রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৩৭

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৩৭
সিমরান মিমি

“এই মেয়েটাকে দেখেছেন কোথাও?”
মহিলাটি মনযোগ দিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো।মিনিট খানেক ভাবুক দৃষ্টিতে আশেপাশে তাকিয়ে মনে করার চেষ্টা করলো।এরপর অনিশ্চিত হয়ে বললো,
“হ,এরমই তো দেখতি আছিলু মাইয়াডা।এই কাইল কিই তু আর থাইকা ঝালমুড়ি খাইলু।তয় হেতি তো একলা নই, ভাইর লগে আছিলু।খাঁড়া কইর চ্যাপডা ব্যাডায়।”

স্পর্শী চমকে উঠলো।ভাইয়ের সাথে ছিলো মানে?ঠিক বুঝতে পারলো না।পরক্ষণেই আঁতকে উঠলো।ভাই মানে পাভেল ভাই।হ্যাঁ আর্শি তো পাভেল শিকদার কে পাভেল বলেই ডাকে।তার মানে কালকে ওরাও বীচেই ছিলো।কিন্তু দেখতে পেল না তো।নিশ্চয়ই তারা আসার আগে চলে গেছে।
“আচ্ছা,ওরা কোনদিকে গিয়েছিলো বলতে পারবেন?”
মহিলাটি বিরক্ত হলো।তিনি এখনো ক্রেতাদেরকে মুড়ি বানিয়ে বিক্রি করছে।এরমধ্যে স্পর্শীর এমন অনুসন্ধানী মূলক কথা মোটেই পছন্দ হলো না।মগ এ ঝাড়ি মারতে মারতে বললো,
“আই কি হেতিগো দিগে চাইয়া রইছু নাকি?”
“আন্টি প্লিজ!একটু বলুন না।আমার খুব প্রয়োজন। ”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পেঁয়াজ কাটতে কাঁটতে মহিলাটি বিরক্তিকর মুখ-চোখ নিয়ে আঙুল দিয়ে দেখিয়ো দিলো।হতাশ হলো স্পর্শী।আর কিছু জিজ্ঞেস করা যাবে না এনাকে।চলে এলো সেখান থেকে।ঘড়ির কাঁটায় প্রায় নয়টা।সেই সকাল সাতটার দিকে রিসোর্ট থেকে বেরিয়েছে। অজস্র লোক’কে জিজ্ঞেস করেও পাওয়া যায়নি আর্শির খবর।শেষে কোনোরকম ভাবে এই মহিলার থেকে জানা গেল।তাও সাদামাটা ভাবে।কয়েক কদম সামনে এগিয়ে থামলো।মহিলা এইদিকেই ইশারা করেছে।সামনে তিন চারজন ছেলে দেখা যাচ্ছে।স্পর্শী এগিয়ে গেলো তাদের কাছে।
“এক্সকিউজ মি!এদিকে কাছাকাছি কোনো রিসোর্ট আছে?”
“হ্যাঁ, এখানে পর পর দুটো রিসোর্ট পাওয়া যাবে।
” ওহ ওকে।থ্যাংক ইউ সো ম্যাচ।”

গাড়ি খুঁজছে স্পর্শী।কিন্তু আশেপাশে কোথাও গাড়ি নেই।আচমকাই পেছন থেকে কেউ কাঁধ ছুঁলো।মুহুর্তেই বিদ্যুৎ স্পৃষ্টের মতো পেছনে ঘুরলো স্পর্শী।সামনেই গম্ভীর মুড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পরশ।তাকে দেখে কোনোরকম বাক্য ব্যয় করলো না স্পর্শী।চুপচাপ হাঁটতে লাগলো সামনের দিকে।পরশ অবাক হলো না।স্পর্শীর সাথে পা মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললো,

“আমার মেন্টালিটি একটু অন্যরকম।এই ধরো,শত্রুর বিপদেও চুপ থাকতে পারি না।আমাকে নিয়ে হয়তো তোমার কোনো চিন্তা নেই। না থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তোমাকে নিয়ে আমার দুশ্চিন্তার শেষ নেই।অচেনা জায়গায় একা মাতব্বরি করে এসেছো।ভাগ্য ক্রমে একই ফ্লাইটে একই রিসোর্টে পাশাপাশি রুমেই আছি।তাই তোমার খেয়াল রাখা টা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।এমন অচেনা জায়গায় আমাকে না বলে একা আসা তোমার মোটেও উচিত হয়নি।তার উপর কাল রাত থেকে আমাকে খাঁটিয়ে যাচ্ছো।এখানে সেখানে বারবার ঘোরাচ্ছো।তুমি জানো?সকাল হতে কত জায়গায় খুঁজেছি।”

“উফফফফ!আপনি একটু থামবেন প্লিজ!
থেমে গেলো পরশ।মিনিট খানেক হাঁটার পরে পুনরায় বললো,
” সকালে খেয়েছো?”
উত্তর দিলো না স্পর্শী।বরাবরের মতো হাঁটতে লাগলো রাস্তা ধরে।দীর্ঘশ্বাস ফেললো পরশ।কিন্তু পিছু ছাড়লো না।চলতে লাগলো সাথে সাথে।বেশ কিছুক্ষণ পর আবারো বললো,
“আমরা যাচ্ছি কোথায়?সেটা তো বলবে।”
পা থামিয়ে দিলো স্পর্শী।ক্রোধ নিয়ে পরশের দিকে তাকালো।বললো,
“আমি আমার কাজে যাচ্ছি।কিন্তু আপনি কোথায় যাচ্ছেন সেটা আমি কিভাবে বলবো?রাস্তা পেয়েছেন হাঁটছেন।ভালো কথা।আরো হাঁটেন।কিন্তু আমাকে বিরক্ত করবেন না।”
ঠোঁট টিপে হাসলো পরশ।বলল,

“তুমি যেখানে যাচ্ছো আমিও ওই একই জায়গায় যাচ্ছি।”
“এই আপনার লজ্জা করছে না এসব বলতে?কোন কুক্ষণে আমার জুতো হাতে নিছিলেন আপনি?জানেন কি কেলেঙ্কারি বাঁধিয়েছেন?কালকে বিকালের ছবি কেউ তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিছে।ফেসবুকে ঢুকতে পারছি না আমি।এত্তো এত্তো মেসেজ ফ্রেন্ড দের।তার উপর সেই সকাল থেকে বাড়ি থেকে ফোনের পর ফোন, মেসেজের পর মেসেজ আসছে।বাধ্য হয়ে ফোন বন্ধ রাখতে হচ্ছে আমাকে।কিভাবে যে পিরোজপুর যাবো ভাবতে পারছি না আমি।”
পরশ মাথা নিচু করে হাসলো।বললো,

“তোমার কি মনে হয় ছবিগুলোর কারনে আমার উপর কোনো প্রভাব পড়বে না।জনগণ জানে তাদের এমপি অবিবাহিত।আর হুট করে এমন ছবি বার হওয়ার পর সবাই আমাকে ঠিক কি ভাবছে বুঝতে পারছো তুমি?সবাই ভাবছে আমার চরিত্র খারাপ।কক্সবাজারে মেয়ে নিয়ে ঘুরতে আসছি।”
স্পর্শী নাক ছিটকালো।বললো,
“সেটা ভাবার কি আছে?আপনি এমনিতেও চরিত্রহীন।শুধু জনগণ জানে না।”
চোয়াল শক্ত করে ফেললো পরশ।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“কেন?তোমাকে জোর করে নিয়ে রুমে ঢুকছিলাম?নাকি চুমু-টুমু খাইছিলাম,যে চরিত্রহীন হবো।”
কানে নিয়েও ঝেড়ে ফেললো স্পর্শী।বিড়বিড় করে বললো,
“অসভ্য।ট্রিপল অসভ্য।”

ফোন টা বের করে স্পর্শীর সামনে ধরলো পরশ।সেখানে তাদের কালকের একটা ছবি।আর নিচে গুটি গুটি অক্ষরে মেসেজে লেখা,
“আমি করলেই সব দোষ,আর তুমি করলে লীলাখেলা।বাহ,ভাই বাহ!”
চোখ ঘুড়িয়ে স্পর্শী বললো,”কে এটা?”
পরশ বরাবরের মতো হাঁটতে হাঁটতে বললো,”পাভেল।রাতেই দিয়েছে,সকালে দেখেছি আমি।”
হা হয়ে গেল স্পর্শী।দ্রুত কন্ঠে বললো,
“ফোন দিয়েছিলেন?”
“হুম,বন্ধ করে রেখেছে নাম্বার।এক্টিভ ও নেই।”
পুনরায় হতাশ হলো স্পর্শী।বললো,
“আর্শির ছবি দেখিয়েছিলাম সকাল থেকে।ওখানের একজন ঝালমুড়ি ওয়ালা বললো সে কাল বিকেলে দেখেছে।বিস্তারিত জিজ্ঞেস করতে পারি নি।মহিলা ভীষণ রগচটা স্বভাবের।অনেক বার বলার পরে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো এদিকে নাকি গেছে।ভাবলাম ঘোরার পর যদি এদিকে এসে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই এদিকেই কোনো রিসোর্টে উঠেছে।”

বিশাল জানালা।দুপাশ দিয়ে পর্দাটা পেঁচিয়ে রাজকীয় ভাবে বাঁধা আছে।আর্শি নিমগ্ন হয়ে সকালের এই স্নিগ্ধ বাতাস কে গায়ে মাখতে লাগলো।তার পরনে পাতলা একটা সাদা রঙের গেঞ্জি।চুল গুলো উসকোখুসকো,চোখ মুখ ফোলা।আচমকাই পেছন থেকে একটা পুরুষালী হাত জড়িয়ে নিলো পেট।লম্বা মানবদেহের মাথাটা নুইয়ে থুতনি টা ঘষতে লাগলো আর্শির কাঁধে।পরিচিত ছোয়া পেতেই ঠোঁট দুটো চওড়া হলো আর্শীর।শরীরের ভরটা ছেড়ে দিলো খালি গায়ের ওই বুকখানির উপর।পাভেল জড়িয়ে নিলো তাকে।ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে উঠলো,
“তোমার কি মনে হয় ওরা প্রেম করছে?”

একদৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো আর্শি।বললো,
“উহুম!এটা কখনোই সম্ভব না।আপুকে যতটা চিনি তাতে কখনোই আপনার ভাইয়ের উপরে প্রেমে পড়তে পারে না।ঘটনা অন্যকিছু ছিলো হয়তো।ওরা হয়তো আমাদের খুঁজতে আসছে।
বাঁধ সাধলো পাভেল।বললো,
” তাহলে ওই ফটোগুলো?”
“জানিনা, মিথ্যে মনে হচ্ছে সব।”
ভাবলো পাভেল।বললো,
“ওটা এডিট নয় আর্শি।ওটা রিয়েল ছবি।আর আমি নিশ্চিত ওরা প্রেম করছিলো।আমার ভাবতেই অবাক লাগছে পরশ শিকদার কোনো মেয়ের জুতা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলো।তার থেকেও বড় কথা আমি কালকে ওদের দেখেছি।তোমার বোনকে না দেখলেও ভাইকে দেখেছি।কিন্তু বুঝে উঠতে পারেনি।হুট করে এমন দাঁড়িবিহীন ভাইটাকে কি করে চিনবো বলো?”

আর্শি নিশ্চুপ রইলো।ভাবতে লাগলো বাড়ির কথা।এই ছবি নিশ্চয়ই বাড়ির সবাই ও দেখেছে।ইশশশ!না জানি কোন কুরুক্ষেত্র বাঁধতে চলেছে।ধীর কন্ঠে শুধালো,
“পাভেল ভাই, আমরা কি সারাজীবন’ই এমন ভাবে পালিয়ে বেড়াবো?এভাবে ভাল্লাগছেনা আমার।”
“উহুঁ,একদম না।আর তো মাত্র কয়েকদিন।এরপর বাড়ি চলে যাবো তোমাকে নিয়ে।দেখবে, তখন সবাই মেনেও নিবে।

পাশাপাশি দুটো রিসোর্ট।এখান থেকেই স্পষ্ট দেখা যায় রাস্তা।নিরিবিলি পরিশেষে হুট করেই একটা গাড়ি থামলো।আর্শি তাকালো সেদিকে।গাড়ি থেকে বের হচ্ছে দুজন মানব-মানবী।আর্শি চমকে উঠলো।সেকেন্ড খানেক তাকিয়ে শিউর হতেই স্তব্ধ হয়ে গেলো।স্পর্শী আর পরশ পাশের রিসোর্টে ঢুকছে।পাভেলকে বলতেই সে তাড়াহুড়ো শুরু করে দিলো।পাঁচ মিনিটের মধ্যে লাগেজের মধ্যে কাপড় চোপড় ভরে নিলো। গায়ের গেঞ্জির উপরেই পড়ে নিলো জামা।দ্রুতপায়ে নেমে এলো নিচে।রিসেপশনে চাবি জমা দিতেই ছেলেটি বললো,
” কিন্তু স্যার,আপনারা তো দশ দিনের জন্য বুকিং করেছিলেন।হুট করে এখন’ই কেন ক্যান্সেল করছেন?”
পাভেল দ্রুতকন্ঠে বললো,
“আর্জেন্ট যেতে হবে।”

এরপর সিগনেচার করে সমস্ত টা বুঝিয়ে দু মিনিটের মধ্যে বেরিয়ে এলো।আশেপাশে গাড়ি নেই তেমন।সামনে তাকাতেই দেখলো কথা বলতে বলতে এদিকে আসছে স্পর্শী-পরশ।দ্রুত আড়ালে চলে গেল আর্শিকে নিয়ে।টের পেলনা স্পর্শী।পরশকে বললো,
“আপনি বুঝতে পারছেন না।ওরা নিশ্চয়ই টাকা খেয়েছে।ওই মহিলাকে আমার একটুও বিশ্বাস হচ্ছে না।এইজন্যই তো চাপ দিচ্ছিলাম।”
বিরক্ত হলো পরশ।বললো,
“তোমার এই চাপাচাপির বিষয় টা আপাতত বন্ধ করো।ওদের কে নরম হয়ে বললেই বলে দিবে।প্রয়োজনে টাকা দেওয়ার কথা বলবে।তাহলেই তো হলো।লোভে পড়ে বলতেই পারে।”
ধমক দিলো স্পর্শী।

“এই চুপ করুন তো।ঘুষ খোর এমপি।সবাইকে কি আপনার মতো ভেবেছেন নাকি?”
বলতে বলতেই ভেতরে ঢুকলো।স্পর্শী শান্ত কন্ঠে বললো,
“এক্সকিউজ মি!(আর্শি-পাভেলের ছবি বের করে বললো)একে দেখেছেন আশেপাশে?”
ছেলেটি স্পর্শীর মুখের দিকে চাইলো।বললো,
“জ্বি ম্যাম।এরা তো আমাদের রিসোর্টেই রুম বুক করেছ।”
চমকে গেলো পরশ।দ্রুতকন্ঠে বললো,
“কোন রুমে থাকছে একটু এড্রেস টা বলুন।”
“সরি স্যার,ওনারা তো এখন আর নেই।ট্যুর ক্যান্সেল করে দিয়েছে।”
অবাক হলো স্পর্শী।
“কেন?ট্যুর ক্যান্সেল কেন করেছে?”

“বলতে পারছি না ম্যাম।দশ দিনের জন্য বুকিং করেছিলেন।হুট করেই এসে বললেন আর্জেন্ট যেতে হবে।ওনারা তো মাত্রই বের হয়ে গেলেন।এইতো সামনেই হয়তো পেয়ে যাবেন।”
সময় নষ্ট করলো না স্পর্শী।দৌড়ে বের হলো রিসোর্ট থেকে।রাস্তার মাথায় আসতেই দেখলো একটা গাড়ি যাচ্ছে। পেছনে ছুটতে ছুটতে ডেকে বললো,
“আর্শি!আর্শি যাস না।আমার কথা শোন।আর্শি!!”
মুহুর্তের মধ্যেই গাড়িটা দৃষ্টিসীমানার বাইরে চলে গেল।চোখ দুটো টলমল করে উঠলো স্পর্শীর।ফুঁপিয়ে উঠলো।পরশ ধরলো স্পর্শীকে।ফুঁপিয়ে উঠে বললো,
“ও আমায় পেছন ঘুরে দেখলো।তাও গাড়ি থামালো না।আমি ছুটছিলাম রাস্তার মধ্যে।তারপরেও চলে গেল।”
পরশের বুকটা হাহাকার করে উঠলো।ভাইয়ের জন্য নয়।এই টলমলে চোখ থেকে।এই প্রথম হয়তো স্পর্শীর চোখে অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। তাকে সামলে নিতে বললো,

“আমাদের উচিত ছিলো আগে এই রিসোর্টে ঢোকা।বিশাল ভুল হয়ে গেল।আগে এটাতে ঢুকলে হয়তো ওদের পেয়ে যেতাম।”
নিজেকে পুনরায় শক্ত আবরণে ঢেকে নিলো স্পর্শী।কন্ঠে কাঠিন্যতা এনে বললো,
“আমি বাড়ি যাবো।এই মুহুর্তে বাড়ি যাব।কাউকে খোঁজার দরকার নেই আর।ও মরে গেলেও আমার কিচ্ছু যায় আসে না।”

রৌদ্রজ্জ্বল সকাল। ঘড়ির কাঁটায় তখন প্রায় এগারোটা ছুঁইছুঁই। লাগেজ সাথে নিয়ে নিরবে বসে আছে স্পর্শী।আর ঘন্টা দুই পরেই কক্সবাজার টু বরিশালের বিমান ছাড়বে।পরশ সস্তি নিয়ে টিকিট হাতে ফিরলো।ভাগ্যিস সিট ফাঁকা ছিলো।নাহয় আরো একটা দিন ওয়েট করতে হতো।টিকিট নিয়ে স্পর্শীর পাশে বসে বললো,
“এখনো দু ঘন্টা দশ মিনিট বাকি।কি দরকার ছিলো এতো তাড়াতাড়ি আসার?টিকিট কেটে নিলেই তো হতো।”
“আপনাকে কি আমি বলেছি সাথে আসতে?পড়ে আসতেন।নিজের ইচ্ছায় যখন এসেছেন তখন আমার কানের কাছে এসে ভ্যাঁড়ভ্যাঁড় করবেন না।খুব বেশি কষ্ট হলে চলে যান।”
হাসলো পরশ।স্পর্শীর হাত ধরে টেনে উঠালো।বললো,

“তোমার বোনের রাগ আমার উপরে কেন মেটাচ্ছো?চলো,খেতে যাবো।সকালে তো কিছুই খাওনি।”
স্পর্শী সাথে সাথেই গেল।খিদে পেয়েছে অনেক।সকাল থেকে একফোঁটা দাঁনা পানিও পেটে পড়েনি।মিনিট খানেক হেটে রেস্টুরেন্টে ঢুকলো তারা।আশেপাশ টা দেখে নিরিবিলি একটা টেবিল বেছে নিলো।খাবার অর্ডার দিয়ে ফোনটা বের করতেই অবাক হলো পরশ।পাভেল ভয়েস মেসেজ পাঠিয়েছে।স্পর্শীকে বলতেই সে ফোন নিয়ে নিলো। সাউন্ড বাড়িয়ে দিয়ে টেবিলের মাঝখানে ফোনটা রেখে ঝুঁকে কান পেতে শুনতে লাগলো দুজন।

“দেখ তোরা আমাদের এভাবে ধাওয়া দিতে পারিস না।আমরা দুজন’ই প্রাপ্ত বয়স্ক।মানছি আর্শির এখনো ১৮ হতে কয়েকটা মাস বাকি।তাই বলে কিন্তু ও ছোট না।নিজের ব্যাপারে যে কোনো সিদ্ধান্ত ও নিতে পারে।তোরা আর পিছু নিবি না বলে দিচ্ছি।তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।সারাজীবনেও আর ফিরবো না।আমরা দুজন যেদিন পালিয়েছি সেদিন ই কোর্ট ম্যারেজ করে হুজুর নিয়ে বিয়ে করেছি।আমরা হাসবেন্ড-ওয়াইফ যা খুশি করতে পারি।তোরা বাঁধা দিতে পারিস না।সামনে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন,সেদিকে ফোকাস কর।দল টল সামলা।আমি নির্বাচনের আগেই চলে আসবো।আর হ্যাঁ, মনে করিস না আমরা তোদের ভয়ে পালাচ্ছি।বউ নিয়ে হানিমুন করতে আসছি কক্সবাজার।তোর পিছু নিয়েছিস।এবার যাবো জাফলং।আবার পিছু নিলে সোজা দেশের বাইরে কোনো আইল্যান্ডে চলে যাবো।আর সরি ব্রো,তোর সিন্দুক থেকে লাখ খানেক নিয়ে আসছি।”

ওভাবেই টেবিলের উপর মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো স্পর্শী।মাথা তোলার শক্তি নেই একটুও।ইচ্ছে করছে ঘুমিয়ে থাকতে।আর্শি বিয়ে করে নিয়েছে ভাবতেই শরীর টা কেমন ঝাঁকুনি মারছে।
গটগট করে হেটে এলো দুজন।তারমধ্যে একজন স্পর্শীর হাত ধরে হেঁচকা টান মেরে চেয়ার থেকে উঠালো।ব্যতিব্যস্ত হয়ে তাকালো স্পর্শী।মুহুর্তেই ঠাস করে থাপ্পড় লাগালো শামসুল সরদার।হতভম্ব হয়ে গেল স্পর্শী।পরশ দাঁডিয়ে পড়লো চেয়ার ছেড়ে।সোভাম এগিয়ে গিয়ে বোনকে বাবার সামনে থেকে সরিয়ে নিলো।পরশের দিকে ক্রোধ নিয়ে তাকিয়ে বললো,
“সাবধান!আমার বোন থেকে দূরে থাকবি। নইলে….”
চুপ করে রইলো পরশ।পরিস্থিতি টা কথা বলার মতো নয়।সোভাম বাবাকে বুঝিয়ে স্পর্শীকে টেনে নিয়ে গেলো সাথে করে।

“আব্বু,আমার টিকিট কাঁটা হয়ে গেছে।আর কিছুক্ষণ পরেই প্লেন ছাড়বে।”
শুনলো না শামসুল। তারা যেতেই টিকিট দুটোর দিকে তাকালো পরশ।অজানা কারনেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো।অর্ডার দেওয়া খাবার এসে গেছে।দু প্লেট ফাইড রাইস,দুটো চিকেন রোস্ট আর দু বাটি গরুর মাংস। খাবারের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো।কিছুতেই খেতে ইচ্ছে করছে না।এক প্লেটের অল্প কিছু খেয়ে উঠে গেল।ওয়েটারকে ডেকে বললো,
“সাথের জন নেই।তুমি খেয়ে নিও।”
এরপর উঠে ব্যাগ হাতে নিতেই চমকে উঠলো।স্পর্শীর ট্রলি ফেলে গেছে।শুধুমাত্র হ্যান্ড ব্যাগ টাই নিয়ে গেছে হয়তো।আলতো হেসে ট্রলি দুটোকে নিয়ে এগিয়ে গেলো ভেতরে।
সরদার বাড়ির ড্রয়িং রুমে ঢুকতেই স্পর্শীর হাত ছেড়ে দিলো সোভাম।তারা হেলিকপ্টারে এসেছে।বাড়ির সকলে ইতোমধ্যে ড্রয়িংরুমে হাজির।ক্রুদ্ধ শামসুল হক হুংকার ছুঁড়লেন।

“আমার ভাগ্য অত্যন্ত ভালো যে গত উনিশ টা বছর তোমরা আমার কাছে ছিলে না।অন্তত সম্মান নিয়ে রাস্তাঘাটে হাঁটতে পেরেছি।কপাল খারাপ যে তোমরা আমার কপালে আবার জুটেছো।লজ্জা করে না, বোনকে খোঁজার নাম করে কক্সবাজারে গিয়ে আমার সম্মান ডুবিয়েছো।ছিহঃ!রাস্তাঘাটে বেরোতে পারছি না আমি।লোকজন বলাবলি করছে,’শামসুল সর্দারের দিন শেষ। সে এখন আর টিকতে পারে না।সেজন্যই মেয়েদের কে লেলিয়ে দিয়েছে শিকদারদের পিছনে ক্ষমতার লোভে।আমি তোমাকে বিশ্বাস করে একা ছেড়েছিলাম।এই প্রতিদান দিলে?”
ক্লান্ত স্পর্শী ফুঁপিয়ে উঠলো। নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে বলল,
“আব্বু বিশ্বাস করো।পরশ শিকদারের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।আমি আর্শিকে খুঁজতে বেরিয়েছিলাম আর উনি পাভেল কে খুঁজতে।ব্যস তখনই দেখে হয়েছে।আর কিচ্ছু না।”
রুষে উঠলো সোভাম।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

“ওহ, আচ্ছা।দেখা হওয়ার পর পরশ তোমার জুতো হাতে নিয়ে হাঁটলো।তুমি সমুদ্রে নেমে ওর দিকে ফিরে হাসলে।এরপ ওর হাত ধরলে।এটা ব্যাস দেখা হওয়ার পর হয়েছে। তাই তো?তোমার সাথে তো ওর সম্পর্ক অনেক খারাপ ছিলো।হুট করে দেখা হওয়ার পর ও ভাবলো তোমার জুতো নিয়ে হাঁটি।এটাই বোঝাতে চাইছো?”
কি বলবে স্পর্শী।কি উত্তর দিবে?কিছুই ভেবে পেল না।অস্ফুট আর্তনাদ করে বললো,
“তোমরা আমাকে ভুল বুঝছো।”

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৩৬

এরপর আর দাঁড়ালো না।ক্লান্ত পায়ে হেঁটে গেল উপরের দিকে।শামসুল সরদার উচ্চ আওয়াজে বললেন,
“বেশ!মেনে নিলাম তোমার দোষ নেই।তোমার সম্পর্ক ও নেই।আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তোমার বিয়ে দেব আমি।নিজেকে প্রস্তুত করো।

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৩৮