রং পর্ব ১১
তন্নী তনু
নিজের কেবিনে ইরফাদ চেয়ারে বসে আছে।চেয়ারের হাতলের উপর ঠেকানো কনুই, সেই হাতে ভর করা কপালের পাশ, বন্ধ চোখ, এক পায়ের সাহায্যে দুলছে চেয়ার। বন্ধ চোখে সবগুলো ঘটনা একসাথে সাজিয়ে নিচ্ছে সে। এর মধ্যেই কেউ যেনো বাঘের ধাওয়া খাওয়ার গতিতে কেবিনে ঢুকলো। অনুমতি, সম্মতি কোনো কিছুর পরোয়া না করে সে সোজা মেঝেতে ধরাস করে শুয়ে পড়লো। সদ্য ঘটা ঘটনার ঝড়ের গতি উপলব্দি করে ইরফাদ উঠে দাঁড়ায়। মেঝেতে শুয়ে পড়েছেন রিজভী শিকদার। একজন পুলিশ অফিসারের এহেম কান্ডে কিঞ্চিৎ ভাঁজ পড়ে ইরফাদের চওড়া কপালে। সে ধমকের সুরে বলে,
— এটা কোন ধরনের বিহেভিয়ার!
— মাফ করবেন স্যার! এই মূহুর্তে আমার জ্ঞান নাই!
— আপনি কি ভুলে গেছেন? আপনি একজন পুলিশ অফিসার!
–“কে! আমি কোনো অফিসার টফিসার না। আমি একজন বাবা! আমার মেয়ে”কে আপনি এনে না দেওয়া পর্যন্ত উঠবো না।” দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে রিজভী শিকদারের ওয়াইফ। তিনিও কাঁদছেন! ইরফাদ রিজভী শিকদারকে বললেন,
— উঠুন!
— আমার মেয়ে পুরো একরাত বাসায় নেই। সেই কাল বেরিয়েছে! শহর জুড়ে খুন আর খুন! আল্লাহ! আমার আর তো মেয়ে নাই। ঐ একটাই মেয়ে আমার। আল্লাহ ঐ মেয়ের দিকে তাকিয়ে পুরো জীবন বউয়ের কতো টর্চার সহ্য করে গেলাম!!মেয়ে না হলে কবেই……” এটুকু বলে থামেন রিজভী শিকদার। নিজের বউয়ের আগুনের ফুলকি ওঠা মুখ দেখে আবার চোখ বন্ধ করেন! ইরফাদ শক্ত গলায় বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— পারসোনাল ইস্যু টেনে আনবেন না!
— না না বেশী আবেগে সত্যি বের হয়ে গেছে স্যার! আর বলবো না! আমার একটাই মেয়ে! আমি ঘুমাতে পারছি না! খেতেও পারছি না!
— তাহলে বুঝলেন! মেয়ে হারালে কত যন্ত্রণা হয়?একজন মেয়ের বাবা হয়ে অন্য বাবার বুক কেনো খালি করলেন?
রিজভী শিকদার উঠে বসেন! তারপর বলেন,
— কি বলছেন স্যার! আমি আবার কি করলাম!
— আপনিই ভেবে দেখুন! কিসের ফল পেলেন!
— আমি তো কাউকে খু!ন করিনি! কি!ডন্যা!পও করিনি!
— একটা মেয়ের সম্মান নষ্ট করেছেন। মেয়েটি”র মা হসপিটালাইজড। এখন পর্যন্ত মেয়েটি জানে না! মেয়ের বাবা তো দিশেহারা! এখন নিজের সাথে যা ঘটলো- আপনি বুঝুন!ইউ ডিজার্ভ ইট।
–আমি সব স্বীকার করবো!আমাকে সাসপেন্ড করা হোক! ফাঁসিতে ঝুলানো হোক! যা ইচ্ছে করা হোক! সব কিছুর বিনিময়ে আমার মেয়েকে চাই! আপনি কেনো কেস নিয়ে আগাচ্ছেন না স্যার! চৈতি আমার মেয়ে বলে?
–মেয়েদের মতো বেশী বোঝা ভালো নয়।গুম হওয়া প্রতিটা মেয়েই আমার কাছে সমান।সবাইকে নিজের কাতারে ফেলে! এভাবে যেখানে সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়বেন না।
ইরফাদ সকল ঘটনা”কে দুই ভাগে ভাগ করেন। ছেলে ও মেয়ে। প্রথম. কয়েকটি ছেলে গুম।দ্বিতীয়.মেয়েদের লাশ পাওয়া ও মেয়েদের গুম।এর মধ্যে রাফি সহ ছেলেগুলো গুম হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত সুক্ষ ভাবে করা।ছেলেগুলোকে গুম করা হয় চাকরি দেওয়ার প্রত্যাশায়।বাকি মেয়েদের কিড্যাপিং এর উদ্যেশ্য! নারী ব্যবসা হতে পারে। যে কয়টি লাশ পাওয়া গেছে প্রত্যেকটি মেয়ের মৃত্যুর কারণ মেডিসিন এর ওভার ডোজ। চিত্র আর হৃদপিণ্ড বের করা শুধু পুলিশের চোখে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে।মেয়েদের তুলে নেওয়ার অনেক কারণ থাকলেও ছেলেদের তুলে নেওয়ার কারণ বোঝা যাচ্ছে না!এক্ষেত্রে ছেলেদের কেসটি সম্পূর্ণ- ই ধোঁয়াসা! তবে মেয়েদের উদ্ধারের জন্য কাজ আগানো যায়।কনফারেন্স রুমে দাঁড়িয়ে এই সকল বিষয় আলোচনা করে নিলো ইরফাদ।
–হতে পারে এর পেছনে আছে কোনো চক্র!আমাদের প্রথম ফোকাস মেয়েদের জীবিত উদ্ধার করা।কোনো মেয়ের শরীরে আঁচড় লাগার আগেই চক্রটিকে আমাদের ধরে ফেলতে হবে! ওকে?
সবাই বললো,
— ওকে স্যার।
ইরফাদ শান্ত গলায় বললো,
— যদি না!রী পাঁ!চা!রের কেস হয়!তাহলে আমাদের প্রথম কাজ হবে- সকল চেকপোস্টে নজর রাখা। সকল চেকিং পয়েন্টে এলার্ট করে দিন! কোনো গাড়ি যেনো চেক না করে ছাড়া না হয়।
আর সেকেন্ড ফোকাস করতে হবে! কোন প্রসেসে মেয়েদের কিডন্যাপ করা হচ্ছে! কারণ জানলে এলার্ট করা যাবে।যাতে নতুন কেউ এই ফাঁদে পা না দেয়। গতকাল রিমা কবীরের সাথে আরেকটি মেয়ে ছিলো।ওনাকে থানায় আনার ব্যবস্থা করুন। জাবির!
–জ্বি স্যার!
— আপনাকে শিমলাপুর এর প্রফেশনাল আর্টিস্টদের একটা লিস্ট করতে বলা হয়েছিলো। ওটা রেডি!
— চেষ্টা করেছি স্যার!
— তাহলে সবার উপর কড়া নজর রাখার ব্যবস্থা করুন।
–ওকে স্যার!
ইরফাদ তিথিকে সামনে বসায়। গতকালের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বর্ণনা করতে বলে। একটা লাইন যেনো মিস না হয়। তিথি বললো,
— আমি আর রিমা সকালে বের হয়েছিলাম থানার উদ্দেশ্যে। সিনথিয়া আমাদের ফ্রেন্ড! তার সাথে দেখা করার উদ্দেশ্য-আমরা থানার দিকেই যাচ্ছিলাম।আমার বান্ধবী রিমা বেলীফুল খুব পছন্দ করে। রাস্তায় বেলিফুল দেখেই দাঁড়িয়ে যায়।বেলিফুল কিনে আমরা আবার হাঁটতে শুরু করি। আমি তখন সদ্য ক্রাস খাওয়া ছেলেটির বর্ণনায় ব্যস্ত। বর্নণা শেষেও ওর কমেন্ট না পেয়ে পাশ ফিরি! তখন দেখি ও নেই! নেই তো নেই! পুরো রাস্তার কোনো জায়গাতে নেই!
— এর মধ্যে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে? যেটা সন্দেহ-জনক?
— সব স্বাভাবিক ছিলো।
— আপনারা অন্য কোনো মতলবে বের হন নি তো? এই ধরুন বয়ফ্রেন্ডের সাথে মিট করা?পালিয়ে যাওয়া?
— রিমার যে বয়ফ্রেন্ড! দশ মাসেও একবার দেখা করে না! আর আমার বয়ফ্রেন্ড তো একটা লিস্ট পুরা! দেখা করার আগে একটা অন্তত শিডিউল করে নিতে হয়।
— বাহ্! নিজের কীর্তির কথা নিজের মুখেই বলছেন!
এমন মেয়ে আজকাল দেখাই যায় না!
— আমি নিজেকে লুকাতে পছন্দ করি না। আমি যা আমি সবার কাছে তাই। আমার অসংখ্য বয়ফ্রেন্ড। কিন্তু কোনোটাই আমার বয়ফ্রেন্ড নয়। সবগুলো আমার ছ্যাকা খাওয়া বান্ধবীর থেকে নেওয়া।মানে হালকা টাইট দেওয়ার জন্যে……
— আচ্ছা! রিমা কবীরের বয়ফ্রেন্ডের নাম কি?
–শুভ্র! ওনাকে সন্দেহ করে লাভ নেই। সে তো ভালোভাবে হাঁটতেই পারে না! কিডন্যাপ করবে কি করে!
–ও.কে. ইউ ক্যান গো..
–কেনো?
–আপনি কি থাকতে এসেছেন?
–“প্লিজ স্যার! প্লিজ আমাকে জেলে ভরে দিন! আপনার আসে পাশে থাকলেও আমি ধন্য!” তিথি অস্পষ্ট সুরে কথাটি বলে- মিষ্টি মিষ্টি হাসলো।ইরফাদের কানে গেলোনা কিছুই। তিথি উঠে দাঁড়ায়। তখন- ই ইরফাদ বলে,
— আচ্ছা!রিমা কবীর কি- বেলীফুলের স্মেল নিয়েছিলেন?
–হ্যাঁ হ্যাঁ,স্যার! ও তো নাক ডুবিয়ে রেখেছিলো ফুলের মধ্যে!
— আই সী! এটাই কারণ…..
–কি স্যার!
–নাথিং…. “গো”….
–বলেন না স্যার! আমার আবার সাসপ্যান্সে ঘুম হবে না।
–আই সে, “গো”
–না বললে আমি যাবো না!
ইরফাদ খানিকটা অবাক হয়।জীবনে বহু মানুষ দেখেছে ইরফাদ। এমন ত্যারা মানুষ তো দেখেনি। ইরফাদ কথা না বলে শক্ত চোখে তাকায়।তিথি তখন দরজার দিকে পা বাড়ায়। আবার কিছু একটা ভেবে পেছন ফেরে,
— বলেন না স্যার! একটু! এক চিমটি বলেন!
ইরফাদ মনে মনে ভাবে “আজব মেয়ে তো”! কিন্তু মুখে কোনো কথা বলে না।চুপচাপ ফাইল ঘাটে। তিথি দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে। সে মুখটা বেঁকে ভেঙচি কেটে বলে,
–এতো ত্যারা কেন আপনি? বললে কি হয়? না শুনে যাবো না আমি!
ইরফাদ শক্ত চোখে শক্ত গলায় জাবিরকে ডাকে,,
–জাবির!!
তিথি তড়িঘড়ি করে বলে,
–যাচ্ছি যাচ্ছি! মুডি লোক!
ইরফাদ সত্যিই রেগে যায়। মুখের উপর কি সব কথাবার্তা! পাগল নাকি! এমন মেয়ে তার জীবনে দেখেনি সে! তিথি বেড়িয়ে যায়। নিজের কাজে মন দেয় ইরফাদ। তিথি আবার দড়জায় দাঁড়িয়ে উঁকি মেরে বলে,
— এসপি” সাহেব আপনি কি রেগে গেলেন! রাগলে দেখছি আপনাকে আরও সুন্দর লাগে। আবারও ক্রাস খেলাম তো! সত্য বলার অপরাধে আমাকে জেলে পাঠাতে পারেন।
ইরফাদ জীবণে বহু মেয়েকে দেখেছে কিন্তু! এই প্রথম এমন বেহায়া/বজ্জাত/হতচ্ছারা মেয়ে দেখলো! ইরফাদ কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না। যেনো কথাটি শোনেও নি। তিথি আবারও বললো,
–ইসস!এততো সুন্দর ক্যানরে…..
ইরফাদ রেগে বললো,
–আপনি যাবেন?
— রেগে যান কেনো? এতো হ্যান্ডসাম হয়ে বসে থাকলে তো আসামীও ক্রাস খাবে!জেল থেকে তারা যেতে চাইবেনা!
— ক্রাশ খাওয়া আপনার স্বভাব! না হলে কি ক্রাসের কথা বলতে বলতে বান্ধবীকে হারিয়ে বসেন!
— ক্রাস খাওয়া ব্যক্তিটি আপনিই ছিলেন। বান্ধবী”কে না হারালে আজ দেখাও হতো না। খুঁজেও পেতাম না।
–বান্ধবী নিখোঁজ হওয়াতে বেশ খুশীই দেখাচ্ছে আপনাকে!
— সন্দেহ করে বসলেন নাকি আমাকে! পুলিশের চোখে শুধু সন্দেহ আর সন্দেহ।শুনুন তিথি কাউকে দেখিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে না। বান্ধবীর জন্যে ঠিকই পুড়ছে…..
তিথি আবার বললো,
— আপনি রাজি থাকলে বাকি বয়ফ্রেন্ড গুলো”কে একদম ব্লক করে দিবো! একদম ভালো হয়ে যাবো! একটা মেয়ে আপনার জন্যে ভালো হতে চাচ্ছে স্যার! প্লিজ এক্সেপ্ট মি!
ইরফাদ শক্ত চোখে তাকালো।তিথির তাতে আসে যায় না। এই প্রথম তার কোনো ছেলে’কে সত্যি সত্যি মনে ধরেছে। দড়জায় দাঁড়ানো তিথি মনে মনে ভাবলো। মুখ ফুঁটে বলতে না পারায় অনেক মেয়েই ভালোবাসার মানুষকে পায় না। সেই কাতারে সে নিজেকে ফেলতে চায় না। পছন্দ যখন হয়েই গেছে বলতে কিসের আপোস,
— দুঃখের মধ্যেও একটা কথা না বললে পারছি না।লাভ ইউ স্যার! প্লিজ এক্সেপ্ট মি।
–আপনি যাবেন!
–নাহ! না গেলে কি করবেন!
–ধুরর!আচ্ছা মেয়ে তো!
–এই যে স্যার!আমি কিন্তু অতো নির্লজ্জ নই। কয়েক বার বলেছি! আরো কয়েকবার বলবো। রাজি হলে হবেন না হলে নাই। এরপর সোজা আপনার ঘরে উঠবো কিন্তু!
ইরফাদ দাঁতে দাঁত ফেলেই বলে,
–আউট!!
তিথি দৌঁড়ে বেড়িয়ে যায়। পথমধ্যে দেখা হয় একজন পুলিশের সাথে। তিথি নেইমপ্লেট দেখে বলে,
— আপনিই আব্দুর রহমান?
— হ্যাঁ!
— ওহ! স্যার বললো! স্যারের ফোন নাম্বার টা দিতে..
–কোন স্যার!
–ঐ যে কেবিনে বসে আছে! ইরফাদ সিনহা। ওনার হাতে ম্যালা কাজ। আপনার নাম বলে দিলেন-
–স্যার এর অনুমতি ব্যাতিত স্যারের নম্বর দেওয়া নিষেধ! প্রয়োজন হলে স্যার নিজেই কার্ড দেন!
— “স্যার ই তো আপনার কথাই বলে দিলো!কার্ড নাকি শেষ! যান যান শুনে আসুন!” পুলিশ পা বাড়াতেই তিথি বলে উঠলো,
— আমি যাই! আমার আবার ম্যালা কাজ। স্যার নম্বর দিতে বললো দিলেন না! পরে কেউ বকা খেলে আমার কি।
পা বাড়াতেই আব্দুর রহমান বললেন,
– শুনুন! লিখে দিচ্ছি!
তিথি ছোট্ট কাগজে নম্বর লিখে নিলো। তারপর নম্বরের ছোট্ট কাগজের ভাজে ওষ্ঠ স্পর্শ করে বললো– ইসস!এত ভাল্লাগে ক্যান রে আমার!
রাত দিন বোঝার উপায় নেই। আধারে ডুবে থাকা চার দেয়ালের মাঝে মনে হচ্ছে গভীর রাত। একই মেঝের উপর থেকে ভেসে আসছে গভীর শ্বাসের শব্দ। আশেপাশে যেনো অনেকেই আছে যারা ঘুমে তলিয়ে গেছে ।রিমা চোখ খুলে আন্দাজ করলো তার হাত দুটো পেছনের দিকে বাধা। মুখে টেপ লাগানো। কথা বলার উপায় নেই।কিন্তু কেনো? সে কোথায়? সকালের কথা স্মৃতিচারণ করলো সে! সকালে বেড়িয়েছিলো দু”জন। তারপর কি হলো? তিথি কোথায়? সে ডাকে,
–“তিথি!! তিথি!! ” কিন্তু সে শব্দ আর মুখ ভেদ করে বের হয় না। চোখের কোণা জলে পূর্ণ হয়ে ওঠে। ভয়ানক কিছু কল্পনা করে আত্মা কেঁপে ওঠে। তখন ই ভেসে আসে কয়েকটি পুরুষের ভড়াট গলা।তারা কিছু আলোচনা করছে। রিমা কান পেতে থাকে। ভেসে আসার পুরুষালী গলার দিকে আন্দাজে এগিয়ে যায়। দরজার ওপাশ থেকে কেউ বলছে,
রং পর্ব ১০
— মনে রাখবেন এটাই আমাদের শেষ অপারেশন! ফুলফিল করতে পারলেই বেঁচে যাবো। না হলে আজীবনের জন্যে জেলে পঁচে মরবো…..
সবাই কেয়ার ফুল থাকবে। আমাদের বাঁচতে হবে……