রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ৬
আশু
“পাঁচ হাজার দিবো আমার বউ হবি?”
ইশা আতংকিত নয়নে ইয়াসিরের পাণে তাকায়। ইয়াসির আরো সজোরে ইশার কানের কাছে গিয়ে বলে,,,”হবি বইন??”
ইশা একটু পিছিয়ে বলে,,”না না না এখন বড় হয়েছি যেকোনো কাজের ডিলে পাঁচ হাজার বা ছয় হাজার কম হয়ে যায় ভাই।”
এটা শুনে ইয়াসির কোমড়ে হাত রেখে বাঁকা হাসে পাশ ফিরে। ইশা আড়চোখে বিস্ময়ে সেই হাসি অবলোকন করে। কতই না মাধুর্য তার ইয়াসির ভাইয়ের হাসিতে। এরকম হাসির জন্য সে বারংবার হাসির ছল সাজতেও রাজি।
ইয়াসির তখন নিজেকে থামিয়ে ধাতস্থ করে বলে,,”বইন শোন এখানে সবাই বিবাহিত নিজেকে সিঙ্গেল দাবি করতে অনেক কষ্ট লাগতাছে তাই তোকে এই অফারটা দিলাম। বাইরের কাউকে বললে ফ্রিতে রাজি হয়ে যেতো আর তুই??”
ইশা মুখ ভেঙিয়ে বলে,,,”মন্ত্রী মানুষ পাঁচ লাখ বলবে তা না পাঁচ হাজার কেমনে বলো লজ্জা করে না তোমার?”
ইয়াসির কপাল চুলকে বলে,,,”না করে না কারণ এই দেখ পকেটে দশহাজার টাকা আছে মাত্র, তোরে তার অর্ধেক দিতে চাইতাছি তাও রাজি না তুই,,লোভী মাইয়া একটা”
ইশা একটু উঁকি মেরে বলে,, “একদম লোভী বলবে না, দশ হাজারে বিয়ে খাবে তুমি?এটাও আমি বিশ্বাস করবো?”
ইয়াসির বলে,,”কেন করবি না?আমি সিঙ্গেল ছিলাম তুই জটলা মেরে আমার পিছু নিলি এখন আমি ডাবল। একটা দম্পতি বিয়ে খেয়ে সর্বোচ্চ পাঁচ দশ হাজারে বেশি দেয় নাকি। যদিও মন্ত্রী হওয়ার দরুন বন্ধুকে একটা বাইক গিফট্ করছি। সাধারন পাবলিক হলে তো ফ্রি ফ্রিতেই চলে যেত।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইশা ভ্রুকুচকে বলে,,”আচ্ছা এই ব্যাপার!!”
ইয়াসির মাথা নাড়ায়।
ইশা বলে,,”ফার্স্ট বইন বইন করবা না।”
ইয়াসির বিরক্ত হয়ে বলে,,”তোহ্ কি বউ বউ করবো নাকি?”
ইশা বলে,,”করো!!”
ইয়াসির বমির ভান ধরে বলে,,”ওয়াক্ থুহহ তোর মতো পেত্নী কার কপালে আছে কে জানে!!”
ইশা বলে,,”বাদ দাও, যার কপালেই থাকি আগে টাকা আবার বের করো তোমারে বিশ্বাস নাই!!”
ইয়াসির পাঞ্জাবির পকেট থেকে টাকা বের করতেই ইশা ছো মেরে টাকা নিয়ে বলে,,সেখান থেকে একটা এক হাজার টাকার নোট বাড়িয়ে বলে,,”এই নাও”
ইয়াসির বলে,,”এই এই পেত্নীর বাচ্চা পাঁচ হাজার বলছি বাকিটা দে। ”
ইশা বলে,,”আরে জামাইয়ের সব তোহ্ বউয়েরই হয়। তোমার কপাল ভালো এক হাজার দিলাম। বেশি বাড়াবাড়ি করলে তুমি যে আমারে ভাড়ায় বউ বানাইলা গলা ফাটাইয়া জানামো সবাইরে। ইশুরে তোহ্ চিনোই তুমি!!”
ইয়াসির একটা ঢোক গিলে বলে,,”পেত্নীর বাচ্চা আমারও দিন আসবো সর সামনে তে বেয়াদবের নানী”।
ইশা নিজের সবগুলো ঝকঝকে দাঁত বের একটা হাসি মেরে চলে যায়।
রাতের দিকে হলুদের প্রোগাম শেষ শেষ অবস্থায় একজন গেস্ট আসে। সবার নজর তার দিকে একটা হলুদ শাড়ী পড়া সুন্দরী মেয়ে সবার নজর তার দিকে ব্লাউজ ছিলো হাত কাটা, গড়নে হলুদ পাতলা শাড়ী, হাতে বিশাল দুটো ফুলের বুকেট একটা হলুদ গোলাপের আরেকটা লাল গোলাপের। মেয়েটি সোজা এসে ইয়াসিরের সামনে দাঁড়িয়ে লাল গোলাপ বাড়িয়ে দিয়ে বলে,,”শুভ জন্মদিন মি.ইয়াসির চৌধুরী।”
ইয়াসির হাসিমুখে তা গ্রহণ করে বলে,,”ধন্যবাদ সুনয়না।”
তারপর সুনয়না সামনের দিকে এগিয়ে যায়। ইশা পাশ থেকে সব দেখছিল। তকনই ইশা নিজের কুনই দিয়ে ইয়াসিরের পেটে মেরে বলে,,'”কে এটা?’
ইয়াসির বলে,,”তুই চিনবি নাকি?”
ইশা বলে,,”তুমি চিনো কি করে?আর মেয়েটা কত হট ভাবা যায় এত সুন্দর একটা মেয়ে তোমার,,,”
আর কিছু বলার আগেই ইয়াসির বলে,,”আরে এটা আমার গার্লফ্রেন্ড ছিলো আদিকালে এখন এক্স”
ইশা অবাক হয়ে তাকায় ইয়াসিরের পাণে তার ভেতর টা মনে হয় কেউ ছুরি দিয়ে আঘাত করে আবার বের করে নিল। ইশা জোরে একটা দম ছেরে ভাবে,,”এক্স তোহ্ থাকতেই পারে তবে নেক্সট আর পারমানেন্ট তোহ্ আমিই হবো।” এই ভেবে ইশা মুচকি হাসে। তখনই ইশা কিছু বলবে কি সুনয়নাকে আসতে দেখে ইয়াসির ইশাকে টেনে নিজের বাহুতে আবদ্ধ করে রাখে। সুনয়না বেশ বুঝতে পারে ইয়াসিরের হালচাল। সুনয়না বলে,,”তোমার বউ?বিয়ে করলে কবে?”
ইশা মিনমিন করে বলে,,”আজকেই”
তবে সেটা কেউ শুনতে পায় না সাউন্ড বক্সের কারণে। ইয়াসির বলে,,,,”বছর তোহ্ হবেই”
সুনয়না মিষ্টি হেসে ইশার পাণে তাকিয়ে বলে,,”সুন্দরী তবে বাচ্চা”
ইশা মুখটা কুঁচকে ফেলে একে তো তার ক্রাশের এক্স তার উপর তাকে বাচ্চা বানিয়ে আরও প্রেম না হওয়ার চান্সটা গিলছে।
ইয়াসির বলে,,”হ্যাঁ বাচ্চা বউ,,মানিয়েছে না আমাদের??”
সুনয়না এবার বেশ বিরক্ত হয়ে হুম বলে চলে যায়।
আর ইশাও তৎক্ষনাৎ ইয়াসিরের হাত সরিয়ে বলে,,”ঘুমাবো আমি, তেমার আর তোমার এক্সের নাটক দেখতে পারবো না আর।”
ইয়াসির বলে “চল”। তারপর যাওয়ার আগে ইয়াসির ফুলের বুকেটটা ইশাকে দেখিয়ে বলে,,”কি করবো?”
ইশা সোজা আঙ্গুলের ইশারায় ডাস্টবিন দেখিয়ে দেয়। ইয়াসিরও আর কিছু না বলে সোজা ডাস্টবিনে বুকেটটা ফেলে ইশাকে নিয়ে যেতে থাকে। ইশা তো মনে মনে বেশ খুশি।
লিভিংরুমে একপাশে দাঁড়িয়ে ইয়াসির সবার সাথে কথা বলছে ইশাও পাশে ছিল তবে বেচারী ঘুমের তোপে দাঁড়িয়ে না থাকতে পেরে সোজা সোফায় বসে বসে ঘুমানোর চেষ্টা করে তবে হচ্ছে না। বার বার মাথায় চক্কর দিচ্ছে ইয়াসির ভাইয়েরও এক্স ছিল। তার উপর তার থেকেও সুন্দরী,স্মার্ট তাহলে ব্রেকআপ হলো কেন। ইশা এসব ভাবনার জগতেই হারিয়ে যায় ক্লাসের টেনের সময়টাতে। সেদিন ক্লাস শেষে ইশা বারান্দায় দাঁড়ায়। সবাই ছাতা নিয়ে চলে যাচ্ছিল একএক করে। ইশা সহ কয়েকজন আটকা পড়ে ছাতা না আনার জন্য। ইশা আনমোনা হয়ে নিজের কাঁধের ব্যাগ ধরে একবার এপাশ তো ঐপাশ করে পায়চারি করছে বৃষ্টি কমার অপেক্ষায়। হুট করে ইশার চোখ যায় স্কুলের গেইটে ইয়াসির আসছে হাতে বন্ধ ছাতা। বৃষ্টিতে নিদারুন ভিজছে সে।
বৃষ্টির ফোঁটাগুলো একাকার হয়ে ইয়াসিরের সারা গায়ে লেপ্টে পড়ছে। ইয়াসির নিজের চুলগুলো হাত দিয়ে পেছনের দিকে সরিয়ে ছোট ছোট চোখে ইশার দিকে তাকায়। আর ইশাও থমকে যায় ঐ দৃষ্টিতে। কয়েকমিনিটের চোখাচোখিতে ইশার মনে সেইদিন এক ভয়ংকর প্রেমের সূত্রপাত ঘটেছিল। সেদিন সারারাস্তা ইশা শুধু ইয়াসিরের সেই চোখ দুটোই অবলোকন করছিল সে । নাহ্ অস্বাভাবিক কিছু না আর চার পাঁচ টা স্বাভাবিক মানুষের মতো চোখ হলেও ইশার কাছে সে চোখগুলো হয়ে উঠেছিল নবপ্রেমের দোলা যার গহীনে শুধু নিজের জন্য প্রেম খোঁজার প্রয়াস সে চালাচ্ছিল তবে তা অস্তিত্বহীন যা তার অজানাও নয়।
কথায় কিংবা সত্যতায় একটা পুরুষ একটা মেয়ের দিকে কি নজরে তাকায় তা সে মুহূর্তে ধরে ফেলতে পারে৷ কোনটা ভালোলাগার দৃষ্টি আর কোনটাই বা বাজে নজর। তবে ইয়াসিরের কাছ থেকে ইশা সেরুপ কিছুই পায়নি। ইয়াসির সবসময় ইশাকে যে বোন হিসেবেই দেখে আসছে তা সে জানে। কখনো নিজের জন্য আলাদা অনুভূতি কিংবা ভালোলাগা খুঁজে পায়নি ইয়াসিরের দিক থেকে। তবে সে চায় আর প্রতিনিয়ত চেষ্টাও করে ইয়াসির তাকে নিয়ে ভাবুক তাকে একটু আলাদা নজরে দেখুক। এসব তার ভাবনা,কল্পনা জল্পনা কোনটাই বাস্তবতায় আসেনি আসবে কিনা তাও তার অজানা।
খানিকবাদে ইয়াসিরের ডাক ইশা নিজের চোখ পিটপিট করে খুলে বলে,,”কি সমস্যা তোমার?”
ইয়াসির বলে,,”চল রুমে চল”।
পাশ থেকে সেই মহিলাটিও বলে,,”চলো মা চলো তোমাদের রুমটা গুছিয়ে দিলাম”।
তখন ইয়াসির বলে,,”আজকে আমার বন্ধুর সাথে থাকি খালাম্মা ইশাকে নিয়ে আপনারা থাকেন”
তখন সুনয়না নিজের গলায় হাত রেখে বলে,,”বিয়েটা কি আদোও করেছো না সবই শোঅফ?”
ব্যাস ইয়াসিরের শরীরে বিধঁল কথাটা ইয়াসির সোজা ইশার হাত ধরে একরুমে চলে গেলো।
রুমে গিশে ইশা বলছে,,,”বের হও তোমার সাথে কি আমি থাকবো নাকি?”যাও নিজের এক্সের সাথে ঘুমাও মন্ত্রী মশাই। আমি সিওর তুমি কৃষ্ণনগর রাজ্যের ঐ মন্ত্রী টা।”
ইয়াসির বিরক্ত হয়ে বলে,,”তুই নিশ্চয়ই মন্ত্রীর বউটা।”
ইশা বলে,,”হাহ্ আমি তো হলে ঐ রাজার বউ হবো তবুও খাটাশ মন্ত্রীর বউ হবো না।”
ইয়াসির বলে,,”চুপ কর পেত্নী আজকে একসাথে থাকতে হবে”
ইশা ভ্রুকুচকে বলে,,”কিসব বলছো?মাথা ঠিকআছে?”
ইয়াসির বলে,, “আমার সাথে এলি কেন তুই?তোর জন্য আজকে যত্তসব ঝামেলা,, সিঙ্গেল ছিলাম ভালো ছিলাম কেন তোকে নিয়ে ধ্যাৎ!! ”
ইশা বলে,,”আমি কিছু জানি না তুমি বের হও, এখনি বের হও বলে ইশা নিজের হাত দিয়ে ইয়াসিরকে ঠেলতে শুরু করে।
তখনই হুট করে দরজায় নক করে কেউ। ইয়াসির গিয়ে দরজা খুললেই রুমে প্রবেশ করে সুনয়না। সুনয়না বলে,,”আমি আজকে তোমার বউয়ের সাথে থাকি তুমি যাও নিচে যাও।”
ইয়াসির বুঝতে পারে এই মেয়ে ঘাপলা মারতেই এসেছে,, ইয়াসির বলে,,”না না আমার বউ ছাড়া ঘুম আসে না আপনি যান মিস.আমাদের নব দম্পতির মাঝে আসবেন না প্লিজ।”
ইশা বিরক্ত হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে তামশা দেখছে।এরপর সোজা বিচানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে ইশা।
এদিকে সুনয়নার বেশ রাগ লাগে,,তবুও বলে,, “আরে একদিন কিছু হবে না মি.”
রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ৫
ইয়াসির তবুও কাঠকাঠ জবাবে বলে,,”অনেক কিছু হবে। আপনি বুঝতে পারছেন না বউ এতসুন্দর সেজে থাকলে মনের ভেতর কেমন নেশা জাগে আপনি যদি আমাদের মাঝে এমন লেগে থাকেন ব্যাপারটা কেমন দেখায় মিস.?”
এবার আর দাঁড়ায় না সুনয়না একদম হেঁটে বেরিয়ে যায়। সুনয়না যেতেই ইয়াসির দম ছেড়ে সামনে তাকিয়ে দেখে বিছানার একপাশে এঁটেসেটে ইশা ঘুমিয়ে গিয়েছে৷