মেহেরজান ২ পর্ব ৪
লেখনীতে- সোহামণি
নুজাইশের মা সকাল থেকেই নুজাইশের কান ঝালাপালা করে দিয়েছে। বিয়ে কর, বিয়ে কর করতে করতে। তবে নুজাইশ এখনই বিয়ে করতে রাজি নয়। সে কিছুদিন সময় চায় তার মায়ের কাছে। আবিদা বেগম ছেলের রুমে এসে পুনরায় বলা শুরু করলেন,
“বয়স তো আর কম হলো না রে। বিয়েটা করে ফেল। আমাদের একটা মেয়ে পছন্দ করা আছে। তোরও পছন্দ হবে মেয়েটাকে। মেয়েটার নাম ব_”
“আহ মা। তোমাকে আর কতবার বলবো আমি এখনই বিয়ে করবো না। আমাকে কিছুদিন একা থাকতে দাও।”
আবিদা বেগম ছেলের সামনে এসে বললেন,
“ছোট থেকেই তো একাই থেকে থেকে আসছিস। এখন আবার কিসের একা? বড় হয়েছিস, ভালো চাকরি করিস, এখন বিয়ে করবি। আমাদেরও বয়স হয়ে যাচ্ছে একটা নাতির সাথে খেলার বয়স এখন আমাদের। অথচ মেয়ে তো হয়েছে ছেলের মতো আর ছেলেটাও বিয়েতে নাকোচ করে দেয়।”
নুজাইশ চোখ ছোট ছোট করে মায়ের দিকে তাকালো। আবিদা বেগম মুখ ঝামটা মেরে সেখান থেকে চলে গেলেন। নুজাইশ আহত চোখে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে বলল,
‘ মা তুমি যদি জানতে এখনও কেন বিয়ে করতে চাইছি না তবে কিছুটা বুঝতে। তবে বলার মতোও ভাষা নেই।’
নুজাইশের মন খারাপ হয়ে গেলো। বন্ধু মেহরানকে কল করলো। তিনবার রিং হতেই মেহরান কল রিসিভ করলো।
“আমি আসছি।”
নুজাইশের কথায় অপরপ্রান্ত হতে মেহরান প্রশ্ন করলো,
“কোথায়?”
“তোদের বাড়িতে।”
“চলে আয়।”
“ঠিক আছে।”
নুজাইশ পা টিপে টিপে বেরিয়ে পড়লো মেহরানদের বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রাউশি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। রিকশায় করে যাবে। ইউসুফ তার বাইকে চড়ে যেতে বলেছিলো তবে রাউশি মানা করে দিয়েছে। এমন সময় কিছুদূরে তানজিমের গাড়িটা দেখতে পেলো রাউশি৷ রাউশি কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে গেলো তানজিমের গাড়িটার দিকে। তানজিম তখন গাড়ির ভেতরে বসে বসে তার প্রেমিকা মাইশার জন্য অপেক্ষা করছিলো। তখন কেউ গাড়ির পাশে আসলো। তানজিম তাকাতেই দেখলো রাউশিকে। গাড়ির কাঁচ নামালো তানজিম। রাউশি হালকা ঝুঁকে জিজ্ঞাসা করলো,
“তানজিম ভাই তুমি এখানে কি করছো?”
তানজিম দাত কেলিয়ে হেসে জবাব দিলো,
“তোর ভাবীর জন্য ওয়েট করছি।”
রাউশি একবার এদিকে ওদিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে ব্যঙ্গ করে বলল,
“কে সেই মেয়ে? আমিও দেখতে চাই। যে কি দেখে সে তানজিম আহসানের প্রেমে পড়েছে। কোথায় সে কোথায়?”
তানজিম দাত কিড়মিড় করে বলল,
“আমি কোনদিক থেকে কম? আমি রিচ, হ্যান্ডসাম, গুড লুকিং সবকিছুতেই পার্ফেক্ট।”
“আচ্ছা বাদ দেও এসব। ভাইয়া আমায় উপকার করো। আমি বিয়েটা করতে চাই না।”
তানজিম চোখে চশমা পড়তে পড়তে বলল,
“তোর ভাগ্য অনেক ভালো যে তুই মেহরান খানকে স্বামী হিসেবে পাচ্ছিস। তুই জানিস? মেহরান ভাই কত ভালো আর কত মেয়ে মেহরান ভাইয়ের পেছনে ঘুরে?”
“ওসব মেয়ে আর আমি কি একই নাকি? দেখো তানজিম ভাই, আমি তোমার আপন বোন না হই, চাচাতো বোন তো! আমি আসলেই ওই মেহরান খানকে বিয়ে করতে চাই না।”
তানজিম সামনে তাকিয়ে নিরুদ্বেগ স্বরে বলল,
“মেহরান ভাই তোকে অনে_”
কথাটা আর বললো না তানজিম। তার ফোন বেজে উঠলো। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো উজান কল করেছে। উজান আর তানজিম বন্ধু, ব্যাচমেট। তানজিম কলটা রিসিভ করলো। আর রাউশিকে বলল,
“বাড়িতে যা। যা হবার ভালোই হবে। চিন্তা করিস না।”
রাউশি রেগে গাড়িতে একটা জোরে সোরে লাথি দিয়ে চলে গেলো। তানজিম চেঁচিয়ে উঠলো,
“আরেএএ..
আমার গাড়ি ভেঙে ফেললো রে।”
“চেঁচাচ্ছিস কেন শালা?”
ফোনের ওপাশ থেকে উজানের কণ্ঠ শুনে তানজিম হতাশার স্বরে বলল,
“রাউশি আমার গাড়িটা ভেঙে ফেলেছে।”
“কি বলছিস?”
“কিছু না। আচ্ছা কি জন্য কল করেছিস সেটা বল।”
“রাউশিকে নিয়ে আয় আমাদের বাড়িতে।”
“মানে?”
“রাউশিকে আমাদের বাড়িতে তুই নিয়ে আয়। মেহরান ভাই বলেছে।”
তানজিম একবার তাকালো বাইরে। রাউশি চলে যাচ্ছে। বলল,
“ও তো চলে যাচ্ছে।”
“তাড়াতাড়ি যা আর নিয়ে আয় ওকে। যা।”
উজান আবারও বলল,
“আর শোন রাউশি যেন বুঝতে না পারে।”
তানজিম গাড়ি চালিয়ে রাউশির দিকে এগিয়ে গেলো। রাউশির কাছে পৌঁছাতেই ডেকে উঠলো,
“ওই রাউশি!”
রাউশি হাঁটা থামালো। পাশে তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে বলল,
“কি?”
“গাড়িতে ওঠ। একটা জায়গায় যায়।”
“পারবো না।”
“আরে আয় না।তোকে বিয়ে ভাঙার কিছু টিপস দেবো।”
রাউশিকে উৎসুক দেখালো এবার। প্রস্ফুটিত কণ্ঠে আওড়ালো,
“সত্যি?”
তানজিম একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল,
“সত্যিই।”
রাউশি তাড়াহুড়ো করে তানজিমের গাড়ির প্যাসেঞ্জার সিটে উঠে বসতেই তানজিম কপাল কুঁচকে বলল,
“আমি তোর ড্রাইভার না।”
রাউশি বেরিয়ে গিয়ে আবারও তানজিমের পাশে গিয়ে বসে পড়লো। রাউশিকে খুশি দেখাচ্ছে। তানজিম মনে মনে বাঁকা হাসি হাসছে শুধু। তার অনেক মজা লাগছে। গাড়ি স্টার্ট দিলো সে।
“কোথায় যাবো ভাইয়া?”
তানজিম দাত কেলিয়ে হেসে জবাব দিলো,
“তোকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যাব যেখানে তোর ভবিষ্যত।”
রাউশি বুঝলো না তানজিমের কথা,
“তুমি কি পাগল হয়ে গেলে নাকি?”
“আরেহ না না। চুপ চাপ বসে থাক। পৌঁছে গেলেই দেখতে পাবি।”
আধঘণ্টা বাদে রাউশিরা মেহরানদের বাড়ির সামনে এসে পৌঁছালো। রাউশি বাড়িটার মূল ফটকের দিকে তাকিয়ে তানজিমকে জিজ্ঞাসা করলো,
“এটা কার বাড়ি?”
রাউশি কখনোই খান বাড়িতে আসে নি। অথচ তার পরিবারের সাথে এই খান বাড়ির কত সখ্যতা। অচেনা হওয়ায় রাউশি আবারও জিজ্ঞাসা করলোক্স
“এখানে কেন এসেছি?”
তানজিম গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলল,
“নাম।”
রাউশি নেমে পড়লো। তানজিমও নেমে এলো। রাউশির চোখ গিয়ে আটকালো বিশাল গেইটের পাশের দেয়ালে নেমপ্লেটে। যেখানে খোদাই করে লিখা ‘খান বাড়ি’। এবার রাউশি চমকালো। চমকে তানজিমের দিকে তাকাতেই তানজিম হেসে উঠলো। রাউশি দাতে দাত চেপে বলল,
“এটা কি হলো তানজিম ভাই?”
“তেমন কিছু না। আচ্ছা চল।”
বলেই রাউশির হাত ধরে একপ্রকার টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। রাউশি পেরে উঠলো না তানজিমের সাথে। গেইটে থাকা দারোয়ান তানজিমকে দেখেই হেসে বলল,
“আরেহ তানজিম বাবা, কেমন আছো বাবা?”
“ভালো আঙ্কেল।”
“মেয়েটা কে?”
তানজিম হো হো করে হাসতে হাসতে বলল,
“এই বাড়ির ভবিষ্যত বউ।”
দারোয়ান ফোকলা দাত বের করে একটা হাসি দিলো। তানজিমকে রাউশি বার বার না করতে থাকে। তবে তানজিম শোনার পাত্র নয়। সে তো রাউশিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে একপ্রকার। বাড়ির দরজার সামনে আসতেই ভেতরে উর্মিলা বেগমকে দেখা গেলো।
উর্মিলা বেগম কাজ করছিলেন। দরজার সামনে রাউশি আর তানজিমকে দেখে অবাক হলেন কিছুটা। হেসে কাছে এগিয়ে গিয়ে একপ্রকার খুশিতে জিজ্ঞাসা করলেন,
“আরে রাউশি মা তুই এখানে? আর তানজিম তুই?”
তানজিমই উত্তর করলো,
“আসলে রাউশি আসতে চাইছিলো।”
রাউশি চোখ বড় বড় করে তাকালো। তাড়াতাড়ি করে বলল,
“না না আন্টি তানজিম ভাইই..”
“তোরই হবু শ্বশুরবাড়ি এটা। যখন ইচ্ছে তখন আসবি। আয় ভেতরে আয়। মেহরান বাড়িতে আছে।”
মেহেরজান ২ পর্ব ৩
রাউশির মাথা গরম হয়ে গেলো। তানজিমকে এখন একা পেলে ওর মাথা চিবিয়ে খেতো। রাউশি দাতে দাত চেপে ভেতরে ঢুকলো। এদিকে উর্মিলা বেগম বাড়ির সবাইকে ডাকা আরম্ভ করলেন। উনাদের বিশাল বড় বাড়িতে জনসংখ্যা খুবই কম। মাহবুব খান, উনার স্ত্রী আর দুই ছেলেই শুধুমাত্র। মেহরানও পুরো বছরই বাইরে থাকে। উর্মিলা বেগম রাউশিকে টেনে ভেতরে ঢোকালেন। রাউশির চোখ গেলো সিড়ির দিকে। মেহরান নামক পুরুষটা পাঞ্জাবির আস্তিন গুটিয়ে গুটিয়ে নামছে। তবে তীক্ষ্ণ আর ব্যঙ্গ দৃষ্টি রাউশির দিকেই।