রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৩০
সিমরান মিমি
‘আপনার ডায়েলকৃত নম্বর টি এই মুহুর্তে ব্যস্ত আছে।অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন।ধন্যবাদ!’
চিকন সুরেলা নারীকন্ঠের আওয়াজে বার্তাটুকু বাজতেই ফোন কেটে দিলো পরশ।নিশ্চয়ই ফোনের ওইপাশের মেয়েটি কারো সাথে ফোনালাপে ব্যস্ত।কিন্তু এই ভর সন্ধ্যায় কার সাথেই বা কথা বলছে সে?প্রেমিকের সাথে।হ্যাঁ, হতেও পারে।মেয়েটা সুন্দরী বটে।যে কোনো পুরুষ’ই সেই সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে হারিয়ে যেতে প্রস্তুত হবে।তার ওই মায়াবী মুখখানির দিকে তাকিয়ে থাকবে অপলকে যতক্ষণ না পর্যন্ত মানবী টি তার মুখ না খোলে।হ্যাঁ, এটা সাবধানী বার্তা।শামসুল সরদারের বড় মেয়ে নিতান্তই সুন্দরী এবং মায়াবী।কিন্তু তিনি যখন অন্যকারো সাথে কথা বলতে শুরু করে তখন তাকে বিশালাকৃতির এক ভয়ংকরী দানবী মনে হতেও দ্বিধা হবে না।
এতো সুন্দর একটা মেয়ের মুখের ভাষা কি করে এতটা রসকষহীন, কাঠখোট্টা হয় সেটাই ভেবে পায় না পরশ।নিশ্চয়ই মেয়েটাকে জন্মের পর মধু খাওয়ানো হয় নি।হয়তো ভুল করে মধুর কৌটার বদলে সরিষার তেল খাইয়ে ছিলো।যার কারনে এতো ঝাঁঝ।হতেই পারে,এটা স্বাভাবিক।
দ্বিতীয় বারের মতো একই নম্বরে ফোন দিতে কিছুটা অসস্তি হচ্ছে।মস্তিষ্ক বারংবার বারন করলেও মন যেন সায় দিচ্ছে না।টানা দশ মিনিট পর পুনরায় কল লাগালো।প্রথম বারের মতোই একইভাবে সেই সুরেলা কন্ঠ বলে উঠলো, ‘তার নাম্বার ব্যস্ত।ভ্রুঁ কুঁচকে ফেলে পুনরায় কেঁটে দিলো সে।সাথে সাথেই ওপাশ থেকে কল ব্যাক করলো।রিসিভড করে সালাম দেওয়ার উদ্দেশ্যে কানে তুলতেই ওপাশ থেকে ঝাঁঝালো স্বরে স্পর্শী বললো,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“কি ভাই,এতো মিসডকল মারেন কেন?”
থতমত খেয়ে গেল পরশ।অবাকের সুরে বললো,
“আশ্চর্য! কোথায় মিসডকল মারলাম?তোমার ফোন ব্যস্ত ছিলো, তাই কেটে দিয়েছি।”
ভ্রুঁ দুটো উঁচিয়ে নোট টা পুনরায় মিলিয়ে নিলো স্পর্শী।চোখের চশমা টা নাকের ডগায় এসে গেছে অনেক টা।সেটাকে তর্জনী দিয়ে ঠেলে ঠিক করে নিয়ে বললো,
“ব্যস্ত ছিলো মানে?কোথায় ব্যস্ত ছিলো?আমি তো কারো সাথে কথা বলি নি এতোক্ষণ।”
পরক্ষণেই নাম্বারের দিকে তাকিয়ে বিরক্তিকর শব্দ উচ্চারণ করে বললো,
“কে ভাই আপনি?কিসব উল্টাপাল্টা খাইয়া আমারে ফোন দিছেন। রাখেন মিয়া।এমনিতেই প্যারায় আছি।”
“এই তুমি কি কখনো সুন্দর করে কথা বলতে পারো না?মাথার তাঁর কি সব সময়েই ছেঁড়া থাকে নাকি হ্যাঁ? অসভ্য!তোমাকে দু দুবার কল করেছি।প্রতিটা বার ই ফোন ব্যস্ত বলেছে তাই কেঁটে দিয়েছি।”
হা হয়ে গেল স্পর্শী।জিভে কামড় দিয়ে বললো,
“ওহ হো, আরে হ্যাঁ হ্যাঁ। ওটা তো কলার টিউন সেভ করেছি আমি।চেঞ্জ করা হয়নি।বাই দা ওয়ে,আপনার কন্ঠ আমার খুব পরিচিত লাগছে। আপনি কে?কি জন্য ফোন দিয়েছেন?”
চিন্তায় পড়ে গেল পরশ।নতুন একটা সিম দিয়ে কল করেছে এখন যদি কোনো ভাবে কন্ঠস্বর চিনে ফেলে তাহলে মানসম্মান থাকবে না।দ্রুত ফোন কেঁটে দিলো।এরপর নাম্বার টা ব্লক করে সিমটাই ভেঙে ফেললো।কোন ভুত চেপেছিলো তার মাথায়?যে এই মেয়েকে ফোন দিতে গিয়েছে সে।আশ্চর্য কাজকর্ম।
কারো প্রতি কোনো অনুভূতি না থাকা সত্ত্বেও তাকে অন্যকারো সাথে দেখার পর যে হিংসা হয় সেটা অনর্থক।শুধু অনর্থক ই নয় বরং এটা বোকামো।এটা পৃথিবীর সবথেকে খারাপ একটা অনুভূতি। না নিজে সেই অনুভূতিকে গায়ে মাখবে আর নাতো অন্যকেউ মাখলে সেটা ভালো চোখে দেখবে।এই অনুভূতির সাথে পৃথিবীর সবাই’ই কমবেশি পরিচিত। যুবক সমাজ তো প্রবাদ বানিয়ে ফেলেছে এই অনুভূতি নিয়ে।তাদের মতে ‘পেছন পেছন সারাদিন ঘুর ঘুর করা মানুষ টা যখন নতুন কারো সাথে প্রেমে জড়ায় তখন এতোটা যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি হয়, যেটা বর্তমান প্রেমিকার সাথে বিচ্ছেদ হলেও অনুভব হয় না।’
এই মুহুর্তে এই প্রবাদ টাকে পাভেল বেদবাক্যের মতো বিশ্বাস করছে।কেননা সামনের পার্কেই আর্শি জিহানের হাত ধরে হাঁটছে।তাও আবার শাড়ি পড়ে।এটা কি মানা যায়?মোটেও না।এটা মেনে নেওয়ার মতো ধৈর্য্য পাভেলের নেই।ইচ্ছে তো করছে ঠাস ঠাস করে দুটো থাপ্পড় মেরে দিতে।এরপর যখন তার সামনে বসে ঠোঁট উলটে কাঁদবে তখন’ই অদ্ভুত শান্তি পাবে সে।শুধু আর্শিকে না জিহানকেও মারতে ইচ্ছে করছে।
যে মেয়েটা কাল বিকাল অবধি ও তাকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করেছে সেই কিনা তাকে ভুলে গেল।কিভাবে?এই মেয়ে তো ভীষণ ডেঞ্জারাস।এক দিকে তাকে লাইন মারতে চাইছে আর অন্যদিকে চাচাতো ভাইয়ের সাথে পার্কে এসেছে।ভাবতেই মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে হচ্ছে।বাইক টাকে পার্কের পাশে এনে দাঁড় করালো।রাস্তার পাশেই এই পার্ক টা বানানো।পাভেল ত্রস্ত পায়ে ভেতরে ঢুকে একটা বেঞ্চিতে বসলো। এরপর পকেট থেকে ফোন বের করে কল লাগালো আর্শিকে।
মুহুর্তেই টুংটুং করে বেজে উঠলো হাতের ফোন।পাভেল ভাইয়ের নাম্বার দেখেই কেটে দিলো দ্রুত।গোল গোল চোখ করে জিহানের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালো জিহান।বললো,
“কিরে,কার ফোন?কেঁটে দিলি কেন?”
কথাটা উঁড়িয়ে দিয়ে আর্শি বললো,
‘আরে রঙ নাম্বার।এখন ধরতে ইচ্ছা করছে না।’
অবাক হয়ে গেল পাভেল।দাঁতে দাঁত মিলিয়ে কিড়মিড়িয়ে উঠলো।পুনরায় কল করতেই স্পর্শী ফোন টাকেই অফ করে দিলো।হা হয়ে গেল পাভেল।রাগ উঠছে প্রচুর।আজ এখানে জিহান না থেকে অন্যকেউ থাকলে আজকেই একটা এস্পার-ওস্পার করে ফেলতো।কিন্তু পারলো না।যেহেতু শিকদার বাড়ির’ই ছাও পোনা এগুলো।সেহেতু কোনো শব্দ না করে বেরিয়ে গেলো বাইরে।আর্শি ভয়ে কতক্ষণ পর পর ফোন চেক করতে লাগলো আদোও ফোন বন্ধ আছে কি না?না কি এক্ষুনি আবার পাভেল ভাইয়ের কল এসে পড়বে।আল্লাহর কাছে বার বার প্রার্থনা করতে লাগলো যেন জিহান নাম্বার টা না দেখতে চায়।তাহলে তো কেলেংকারী হয়ে যাবে।বাড়ির সবাইকে বলে দেবে শিকদার বাড়ির ছোট ছেলে আর্শির নাম্বারে ফোন দিয়েছিলো।এরপর জিজ্ঞেস করলে কি বলবে সে?আপুকেই বা কি জবাব দেবে?এবারে এরকম কিছু ঘটলে যে স্পর্শী আর কিছুই মানবে না।সোজা শিকদার বাড়ি গিয়ে পাভেল ভাইয়ের নাক ফাঁটিয়ে দিবে।সাথে তার এমপি ভাইকেও ফ্রি ফাঁটা নাক উপহার দিয়ে আসবে।এমনিতেই ওই লোকটাকে স্পর্শী বিনা কারনেও বার বার ঝেড়ে আসে।
ভাবনার মধ্যেই হাতে টান পড়লো আর্শির।পেছনে তাকাতেই দেখলো ছোট চাচি দাঁড়িয়ে।পাশে রুহান। সেদিকে তাকিয়ে আলতো হাসতেই চাচি বললো,
“এখানে দাঁড়িয়ে আছো?আর আমি ভাবলাম হারিয়ে গেছো।সারা পার্কে খুঁজছি।’
জিহান ফুচকার প্লেট হাতে এগিয়ে এলো।বললো
‘আমি ওকে এদিকে টেনে নিয়া আসছি।ফুচকা খাওয়াতে।এখানকার স্পেশাল ফুচকা তো খায় নি এখনো।খাইছে ঢাকার ওই ধুলাবালি।’
আর্শি এবারেও আলতো হাসলো।কেননা জোরে হাসার মুড এই মুহুর্তে নেই।মান সম্মানের ভয় তাকে ঝেকে ধরেছে প্রবল ভাবে।ছোট চাচীর সাথে ম্যাচিং করে জাপানিজ সিল্কের শাড়ি পড়েছে।অথচ কুচি গুলোর ভর পেটিকোটের ফিতা এখন আর নিতে সক্ষম নয়।মনে হচ্ছে এই বুঝি খুলে পড়ে যাবে।ফুচকার প্লেট টা হাতে নিয়ে চাচিকে বলে গাড়ির দিকে এগিয়ে এলো।পার্কের সামনেই পার্ক করা আছে গাড়ি।দ্রুত পায়ে ভেতরে বসেই দম ফিরে পেল। এখন শাড়ি খুলে গেলেও আর কোনো প্রবলেম নেই।
রাত আট টা।বাড়ির সকল পুরুষ রা এখন সদরে অবস্থান করছে।সোনালী আর কমলের মা(বাড়ির কাজে সাহায্যকারী) ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে।ছোট কাকি নিজের রুমে বসে ছেলেকে পড়াচ্ছেন আর মোবাইল টিপছেন।এই মুহূর্তে সেইফ জোন হচ্ছে বারান্দা।আর্শি দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে বারান্দায় গেল।এরপর কল লাগালো পাভেল ভাইয়ের নাম্বারে।মুহুর্তে ই রিসিভড হলো ফোন।
গত দিন বিকালের কথা মোটেই ভোলেনি আর্শি।কিন্তু তাও মন মানছে না।পাভেল ভাই বিকালে দু দুবার ফোন দিলেও সে কেঁটে দিয়েছে বাধ্য হয়ে।কিজন্য ফোন দিয়েছিলো সেটা জানার জন্য মন আনচান করছে।কন্ঠকে অনেক দাবিয়ে ছোট্ট স্বরে বললো,
“পাভেল ভাই,বিকালে ফোন দিয়েছিলেন?”
‘কেন?কল গেছিলো নাকি তোমার ফোনে?’
বোকা বনে গেল আর্শি। অবুঝের মতো বললো,
‘হ্যাঁ,বিকেলে দু দুবার কল এসেছিলো।’
দাঁতে দাঁত চেপে পাভেল বললো,
‘তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছো কেন কল গেছিলো কি না?আমি ফোন না দিলে কি উঁড়ে উঁড়ে কল যাবে?’
আর্শি অস্ফুট স্বরে বললো,
‘ওহ,কি জন্য দিয়েছিলেন?’
পাভেল উত্তর দিলো না।ওভাবেই চুপ করে রইলো।বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো দুজনের মধ্যে।
‘কল দেওয়ার পর কেঁটে ফোন বন্ধ করে দিছিলা কেন?’
আর্শি চুপ করে রইলো।পাভেল ভাই রেগে আছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে।শান্ত স্বরে বললো,
‘ব্যস্ত ছিলাম একটু।’
রুষে উঠলো পাভেল।বললো,
‘হ্যাঁ , ব্যস্ত তো থাকবাই।বয়ফ্রেন্ডের সাথে পার্কে ঘুরতে গেছিলা যে।ওই সময় আমার ফোন ধরলে তো ধরা পড়ে যাইতা।তাই বন্ধ করে রাখছো।কি সুন্দর প্রেম।দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।সেইম সেইম কালারের শার্ট শাড়ি।হাত ধরে হাঁটা।সমবয়সী প্রেম।তাও আবার চাচাতো ভাইয়ের সাথে।দারুন লাইফ কাটাচ্ছো তাই না?আরো ক’টা আছে লাইনে।আমাকে তো পটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছো।বয়ফ্রেন্ড তো বাড়িতেই আছে।ঢাকায় কতগুলো রেখে আসছো?বাব্বাহ,তোমায় দেখে বোঝাই যায় না। এই টুকু মেয়ে।অথচ নাকে দড়ি লাগিয়ে সাত-আট টা ছেলে পেছন পেছন ঘোরাচ্ছো।ভীষণ প্রশংসার ব্যাপার।’
হা হয়ে গেল আর্শি।গলা থেকে যেন সাউন্ড বের হচ্ছে না মোটেই।তার মানে কি পাভেল ভাই তাকে দেখেছে জিহানের সাথে। আর দেখে কি সে জেলাস হয়েছে।হোক,কিন্তু আর্শি কখনো তাকে জেলাসি ফিল করানোর জন্য এসব মিথ্যেকে স্বীকার করে নেবে না।নুয়ানো কন্ঠে বললো,
‘পাভেল ভাই,আমাকে আপনার ওরকম মেয়ে মনে হয়?আমিতো পার্কে জিহানের সাথে যাই নি।ছোট চাচির সাথে গেছিলাম।জিহান আমাকে ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে যাচ্ছিলো।তখন’ই তো হাত ধরলো।আর আমি আপনার ফোন ধরিনি জিহানের ভয়ে।ও যদি আপনার নাম্বার দেখে চিনে ফেলে তখন?’
থেমে পুনরায় বললো,
‘হ্যাঁ আমি স্বীকার করছি যে আপনার প্রতি আমি খুব দুর্বল হয়ে পড়েছি।আপনার সাথে সারাক্ষণ কথা বলতে ইচ্ছে হয়,দেখা হলো ছুটে কাছে যেতে ইচ্ছে হয়। তাই বলে আপনি আমায় চরিত্রহীন ভাবলেন?আমি জানি আপনি আমাকে পছন্দ করেন না। তারপরেও আমি আপনাকে অপছন্দ করতে পারি না।এটা কি আমার দোষ? বলুন।
পাভেল চুপ করে রইলো।যেন আর্শির থেকে এই উত্তর তাকে খুবই তৃ্প্ত করেছে।এরপর শান্ত কন্ঠে বললো,
‘সব ঠিক আছে।কিন্তু ও তোমার হাত ধরার সাহস পাবে কেন?তুমি কি ছোট?তুমি বারন করবে না ওকে।’
আর্শি ঠোঁট কামড়ে হেসে দিলো।বললো,
‘আপনি বারন করলে আর ধরতে দেব না হাত।’
–কেন?আমি বললে শুনবেই বা কেন?’
গা ঝারা দিয়ে বসলো আর্শি।নিজেকে সিরিয়াস করে বললো,
‘শুনুন পাভেল ভাই।আমার সাথে ঢং করবেন না একদম। এসব আমার পছন্দ না।আপু আমাকে প্রায়’ই বলতো ‘কোনো কথা মনে এলে সেটাকে পেটে না চাপিয়ে সরাসরি বলে দেওয়া উচিত ভণিতা না করে।এতে অপরপক্ষ যাই’ই রিয়াক্ট করুক।সেজন্য আমিও কোনো ভণিতা ছাড়াই বলে দিলাম,”আপনাকে আমার ভালো লাগে।আপনি আমার সাথে একবার প্রেম করুন দেখবেন আপনার আদেশ-নিষেধ যাবতীয় সব আমি চোখ বন্ধ করে পালন করবো।বুঝেছেন?’
মুখ চেপে হাসলো পাভেল।ধমক মেরে বললো,
‘এইটুকু মেয়ে,প্রেমের কি বোঝো তুমি?থাপ্পড় খেয়েছো?’
রুষে উঠলো আর্শি।বললো,
‘এইটুকু মেয়ে মানে?আপনি আমার বয়স জানেন?১৭ শেষ হয়ে যাবে যাবে।এই তো কিছুদিন পরেই ১৮ হবে।এখন পর্যাপ্ত বয়স আমার।এটা আমার প্রেম করার বয়স।আপনি প্রেম করলে বলুন নইলে আমি অন্য কাউকে খুঁজে নিবো।’
‘এখন তোমার মাইর খাওয়ার বয়স।থাপ্পড় চিনো?এসব কথা একবার তোমার বাড়ির কেউ জানলে তোমাকে প্রেমের সঙ্গা বুঝিয়ে দিবে।যথেষ্ট বড় হয়েছো।বুঝদার ও হয়েছো।কোনো ঝামেলা পাকিয়ো না।আমাকে আমার মতো থাকতে দাও।’
আর্শি মুখ দিয়ে বিরক্তিকর আওয়াজ করলো আর্শি।বললো,
‘ছিঃ পাভেল ভাই।আপনি এতটা ভীতু কেন?প্রেম করতে গেলে এরকম একটু -আধটু রিস্ক তো নিতেই হয়।আমি ভয় পাচ্ছি না অথচ আপনি প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলছেন।’
থেমে,
শুনেন,আমি ফাইনাল ভাবে বলছি।
‘সরদার বাড়ির ছোট মেয়ে আর্শিয়া সরদার শিকদার বাড়ির ছোট ছেলে পাভেল ভাই শিকদারের সাথে এই মুহুর্তে প্রেম করতে চাইছে।আপনি কি রাজী?রাজী থাকলে এক চাপুন,না থাকলে দুই চাপুন।আর যদি বেশী লজ্জাবতী হয়ে থাকেন তাহলে একটু হাসুন।আর যদি কিচ্ছু না করেন তাহলে আমি নতুন গ্রাহক খুঁজে নিবো।ওকে?’
ওপাশ থেকে কোনোরুপ সাড়াশব্দ পেলো না আর্শি।শুধু শুনলো চাপা হাসির শব্দ।তার পর পর’ই ফোন কেটে দিলো পাভেল।
খুশিতে উত্তেজিত হয়ে এক লাফে বিছানায় উঠলো স্পর্শী।ব্যাঙের মতো হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে নিচু কন্ঠে আর্শি বললো,
‘গলেছে, গলেছে।পাভেল ভাইয়ের মন একটু হলেও গলেছে।’
‘আপনার ডায়েলকৃত নম্বর টি এই মুহুর্তে ব্যস্ত আছে।অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন।ধন্যবাদ!’
চিকন সুরেলা নারীকন্ঠের আওয়াজে বার্তাটুকু বাজতেই ফোন কেটে দিলো পরশ।নিশ্চয়ই ফোনের ওইপাশের মেয়েটি কারো সাথে ফোনালাপে ব্যস্ত।কিন্তু এই ভর সন্ধ্যায় কার সাথেই বা কথা বলছে সে?প্রেমিকের সাথে।হ্যাঁ, হতেও পারে।মেয়েটা সুন্দরী বটে।যে কোনো পুরুষ’ই সেই সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে হারিয়ে যেতে প্রস্তুত হবে।তার ওই মায়াবী মুখখানির দিকে তাকিয়ে থাকবে অপলকে যতক্ষণ না পর্যন্ত মানবী টি তার মুখ না খোলে।হ্যাঁ, এটা সাবধানী বার্তা।শামসুল সরদারের বড় মেয়ে নিতান্তই সুন্দরী এবং মায়াবী।কিন্তু তিনি যখন অন্যকারো সাথে কথা বলতে শুরু করে তখন তাকে বিশালাকৃতির এক ভয়ংকরী দানবী মনে হতেও দ্বিধা হবে না।
এতো সুন্দর একটা মেয়ের মুখের ভাষা কি করে এতটা রসকষহীন, কাঠখোট্টা হয় সেটাই ভেবে পায় না পরশ।নিশ্চয়ই মেয়েটাকে জন্মের পর মধু খাওয়ানো হয় নি।হয়তো ভুল করে মধুর কৌটার বদলে সরিষার তেল খাইয়ে ছিলো।যার কারনে এতো ঝাঁঝ।হতেই পারে,এটা স্বাভাবিক।
দ্বিতীয় বারের মতো একই নম্বরে ফোন দিতে কিছুটা অসস্তি হচ্ছে।মস্তিষ্ক বারংবার বারন করলেও মন যেন সায় দিচ্ছে না।টানা দশ মিনিট পর পুনরায় কল লাগালো।প্রথম বারের মতোই একইভাবে সেই সুরেলা কন্ঠ বলে উঠলো, ‘তার নাম্বার ব্যস্ত।ভ্রুঁ কুঁচকে ফেলে পুনরায় কেঁটে দিলো সে।সাথে সাথেই ওপাশ থেকে কল ব্যাক করলো।রিসিভড করে সালাম দেওয়ার উদ্দেশ্যে কানে তুলতেই ওপাশ থেকে ঝাঁঝালো স্বরে স্পর্শী বললো,
“কি ভাই,এতো মিসডকল মারেন কেন?”
থতমত খেয়ে গেল পরশ।অবাকের সুরে বললো,
“আশ্চর্য! কোথায় মিসডকল মারলাম?তোমার ফোন ব্যস্ত ছিলো, তাই কেটে দিয়েছি।”
ভ্রুঁ দুটো উঁচিয়ে নোট টা পুনরায় মিলিয়ে নিলো স্পর্শী।চোখের চশমা টা নাকের ডগায় এসে গেছে অনেক টা।সেটাকে তর্জনী দিয়ে ঠেলে ঠিক করে নিয়ে বললো,
“ব্যস্ত ছিলো মানে?কোথায় ব্যস্ত ছিলো?আমি তো কারো সাথে কথা বলি নি এতোক্ষণ।”
পরক্ষণেই নাম্বারের দিকে তাকিয়ে বিরক্তিকর শব্দ উচ্চারণ করে বললো,
“কে ভাই আপনি?কিসব উল্টাপাল্টা খাইয়া আমারে ফোন দিছেন। রাখেন মিয়া।এমনিতেই প্যারায় আছি।”
“এই তুমি কি কখনো সুন্দর করে কথা বলতে পারো না?মাথার তাঁর কি সব সময়েই ছেঁড়া থাকে নাকি হ্যাঁ? অসভ্য!তোমাকে দু দুবার কল করেছি।প্রতিটা বার ই ফোন ব্যস্ত বলেছে তাই কেঁটে দিয়েছি।”
হা হয়ে গেল স্পর্শী।জিভে কামড় দিয়ে বললো,
“ওহ হো, আরে হ্যাঁ হ্যাঁ। ওটা তো কলার টিউন সেভ করেছি আমি।চেঞ্জ করা হয়নি।বাই দা ওয়ে,আপনার কন্ঠ আমার খুব পরিচিত লাগছে। আপনি কে?কি জন্য ফোন দিয়েছেন?”
চিন্তায় পড়ে গেল পরশ।নতুন একটা সিম দিয়ে কল করেছে এখন যদি কোনো ভাবে কন্ঠস্বর চিনে ফেলে তাহলে মানসম্মান থাকবে না।দ্রুত ফোন কেঁটে দিলো।এরপর নাম্বার টা ব্লক করে সিমটাই ভেঙে ফেললো।কোন ভুত চেপেছিলো তার মাথায়?যে এই মেয়েকে ফোন দিতে গিয়েছে সে।আশ্চর্য কাজকর্ম।
কারো প্রতি কোনো অনুভূতি না থাকা সত্ত্বেও তাকে অন্যকারো সাথে দেখার পর যে হিংসা হয় সেটা অনর্থক।শুধু অনর্থক ই নয় বরং এটা বোকামো।এটা পৃথিবীর সবথেকে খারাপ একটা অনুভূতি। না নিজে সেই অনুভূতিকে গায়ে মাখবে আর নাতো অন্যকেউ মাখলে সেটা ভালো চোখে দেখবে।এই অনুভূতির সাথে পৃথিবীর সবাই’ই কমবেশি পরিচিত। যুবক সমাজ তো প্রবাদ বানিয়ে ফেলেছে এই অনুভূতি নিয়ে।তাদের মতে ‘পেছন পেছন সারাদিন ঘুর ঘুর করা মানুষ টা যখন নতুন কারো সাথে প্রেমে জড়ায় তখন এতোটা যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি হয়, যেটা বর্তমান প্রেমিকার সাথে বিচ্ছেদ হলেও অনুভব হয় না।’
এই মুহুর্তে এই প্রবাদ টাকে পাভেল বেদবাক্যের মতো বিশ্বাস করছে।কেননা সামনের পার্কেই আর্শি জিহানের হাত ধরে হাঁটছে।তাও আবার শাড়ি পড়ে।এটা কি মানা যায়?মোটেও না।এটা মেনে নেওয়ার মতো ধৈর্য্য পাভেলের নেই।ইচ্ছে তো করছে ঠাস ঠাস করে দুটো থাপ্পড় মেরে দিতে।এরপর যখন তার সামনে বসে ঠোঁট উলটে কাঁদবে তখন’ই অদ্ভুত শান্তি পাবে সে।শুধু আর্শিকে না জিহানকেও মারতে ইচ্ছে করছে।
যে মেয়েটা কাল বিকাল অবধি ও তাকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করেছে সেই কিনা তাকে ভুলে গেল।কিভাবে?এই মেয়ে তো ভীষণ ডেঞ্জারাস।এক দিকে তাকে লাইন মারতে চাইছে আর অন্যদিকে চাচাতো ভাইয়ের সাথে পার্কে এসেছে।ভাবতেই মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে হচ্ছে।বাইক টাকে পার্কের পাশে এনে দাঁড় করালো।রাস্তার পাশেই এই পার্ক টা বানানো।পাভেল ত্রস্ত পায়ে ভেতরে ঢুকে একটা বেঞ্চিতে বসলো। এরপর পকেট থেকে ফোন বের করে কল লাগালো আর্শিকে।
মুহুর্তেই টুংটুং করে বেজে উঠলো হাতের ফোন।পাভেল ভাইয়ের নাম্বার দেখেই কেটে দিলো দ্রুত।গোল গোল চোখ করে জিহানের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালো জিহান।বললো,
“কিরে,কার ফোন?কেঁটে দিলি কেন?”
কথাটা উঁড়িয়ে দিয়ে আর্শি বললো,
‘আরে রঙ নাম্বার।এখন ধরতে ইচ্ছা করছে না।’
অবাক হয়ে গেল পাভেল।দাঁতে দাঁত মিলিয়ে কিড়মিড়িয়ে উঠলো।পুনরায় কল করতেই স্পর্শী ফোন টাকেই অফ করে দিলো।হা হয়ে গেল পাভেল।রাগ উঠছে প্রচুর।আজ এখানে জিহান না থেকে অন্যকেউ থাকলে আজকেই একটা এস্পার-ওস্পার করে ফেলতো।কিন্তু পারলো না।যেহেতু শিকদার বাড়ির’ই ছাও পোনা এগুলো।সেহেতু কোনো শব্দ না করে বেরিয়ে গেলো বাইরে।আর্শি ভয়ে কতক্ষণ পর পর ফোন চেক করতে লাগলো আদোও ফোন বন্ধ আছে কি না?না কি এক্ষুনি আবার পাভেল ভাইয়ের কল এসে পড়বে।আল্লাহর কাছে বার বার প্রার্থনা করতে লাগলো যেন জিহান নাম্বার টা না দেখতে চায়।তাহলে তো কেলেংকারী হয়ে যাবে।বাড়ির সবাইকে বলে দেবে শিকদার বাড়ির ছোট ছেলে আর্শির নাম্বারে ফোন দিয়েছিলো।এরপর জিজ্ঞেস করলে কি বলবে সে?আপুকেই বা কি জবাব দেবে?এবারে এরকম কিছু ঘটলে যে স্পর্শী আর কিছুই মানবে না।সোজা শিকদার বাড়ি গিয়ে পাভেল ভাইয়ের নাক ফাঁটিয়ে দিবে।সাথে তার এমপি ভাইকেও ফ্রি ফাঁটা নাক উপহার দিয়ে আসবে।এমনিতেই ওই লোকটাকে স্পর্শী বিনা কারনেও বার বার ঝেড়ে আসে।
ভাবনার মধ্যেই হাতে টান পড়লো আর্শির।পেছনে তাকাতেই দেখলো ছোট চাচি দাঁড়িয়ে।পাশে রুহান। সেদিকে তাকিয়ে আলতো হাসতেই চাচি বললো,
“এখানে দাঁড়িয়ে আছো?আর আমি ভাবলাম হারিয়ে গেছো।সারা পার্কে খুঁজছি।’
জিহান ফুচকার প্লেট হাতে এগিয়ে এলো।বললো
‘আমি ওকে এদিকে টেনে নিয়া আসছি।ফুচকা খাওয়াতে।এখানকার স্পেশাল ফুচকা তো খায় নি এখনো।খাইছে ঢাকার ওই ধুলাবালি।’
আর্শি এবারেও আলতো হাসলো।কেননা জোরে হাসার মুড এই মুহুর্তে নেই।মান সম্মানের ভয় তাকে ঝেকে ধরেছে প্রবল ভাবে।ছোট চাচীর সাথে ম্যাচিং করে জাপানিজ সিল্কের শাড়ি পড়েছে।অথচ কুচি গুলোর ভর পেটিকোটের ফিতা এখন আর নিতে সক্ষম নয়।মনে হচ্ছে এই বুঝি খুলে পড়ে যাবে।ফুচকার প্লেট টা হাতে নিয়ে চাচিকে বলে গাড়ির দিকে এগিয়ে এলো।পার্কের সামনেই পার্ক করা আছে গাড়ি।দ্রুত পায়ে ভেতরে বসেই দম ফিরে পেল। এখন শাড়ি খুলে গেলেও আর কোনো প্রবলেম নেই।
রাত আট টা।বাড়ির সকল পুরুষ রা এখন সদরে অবস্থান করছে।সোনালী আর কমলের মা(বাড়ির কাজে সাহায্যকারী) ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে।ছোট কাকি নিজের রুমে বসে ছেলেকে পড়াচ্ছেন আর মোবাইল টিপছেন।এই মুহূর্তে সেইফ জোন হচ্ছে বারান্দা।আর্শি দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে বারান্দায় গেল।এরপর কল লাগালো পাভেল ভাইয়ের নাম্বারে।মুহুর্তে ই রিসিভড হলো ফোন।
গত দিন বিকালের কথা মোটেই ভোলেনি আর্শি।কিন্তু তাও মন মানছে না।পাভেল ভাই বিকালে দু দুবার ফোন দিলেও সে কেঁটে দিয়েছে বাধ্য হয়ে।কিজন্য ফোন দিয়েছিলো সেটা জানার জন্য মন আনচান করছে।কন্ঠকে অনেক দাবিয়ে ছোট্ট স্বরে বললো,
“পাভেল ভাই,বিকালে ফোন দিয়েছিলেন?”
‘কেন?কল গেছিলো নাকি তোমার ফোনে?’
বোকা বনে গেল আর্শি। অবুঝের মতো বললো,
‘হ্যাঁ,বিকেলে দু দুবার কল এসেছিলো।’
দাঁতে দাঁত চেপে পাভেল বললো,
‘তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছো কেন কল গেছিলো কি না?আমি ফোন না দিলে কি উঁড়ে উঁড়ে কল যাবে?’
আর্শি অস্ফুট স্বরে বললো,
‘ওহ,কি জন্য দিয়েছিলেন?’
পাভেল উত্তর দিলো না।ওভাবেই চুপ করে রইলো।বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো দুজনের মধ্যে।
‘কল দেওয়ার পর কেঁটে ফোন বন্ধ করে দিছিলা কেন?’
আর্শি চুপ করে রইলো।পাভেল ভাই রেগে আছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে।শান্ত স্বরে বললো,
‘ব্যস্ত ছিলাম একটু।’
রুষে উঠলো পাভেল।বললো,
‘হ্যাঁ , ব্যস্ত তো থাকবাই।বয়ফ্রেন্ডের সাথে পার্কে ঘুরতে গেছিলা যে।ওই সময় আমার ফোন ধরলে তো ধরা পড়ে যাইতা।তাই বন্ধ করে রাখছো।কি সুন্দর প্রেম।দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।সেইম সেইম কালারের শার্ট শাড়ি।হাত ধরে হাঁটা।সমবয়সী প্রেম।তাও আবার চাচাতো ভাইয়ের সাথে।দারুন লাইফ কাটাচ্ছো তাই না?আরো ক’টা আছে লাইনে।আমাকে তো পটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছো।বয়ফ্রেন্ড তো বাড়িতেই আছে।ঢাকায় কতগুলো রেখে আসছো?বাব্বাহ,তোমায় দেখে বোঝাই যায় না। এই টুকু মেয়ে।অথচ নাকে দড়ি লাগিয়ে সাত-আট টা ছেলে পেছন পেছন ঘোরাচ্ছো।ভীষণ প্রশংসার ব্যাপার।’
হা হয়ে গেল আর্শি।গলা থেকে যেন সাউন্ড বের হচ্ছে না মোটেই।তার মানে কি পাভেল ভাই তাকে দেখেছে জিহানের সাথে। আর দেখে কি সে জেলাস হয়েছে।হোক,কিন্তু আর্শি কখনো তাকে জেলাসি ফিল করানোর জন্য এসব মিথ্যেকে স্বীকার করে নেবে না।নুয়ানো কন্ঠে বললো,
‘পাভেল ভাই,আমাকে আপনার ওরকম মেয়ে মনে হয়?আমিতো পার্কে জিহানের সাথে যাই নি।ছোট চাচির সাথে গেছিলাম।জিহান আমাকে ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে যাচ্ছিলো।তখন’ই তো হাত ধরলো।আর আমি আপনার ফোন ধরিনি জিহানের ভয়ে।ও যদি আপনার নাম্বার দেখে চিনে ফেলে তখন?’
থেমে পুনরায় বললো,
‘হ্যাঁ আমি স্বীকার করছি যে আপনার প্রতি আমি খুব দুর্বল হয়ে পড়েছি।আপনার সাথে সারাক্ষণ কথা বলতে ইচ্ছে হয়,দেখা হলো ছুটে কাছে যেতে ইচ্ছে হয়। তাই বলে আপনি আমায় চরিত্রহীন ভাবলেন?আমি জানি আপনি আমাকে পছন্দ করেন না। তারপরেও আমি আপনাকে অপছন্দ করতে পারি না।এটা কি আমার দোষ? বলুন।
পাভেল চুপ করে রইলো।যেন আর্শির থেকে এই উত্তর তাকে খুবই তৃ্প্ত করেছে।এরপর শান্ত কন্ঠে বললো,
‘সব ঠিক আছে।কিন্তু ও তোমার হাত ধরার সাহস পাবে কেন?তুমি কি ছোট?তুমি বারন করবে না ওকে।’
আর্শি ঠোঁট কামড়ে হেসে দিলো।বললো,
‘আপনি বারন করলে আর ধরতে দেব না হাত।’
–কেন?আমি বললে শুনবেই বা কেন?’
গা ঝারা দিয়ে বসলো আর্শি।নিজেকে সিরিয়াস করে বললো,
‘শুনুন পাভেল ভাই।আমার সাথে ঢং করবেন না একদম। এসব আমার পছন্দ না।আপু আমাকে প্রায়’ই বলতো ‘কোনো কথা মনে এলে সেটাকে পেটে না চাপিয়ে সরাসরি বলে দেওয়া উচিত ভণিতা না করে।এতে অপরপক্ষ যাই’ই রিয়াক্ট করুক।সেজন্য আমিও কোনো ভণিতা ছাড়াই বলে দিলাম,”আপনাকে আমার ভালো লাগে।আপনি আমার সাথে একবার প্রেম করুন দেখবেন আপনার আদেশ-নিষেধ যাবতীয় সব আমি চোখ বন্ধ করে পালন করবো।বুঝেছেন?’
মুখ চেপে হাসলো পাভেল।ধমক মেরে বললো,
‘এইটুকু মেয়ে,প্রেমের কি বোঝো তুমি?থাপ্পড় খেয়েছো?’
রুষে উঠলো আর্শি।বললো,
‘এইটুকু মেয়ে মানে?আপনি আমার বয়স জানেন?১৭ শেষ হয়ে যাবে যাবে।এই তো কিছুদিন পরেই ১৮ হবে।এখন পর্যাপ্ত বয়স আমার।এটা আমার প্রেম করার বয়স।আপনি প্রেম করলে বলুন নইলে আমি অন্য কাউকে খুঁজে নিবো।’
‘এখন তোমার মাইর খাওয়ার বয়স।থাপ্পড় চিনো?এসব কথা একবার তোমার বাড়ির কেউ জানলে তোমাকে প্রেমের সঙ্গা বুঝিয়ে দিবে।যথেষ্ট বড় হয়েছো।বুঝদার ও হয়েছো।কোনো ঝামেলা পাকিয়ো না।আমাকে আমার মতো থাকতে দাও।’
আর্শি মুখ দিয়ে বিরক্তিকর আওয়াজ করলো আর্শি।বললো,
‘ছিঃ পাভেল ভাই।আপনি এতটা ভীতু কেন?প্রেম করতে গেলে এরকম একটু -আধটু রিস্ক তো নিতেই হয়।আমি ভয় পাচ্ছি না অথচ আপনি প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলছেন।’
থেমে,
শুনেন,আমি ফাইনাল ভাবে বলছি।
‘সরদার বাড়ির ছোট মেয়ে আর্শিয়া সরদার শিকদার বাড়ির ছোট ছেলে পাভেল ভাই শিকদারের সাথে এই মুহুর্তে প্রেম করতে চাইছে।আপনি কি রাজী?রাজী থাকলে এক চাপুন,না থাকলে দুই চাপুন।আর যদি বেশী লজ্জাবতী হয়ে থাকেন তাহলে একটু হাসুন।আর যদি কিচ্ছু না করেন তাহলে আমি নতুন গ্রাহক খুঁজে নিবো।ওকে?’
ওপাশ থেকে কোনোরুপ সাড়াশব্দ পেলো না আর্শি।শুধু শুনলো চাপা হাসির শব্দ।তার পর পর’ই ফোন কেটে দিলো পাভেল।
রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ২৯
খুশিতে উত্তেজিত হয়ে এক লাফে বিছানায় উঠলো স্পর্শী।ব্যাঙের মতো হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে নিচু কন্ঠে আর্শি বললো,
‘গলেছে, গলেছে।পাভেল ভাইয়ের মন একটু হলেও গলেছে।’