রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ৯
আশু
ইয়াসিরের কোলে এখনো ইশা থম মেরে আছে। মোচড়ামোচড়ি করেও লাভ হচ্ছে না। ইশা বার বার বলছে,,”মাথাটা তোমার গেল নাকি?ঝাল তোহ্ বেশি দেয়নি এমন পাগলামো করছো কেন?”
ইয়াসির নির্বিকার সামনের দিকে এগোচ্ছে।
এদিকে বাসার সবাই মিলে আস্তেধীরে ওদের পিছু নিচ্ছে। সবার সামনে ইযান। ইযান একটু সামনে এগিয়ে ঘুরে বলে,,”বড় ভাইয়ের রোমান্স দেখলে কি পাপ হবে দাদুন?”
এমন সিরিয়াস সময়ে ইযানের একথা শুনে সোহানা বেগম বলে,,,,”একটু আধটুতে সমস্যা নেই সামনে যা নয়ত আমার ঝাটার বারি থেকে তরে কেউ বাঁচাইতে পারতো না। ”
ইযান এক ঢোক গিলে সামনে যেতে থাকে তারপর দরজায় কাত করে নিজের মাথা রাখে, ইযানের উপর ওর দাদী নিজের মাথা বের করে৷ পেছন থেকে বাকিরা দাঁড়িয়ে ভাবছে মেয়েকে মারতেই নিয়ে গেলো নাকি এদিকে দাদী নাতীর হাল দেখে মনে হচ্ছে রোমান্স হবে আদোও কি তাই নাকি মেয়েটাকে উত্তম মধ্যম দিবে ইয়াসির কে জানে।
এদিকে ইয়াসির ইশাকে নিয়ে সোজা ওয়াসরুমের বার্থটবে ফেলে বলে,,”ওফসস্ এবার বেশ আদর হয়েছে ”
ইশা চিৎকার দিয়ে বলে,,”এই শীতের মধ্যে তুমি আমায় ঠান্না পানিতে চুবালে কেন বুড়ো বেডা ”
“খবরদার একদম বুড়ো বলবি না, তোর বিয়ে করা জামাই আমি আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলবি ”
ইশা দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে,,”তা তোমার সম্মানটা কোথায়? যে আমি দেব সেটা”,,বলতে বলতে বেচারীর পা পিছলে পড়তে গিয়ে ইয়াসিরে শার্ট খামচে ধরে আর আর ইয়াসিরও ইশাকে বাঁচাতে ইশার কোমড়ে হাত রেখে নিজের দিকে টেনে আনে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইশা ঝটপট বলে,,,”রোমান্স করার উদ্দেশ্যে আছে নাকি?”
ব্যাস ইয়াসির ঠাস করে ইশাকে ছেড়ে বলে,,”ছিহ্ তাও তোর মতো পেত্নীর সাথে জীবনেও না, প্রয়োজনে চিরকুমার থাকবে সন্যাসী হবো তবুও তোর সাথে না না এ হবে না বইন ”
ইশা মুখ ভেঙিয়ে বলে,,”মনে থাকে যেন”
ইয়াসির নিজের শরীর ঝারতে ঝারতে বলে,,”অবশ্যই বইন”
ইশা রেগে বলে,,”আরেকবার বইন বললে তোমার দাঁতগুলো সব টেনে বার করব মি.অভদ্র জামাই”
ইয়াসরি বেরুতে বেরুতে আবারও চিল্লয়ে বলে,,”দেখা যাবে বইন”
ইশা কটমট করে বেরিয়ে আসতে নেয়। অপরদিকে হেলানো দরজাটা খুলতে গেলেই ইযান সোজা মুখ থুবরে পরে ইয়াসিরের পেট বরাবর। ইয়াসির ভ্রুকুচকে তাকাতেই। ইযান দাঁড়িয়ে থতমত খেয়ে বলে,,”এই ডাকতে এসেছিলাম ভাইয়া,,ভাবি কোথায় ভাইয়া??”
বিকাল তিনটা রাস্তার পাশ দিয়ে রুমি হাঁটছে আর ভাবছে,, অনেক হয়েছে আর না আজকে যাবোই থাকুক না ঐ বেডা জম তাতে আমার কি আমি কাউকে কি ভয় পায় নাকি। আমার হিসাবই মিলে না যার বোন এমন মাথামোটা তার ভাই এমন জমের হাড়ি হলো কীভাবে? নিশ্চিত ইশা ওর ভাইকে কুড়িয়ে এনেছে নয়ত। ভাই এক বোন আরেক ধ্যাৎ আমার কি, আমার বান্ধবী ঠিক তোহ্ সব ক্লিয়ার।
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আচার খাচ্ছিল ইশা হুট করে রুমিকে আসতে দেখে। বেচারী আচার ফেলে দৌড় লাগায় একদম সোজা রুমিকে আঁকড়ে ধরে দু’বান্ধবী মিছে মিছে কান্না করতে শুরু করে মোটামোটি পনেরো দিন হলো দেখা নেই তাদের।
ইশা রুমির চোখ মুছে দিচ্ছে আর ইশা রুমির চোখ মুছে দিয়ে একসাথে দু’বান্ধবী বলে উঠে,,,,
মিস ইউ শাঁকচুন্নি,
মিস ইউ পুঁটিমাছ
ইযান হা করে দেখছে, যে তার বোনের মতো মাথামেটা টাইপের আরো একজন পৃথিবীতে এডজাস্ট করে।
ইযানকে দেখে ইশা বলে,,”ভাইয়া ও আমার জান, প্রাণ, কলিজা, লিভার, ফুসফুস, কিডনির একমাত্র বান্ধবী।”
ইযান থ মেরে দাঁড়িয়ে ছিল ইশার কথা শোনামাত্র বেচারা নড়েচড়ে বলে,,”এত কম বললি কেন বইন পুরো বডির বান্ধবী বললেই পারতি। ”
ইশা বলে,,,,”আরেকদিন বলবো ভাইয়া আজকে এতটুকুই থাক”
ইযানকে দেখে রুমি সালাম দিয়ে বলে,,,”কেমন আছেন ভাইয়া?”
ইযান একপলক তাকায় রুমির পাণে,,মেয়েটা যে তার বোনের কপি চেহারাতেও যেন ফুটে উঠেছে এ কেমন লীলাখেলা ইযান শকড্ হয়ে বলে,,”জ্বি জ্বি ভালো,,তুমি ভালো তোহ্?”
তখনই আয়ান শর্ট প্যান্ট আর গলায় তোয়ালে নিয়ে চিল্লাতে চিল্লাতে আসে,, “মা আমার কফি?কতক্ষণ” আর,,বলতে বলতে নিচে রুমির দিকে চোখ যায় আয়ানের। তবে আয়ান নির্বিকার এটিটিউডের সাথে নিজের মাকে আরেকেদফা কফি দিতে বলে নিজের রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। বেচারা একটু লজ্জা পেয়েছে যার দরুন রুমে গিয়ে নিজের গালে হাত রেখে বলে,,ইসস্ একটা মেয়ের সামনে এভাবে ছিহ্ আয়ান ছিহ্।
আয়ানের ভাবনার মাঝেই ফোনে নোটিফিকেশন আসলে আয়ান ভ্রুকুচকে কিছুক্ষণ তা পর্যবেক্ষণ করে।
এদিকে রুমির সাথে গোটা পনেরোদিনের কাহিনী শেষ করে নতুন নতুন বাদঁড়ামীর আইডিয়া নিয়ে বান্ধবীকে বিদায় জানানের জন্য উদ্ধত হয়। আর আয়ান সে মুহূর্তে বের হচ্ছিল। আয়ানকে দেখে ইশা দৌড়ে গিয়ে বলে,,”ভাইয়া রিকোয়েস্ট আছে”
আয়ান বলে,,”তাড়াতাড়ি বল আমাকে যেতে হবে”
ইশা বলে,,,”সামনে বখাটে ছেলেদের পাশ কাটিয়ে বহু কষ্টে আমার বান্ধবী এখানে এসেছে”
আয়ান বলে,,,তোহ্?”
ইশা আয়ানের হাত ধরে বলে,,,”তোহ্ তুমি এখন বাইরে যাচ্ছো তাই না,,আমার বান্ধবীকে ওর বাসায় দিয়ে আসো। নয়ত একটু আগের ঘটনা তোমার অভদ্র বড় ভাইকে বলবো সারাদিন তোমার মজা উড়াবে কেমন লাগবে বলো!!”
আয়ান রেগে তাকায় ইশার দিকে। ইশা বলে,,চোখ রাঙিও না আমি ভয় পাচ্ছি না হাহ্ ”
এদিকে রুমি ওর মার সাথে ফোনে কথা বলা শেষ করে ইশাকে বলে,,আমি যাই তাহলে”
ইশা বলে,, দাঁড়া ভাইয়া নিয়ে যাবে তোকে”
রুমি তোহ্ ঢোক গিলে বলে,,”না না আমি একলাই”
কথা বাকিটুকু শেষ হওয়ার আগেই আয়ান বলে,,”স্রেফ দু’মিনিট তাড়াতাড়ি আসতে বল”।এই বলে আয়ান গটগট করে বেরিয়ে যায়।
রুমি ইশার পিঠে ধারাম করে এক ঘা বসিয়ে বলে,,,”জমের কবলে আমাকে ফেললি কেন শাঁকচুন্নি।” ইশাও এক ঘা বসিয়ে বলে,,”সেফটি পুঁটিমাছের বাচ্চা আমার ভাই থাকলে তোর চিন্তা নাই সেই ফাইট জানে যা যাহ্”
রুমিকে আয়ানের বাইকে উঠিয়ে ইশা কতগুলো ফ্লাইং কিস ছুড়ে মারে। এদিকে বেচারী রুমি আয়ানের কাঁধে না চাইতেও হাত রেখে ইশার দিকে কটমট করে তাকিয়ে।
একটু সামনে যেতেই রুমি বলে,,”উমম্ ভাইয়া আমাকে নামিয়ে দিতে পারেন সমস্যা নেই।” বলার সাথে সাথে আয়ান ব্রেক কষলে রুমি আয়ানের পিঠে হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
আয়ান বলে,,নামো ”
রুমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকায় আয়ানের দিকে। আয়ান আবারও হুঙ্কার ছেড়ে বলে,,কি হলে নামো?”
রুমি এবার ধড়ফড়িয়ে নামলে আয়ান একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে চলে যায়।
রুমি মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে বলে,,বেডা কি জল্লাদ? কীভাবে একটা মেয়েকে মাঝরাস্তায় নামিয়ে দিলো একটা অসভ্য লোক”
রাত দু’টোর দিকে ইয়াসির বাড়ি ফিরে। যদিও ঝামেলা কিছুটা মিটেছে তবুও বেচারা সব সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে। মেজাজ পুরো ডাউন তার উপর বউয়ের অত্যাচার তোহ্ আছেই। ইয়াসির রুমে লাইট অন করা মাত্রই দেখতে পায় ইশা গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। ক্লান্ত শরীরে মাথা ঝিমিঝিমটা যেন উড়ে গেল নিজের বউয়ের মুখখানা দেখে। ইয়াসির এগিয়ে ইশার শরীরে কম্বলটা দিয়ে আরো ভালো করে মুড়িয়ে দেয়।
একটুপর ইয়াসির ফ্রেস হয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরিয়ে মুখে নেওয়া মাত্রই হুট করে ইশা এসে টান মেরে সেটা নিয়ে পেছনের দিকে রেখে রাগি চোখে তাকায় ইয়াসিরের দিকে। ইয়াসির নির্বিকার বলে,,”ওটা দে”
ইশা বলে,,তুমি এসব খাও?কবে থেকে?”
ইয়াসির রেগে কটমট করে বলে,,তুই দিবি?তোকে কেন কৈফিয়ত দিবো আমি?বলেছি না তোর যা ইচ্ছা কর আমার ব্যাপারে আসবি না”
ইশা তখনো রাগ চেপে বলে,,কেন আসবো না তোমার বউ হই অবশ্যই আসবো। আর তুমি এসব ছাইপাঁশ খেতে পারবে না। আগে যা করেছো করেছো”
“দেখ ইশা মেজাজ খারাপ আছে দে বলছি নয়ত”
ইশা বলে,,কি করতে নয়ত কি করবে তুমি??”এই বলে সিগারেট নিচে ফেলে দেয় ইশা।
রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ৮
আর ইয়াসিরও নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে ঠাস করে ইশার গাল চড় মেরে সাথে সাথে রুমে চলে আসে।
এদিকে ইশা নিজের গাল রেখে অবাক পাণে তাকায় ইয়াসিরের দিকে ইশা ভাবেওনি এরকম কিছু হবে। কখন যে চোখ পানি চলে এসেছে ইশার খেয়াল নেই। আস্তেধীরে ইশা ফ্লোরে বসে পড়ে আর তার চোখ বেয়ে অঝোরে জল পড়তে থাকে। কান্নার তোপ যেন বাড়ছেই তবে কোনো শব্দ নেই এই কেমন নিরব কান্না এ কেমন কষ্ট ইশার জানা নেই।
ইয়াসির রুমে এসে শুয়ে পড়েছে। ইশার কথা মাথা থেকে ঝেরে বিছানায় গা হেলিয়ে কখন ঘুমিয়েছে জানা নেই তার।