রং পর্ব ৫৮ (৩)

রং পর্ব ৫৮ (৩)
তন্নী তনু

রাফসানের হাতের আদুরে চাপরে চাপরে ঘুমিয়ে যায় টুম্পা। হুহু শূন‍্যতায় নিরব, নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়ায় রাফসান। সময় শেষ। এবার কেবল দূরত্বের শুরু। রাফসানের বুকের পাজর থেকে টুম্পাকে টুপ করে সরিয়ে নিজের কোলে নেয় ইরফাদ। সহসাই রক্তচক্ষু থেকে খসে পড়ে একফোটা নোনাজল। একবিন্দু নোনাজল যেনো বুকের তাজা রক্ত। এলোপাথাড়ি ঝড়ে টালমাটাল রাফসান। বিন্দু বিন্দু জলে ভিজছে বুক। এক পা দু পা করে বাড়ছে মেয়ের সাথে দূরত্ব। বুকের খাঁচা থেকে কিছু যেনো আস্তে আস্তে নাই হয়ে যাচ্ছে। নাই হয়ে যাচ্ছে সব। চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়ায় রাফসান। এই ঝড় যে তাকে লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে। টিকতে দিচ্ছে না। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে মাঝ সমুদ্রে ভাসছে সে। ঝ ড়ের তান্ডবে ব‍্যকুল রাফসান বন্ধ চোখে একটা লম্বা শ্বাস ফেলে। সহ‍্যের সীমানা পেরিয়ে যায়। অতঃপর তিক্ত গলা ফেড়ে বলে,

— আপনার রিভলবারের একটা বুলেট যতেষ্ঠ আমার কষ্ট কমানোর জন‍্য। প্লিজ শ‍্যুট মি স‍্যার। শ‍্যুট মি।
আত্মগ্লানিতে জরাজীর্ণ ভেঙে পড়া হৃদয়ের ব‍্যাথাতুর অনুভূতি ইস্পাতকঠিন এসপির হৃদয় ছুঁতে পারে না হয়তো। তবে জানালার পর্দার আড়ালের অব‍্যর্থ ভালোবাসা নামক ক্ষত বয়ে বেড়ানো হৃদয়ে ঠিকই বুলেটের মতোই ধাক্কা খায়। ইভার চোখ ছুঁয়ে নিরব উষ্ণ জল ঠিকই গলা বয়ে যায়। মনটা আফসোসের সুর ধরে, বেরঙিণ ধূসর পৃথিবীতে ভুলগুলো শোধরানোর পথ রাখুক, আলো হওয়ার পথ রাখুক, অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়ার মতো ভুল পথে কেউ না যাক, ফিরে আসার পথ না থাকলে কেউ অনুতপ্ত না হোক। ইভার কোমল হৃদয় ইলশে গুড়ি বৃষ্টির মতো ভিজলেও ইস্পাত কঠিন এসপি ঠিকই তার জায়গায় স্থির। এমন আবেগঘন জায়গায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে গুরুগম্বীর ইরফাদ কাঠ কাঠ গলায়,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“লিসেন! আই ডিডেন্ট কাম হেয়ার টু হিয়ার ইউর ইমোশোনাল টক। স্টপ ইউর ইমোশোনাল ড্রামা।
রক্তচক্ষু দুটো অকস্মাৎ থমকে যায় রাফসানের। আজ সে কোনো নাটক করেনি। আজ সে সত‍্যিই ভাড়াক্রান্ত, ক্লান্ত, অবসন্ন। কিন্তু তার এই হৃদয়ের রক্তক্ষরণ মূল‍্যহীন। এ কেবল ইমোশোনাল ড্রামা! সত‍্যিই ড্রামা!
দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ভাবনার জগতে ডুবে যায় ইভা,

কি নিদারুণ অনুভূতি! কি নির্মম পরিহাস! অনুতপ্ততায় ছিন্নভিন্ন, ফাড়া, চেরা, ভগ্ন হৃদয়ের মানুষটা আজ সব কষ্ট থেকে মুক্তি চায়। তবে এই আকাশ ছোঁয়া আফসোস! আর যন্ত্রণা দিয়ে এই মানুষটা তাকে পথে একা ফেলেছিলো, একা! সেদিন তার পাপিষ্ঠ হৃদয় একবারো কাঁপেনি। তবে সেদিনের কঠিন, পাষাণ হৃদয়ের মানুষটার অনুতপ্ততায় তার হৃদয় ঠিকই পুড়ছে, ঠিকই জ্বলছে। এইমূহুর্তে একছুটে গিয়ে আছড়ে পড়তে ইচ্ছে করছে, ছুড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে জমানো প্রশ্নগুলো! প্রতিশোধ কি ভালোবাসার চেয়েও বড় ছিলো? ভালোবাসার কি কোনোই মূল‍্য নেই?কেনো তাকে ছুড়ে ফেলেছিলো সেদিন? কেনো ফিরে তাকায়নি?

সবচেয়ে নিদারুণ যে ব‍্যাথা সে বয়ে বেড়ায়, যে প্রশ্নটা তাকে জ্বালিয়ে মারে, তার তো ছুটে গিয়ে একটা প্রশ্নই করতে ইচ্ছে করছে-” ভুল করেও কি কখনো আমাকে মনে পড়েনি? সব ছেড়েছুড়ে যে মেয়েটা তোমাকে সবটা দিলো! তাকে পথে একা ছাড়তে তোমার হৃদয় কাঁপেনি?” যখন অন‍্যের বেলায় তোমার হৃদয় কাঁপলো না তাহলে আজ নিজের বেলায় কেনো এতো ভঙ্গুর! অন‍্যের কষ্ট কখনো ছুঁয়ে দেখলেনা অথচ নিজের ব‍্যথা অন‍্যকে বুঝাতে একদিনেই অস্থির! মরিয়া হয়ে উঠলে?কি অদ্ভুত পরিহাস! কি অদ্ভুত জীবন। ” কষ্ট বয়ে বেড়ানো মানুষগুলোর মনেহয় কষ্টটাই সঙ্গী, আমার কষ্টগুলোও আমার আবার তোমার তোমার কষ্ট গুলোও আমার।” “ভালোবাসা কতো অদ্ভুত- আমার যন্ত্রণা আমাকে পোড়ায়, আবার তোমার যন্ত্রণাও আমাকেই পোড়ায়। আমার ঘুমহীন চোখ, আগুনে দগ্ধ হওয়া হৃদয়, বুকের মধ‍্যে আস্ত দাবানল তোমাকে স্পর্শ করে না।” দেয়ালের ওপার থেকে ভারাক্রান্ত, ক্লান্ত গলা রাফসানের,

— অনুতপ্ততার পর অন্ধকার ভবিষ্যৎ! আর সে অন্ধকারাচ্ছন্ন পথের ঠিক শেষ প্রান্তে একটা ফুটফুটে কণ‍্যা সন্তান! মাঝখানে অদৃশ‍্য বেরিকেড!এক পাপিষ্ঠ বাবার শাস্তির স্বরূপ এইটুকুই যতেষ্ঠ। সত‍্যিই নিজের যন্ত্রণা অন‍্যের কাছে কেবল গল্প। অনুভূতিহীন, অস্তিত্বহীন মনগড়া গল্প।
গুরুগম্ভীর ইরফাদ কোনো কথা কানে নেয় না। শুধু লম্বা পা ফেলে ফেরার পথের। ঠিক সে সময়ে রাফসানের গলায় আকুতি,
— ইভা আসেনি?
ইভা শব্দটা প্রতিধ্বনি হয়ে চারদেয়ালে বারি খায়, ইভার কম্পমান হৃদয়ের কম্পন বাড়ে বহুগুণে। বহুবছর পরে কঠিন, নির্দয়, পাষাণ, পাপিষ্ঠ পুরুষটির মুখে ইভা নিজের নাম শুনে খানিকটা স্তব্ধ হয়ে থাকে, কানের মধ‍্যে ক্ষণকালের জন‍্য পু পু শব্দ ভেসে বেড়ায়। পৃথিবীর সমস্ত শব্দবিন‍্যাস, সমস্ত কার্যক্রম বিলিন গেছে তার মস্তিষ্ক থেকে। ঐদিকের ইস্পাতকঠিন হৃদয়ের মানব থেমে যায়। যার শক্ত মুষ্ঠির ফুলে ওঠা শিরা, শক্ত হওয়া চোয়াল রুষ্ঠ হওয়া কঠিন ইরফাদের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরছে স্পষ্ট। হিসহিসিয়ে ওঠে ইরফাদ,

— আমি কোনো ভাঙা গল্প জোড়া লাগাতে আসিনি।সো, ঐ মুখে ইভা নামটা আমি আর একবারো শুনতে চাইনা। একবারো না।এন্ড ডোন্ট ইভেন থিংক দ‍্যাট আমি টুম্পাকে এখানে নিয়ে এসেছি বিকজ অফ ইউর উইস। এখানে পুরোটাই আমার স্বার্থ। টুম্পার অনেক অনেক প্রশ্ন আছে,” বাবা কোথায়? বাবা আসেনা কেনো? সবার বাবা আছে তার নেই কেনো? এসকল প্রশ্ন আমার বোনের জন‍্য অবশ‍্যেই সুখকর নয়? আর তিক্ত অনুভূতি গুলো টুম্পার জন‍্যও ঠিক নয়। ওদের জন‍্য সুযোগটা আমি কাজে লাগিয়েছি। ওর পাপা আছে, তিনি অসুস্থ এটাই জানবে টুম্পা। ওর ছেলেবেলায় বাবা নামক অস্তিত্ব থাকুক, তার পুরো জীবনে একটা মিথ‍্যা জেনে ও বড় হোক তার পাপা তার জীবনের হিরো! তার পাপা বেষ্ট পাপা।

— যখন ও বড় হবে? সব জানবে।আমাকে ঘৃণা করবে। কিন্তু আমি যত বড় অপরাধীই হই আমি তো আমার মেয়ের সাথে কোনো অন‍্যায় করিনি। আমি জানতামও ইভা কনসিভ করেছিলো।ইভার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিলো ওকে দেখেও আমি বুঝতে পারিনি। এমনকি আমার মেয়ে আছে আমি ঐটাও জানতামনা। মেয়ের জন‍্য যে এমন অনুভূতি হয় এই পাপিষ্ঠ, নির্দয় হৃদয়ের মানুষটা তো জানতো না।
পাল্টা প্রশ্ন ছোড়ে ইরফাদ,
— জানলে কি হতো? ” ইফ ইউ নিউ, উডেন্ট ইউ হ‍্যাভ ট্রিটেড ইভা আনফেয়ারলি?(If you knew, wouldn’t you have treated Eva unfairly?)
দীর্ঘশ্বাসের সাথে তলিয়ে ভাবে রাফসান, সেদিন জানলে কি হতো? সে সত‍্যিই কি করতো? এই পাপিষ্ঠ হৃদয় কি গলতো? নাকি জানলে এর চেয়ে ভয়ানক রূপ সে দেখাতো? এর উত্তর কি আছে তার কাছে? আরেকবার শ্বাস টানে রাফসান। উত্তর না খুঁজে না পেয়ে বলে,

–জানিনা।
–সো….?
— তবুও কষ্ট হয়। টুম্পা আমাকে ঘৃণা করবে আই ওন্ট বি এবল টু একসেপ্ট ইট।
ইরফাদের গলাটা তীক্ষ্ম,
— হাউ মাচ ক্রাইম হ‍্যাভ ইউ কমিটেড? ফাস্ট সেইভ ইউরসেলভ,পরে না মেয়ে কি ভাবলো ঐ চিন্তা।
— আমি কোনো মা!র্ডার কেসের সাথে জড়িত না।যাই হয়ে যাক ফাঁসি তো আর হবে না! কোনো না কোনো একদিন তো আমার মুক্তি মিলবেই। সেদিন যদি আমার মেয়ে আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
— বাবা সন্তানের কাছে শুধুই বাবা। বাকিটা অতি দূরের ভবিষ্যৎ।
— প্লিজ স‍্যার! পৃথিবীর সমস্ত কিছু মাথা পেতে নিবো শুধু আমার মেয়েটা……
— মেয়ের জন‍্য কেমন লাগে? জ্বালা করে? আমার বাবারও করে।
–প্রতিশোধ নিচ্ছেন!
— নিলে নিতে পারতাম। তবে কিছু জিনিস প্রতিশোধেও শোধ হওয়ার নয়। ঐজন‍্য ছেড়ে দিয়েছি।
— ইভাকে একবার….
— স্টপ! ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট। ডো….ন্ট ক্রস….

ইরফাদের গলায় অগ্নীঝরা বাক‍্য, ধুক ধুক করে কাঁপছে ইভার বুক। নির্দয়, পাষাণ লোকটার তার কথা মনে আছে?তার কথা ভেবেছে? কি জানতে চায় তার সম্পর্কে? বেঁচে আছে কি না?যখন ছুঁড়ে ফেলে গিয়েছিলো তখন হৃদয় কাঁপেনি? তৎক্ষণাৎ একহাতে টুম্পাকে বুকের সাথে লেপ্টে নিয়ে অন‍্য হাতে দরজার নব ঘুরায় ইরফাদ। ঠিক সে সময়ে পর পর জোরপূর্বক কথা বলে রাফসান,
— ইভার সাথে অনেক অনেক অন‍্যায় করেছি আমি। ও ক্ষমা না করুক। আমি জানি আমি ক্ষমার অযোগ‍্য তবুও একবার ওর সম্মুখীন হতে চাই। একবার! ক্ষমা চাওয়ার সুযোগটা কি নেই আমার?
পুরো কথাটা অগ্রাহ্য, উপেক্ষা করে ইরফাদ। হনহনিয়ে দরজা টেনে পা ফেলে বাইরে। পেছন থেকে রাফসানের আকুতি,

— আমার মেয়েটাকে আরেকবার দেখতে দিবেন! প্লিজ!
ইস্পাত কঠিন হৃদয়ের মানুষটা আর কিছুই শোনে না। শুধু তার কাজে অবিচল থাকে। ঠিক সে সময়েই অনেক্ষণ ধরে চেপে রাখা কথাটা বলেই ফেলে রাফসান,
— সিনথি কেমন আছে? আমার বোনটাকে একটু দেখতে চাই।
চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়ায় ইরফাদ। পিছু ফিরে হাতের আঙ্গুল নাড়িয়ে তীক্ষ্ণ গলায় বলে,
— ডোন্ট….ডো….ন্ট

তৎক্ষণাৎ একপাশের জানালার পর্দা হালকা একটু দুলে ওঠে। রাফসানের মনের অগোচরে যে ইঙ্গিত দেয়, তা খতিয়ে দেখতে দ্রুত জানালার কাছে যায় রাফসান। ততোক্ষণে দরজা বন্ধ গেছে এসপির ইশারায়। তবে আগে থেকে জানালার পর্দার আড়ালে কেউ দাঁড়িয়ে ছিলো এই ব‍্যপারটা রাফসানের কাছে পরিষ্কার। বুকের অন্তরালে উঁকি দেয় আলো! তাহলে কি ইভা! হাত বাড়িয়ে পর্দা সরিয়ে দেয় রাফসান। ততোক্ষণে কাঙ্ক্ষিত মানুষটা ক্ষাণিকটা দূরে সরে গেছে। একঝটকায় জানালার পর্দা সরায় রাফসান। দাঁড়িয়ে আছে সিনথিয়া। পাশে ইভা থাকায় ছলছল দৃষ্টিতে তাকায় সিনথিয়া। মনে হাজারটা ইচ্ছে তাকে তাড়িয়ে বেড়ালেও নিজেকে দমাতে হয় তাকে। তার হাতে কিচ্ছু নেই। দুচোখের অশ্রুজলে ভাসে ইচ্ছেরা। সকল ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখে সিনথিয়া। বোনের নিরাপত্তায় রাফসান নিজেকে দমিয়ে রাখে অপরিচিত মানুষের মতোই। কারণ বছর পেরিয়ে গেলেও মানুষটাকে চিনতে তার ভুল হচ্ছে না মেয়েটা ইভা। এই পাপিষ্ঠ মানুষের জন‍্য তার বোন কোনো ঝামেলায় পড়ুক সে অবশ‍্যেই চায় না।
নির্দয়, পাষাণ, কঠিন হৃদয় ঝুরঝুরে বালির মতো পড়তে থাকে। মূহুর্তেই আবেগী হয়ে সব কিছুকে উপেক্ষা করে রাফসান ডাকে,

–ইভা!
মেয়েটা কয়েক বছরের হাজারো তিক্ততায় অশ্রুতে ভাসে, তবে একবারের জন‍্য পিছু ফেরে না। জানালার গ্রীলে খামছে ধরে আবারো ডাকে রাফসান,
— ইভা! আমি জানি তুমিই ইভা।
সিনথিয়াকে একবাহুডোরে আবদ্ধ করে ইভা। অতঃপর সমস্ত রাগ, অভিমানে পেছনের আপাদমস্তক মানুষটাসহ তার ডাকটুকু কে উপেক্ষা করে হাঁটতে থাকে ইভা। খাঁচায় বন্ধি পাখির মতো ছটফট করতে থাকা রাফসান শক্তির দাপটে যেনো ভেঙ্গে ফেলতে চায় জানালা। শূন‍্য হাতে তা কেবল অসম্ভব। তবে গলার দাপটে সে চেঁচিয়ে যায় ঠিকই,
–ইভা! প্লিজ কথা বলে যাও। আমি অনেক অন‍্যায় করেছি তোমার সাথে। ক্ষমা চাওয়ার সুযোগটুকু তো দাও।
অভিমানী মেয়েটা অভিমানে, তিক্ততায়, জেদে এগিয়ে যায়। সিনথিয়া কেবল জড়বস্তুর মতো চলতে থাকে। পেছন থেকে ডাকগুলো তাকে নিঃশব্দে কাঁদায়। ক্ষণে ক্ষণে চেপে ধরে ইভার হাত। মন তাকে দাপিয়ে বেড়ায়, ইচ্ছেরা বলে সব বাঁধা ভুলে একবার ইভাকে বলতে,”প্লিজ একবার কথা বলো।” তবে বাস্তবে তার রূপ দিতে পারেনা। চুপচাপ সয়ে যায় সমস্ত কিছু। পেছন থেকে ভেসে আসে আবারো ভারাক্রান্ত, আবেগঘন গলা,
— তুমিও চেয়ে দেখলে না এই পাপিষ্ঠকে!

রাগ, অভিমান, তিক্ততার রেশ এতোই বেশী চোখের জলে ভেসেও পিছু ফেরে না ইভা। দূরত্ব কেবল বাড়তেই থাকে। ঠিক সে সময়ে অগ্নিশিখায় জ্বলতে থাকা রাফসান সজোড়ে ঘুষি দেয় জানালার গ্রীলে। অকস্মাৎ অনাকাঙ্খিত শব্দের তোড়ে পেছন ফেরে কোমল হৃদয়ের মানবি। একজোড়া রক্তচক্ষু আর একজোড়া স্নিগ্ধ কোমল চোখ বহুবছর পরে আবারো এক হয়,হুহু করে ওঠে দুটো হৃদয়।যেনো সমুদ্রের উচ্ছাসে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাদের।কোমল চোখজোড়ার পানে চেয়ে কয়েক সেকেন্ডে রাফসান ভুলে যায় দুনিয়া।

রং পর্ব ৫৮ (২)

আর ভাবে এই কোমল, স্নিগ্ধ চোখের মেয়েটা তাকে ভালোবেসে সর্বস্ব ছেড়ে তার কাছে এসেছিলো একদিন। তাকে ভালোবেসে ছিলো। মনে অগোচরে দুঃখ চুইয়ে পড়া অনুভূতিরা রাফসানকে ভাসাতে থাকে। বুকের মাঝখানে হঠাৎ করে শূন‍্য হয়ে যায়।চেনা চোখজোড়ায় মায়ায় পড়ে নতুন করে। এই চোখে কি অনেক বছর আগেই একই মায়া ছিলো? এই স্নিগ্ধ, কোমল চাহুনি, এই মায়াবী চোখজোড়া কেনো তার আগে চোখে পড়েনি? এই দূরত্ব কি করে ঘোচাবে সে?

রং পর্ব ৫৮ (৪)