মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৬
মির্জা সূচনা
রাহি মেহরিনের হাত টেনে বলল,
চলো আপু তোমায় সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। আজ তুমি আমার স্পেশাল গেস্ট।
চুমকি হেসে বলল,ওগো রাহি সোনা স্পেশাল না… একেবারে স্টার।
রাহি মেহরিনকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে ঢোকে। ঘরটা আলোয় ঝলমল করছে, সারা বাড়ি চোখ ধাঁধানো সাজানোই সজ্জিত, বাড়ির প্রিন্সেস এর বার্থডে বলে কথা। রাহি এসে সবার উদ্দেশ্যে বলে , Hello Ladies and Gentleman attention please.. রাহির কথায় সবাই ওর দিকে তাকায়.. রাহি বলে Meet my special guest.. তখন সবার চোখ যায় মেহরিন এদিকে, চোখ যেন আটকে যায় কেবল এক জায়গায়—মেহরিনের মুখে।
ঘরের ভেতরে গল্প করতে থাকা লোকজন একটু থেমে যায়। রামিম তখন কোল্ড ড্রিংকসের ট্রে হাতে, হঠাৎ থেমে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে। তার মনে হয় যেন কেউ হাতুড়ি পিটাচ্ছে , বুক ডুক ডুক করছে। আনমনে হাত চলে যায় বুকের বা পাশে । মুহূর্তেই এক দমকা হাওয়া এসে ওলট পালট করে দিয়েছে জীবনটা।
আর পাশের সোফায় বসে থাকা আরাফ খান, যার কবিতা সবসময় কল্পনার প্রেয়সীকে খোঁজে—সেই মূহুর্তে চোখে স্পষ্ট ছায়া পায় তার! মেহরিন যেন তার লেখার এক জীবন্ত অনুবাদ।
এই মেয়ে… কে?” আরাফ আনমনেই প্রশ্ন করে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রামিম পাশে দাঁড়িয়ে ধীরে বলল, ওইটা… রাহির স্পেশাল গেস্ট।
আরাফ একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল, “হুঁ” সত্যি স্পেশাল বটে। কিন্তু… কারো হৃদয়ে যে এখন থেকে তার জন্য টুংটাং করে বাজবে সে কি জানবে?
সবার ধ্যান ভাঙ্গে বাহির কথায়।
রাহির মুখ গর্বে ঝলমল -ওই যে বলছিলাম, আমার আমার স্পেশাল গেস্ট। আমার পছন্দের একজন মানুষ আমার কিউটি আপু। তবে যাই বলো আমার পছন্দ তো বরাবর সেরা।
তার হাসিটা নিঃশব্দে ছড়িয়ে পড়লো পুরো ঘরে। রাহি হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল মায়ের দিকে।
রাহির মা তখনও তাকিয়ে ছিল মেহরিনের দিকে। মা দেখো এটাই আমার মেহেরিন আপু । মেহরিন সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে সালাম জানায় । রাহির মা হাসি মুখে উত্তর নেয় তার পর বলে..
সাবিহা তালুকদার:
এটাই বুঝি তোমার মেহরিন আপু?
রাহি হালকা মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাই।
মেহেরিন হালকা হাসে, আমরা এই বাড়িতে আজ প্রথম আসলো। প্রথমে একটু ভয় পেয়েছিল কে কিভাবে নেয়, এখানকার মানুষ কেমন এসব নিয়ে । তবে এখন ভয়টা চলে গেছে মনে হচ্ছে এখানকার প্রত্যেকটা মানুষই খুব ভালো ।
মেহরিন এগুলাই ভাবছিল আর তখন
সাবিহা তালুকদার : বাহ্! তুমি তো একেবারে মিষ্টি একটা মেয়ে! দেখে মনটা জুড়িয়ে গেল, মায়াভরা একটা মুখ, মিষ্টি হাসি আর এই সেই হাসিতে মন ভাঙার ওষুধ!”
ঘরে থাকা দুই তরুণ—রামিম আর আরাফ, দুজনেই একসাথে যেন মনের মধ্যে আওড়ায়, “ভাঙবে তো বটেই… আমাদেরই মন আগে ভাঙবে”
রাহি মায়ের দিকে চোখ টিপে বলল, বলেছিলাম না মা, আমার আপু কোনো সাধারণ মেয়ে না।
সাবিহা তালুকদার হেসে বললেন, হ্যাঁ সেই তো এই মেয়েকে দেখলে, যেন মনে হয় আলোর ছায়া নিয়ে কেউ হেঁটে আসছে।
মেহরিন ওদের কথায় খুব লজ্জা পায়।তখনই চুমকি ফিসফিসিয়ে বলে ভাই রে ভাই এরা তোকে যেভাবে দেখছে মনে হয় পাত্রী দেখতে এসেছে। ওই যে দেখ , দুইটা ছেলে কেমন কেবলার মত তাকিয়ে আছে মনে হয় তোকে দেখে ওদের মনে প্রেমের ঘন্টা বেজে গেছে…
চুমকি তখন ফিসফিসিয়ে বলে, এখানে সবাই অনেক ভালো। কিন্তু এত এত ভালো মানুষের ভিতরও এই রিদ তালুকদার এমন বদমেজাজি ঘাড় তেরা কেমনে হইল রে দোস্ত ? শুনলাম
কেক আনতে গেছে রিদ ভাইয়া। এসে জানি আবার কি ঝামেলা পাকায় তোকে দেখে যদি রে’গে যায়। আচ্ছা যা হবে পরে দেখা যাবে চল গিয়ে বসি।
রাহি বলে আমার স্পেশাল গেস্ট আশায় আজকের পার্টি আরো সুন্দর হয়ে গেল ।
রামিম খেয়াল না করে বলে ফেলে, তুই আপু… এ তো একেবারে হৃদয়-হ্যাকার।
আর পাশ থেকে আরাফ মুচকি হেসে বলে, আমি কবিতায় অনেক কিছু কল্পনা করেছিলাম… কিন্তু এমন হাসি, এমন চেহারা… কল্পনারও বাইরে।
ওদের কথা শুনে চুমকি একটু কেশে উঠে বলে, বাঁচাও আমার বন্ধুকে চারপাশে কত মৌমাছি উড়াউড়ি করছে কখন জানি এসে কামড় দেয়। এত মুগ্ধতা না ছড়ালেই নয়।
ঠিক তখনই মূল দরজার পাশে নরম শব্দে খুলে গেল কাঠের প্যানেল।
রিদ তালুকদার হাতে কেকের বক্স, চোখে ক্লান্তি, মুখে স্বাভাবিক গাম্ভীর্য। মাথা নিচু করে ঘরে ঢুকছিল—জন্মদিনের ভিড়-ভাট্টা তার পছন্দ নয়। কিন্তু আজ তার কলিজার টুকরোর জন্মদিন । তাই আজ সে সব মেনে নিবে ওর যত আবদার যত আশা সব ।
চোখটা তুলে সামনে তাকায় রিদ….
তখনই থেমে গেল সময়।
ড্রয়িং রুমের একপাশে সোফাই বসে আছে রাহি আর তার পাশে—
এক অপরূপ তরুণী,
কালো হালকা শাড়িতে ঘেরা কোমল শরীর,চোখে কাজল, ঠোঁটে পিংক লিপস্টিক সবচাইতে বেশি যেটা নজর কাটছে সেটা হলো ঠোঁটের নিচে থাকা ওই কালো তিলটা যেমনটা কবিতায় পড়ে,
আর হাসিটা—একটুখানি বাঁকা, একটুখানি লাজুক, আর একেবারে হৃদয়ে বাজে।
রিদ হঠাৎ একটু যেন থমকে গেল।
চোখে দৃষ্টি গাঢ় হলো।
কিছু একটা খুঁজে ফেরে চোখ… ঠিক কী, সে জানে না।
রাহি তখনই দৌড়ে গেল রিদের কাছে—
এই যে দাদাভাই এত সময় লাগে বুঝি আসতে, আচ্ছা সে যাই হোক দেখো, এইটাই মেহরিন আপু আমার স্পেশাল গেস্ট।
তখন মেহরিন তাকায় রিদের দিকে
রিদ আর মেহরিনের চোখাচোখি হলো।
মেহরিন চোখ নামিয়ে নেয় । চুমকি বলল এই যে এসে গেছে দ্য গ্রেট রিদ তালুকদার । শোন মেহু আজ কিন্তু এই ব্যাটার লগে ঝামেলা পাকাবি না । আমরা কিন্তু আজ একটা বার্থডে পার্টিতে আসছি কোন তর্ক প্রতিযোগিতায় না ।
রিদ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল কয়েক সেকেন্ড।
তারপর ছোট করে বলল ওহ.. এটা বলেই কেক টা একটা হেল্পিং হ্যান্ড এর কাছে দিয়ে উপরে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
রিদ ফ্রেশ হতে চলে যাওয়ার পর ঘর যেন আবার কোলাহলে ভরে উঠল।
রামিম সামনে এসে বলল,এই যে মিস…আপনি তো আমাদের বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই আলোর উৎস হয়ে গেছেন! আমি তো সানগ্লাস পরে ফেলতাম, যদি আগে জানতাম।
চুমকি চট করে বলে উঠল,
—আপনার তো এখন থেকেই সানগ্লাস দরকার, চোখে তো ‘ক্রাশ’ এর ছায়া স্পষ্ট।
আরাফ পেছন থেকে নাটকীয় গলায় বলল,
এইরকম চেহারার জন্য কবিতা নয়, একেবারে গান লেখা উচিত…
“তোমার হাসিতে ডুবে গেলে প্রাণ
হৃদয়ের জানালায় বাজে সাইক্লোন”
রাহি হেসে বলল,
ভাইয়া, তোমার কবিতা বরং আপুকে না শুনিয়ে ভেতরে রেখে দেও, ওটা পরে ছাপিয়ে দিবো।
নুপুর পেছন থেকে গলা নামিয়ে বলল,
ভাইয়াদের কি বলবো? আমি মেয়ে হয়েও আপুর উপরে ক্রাশ খাইছি.. ছেলে হইলে পাক্কা বিয়ে করে নিতাম। আপু তোমাকে দেখলে না শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে।
মেহরিন একটু লজ্জা পেয়ে বলল,
তোমরা সবাই মিলে আমাকে লজ্জা দিতে দিতে মাটিতে পুঁতে ফেলছো। তোমাদের কথায় কখন জানি মাটি ফাক হয়ে যায় আর আমি ঠাস করে ভিতরে চলে যাই ।আমি কিছুই করিনি বুঝলা এভাবে আর বইলো না আমার বুঝি লজ্জা করে না।
চুমকি হেসে বলে উঠল,
হ্যাঁ, কিছুই করনি শুধু চোখের পলকে মন ছুড়ে দিয়েছো একটা রিকশাভর্তি ক্রাশ।
আর তখন রাহি বলে,
আর আমি বলছি, আজ থেকে তোমার নাম দিলাম—ক্রাশলতা মেহরিন।
সবাই হেসে লুটোপুটি—আর মেহরিন কেবল মুখে হাত দিয়ে মাথা নেড়ে বলল,
তোমরা সবাই পাগল।
ড্রয়িং রুমে হাসি, ঠাট্টা, খুনসুটি চলছে একটানা।
মেহরিন আর চুমকি মাঝেমাঝে চোখে চোখ রাখছে, যেন বলছে, “এই বাড়ির মানুষগুলো কী দারুণ!”
ঠিক তখনই…
কি শুরু করেছিস তোরা ভদ্রতা সভ্যতা সব কি ভুলে গেছিস ?
গলা ভেসে এল পেছন দিক থেকে। কণ্ঠটা ঠাণ্ডা, কিন্তু কাঁপন ধরায় ঘরে।
রিদ তালুকদার।
সে সোজা দাঁড়িয়ে। চোখে রাগ নয়, তবে বিরক্তি এটা কি জন্মদিন, না মেলোড্রামার ওয়ার্কশপ?
সবাই চুপ। কেউ হেসে ফেলে, কেউ একটু লজ্জা পায়।
আরাফ হেসে বলে,
— আরে ভাই বাদ দে না, সবাই তো আর তোর গম্ভীর বের হয়ে থাকতে পারে না । জীবনে বাঁচবোই আর কয়দিন বল। জীবনটা না হয় একটু হাসি খুশিতেই কাটুক। তাই তোকে একটা কবিতা শোনাই কবিতা শুনালে, হয়তো মুডও ভালো হয়ে যাবে।
মেহেরিন আর চুমকি খুব বিরক্ত। চুমকি আস্তে বললে ওই যে গোমড়ামুখো আবার চলে আসছে ।
ঠিক তখনই—
সিঁড়ি দিয়ে নামার শব্দ।
সবাই তাকায় ওপরে।
মিলি তালুকদার ধীরে ধীরে নিচে নামছে, চোখে বিস্ময়।
— এই কী ব্যাপার! এত কথা, এত হাসি… আমাকে কেউ ডাকেনি কেন?
সামনে এসে দাঁড়িয়েই সে বলে উঠল,
— এই যে, দাদা ভাই! তোমার মুখটাকে অমন করে রাখছো কেন ? চওড়া মুখ দেখে মনে হচ্ছে, কেউ বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে না জানিয়ে।
রামিম এক ঠোঁটে হাসি নিয়ে বলল,
—না আপু, আসলে কী বল তো দাদাভাইয়ের মুখটা জ্যাম হয়ে গেছে।তাই মুখ অমন হয়ে আছে । নইলে আমাদের বাড়িতে এত সুন্দর একটা মেয়ে আসছে তারপরে কেউ মুখটা কিভাবে এমন করে রাখে ।
মিলি অবাক হয়ে তাকায় মেহরিনের দিকে,
তুমি বুঝি মেহরিন? বাহ্… তুমি তো দেখতে অনেক মিষ্টি ।
মেহরিন একটু হেসে বলে,
আপনিও খুব সুন্দর দেখতে ।
রিদ চোখ সরিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। মুখে কথা নেই, কিন্তু মনে মনে হয়তো সে নিজেই স্বীকার করে নিচ্ছে—
এই মেয়েটা… তালুকদার ভিলাই ঝড় এনেছে।
রিদ সরে আসে ওখান থেকে । তখনই তালুকদার বাড়ির অন্য সদস্যরাও একে একে এসে হাজির হতে লাগলো।
শামিমা তালুকদার এসে মেহরিনকে দেখে মায়াভরা চোখে বললেন,
এই মেয়েটা তো যেন ফুল। এত সুন্দর, এত মিষ্টি মুখ… নাম কী মা?
মেহরিন মুচকি হেসে মাথা নিচু করে বলল,
“আমি মেহরিন…”
শামিমা তালুকদার তার মাথায় হাত রেখে বললেন,
— ভালো থেকো মা।
একে একে রেদওয়ান তালুকদার জাফর তালুকদার আর বাকি যারা যারা আছে সবার সাথে পরিচয় হয় নেয় মেহরিন আর চুমকি ।
আরিফ খান এসে বলল,
এই যে সুন্দরি আপু, আমি আরিফ।
আরাফ খান পাশে এসে একটু ভদ্রভাবে হাসল, ও আমার ছোট ভাই । অনেক দুষ্টু ইনোসেন্ট ফেস দেখে গলে যাবেন না যেন । আর মনে মনে বলে
আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে, আপনি সত্যি আমার ‘সপ্নরঙ’।
মেহরিন হেসে বলে,
সমস্যা নেই আমি এসব অভ্যস্ত , আমারো ছোট ভাই আছে ওর বয়সি অনেক দুষ্টু হলে ওদের মন অনেক ভালো হয়।
তালুকদার বাড়ি তখন ভরে উঠেছে হাসি, আলাপ আর চেনা অচেনার মিষ্টি বন্ধনে।
মেহরিন ধীরে ধীরে এক একজন করে সবার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে, কথা বলছে, হাসছে।
এমন সময় রাহি সবার মাঝখানে এসে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিল,
—সবাই রেডি? এবার আসল মুহূর্ত—কেক কাটার সময়।
রাহেলার খান, আদিব খান, সাবিহা তালুকদার , রেদওয়ান তালুকদার , জাফর তালুকদার , শামিমা তালুকদার , মিলি, রামিম, নুপুর, আরাফ, আরিফ চুমকি ও মেহরিন সবাই একসাথে জড়ো হল।
রাহি যাই কেক এর সামনে আর তার পাশে দাঁড়ালো রিদ ।
সবাই একসাথে গেয়ে উঠলো:
“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ…”
“হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার রাহি…”
রাহির একে একে সবাই কে কেক খাওয়ায় মেহরিন কে কেক খাওয়ানোর পর মেহরিন কিছু টাহ কেক মাখিয়ে দিলো রাহির নাকে, তারপর বলে
—আজ থেকে তুই আমার লিটল সিস্টার! ডিল?
রাহি হেসে বলল,
ডিল,আপু।
রিদ একটু দূরে দাঁড়িয়ে… মুখ গম্ভীর, কিন্তু মেহরিনকে ঘিরে এত ভালোবাসা দেখে তার ভেতরটাও যেন একটু গলে যায়।
এক ঝলকে সে তাকায় মেহরিনের দিকে—
তখন মেহরিনও তাকায় তার দিকে।
চোখে চোখ।
কেউ কিছু বলে না।
কিন্তু নিঃশব্দে যেন একটা অদৃশ্য সেতু তৈরি হতে থাকে।
মেহেরিন রাহি কে বলে এখন আমাদের যেতে হবে ।
রাহি বলল,
তোমরা এত তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছো? আরও কিছুক্ষণ থেক না প্লিজ
মেহরিন আদর করে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
অন্য একদিন আবার আসব।
সাবিহা তালুকদার বলে, তোমরা এখন চলে যাচ্ছো । মেহরিন বলে, আন্টি আমাদের এখন যেতে হবে বেশি দেরি করে ফিরলে আম্মু চিন্তা করবেন। সাবিহা তালুকদার আর কিছু বলে না।রিদ, ওদের ড্রপ করে দাও। সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
মেহরিন সাথে সাথে বলল,
আন্টি, আপনি ব্যস্ত হবেন না ! আমরা নিজেরাই চলে যাবো।
সাবিহা তালুকদার একটু কঠিন মুখে বললেন,
— তোমরা আমার বাড়ির অতিথি, আর এই সময় দুটো মেয়ে একা বেরোবে—আমি সেটা মানতে পারব না।
কথা শেষ, সিদ্ধান্ত পাকা।
রিদ কিছু না বলে গাড়ির চাবি হাতে নিল।
কি আর করার বাধ্য হয়ে মেনে নিল। তার পর ওরা গেলো রিদের পিছু পিছু ।
রিদ বলে,
— গাড়িতে ওঠো।
মেহরিন একটু ইতস্তত করে, কিন্তু আর কিছু না বলে দুজনেই উঠে বসে গাড়িতে।
বাড়িতে উঠে কেউ কোন কথাই বলে না, গাড়ি এসে থামে মেহরিন্দের বাড়ির সামনে । বাড়ি থেকে নেমে পরে মেহরিন আর চুমকি। ভদ্রতার খাতিরে রিদ কে ধন্যবাদ জানাই মেহরিন আর চুমকি আর বলে বাসায় আসতে । রিদ বলে No need বলে সে তার এক মুহূর্ত দাঁড়ায় না।চলে যাই মেহরিন চুমকি অবাক এ কেমন মানুষ রে বাবা।
চুমকি হুট করে বলে উঠল,
এইটা মানুষ না, পাথর?
মেহরিন হেসে ফেলল,
কি বলিস?
চুমকি চোখ বড় করে বলল,
এই লোকটা হাসে না কেন? আমি ভাবছিলাম কেকের মধ্যে তো চিনি কম ছিল না, তাহলে মুখে মিষ্টি এলো না কেন?
মেহরিন হেসে গড়াগড়ি—
তুই চুপ কর বইন।
চুমকি আবার বলল,
আরে সত্যি বলছি, ওর চেহারা দেখে মনে হয় যেন জন্মের সময় কেউ বলে দিয়েছিল— হাসবি না রিদু হাসলে বেয়াদবি হবে।
মেহরিন আর না হেসে পারছে না।
চুমকি থামে না—
আরেকটা কথা বলি? আমি বাজি ধরে বলতে পারি, ও রাতে ঘুমানোর আগে আয়নায় তাকিয়ে বলে আজও কেউ হাসি দেখলো না সফলতা।
মেহরিন এবার একেবারে হাঁটু ধরে বসে পড়ে—
তুই থাম, প্লিজ! পেট ব্যথা হয়ে যাচ্ছে।
মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৫
চুমকি চোখ টিপে বলে,
আচ্ছা, বল—তোর কি মনে হয় না এই মি. সিরিয়াস একটা গোমড়া মুখো হনুমান । আমার কি মনে হয় জানিস শা’লা মনে করে হাসলে টাকা দিবে হবে। শা’লা কিপটা।