রং পর্ব ৬০ (২)
তন্নী তনু
চিন্তিত সিনথিয়া অন্ধকারাচ্ছন্ন কক্ষে পায়চারী করছে। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাকে, নির্ঘাত বিপদ! মোমের ঝাড়বাতিটি নিরবে জ্বালায় সিনথিয়া। হলদেটে টিমটিমে ঝাড়বাতিটি নিয়ে মন্থর গতিয়ে কক্ষের বাইরে যায় সিনথিয়া। সিঁড়ির এপাশ, ওপাশে চোখ বুলায়। সমস্তবাড়ি তন্ন তন্ন করে চোখ বুলায়, এপাশ ওপাশ নিরবে হাঁটে। অতঃপর নৈঃশব্দ! নিরবতা! ধেঁয়ে আসছে অচেনা শব্দ! পায়ের শব্দ! বুকের খাঁচা থেকে কিছু একটা ছটফট করে ওঠে! কি হচ্ছে? কে আসছে?
হলদেটে দোল খাওয়া টিমটিমে আলোয় কিছুটা অংশ আলোকিত। পায়ের খসখসে আওয়াজের দিকে কান পেতে মনের সাথে বাকবিতণ্ডায় সিনথিয়া। উপস্থিতি বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে মোমবাতির ঝাড়ে নিরব ফু দেয়,আধারে ডুবে যায় ইরফাদের স্বপ্নের নীড়। নিরব পায়ে লম্বা করে দম নেয় সিনথিয়া, এরপর একটু একটু করে পিছিয়ে যায় নিজ কক্ষের দিকে। অন্ধকার হাতড়ে তুলে নেয় নিজের ফোনটা। প্রথমেই ইরফাদকে কল দেয়। তবে অপরপৃষ্ঠে নিশংস, নিষ্ঠুর প্রতিশোধের খেলায় মাতোয়ারা ইরফাদের চারপাশ তখন রক্তের ফোয়ারা আর মিউজিকের উচ্চ শব্দের মাতম। বাড়ির চারপাশে বিশ্বস্ত গার্ড আর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে আসা চৌকস পুলিশ অফিসার কি করে জানবে তার রক্ষকেরাই ভক্ষক বেশে তার বাসাতেই হানা দিয়েছে। আধখোলা দরজার ফাঁকে চোখ রাখে সিনথিয়া, চোখ দুটো বিপদের আঁচে আতঙ্কিত। বাড়িতে একটা বাচ্চা আছে এটাই সবচেয়ে বেশী আতঙ্কের।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এই মূহুর্তে কে ঢুকতে পারে বাড়িতে? সহসাই এক ছায়ামূর্তি উপরের সিঁড়ি বেয়ে নামে, হাতে তার ক্ষুদ্র আলো। পায়ের চলনে শতভাগ সাবধানতা। ধীরে ধীরে আলোয় প্রস্ফুতিত ছায়ামূর্তির অবয়ব। পড়নে পুলিশের পোশাক, হাতে রিভলভার। বুকের গহিনের আতঙ্কিত অধ্যায় টুপ করে নাই হয়ে যায়। এরা তো পুলিশের লোক! কোনো বিপদের আঁচ পেয়েই নিরাপত্তাব্যবস্থা দিতে এসেছে নিশ্চয়ই। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে সিনথিয়া। নির্দিধায়, নির্ভয়ে সামনে এগিয়ে যেতেই একটুকরো প্রশ্ন মাথায় চাড়া দিয়ে ওঠে। যদি নিরাপত্তা দিতেই আসে তো নিচে থেকে নক দিয়ে আসতো। উপর দিয়ে কি করে আসলো। অকস্মাৎ প্রশ্নটা মাথায় কিলবিলিয়ে উঠতেই নিজেকে আড়ালে ডুবিয়ে নেয় সিনথিয়া। তাহলে কি রক্ষক ভক্ষক বেশে এলো? দরজায় আড়ালে দাঁড়িয়ে নিরব পর্যবেক্ষণ। অতঃপর স্বামীর দেয়া দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে দরজা বন্ধ করে সিনথিয়া।
অন্ধকার কাচের জানালা ভেদ করে সুক্ষ আলোটার দিকে নজর রাখে। ঢিলেঢালা স্কার্টের নিচে পড়ে নেয় জিন্স প্যান্ট, উপরের স্কার্টটা খুলে ফেলে একটানে,উপরে জড়িয়ে নেয় লেডিস শার্ট, পায়ে পড়ে স্নিকারস। লম্বা চুল গুলো পেঁচিয়ে মাথার উপর বাঁধে শক্ত গার্ডারে, ছোট এক অবলম্বনে মাথায় জড়ানো চুলগুলো আটকে রাখে। জানালার পর্দা টেনে দেয়। কেবিনেট খুলে একটানে খোলে ড্রয়ার, সাইল্যান্সার লাগিয়ে ভারি রিভলভারটা হাতে তুলে নেয়,গুঁজে দেয় প্যান্টের পকেটে। মোবাইল ফোন, অপর হাতে একটা শক্তপোক্ত তালা নিয়ে বাইরের দিকে চোখ বুলায়। এক সুক্ষ আলো হাতে নিয়ে রক্ষক বেশধারী ভক্ষক পুরো বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে। সিনথিয়া একনজর তাকিয়ে নিরব পায়ে পৌঁছে যায় ইভার ঘরে। নিরবে ফিসফিসিয়ে ডাকে,
— আপু ওঠো।
গভীর রাতে ফিসফিসে আওয়াজে চমকে গিয়ে হুরমুরিয়ে উঠে বসে ইভা। স্ক্রিনের আলো জ্বালায় সিনথিয়া। আবছা আলোয় দুজন মুখোমুখি। ইভার বুক ধরফর করছে। সিনথিয়া ইভার পিঠে হাত বুলিয়ে বলে,
— কুল, কুল…
— এতো রাতে তুমি?
— বাসায় কেউ ঢুকেছে আপু।
— মা….. নে?
— এতো কিছু জানিনা। এতো আলোচনারও সময় নেই। আমি যা আচ করেছি তাই বললাম।
— কিন্তু বাসায় কেউ কি করে ঢুকবে? সিকিউরিটি তো দেয়া?
— রক্ষক ই ভক্ষক হয়ে ঢুকেছে।
— মানে?
— যিনি ঢুকেছেন ওনার গায়ে পুলিশের পোশাক।
— কিন্তু ঢুকলো কি করে?
— ছাদের দিক থেকে নেমেছে।
— ছাদের দরজা লাগানো ছিলো তো।
— যারা এসেছেন তারা পরিকল্পনা করেই এসেছেন। দরজা খোলা/ ভাঙা এমন কি?
থতমত খায় ইভা। আতঙ্কে মেয়েকে জ ড়ি য়ে ধরে,
— ভাইয়া বাসায় নেই। এখন কি হবে। এমন তো কখনো হয়নি। তুমি থানায় কল দাও।
— দিয়েছিলাম। নেটওয়ার্ক অফ।
— মানে?
— এতো মানে জানিনা। তবে যারা এসেছে আটষাঁট বেঁধেই এসেছে। প্রি প্ল্যানিং ছিলো। প্রথম কল দিয়েছিলাম তোমার ভাইয়াকে। এরপর থেকেই কল যাচ্ছেনা। কোথাও না। হয়তো নেটওয়ার্ক জ্যামার বসানো হয়েছে।
— এখন কি হবে? আমার বাচ্চাটা?
–ডোন্ট প্যানিক আপু! টুম্পার কানে হেডফোনে সূরা প্লে করে দাও। কোনো সাউন্ড যেনো ও না পায়। এখানে চুপচাপ থাকবে। বাইরে থেকে আমি লক দিয়ে যাবো।উপরওয়ালা আছেন তোমার বাচ্চার কিচ্ছু হবে না। আর আমি থাকতে ওর কিছু হতে দিবো? ও তো আমার ভাইয়ার সম্পদ, আমাদের রক্ত। তুমি ট্রাস্ট রাখো আমি আছি।
— তুমি কি করবে? বাইরে যেও না তুমি। মেরে ফেলবে তোমাকে।
— কিছু তো করতেই হবে আপু। না হলে পুরো পরিবার শেষ হয়ে যাবে আমার। একটা পরিবার চোখেই দেখতে পাইনি আরেকটা ভালোবাসার পরিবার তো এভাবে নিঃশেষ হতে দিতে পারিনা।
–বাবা কোথায়? বাবা! আমার খুব ভয় করছে। বাসায় ভাইয়া নেই। বাবা একা কি করবে?
— তুমি চুপচাপ থাকো। টুম্পাকে সামলাও। আমি বাবাকে ডাকবো এখন। তুমি শুধু টুম্পাকে নিয়ে থাকো। আর কিচ্ছু না।
এতোটুকু বলেই নিরব পায়ে এক দুই করে বের হয় সিনথিয়া। ইভার রুমের বাইরে শক্তপোক্ত তালাটা ঝুলিয়ে অন্ধকারে লম্বা পিতলের ফুলদানির পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে। ছাদ থেকে এক এক করে মুখোশধারী শয়তান গুলো নামছে। তবে আলো জ্বালছেনা কেউ। একজনের হাতে মৃদু হলদেটে অল্প একটু আলো জ্বলছে। সিনথিয়া ফুলদানির আড়ালে বসে থাকে। ইভার বাইরের স্যান্ডেল এর একটা অংশ ছুড়ে ফেলে নিচতলায়। ব্যাস! শব্দের তালে বাকিরা সিঁড়ি বেয়ে নিরবে নামে। সেই সুযোগে সিনথিয়া রিদুয়ানুর রহমানের রুমের দিকে যায়। দরজায় হালকা ধাক্কা দিতেই বেড়িয়ে আসে লম্বা নল। লম্বা রাইফেল হাতে বেড়িয়ে আসে রিদুয়ানুর রহমান। হাত দুটো উঁচু করে দাঁড়ায় সিনথিয়া। ফিসফিসিয়ে বলে,
— আরে বাবা আমি আমি, সিনথি, সিনথি।
সহসাই রিদুয়ানুর রহমান সরিয়ে নেয় রাইফেল। বিষ্মিত স্বরে বলে,
— তুই?
দরজা ঠেলে ভেতরে যায় সিনথিয়া। অতঃপর,
— কয়েকজন মুখোশধারী ঢুকেছে বাবা।
— দেখেছি আমি।
— কি করে ঢুকলো বাবা।
— ঐটা পরের বিষয়। তুই ইভার রুমে যা মা। ওকে নিয়ে তোর রুমে আসবি। দরজা লাগাবি। তোর বিছানার নিচে একটা দরজা আছে। সিঁড়িও আছে। ঐখান দিয়ে সোজা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবি।
— তাহলে তুমিও চলো বাবা।
— বাসা শূন্য থাকলে যদি ওরা আগুন জ্বালিয়ে দেয়। আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে বের হওয়ার দরজাটা মরিচা পড়ে গেছে। চাইলেও বের হতে পারবিনা। তখন আগুনে পুড়ে মরতে হবে।
— তাহলে কি করবো বাবা?
— তোরা নিচে যা। আমি শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে ওদের সাথে লড়বো। তোরা বেঁচে থাক। বাবার রক্তের বিনিময়ে হলেও আমার বাচ্চারা বেঁচে থাকুক।
— বাবা! আমাকেও সাথে রাখো। ইভা আপুর দরজায় আমি লক করে এসেছি। এই যুদ্ধে আমিও তোমার সাথে থাকি বাবা?
— আরে পাগলি মেয়ে! তুই থেকে কি করবি?
— আমি তো রিভলবার চালাতে জানি বাবা।
কথাটা শেষ না হতেই অকস্মাৎ ধাপ ধাপ করে সিঁড়ি বেয়ে ছুটে আসার শব্দ শোনা যায়। রিদুয়ানুর রহমান দরজা ঠেলে দেন। শয়তানগুলো অস্ত্র হাতে এদিকেই আসছে। উপরের প্রত্যেকটা কক্ষের দরজায় কড়া নাড়ে। টুম্পার কানে হেডফোন দিয়ে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকে। বাইরে থেকে গলার আওয়াজ আসে,
–দরজা তো তালা।
— অন্যরুমে খোঁজ।
ইভা সাময়িক দম নিলেও সিনথিয়া আর বাবার চিন্তায় ব্যকুল হয়ে যায়। এক এক করে সকল দরজা পেরিয়ে রিদুয়ানুর রহমানের দরজায় থামে কেউ একজন। দরজা ভিড়ানো, ভেতর থেকে সিটকি লাগানো নেই। আবছা আলো, দরজায় মৃদু ঠেলা দেয় শয়তানদের একজন। রিভলভারের নল সটান করে রাখা। ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে একজন, দুজন।বাকিদের কেউ কেউ নিচ তলায় কেউ কেউ অন্য কক্ষে উলোটপালটে ব্যস্ত। রিদুয়ানুর রহমানের কক্ষে পিনপতন নিরবতা। শ্বাসরোধ করে দরজার পেছনে দাঁড়িয়ে সিনথিয়া। রিদুয়ানুর রহমান কেবিনেটের ওপাশে। দুজন মুখোশধারী রুমে ঢুকছে সাবধানে হাতে মৃদু আলো, অপর হাতে রিভলভার, চোখে নিষ্ঠুরতা, হিংস্রতার দাবানল। ধীর পায়ে এদিক ওদিক লাইট মারছে একজন। একদলা আলো মুখের উপর পড়ে সিনথিয়ার,চোখ মুখ বন্ধকরে ন্যানো সেকেন্ড। অতঃপর তীব্র ক্রোধে রুষ্ঠ সিনথিয়া একহাতে দরজা ঠেলে নব ঘুরায়। দুজন কক্ষে বন্দি। সিনথিয়া হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে রাখা রডটা তুলে সটান করে বাড়ি মারে প্রথম জনের মাথায়, বুঝে ওঠার আগেই চোখে আধার দেখে লোকটা, রুদ্ধ হয়ে আসে গলার স্বর। আরেকজন টান টান হয়ে পিছু ফিরে দাঁড়ায়। রিভলভারের নল সিনথিয়ার কপাল বরাবর। পিছন পকেট থেকে এক মূহুর্তে টান মেরে বের করে রিভলভার, সটান করে ধরে মুখোশধারীর কপাল বরাবর। চোখে অগ্নি, হিংস্রতা। গলার স্বরে ঝংকার,
— কেনো এসেছিস? কি কারণ?কে পাঠিয়েছে তোদের!! নাম বল।
— কি দাপট! এসপির বউ? মাথার খুলি উড়াইয়া দিমু। শা**লি বন্দুক নামা।
রিভলভারের নলে জোর দেয় সিনথিয়া।
— নাম বল।
— নামা শা!!!লি।
দাঁতে ভেঙ্গে ভেঙ্গে সিনথিয়া বলে,
— কে পা…ঠি…য়ে…ছে…?
মুখোশধারী ট্রিগারে হাত রাখে। সহসাই পেছন থেকে ভারী রড দিয়ে শক্তপোক্ত আঘাত করে রিদুয়ানুর রহমান। মাথায় ভারী আঘাতে মূহুর্ত্তেই ঢোলে পড়ে তাগড়া যুবক। সিনথিয়া ধীর গলায় বলে,
— সেন্স চলে গেলো তো বাবা? কে পাঠিয়েছে শুনতে তো পারলাম না।
— এখন টিকে থাকাটাই ফ্যাক্ট, এতো গল্প শুনে লাভ নেই। আগে জীবন, পরের টা পরে বুঝে নিবো।
তুই উপরে থাক। আমি নিচে যাচ্ছি এপাশের সিঁড়ি দিয়ে। ওরা অনেক জন। আলাদা আলাদা ভাবে মোকাবেলা করতে হবে। বেশী প্রবলেম হলে বেঁচে থাকার জন্যে যতোগুলো বুলেট ইউজ করতে হয় করবি। হিসাব আমি দিবো বুঝলি?
— আর এই দুজন বাবা?
— দরজায় তালা লাগা। একটা একটা করে এই রুমে জিন্দা কবর দিবো।
রিদুয়ানুর রহমান সাবধানে পা ফেলে। অপরপাশের সিঁড়ি দিয়ে নিচের দিকে যায়। সিনথিয়া সিঁড়ির রেলিং ধরে বসে থাকে। অপর সিঁড়ি দিয়ে কেউ একজন উপরের দিকে উঠছে। টর্চ মেরে ওপাশটা তন্ন তন্ন করে খুঁজছে। রেলিং ছেড়ে হামাগুড়ি দিয়ে দুটো বড় বড় ফুলদানি একসাথে করে তার পাশে গুটিশুটি মেরে বসে সিনথিয়া। ভয়ংকর, হিংস্র চেহারার লোকটা ফুলদানির দিকে আসছে, আসছে, আসছে, আসছে। উপর দিকে তাকিয়ে সোজা হাঁটছে, হাঁটছে,হাঁটছে। এইতো এসে গেছে।সুযোগ বুঝে পা বাড়িয়ে দেয় সিনথিয়া। হিংস্র দানব ধপাস করে পড়ে মেঝেতে। হাতের ছোট্ট টর্চটা ছিটকে দূরে সরে যায়। নিচ থেকে আওয়াজ আসে,
–কি হলো রে?
অগ্নিশর্মা, প্রখরমূর্তিধারণ কারী সিনথিয়া বেগবান, উদ্দাম, বেপরোয়া ঝড়ের গতিতে উঠে আসে। তবে দক্ষ, অভিজ্ঞ , হিংস্র দানব ঠিকই উল্টো ঘুরে ওঠে মূহুর্ত্তেই। অগ্নীমূর্তি সিনথিয়া দাঁড়িয়ে যায়। হিংস্র দানবের দক্ষ পায়ের আঘাতে ছিটকে দূরে পড়ে। শব্দের তোড়ে নিচের শয়তান গুলো তেড়ে আসছে সিঁড়ি ভেঙ্গে। কখনো কখনো থেমে যেতে হয়, পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সিনথিয়া পিছিয়ে যায়। তুফানের গতিতে নাই হয়ে যায় আধারে। উপরে এসে জড় হয় বাকিরা। সকলের মুখে এক প্রশ্ন,
–কেডা ছিলো রে ?
— এক রূপবতী অগ্নীকন্যা।
— এসপির বোইন থাকে।
— না বোন না। নতুন পাখি, একদম আলাদা। খুঁইজ্জা বাইর কর। কোনো টাকা পয়সা লাগবো আমার। তেজ ওয়ালা মেয়েটাকেই আমার চাই।
সকলেই বিক্ষিপ্ত মৌমাছির মতো ছড়িয়ে যায় বাড়ি জুড়ে। সিনথিয়া গা ঢাকা দেয় রান্নাঘরের নিচের কেবিনেটে। চর্ট হাতে সেখানেও পৌছে যায় একজন। কেবিনেটের দরজার ফাঁকে দৃষ্টি ফেলে রাখে সিনথিয়া। হিংস্র চোখে খুঁজতে আসা একজন রান্নাঘর জুরে পায়চারী করে। কিছু খুঁজে না পেয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য পা ফেলে। কেবিনেট থেকে ধীর পায়ে বের হয় সিনথিয়া। অতঃপর ক্রুব্ধ, অদম্য সাহসী সিনথিয়া ধারালো ছুড়ি গেঁথে দেয় পিঠে। র!ক্ত ফিনকি মেরে ভিজিয়ে দেয় সিনথিয়ার চোখ মুখ। চোখ বড় বড় করে অপ্রত্যাশিত তীব্র আঘাতে দূর্বল হয়ে যায় মুখোশধারী। শক্ত পায়ে হাঁটুর ভাজে আঘাত করে সিনথিয়া। সিনথিয়ার হাতের চাকু খুলে আসে তাগড়া যুবকের পিঠ থেকে। সহসাই আরেক হিংস্র দানব দরজার বাইরে থেকে হাজির হয়। এক পা এক পা করে এগিয়ে আসে। পৈচাশিক হাসিতে বলে,
— ও ডার্লিং! এক দেখায় প্রেমে পড়ে গেলাম যে।
চাকু হাতে সিনথিয়া অগ্নীমূর্তী, প্রখরশর্মা, অগ্নীকন্যা। একদলা থুথু ছুঁড়ে মারে শয়তানের দিকে।হিংস্র চোখ নিয়ে বেপরোয়া গতিয়ে ছুটে আসে শয়তান। সিনথিয়া এক পা পিছিয়ে ছুরি নিয়ে প্রস্তুত হয়। চাকুতে চাকুতে ঘর্ষন, মুখোমুখি লড়াই। শক্তিশালী দক্ষ কৌশলে ছুড়ি দানবের গলায় ধরে। তবে দানবের সাথে পেরে ওঠে না সিনথিয়া। শক্তিশালী আঘাতকে রুখে সিনথিয়ার হাত মুড়ে ধরে সিনথিয়ার পিঠের পিছনে। গলায় ধরে ধারালো ছুড়ি। হাসফাস করে ওঠে সিনথিয়া।
গভীর রাতে নিরব রাস্তায় প্রতিশোধের নেশায় মাতোয়ারা তিন বলিষ্ঠ পুরুষ, ধ্বংসস্তুপ শান্ত পরিবেশ। একের পর এক, আরেকজনকে টেনে নিয়ে আসে শিশির। তার পর পূর্বের ন্যায় বসে পড়ে চাপাতি হাতে। পাপির শরীর টুকরো টুকরো করার স্বাদ ই আলাদা। মিউজিক বক্সে ডিজে গান, বিট বাড়ছে ক্রমাগত। একটা চামড়ার ব্যাগ সেখান থেকে নতুন অস্ত্র বের করে শিশির। পৈচাশিক হাসির তালে ছুড়ে দেয় হ্যামার। অভিজ্ঞ হাতের দাপটা কব্জা করে নেয় ইরফাদ। মাফিয়া দলের আরো একটি তাগড়া যুবক।হাতজোড় করে অনুনয়, বিনয় করে।
–আমারে মাফ কইরা দেন স্যার। আর কোনো দিন কোনো মাইয়ার দিকে তাকামু না স্যার। পৃথিবীর সকল মাইয়া আমার আম্মা লাগে।
তবে সে আকুতিভরা স্বর কানে যায়না ইরফাদের। চোখা হ্যামার দিয়ে নিষ্ঠুর, হিংস্র ইরফাদ হ্যামার দিয়ে অকস্মাৎ বারি দেয়। র!ক্ত ছিটকে আবারো চোখে লাগে ইরফাদের। আঙ্গুলের সাহায্যে মুছে নেয় সে র!ক্ত। কপাল থেকে টুপটুপ করে পিচঢালা রাস্তায় পড়ে সে রক্ত।
প্রভাত রঞ্জন দৌড়ে ঝড়ের গতিতে প্রাণপণে পালাচ্ছে। শক্ত রড হাতে পিছু ছুটছে জাবির। অতঃপর প্রবল ঝঙ্কার তুলে জাবির সজোড়ে আঘাত করে প্রভাতরঞ্জনের পায়ে। ছিটকে পড়ে প্রভাতরঞ্জন। হামাগুড়ি দিয়ে এগোতে যায় সামনে। জাবির একহাতে টেনে ধরে প্রভাতরঞ্জনের পা। তারপর টেনে হিচড়ে পিচঢালা পথে টেনে নিয়ে যায়। ডিজে গানের তালে ভালোই যাচ্ছে সে দৃশ্যপট।
পাপির র!ক্তের বৃষ্টিতে স্নানকরা তিন বলিষ্ঠ পুরুষ কালো জগতের অধিপতির পা শেকলে বাঁধে। তপন চৌধুরী আর প্রভাতরঞ্জনকে শেকলে বাঁধে শিশির। অন্যহাতে কল দেয়,
— কাজ শেষ। এমন ভাবে ক্লিন করবি যেনো রক্তের চিহ্ন অবধি না থাকে। বস্তার টুকরো টুকরো অংশগুলো সাগরে ফেলে দিবি।
— আর বাকিরা?
— বাকিদের সাথে তো আরেকটু বোঝাপড়া আছে।
শিকল জুরে দিয়ে শিশির গাড়িতে গিয়ে বসে, অতঃপর গাড়ি স্টার্টট দেয় ইরফাদ। পাশে বসে জাবির, পেছনে শিশির। পিচঢালা পথে ছ্যাচড়াতে ছ্যাচড়াতে নিয়ে যায়। পিঠের ছাল উঠতে থাকা প্রভাতরঞ্জন চিৎকার করে বলে,
— ঐ হা*রা*মির বা*চ্চা! হা*রা*ম খো*ড়। মা!তা!ল,লুছিফার! ছাড় আমাকে।
তীব্র ছটফটানির তালে তালে শিশির গান ছাড়ে। তবে গালাগালি শুনে শিশির মুখে উচ্চারণ করে “চ্চ”। এরপর বলে,
— স্যার! এই সং মানাচ্ছে না আপনার সাথে । ওয়েট নতুন গান দিচ্ছি।
এরপরেই প্রভাতরঞ্জনের চিৎকারের তালে তালে বেজে ওঠে,
রং পর্ব ৬০
—আই”ম আ সাইলেন্ট কিলার!!!!
আই”ম আ…… সা…….ই…..লে…ন্ট কি..লা..র!!!
ইরফাদের অন্দরমহলে চলছে হারজিতের খেলা। নিচতলায় রিদুয়ানুর রহমান একহাতে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। উপরের কক্ষে সিনথিয়া বন্দি হিংস্র দানবের হাতে। অপরজন ভাঙ্গছে ইভার কক্ষের জানালা। কি হবে এরপর?