রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৯ (৩)
সিমরান মিমি
মাগরিবের আজান দিয়েছে প্রায় দশ মিনিট গত হয়েছে।ঘড়ির কাঁটায় মাত্র ছয়টা।এইতো আর মিনিট বিশেকের মধ্যে তাকে উপস্থিত হতে হবে স্টুডেন্টের বাসায়।ঘড়ির কাঁটার সাথে মিলিয়ে ঠিক সাড়ে ছয়টা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত এই দুই ঘন্টা পড়াতে হবে।যদি মিনিটের কাঁটায় সামান্য ও কমে তাহলে গার্ডিয়ানের মুখের দিকে তাকানো যায় না।এ যেন কালবৈশাখীর ঘন মেঘের আস্তরণ।একটা দিন কোনোরকমে বন্ধ গেলে তো কোনো কথাই নেই।জায়গা টা খুব একটা পছন্দ নয় স্পর্শীর।যে গার্ডিয়ান রা টিউটর দের তুচ্ছ করে তাদের দিকে ফিরে ও তাকায় না স্পর্শী।শুধুমাত্র স্টুডেন্ট দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে পড়াচ্ছে।ছেলেমেয়ে দুটো’র আর কিছুদিন পড়েই এসএসসি পরিক্ষা।ইংরেজি পড়াচ্ছে সে। আর তাছাড়াও এই টিউশন টা থেকে মাস শেষে সাত হাজার টাকা পায়।এই মুহুর্তে অন্য কোনো টিউশন না মখুঁজেই হুট করে এটা ছাড়া বোকামি হয়ে যাবে।
ত্রস্ত পায়ে বাস থেকে নেমে এক দোকানের সামনে গেল।পাশেই ছোট খাটো এক খাবার হোটেল।টেবিল থেকে পানি নিয়ে ঢগঢগ করে কয়েক ঢোগ গিললো।
রাত নয়টা।ক্লান্ত শরীরে আলতো হাতে গেটের সিটকিনি নাড়াতেই ভেতর থেকে মায়ের “আসছি” আওয়াজ এলো।গেট খুলতেই মায়ের অমন থমথমে রাগী মুখের সামনে পড়ে কিছুটা অবাক হয়ে গেল।আলতো স্বরে জিজ্ঞেস করলো-
“এতো তাড়াতাড়ি এলে যে।ক্লায়েন্ট নেই।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
কোনো রুপ সাড়া এলো না পিপাসা বেগমের মুখ দিয়ে।সে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে আছে স্পর্শীর দিকে।কিছু একটা যে হয়েছে সেটা আঁচ করতে পেরেই পাশ কাটিয়ে রুমে চলে এলো।আর্শি খাটের এক কোনো গুটিশুটি পাকিয়ে শুয়ে আছে।তার কাছে গিয়ে পিঠে হাত দিতেই অশ্রুসিক্ত চোখ নিয়ে উঠে বসলো।
“বাড়িতে কি কিছু হয়েছে?”-প্রশ্ন করলো স্পর্শী।মুহুর্তে’ই পেছন থেকে চেঁচিয়ে উঠলো পিপাসা।হাতের ফোন টাকে ছুড়ে স্পর্শীর সামনে দিয়ে বললো,
” তোকে গুন্ডামি করার জন্য পড়াচ্ছি আমি? কি শুরু করছিস এসব।আমাকে কি শান্তিতে একটু থাকতে দিবি না।তোর জন্য পাড়ায় মুখ দেখাতে পারি না।ছিঃ ছিঃ ছিঃ! আমার মান সম্মানের দিকে একটুও তাকালি না। আশে পাশের সবাই যা-তা বলে অপমান করছে আমায়।বাড়ি ওয়ালা এক সপ্তাহের মধ্যে বাড়ি ছাড়তে বলছে।এখন শান্তি হইছে তোর।খুশি হইছিস তো তুই।”
খিদেয় পেট টা মোচড় দিয়ে উঠলো স্পর্শীর।দুপা সামনে এগিয়ে খাটের উপর পড়ে থাকা ফোন টাকে হাতে তুললো।স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠলো।পিয়াস কে মারার সম্পুর্ন ভিডিও টা কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় আপ্লোড করে দিয়েছে।এতো এতো শেয়ার হয়েছে বিষয়টা ভাবতেই চিন্তায় পড়ে গেল।মায়ের মুখের উপর কোনো টু শব্দ না করেই জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে গেল। এপাশ থেকে অজস্র চিৎকার চেঁচামেচি করে দামামা বাধিয়ে ফেলছে মা।স্পর্শী সহ্য করলো।কেননা এখন এইসব কথায় উত্তর দিলে আর্শির ঘটনাটা ও বের হয়ে যাবে।শেষে ভয়ের চোটে আর্শির লেখাপড়া টাই বন্ধ করে দিবে।স্পর্শীর সাথে না পাড়লেও যে আর্শির উপর সমস্ত চোট দেখাতে সফল হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত সে।
এই মুহুর্তে চুপ থাকা শ্রেয় বলেই নিজেকে সামলে নিলো। গোসল সেরে বাইরে বের হয়ে রান্নাঘরে গেল।মায়ের রেডিও এখনো থামেনি।থামবেও না যতক্ষণ পর্যন্ত তার বোন ফোন দেয়।স্পর্শী এখন খুব করে চাইছে যেন খালামনি ফোন দেয়। তাহলে এ রাত কথা বলতে বলতে কেটে যাবে।এইসব বিষয় আর মনে থাকবে না।রান্নাঘর থেকে সকালের রান্না করা খিচুড়ি প্লেটে নিয়ে রুমের দিকে অগ্রসর হলো। বিছানায় আরামসে বসে খেতে আরম্ভ করলো।দু লোকমা মুখে নিতেই ফোনের টোন বেজে উঠলো।টেবিলের উপর থেকে ফোন নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই চোখ দুটো ছোট ছোট করে ফেললো।অচেনা নাম্বার।কিছু একটা ভেবে রিসিভড করে কানে নিতেই ওপাশ থেকে ঝাঁঝালো পুরুষালি কন্ঠে বলে উঠলো,
“এই মেয়ে একদম আমার কথা না শেষ হওয়া পর্যন্ত ফোন কাটবে না।”
নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে একটু নিশ্চিত হলো স্পর্শী।তারপর পরবর্তী লোকমা মুখে দিয়ে চিবোতে চিবোতে বললো,
“বলুন।শুনছি আমি।”
নিজের রাগকে কন্ট্রোল করলো পরশ।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“তোমার মিনিমাম লজ্জাটুকুও নেই বুঝলাম।আত্মসম্মান তো দুরের কথা।তাই বলে অন্যদের থাকবে না এটা ভাবা তো ঠিক না।কোন সাহসে তুমি ওই মারামারির ভিডিও আপ্লোড করেছো সোশ্যাল মিডিয়ায়।তোমার কোনো ধারনা আছে ” বিষয়টা কতটা লজ্জাজনক পিয়াশের কাছে।”
থেমে,
দেখো, তোমাকে লাস্ট বারের মতো সাবধান করছি।নিজেকে এবং তোমার বোনকে আমার ভাইয়ের থেকে দূরে রাখো।সং যত হও।নইলে হিতে বিপরীত হবে।একজন মানুষ বাইরে থেকে যতটা স্নিগ্ধ হও ভেতরে কিন্তু তার থেকে শতভাগ হিংস্র হ্য।সো বি কেয়ারফুল।আমার হিংস্রতার মুখোমুখি হতে যেও না।আজীবন পস্তাবে।আর আমিও চাই না,তোমার মতো একটা অসভ্য মেয়ের সাথে জড়িয়ে নিজের ক্যারিয়ারে দাগ লাগাই।মাথায় রেখো,এটাই লাস্ট বার।নইলে তোমার আর তোমার বোনের এমন অবস্থা করবো যে শরীরের মাংসের টুকরো গুলোও পরিবারের কেউ খুঁজে পাবে না।কাক-শকুনে ছিড়ে ছিড়ে খাবে।’
খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল স্পর্শীর।এই মুহুর্তে ভীষণ অশ্রাব্য কিছু গালি এসেছে মুখে।কিন্তু পরক্ষণেই আর্শির স্নিগ্ধ ভয়কাতুরে ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলে নিলো।কাউকে বিশ্বাস নেই তার।সব পুরুষ এক একটা জানোয়ারের বহিঃপ্রকাশ। নিজেকে ওই জানোয়ার থেকে রক্ষা করতে পারলেও বোন টা যে ভীষণ ভীতু।আলতো কন্ঠে বললো,
“দেখুন,ভিডিও গুলো ধারণ না আমি করেছি,আর নাতো সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়েছি। এটা হয়তো আশেপাশের কোনো স্টুডেন্ট করেছে।
থেমে,
তবে যেই করুক ভালোই করেছে।পুরো বিশ্বের মেয়েরা জানুক কিভাবে জানোয়ার দের লাত্থাতে লাত্থাতে ঠিক করতে হয়।আমার তো ভুল হয়েছে।ওর কাজ অনুযায়ী ওকে আরো মারা উচিত ছিলো।গলায় রশি পেঁচিয়ে ওই বটগাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখা উচিত ছিলো।তাহলে বাকিদের ও শিক্ষা হতো।আর হ্যাঁ, দ্বিতীয়বার আর আমার ফোনে ফোন দেওয়ার মতো দুঃসাহস দেখাবেন না।যার তার সাথে কথা বলি না আমি।পরের বার আপনি কেন,আপনার ভাই মরলেও যেন আমার ফোনে আর ফোন না আসে।
বলেই ফোন কেটে দিলো।রাগের বশে পাশের টেবিল টাকে উলটে ফেলে দিলো পরশ।কত্ত বড় সাহস এই মেয়ের।ও কি জানে ও কার সাথে কথা বলছে।কিভাবে পারছে এতো চোট নিয়ে কথা বলতে?সারা শরীরের রক্ত টগবগ টগবগ করে ফুটছে। সবাই পরশ শিকদারকে ভয় পায়।ও কেন পায় না।ওকে ভয় পেতেই হবে।যে করেই হোক ওকে ভয় পেতেই হবে।একটা এতটুকু মেয়ে কিনা পরশ শিকদারকে পথে ঘাটে অপমান করে।
ভাবনার মধ্যেই ফোন বেজে উঠলো। রিসিভড করতেই ওপাশ থেকে পিয়াশ অসহায় কন্ঠে বললো,
ভাই,সবাই আমায় নিয়ে হাসাহাসি করছে ।
শান্ত হলো পরশ।ঠান্ডা হয়ে বললো,
” চিন্তা করিস না।আমি এক্ষুণি সাইবারে কথা বলে ভিডিও টা ডিলিট করার চেষ্টা করছি।ডোন্ট ওয়ারি।সামনে এক্সাম।মন দিয়ে পড়তে থাক।বাদ বাকি কিছুতে ফোকাস করার কোনো প্রয়োজন নেই।বাকিটা আমি সামলাচ্ছি।
ফোন কেটে গোসলে ঢুকলো পরশ।একটানা দীর্ঘ সময় পর বের হলো সেখান থেকে।মাথাটা ভীষণ ব্যাথা করছে।দুটো ঘুমের ওষুধ খেয়ে ত্রস্ত পায়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
রাত সাড়ে চারটা।একটানা অনবরত ফোনের রিংটোনে চোখ কুঁচকে তাকালো পরশ।বিছানা হাতরে ফোন কানে নিতেই ওপাশ থেকে এক অপরিচিত ভদ্রলোক বলে উঠলো,
রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৯ (২)
“আপনি কি পরশ শিকদার বলছেন?দেখুন আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে কথাটা বলতে বাধ্য হচ্ছি।আপনি ভেঙে পড়বেন না প্লিজ।নিজেকে সামলান।আর যতদ্রুত সম্ভব জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে আসুন।আপনার ছোট ভাই মিঃ পিয়াশ শিকদার সুইসাইড করেছেন।তিনি সম্ভবত ফ্যানের সাথে গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।তার লাশটা আমরা হোস্টেল রুমের ফ্লোরে ভাঙা ফ্যানের সাথে রশি পেঁচানো অবস্থায় পেয়েছি।”