রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ১৮
আশু
“ইশা বউ কই গেলি?” ইয়াসির ইশাকে ডাকতে ডাকতে সামনে গিয়ে চুপ হয়ে যায়। কারণ রুমিদের বাড়ির সবাইও সেখানে বেচারার খেয়ালই নেই এটা নিজেদের বাড়ি না। সবাই ইশা আর ইয়াসিরের দিকে তাকিয়ে আর ইশা রেগে ইয়াসিরকে দেখছে। ইয়াসির লজ্জা আর ভয়ে এক ঢোক গিলে উল্টো হাঁটা ধরে। ইশা কোনোমতো কথা শেষ করে ইয়াসিরের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,”কি সমস্যা তোমার? বাড়িতে বউ বউ মানা যায় এখানেও?”
“আরে বউ আমার খেয়াল ছিল না, তাই তুই এখন আমাকে বকবি?”
“বকাবকি তোহ্ দূরের কথা, তোমাকে আমার মারতে মন চাইছে। বেঁচে গেলে কেননা আমার বিয়ে করা জামাই যে তুমি। “”
“আচ্ছা শোন বাসায় ফিরবি না নাকি?”
“হুম আর ত্রিশ মিনিট অপেক্ষা করো একটু বিদায় নিবে কান্নাকাটি বুঝোই তোহ্!!”
“নারে বউ আমি কেমনে বুঝমো আমার বউ আনতে তোহ্ এত পেরা লাগে নাই। আমার মীর জাফর বাপে বিষের বদলে পানি আনছে আর আর তোর মতো সুন্দরী বউ জুটাইয়া দিছে।”
ইশা বলে উঠে,,”তোমার সাতকপাল ভাগ্য আমার মতো বউ পাইছো।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“এমন ভাগ্য যানি আর কারো না হয়!!”
“কি বললে?”
“মানে এমন ভাগ্য আর কারো না হোক, তুই শুধু আমার থাক, তোর মতো কেউ না হোক, আমি জেলাস বুঝছোত ভুল বুঝিস না আবার!!!”
ইশা চোখ রাঙিয়ে বলে,,,,”ওভার স্মার্ট সেজো না জামাই তোমার বউ কিন্ত কম না!!!”
“না না তা কখন বললাম বউ আমার, লাভ ইউ বউ, আসো চুম্মা দেই।”
ইশা রেগে গজগজ করতে করতে বলে,,” সরম লজ্জা সব কোথায় গিয়েছে কে জানে অসভ্য হচ্ছে দিন দিন”
ইশার যাওয়ার পানে তাকিয়ে ইয়াসির ঠোঁট কামড়ে হাসতে থাকে।
“মা গো এমন আটার বস্তা আসলো কোথা থেকে ডক্টরের আগে পেশেন্ট হইয়া গেলাম!! ”
“এক্সকিউজ মি, মি.চোখ কি বাসা রেখে এসেছেন?? ”
নিজের ভাই আর নতুন ভাবীকে দেখতে রুমে যাওয়ার আগেই হুট করে একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লেগে পা পিছলে ইযান ফ্লোরে পড়ে যায়। মেয়েটির কথায় ইযান চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে,,,চিকন একটা মেয়ে চোখে চশমা ড্যাবড্যাব করে ওর দিকে রেগে তাকিয়ে। গায়ে ভারী ডিজাইনের থ্রিপিস পড়া কালো রঙের বেশ মানিয়েছে।
ইযান অস্ফুটস্বরে বলে উঠে,,,,”তা মিস.আমি নয়ত বাসায় চোখ রেখে আসলাম আপনি কোথায় রেখে এসেছে?”
“শ্বশুর বাড়ি রেখে এসেছি”
“এ্যাাাা””””””
“এ্যায়য়য় না হ্যাঁ””
এরপর মেয়েটি যেতে নেয় ইযান ফ্লোরে বসেই বলে,,,,”রুচি এতো খারাপ হলো কবে থেকে অন্যের জিনিসে নজর গেলো ছিহ্।”
তখনই ইয়াসির বলে,,,,”কি ফিস ফিস করছিস বসে বসে।??”
“তেমন কিছু না ভাই তোমাদের তো ষোলকলা পূর্ণ আমি বেচারা খালি হাতে একদম শূন্য”
ইয়াসির হেসে বলে,,,”বুঝিয়ে বল”
“তুমি আমার বড় ভাই না?”
“কেন সন্দেহ আছে?”
“আরে না ”
“তাহলে!!!!”
“তাহলে আবার কি ছোট ভাইয়ের মেডিকেল ক্লাসে তুমি এসো না যাও যাও””
ইয়াসির দাঁত কটমট করে বলে,,,,”আমার লিরিক আমাকে ব্যাক!!”
“লিরিক না ডায়লগ”””
“সেইম বাট ডিফারেন্ট “”””
ওদের কথার মাঝে আয়ান রুমিসহ সবাই বেরিয়ে আসে। রুমি পাশে সেই চশমা পড়া মেয়েটিও কাঁদো কাঁদো হয়ে আছে।
ইযান ইশাকে বলে,,”ঐ চাশমিশটা কে রে??”
ইশা বলে,,”আরেহ ঐটা আয়ান ভাইয়ের একমাত্র শালিকা রিমি।”
“বড় বোনের আগেই ছোট বোন বিয়ে করে ফেলেছে লাভ কেইস নাকি রে!!”
“দূর ভাই ও বিয়ে করবে কেন? এবার এডমিশনে আছে। ”
ইযান মনে মনে বলে,,,,”ওহ্ বিয়াইন সাহেবা তাহলে ডস্ মারলে আচ্ছা দেখাচ্ছি মজা।”
রুমিকে বিদায়ের সময় রিমির কানের কাছে ইযান গিয়ে বলে,,,”এত কান্না করবেন না চাশমিশ বিয়াইন সাহেবা৷ আপনাকে কান্না করলে যা সুইট লাগে না কি বলবো!!”
রিমি ঘুরে ইযানের দিকে তাকাতেই ইযান সটান হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। রিমি রেগে তাকায় তখন ইযান একটু নিচু হয়ে বলে,,”রাগলেও মারাত্নক দেখি””।
রিমি এবার নিজের হিল দিয়ে ইযানের পা বরাবর বসিয়ে বলে,,,,”ওহ তাই নাকি বিয়াই??”
ইযান দাঁত চেপে বলে,,,,”তেজ ভালোই তবে হাল ছাড়ছি না। আপনি তোহ্ আবার বিবাহিত চাইলে পরকীয়া করাই যায় রাজি থাকলে নক দিয়েন। আমার এফবি বলে দিচ্ছি, “ইযান চৌধুরী ”
আর ঠিকানা আপনার মনে,,,”
আপনারটা বলবেন???”
রিমি বিরক্ত হয়ে বলে উঠে,,”জ্বি জাহান্নামে”
“আস্তাগফিরুল্লাহ”
“নাটক!!”
“আরে না সিনেমা!!!”
“অসভ্য”””
“আরে না সভ্য”””‘
“বেয়াদব লোক””””””
“আরে না অনলি ইউর লোক”””””
“স্টুপিড””””
ইযান এবার হেসে বলে,,,,”আপনার সাথে পারবো না, আসবেন কিন্তু আমাদের বাসায় ডিয়ার চাশমিশ বিয়াইন””
“অবশ্যই খাম্বা বিয়াই””””
“হোয়াট ???”
“”হোয়াটএভার বাই বাই””””
আয়ান আর রুমির জন্য আয়ানের রুমটা ইশা,ইযান আর ইয়াসির মিলে সাজাচ্ছিল । সাজতে সাজাতে ইশা বলে,,,,”আমার কপালে একটা বাসর ঘর জুটলো না বিয়ে হয়ে গেলো ছ”মাস এটা কি মানা যায় জামাই?”
ইয়াসির বলে,,”বিয়েই তোহ্ করলাম কট খেয়ে আবার বাসর। একমিনিট বাসরে কি করে বউ? তরে তোহ্ টার্চ করলেই,,,,”
আর কিছু বলার আগেই ইযান বলে,,,,”আমিও একটা মানুষ, সবসময় তোমাদের রোমান্স আমার সামনেই কেন যাচ্ছেতাই থাকো তোমরা ছিহ্!!”””””
ইশা আর ইয়াসির একে অপরের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেলে।
খানিকবাদে যে যার রুমে চলে আসে। রুমি বসে আছে। তখনই আয়ান রুমে আসে। আয়ানের অস্তিত্ব টের পেয়ে রুমি একটু থমকায়। আয়ান সোজা রুমি সামনে বসে বলে,,,”প্রপোজের সময় তোহ্ আপনাকে লজ্জা পেতে দেখলাম না এখন এতো লজ্জা আবার চুপচাপও”
রুমি বলে,,”কই কই কে লজ্জা পাচ্ছে??”
“তার মানে লজ্জা পাচ্ছো না!!”
রুমি এবার পাশের দিকে নজর ফেরায়। আয়ান রুমির দিকে তাকিয়ে বলে,,”বিয়েটা করার কারণ হলো তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করলে আমার ভালো লাগবে না স্রেফ এর জন্য”””
রুমি ভ্রুকুচকে বলে,,”ওহ তাহলে আমি ইশার কাছে চলে যায় থাকুন আপনি” এই বলে রুমি যেতে নিলে। আয়ান রুমির হাত টেনে নিজের কাছে এনে বলে,,,”তবে কারণ আরেকটা আছে একা একা ঘুমও আসে না ”
“ছাড়ুন বলছি আমি আপনার সাথে থাকবো না”
“ঠিকআছে তুমি নাই থাকতে পারো তবে আমার তোহ্ থাকতেই হবে। অনেক ধকল গেছে ডার্লিং এবার ঘুমাতে দাও নয়ত সারারাত নির্ঘুম কাটানের প্লান থাকলে বলে দাও??”
রুমি আর কিছু বলবে। আয়ান বলে,,,”এই গোলাপী রঙা ঠোঁট টায় লাল রঙ লাগিয়েছে কেন বলোতো?”
রুমি নিষ্পলক তাকিয়ে লোকটার মতিগতি বোঝা বড় দায়। আয়ান একটু রুমির দিকে ঝুঁকতে। রুমি আয়ান ধাক্কা মেরে বলে,,,,”সরুন ফ্রেস হবো”। বেচারী লজ্জায় পালাতে চাচ্ছে এই ভেবে আয়ান স্মিথ হাসে।
“দেখ ইশা তোকে আমি আর তুই তুই বলবো না। ”
“সাতসকালে তোমার আবার কি হলো?”
“কি আবার হবে প্রেম প্রেম জাগলেও তোহ্ উপায় নেই।”
এই বলে ইয়াসির ইশার চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বলে,,
“বোঝেনা বোঝেনা বউ আমার
বোঝেনা বোঝেনারে
বোঝেনা বোঝেনা,বোঝেনা আমারে”
রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ১৭
ইশা কোমড়ে হাত দিয়ে ইয়াসিরের দিকে চোখ রাঙাতেই ইয়াসির থেমে বলে,,,,
“তুমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অধ্যায়
যার সূচনা আছে শেষ নেই।
তুমি আমার আমরণ ভালোবাসা,
হৃদয়ের একাংশ,
জীবনের অর্ধাঙ্গীনি।
এই জীবনের দীর্ঘগন্তব্যে তোমায়
তুমির আখ্যায় রাখতে চায় বউ””””””