রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ১৩
আশু
বৃষ্টির দরুন শীত শীত সকাল রুমি একবার এপাশ ফিরছে তো আরেকবার ওপাশ। একটু পর রুমি পিটপিট করে চোখ খুলে উঠে বসে। বেচারী চারপাশ দেখে একটু অবাক হয়ে বলে,,”এত তাড়াতাড়ি স্বর্গে চলে এলাম। নিশ্চয়ই আয়ান ভাই কালকে আমায় মেরে দিয়েছে। আচ্ছা স্বর্গে এমন রুম কেন। এ আবার কেমন স্বর্গ?”
এসব ভাবতে ভাবতে রুমি বিছানা থেকে নামতেই আয়ান রুমে আসে ফোনে কারো সাথে কথা বলতে বলতে। আয়ানকে দেখে রুমি এক চিৎকার দিয়ে বলে,,,”আয়ান ভাই আপনি আমার সাথে স্বর্গেও চলে এলেন কেন?আপনার তো নরকে যাওয়া উচিত।কারণ,,,”
আয়ান ভ্রুকুচকে রুমির দিকে তাকাতেই। রুমির হুশ আসে সে মরেনি খিদেতে মাথা পুরো হ্যাং হয়ে আছে।
আয়ান তখন বলে,,”এই নাও ইশার সাথে কথা বলো।”
ফোন কানে নিয়ে রুমি চিল্লিয়ে কান্না শুরু করে বলে,,”ইশুওওওওও”
ইশা বলে,,”রুমি শোন, শোন কান্না করিস না আরে শোন”
রুমির কান্নার তোপ যেন আরে বেড়ে যায়। আয়ান বিরক্ত হয়ে চিল্লিয়ে বলে,,”একদম চুপ স্টুপিড। আরেকবার কান্না করলে থাপ্পাড়ে একদম জ্যান্ত মেরে দেবো। ”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রুমি ঢোক গিলে বলে,,,,”ইশু তোর,,,তোর ভাই আমাকে মেরে ফেলবে দেখ না কেমন করছে। ”
আয়ান রেগে রুমির দিকে তাকাতেই রুমি বলে,,”ইশু”
ইশা তখন ওপাশ থেকে ধমকে বলে,,”চুপ কর তোহ্ আমার কথা শোন আয়ান ভাইয়া বিপদে পড়েছে তোকে মারবে কেন? একটা সাউন্ড ও করবি না আমি সব বুঝাচ্ছি।।”
কথা শেষ করে রুমি আয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,,”ভাইয়া জঙ্গলে নেট আসলো কোথা থেকে?”
আয়ান বলে,,”বাড়িটা যেমন দেখতে পারছো তেমনি নেটের টাওয়ারটাও আছে তাই নেট পেলাম”
রুমি মিনমিন করে বলে,,”আপনি তেড়া কথা ছাড়া কি থাকতে পারেন না? ”
আয়ান বলে,,,”না পারি না প্লিজ রুমি খেয়ে আমাকে উদ্ধার করো। তোমার মতো পাবলিকের সাথে কথা বলার থেকে মরা ঢের ভালো হয়ত। বিরক্তিকর একটা বাচাল মেয়ে”
“কি বললেন আমি বাচাল। নিজেই তোহ্ টেনে এনেছেন।আপনার সাথে কি আমি আসতে চেয়েছি। তার উপর বড় বড় কথা বলছেন, এই আপনার কি লজ্জা করে না আপনি কীভাবে,,,,”
রুমি বকবকের মাঝে আয়ান তেড়ে এসে রুমি গালে শক্ত করে চেপে ধরে বলে,,,”একদম মেরে ফেলবো আরেকটা কথা যদি বের হয় এই মুখ থেকে।স্টুপিড গার্ল চুপচাপ খেতে এসো।”
“ভাই ছাইড়া দেন। ”
“ধ্যাৎ শালা তাড়াতাড়ি বল তদের বস কে?? বাসরটাও করতে পারলাম না তদের জ্বালা যন্ত্রণায়। একদম জ্যান্ত নদীতে চুবামো তাড়াতাড়ি মুখ খোল নয়ত” এই বলে লোকটাকে স্টিক্ দিয়ে ইচ্ছামতো পিটাতে লাগলো ইয়াসির। লোকটিকে আধমরা করে ইয়াসির বের হয়ে আয়ানকে ফোন দিয়ে বলে,,”না এটাও জানে না। খুবই চালাক বুঝেছিস তবে ওর গোড়া বের করে পদ্মায় না ডুবিয়ে থামছি না। আর কটা দিন সহ্য কর ভাই। ”
“অসম্ভব এই মেয়েকে নিয়ে যা আমি একলা থাকবো। এটা মানুষ না পাগল। মাথা পুরো আমার ডাউন মেরে দিয়েছে। ”
“শোন ভাই এতো হাইপার হোস না তোর জমকে না ধরা পর্যন্ত একটু ধৈর্য্য ধর। ”
“আর দুূদিন টাইম দিলাম নয়ত আমি বেরুতে বাধ্য হবো।”
“একদিনেই হয়ে যাবে শালা ফোন রাখ।”
ফোন কেটে ইয়াসির আকাশের পাণে তাকিয়ে বলে,,মাবুদ বউ দিলা, সংসার দিলা ,বউয়ের মনটাও পাওয়াইয়া দিলা সাথে আবার চিংড়ি মাছ কেন ছাড়লা এই সুসময়ে আজকে হয়ত বউ নিয়ে কক্সবাজার থাকতাম আফসোস এই জমের বাচ্চার জন্য। একে পেলে একদম কাঁচা গিলবো, শালা আমার বাসরের তেলাপোকা ছ্যাহ্।”
ইশা ওর দাদীর সাথে পাশ ঘেষে শুয়ে শুয়ে বকবক করছে। সবাই টেনশনে পাগল এই মেয়ের এক কথা ভাই আছে জামাই আছে এতো চিন্তার কি আছে।
ইযান বলে,,”আমার সামনে ফাইনাল এক্সাম ভাই যে আমাকে ক্লাসে যেতে দিচ্ছে না আমি পরীক্ষা দেবো কী করে। আর পরীক্ষা না হলে কীসের ডক্টর হবো?”
ইশা বলে,,”ভাই পেরা নিও না আজকাল মানুষ বাদ গরু,মহিষ,ছাগল,ভেড়া,কুকুর,বিড়াল কতকিছুরই ডক্টর আছে তোমার ভাইয়েরা ঠিকই একটাতে তোমাকে বসিয়ে দেবে।”
“ইশু তুই চুপ কর আমি সিরিয়াস”
তখনই ইয়াসির এসে বলে,,”চলে যা আজকে বিকেলের দিকে। এখন সমস্যা নেই। ”
ইযান অবাক হয়ে বলে,,”কি করলে?”
ইয়াসির গটগট করে উপরে উঠতে উঠতে বলে,,”তেমন কিছুই না এমনিই ঝামেলা হয়েছিল।”
ইয়াসিরকে উপরে যেতে দেখে ইশাও দৌড় লাগায়।
ইশা রুমি উঁকি মেরে দেখতে থাকে গেল কোথায় তার জামাইটা। ইয়াসির একটানে ইশাকে রুমে এনে দরজা লক করে বলে,,,,’নিজের জামাইয়ের কাছে আসবি এমন উঁকি ঝুঁকি মারার কি আছে?”
ইশা থতমত খেয়ে বলে,,”আমি,,আমি তো এসেছি তোমার কিছু লাগবে নাকি জানতে,,”
ইয়াসির গায়ে তোয়ালে জরিয়ে বলে,,,,”হ্যাঁ অনেক কিছু লাগবে। তুই আগে খাবার নিয়ে আয় বইন প্রচন্ড খিদে পেয়েছে।”
ইশা রেগে বলে,,,,”কোনো খাওয়া খাওয়ি নেই তোমার বউকে বইন বলো লজ্জা করে না?”
“আরে শিট্ মনে থাকে না ডার্লিং”
এবার ইশা চুপ হয়ে তাকায় ইয়াসিরের দিকে।
ইয়াসির ইশারায় বলে,,,”যা এবার নাকি তোকে খাবো আমি যে বসে আছিস?”
ইশা চোখ রাঙিয়ে,, ,ছিহ্ ছিহ্ বলে দৌড় লাগায়। ইশার কান্ডে ইয়াসির মুচকি হাসে।
“আয়ান ভাই আপনি কি শেফ ছিলেন নাকি?”
“এই মেয়ে তোমাকে একটু আগে ওয়ারিং দিয়েছিলাম ভুলে গিয়েছো??”
রুমি চুপচাপ খেতে থাকে বেচারী খিদে আগে মিটুক তারপর বকবক করা যাবে। একটুপর রুমি পুরো বাড়ি রাউন্ড দিয়ে বুঝতে পারে। খুব শখ করে বাড়িটা বানানো হয়েছে। আধুনিক টাইপেরই কোনো কিছুর কমতি নেই। রুমি ভাবছে জঙলে কে টাকা খরচ করে বাড়ি বানায় তাও আবার এমন ভুতুরে পরিবেশে।এসব ভেবেই রুমি বলতে শুরু লাগে,,”পাগল ছাড়া দুনিয়া চলে না,,এ বাড়ি হলো পাগলে কারখানা আমি হলাম শ্রমিক না না শ্রমিকের একটা সুনাম আছে দাম আছে। আমার তাও নেই। ”
খানিকবাদে বাড়ির পিছনের দিকেটায় লাইব্রেরি লেখা দেখে রুমি মুখে একটু হাসি ফুটে উঠে যাইহোক অবশেষে একটু সময় কাটানো তোহ্ যাবে। দরজা খুলতেই রুমির উপর সমস্ত ময়লা ঝঙঝাট এসে পড়ে। পাশ দিয়ে আয়ান যাচ্ছিল। রুমির এ হালে বেচারা অনেক কষ্টে হাসি কন্ট্রোলে এনে বলে,,”চুপচাপ থাকা যায় না নাকি তোমার পা দুটো মেশিনের মতে ঘুরতে থাকে, বেশ হয়েছে। ”
“আপনি, আপনি এখানে যখন ময়লাই রাখবেন লাইব্রেরির নাম দিয়েছেন কেন?”
“আমার ইচ্ছা আমার বাড়ি”।
“ওহ্ তাই তাহলে আমি ময়লায় একা কেন থাকবে আপনিও আপনার বাড়ির ময়লা একটু মেখে নিন” বলে,,রুমির নিচের ময়লার ঝুড়িটা আয়ানের উপর ছুড়ে মারতেই বেচারার অবস্থা একাকার। রুমি হাসতে হাসতে বলে,,”যা লাগছে না আপনাকে, কি বলবো একদম পুরো জায়েদ খান ”
“স্টুপিড তোমার কমনসেন্স নেই কি করলে এটা?”
আয়ান তরতর করে বেরিয়ে যায়। এদিকে রুমি দোটানায় ওর তো আর জামা নেই। আয়ান তো সেই কখন ফ্রেস হয়ে নিয়েছে। রুমি আয়ানের সামনে গিয়ে বলে,,,”ইশাকে ফোন দিন ভাইয়া আমার ড্রেস নেই। আমি এভাবে কীভাবে থাকব?”
আয়ান ফোনে কিছু টাইপিং করছিল। সেটা রেখে রুমির দিকে তাকিয়ে বলে,,”একটু নিস্তার কি পাওয়া যাবে? ইশা এখানে ড্রেস আনবে কি করে। আর তোমার এভাবেই থাকতে হবে। বেশি সমস্যা হলে আমার একটা লুঙি আর সেন্ডো গেঞ্জি দিচ্ছি পড়ে নে ভাই।”
“কিহহহহহ্???”
“ওহ মানে তুমি তো মেয়ে। ”
“কেন সন্দেহ আছে আপনার?”
আয়ান কাশতে কাশতে উঠে বলে,,”বুদ্ধিসুদ্ধি আমার বইনের তেও কম আছে এই বেডির, কি নিলর্জ্জ কথা ছিহ্ ছিহ্”
রুমি বলে,,”আপনার মুখে কি মাছি গেল ছিহ্ ছিহ্ করছেন কেন আর কি বকবক করছেন?”
“আচ্ছা রুমি শুনো তুমি একটু চুপ করো প্লিজ আর এই নাও এটা নতুন টিশার্ট এর বেশি ম্যানেজ আমার দ্বারা হবে না। কালকেই ফিরে যাবো দয়া করে আজকে একটু ম্যানেজ করে নাও প্লিজ। আর হ্যাঁ আবারও প্লিজ আমার সামনে আসবে না আমাকে বিরক্ত ও করবে না প্লিজ। ”
রুমি মুখ ভেঙিয়ে চলে যায়,,”সে থুরি বিরক্ত করতে আসে নাকি যত্তসব”
“ইশা ইশা ইশাাাাা”
“কি সমস্যা জামাই?”
“রাখ তোর জামাই তোর ভাই যে রাতে ছাদে তোর বান্ধবীকে এক পায়ে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে জানিস?”
“কিসব বলছো ভাইয়া এমন করার কারণ?”
“জানি না মাত্র আমাকে ফোন দিয়ে বলল,,তারউপর বলল রাতে কুকুর শেয়াল খেয়ে নিলেও তার কিছু যায় আসে না। ”
ইশা বলে,,, “ফোন দাও তোহ্ দেখাচ্ছি মজা। আমার বান্ধবীকে দাঁড় করানো”
“হ্যালো ভাইয়া”
“ইশু ফোন রাখ ব্যাস্ত আমি”
“ভাইয়া বেচারীকে তুমি কান ধরে রেখেছো কেন?”
জানো ওর ফিয়ন্সে কান্না করছে আমার কাছে ফোন দিয়ে”
আয়ান চমকে বলে,,”ফিয়ন্সি!!”
“হ্যাঁ ওর হবু হাসবেন্ড বিশাল ভাইয়া কতই না ভালোবাসে তার বউকে আর তুমি,,, ”
আয়ান ফোন রেখে রুমির সামনে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে বলে,,,,”ইশা বলল তোমার নাকি ফিয়ন্সে আছ”
রুমির সব মাথার উপর দিয়ে গেল তবে বান্ধবী যেহেতু বলেছে নিশ্চয়ই উপকারের জন্যই। তাই রুমি বলে,,”হ্যাঁ আছে তো”
আয়ান বলে,,”শিট্ আগে বলবে না তুমি? তাহলে তোমার ফিয়ন্সির কাছে রেখে আসতাম তোমার মতো পাগলকেও কেউ বিয়ে করবে কি অ্যামাজিং ব্যাপার। রুমে যাও কালকেই দিয়ে আসবো তোমার ফিয়ন্সির কাছে।”
রুমি একলাফে রুমে দৌড় লাগায়। যাইহোক তার তো আর সারারাত দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না জোর বাঁচা বেঁচেছে।
“হ্যালো ইশা কালকে বিশালে টিশালের এড্রেস দিস রুমিকে রেখে আসবো। খুব বাঁচলাম বইন কি এক বাচাল মাইয়া ওরে ওর ফিয়ন্সিই সামলাইবো আমি আর নাই”
“কিন্তু ভাইয়া,,”
“হোয়াটসঅ্যাপে দিস রাখি,”
“আরে শোনো ভাইয়া ”
“জানতাম তোর ভাই এমন কিছুই করবো৷ ওর রুচিতে মেয়ে মানুষ আসে না শালা গে নাকি??”
“খবরদার জামাই আমার ভাই নিয়ে উল্টাবাল্টা বললে জিহ্ব টেনে,,,,”
“আরে আরে থাম।ভাই যেমন করলা বোন তেমনি নিমপাতা। ঘুরেফিরে একস্বাদ শুধু দেখতেই ভিন্ন।”
“চুপ থাকো।আয়ান ভাই যদি রুমির প্রেমে না পড়ে ওদের যদি বিয়ে না হয় তোমাকে আমি ডির্ভোস দিবো”
“এই এই পেত্নীর বাচ্চা আমার কি দোষ। তোর ভাই তোর বান্ধবী এর মাঝে আমার বউ টানোস কেন?”
“থাকো তুমি, আমি গেলাম, দাদীর সাথে থাকবো। যে পর্যন্ত আমার ভাইকে তুমি বিয়ে না দিচ্ছো। সে পর্যন্ত একাই থাকো। ”
রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ১২
“এটা অন্যায় ইশা। আমার ফেয়ারী বউ রেখে আমি কেন একা ঘুমাবো। চার মাস বিয়ে হয়েছে। বউ থেকে পেলাম না একটা কিসিং বউ হয়ে যাচ্ছে মিসিং। ”
“বাই জামাই”
“ইশাাাা যাস না শোন ইশাাাাাাাাাাাাাা বউ ডার্লিং ইশাাাাাাাাাাাাাাাাাাাাাাা