রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ১৭
সিমরান মিমি
মধ্যাকাশ যখন অন্ধকারের ছায়া নিয়ে খেলতে ব্যস্ত ঠিক সেই সময়টাতেই আলোর রেশ দেখা দিলো কিছু অপরিপূর্ণ জীবনে।বোনের গায়ের সাথে লেপ্টে ছিলো আর্শি। পিরোজপুর নামটা শুনতেই দুম করে দাঁড়ালো।চোখ তার চঞ্চল হরিণের ন্যায় সতর্ক হলো। কান হলো সজাগ।স্পর্শীও অনেক টা চমকে গেছে।কিন্তু তার সেই ভংগিমা টা প্রকাশ করলো না।বরং পূর্বের চেয়েও অগাধ আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“বাবা মারা যাবার পরে কি সবাই তোমায় অবজ্ঞা, অবহেলা করেছে;যার দরূন একা থাকছো আমাদের নিয়ে?”
ঠোঁট ভেঙে এলো পিপাসার।খুব কি দরকার ছিলো মেয়েদের এমন ভয়ঙ্কর কথা বলার।আজ এতো বছর ধরে এমন মিথ্যের বিচরণ করার।নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,
“তোদের বাবা বেঁচে আছেন এখনো।আমিই মিথ্যে বলেছি যাতে তোরা বারবার না জিজ্ঞেস করিস।”
বাকহারা হয়ে গেল স্পর্শী।দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে বসে রইলো।কান্নার শব্দ গুলো গলায় দলা পাকালেও চোখ যে দূর্নিবার।সে কি করে অশ্রু কে দমন করবে?অস্পষ্ট স্বরে কান্না করে দিলো স্পর্শী। মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,
কেন বলেছো এমন?তোমার বিবেকে একবার ও বাধলো না এতো বড় একটা মিথ্যে কথা বলতে?আজ কতগুলো বছর আমাদের এতিম করে রেখেছো।কি এমন হয়েছিলো যে এমন করতে হলো?”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
পিপাসা নিচু চাইলো।নিজেকে সাজিয়ে নিলো চুপ করে।এরপর মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমি আমার নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।হয়তো তোদের সেটা পছন্দ নাও হতে পারে।কিন্তু আমার দিক দিয়ে আমি এখনো ঠিক।”
থেমে শান্ত কন্ঠে বললো,
তোর নানা বাড়ি বগুড়া।সেখানেই মানুষ আমি।মাত্র ম্যাট্রিক দিয়েছি।এরইমধ্যে এলাকা জয় জয় কার হয়ে উঠলো বিয়ের খবরে।পিরোজপুরের এমপি শামসুল সরদার নাকি বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।আমি অবাক হয়ে গেছিলাম শুনে।ভাবলাম সে কি করে আমায় দেখলো।পরে জেনেছি কিসব কাজে এসেছিলেন আমাদের বগুড়ায়।সে সময়’ই আমায় দেখে পছন্দ করেছেন।হাহ!প্রতিবেশীরা যেন হিংসায় পুড়ছে এমপির সাথে আমার বিয়ে বলে।মা-বাবা তো এক পায়ে রাজি।প্রথম প্রথম বেশ কান্নাকাটি করলেও পড়ে যখন পত্রিকায় তার ছবি দেখলাম, তখন আমার ও জানি কি হয়ে গেল।তোর বাবা তোর মতোই ছিলো স্পর্শী।যেমনি ফরসা,তেমনি শরীরের গড়ণ।সারা শরীর ধ্যান দিয়ে খুঁজলেও একটু খুঁত পাবি না।যেমন লম্বা,তেমনি লোহার মতো প্রশস্ত তার শরীর।মুগ্ধ হয়ে চেয়েছিলাম ছবির দিকে।যে মেয়ে আমি বিয়ের কথা শুনে দু দিন না খেয়ে ছিলাম সেই মেয়েই সেঁধে গিয়ে মায়ের কাছে পছন্দের বিয়ের শাড়ি বাছাই করে দিয়েছিলাম।হয়ে গেল বিয়ে। চলে এলাম শশুড় বাড়ি।
সব কিছু ভালোই চলছিলো প্রথম ছয় মাস।এতটা সম্মান,এতো ভালোবাসা, এতো প্রাচুর্যে সমৃদ্ধ জীবনযাপন যে আমি গলে গেলাম।লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে সংসারে মন দিলাম।হুট করে একদিন বুঝতে পারলাম তুই আসছিস।আর সেটাও আরো তিন মাস আগে থেকে।অল্প বয়স ছিলো বুঝে উঠতে পারি নি।একটানা বাপের বাড়ি থাকতাম চার মাস,শশুর বাড়ি থাকতাম পাঁচ দিন।তোর বাবাই বলেছিলো মায়ে র কাছে থাকো এ সময়।তুই হলি স্বাভাবিক ভাবেই।তোর যখন পনেরো দিন।তখন আবার গেলাম ও বাড়িতে। তখন’ই লোকজন একদম চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলো আমার সুখ।যেই আসে তোকে দেখতে সেই বলে “ভালোই হলো।প্রথম ছেলে,এরপর মেয়ে। একদম সিরিয়ালেই সব ভালো হচ্ছে।”
আমি অবাক হয়ে যাই।বললাম”কি বলেন ফুপু,আমার তো এই একটাই মেয়ে।ছেলে আসবে কোত্থেকে?”
উত্তর শুনে আকাশ ভেঙে পড়লাম।তোর বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী আমি।প্রথম ঘরে একটা ছেলেও আছে সাত বছরের।সেই বউ নাকি কোন লোকের হাত ধরে পালিয়ে গেছে।তাই আমায় বিয়ে করেছে।ছেলেটাও নানা বাড়ি থাকে।বিশ্বাস কর,কলিজাটা দুভাগ হয়ে গেছিলো শুনে।যাকে এতো ভালো বাসলাম।যাকে পেয়ে জীবন ধন্য হলো সেই পুরুষের দ্বিতীয় নারী আমি।তার জীবনে আমার আগেও অন্য আরেক শখের নারী ছিলো।
জানিস তো,পুরুষ তার জীবনের প্রথম নারীকে ভুলতে দ্বিতীয় নারীকে আনে।সহ্য করতে পারলাম না।আর নাতো পারলাম বিশ্বাস করতে।তোর বাবা তখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত।ঘরে ফেরে সেই বারোটা/একটার পর।একরকম নিজেকে একটা সামগ্রী মনে হলো।যেটা তার প্রয়োজন ছিলো বলেই এনে ঘরে সাজিয়ে রেখেছে।তোর বাবা আমার একুশ বছরের বড় ছিলো।আমার যখন সতেরো বছর তখন তার আটত্রিশ ছিলো।কিন্তু দেখে পঁচিশ বছরের থেকে বড় লাগে না।মাকে জিজ্ঞেস করলেই বলতো ”
বয়সে কিচ্ছু হয় না।রাজনীতি করে। একটু আধটু তো বাড়বেই।আর বয়স তো ত্রিশের কোঠা পাড়ায় নি।পুরুষ মানুষ বয়স হলেই সংসার বোঝে।মানিয়ে চলতে পারে।”
থেমে গেল পিপাসা।বললো,”বয়স যাই হোক।কিন্তু তাতে আমার ও তেমন সমস্যা নেই।কিন্তু তাই বলে বিবাহিত কারোর সাথেই বিয়ে দিলো কেন?আমি কি দেখতে খারাপ ছিলাম।রাগারাগি করে চলে এলাম বাপের বাড়ি।বাড়ি এসে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।পরিবারের সবাই’ই জানতো তোর বাবার বিয়ের ব্যাপারে।উনিই নাকি সব বলেছেন।কিন্তু তাতেও তারা কোনো আপত্তি করে নি।করবেই বা কেন?
এমপি জামাই দেখে হাতছাড়া করতে চায়নি।
এবার কোথায় যাবো আমি?বাবা-মায়ের সাথে রাগারাগি করে চলে এলাম আবার তোর বাবার বাড়িতে।সব মানিয়ে নিতে শিখলা ম তোর মুখের দিকে তাকিয়ে।সংসার ও শুরু করলাম মন দিয়ে।কিন্তু ওই যে মনের মধ্যে একটা তিক্ততা ভাব ছিলো ওটা কাটাতে পারি নি কখনো। রাত হলে বুকের ভেতর থেকে চিনচিন করে ব্যাথা উঠতো।যখন বুকে টেনে নিত তখন শ্বাস বন্ধ হয়ে যেত।মনে হতো অন্য আর এক নারী মিশে আছে তার সাথে।আমার ভীষণ কষ্ট হতো।সারাক্ষণ মাথার মধ্যে এক অদ্ভুত যন্ত্রণা বিরাজ করতো।কিন্তু তাও টু শব্দটিও করিনি।কিন্তু তোর যখন তিন বছর তখন হুট করে একদিন তোর বাবা আসলো আমার কাছে।মধ্য রাতে ঘুম থেকে তুলে শান্ত কন্ঠে বললো,
“তৃষ্ণা”
তোর বাবা আমাকে পিপাসা নয় তৃষ্ণা বলে ডাকতো।সেই ডাকগুলোতে মিশে থাকতো এক অপ্রকাশিত ভালোবাসা।যেগুলো বারবার আমাকে কাবু করে দিয়েছে তাকে ছেড়ে আসতে।কিন্তু সেদিনের ডাকে এক নতুন সত্তা খুঁজে পেয়েছিলাম আমি।ডাক শুনে যখন উঠে বসলাম তখন অন্যদিকে তাকিয়ে নিচু কন্ঠে বললো,
“ও আসতে চাইছে।”
কলিজাটা মুহুর্তেই দুভাগ হয়ে গেছিলো।কিন্তু তারপরেও বোঝার ভান ধরে বললাম,”কে?”
উনি বললেন,”স্বপ্না।”
থেমে আবারো বললেন, “যার সাথে গেছিলো সে নাকি এখন অন্য পুরুষে মজেছে।ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে আরো তিনমাস আগে।আমার সাথে দেখা করতে চাইছিলো ক-মাস ধরে।যাই নি।কিন্তু কাল সোভাম কে দেখতে গেছিলাম।ছেলেটার জ্বর।ও বাড়িতেই ছিলো।আমার পা জড়িয়ে হাউমাউ করে কান্না করে বললো,” আমাকে আরেকবার গ্রহণ করো।তুমি বিয়ে করেছো, তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই।আমরা দুজন বোনের মতোই থাকবো মিলেমিশে।”
আমি থমকে গেছিলাম।হৃদয় টা এঁফাড়-ওঁফাড় হয়ে যাচ্ছিলো।হিংসে তে সারা গা ঝলসে যাচ্ছিলো।তার হাতের বাঁধন থেকে ছিটকে নিজেকে সরিয়ে নিলাম।বহু কষ্টে কান্না আটকিয়ে বললাম,
“সে কি আপনাকে ছুঁয়েছিলো?”
হেসে দিয়েছিলেন উনি।এই হাসি যেন বিষ ঢেলে দিয়েছিলো অন্তরে।আমার হাত টা শক্ত করে ধরে বললেন,”তুমি বাচ্চাদের মতো কথা বলছো তৃষ্ণা।সে শুধু আমার কাছে মিনতি করেছিলো।আমি সাথে সাথেই ওখান থেকে চলে এসেছি।আর কিচ্ছু নয়।”
নিজের সম্পুর্ণ অসহায়ত্ব তুলে ধরলাম তার কাছে।জড়িয়ে ধরে কান্না করে বললাম,”আপনি আর যাবেন না ও বাড়িতে।”
শুনেছিলেন তিনি।কিন্তু সেটা শুধুমাত্র আমার সীমানার জন্য জ্ঞাত ছিলো।কিন্তু আমার অলক্ষে তিনি প্রায় প্রতি সপ্তাহে যেতেন।তবে সেই মহিলার জন্য নয়।ছেলের জন্য।প্রতি সপ্তাহে জ্বর,কাঁশি,ঠান্ডা,গলা ব্যাথা,বাবাকে দেখতে চায় এমন অজস্র অজুহাত দেখিয়ে টেনে নিতো ছেলের মুখ দিয়ে বলিয়ে ওই মহিলা।যাতে তাকে একান্তে পায় আর এ বাড়িতে আসার জন্য তোর বাবাকে পটাতে পারে।এসব প্রতিদিন ‘ই কেউ না কেউ আমার কানে দিতো।আর বাড়ি আসতেই শুরু হয়ে যেত ঝামেলা।তার ধারনা ছিলো আমি তার ছেলের সাথে দেখা করতে বাধা দিচ্ছি সৎ ছেলে বলে।অথচ আমি তাকে বারবার বুঝিয়েছি এটা ফাঁদ!
এভাবেই কেটে গেল আরো পাঁচ মাস।এর মধ্যে সোভাম ও আমাদের বাড়িতে এলো।তোর বাবাই ছেলেকে নিয়ে এসেছে ও বাড়িতে যাতে না যেতে হয় সে জন্য।কিন্তু সেটাও কাল হয়ে দাঁড়ালো আমার জন্য।ওই মহিলা দুদিন পর পর বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়তো ছেলের সাথে দেখা করার জন্য।ধীরে ধীরে সেটা প্রতিদিনে রুপান্তর হলো।বাড়ির সবাই আসতে বারন করলেও শুনতো না।ছেলে কাঁদতো মায়ের কাছে থাকবে বলে।ওদিকে তার সাথে দিয়ে দিলেও আবার বাবার কাছে থাকবে বলে কাঁদে।পাছে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে যাবে “এমপি তার প্রাত্তণ স্ত্রীকে ছেলের সাথে দেখা করতে দেয় না।” সেই ভয়ে কেউ ততটাও জোর দিলো না।
মাটি কাঁমড়ে সহ্য করতে লাগলাম আমি।কিন্তু দিনকে দিন সেই সহ্যশক্তি টাও শেষ হয়ে গেল।আমার ফুপু শাশুড়ী একদিন বললেন,”তোর বাবা নাকি আবারো ওকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে গোপনে।এখানে শুধু নাকি আমি যাতে না জানি সেজন্য নাটক করছে।আর এটা নাকি ওই মহিলাই বলেছে।”
নিঃশেষ হয়ে গেলাম আমি।প্রতিদিন সংসারে অশান্তি,মারামারি,ঝামেলায় তোর বাবাও বাড়ি আসতো না সহজে।তিন/চার দিন পর পর একবার আসতো তাও গভীর রাতে।বুঝলাম আমার সহ্যশক্তি শেষ। আর পারবো না।জীবনে আর যাই হোক সতীনের সাথে সংসার করতে পারবো না।চলে গেলাম সে রাতেই।টেবিলের উপর গোটা অক্ষরে লিখে দিয়ে এসেছি কাগজে।
“আমায় খুঁজবেন না।আপনি শুধুমাত্র আপনার প্রথম স্ত্রীকে ভোলার জন্য আমায় ব্যবহার করেছেন।এখন সে ফিরে এসেছে ;তাই আমায় আর মনে পড়বে না।ভালো থাকুন।আমায় আর খোঁজার চেষ্টাও করবেন না।এরকম কিছু করলে আপনার মেয়েকে বিষ খাইয়ে নিজেও গলায় দঁড়ি দিবো।”
এরপরেও হয়তো খুঁজেছিলেন বগুড়া থেকে শুরু করে পুরো পিরোজপুরে।কিন্তু পান নি।মা-বাবা ও হয়তো খুঁজেছিলো।কি জানি?খোঁজ নেই নি কারো।হয়তো কারো বিবেচনায় ও আসেনি যে এইটুকু ছোট্ট , ভীতু একটা মেয়ে ঢাকায় যেতে পারে।তারা খুঁজে না পেয়ে হয়তো ভেবেছে কোথাও কোনো ব্রিজ থেকে নদীতে লাফিয়ে পড়েছি।”
এলাম ঢাকায়।তোর বয়স মাত্র সাড়ে তিন।অচেনা শহর কোথায় উঠবো জানা নেই।পৌছেছি সকাল আটটা বাজে।হাতের বালা,দুল,নাকফুল,চেইন যা ছিলো সব খুলে রেখে এসেছিলাম তোর বাবার বাড়িতে।তবে সাড়ে তিন হাজার টাকা নিয়ে এসেছিলাম নগদে।সারা শহর খুঁজতে খুঁজতে সন্ধ্যার দিকে পেলাম বাসা।তখন ভাড়া ছিলো মাত্র আটশো।অগ্রিম দিয়ে উঠে গেলাম।লক্ষ্য ছিলো চাকরি না পাই আগে বাসা রাখি।প্রয়োজনে এক মাস ঘরে থাকবো।ধীরে ধীরে কোনো না কোনো কাজ পাবোই।তবুও বাড়ি ফিরবো না।
হাতে টাকা ছিলো কম।সেটুকু অনেক বাছ বিচার করে খরচ করেছি।তিন বেলার জায়গায় এক বেলা খেয়ে থেকেছি।হাড়ি পাতিল কিচ্ছু ছিলো না।ধীরে ধীরে খুব প্রয়োজনীয় কিছু কিনলাম।তুই কিচ্ছু খেতি না।জোঁকের মতো লেগে থাকতি বূকের সাথে। এভাবে পনেরো দিন যেতে না যেতেই বুঝতে পারলাম আমি আবারো প্রেগন্যান্ট। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিলো।কিন্তু ভেঙে পড়ি নি।ঘুরতে ঘুরতে একটা পার্লারে চাকরি পেলাম।বেতন মাত্র আড়াই হাজার।লেগে পড়লাম।সব শিখলাম। বেতন বাড়লো।এরপর নিজেই ছোট্ট একটা পার্লার খুললাম।এই তো, এ টুকুই।আজ ও আছি টিকে।সামনে জমি কিনবো।বাড়ি তুলবো। এরপর তোর বিয়ে দিবো।
বলেই হেসে দিলো।কিন্তু চোখ ভর্তি তার এক সাগর পরিমান অশ্রু।স্পর্শী আলতো করে মাকে জড়িয়ে ধরলো।বললো,
“তুমি ভুল করেছো মা।বাবা সব কিছু জানিয়েই বিয়ে করতে চেয়েছে তোমায়।কিন্তু তোমার বাবা-মা জানতে দেয় নি।দুই বিয়ের সংসারে এরকম অশান্তি লেগে থাকবে এটাই স্বাভাবিক।এতে বাবার কোনো দোষ নেই।তবে তোমার নিজের সকল অধিকার ছেড়ে দিয়ে ওই মহিলাকে সমস্ত সূযোগ ঢেলে দিয়ে আসা উচিত হয়নি।
থেমে,
আর যদি বাবা সত্যিই ওই মহিলাকে আবারো নিজের করে নেয় সেক্ষেত্রে তিনি সবচেয়ে দোষী এবং অপরাধী।এরকম ব্যক্তিত্বহীন বাবার খোঁজ আমি আজীবনেও নিতে চাই না।
আর্শিও লেপ্টে গেল মায়ের সাথে।চুপ করে তাকিয়ে রইলো মায়ের দিকে। স্পর্শী হুট করেই ভাবনায় নিমজ্জিত হলো।অস্পষ্ট কন্ঠে বললো,
” আব্বু অনেক স্মার্ট ছিলো তাই না মা।”
হেসে দিলো পিপাসা।বললো,
“দেখবি বাবাকে।দাঁড়া,আমি দেখাচ্ছি।”
বাধ সাধলো স্পর্শী।মায়ের পেটে মুখ গুঁজে দিয়ে বললো,
“উহুম!ফটো না।আমি বাস্তবে দেখতে চাই।খুব কাছ থেকে।একটু ছুয়ে।বাবা বাবা গন্ধ নাকে নিয়ে।তবে পরিচয় দিয়ে নয়।একদম অপরিচিতা হিসেবেই দেখতে যাবো তাকে।তবে বিশ্বাস করো, এরপর আর কখনোই তাকে মনে আনবো না।”
লাফিয়ে উঠলো আর্শি।উত্তেজিত হয়ে বললো,
“আমিও একটু বাবা দেখবো।আপুর সাথে যাবো। প্লিজ আম্মু।”
পিপাসা ছোট মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,”তোর বাবা জানেই না যে;তার আরো একটা মেয়ে আছে।
থেমে,
ঠিকাছে, তোরা যেতে চাইলে যেতে পারিস।বড় হয়েছিস,আমি আটকানোর কে?তবে যদি মায়ের কাছে আর ফিরতে মন চায় তাহলে ফিরিস।নইলে সুখে থাকিস।
হেসে দিলো স্পর্শী।মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“ইশশ!ঢং করছো?তুমি জানো আমরা আবার আসবো।তাও ইমোশনাল করতে চাইছো।
পিপাসা ও হেসে দিলো।বললো,
রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ১৬
” ঠিক আছে, তাহলে কবে যাচ্ছো?রান্না করতে তো হবে।
“আজ সন্ধ্যায় যাবো লঞ্চে করে।একদম সকালে পৌছাবো।সারাদিন দেখে আবার সোজা ফিরে আসবো।একটু প্রাণ খুলে দেখে আসবো” পি রো জ পু র।