মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ৪১

মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ৪১
সাদিয়া

শোরগোল মুক্ত কেবিনটার মাঝে কেবল দুই মানবমানবীর নিশ্বাসের নিগূঢ় শব্দ শুনা যাচ্ছে। যারা একেঅপর কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে মনের সবটুক তৃপ্তি ঢেলে। মায়রা থেকে থেকে আগের চেয়ে আরেকটু বেশি দৃঢ় করে নিচ্ছে হাতের বন্ধনটা। যেন দুনিয়া ভুলে একেবারে ইহামের ভেতরে ঢুকে পরার প্রয়াস করে চলেছে মেয়েটা। এক অদ্ভুত প্রশান্তি শীতল করে তুলল ইহামের তপ্ত বুক পিঞ্জিরা টা।

সবসময় মায়রার কান্নায় রেগে যাওয়া ইহামও আজ নিজের বুকে প্রেয়সীর এই হৃদর খুঁড়ে ভেতরে ঢুকে যাওয়ার ব্যাপারটা আর নাক টানা শব্দও আরাম দিচ্ছে। ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে এক চিমটি সোনালি আলো ফুটে ইহামের। কাল থেকে ভেতরে যে দাবানল অগ্নি ক্রোধে দিশেহারা হয়ে উন্মাদ হয়েছিল। সেই উত্তপ্ততা আজ যেন ঠান্ডা বরফ হলো ওই টুকু স্পর্শে। বুকের ভেতরটা এত হাল্কা লাগছে যা কাউকে বলে প্রকাশ করতে পারবে না সে। জীবনে আদৌও এত প্রশান্তি স্বস্তি কখনো পেয়েছিল কি? ভেবে পায় না ইহাম। চোখ বন্ধ করে নিজের সবটুক দিয়ে বেয়াদব মেয়েটাকে আগলে ধরে তৃপ্তির ঢেকুর তুলার মতো মুচকি হাসে। বুক ফেরে বের হয় এক স্বস্তির শীতল নিশ্বাস।
মায়রা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। সেই সাথে তীব্র বেগে খমছে ধরতে চায় ইহামের পিঠের চামড়া। এতক্ষণে সেখানে লাল দাগ কেটে দিয়েছে নিশ্চয়। মৃদু সুখকর ব্যথায় ইহাম মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে নেয়। নরম কোমল স্বরে ডাকে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“কি হয়েছে মায়রা? এ্যাই বোকা মেয়ে। কাঁদছো কোন? কি হয়েছে বলো আমায়। তাকাও এদিকে।”
ইহামের মুখ থেকে এমন আদুরে গলা পেয়ে মেয়েটা আরো গলতে শুরু করে। পূর্বের চেয়ে দ্বিগুণ বেগে ফুঁপায়। ইহাম তাকে শান্ত করতে চায়। নিজের মুখ তুলে আদুরে তুলতুলে গলায় বলে “এদিকে তাকাও মায়রা। তাকাও আমার দিকে।” মায়ারা নিরুত্তর রয়। মাথা দুলিয়ে না করে। ইহাম তবুও মেয়েটার মুখ তুলতে চায়। টানাটানির পর বিব্রত ভাবে মায়রা মুখ তুলে। তবে হাত ছাড়ে না ইহামের থেকে। কান্নারত রঙ্গিম ফুলো মুখটা দুই হাতের আজলায় পরম যত্নে তুলে আনে ইহাম। গভীর শান্ত চোখে তাকিয়ে ফিসফিস করে জানতে চায় “কি হয়েছে মেয়ে? এত কাঁদছো কেন? কি সমস্যা?” বলতে বলতে মায়রার এলোমেলো চুল গুলির দিকে তাকায়। ভিজে মুখে লেপ্টে রয়েছে গুছি কয়েক চুল। আলতো হাতে সেই চুল গুলি সরিয়ে দিয়ে আহ্লাদ স্বরে প্রশ্ন করে,

“বোকার মতো কাঁদছো কেন বলবে মেয়ে?”
“আপনি খুব পঁচা ক্যাপ্টেন সাহেব।”
“হঠাৎ এই কথা কেন?”
“…
“তোমার ভাষায় কঠিন পাষাণ মানব তাই তো?”
“আপনি তার চেয়েও বেশি।”
কথা শেষে পুনরায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে ইহামের বুকে। সঙ্গেসঙ্গে ফুটে তার মুখে সুখ নিঃসৃত হাসি। দুই হাতে মায়রা কে আগলে ধরে শুধায়,
“তাহলে আমায় খুঁজছিলে কেন?”
“আপনি নিজেকে আমার কাছে সবসময় এত কঠিন দেখান কেন?”
“এটা কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর নয়।”
“আপনার কথাটাও আমার প্রশ্নের উত্তর নয় ক্যাপ্টেন সাহেব।”

মায়রার ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলা কথায় মৃদু হেসে উঠে ইহাম। নিঃশব্দে মায়রার মাথায় অনায়াসে চুমু খায়। হিসহিস করে বলে “আমি এমনি। এটাই আমার স্বাভাবিক রূপ। সামলে উঠতে পারবে তো?” লজ্জার ভিড়ে উত্তর দেয় না মেয়েটা। কানে আসে আরো ফিসফিসে কন্ঠ “আগেই বলেছিলাম না আমি সবার মতো না? একটু আলাদা একটু ডিফরেন্ট। মানিয়ে নিতে পারবে আমার পিচ্চি মিসেস চৌধুরী?” মায়রার আরো মিশে যাওয়া গূঢ় ভাবে টের পাওয়ায় সেই লজ্জার আভাস।
“মাথা ব্যথা আছে?”
“হুম।”
“টেস্ট করিয়েছিলে?”
বুকের মাঝে ঘাপটি মেরে থেকেই মেয়েটা দুই পাশে মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয় “না।” ভ্রুকুটি করে ইহাম সঙ্গেসঙ্গে। মোটা গলায় প্রশ্ন করে “কেন? কয়টা বাজে এখন?”

মায়রা কে আরো কিছু বলবে তার আগে অনুভব করে পিঠের কাছটায় ভিজে কিছুর অস্বস্তি। শঙ্কিত হয়ে মায়রা কে ছাড়িয়ে দেখতে পায় দুদিন আগে গায়ে জড়ানো শুভ্র কুচবুচে শার্টটায় সদ্য লাগা শ্বেতবর্ণ। কপাল কুঁচকায় সে বিস্তর। তড়িতে নজর যায় মায়রার হাতে লাগানো ক্যানুলা চুয়ে পড়া র’ক্তের ফোটার দিকে। শান্ত স্থির চোখ গুলি হঠাৎই লাল হয়ে রাগ ফুটে উঠে। রঙ্গিম চোখে তাকায় মায়রার দিকে। মায়রা নিজেও বোকা বনে যায়। হাতের রক্ত আর ইহামের রক্তলাল চোখ দুটোই মেয়েটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে তুলে। ইহামের চোখের দিকে ভীতু নজরে তাকিয়েই ঢোক গিলে।
ইহাম তখনো রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার দিকে। তখন ছুটে আসার সময় নিশ্চয় স্যালাইনের নল বেকায়দায় খুলে এসেছে বেয়াদব মেয়েটা। চিবিয়ে বলে উঠল,

“হোয়াট রাবিশ। তোমায় কি করতে মন চায় বলো তো আমায় মায়রা? কি করব এখন আমি তোমায়?”
“তে তেমন কিছু হ..”
“শাটআপ ননসেন্স” আগুন লাল চোখ দুটি দিয়ে যেন পারে জ্বালিয়ে দেয় মায়রা কে। দাঁতে দাঁত পিষে। “শরীরে রক্ত বেশি হয়ে গিয়েছে না? ওই টুকুনই তো শরীর। এক রাতের ডোজ নিতেই জ্বরে হিমশিম খাও। আবার তা নিয়ে বাহাদুরি?”
লজ্জায় গাল দুটি লাল হয়ে উঠল মায়রার। এখনি টুস করে ফেটে যাবে টসটসে আপেলের মতো। লাজুকলতার মতো মিয়ে আছে মেয়েটা। তার ওই রঙ্গিম মুখের দিকে ইহাম এক পলক তাকিয়ে ক্যানুলা লাগানো টেপটা খুলে আগে ক্যানুলা টেনে বের করল। ফিনকি দিয়ে আবারও রক্ত বের হওয়ার সাথে সাথে আঙ্গুল দিয়ে চেঁপে ধরল তা। পরক্ষণেই হুংকার দিয়ে চেঁচিয়ে উঠল ডক্টর বলে।

টেস্টের সব কাজ শেষ করে মায়রা কে নিয়ে ইহাম কেবলই কেবিনে ঢুকেছে। তখনের বেডটা স্যালাইনের টিপটিপ করে ফোটা পড়ার কারণে খানিক ভিজে গিয়েছে বলে ইহাম বেডটাও চেঞ্জ করিয়ে নিয়েছে। ডক্টর বলে দিয়েছে আপাদত স্যালাইন লাগছে না। পাতলা নরম কিছু খাবার খেয়ে ফুল রেস্ট করতে। মাথায় এই কয়েকদিন কোনো রকম চাপ প্রয়োগ করতে পারবে না।
মায়রা কে আলতো করে দুই হাতে জড়িয়ে আস্তেধীরে হাটিয়ে নিয়ে এলো কেবিনে। সারাক্ষণ শুয়ে থাকতে থাকতে মাথা আরো ভার হয়ে লাগছে। ইহামের এই আদুরে কান্ড এই যত্ন গুলি মায়রার মনে অনাবিল খুশি ছড়িয়ে দিচ্ছে।

“শুয়ে থাকে।”
“ভালো লাগে না।”
“আচ্ছা তাহলে একটু বসো। আমি আসছি।”
“না।”
“কি না?”
“আমার পাশে একটু বসুন?”
ইহাম ওর পাশে বসে আলতো করে মায়রার গাল স্পর্শ করল। আদুরে কন্ঠে জিজ্ঞেস করল “ব্যথা কমেছে?” মায়রা হুম সম্মতি দিয়ে নীরব রইল। ইহামের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে মনেই বলল “আপনি আমার সব রোগের উপশম। জীবনের শেষ দিনটা শুধু এরম করেই কোমল ভাবে সঙ্গ দিয়েন।”
“তুমি বসো আমি কিছুক্ষণের মাঝে আসছি।”

ইহামের বাম হাত তবুও ছাড়ে না মায়রা। সে মায়রার দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসল। যদিও বুঝা গেল না সে হাসি।
“মেয়ে হঠাৎ এত লাগাম ছাড়া হয়েছো কেন?”
মায়রা ইহামের কথার মানে বুঝে চুপ থাকে। লাজুক মুখে দৃষ্টি সরায় অন্যপাশে। মেয়েটার রঙ্গিম গাল আর মিটিমিটি হাসি ঠোঁট দেখে এক পশলা শিহরণ বয়ে গেল মনে। ঠোঁট কা’মড়ে হেসে আরেকটু লজ্জারাঙা করতে হিসহিস করে বলে উঠল,

“তখন যেন কিসের কথা বলছিল মায়রা? কি যেন, বউ বাচ্চা পরিবার। এম আই রাইট?”
লজ্জা বিস্ময়ে চোখ দুটি বড়সড় হয়ে গেল মায়রার। ঠোঁট চেঁপে চোখ বন্ধ করে নিলো সহসা। কি সাংঘাতিক! এই লোকটা ওই সময়ে রাগের মাথায় বলা সব কথাই কাউন্ট করে রেখেছে নাকি? ছিঃ।
“কি হলো? আমার মিসেস পিচ্চি চৌধুরী? বাচ্চা চাই একটা?”

লজ্জায় অস্বস্তিতে মায়রা ক্ষিপ্রে বেডসিট চেঁপে ধরল। দাঁত কামড়ে চোখ চাঁপিয়ে রেখেছে। আচমকা নিশ্বাসের ঘনত্বও বেড়ে গেল যেন। ইহাম সেই রক্তজবা গাল দুটি দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না। লজ্জারাঙা মায়রার চিবুকের নিচে হাত রেখে মুখটা ধীরে উপরে তুলল। মেয়েটা লাগাতার নিশ্বাস নেওয়ার দৃশ্য টুক ইহামের হৃদয় ঝলকে দিচ্ছে বারবার অপ্রত্যাশিত কিছু চাওয়া। মনের বেসামাল ঝড়ে তাণ্ডবলীলায় বারবার খেই হারাচ্ছে ছেলেটা। খুব কষরত করে গলা চিড়ে ঢোক গিলল ইহাম। সেই সাথে তার আ্যাডামস আ্যাপেল টাও দারুন ভঙ্গিতে উঠানামা করল। আলতো করে নিজের ঠোঁট দুটি মায়রার অস্বস্তিতে কুঁচকানো ললাট, এরপর ললাট ঢেঙ্গিয়ে ঠোঁটের ডান পাশে আলতো করে একটু চুমু গেলো। সঙ্গেসঙ্গে কেঁপে উঠল মায়রার নাজুক ছোট্ট দেহখানা। শিহরণে কাটা দিয়ে উঠল তার সর্বাঙ্গ। নিশ্বাসটাও সেই সাথে আটকে নিয়েছে আচমকা। লোকটার গায়ের আদুরে ঘ্রাণ আর উষ্ণ নিশ্বাস তার ভেতর করে দিচ্ছে তছনছ। ইচ্ছা হচ্ছে সকল জড়তা কাটিয়ে একদম মিশে যেতে লোকটার সংস্পর্শে। কিন্তু অদ্ভুত এক অনুভূতিতে তার সমস্ত শরীর অসাড় নিস্তেজ লাগছে। হাত পা দুটি বরফের মতো জমে আছে। ঠিক তখনি হৃদয় ঘায়েল করা ভয়ংকর অনাকাঙ্ক্ষিত এক কথা ফিসফিস আওয়াজে কানে এলো।

“শুধু যদি তোমার শরীর ছোঁয়ার বাহানা করে থাকি তবে ধরলাম না তোমায়, স্পর্শ করে দেখলাম না তোমার নাজুকতা, আর না কাছে আসলাম। কেবল অনুভূতি তে নিগূঢ় ভাবে ছুঁয়ে দিবো তোমার কায়ার অন্তঃকরণ।”
প্রথম কয়েক সেকেন্ড মায়রা স্তম্ভিত হয়ে বসে রইল। কিছুই বুঝল না ইহামের কথার গভীরতার রেশ। পরক্ষণে ফাঁকা মস্তিষ্ক যখনই সূক্ষ্ম ইঙ্গিতটা প্রদান করেছে তার বুকটা ধক করে কেঁপে উঠে। কলিজা চিপে ধরে এক আতঙ্ক। কি ভয়ংকর প্রতীক্ষা করেছে এই লোক? ইহাম তড়িতে তার কাছ থেকে সরে আসার আগেই মেয়েটা এক দুঃসাহসী কাজ করে বসল। ইহামের শক্ত পেশিবহুল মোটা রগ যুক্ত হাতটা টেনে ধরেই নিজের কাছে নিয়ে এলো পুনরায়। এক ন্যানো সেকেন্ডও সময় অতিবাহিত না করে ঝাপটে ধরে ইহাম কে। ফুঁপিয়ে উঠে বলে, “দয়া করে এসব বলবেন না। আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। তখন রাগের মাথায় আপনায় উল্টাপাল্টা বকেছি। আমায় মাফ করে দিন।” ইহাম হতবাক হয় মায়রার কাজে। মেয়েটা একটু দুঃসাহসী দুঃসাহসী কাজ করছে না? স্ফীত হয় সে। অদ্ভুত একটা শান্তি লাগে মায়রা নিজ থেকে তাকে এভাবে টেনে নেওয়ায়। চোখ বন্ধ করার আগেই যেই টের পেল মায়রা শক্ত করে চেঁপে ধরছে তার পিঠের চামড়া তখনি ভারি গলায় ধমকে বলে,

“উঁহু একদম না। একটুও শক্ত করে ধরবে না আমায়। আর এক ফোঁটা র’ক্ত যদি বের হয় মায়রা আই স্যোয়ার মাথার উপর তুলে এক আছাড় মারব তোমায়।”
“আপ আপনি প্লিজ আমায় মাফ করে দিন। আমার ভুল হয়ে গিয়েছে মাফ করুন প্লিজ। এমন রেগে থাকবেন না আমার উপর।”
মায়রার কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে ইহাম ধীর কন্ঠে বলে,
“খুব দেখি কথা শিখেছো মায়রা। হঠাৎ এত সাহস কোথাথেকে আসছে তোমার?”
“আপনার কাছ থেকে। আপনার কোমল আচারণ টুক থেকে। দয়া করে আমার উপর রেগে থাকবেন না। প্লিজ।”
“কিন্তু তুমি তো আমার কথা শুনো না। সবসময় যেটাই বলি তার পিছু ঘুরো। না রেগে থাকব কিভাবে তোমার উপর?”
“আর আপনার কথার অবাধ্য হবো না। সব কথা শুনব। শুধু আপনি একটু ভালো করে আমার সাথে কথা বলবেন একটু নরম ব্যবহার করবেন তবে আপনার সব কথা আমি মেনে নিব।”

“শিওর তো?”
“হুম।”
“মনে রেখো কথার অবাধ্য হলে কিন্তু একেবারে দূরে চলে যাবো।”
কথাটা বুঝি মেয়েটার মনন মানতে চায় না। বিরোধিতা করে বলেই শক্ত হাতে নখের আঁচড় কেটে দেয় ইহামের পিঠে। কন্ঠে চাপ প্রয়োগ করে জবাব দেয়,
“বললাম তো শুনব তবুও এসব বলার কি মানে ক্যাপ্টেন সাহেব? আপনি আসলেই একটা নির্দয় কঠিন মানব।”
মায়রা এখনো ইহামের গলা ছাড়ে না। দুই হাতে ঝাপটে ধরে দৃঢ় ভাবে। মেয়েটার নাক ফুলা রুষ্ট কন্ঠ না দেখতেও বুঝতে পারে ইহাম। স্মিত হাসে সে।
“এসব সিম্পটম দেখিয়ে কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছো আমার পিচ্চি মিসেস চৌধুরী।”
মরোমরো মায়রা কথার যথার্থ বুঝে লাজে দাঁত কাটে। মনেমনে বিড়বিড় করে “আস্তাগফিরুল্লাহ” বলে। দাঁত খিঁচে অদ্ভুত জড়তায় নিজেকে শক্ত পাথরের মতো করে নেয়। ইহাম সবটাই টের পায়। চওড়া করে নিজের ঠোঁটের হাসি। হিসহিস করে বলে,
“মাফ করে দিলাম।”

এখন ইহমের এই মাফ করা ঠিক কোন মাফ করার ইঙ্গিত দিয়েছে তা ওই বোকা মাথামোটা মেয়েটা বুঝেছে কি না সেটা ভেবেই আরেকটা দফা গূঢ় হাসল ছেলেটা। পরক্ষণে অভিনয় করে মোটা গলায় জানাল,
“এই জন্যেই বলে মেয়েদের বেশি লাই দিতে নেই। বেশি আদরে আদরে বাঁদর হয়ে যায়।”
“উঁহু। কে বলেছে আপনায়?” এক টুকরো আরাম নিয়ে মায়রা হেসে ইহামের কাঁধে মাথা নাড়ায়। “মেয়েরা হচ্ছে তুলতুলে নরম বস্তু। আলতো হাতে ধরতে হয়। বেশি কড়া আর রুক্ষ হতে গেলেই হাত ফস্কে পালায়। মেয়েরা হচ্ছে আদরের জিনিস। তাদের সবসময় আদরে রাখতে হয়।”
ইহাম কিছু বলবে তার আগেই আবারও কিছু টের পেয়ে বলে উঠে “মায়রা একদম শক্ত হাতে ধরবে না। ব্লিডিং হবে। তারপর কানের নিচে টেনে দিবো এক চড়।”

ফিলিসং এর সবটা বারোটা বাজিয়ে দিতে ওই বজ্জাৎ লোকটা ১ সেকেন্ডও লাগল না। অভিমানে নাক ফুলে উঠে মায়রার। গাল ভার করে জবাব দেয়, “আপনি এমন কেন? একটু ভালো করে কথা বলতে পারেন না? সবসময় খেঁরখেঁর করেন।”
“আমি এমনি। মানিয়ে নিতে পারবে তো? বুঝে নাও কিন্তু?”
প্রশ্ন করেছে ঠিকি কিন্তু উত্তরের আশা করল না ইহাম। যেন অদৃশ্য এক জোর। মায়রা থাকতে না চাইলেও রেখে দিতে পারবে সে তার মাঝে এই আত্মঅহমিকা ভরপুর। মায়রা কে নিজের থেকে সরিয়ে মুখোমুখি করে ইহাম। লাজুক মেয়েটা মাথা নুয়ে আছে। ইহাম ফিসফিস করে বলে উঠল,

“তোমার কি খুব আদর পেতে ইচ্ছা হচ্ছে নাকি মায়রা? এখানে? এই অবস্থায়?”
লজ্জায় মায়রার করুণ দশা। গোল গাল দুটি রঙ্গিম আভায় ছেয়ে গেছে। মনে হচ্ছে এখনি ছুটে কোথাও পালিয়ে যাক। আর এই লোকের সামনে থেকে অন্তত রেহায় পাক খানিক। এই লোকও যে এই ধরনের কথা বলে লজ্জায় লজ্জায় তাকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে তা যেন ধারনাতেও আনেনি সে। ছিঃ। সুযোগ পেলেই গম্ভীর কথা কম বলা মানুষটাও বেফাঁস কথা বলতে এক চিমটি আটকায় না। পুরুষ মানুষ রসিক রোমান্টিক হোক কিংবা গম্ভীর হোক কিছুক্ষেত্রে বেফাঁস কথা বলবেই বলবে।

মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ৪০

“না মানে বারবার ঠুসঠাস করে আদর আহ্লাদের কথা বলছো যে। আর যে আপেলের মতো লাল টুকটুকে ফেইচ করে রেখেছো।”
“….
ইহাম মন্ত্রপূতের মতো এক নজরে চেয়ে আছে মায়রার রঙ্গিম টসটসে গালের দিকে। কেমন মোহাচ্ছন্ন হয়ে মাতোয়ারা কন্ঠে হিসহিস করল,
“ক্যান আই গিভ আ বাইট অন দ্যা চেকস লাইক ইউর আপ্যাল?”

মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ৪২