মেহেরজান ২ পর্ব ৫
লেখনীতে- সোহামণি
মেহরান আর রাউশির বিয়েটা খুব সুস্থভাবেই হয়ে গেছে। রাউশিও কোনোপ্রকার ঝামেলা করে নি। এটা দেখে মেহরান নিজেও বেশ চিন্তিত। রাউশির এতো নিরবতার মানে মেহরান জানতে পারলো বাসর ঘরে যাওয়ার আগে। রাউশির একটা ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। ছেলেটা কিছু না বলেই রাউশির সাথে সমস্ত সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় রাউশি কিছুই বুঝতে পারে না। তাইতো মেহরানের সাথে বিয়ের সময় কোনোরূপ টু শব্দটি করে নি সে।
বাসর ঘরে বসে আছে রাউশি। চারপাশে বাহারি রকমের ক্যান্ডেলে পুরো ঘরটা আলোকিত হয়ে রয়েছে। বিশাল বড় জানালাটার পর্দা ভেদ করে বাতাস ঢুকছে হুড়মুড় করে। রাউশি খাটের কিনারায় বসে বসে চারপাশ দেখলো।
মুখের ভাবভঙ্গি স্বাভাবিক। হঠাৎ ইভানের কথা মনে পড়লো। রাগে দাতে দাত চাপলো। মনে মনে ভাবলো ওই শালাটারে যেখানেই দেখতে পাবে সেখানেই ঠাটিয়ে একটা চড় মেরে তবে ক্ষান্ত হবে। রাউশির সাথে মজা? রাউশির সাথে! ভাবতে ভাবতেই একপ্রকার হাঁপালো রাউশি। শা*লা বিয়ে করতে পারবে না তো প্রেম কি বা*লের জন্য করেছিলো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সেন্টার টেবিলে রাখা পানির গ্লাস থেকে ঢকঢক করে পানি খেলো। রাগ বাড়ছে তার। প্রচুর রাগ বাড়ছে। রাউশি উঠে দাঁড়ালো। নিজের দিকে একবার তাকালো। পরনের ভারী পোশাকটাকে রাগের অন্যতম উৎস বলে মনে হলো। কিন্তু তার লাগেজটা কোথায়? পুরো রুম জুড়ে খুঁজলো তবে পেলো না। ঘড়ির দিকে একবার তাকালো। রাত সাড়ে বারোটা বাজে। মেহরান লোকটা কোথায় মরেছে? আসছে না কেন? বিয়ে করার জন্য তো উঠে পড়ে লেগেছিলো। এখন ঘরে আসছে না কেন? রাউশি নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক হলো। নিজেকে ঝাড়ি দিলো কয়েকবার। পরনের লেহেঙ্গাটা পাল্টাতে হবে তাকে। একবার ভাবলো বাইরে বের হবে। তার ফোনটাও তো নেই। ওই ইউসুফরা ফোনটাও নিয়ে গেছে। এরা বন্ধু নামে কলঙ্কিত। রাউশি দরজার কাছে গিয়ে দরজাটা একটু খুললো। বাইরে তখনও আওয়াজ শুনতেই দরজা আনারও লাগালো। বাইরে যাওয়া যাবে না এখন। তবে এই ভারী কাপড়ও পড়ে থাকা যাবে না।
রাউশি আলমারির সামনে এগিয়ে গেলো। বিয়ে তো হয়েই গেছে। স্বামী মানতে একটু দেরি হবে তবে এছাড়া তো উপায় নেই। তাই ভেবে একটা টি-শার্ট আর একটা ট্রাউজার বের করলো। সাইজে বিশাল বড় হলেও আপাতত এটাই তার রাগ কমাতে সাহায্য করবে।
কাপড়গুলো নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। বের হলো যখন তখনও ঘরে মেহরান আসে নি। নিজের দিকে একবার তাকালো। টি-শার্টটা বড় হওয়ায় হাটু পর্যন্ত পড়েছে। আর ট্রাউজারটা পড়ে তো ভালোভাবে হাটতেই পারছে না। রাউশি ভাবলো মেহরান কি কোনো দানব নাকি? এতো বড় বড় পোশাক কেউ পড়ে নাকি? ট্রাউজারে ধরে উপরে তুলে খাটের দিকে এগিয়ে গেলো। তার ঘুম পাচ্ছে। সেজন্য বিছানায় গিয়ে খাটের উপর ছড়িয়ে থাকা ফুলের পাপড়ির ওপরেই শুয়ে পড়লো। এখন আপাতত একটা ঘুম দরকার। ঘুমানোর আগে মুখ ফুটে বলল,
‘ মেহরান আপনি আজ রাতটা আমায় ছাড় দিয়েন।’
বলেই চোখ বুজলো। কিছুক্ষণ পর গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো। মেহরান প্রবেশ করলো প্রায় দেড়টার দিকে। মাত্রই বাড়িতে ফিরলো সে। বিয়েটা হয়ে যাওয়ার একটা ফোন কল আসলে এরপর পরই একটা কাজে গিয়েছিলো বাইরে। সবে ফিরলো বাড়িতে। আর বাড়িতে ফেরার সাথে সাথেই নিজের ঘরে আসলো। ভেতরে আসতেই বাসরের জন্য সজ্জিত খাটটাই প্রিয় নারীটিকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে সেখানে দাঁড়িয়ে নিবিড় দৃষ্টে তাকিয়ে রইলো কিয়ৎক্ষণ। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দেখলে মেয়েটা তারই জামা কাপড় পড়ে আছে। মেহরানের জামা কাপড়গুলো বেশি বড় হওয়ায় কেমন যেন বাচ্চাদের মতো লাগছে রাউশিকে। মেহরানের ঠোঁটের কোণে তখনও বিশ্বজয়ের হাসি। ফ্রেশ হওয়ার জন্য নিজেও আলমারী থেকে প্রয়োজনীয় কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো।
কিছুক্ষণ বাদে ফিরে এসে দেখলো রাউশি তখনও গভীর ঘুমে তলিয়ে রয়েছে। মেহরান এবার রাউশির কাছে এগিয়ে গেলো। রাউশির পাশে বসে রাউশির ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। ডান হাতে রাউশির গাল ছুয়ে দিলো। রাউশি কেঁপে উঠলো। মেহরান নিঃশব্দে হেসে উঠলো। মেয়েটা কেমন বাচ্চাদের মতো। মেহরান রাউশির কপালে নিজের উষ্ণ ঠোঁটের গাঢ় চুম্বন এঁকে দিলো। এবারও রাউশি কেঁপে উঠলো। শুধু কি তাই? রাউশির ঘুমও ভেঙে গেলো। চোখ খুলে তাকাতেই মেহরানকে দেখতে পেলো। তাড়াহুড়ো করে উঠে বসলো রাউশি।
মেহরান তখনও ওভাবেই বসে আছে। রাউশি চোখ ছোট ছোট করে বলল,
‘ কখন এসেছেন? ‘
‘ কেন মিস করছিলে নাকি?’
রাউশি মুখ অন্যদিকে ঘুরালো। মিস আবার একে? কখনোই না। মুখে বলল,
‘ এমন কিছুই না। শুধু জানতে চাইছি।’
‘ ওহ তাই?’
‘ হু।’
মেহরান এবার উঠে দাঁড়ালো। রাউশি আড়চোখে দেখলো তা। মনে মনে অসভ্য ইতর বলে মেহরানের চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করে দিচ্ছে। ঘুমের সুযোগ নিয়ে কিস করছে? রাউশি পুনরায় ভাবলো। বিয়ে তো করেছে। আজকেই বাসর রাত। কিস করা তো স্বাভাবিকই। রাউশি উত্তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো। মেহরান বলে উঠল,
‘ তা রাউশি। মনে মনে যত গালি আছে দিন। এতে আমার কিছুই হবে না। কারণ আমি মোটেও সুপুরষ নই। আপনি আমাকে এখনও স্বামী হিসেবে মানতে পারেন নি ঠিক আছে। তবে এতে আমারও কিছু করার নেই আসলে। ধীরে ধীরে মেনে নেবেন। আর বিয়ে তো হয়েই গেছে। যেখানে আগলে রাখার হাজারটা মানে আছে। ছেড়ে দেওয়ার তো কোনো মানেই নেই। যেদিন থেকে তুমি আমার নজরে পড়েছো সেদিন থেকেই আমার হয়েছো। বৈধতা বাকি ছিলো সেটাও দ্রুত হয়ে গেলো। মানামানির সময় পরেই নাহয় হোক। বাসর রাত, মিস করবো না নিশ্চয়।’
রাউশি কিছু একটা আঁচ করতে পারলো। তার চোখ বড় বড় হয়ে এলো। মেহরান ঝুঁকে এলো তার দিকে। ঠোঁটে হাসি লেগেই আছে তার,
মেহেরজান ২ পর্ব ৪
‘ এরপর!’
রাউশি জড়ানো আওয়াজে কোনোমতে বলল,
‘ কি এরপর?’
‘ ওইযে বললাম আমি মোটেও সুপুরষ নই।’
‘ না মানে, আমার কিছুদি..’
‘ হুশশ, আমার এতোদিন সময় নেই হাতে।’
বলেই মেহরান রাউশির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট দ্বারা স্পর্শ করলো। পুরো রুম জুড়ে বেলি ফুলের সুবাস। মোহনীয় এই সন্ধিক্ষণে ক্যান্ডেলের আলোগুলোও মেহরানের মতো বেসামাল মনে হলো রাউশির।