রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ২০

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ২০
সিমরান মিমি

জনসমাগমে ভরপুর পিরোজপুর সদর।ইতোমধ্যে দু পক্ষের আহত দুই যুবককেই সদর হস্পিটালে ভর্তি করা হয়েছে।স্পর্শী আর্শিকে নিয়ে ভিড়ের বাইরে বের হলো।কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।আর্শি ক্লান্ত চোখে বোনকে বললো,
“আপু,চলো না আমরা অনন্দা দি’র বাড়িতে যাই।এভাবে আর কতক্ষণ হাটতে থাকবো?”
হতাশ চোখে তাকালো স্পর্শী।বললো,
“উহু,ও বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ থাকলে এভাবে হেটে বেড়াতাম নাকি। কবেই যেতাম।”
থেমে কন্ঠকে খাদে নামিয়ে বললো,

“গতবার আসার আগে ওদের বাড়ির পুরোহিত মশাই য়ের সাথে ঝামেলা পাকিয়ে আসছি।”
“এই মেয়ে, ঝামেলা বাজাইয়া দিয়া শান্তি মতো এখন চইলা যাইতেছো।তোমারে ভাই ডাকে। আমার সাথে আসো।”
পেছন থেকে ছুটে এসে এক যুবক বললো।হাটা বন্ধ করে দিয়ে সেদিকে তাকালো।তীর্যক চাহনি নিক্ষেপ করে বললো,
“প্রথমত আমি কোনো ঝামেলা পাকাই নি।ওই দুটো লোকের’ই মাথার স্ক্রু ঢিলা। ওনারা নিজেরাই একটা সামান্য বিষয় নিয়ে এতদুর গড়িয়েছে।এখানে আমি মোটেও দায়ী না।
থেমে জিজ্ঞাসা করলো,” কোন ভাই ডাকছে আমায়?
লোকটি সামনের দিকে হেটে বললো,
“সোভাম ভাই।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

স্পর্শী চমকালো।দ্রুত গতিতে পরবর্তী প্রশ্নটা করলো।
” উনি কি এখানকার এমপি শামসুর সরদার এর ছেলে?”
ছেলেটি স্পর্শীর দিকে চাইলো।আগা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে বললো,
“হ্যাঁ, কিন্তু ওনার বাবা এখন আর এমপি নাই।শিকদার’রা পাওয়ারে এখন।”
মাথা ঘামালো না স্পর্শী।সোভাম সরদারের খোঁজ পেয়েই লোকটার সাথে হেটে যেতে লাগলো।পাছে যদি সেখানে বাবাও থাকে।

বিশালাকার জনসমাজ। চারদিকে যুবক ছেলেদের ভীড় জমে গেছে।কমপক্ষে বিশ টা মোটরবাইক, তাদের মাঝখানে ভেড়ানো দুর্লভ দামী গাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে।স্পর্শীকে নিয়ে লোকটি ভিড়ের মধ্যে ঢুকলো।সবাই গোল করে দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির সামনে দাঁড়ানো মার্জিত ভদ্রেলোককে ঘিরে।বলতে গেলে সবাই একপ্রকার নালিশ দিচ্ছে তার কাছে, আর তিনি সেটা মার্জিত ভাষায় সামাল দিচ্ছেন।লোকটার বাচন-ভঙ্গি বেশ চমৎকার ঠেকলো স্পর্শীর নিকট।হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো সে।মনে মনে শুধরালো,
“যাক বাবাহ,পিরোজপুরে একজন হলেও ভালো মানুষ আছে।”
আলগোছে মানুষ সরিয়ে সোভাম সরদারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো স্পর্শী। পাশেই শক্ত করে আর্শির কবজি জড়িয়ে নিজের কাছে রেখেছে।যুবক ছেলেটি সোভামের উদ্দেশ্যে বললো,
“ভাই,এই মাইয়াটাই।ওই ঝামেলার মূলে ছিলো।”

চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকালো স্পর্শী।কিছু বলার প্রয়াস করতেই সোভাম বললো,
“কোত্থেকে এসেছো?”
স্পর্শী কোনোরুপ ভনিতা না করে জবাব দিলো।
“এটা আমার ছোট বোন।আমরা সাভারে থাকি।পিরোজপুরে ঘুরতে এসেছি। ”
তীর্যক দৃষ্টিতে তাকালো সোভাম।পুনরায় প্রশ্ন ছুঁড়ে বললো,
“এতো এতো সুন্দর পর্যটন প্লেস রেখে পিরোজপুরে কেন এসেছো?এখানে কি এমন আছে যেটা দেখতে এসেছো?”
কিছুটা অসস্তিতে পড়লো স্পর্শী।কি বলবে এখন?এখানে কি আদোও কোন দর্শনীয় স্থান আছে? মুহুর্তেই মনে পড়লো ষাট গম্বুজ মসজিদের কথা।দ্রুত কন্ঠে বললো,

“আমরা ষাট গম্বুজ মসজিদ দেখতে আসছি।”
এপর্যায়ে সোভামের কপালের ভাঁজ টা আরো গাঢ় হলো।বললো,
“সেটা তো বাগেরহাটে,পিরোজপুরে কেন এসেছো?
ব্যাস হয়ে গেলো।দাঁত কেলিয়ে হেসে দিলো স্পর্শী।এরপর নিজেকে গুছিয়ে বললো,
” আসলে ভাইয়া,আমি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট। তো আমার একটা টার্গেট হলো পুরো বাংলাদেশ ঘুরবো।এজন্য প্রতিটা জেলা আলাদা আলাদা করে সেখানে যাচ্ছি এবং সেখানকার দর্শনীয় স্থান গুলো বাছাই করে তার উপর একটা রিপোর্ট তৈরি করছি এবং ভলগ্ বানাচ্ছি।সেজন্যই এবার পিরোজপুরে আসা।আপনি জানেন না পিরোজপুরের আনাচে কানাচে অন্নেক”” দর্শনীয় স্থান আছে।এখানে একদম কোনো লোহা ইউজ না করে কাঠের মসজিদ বানানো আছে,এরপর বিভিন্ন পুরাতন মসজিদ,পার্ক আছে,এছাড়া এখানকার অদ্ভুত মানুষগুলোও আছে, যাদের সবটা মিলিয়েই রিপোর্ট টা বানাচ্ছি আমি।বুঝেছেন?”
সোভাম অন্যদিকে চাইলো।এরপর স্পর্শীর উদ্দেশ্যে বললো,

“সে যাই হোক।ঘুরতে এসেছো, ঘোরো।কিন্তু তুমি আমাদের হোটেলে উঠবে না।অন্যকোথাও ওঠো।”
অবাক হয়ে গেল স্পর্শী। ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বললো,
“নাহ,আমি আপনাদের হোটেলেই উঠবো।”
শুনলো না সোভাম।গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“শোনো,তুমি এখানে নতুন।তাই না কিছু বুঝতে পারছো আর নাতো বুঝতে চাইছো।তোমাকে নিয়ে অলরেডি একটা ঝামেলা ক্রিয়েট হয়ে গেছে।এবারে তুমি যদি আমার হোটেলেই ওঠো পরবর্তীতে ঝামেলাটা আরো বিরুপ নিবে।এখানকার এই দু-পক্ষের মধ্যে মারামারি কাটাকাটি নতুন কিছু নয়।এটা নিত্যদিনের রুটিন।তবে এবারের ঝামেলার যাবতীয় প্রতিক্রিয়া তোমার উপর পড়বে।তুমি যদি এখন সরদার হোটেলে ওঠো,তাহলে অপরপক্ষের হামলা প্রথমে তোমার উপর পড়বে।আমি চাই না, এখান কার রাজনৈতিক কোন্দলে ঘুরতে আসা কারোর ক্ষতি হোক।বুঝতে পেরেছো?”

নিরব হয়ে সব শুনলো স্পর্শী।এরপর জিজ্ঞেস করলো,
“আর শিকদার হোটেলে উঠলো আপনার দলের লোকেরা আমার ক্ষতি করবে না তার কি গ্যারান্টি?”
“নিশ্চিত থাকো,আমার দলের কেউ অমানুষ না।”
বলেই গাড়িতে উঠলো।মুহুর্তেই ধুলো উড়িয়ে বাইকের সাথে গাড়ি টাও চলে গেল ব্রিজের দিকে চলে গেল।
ধীরে ধীরে লোকের আনাগোনা কমে গেল।হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো স্পর্শী।আর্শি এবার কেঁদেই ফেললো।ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললো,
“আমার পা ব্যাথা করছে আপু।”
কোনো দিশা খুঁজে পেল না স্পর্শী।দ্রুত বোনকে নিয়ে হাটা শুরু করলো শিকদার হোটেলের দিকে।যাই হোক,আগে একটা থাকার ব্যাবস্থা করতে হবে।আর এভাবে থাকা যাচ্ছে না।দু দুটো ব্যাগের ভরে ভেঙে যাওয়ার উপক্রম।মিনিট পাঁচেক হাটাঁর পরেই এসে পৌছালো শিকদার হোটেলের সামনে।গেটের কাছে আসতেই দারোয়ান বাঁধা দিলো।কপালে ভাঁজ ফেলে বললো,

“তুমি ওই সকালের মাইয়াটা না?যার জন্য ঝামেলা বাজছে।”
স্পর্শী অবাক হয়ে গেল।বললো,
“কেন ঢোকা যাবে না?সকালে তো নেওয়ার জন্য হাতে পায়ে ধরছিলো।এখন কেন নিবেন না?
দারোয়ান বিরক্ত হলো। বললো,
” ছোট শিকদার বলছে তোমারে নিলে আরো ঝামেলা বাজবে।শুধু শুধু এইসব ছোট খাটো বিষয়ে ঝামেলা বাজাইয়া নিজেগো দলের নাম খারাপ করতে চায় না।”
রেগে গেল স্পর্শী।রাগে গজগজ করতে করতে বললো,
“ডাকুন আপনার ছোট শিকদারকে।আমিও দেখবো কে আমাকে থাকতে দিবে না।আমি এই হোটেলেই উঠবো।”
বলেই দাঁড়িয়ে রইলো।আর্শি অনেকবার বললো,

“আপু চলো এখান থেকে যাই।” কিন্তু শুনলো না স্পর্শী।জেদ ধরে দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে।মিনিট পাঁচেক পরেও যখন স্পর্শী গেল না তখন বাধ্য হয়ে ছোট শিকদার কে কল দিলো দারোয়ান।এখানকার সদর হস্পিটালেই আহত দলের ছেলেটাকে দেখতে এসেছে সে।ফোন পেয়ে মিনিট খানেকের মধ্যে চলে এলো হোটেলে।
বিরক্ত হয়ে করুন চাহিনিতে আশেপাশে তাকালো আর্শি।অনেক বড় ভুল করেছে সে পিরোজপুরে এসে।আর তার চেয়েও বেশী ভুল করেছে আপুর সাথে এসে।আশেপাশে তাকাতেই দেখলো অতি পরিচিত গাড়ি খানা তার দিকে এগিয়ে আসছে।এই গাড়িটা দিয়ে ই তাকে কিদন্যাপ করা হয়েছিলো।গাড়িটা এগোতে এগোতে তাদের সামনে দাঁড়ালো।ভয়ে শিউরে স্পর্শীর হাত খাঁমচে ধরলো আর্শি।এরপর সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল।গাড়ি থেকে ত্রস্ত পায়ে পাভেল বের হচ্ছে।মুখে অটোমেটিক হাসি ফুটে গেল। উৎফুল্ল কন্ঠে বললো,
“পাভেল ভাই।’

চমকে উঠলো পাভেল। সামনে তাকাতেই স্পর্শী আর আর্শিকে দেখে অবাক হয়ে গেল।এর মধ্যেই দারোয়ান বললো,
” ছোট ভাইজান,এইডাই সেই মাইয়া।আমি একশোবার বলছি আপনেরে নেওয়োন যাইবো না।কিন্তু উনি জেদ ধইরা বইসা রইছে।”
স্পর্শী এখনো ঘোরের মধ্যে আছে।পিরোজপুরে এত্তোগুলো এমপি থাকতে তার বাবার বিরোধী পক্ষ এই অসভ্য শিকদার কেই হতে হলো।উফফফ!ভাবা যায়, ওই এমপি তার বাবাকে হারিয়ে নিজে এমপি হয়েছে।ইশশ!ভাবতেই গায়ের রক্ত ভজভজ করে উঠছে।ওই লোক টার কাছে হারলো তার বাবা।স্পর্শীর বাবা?উফফফ অপমান।
এরপর নিশ্চিত হতে পাভেলের উদ্দেশ্যে বললো,

“এটা আপনার হোটেল?”
মাথা নাড়িয়ে পাভেল বললো,
“এটা ভাইয়ার হোটেল। আর আপনাকে যদি এখানে থাকতেও দেই তাহলে জানতে পারলে আমার অবস্থা বেহাল করে দিবে।আর আপনাকে ওই আটতলার ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিবে।আপনি এখান থেকে যান।আর এত্তো জায়গা রেখে পিরোজপুরে আসছেন কেন?ভাই,জানতে পারলে আপনার খবর করে ছাড়বে।”
স্পর্শী ক্ষেপে গিয়ে বললো,

“আমার মোটেও ইচ্ছে নেই এইরকম একটা রুচিহীন হোটেলে থাকার।”
পাভেল কিচ্ছু বললো না।দারোয়ানের উদ্দেশ্যে বললো,
“ওনাকে ভেতরে ঢুকতে দেবে না।”
বলেই সোজা গাড়িতে উঠলো।ড্রাইভার কে দ্রুত চালাতে বলে বললো,
“তাড়াতাড়ি চালা ভাই।এই মেয়ের হাত মুখের উপর চলে।আর কিছুক্ষণ এখানে থাকলেই যদি গালের উপর ঠাস করে মেরে দেয়।অন্তত নিজের জেলায় মান সম্মান খোয়াতে চাই না।দ্রুত যা।
ঠোঁট দুটো বাঁকা করে বোনের দিকে তাকিয়ে রইলো আর্শি।বললো,

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ১৯

” এবার?”
হেসে দিলো স্পর্শী বললো,
“এবার সোজা সরদার বাড়িতে যাব।আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।অন্তত ও বাড়িতে ঢোকার জন্য একটা হলেও সূযোগ করে দিয়েছে।”
চিন্তিত ভঙ্গিতে আর্শি বললো,
“কিন্তু কি বলবে গিয়ে?”
স্পর্শী বোনের হাত আবারো ধরলো।এরপর হাটা শুরু করলো বিপরীত দিকে।যেতে যেতে বললো,
“সেটা তোর ভাবার দরকার নেই।আমি ম্যানেজ করে নিবো।তুই শুধু আমার হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলাবি।ওকে।”

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ২০ (২)