যাতনা আমার পর্ব ৩৩ (২)
সানজিদা ইসলাম সূচনা
বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করে ইনায়া রাস্তার পাশে এসেছিল গাড়ির জন্য। কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই একটা গাড়ি তার সামনে ব্রেক কষে। জোর করে ইনায়া কে তারা নিয়ে আসে এই বাড়িতে। অদিতি কে দেখে ইনায়া অবাক হয়েছিলো প্রথমে। তাকে কেন এখানে এনেছে? তা জানতে চাইলেই অদিতি তাকে চাবুক দিয়ে মারতে শুরু করে। ইনায়ার আর্তনাদ সে রুমের প্রত্যেকটা ইট বালুও যেন সাক্ষী হয়ে রয়েছে। একসময় ইনায়া নিশ্চুপ বনে যায়। তখন থামে অদিতি। অন্ধকারে মৃদু মৃদু হলুদ আলোয় নাভান ইনায়ার রক্তাক্ত মুখের দিকে তাকালো। অতঃপর সিংহিনীর মতো সামনে বসে থাকা অদিতির দিকে লক্ষ্য করে। যে একগাল হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নাভান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করে উঠে,
-” আমি তোমাকে বিশ্বাস করবো কি করে? যে তুমি ইনায়ার কিছু হতে দিবে না? ”
অদিতি চমৎকার হাসলো। তারপর সুরেলা গলায় শান্ত স্বরে বলে উঠলো,
-” তুমি সাইন করলেই ইনায়া সুস্থ থাকবে। না হলে আমি কথা রাখবো না। ”
নাভান রাজি হলো সাইন করার জন্য। অদিতি যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। সে উঠে গেলো নাভানের উদ্দেশ্যে ফাইল দিবে বলে। ইনায়া কষ্ট করে ফিসফিস কন্ঠে বলে উঠে,
-” আপনি কি পাগল হয়েছেন? এটা কেন হতে দিচ্ছেন? ”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নাভান উত্তর দিলো না। উঠে দাড়িয়ে অদিতির হাত থেকে ফাইল টা নেয়৷ অদিতি তার সামনেই দাঁড়ানো। আচমকাই নাভান হাতের ফাইল দিয়ে অদিতির মুখে মেরে দেয়। অদিতি হতভম্ব হয়ে মুখে ধরে বসে পরে। রুমে থাকা বাকি ছেলে গুলো নাভানের দিকে এগিয়ে আসতেই নাভান তার সামনে পরে থাকা হকিস্টিক দিয়ে সবগুলোকে পেটাতে থাকে। মেন পয়েন্ট তাক করে মার গুলোতে ছেলে গুলো সহজেই কাত হয়ে পরে রয়েছে। নাভান গিয়ে ইনায়া কে দাঁড় করায়। ইনায়া এই পাঁচ মিনিটের ভেতরে ঘটে যাওয়া ঘটনায় অবাক হয়ে গেছে। নাভান ইনায়া কে নিয়ে রুমের বাইরে এসে দরজা লক করে দেয়। ইনায়া আর নাভান দুজনেই অবাক হলো।
জায়গাটা তাদের কারোই চেনা নয়। হঠাৎ বাইরে থেকে প্রচুর শোরগোলের আওয়াজ পুলিশের সাইরেন কানে আসে। আর এদিক দিয়ে রুমের ভেতরের ছেলে গুলোও দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা দিচ্ছে। নাভান ইনায়া কে নিয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। তখনই ইনায়ার চোখ যায় জায়ানের পানে। যে কয়েকটা ছেলেকে পিটিয়ে এদিকেই আসছে। নাভান অবাক হলো এই ভেবে। অদিতি এতোগুলো লোক হায়ার করলো কি করে? বাংলাদেশে ওর চেনা জানা কতদূর? নাভানের ভাবনারা গত হয় জায়ানের আগমনে। জায়ান এক ধ্যানে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তার মুখের অভিব্যক্তি বোঝা গেলো। ইনায়ার কান্নারা যেন বাঁধ ভেঙে আসে৷ জায়ার আলতো হাতে ইনায়া কে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস গলায় জিজ্ঞেস করে,
-” বড্ড দেরি করে ফেলেছি কি হরিণী? কে করছে এমনটা? ”
ইনায়া কথা বলে না জায়ানের বুকে মিশে ফোপাঁতে থাকে। আচমকা জায়ানের কপালের রগ ফুলে ফেঁপে উঠছে। চোখ গুলো জ্বলজ্বল করে উঠে। ইনায়া কে পাজো কোলে নিয়ে উপরে উঠে যায়। নাভানের দিকে পিছু ফিরে শান্ত এবং গম্ভীর গলায় বলে,
-” সবকটাকে তুলে পুলিশের হেফাজতে রাখো। এদের ব্যবস্থা আমি করছি। ”
নাভান আর কিছু বলতে পারে না। মলিন মুখে তাকিয়ে থাকে শুধু সেই দিকে৷ জায়ান উপরে এসে ইনায়াকে সোফায় বসায়। তারপর জিজ্ঞেস করে কোথা থেকে কি হয়েছে। ইনায়া ও বাধ্য মেয়ের মতো সব খুলে বলে। জায়ান রুমটার দিকে তাকায়। ইনায়াকে এখানে বসে থাকতে বলে সে রুমটার দিকে এগিয়ে যায়। ইনায়া জায়ান কে বারণ করতে গিয়েও করে না। তার কথা কি এই জায়ান করিম শুনবে? জায়ান রুমে ঢুকতেই আট টা ছেলে আর অদিতিকে দেখতে পায়। ছেলে গুলোকে দেখে বাঁকা হাসে জায়ান। অতঃপর বিরবির করে বলে,’ নেড়ি কুত্তার পাল ‘ তারপর ভয়ংকর চোখে অদিতির দিকে তাকায়। এমন সুদর্শন ভয়ংকর রুপের ছেলে দেখে অদিতি একটু ভয় পেল। জায়ান কে দেখে ছেলে গুলো কাঁপা-কাঁপি শুরু করে দিয়েছে। একটা ভয়ে ভয়ে বলে উঠে,
-” ভাই আপনে? মাফ কইরা দেন। এরা যে আপনার লোক বুঝিনাই। মাফ কইরা দেন। ”
জায়ান বাঁকা হাসে। অতঃপর ঠোঁট বাকিয়ে বলে,
-” মাফ করে দিবো? ঠিকাছে যা মাফ করলাম। তবে একটা ডিল বদল হয়ে যাক? ”
ছেলেগুলো জায়ানের কথার মানে বুঝতে পেরেছে বোধহয়। তারা সব কটাই মাথা নাড়ায়। জায়ান অদিতির দিকে একবার বাঁকা হেসে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। অতঃপর বড়ো একটা তালা ঝুলায় সেখানে। ইনায়ার কাছে এসে আলতো হাতে তাকে কোলে তুলে নেয়। ইনাযা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে উঠে,
-” এটা কি হলো? ”
-” তোমার এতো কিছু জানতে হবে না। ”
জায়ানের কথায় ইনায়া আর কোনো কিছু বললো না। চুপচাপ হয়ে জায়ানের বুকে মিশে রইলো। হটাৎ করে ইনায়ার কানে আসে অদিতির চিৎকার। সে চোখছোট করে জায়ানের দিকে তাকালো। জায়ান তা লক্ষ্য করলো না। ইনায়াকে নিয়ে বাইরে চলে আসে৷ ইনায়া দেখে সেখানে ফাহাদ, ইশান, নাভান কে, আরো অনেক পুলিশ। সে একটু নড়তেই জায়ান আরো জোরে ধরে। ফাহাদ ইশান এগিয়ে এসে ইনায়ার কন্ডিশন জানতে চায়। জায়ান ইনায়াকে গাড়িতে বসিয়ে ফাহাদের দিকে তাকায়,
-” বাকি কালপিট গুলোর ব্যবস্থা আমি করবো। তারপর নিজ হাতে পুলিশের কাছে দিয়ে আসবো। অদিতির সাথে আরো কেউ আছে। সেটা বের করতে হবে। এদিক টা তুমি সামলে নাও। আমি ইনায়াকে নিয়ে হসপিটালে যাচ্ছি। আর ওর স্টেটমেন্ট নেওয়ার দরকার নেই। ”
ফাহাদ সায় জানালো। তারপর বিশাল বড়ো এই দু’তালা ভাঙা বাড়িটা দেখলো। এটা শহর থেকে বেশ কিছুটা দুরে। অদিতি একা একা এই বাংলাদেশে এমন নির্জন বাড়ি কি করে খুজে পেলো? তা তাদের কারোর মাথায় ঢুকছে না। ওর সাথে কার হাত থাকতে পারে? ক্ষণেক্ষণে অদিতির চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসছে। নাভান ইশান হতভম্ব হলো। ইশান আশ্চর্য দৃষ্টিতে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে বললো,
-” এটা কি ঠিক হচ্ছে? ”
ফাহাদ হাসে, জায়ান বাঁকা চোখে তাকিয়ে ইশানকে ফিসফিস করে বলে ওঠে,
-” ওদের মতো মেয়েরা এইসবই বেশি খোঁজে। চিন্তা করো না জানে মরবে না। শুধু একটু বেশি সামাল দিতে হবে। ”
ইশানের এই কথা শুনে কান ঝা ঝা করে উঠলো। ফাহাদ পুলিশের সাথে গেলো কথা বলতে। জায়ান নিজের লোকদের বললো বাড়িটা পাহারা দিতে। যাতে করে একজনও পালাতে না পারে। তারপর জায়ান চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে উঠে বসে। ইনায়ার দিকে একপলক তাকালো। তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলো হসপিটালের উদ্দেশ্যে। আর নাভানের চোখ পড়ে থাকলো সেই গাড়ির শেষ দৃষ্টি পর্যন্ত।
রাত বারোটা বেজে ঘড়ির কাটা এখন চল্লিশের ঘরে। নিধি একা-একা ফাহাদের রুমের বারান্দায় বসে আছে। কিছুই ভালো লাগছে না তার। ইনায়ার জন্য বড্ড দুশ্চিন্তা হচ্ছে তার। নিধি বড়ো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে নেমে আসে। কাল থেকে এখনো না খাওয়া সে। সারাদিন মিনারা বেগম একবারও নিধির খোঁজ করেননি। নিধি নেমে এসে এদিক সেদিক তাকায়। তাদের বাড়ির থেকেও বিশাল বড়ো করিম ভিলা। সবদিকেই যেন আভিজাত্য ফুটে রয়েছে। বাড়ির মেঝে থেকে আসবাবপত্র সব সোনালী রঙের আভায় ফুটে রয়েছে। নিধি আলতো পায়ে হলরুমে আসে। এসেই কিছুটা অবাক হয়। মিজানুল করিম আর মিনারা বেগম আর তিথি সোফায় বসে রয়েছেন। হয়তো ছেলেদের জন্য? মিজানুল করিম নিধিকে দেখতে পেয়ে কাছে ডাকে। নিধি আলতো পায়ে হেঁটে তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তিথি নিধিকে বসতে বলে তার পাশে। মিনারা বেগম একপর্যায়ে খেঁকিয়ে উঠলেন,
-” এতো রাত অবধি জেগে আছো কেনো? ”
নিধি শান্ত গলায় বলে ওঠে,
-” আমার খিদে পেয়েছে প্রচন্ড। ”
মিজানুল করিম আর মিনারা বেগম দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল কিছুটা। ছেলেদের টেনশনে পরে নিধির কথা ভুলে আছেন। মিজানুল করিম মিনারা বেগমকে গম্ভীর গলায় বললেন,
-” এতোক্ষণ পর্যন্ত খায়নি মেয়েটা। খেয়াল রাখবেনা তুমি? ”
-” বালাইষাট, ও কি কচি খুকি? খিদে পেল কি আমাকে খাইয়ে দিতে হবে? ”
তিথি মায়ের কথায় অবাক হলো প্রচুর। এটা কেমন কথা। তিথি সন্ধ্যার দিকে হোস্টেল থেকে ফিরে এসেছে। সেও নিধিকে ডিস্টার্ব করবে না বলে উপরে যায়নি। তিথি বিরক্ত হয়ে মা কে বলে উঠে,
-” আশ্চর্য, মেয়েটা বাড়িতে নতুন। ও কি সব চেনে? জলদি যাও। ”
– ” তোমার থেকে এমন ছেলে মানুষি আসা করিনি মিনারা। ”
কথাটা বলে নিধির কাছে এসে মিজানুল করিম দাঁড়ালেন। মিনারা বেগম উঠে গেলেন খাবার বাড়তে। মিজানুল করিম হাসিমুখে বলে উঠেন,
-” চলো একসাথে খাওয়া যাবে।
নিধি মাথা ঝাকিয়ে তাদের সাথে ডাইনিং রুমে গেলো। খাবারের শেষ পর্যায়ে ফাহাদ বাড়িতে আসে। ঘড়ির কাটা তখন একটা বিশ। কলিং বেলের শব্দে মিনারা বেগম জলদি গিয়ে দরজা খুলেন। ফাহাদ কে একা দেখতে পেয়ে জায়ানের কথা জিজ্ঞেস করতেই ফাহাদ বলে ওঠে, জায়ান সকালে আসবে। মিজানুল করিম বার কয়েকবার ইনায়ার কথা জিজ্ঞেস করেছেন। কে কারা কিডন্যাপ করেছে সে বিষয় আপাতত চেপে গেলো ফাহাদ। হাতমুখ ধুয়ে কয়েক লোকমা মুখে দিয়ে উপরে চলে গেলো। মিনারা বেগম আর মিজানুল করিম এবার কিছুটা শান্ত হতে পেরেছেন। দুজনেই এবার চলে গেলো। তিথিও তাই করলো। নিধি নিচে কতক্ষণ পায়চারি করে রুমে চলে আসে। আসতেই ফাহাদ তার কোমড়ে জড়িয়ে ধরে বিছানায় শুয়ে পরে। নিধি ছুটতে গেলেও পারে না। ফাহাদ এবার নিধির বুকে মাথা রেখে লো ভয়েজে বলে ওঠে,
-” মাথাটা টিপে দাও। ”
ফাহাদ মাত্র সাওয়ার সেরেছে। মাথার চুল মোছা হয়নি। যার দরুন নিধি অনেকটাই ভিজে যাচ্ছে। সে খেঁকিয়ে বলে ওঠে,
-” কি করছেন কি? আমাকে ভিজিয়ে দিচ্ছেন তো। ”
ফাহাদ বুক থে মাথা উঠিয়ে নিধির পানে তাকায়। চোখ দুটি তার খুবই শান্ত। ফাহাদ নিধির কপালে ছোট্ট একটা চুমু দিয়ে লো ভয়েজে ব’লে,
-” আমার চেরি ফুল , আই লাভ ইউ! আমি তোমাকে ভিষণ রকমের কাছে চাই। ”
নিধি হেসে উঠলো তৎক্ষনাৎ। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো। কাপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,
-” আমার মতো নষ্ট ফুলকে জীবনে এনে, জীবনটা নষ্ট করলেন কেন মেয়র সাহেব? নষ্ট ফুলের তো কোনো সুবাস নেই। আপনার জীবন টাও নষ্ট করে দিবে। ”
ফাহাদ চমৎকার হাসলো। অতঃপর ফিসফিস করে বলে ওঠলো,
-” তুমি নামক সুবাসিত ফুলের সংস্পর্শে আমি হাজারবার নষ্ট হতে রাজি। তুমি আমার আধার জীবনটা রঙিন করে দিয়েছ নিধি। যেখানে শুধু আমার সুখ দেখতে পাচ্ছি আমি।তোমার দুঃখ কষ্ট সব চোখের জলে ধুয়ে যাক। সবটুকু যাতনা শুধু আমার হয়ে থাক। শুধু আমার হয়ে থাক। ”
নিধি আচকা ফাহাদকে সড়িয়ে উলটো পাশে শুয়ে পরে। তারপর বিরবির করে বলে ওঠে,
-” আমার যাতনা আমারই থাক। তা আপনি পুহাতে আসবেন না মেয়ের সাহেব। দগ্ধ হয়ে যাবেন। ”
হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে এডমিট করা হযেছিলো ইনায়া কে। ইনায়ার সারা শরীরেই প্রচন্ড ব্যথা। এতো রাতে মহিলা ডাক্তারও জোগাতে জায়ানের বেগ পেতে হয়েছে। ডাক্তার তো প্রথমে ইনায়াকে দেখে আঁতকে উঠে ছিলেন। ফর্সা চামড়ায় মারের দাগ গুলো জ্বলজ্বল করছিল। ইনজেকশন মলমে ইনায়ার ব্যথা শেষ রাতের দিকে একটু কমে এসেছিল। জায়ান বাকি রাত তার শিয়রেই বসা। ৪:৩০ মিনিট, ইনায়ার চোখ কিছুটা লেগে এসেছিল। হঠাৎ করেই ঘুম ভাঙতে পাশে লক্ষ্য করে জায়ান কে। যে এখন ঘুমে ঢুলেছে মাত্র। ইনায়া আর তাকে ডাক দিলো না। সাবধানে বেড থেকে নেমে ওয়াশরুমে যায় সে। হসপিটালের পোশাকে আছে এখন ইনায়া। ওয়াশরুমের মিররে নিজেকে দেখে ঘাবড়ায় ইনায়া। সব রাগ অদিতি তার উপর ঝেড়েছ।
শুধু কি ভালোবাসার জন্য মানুষ এমন জঘন্য হতে পারে? ইনায়া বেরিয়ে এসে জানালার পাশে এসে দাঁড়ায়। কনকনে ঠান্ডা বাতাস আসছে। ইনায়ার হঠাৎ মনে পড়ে নাভানের একটা কথা। কেউ কি করে নিজের সন্তান কে মারতে পারে? তাও অন্য একটা পুরুষের জন্য? কিভাবে? ভেবে কুল পায় না ইনায়া। নাভানের প্রতি তার ভালোবাসা ছিলো তিন কবুলের জোরে। তিন কবুল বলার পরই তার প্রতি অধিকার ভালোবাসা যেন সবই একেবারে চলে এসেছিল। যা ছিল প্রচুর গভীর। কিন্তু একটা নাড়ী কতদিন পারে নিজের মানুষটির সাথে অন্য মেয়ের ঘনিষ্ঠ হওয়ার মুহূর্ত? একবার, দুবার,? সেখানে ইনায়া নয় নয়টি মাস তা দেখে এসেছে।
যেখানে সে নিজের মুখটা স্বামীকে তখন দেখাতে পারেনি সেখানে অধিকার শব্দটা বেমানান হয়েগেছিল। হয়ত নাভানের তার কথা একটুও মনে পরেনি। তাই, অন্য মেয়ের সঙ্গে রাত্রি যাপনে তার বিবাহিত জীবনের নয়টি মাস পার করতে পেরেছে। আর তাদের প্রতিটি মুহূর্তের সাক্ষী ছিলো বোধহয় ইনায়া। সে রাতের আধারে মোবাইল বুকে জড়িয়ে শুধু কেঁদেই গেছিল। স্ত্রী হিসেবে নিজের আত্মসম্মান ছিলে কই তার। চোখের সামনে ভালোবাসার চাদর সরে যখন সত্য বেড়িয়ে এলো, তখনই সে আত্মসম্মানের মহিতে বাধ্যমূলক ভালোবাসা, সংসার ছেড়ে ছিল।
যে সংসার ছিল তার একারই নয়টি মাসের স্মৃতি। সাথে স্বামীর ছবি আর নাম। শুধু এতোটুকুই। শুধু সম্পর্কের বেড়াজালে বাধা ছিলো সে। আচমকা দুটি পুরুষালী হাত পেছন থেকে ইনায়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে। ইনায়ার পিঠ ছুয় তার প্রশস্ত বুকে। কাধে কারো মুখ, আর ঘাড়ে নিঃশ্বাসের বারি লাগলেও ইনায়া হেলে না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুধু তাকিয়ে থাকে আকাশের ওই রাতের শেষ চাদের দিকে। জায়ান হালকা স্বরে জিজ্ঞেস করে উঠে,
-” ডাকলে না আমাকে? একা একা কেনো উঠতে গেলে? যদি পরে যেতে? ”
ইনায়া ম্লান হাসলো, মৃদু স্বরে বলে উঠলো,
-” একা একা হাটলেই জীবনের আসল মানে বোঝা যায়। পরে গিয়েও নিজেকে উঠে দাঁড় করাতে হয়। আপনি কি তা বুঝবেন? ”
জায়ান শব্দ করে হেসে উঠে। ইনায়া কে ঘুড়িয়ে তার দিকে ফেরায়। হাত দিয়ে মুখে আসা চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দেয়। ইনায়া শান্ত চোখে জায়ানের চোখের দিকে তাকালো। শান্ত গম্ভীর চোখ জোড়া অজস্র মায়া নিয়ে ইনায়ার পানে তাকিয়ে আছে।
-” আপনার চোখ জোড়া গভীর সমুদ্রের ন্যায়। তাকাতে বড্ড ভয় হয় আমার। ”
-” সমুদ্রে তলিয়ে যাবার ভয় আছে তোমার? বিশ্বাস করো ডুবতে দিবোনা। ”
-” সে আছে। কিন্তু বিশ্বাস করতে বড্ড ভয় হয়। ”
জায়ান কোনো উত্তর দিলো না। ইনায়া চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। জায়ান মুখ বাড়িয়ে ইনায়ার চোখের উপর ফু দেয়। ইনায়ার চোখের পাপড়ি গুলো সহজেই নড়ে উঠে যেন। জায়ান ইনায়া কাঁপতে থাকা ঠোঁট জোড়ায় নিজের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে চেপে ধরে। অতঃপর নিজের ওষ্ঠদ্বয় সেই আঙুলের উপর রাখে। একজনের নিঃশ্বাস আরেকজনের মুখে আছড়ে পরছে। শেষরাত মৃদু হাওয়া দুজন প্রাপ্ত বয়সী নরনাড়ীর ভেতরের অনুভুতি গুলো জ্বলজ্বল করছে। জায়ান ফিসফিস করে বলে ওঠে,
যাতনা আমার পর্ব ৩৩
-” আমি কবে তোমায় বৈধ ভাবে ছুঁয়ে দেবো হরিণী? জানো কি? ”
ইনায়া চোখমেলে তাকালো। জায়ানের বন্ধ চোখজোড়ার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস স্বরে বললো,
-” শীগ্রই, খুব শীগ্রই! ”