রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ৭

রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ৭
আশু

বাইরের প্রচন্ড শোরগোল শোনা গেলেও ইয়াসির সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে পেছনে ঘুরে ইশাকে দেখে
যে আরামে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। না ফ্রেস হয়েছে না জুয়েলারিগুলো খুলেছে। ইয়াসির ইশার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে,,”ফেয়ারী বাট নট মাই টাইপ” বলে ইশার পাশ থেকে একটা বালিশ নিয়ে পাশের সোফায় ঘুমানোর চেষ্টা চালায়। এত বড় হাইটের মানুষ সোফায় হচ্ছেও না তবুও কোনোমতে এঁটে সেটে ইয়াসির ঘুমিয়ে পড়ে।

সকাল সকাল বাহিরে প্রচন্ড চিৎকার চেঁচামেচিতে ইয়াসিরের ঘুম ভাঙলেও ইশা নির্বিকার কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমাচ্ছে। ইয়াসির দরজা খোলামাত্রই সামনে নিজের বাবা-চাচা,আয়ান আর ইযানকে দেখে বিস্ফোরিত নয়নে তাকায়। আয়ান ইয়াসিরের কলার চেপে ধরে নাক বরাবর ঘুষি বসিয়ে দেয়। ইয়াসির অনেকটা পিছিয়ে নাকে আসা রক্ত হাত দিয়ে চেপে ধরে কিছু বলার আগেই আয়ান বলে,,”তুই না ইশার আরেকভাই তাহলে বিয়ে বাড়িতে এমন নোংরামি করলি কেন?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইয়াসির যা বুঝার বুঝে গেছে তার এই বানানো নাটক কেউ পাবলিক করে দিয়েছে। ইয়াসির কিছু বলার মতো ভাষাও পায় না। সে তো মজার ছলে বন্ধুদের সাথে ট্রুথ ডেয়ারের হেরে কাজটি করেছিল আজকে তার জন্য সেটা কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চৌধুরী ভিলায় একপাশে ইয়াসির আরেকপাশে ইশা যে হিঁচকি তুলে কান্না করছে। ইয়াসির পায়ের উপর পা তুলে শান্তস্বরে বলে,,কি করবো এখন সামান্য একটা মজার ব্যাপার নিয়ে তোমরা যা শুরু করেছো,,
আয়ান রেগে চেঁচিয়ে বলে উঠে,,আসলেও সামান্য? একটা মেয়েকে নিজের বউ বানানো সামান্য তাও আবার নিজের চাচাতো বোন!!!তারপর পুরো সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব নিয়ে যা তা ট্রল,,
ইয়াসির একপলক ইশার দিকে তাকায় যে বান্দা কান্না ছাড়া কিছুই পারে না। মনে হচ্ছে সব ইয়াসিরই করেছে তার কোনো হাত নেই সে বাচ্চা খুকি।

ইয়াসির বিরক্ত হয়ে বলে,,যা হওয়ার হয়ে গেছে।
ইলহাম চৌধুরী তখন গর্জে বলে উঠেন,,ঠিক বলেছো যা হওয়ার হয়েই গেছে। যা মানসম্মান যাওয়ার চলেই গেছে। তোমার এই তামশায় বাড়ির মেয়ের ভবিষ্যৎ তোহ্ আর নষ্ট করতে পারি না আর না তোমার ভবিষ্যৎ। তবে বাড়ির মানসম্মান ফিরিয়ে আনার জন্য আমি কঠিন থেকে কঠিনতম হতে পারি। এই বলে ইলহাম চৌধুরী নিজের রুমের দিকে চলে যান।

বাড়ির সবাই অবাক থেকে অবাকতর হচ্ছে যেন আকাশকুসুম কিছু চিন্তা ভাবনা। সবার ভাবনার জল্পনা কল্পনা শেষ করে ইলহাম চৌধুরী হাতে একটা পেপার আর একটা গ্লাসে কিছু নিয়ে আসেন। তারপর ইয়াসির আর ইশার সামনে রেখে বলেন,,”ইয়াসির তোমাকে আজকে রাজনীতি ছেড়ে ইশাকে বিয়ে করতে হবে আর যদি তা না হয় ইশা তুমি পাশ থেকে বিষ খেয়ে নিবে। কারণ একরুমে থাকার পর মেয়ে হিসেবে তোমার মূল্য কতটা নিচে নেমে গিয়েছে আমি আর ব্যাখ্যা করতে চাইছি না।”

সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে এ কেমন শর্ত। কেউ কিছু বলার সাহস পায় না তবে ইয়াসির দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে,,এটা কি বলছেন বাবা? আপনি ঠিক আছেন?
ইলহাম চৌধুরী সামনের দিকে ঘুরে বলেন,, এটাই আমার শেষ সিদ্ধান্ত।
ইয়াসির বলে,,তাহলে আমারও শেষ কথা আমি রাজনীতি ছাড়ছি না।
ইলহাম চৌধুরী বলেন,,বেশ ইশা তোমাকে আমার দ্বিতীয় বার বলতে হবে না আশা করি।
ইশা এসবের কিছুই বুঝতে পারছে না। তাকে কেন মারতে চাইছে এসবে। ইশা অসহায় দৃষ্টিতে নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,,”বাবা,,

তখন ইশান চৌধুরী বলে উঠে,,আমাকে বাবা বলবি না তুই?
ব্যাস নিজের সবচেয়ে ভালোবাসার বাবার মুখে এই কথা শুনার উপর ইশার আর বেঁচে থাকারও ইচ্ছা জাগে না। ইশা কাপকাপা হাতে গ্লাসটি তুলে নেয়। ইয়াসির মাথা নিচু করে বসে। বাড়ির প্রত্যেকটা সদস্যের মুখে যেন আজ তালা কেউ একটা কথা বলছে না শুধু নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। খানিকবাদে ইশার নিজের মুখের সামনে গ্লাস এনে সবার দিকে একপলক তাকায় তারপর বিরবির করে বলে,,আমার কি দোষ ইয়াসির ভাইয়া?
ইশার বলা কথাটা ইয়াসিরের বুকে বিঁধে তবে বোকা ইশা মনে করেছিল তার মনের কথা এটা বাইরের কেউ শুনেনি। এরপর ইশা ঠোঁট ছুয়িয়ে খাওয়ার আগে ইয়াসির একটানে গ্লাস ছুড়ে নিচে ফেলে দেয় তারপর কষিয়ে ইশাকে এক চড় মেরে বলে,,”মরার এতো তাড়া কেনো তোর?”

তবে সারাদিন না খাওয়া বেচারী এক থাপ্পাড়ে সোফায়ই জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়ে। আর তখন ইয়াসির সামনে থাকা ফাইলে সিগনেচার করে বলে,,”আমি আমার রাজনীতি ছাড়লাম আর ইশাকে বিয়ে করতে আমি রাজি।”
খানিকবাদে ইশার জ্ঞান ফিরতেই পাশে ইয়াসির আর সামনে কাজিসহ নিজের বাবা জেঠুকে দেখে চোখ কচলাতে শুরু করে। ইশা বোঝার চেষ্টা করছে কী হচ্ছে নিজের মাথায় লাল দোপাট্টা প্যাচানো পাশে ইয়াসিরের গম্ভীর মুখখানা আর নিজের ভাইদের থমথমে দাঁড়িয়ে থাকা সব গোলমাল পাকাচ্ছে তার ছোট্ট মাথায়। একটুপর ইলহাম চৌধুরী আদেশের স্বরে বলে উঠেন,,বিয়ে পড়ান কাজী সাহেব।

এবার ইশার মাথার জট এক এক করে খুলে আশেপাশে নিজের মা-জেঠী মাকে না দেখে আরো ভরকে উঠে বেচারী। কবুল বলার সময় এলে ইশা একবার নিজের ভাইয়ের দিকে তাকায়। আয়ান আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না নিজের বোনের কাছে এসে মাথায় হাত রেখে ইশারায় বলতে বলে। ইশা রয়ে সয়ে কবুল বলার পর ইয়াসিরও ধীর গতিতে কবুল বলে ফেলে। থমথমে পরিবেশে আলহামদুলিল্লাহ বলে ইলহাম আর ইশান চৌধুরী একবার কোলাকুলি করেন। ইশা মেঘনা চাইতে বৃষ্টি পেয়েও চুপচাপ কান্না করছে। ইয়াসির একপলক নিজের পাশে নিজের বউয়ের মুখখানা দেখার প্রয়াস চালায় তবে লাভ হয় না। ইশা মাথা এমন নিচু করেছে ইয়াসির শুধু একপাশ দেখছে তাও ছোট ছোট চুলগুলোর জন্য গালটাও দেখা যাচ্ছে না। ইয়াসির ফের বিরক্তিতে দম ছেড়ে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। তখনই ইশার পাশে ওর মা আর জেঠীমা বসে বলতে থাকে,,যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে এখন কান্না থামা।

ইশাকে হালকা গোলাপী রাঙা একটা শাড়ী পড়িয়ে ইয়াসিরে মা আর ইশার মা নিয়ে যায় ইয়াসিরের রুমে। এদিকে ইশার হৃৎপিণ্ডের হাল একদম নাজেহাল। মনে মনে দোয়া দরূদ পড়েও শান্ত করতে পারছে না। কি হচ্ছে এসব৷ ঠিকআছে সে চাই ইয়াসির ভাইকে এটাও ঠিক তাই বলে,,বেডার সাথে প্রেম না করেই জোর করে বিয়ে এই বিয়েতে কি রোমান্স হবে?জীবনেও না হবে শুধু সাপ নেউলের যুদ্ধ হবে আর দর্শক হিসেবে পুরো পরিবার তোহ্ আছেই। ইশার এসব অকল্পিত ভাবনার মাঝেই ইশাকে ইয়াসিরে রুমে বসিয়ে চলে যায়।
ইশার এতক্ষণ শান্ত থাকলেও আর পারছে না বেচারী তোহ্ রোবটের ন্যায় অভিনয় করলো এখন তোহ্ ঝগড়া না করলে মরেই যাবে৷
বেলকনি থেকে ইয়াসির রুমে আসে পড়নে তার শর্ট প্যান্ট আর টিশার্ট। ইয়াসির এসেই একটা ধমক দিয়ে বলে,,,তুই?

ইশা এতক্ষণ নিজের শাড়ীর আঁচল কামড়াচ্ছিল ইয়াসিরের আওয়াজ পাওয়া মাত্রই। চোখ তুলে তাকায়।ইশাকে শাড়ীতে দেখে ইয়াসির বেচারা একটু হলেও ছোটখাটো ক্রাশ খেয়ে একটু তাকায় তবে সে তাকানো বেশিক্ষণ আর স্থায়ী হয় না। ইশা তেড়ে এসে মাথা উঁচু করে ইয়াসিরে দিকে তাকিয়ে বলে,,এই তোমার জন্য আজকে আমার এই হাল? কি করলে পারলে বুড়ো হয়ে একটা কচি মেয়েকে বিয়ে করতে?আর আমি থাকবো না তোহ্ কে থাকবে বিয়ে কি আরও করেছো নাকি?
ইয়াসির চোখ বড় বড় হয়ে যায় তাকে বুড়ো বলছে। ইয়াসির ঠাস করে ইশার কান ধরে বলে,,,আমি বুড়ো তুই কচি তাই না?কচি হয়ে বুড়োকে বিয়ে করলি কেন?পালাতে পারলি না?
ইশা একঝটকায় ইয়াসিরের হাত ছাড়িয়ে বলে,,নিজেই তো ধেই ধেই করে বিয়ে করতে রাজি হয়েছো। আমি কি বলেছি ভাই আমাকে বিয়ে করো?
ইয়াসির বলে,,তোকে না বিষ টা খাওয়ানোই উচিত ছিল,দোষটা আমার ছিলো তাই তোর মতো পেত্নীকে বাঁচিয়ে নিলাম।

এদিকে বাড়ির সবাই পার্টি করছে। সবাই হাসতে হাসতে বলে,,যাইহোক বিয়েটা ছোটবেলায় ঠিক থাকলেও ইয়াসিরকে মানানো যাচ্ছিল না। সুযোগ বুঝে কাজটা হয়েই গেলো। ইশান চৌধুরী নিজের ভাইের দিকে তাকিয়ে বলে,,ভাই বিষের বদলে কি এনেছিলে?
ইলহাম চৌধুরী খেতে খেতে জবাব দেন,,ঐটা পানি ছিল আর কি আনবো?
আয়ান বলে,,জেঠু তুমি পারোও বটে আমি ভাবি নি আমার এই আইডিয়াটা সবাই এত ভালো করে ফলাবে।
তখন ইলহাম চৌধুরী বলে,,তোমরা ভুল ধারণায় আছো। আর আয়ান তোর প্লান তোর ভাই সবই জেনে গিয়েছে। বিয়ের আগ মূহুর্তে ইয়াসির সব আমাকে বলেছে। আর এটাও বলেছে,,এসবে সত্যিই মানসম্মান যাবে এর জন্যই সে বিয়েটা করছে।

আয়ান কেশে উঠে বলে,,রাজনীতি ছাড়ানো তোমার কথা ছিল জেঠু।
ইলহাম চৌধুরী হাসত হাসতে বলেন,,সবটাই পরিপূর্ণ এবার ওদের মিল হলেই হলো নয়ত সাপ নেউলের যুদ্ধ বাকিটা জনম দেখতে দেখতে পার করতে হবে।
সবাই আরেকদফা হেসে খেতে শুরু করে।
এদিকে ঝগড়া শেষে ইশা ঘুরে বিছানার দিকে যেতে যেতে বলে,,এখন তোহ্ তোমার বউ হয়েই গিয়েছি,, যাই হোক তুই তুকারি বাদ দিয়ে পা টিপে দাও তোহ্ জামাই আর মাথাটাও ভীষণ ধরেছে এদিকে আসো জামাই বউয়ের সেবা করো আসো আসো,,!”
ইয়াসির যেন আকাশ থেকে পড়লো বলে কি এই মেয়ে। ইয়াসিরের মেজাজ যায় বিগড়ে ইয়াসির ধেয়ে এসে ইশাকে বলে,,মাথা থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত সবই টিপে দিচ্ছি। বাসর রাতে বাসর কমপ্লিট করে নিই আগে।
ইশা তোহ্ এতক্ষণ আরামে বিছানায় শুয়ে ছিল ইয়াসিরের কথা শুনে একলাফে বসে বলে,,,,কিসব বলছো লজ্জা সরম নেই নাকি আমি তোমার,,

ইয়াসির ইশার মুখের কাছে চলে এসে বলে,,বউ বউ আমার এখন বলেন বউ কি কি করতে হবে?
ইশা একটা ঢোক গিলে বলে,,দূরে যাও দূরে যাও
ইশার হাফভাব দেখে ইয়াসির মজা নিতে ইশার আরেকটু কাছে যেতেই ইশা ইয়াসিরকে এক ধাক্কা মেরে সোজা ফ্লোরে ফেলে দেয়। আর ইয়াসির নিচে পড়ে মাগো বলে চিৎকার করে উঠে। ইশা উঁকি মেরে ইয়াসিরকে দেখতে গিয়ে দেখে ইয়াসির তার দিকে রেগে তাকিয়ে ইশা একলাফে বিছানা থেকে নেমে বলে,,আ,ম,,ম,,ম,, ভা,,ই,,য়া,,স,,রি
ইয়াসির দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে,,তবে রে তোর সরি নিকুচি মারি পেত্নীর বাচ্চা আজকে তোকে কে বাঁচাবে
এই বলে ইয়াসির ইশাকে ধরতে ছুট লাগায়। ইশা বিছানার এপাশে তোহ্ ইয়াসির আরেকপাশে। ইশা বার বার বলছে,,ভাইয়া বুঝি নাই সরি ভাইয়া আমি ইচ্ছে করে মারি নাই জামাই সরি জামাই।

ইয়াসিরও বলছে,,তোর সরি তোর কাছ রাখ আজকে তরে শ্মশানে না পাঠালে আমিও ইয়াসির চৌধুরী ওরফে ইশার জামাই না
ইশা বলে,, মুখ ভেঙিয়ে বলে ইশশ আমার জামাই
ইয়াসির বলে দাঁড়া জামাই না কি দেখাচ্ছি বলে,,ইয়াসির একদৌড়ে পেছন থেকে ইশার শাড়ীর আঁচল ধরে টানতেই ইশা চিৎকার করতে থাকে। সবাই হুমড়ি খেয়ে দরজা ধাক্কাতে থাকে এসব দেখে ইয়াসিরও ইশাকে ছেড়ে দিলে। ইশা একদৌড়ে দরজা খুলে ইযানকে সামনে দেখে বলে,,ভাইয়া আমাকে বাঁচাও
সবাই ইয়াসিরের দিকে তাকিয়ে ইয়াসির বেচারা কি করবে সেও দৌড়ে আয়ানকে ধরে বলে,,ভাই আমাকে বাঁচা আমি এই পেত্নীর সাথে থাকবো না। আমাকে এক ধাক্কায় বিছানা থেকে নিচে ফেলে দিয়েছে।

রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ৬

ইশা চোখমুখ মুছে বলে,,কেন ফেলেছি ভাইয়া জিজ্ঞেস করো?
আয়ান প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে ইয়াসিরে দিকে তাকাতেই ইয়াসির দমে যায়। কি বলবে এখন। এই মেয়ের লজ্জা না থাকলেও তার তোহ্ আছে। সে তোহ্ বড়। ইশা তখন আরও সুযোগ পেয়ে বলে,,বলো বলো কেন ফেলেছি বলো?

রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ৮