জায়গা, আসলে সেটা রাজ আর লাবিবের গোপন এক আস্তানা। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা কার্ডদের দিকে তাকিয়ে রাজ চোখে এক ধরণের বাঁকা হাসি এনে বলে—
— তোমরা এখন যাও। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থেকো না। সম্ভবত কিছুক্ষণের মধ্যে কেউ একজন ঢুকবে, তাকে আটকাতে যেও না… কেমন?
সবাই একসাথে বলে উঠে—
— “Yes boss!”
রাজ ইশারায় সবাইকে সরে যেতে বলে। তারপর নিজে সামনে এগিয়ে গিয়ে দেয়ালের একপাশে থাকা একটা সুইচ টিপে দেয়। তার সঙ্গে সঙ্গে নিচের মাটি ২ ভাগ হয়ে যেতে শুরু করে। ঠিক যেনো আলী বাবার ‘চিচিং ফাঁক’, আলী বাবা চিচিং ফাঁক বললে যেমন পাহাড় দুই ভাগ হয়ে যেতো।অনেকটা তেমনই রাজ সুইচ টিপার পর পাহাড় নয় মাটি বিভাগ হয়ে গেল। নিচ থেকে খুলে যায় রহস্যময় এক রাস্তা! যেন মাটির গভীরে নেমে যাওয়া কোনো গুহা!অথচ সাধারণ মানুষের চোখে কখনো ধরাই পড়বে না যে এখানকার মাটি দুই ভাগ হতে পারে। খুব সূক্ষ্ম পরিকল্পনামাফিক এর বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
রাজ তাকায় ঘড়ির কাঁটার দিকে, তারপর পেছনে ফিরেও দেখে। ফিসফিস করে বলে—
— এখনও এলো না কেন? এত দেরি তো হওয়ার কথা না…
আরও একবার তাকায় পেছনে। তারপর রাজার মতো নামতে শুরু করে সেই পাতালপুরীর পথ ধরে।এমন ভাবে যেন এই পাতাল রাজ্যের রাজা সে। এখানকার সবকিছু তার লক্ষ দর্পণে। এখানে আদেশ চলে শুধু তার রাজত্ব শুধুই তার।
বিশাল বড় একটা রুমে ঢুকে রাজ। জায়গাটা একেবারে আলোকিতও নয়, আবার একদম অন্ধকারও নয়। আলো কম ও হলদেটে, গা ছমছমে এক ধরনের আলো এসে পড়ে—যেটা চোখে লাগার মতো নয়, কিন্তু মাথার ভেতর কেমন যেন ঝিম ঝিম করে তোলে।
ভেতরে ঢুকেই রাজের চোখে পড়ে—একটা সরল লাইনে রাখা ৫টা চেয়ার, আর সেখানে ৫ জন লোক দড়ি দিয়ে বাঁধা।
চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা রাজ এবার সামনে এগিয়ে যায়…তার ঠোঁটে তখন সেই পরিচিত দুর্লভ এক ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা হাসি!এই হাসির অর্থ যারা বোঝে। তাদের রুহু অব্দিকে কেঁপে উঠে এই হাসির ভয়ে।
রাজ প্রথমেই যায় ডান পাশের ২ নম্বর চেয়ারে বাঁধা ছেলেটার সামনে। চোখে সেই চেনা ঠান্ডা হিংস্র হাসি এনে বলে—
—কি রে শালা! এখনও মরিস নি? সে যায় হোক.. শয়তান কি আর এত তাড়াতাড়ি মরে?তোর তো ব্যাটা কই মাছের জান। সেই কবে থেকে তোর উপরে টর্চার করা হচ্ছে এখনো দিব্বি বেঁচে আছিস ছেহ!! আজ তোকে সেই স্পেশাল ট্রিটমেন্ট দিতেই হবে। ও তোর তো আবার চুলকানি বেশি… মেয়েদের গায়ে হাত দেওয়ার!…
এই কথা বলেই রাজ চোখ বন্ধ করে ফেলে। কপালে হালকা স্লাইস করতে করতে ভাবে কিছু একটা।
আর মনে পড়ে যায় সেই দিনের কথা…
জমিদার বাড়িতে আকরাম চৌধুরী আর ফাইজা চৌধুরীর বিবাহ বার্ষিকীর দিন, রাজ যখন গান গেয়েছিলো, মেহরিন ছিলো সামনে। আর এই ছেলেটা সেই দিন মেহরিনকে বাজেভাবে ছুঁতে চেয়েছিলো।
চোখ বন্ধ রেখেই রাজের বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে। আবার চোখ মেলে তাকায়—ততক্ষণে রাজের চোখ লাল টকটকে, ঠিক যেমন হয় নেশা করলে।
এই নেশা কোনো ড্রাগের নয়, এটা প্রতিশোধের নেশা। রাজ কেমন যেন পাগলদের মতো হাসতে থাকে। তার হাসির শব্দে চেয়ারে বাঁধা পাঁচজনের গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। যারা ইতিমধ্যে পেটানো, নিঃশেষ, আধমরা, তারাও রাজের হিমশীতল হাসিতে কেঁপে ওঠে, যেন রাজের সেই হাসি তাদের অন্তরাত্মাকেও নাড়িয়ে দিচ্ছে।
ধীরে ধীরে রাজের হাসির গতি কমে আসে। তারপর হঠাৎ করেই হাসি থামিয়ে ভয়ঙ্করভাবে গর্জে উঠে ছেলেটার দুই চোখে আঙুল ঢুকিয়ে ধরে বলে ওঠে—
—এই চোখ… এই চোখ দিয়ে আমার আরিওনার দিকে নোংরা নজর দিয়েছিলি, তাই না?
ছেলেটা চিৎকার করতে চায়, কিন্তু পারে না—তার মুখ যে বাঁধা।
রাজ ঠিক করে নিয়েছে—যতক্ষণ না এই চোখ দিয়ে রক্ত বের হবে, ততক্ষণ সে থামবে না।
তারপর হঠাৎ রাজ আবার হাসতে শুরু করে, এবার সেই হাসিতে নির্মম আনন্দের ছাপ। একটু পর, রাজ পেছনে তাকিয়ে এক জনকে বলে—
—বক্সটা দে…
কথা শেষ হতেই একজন একটা বক্স এগিয়ে দেয়। রাজ সেটা হাতে নিয়ে এক রকম রসিকতা করে বলে—
—আরে, তোরা জানিস, এই বক্সটা আমার খুব প্রিয়! মাঝে মাঝে তো মন চায় এটাকে বউয়ের মতো করে আদর করি… কিন্তু আফসোস, ও তো আর মানুষ না!আর মানুষ হলে এই কথা আমি কোনদিন কল্পনাতেও ভাবতাম না। তাহলে আমার যে বউ না!! কল্পনাতে গিয়েই আমার গলা কেটে দিত। তোরা জানিস খুব সাংঘাতিক বউ আমার। সে যাই হোক, দেখবি এবার এতে কি আছে…
রাজের সামনে থাকা মানুষগুলো এমনিতেই রাজের ভয়ে তাদের প্রাণ অস্তাগত। তারউপর রাজের এমন রসিকতা। সবার প্রাণ যেন গলায় আটকে আছে,কারণ ইতিমধ্যে তারা সবাই রাজের সাথে পরিচিত হয়ে গেছে। রাজ এমন এক ভয়ংকর মানুষ যে হাসতে হাসতে মানুষ খুন করে ফেলে। তাই তারা সবাই রাজের এই হাসুকে জমের মতো ভয় পায়।সবার নিশ্বাস আটকে আছে,এই বুঝি পরান পাখি উরাল দিলো। আর রাজের মুখে তখনও সেই অদ্ভুত হিমেল ঠান্ডা হাসি।
সামনের লোকগুলোর ভয় একসঙ্গে বারতে থাকে। রাজ তার সেই প্রিয় বক্সটা খুলে ফেলে। ভিতর থেকে একে একে বের করে কিছু ছুরি, ধারালো কাটার ব্লেড, হাতুরি আর পেলাস আর তারকাটা।
এই দৃশ্য দেখেই সামনে থাকা মানুষগুলোর যেনো প্রাণ পাখি উড়াল দেওয়া যোগার—প্রাণে বাঁচতে ছটফট করতে থাকে তারা।
রাজ হালকা হেসে একটার পর একটা জিনিস হাতে নেয়। তারপর একটা ছুরি হাতে তুলে নেয়।একটা বাঁকা হাসি দিয়ে,
এক টানে ছেলেটার ডান হাতের সব আঙুল কেটে ফেলে।
ছেলেটা চিৎকার দিতে পারে না, শুধু চোখ দিয়ে পানি গড়ায়।
রাজ নিঃসঙ্কোচে সেই কাটা আঙুলগুলো একটা একটা করে টেবিলের ওপর সাজায়, তারপর একেকটা কে টুকরো টুকরো করে ফেলে একদম কুচি কুচি যাকে বলে, আর ওগুলোকে এমন ভাবে সাজায় যেনো মাংসের দোকানের মাংস টুকরো।
এই অবস্থায় রাজকে দেখলে কেউ আর মানুষ ভাববে না—এ যেনো পেশাদার কসাই।
হঠাৎ রাজ চিৎকার করে বলে—
—গরম পানি নিয়ে আয়!
একটা লোক দৌড়ে আসে।
রাজ ইশারা করতেই আরও দুইজন আসে।
ওই ছেলেটার হাত আর বাঁধন খুলে চেপে ধরে তাকে।
রাজ এখনও হাসছে।
কিন্তু সেই হাসি আর হাসি নয়, বরং মৃত্যুর করাল ছায়া।
সে ছেলেটার হাত ধরে ফুটন্ত পানিতে ডুবিয়ে দেয়।
এক মুহূর্তেই ছেলেটার হাতের চামড়া উঠে আসে, সে মরণের যন্ত্রণায় চিৎকার করে, শরীর কাঁপে, মুখ দিয়ে ফট ফট শব্দ বের হয়।
রাজ তার দিকে তাকিয়ে উন্মাদ হেসে বলে—
—তোকে একবারে মারবো না… একটু একটু করে, যন্ত্রণা দিয়ে দিয়ে মারবো। এমন সময় আসবে তুই—মৃত্যু চাইবি—but পবি না।
তারপর রাজ লোকদের নির্দেশ দেয়—
—ওকে নিয়ে যা! নিয়ে সেবা যত্ন করে সুস্থ করে তোল। ওর জন্য আরো অনেক কিছু বাকি আছে এখনো। ওকে বুঝতে হবে ও কার দিকে নোংরা নজর দিয়েছিল, হাত বাড়িয়েছিল নোংরা স্পর্শ করার জন্য।
লোগগুলো তাকে তুলে নিয়ে চলে যায়।
রাজ এবার তাকায় বাকি ৪ জনের দিকে।
তারা সবাই ভয়ে ঘামছে, কাঁপছে।
রাজ এগিয়ে যায় শাফিনের দিকে।
হেসে বলে—
—আরে! বোন জামাই যে!…
—উপসসসস! সরি, সরি… আমি তো পরিচয়ই দেইনি… কেন বোন জামাই বললাম ভাবছিস তাই তো?
শাফিন বিহ্বল চোখে তাকিয়ে থাকে।
বাকি তিনজন তো প্র্যাকটিকালি কাপড় নষ্ট করে ফেলেছে।
রাজ গম্ভীর হয়ে বলে—
—কি হলো? বল! জানতে চাস না?
শাফিন দ্রুত মাথা নাড়ে।
রাজ সামনে গিয়ে বসে বলে—
—রিদ ওকে চিনিস তো?
শাফিন মাথা নাড়ে।
রাজ মাথা দুলিয়ে বলে—
—ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আর বেস্ট ফ্রেন্ডের বোন জামাই তো আমারও বোন জামাই—তাই না?
শাফিন তাড়াতাড়ি মাথা নাড়ে।
তারপর রাজ ফিসফিস করে বলে—
—তোর সাথে আমার আরও একটা সম্পর্ক আছে, জানিস?
শাফিন দুই দিকেই মাথা নাড়ে, ভয়ে শিউরে ওঠে।
রাজ একই ভঙ্গিতে বলে—
—আমি… তোর বাবার বন্ধুর ছেলে। আমার বাবা— সাথে তোর বাবার বন্ধুত্ব ছিল।
শাফিনের চোখ যেনো বাইরে বেরিয়ে আসার উপক্রম।
রাজ এবার নিঃশব্দে হেসে বলে—
—চিনতে পারছিস তো?
শাফিন কিছু বলে না।
রাজ এবার ঝাঁঝিয়ে উঠে বলে—
—তোর বাবা, আর রিদ-এর বাবা… মিলে আমার বাবাকে মেরে ফেলেছে! তার সমস্ত সম্পত্তি দখল করে নিজে ব্যবসা দাঁড় করিয়েছে! আর তোরা? তোরা সেই টাকাতেই বড় হয়েছিস,ফেয়ার লাইভ লিড করেছিস, মেয়ে পটিয়েছিস। ভালো স্কুল ভালো ইউনিভার্সিটিতে পড়েছিস। সব অন্যের টাকায় আমার টাকায় আমার বাবার টাকায়।
এই কথা শোনামাত্রই শাফিন মাথা নিচু করে।
রাজ আবার বলে—
— যত যায় হোক তুই বোন জামাই বলে কথা। তোকে কি যেমন তেমন আপ্যায়ন করলে চলবে বল… তোকে স্পেশাল আপ্যায়ন করতে হবে তোর জন্য স্পেশাল কিছু একটা আয়োজন করেছি।
এই কথা বলেই রাজ বাঁকা হাসে।
তারপর একটা ছুরি হাতে নিয়ে ঘুরাতে থাকে।
শাফিনের চোখ ছুরির দিকে ঘোরে, আর রাজ সেই ছুরি এমনভাবে ঘোরায়, যেন খেলনা।
হঠাৎই সেই ছুরি ছুড়ে মারে রাজ।
ছুরিটা গিয়ে গেঁথে বসে শাফিনের বাঁ চোখে।
আর ছুরি লাগার সাথে সাথেই কলকলিয়ে চোখ থেকে রক্ত ঝরতে থাকে।
রাজ হাততালি দিয়ে বলে—
—আরে বাহ! আমার নিশানা দেখি আগের মতই আছে!
তার হাসিতে মনে হচ্ছিল যেন সাত-আট বছরের একটা বাচ্চা তার প্রিয় খেলনা পেয়েছে।
তারপর রাজ দাঁত চেপে বলে—
—এই নোংরা চোখ দিয়েই আমার জানপাখির দিকে কামনার চোখে তাকিয়েছিলি, তাই না?
আর কিছু বলবে, ঠিক তখনই আরেকটা ছুরি এসে গেঁথে যায়।
এইবার ছুরিটা শাফিনের ডান চোখে গেঁথে যায়।
পেছনে না ফিরেই রাজ বলে—
—উফ্! কি নিশানা মাইরি! পুরাই পাকা নিশানাবাজ!
ঠিক তখনই পেছন থেকে মেহরিন হেসে ওঠে।
—নিশানা পাকা না হলে চলবে? তাহলে তো লোকে আপনার নামে বদনাম ছড়াবে—বলবে গ্যাংস্টারের বউ নিশানা লাগাতে পারে না!
রাজ পেছনে ফিরে হেসে বলে—
—এই রাত্রে ঘুম নষ্ট করে না এলে হতো না, বউজান!
মেহরিন আদুরে গলায় বলে—
—সোয়ামিইই…
রাজ দুই হাত উপরে তুলে বলে—
—ওকে ওকে বউজানের যা ইচ্ছা তাই হোক।
মেহরিন হাসে।
এসে রাজের গায়ে ঘেসে দাঁড়ায়।
রাজ তাকে এক হাতে জড়িয়ে নেয়।
—আজ আর না, চলো… আরেকদিন।
মেহরিন হেসে বলে—
—আরেকটু…প্লিজজজজ…..!
রাজওহেসে ফেলে।
মেহরিন রাজের গালে একটা চুমু খেয়ে এগিয়ে যায় শাফিনের দিকে।
কোনো কথা না বলে, পা তুলে শাফিনের মেন পয়েন্টে এক লাথি মারে তারপর পা দিয়ে পিশতে থাকে ।
বলতে থাকে—
—এই এটাই তো, তাই না? যা মেয়েই দেখলেই, নিশ ফিশ করে? এটা না থাকলে কি আর মেয়েদের দেখে চুলকাবে?
এই বলে আরো জোরে পিশতে থাকে।
একে তো দুই চোখের ওপর এমনভাবে আঘাত তার ওপর আবার স্পর্শকাতর জায়গাতে এমন অত্যাচার, শাফিন একটা চিৎকার দিয়েই অজ্ঞান হারায়।
রাজ নিজের মেইন জায়গা ঢেকে বলে—
—বউ, এভাবে আমার সামনেই অন্যের ইয়েতে পা দিও না প্লিজ। আমি কিন্তু লাবিবের মতো দুর্বল হার্টের না, তাও আমার হার্ট ব্লক হয়ে যাবে!
মেহরিন হেসে ছেড়ে দেয় আর রাজের দিকে ধমকে বলে—
—চুপ করুন! চলুন বাড়ি যাব! লজ্জা লাগে না? আধা রাতে বউকে ফেলে চলে আসেন! আমি ভয় পায় না বুঝি?
রাজ মনে মনে বকে—
এই মেয়েটা বলে ভয় পায়… ওকে দেখলেই তো আমার আত্মা শুকায় যায়!যেভাবে মানুষ মারে, এভাবে তো আমিও মারতে পারি না। আবার বলে তা নাকি ভয় লাগে।
তবুও মুখে বলে—
—আমার ভুল হয়েছে, আর হবে না। চল, চল…”
এই বলে রাজ মেহরিনকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে।
সকাল ৮টা।
মেহরিন আর রাহি মিলে সবার জন্য নাস্তা বানাচ্ছে। বাজার করা হয়ে গিয়েছিল আগেই, হয়ত রাজ করিয়ে রেখেছে—মানুষটার সবদিকে নজর থাকে।
তখনই রাজ গলা চড়িয়ে বলে,
— বউ, কফি দাও!
মেহরিন হাসে। রাহি মেহরিনকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
— আহা, কী প্রেম!ভাইয়া দেখি তোকে চোখে হারায়।
মেহরিনও পালটা রাহিকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
— রাকিব ভাইও তো কম প্রেম দেখায় না!বিয়ের পর সেও তোকে চোখে হারাবে।
‘রাকিব’ নামটা শোনামাত্রই রাহি লজ্জায় লাল-নীল হয়ে যায়।
তা দেখে মেহরিন হেসে ফেলে। রাহি দৌড়ে সরে যায়, আর মেহরিন হাসতে হাসতে কফির মগটা নিয়ে রাজের কাছে যায়।
কফি দিয়ে বলে,
—বাসায় শুধু আমরা একা না, ওকে? তাই এমন ‘বউ বউ’ করবেন না।
রাজ হেসে বলে,
— আমার বউ, আমি ডাকব। এতে মানুষ থাকুক বা না থাকুক, তাতে আমার কি! বা*ল চিরা গেল নাকি?
মেহরিন বলে,
— ছিঃ ভাষার কী ছিরি.!
নষ্ট পুরুষ!
রাজ বাঁকা হেসে বলে,
— নষ্টামি একটু তো করব নাকি বউ?
মেহরিন চোখ রাঙিয়ে চলে যায়। রাজ তখন ঘর কাপিয়ে হেসে উঠে। বাহিরে আসে মেহরিনও হাসে, মাথা নাড়িয়ে আবার রান্নাঘরে ফিরে যায়।
কিছুক্ষণ পর একে একে উঠে আসে লাবিব, শান্ত ও রাকিব।
লাবিব এসেই বলে,
— ভাবি!
মেহরিন হেসে বলে,
— বসো, দিচ্ছি এখনই।
মেহরিন ট্রেতে করে তিন মগ কফি নিয়ে আসে ওদের জন্য।
রাকিব কফি হাতে নিয়ে হেসে বলে,
— ধন্যবাদ ভাবি।
মেহরিনও হেসে বলে,
— ভাইয়া!
রাকিব হাসে।
শান্ত কফিতে এক চুমুক দিয়ে বলে,
— আহা আহা আহা! সালিকা কী কফি বানায় মা রে মা!
তারপর দুঃখী মুখ করে বলে,
— তোমার বান্ধবীটাকে একটু শেখাও, রান্নাবান্না না মানে… সারাদিন তো আর আমার মাথা খেয়ে পেট ভরবে না!
মেহরিন হেসে বলে,
— সাহস থাকলে তার সামনেই বলো তো!
শান্ত ঢোঁক গিলে বলে,
— কেন বোন… জাইন্যা-শুইন্যা আমার মতো অলা-ভোলা ছেলেটাকে যমের মুখে ফেলতে চাও? একটু কি দয়া মায়া নেই?
সবাই হেসে ফেলে ওর কথা শুনে।
লাবিব বলে,
— ভাবি, বর কনে উঠে নি এখনও?
মেহরিন হেসে বলে,
— না, উঠবে হয়তো একটু পর।
মেহরিন আবার রান্নাঘরের দিকে চলে যায়।
এদিকে লাবিব, রাকিব আর শান্ত একে অপরের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে।
কফির মগগুলো রেখে সবাই একসাথে এক দৌড়ে চলে যায় রিদের ঘরের দিকে।
গিয়েই একসাথে দরজায় কড়াঘাত দিতে থাকে।
রাকিব বলে,
— এই! উঠ আর কত?
শান্ত বলে,
— অনেক হয়েছে! বাপ আর কত মধু খাবি? মৌচাক তো তোরই, সারাজীবন খেতে পারবি! এখন উঠে পড় বাপ!
ওদের এত ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙে যায় রিদের।
চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে, তার বুকে মেহের শুয়ে আছে—পরম সুখে যেন এই বুকেই তার একমাত্র আশ্রয়স্থল। রিদ তাকায় মেহেরের দিকে মেহেরের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে, তারা দুজন সুফায় শুয়ে আছে—জড়সড় হয়ে।
রিদের পরনে শুধু একটা শর্ট প্যান্ট। মেহেরের গায়ে রিদেরই একটা ঢিলা টি-শার্ট।
রিদ হঠাৎ গত রাতের কথা মনে করে হেসে ওঠে—ঘুম হয়নি ঠিকঠাক, কারন তারা দু’জনেই ঘুমিয়েছে ভোর পাঁচটার পর।
রিদ নরম হাতে মেহেরের কপালের চুল সরিয়ে একটা চুমু দেয়।
তারপর মেহেরকে হালকা ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে বলে,
— এই যে ম্যাম, ওঠো! বাইরে হানাদার বাহিনীরা দরজা ধাক্কাচ্ছে শুনতে পাচ্ছো। যেকোনো সময় ভেঙেই ঢুকে পড়বে। এই অবস্থায় দেখলে তো আর রক্ষা নেই। আমরাতো এমনিতেই একটা বিপদ… মাথার উপর জুলছে!
মেহের পিটপিট করে তাকায়। চোখেমুখে লজ্জা, ভয় আর বিরক্তির মিশেল।
রিদ আবার বলে,
— চলো, ফ্রেশ হও।
মেহের উঠে দাঁড়াতে চায়, কিন্তু সারা শরীর যেনো জমে আছে।
টনটনে ব্যথায় কুঁকড়ে যায়। ঠোট উল্টিয়ে বলে,
— আপনি খুব খারাপ!
রিদ হেসে বলে,
— তাই, তো আমি কখন বলেছি যে আমি ভালো?
মেহের রাগ করে একটা কিল মারে রিদের বুকে।
রিদ হেসে মেহেরকে কোল তুলে নেয় আর সোজা ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে নামিয়ে দেয়।
দশ মিনিটের মধ্যেই মেহের গোসল শেষ করে, একদম ফ্রেশ হয়ে বের হয়।
মেহের বেরোতেই রিদ বলে,
— তুমি দাঁড়াও। আমি দরজা খুলছি।
বলেই রিদ গিয়ে দরজার লক ঘুরিয়ে দেয়।
আর দরজা খোলামাত্রই হুড়মুড় করে তিনজন বাঁদর ঘরে ঢুকে পড়ে।
ঘরে ঢুকেই চেঁচিয়ে ওঠে,
— কি মাম্মা! কী অবস্থা? সব ভালো তো?
মেহের জানে, এখন নিশ্চয়ই অনেক লজ্জার পালা আসবে।
তাই সুযোগ বুঝে সাথে সাথেই কেটে পড়ে ডাইরেক রান্নাঘরে ঢুকে যায়।
ঘরে তখন আসে রাজ।
সে এসে বলে,
— কি ভাইরাভাই, সব ঠিকঠাক তো?
রিদ হাসে,
—একদম।
রাজ কিছু একটা বলতে যাবে, ঠিক তখনই শান্তু চিৎকার করে ওঠে,
— আরে সালা! খাট তো ভেঙে ফেলেছে!
শান্তুর কথায় সবার নজর খাটের দিকে যায়। খাটের যে কী অবস্থা!
সবাই একসাথে বলে উঠে,
— “আরে সালা!”
লাবিব বলে,
— ব্রো, তোমার তো সেই পাওয়ার!একদম কাকলি ফার্নিচারের খাট ভেঙে দিলা গুরু।
শান্তু বলে,
— মামা, তুই এটা কেমনে করলি?
রাকিব বলে,
— ভাই, তুই কি কাল রাতে কোন ভাবে কলকাতা হারবাল খাইছিলি? সত্যি করে বল, না হলে এত পাওয়ার আসার কথা না!
শান্তু কথা কেরে নিয়ে বলে,
— হে তাই তো! আমি তো ভাবছিলাম তোর মেশিনে ঝং ধরে গেছে, অকেজো হয়ে গেছে। ভেবেছিলাম সকাল বেলায় ভাবী কান্না করে বলবে—
‘আমি জোয়ান একটা মাইয়া, ঝং ধরা যন্ত্রের লগে হইছে আমার বিয়া!’
আর আমরা সান্ত্বনা সহকারে বলব—
থাক ভাবী, কান্না কইরো না। আমরা তোমাকে একটা সুস্থ সবল পোলা খুঁজে আবার বিয়ে দিবো।
লাবিব মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে,
— ওহ্ মাই গড!
রিদ হালকা হাসে,
— I am a gentleman. So এটাতো হওয়ারই ছিল, তাই না?
তখন রাজ আহাজারি শুরু করে,
—হায়! হায়! রে আমাদের এ কী সর্বনাশ হইলরে। রিদ ভাই, তুই কেমনে পারলি আমার এমন ছোট শালিকার উপর অত অত্যাচার করতে! তোর মধ্যে কী একটুও দয়া-মায়া নেই? হায় হায়, কি জল্লাদ লোকের লগে শালী বিয়া দিলাম গো!
রিদ কিছু বলে না। আজ সে বুঝে গেছে, মুখে তালা লাগানোই বুদ্ধিমানের কাজ।আর নিঃসন্দেহে সে বুদ্ধিমান।
শান্তু বলে,
— ভাই, ক তো! কোন হারবাল খাইছিলি?
রাকিব বলে,
— মনে হয় ইমরান হাসমির লগে সাক্ষাৎ কইরা আইছিল আর টিপসও পাইছে!
শান্তু আবার বলে,
— আহারে! বেচারি! কি অত্যাচার তাই না সহ্য করলো!
রাজ রিদের কলার ধরে বলে,
—আমার শালী যদি তোর ভালোবাসার লোড নিতে না পেরে ওক্কা যেত, তখন কি হইতো বল সালা?
লাবিব বলে,
— আচ্ছা, খাটটা যে ভাঙলো, এইটার জন্য সম্পূর্ণ দায় কি শুধু ভাইয়ের?
শান্তু, রাকিব আর রাজ একসাথে বলে উঠে,
— অবশ্যই ওর!
রাজ বলে,
ওর মতো একটা হাতি,আমার মাশার মতো শালির উপর উঠে নাচানাচি করলে খাট তো ভাঙবেই!
কপাল ভালো, তাই আমার শালীটা জীবিত আছে। তাই তুই আজ বেচে গেলি।
না হলে তো আমি তোর নামে খাট ভাঙার মামলাই করে দিতাম সালা!
লাবিব বলে,
— কিন্তু খাট ভাঙার তো কোনো মামলাই নাই!
রাজ বলে,
—চুপ! বলদ! না থাকলে বানিয়ে নেব!
রিদ ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনছে, যেনো কিছুই হয়নি!
ঠিক তখনই রাজ একটা কবিতা বলে,
বাসররাত,মিঠে আলো,
রিদ ভাই কয়,
বউ আমি তোমাকে আজ বাসবো ভালো!
মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৫৫
খাটটা বলে “মাফ করো ভাই, আমার হাড়ে নাই কৌ জোর!
একটা ঠেলা, আরেকটা ঠুস— খাট দিলো শেষ নিশ্বাস টুকু ফুস,
বউ কাঁদে, খাটও কাঁদে— প্রেমের মাঝে কাটা সাজে।
আহা আহা রিদ ভাঙলো খাট, এটা যে পুরাই-অবিশ্বাস!