রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৭৬

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৭৬
সিমরান মিমি

দিনের দ্বিতীয় প্রহর।দুপুর তখন প্রায় সাড়ে বারোটা।চারদিকে লোকজনের বিশাল সমাগম।বারান্দার শীতল হাওয়ায় দাঁড়িয়ে ক্রমশ রিং পড়ে যাওয়া ফোন টাকে রিসিভড করলো।সাথে সাথেই ওপ্রান্ত থেকে মধ্যবয়সী এক পুরুষ বলে উঠলো,
_”কাজ কতদুর?”
কপাল কুঁচকে ফেললো সোভাম।কন্ঠে গম্ভীরতা এনে বললো,_”কোন কাজ?”
লোকটা যেন বিরক্তই হলো।কিন্তু সেটাকে প্রকাশ না করে নিজের মধ্যে চাপিয়ে নিলো।শান্ত স্বরে বললো,_”পরশের বোনের সম্পর্কে বলতেছি।ভুলে যেওনা ও তোমার নাকের ডগা দিয়া বোন দুইটারে নিয়া গেছে।তাও তোমার নাক কাইটা।”

বোনদের কথা স্মরণ হতেই দপদপ করে চোখ দুটো জ্বলে উঠলো সোভামের।ক্রোধ সংবরণ করে গম্ভীর কন্ঠে বললো,_”কবির খাঁ,এটাই লাস্ট বার।আমি তোমাকে আগেও বলেছি সোভাম সরদারকে ব্যবহার করতে আসবে না।হিতে বিপরীত হতে সেকেন্ড ও লাগবে না।তোমাকে আমার প্রয়োজন ছিলো বিধায় কাজে লাগিয়েছে।সফল হই নি ব্যাস ওই পর্যন্তই। তোমাকে আর আমার প্রয়োজন নেই।ফোন করবে না।”
_”না, এটা বললে তো হবে না।তুমি বিয়ে আটকাতে পারো নি তো কি হয়েছে?এইটুকুতেই কি হেরে গিয়ে বসে থাকবা?তোমার সাথে যায় না এটা।ভুলে যেওনা পরশ তোমার দু-দুটো বোন নিয়ে গেছে।ও পারলে তুমি কেন পারবা না?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

_”আমি পরশ শিকদারের মতো কাপুরুষ নই যে বোনদের উপর টার্গেট করবো।আর তোমার মতো কুত্তাও নই যে যেখানে সেখানে জিভ বের করে চাটতে চাইবো।
কথাগুলো ধীরে ধীরে অশ্রাব্য হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারতেই নিজেকে সামলে নিলো সোভাম।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিঁজিয়ে বললো,_”এর আগে তুমি আমায় না জানিয়েই ওকে ফাঁসিয়েছো।ওর সাথে কি করতে চেয়েছিলে ওই দিন জঙ্গলে?আমাকে দেখে আবার তোমার লোক পালিয়েও ছিলো।সেসব বাদ দিলাম।মেয়েটার বয়স অনেক কম।অবুঝ আর আবেগী।এমনিতেই ও বড্ড দুর্বল হয়ে পড়েছে।এখন আমার থেকে কোনোরকম সায় পেলে ব্যাপার টা গুরুতর হয়ে যাবে।আমি এ ধরণের কোনো ঝামেলায় জড়াতে চাই না।”
_”আরে এখানে ঝামেলার কি আছে।বেশি গুরুতর হলে তো বিয়ে পর্যন্তই আগাবে।এর থেকে আর কতদুর?ভালোই হবে।এতে আরো তোমার হাতে লাগাম থাকবে শক্ত ভাবে।ওরা কোনোরকম হেড়ফেড় করলেই দড়ি ধরে টান মারবে।বুঝেছো?”

_”না বুঝিনি।একটা কথা ভুলে যেও না- বিয়ে হলে ও তখন পরশ শিকদার এর বোন নয় সোভাম সরদারের স্ত্রী থাকবে।আর সোভাম সরদার কাপুরুষ নয় যে নিজের স্ত্রীকে গুটি বানাবে।আর বাকিটা রইলো ওরা আমার বোনদের গুটি বানাবে কি না সেটা নিয়ে।তাহলে এটাও ভুলে যেওনা -সোভাম সরদার ভেবে-চিন্তে কাজ করলেও স্পর্শীয়া সরদার ভাবে না।ভাবার টাইম টুকুও রাখে না। তোমাকে আমি লাস্ট বার ক্লিয়ার করছি,”বিয়ে ভাঙার জন্য এতোকিছু।কিন্তু বিয়েটা হয়ে গেছে।আপাতত যাবতীয় প্লান ক্যান্সেল।আমি এসব নিয়ে ভাবতে চাইছি।সিম টা চেঞ্জ করছি।আশা করছি তুমি আর অন্য উপায়ে বিরক্ত করবে না।”

মুখের উপর’ই কেটে দিলো ফোন।নাকে চোখে মুখে তার স্পষ্ট বিরক্তি।ফোন থেকে তৎক্ষণাৎ সিম টাকে খুলে ভেঙে ফেলে দিলো নিচে।ঘাড় ঘুরিয়ে রুমের দিকে যেতেই চোখ পড়লো দরজার উপরের দিকে রাখা ক্ষুদে ক্যামেরা টার দিকে।সোভাম বাঁকা ঠোঁটে হাসলো।ক্যামেরা টার কাছে গিয়ে আলতো হেসে বললো_”এটা দারুণ ছিলো।তবে এতোকিছুর প্রয়োজন ছিলো না।সোভাম সরদার চাইলে সেকেন্ডের মধ্যে তোমায় ধ্বংস করে দিতে পারে।”
স্ক্রিনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলো পরশ।চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে দীর্ঘ এক হামি দিলো।এরপর পেছনের চেয়ারের দিকে তাকিয়ে নাটকীয় সুরে বললো,_”আমি ভয় পেয়ে গেছি তোর সম্বন্ধির হাস্যকর হুমকিতে।”
পাভেল ভাইকে বিদ্রুপ করে উত্তর দিলো।বললো,_”ওটা তোর ও সম্বন্ধি।”

আচমকাই কিছু মনে পড়ে যাওয়ার মতো মাথা নাড়ালো পরশ।বললো,_”ওহহ,হ্যাঁ -তাইতো।”
এরপর পুণরায় নাটকীয় ভঙ্গিতে বললো,_”আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেছি সম্বন্ধি সাহেব।আবার আসবেন।”
বলেই স্ক্রিন অফ করে দিলো।এরপর ভয়ংকর আওয়াজে বললো,_”খাঁয়ের বাচ্চাকে ফোন লাগা।’
মুহুর্তেই রিং পড়ার শব্দ এলো কানে।ওপাশ থেকে রিসিভড করতেই পরশ সালাম দিলো।ভদ্র ভাবে শান্ত কন্ঠে বললো,
_”কবির খাঁ,ঝিলিক আর ঝিনুক আইডিয়াল এ পড়ে না?আরে আমি জানি তো। আচ্ছা বাদ দে,যে টা বলছিলাম।প্রেমা শিকদারের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া বন্ধ কর তাহলে আমিও তোর জমজ মেয়ে দুইটার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া বাদ দিয়ে দিবো।শুনলাম তোর আর বাচ্চাও হবে না।এই দুটোই সম্বল।সামলে রাখিস ভাই।বুঝেছিস?”
ওপাশের লোকটা যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে।পরশ আর সময় ব্যয় করলো না।আলগোছে কল কেঁটে দিয়ে পাভেলের উদ্দেশ্যে বললো,
_”প্রেমার যেন এক টা চকলেট আনার জন্যে ও বাইরে বের না হতে হয়।কোচিং অনলাইনে করুক।গাইড লাইন তোর ভাবি দিবে।”

_”মাথায় কি চলছে আবার?”
চমকে সামনে তাকালো স্পর্শী।গায়ের আচল টা ঠিকভাবে গায়ে দিয়ে মাথা নাড়িয়ে বললো,
_”কই?কিছু না তো।”
মানলো না পরশ। একহাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে টেনে বিছানায় বসালো।এরপর কাধের উপর থুতনি রেখে ভাবুক স্বরে বললো,
_”উঁহু!এটা তো বিশ্বাস যোগ্য নয়।আপনার এই মাথাটা কিছু না ভেবে চুপ করে বিশ্রাম নেবে এটা মানাই যায় না।কোন কু-বুদ্ধি পাকাচ্ছিলে সেটা বলো।”
স্পর্শী হাসলো।এরপর পরশের চুলের মধ্যে হাত বুলিয়ে বললো,
_”অতকিছু শুনতে হবে না।শুধু এটুকু জেনে রাখুন,যাই ভাবি না কেন সেটা আপনাকে তব্দা খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ট। ”
_”আমি তো সারাজীবন তব্দা খাওয়ার জন্যই আপনাকে বিয়ে করেছি ম্যাডাম।”
_”আমিও সেই দায়িত্ব ‘ই যথাযথ ভাবে পালনের চেষ্টা করছি স্যার।”

দিনের মধ্যবর্তী সময়।ঘড়ির কাঁটায় তখন দেড়টা।বিশাল সামিয়ানার নিচে এই গরমেও চারদিক থেকে বড় বড় ফ্যান চলছে।তাবু ঢাকা বিশালাকার স্থানটিতে বসে দুপুরের খাবার খেতে ব্যস্ত সবাই।সোভাম চুপচাপ নিচু মুখে খাচ্ছে।অনিচ্ছা সত্ত্বেও একই টেবিলে বসতে হয়েছে পরশের সাথে।তার থেকে তিন চেয়ার পর প্রেমা বসেছে।এ যাবৎ অনিচ্ছাকৃত ভাবে দুবার তাকিয়েছে ওইদিকে।আর দু-বার ই মেয়েটা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো।বিষয়টা খুব-ই ভয়ংকর।যে কেউ দেখে ফেলতে পারে নিমিষেই।কিন্তু সেদিকে মোটেও খেয়াল নেই প্রেমার।সেতো সোভামের থেকে এটেনশন পাওয়ার জন্য ব্যস্ত।এতোক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরেও যখন কোনোরকম কাজ হলো না, তখন শুরু করলো অনুকরণ। সোভাম বাম হাতে মাত্রই চুল ঠিক করেছে।সেটা দেখতেই প্রেমা সেইম ভাবে চুল সরালো।হতভম্ব হয়ে প্লেটের দিকে তাকিয়ে রইলো সোভাম।সব কিছু স্বাভাবিক ভাবে নেওয়ার জন্য হাতে রোস্ট নিয়ে ছিলতে লাগলো।সাথে সাথেই প্রেমা রোস্ট খেতে আরম্ভ করলো।বাক হারা হয়ে গেলো সোভাম।আশেপাশে সবার দিকে তাকিয়ে অগোচরে চোখ গরম করে তাকালো।অনুকরণ করতে করতে অবিশ্বাস্য কাজ টা করে বসলো প্রেমা।সোভামকে চোখ রাঙিয়ে নিজেই হতভম্ব হয়ে গেলো।কাশতে লাগলো অনবরত।

বিকেল গড়িয়ে গেছে অনেক।আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সন্ধ্যা নামবে।ড্রয়িংরুমে সবার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে সোভাম।দুপুরের খাওয়ার পর্ব শেষ হবার পর থেকে আর একাকী বসে না।খুব সুক্ষ্মভাবে প্রেমাকে এড়িয়ে ভীড়ের মধ্যে অবস্থান নিয়েছে।বাবার কাছে দেওয়া কথা মোতাবেক রাত টা কাঁটিয়ে সকালে বোনদের নেওয়ার কথা থাকলেও খাবার পর-পর-ই বাড়িতে যাওয়ার জন্য তাড়া দিয়েছে।বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সন্ধ্যার আগেই বাড়ি পৌছাবে ঠিক করেছে।এখানে বেশিক্ষণ থাকা মোটেও সুবিধার না।মেয়েটার যেন হুট করেই সাহস বেড়ে গেছে।যেকোনো ঝামেলা ঘটতে খুব বেশি সময় লাগবে না।

আর্শি এবং স্পর্শী দুজনেই তৈরী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।শামসুল সরদার নিজেও এসেছিলেন দুপুরে।এখনো যান নি।ছোট মেয়ের প্রতি মান-অভিমানের কারনে এখনো কোনো রকম আনুষ্ঠানিকতা করা হয়নি।কিছুদিন পরে বাচ্চা হবে।এই মুহুর্তে কোনো অনুষ্ঠান করে জনগণের হাসির পাত্র হতে চান না।ফলস্বরূপ বড় মেয়ের সাথে সাথেই ছোট মেয়েকেও আনুষ্ঠানিক ভাবে নাইওর নিতে এসেছেন।আজ সরদার বাড়িতে বাড়ির দুই মেয়ে ও দুই জামাই যাবে। এছাড়া প্রেমাও যাচ্ছে।পাভেল প্রথমে আপত্তি করলেও পরশ সম্মতি জানিয়েছে।মান রক্ষার্থে কম পক্ষে দু থেকে তিন দিন শশুর বাড়িতে থাকতে হবে।প্রেমার উপরে ষড়যন্ত্রের ছক একবার যখন কষা হয়েছেই সেক্ষেত্রে কোনোরকম রিস্ক নেওয়া উচিত হবে না বলেই বোনকে সাথে নিচ্ছে পরশ।বাড়িতে একাকী রেখে যেতেও ভরসা পাচ্ছে না।
স্পর্শীর পাশে লেহেঙ্গা পড়ে থাকা প্রেমা কে দেখতেই কপালে হাত দিলো সোভাম।এই মেয়ে সঙ্গে যাবেই।সেই যতই দূরে থাকার চেষ্টা করুক না কেন কেঁচোর মতো মোড়াতে মোড়াতে সাথে সাথেই যাচ্ছে।দাঁতে দাঁত চেপে একপ্রকার বাধ্য হয়ে বোনদের নিয়ে বাড়িতে ফিরলো।

সরদার বাড়ি পৌছাতে মিনিট পনেরো -র মতো সময় লেগেছে।এরপর থেকে সারারাতেও কোনো পাত্তা নেই সোভামের।গাড়ি থেকে বের হয়ে নিজের রুমে গিয়ে পাঞ্জাবি পরিবর্তন করেছে।এরপর সেই যে বাড়ির বাইরে গিয়েছে তারপর রাতের খাবারের সময়েও টেবিলে দেখেনি।এদিকে ভেতরটা ছটফট করছে প্রেমার।সেতো জ্বালাতেই এসেছিলো।অথচ যা কে জালাবে সে নিজেই লাপাত্তা।এদিকে নির্দিষ্ট করে কাউকে যে সোভামের কথা জিজ্ঞেস করবে তেমন উপায় ও নেই।শেষ মেষ বিরক্ত হয়ে বসে রইলো রুমে।ঘড়ির কাঁটায় তখন সাড়ে এগারোটা।ইতোমধ্যে বাড়ির প্রত্যেকটা রুমের লাইট অফ করে দিয়েছে।হঠাৎই সদ্য চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকা প্রেমার কর্ণগোচর হলো দরজা খোলার শব্দ।নিস্তব্ধ পুরো বাড়িটাতে এমন শব্দ বড্ড স্পষ্ট শোনাচ্ছে।কারো সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার আওয়াজ ও বোঝা যাচ্ছে।এতো রাতে কে আসবে?

হঠাৎ সোভামের কথা স্মরণ হতেই শোয়া থেকে উঠে বসলো প্রেমা।দ্রুতপায়ে বিছানা থেকে নেমে এগিয়ে গেলো দরজার দিকে।আলতো আওয়াজে খুলে উঁকি দিলো উপরের দিকে।মুহুর্তে ‘ই হৃদয়’টা উদগ্রীব হয়ে উঠলো।হ্যাঁ, সোভাম এসেছে।তার রুমের দরজা খোলা।কিন্তু এখন সেখানে যাওয়াটা মোটেও উচিত হবে না।রাত হয়েছে অনেক।ভেবে রুমে ঢুকতেই মত পালটে গেলো প্রেমার।মন বললো,-“ধুর!এতো ভাবাভাবির কি আছে?চট করে গিয়ে জাস্ট উঁকি মেরে দেখে আসবি কি করছে ব্যাটা।এরপর এক পলক দেখেই আমার ফট করে রুমে চলে আসবি।ব্যাস!হয়ে গেল।”

যেমনি ভাবনা ওমনি কাজ।তবে যে চট করে মোটেও যেত পারলো না।বরঞ্চ প্রতিটা পদক্ষেপে সারা শরীর উত্তেজনায়,ভয়ে কাঁপছিলো অজানা কারনে।সোভামের রুমের সামনে গিয়ে আলতো হাতে দরজাটা ফাঁকা করে নিলো।উঁকি মারতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ন্যায় চমকে চার পায়ে-হাতে লাফিয়ে উঠলো।কিন্তু তাল সামলাতে না পেরে দরজার উপরেই পড়লো।সাথে সাথেই তার ভাড়ে আনলক করে রাখা দরজা কড়কড় শব্দে খুলে গেলো।
ফ্লোরে হাটু মুড়ে পড়ে আছে প্রেমা।চোখ দুটো তার খিঁচিয়ে বন্ধ করা।সে কিচ্ছু দেখে নি।শুধুমাত্র খালি গায়ে থাকা ত্রিশোর্ধ পুরুষকে দেখেছে।যার প্রশস্ত লোমশ বুকটা ছিলো বেশ আকর্ষণীয়।ভাবতেই জিভে কামড় দিয়ে ধরলো।দুপাশে মাথা নাড়িয়ে অনবরত বলতে লাগলো, _”না না না না।ছিঃ ছিঃ ছি! কিচ্ছু দেখি নি আমি।কিচ্ছু না।”
ইতোমধ্যে টিশার্ট পড়ে নিয়েছে সোভাম।আচমকাই ঘটা এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনায় হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো।দরজার কাছে এসে চারদিকে তাকিয়ে এরপর ভেতর থেকে আটকে দিলো দরজা।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,_”বুঝেছি কিচ্ছু দেখোনি।আর দেখার মতো কিচ্ছু ছিলোও না।উঠে দাঁড়াও।স্টুপিডের মতো ঢং করো না।”
নিমিষেই চোখ খুলে তাকালো প্রেমা।সোভাম পুণরায় প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বললো,

_”আমি এসেছি টের পেলে কিভাবে?”
কোনোরকম ভণিতা না করে সরাসরি উত্তর দিলো প্রেমা।বললো,
_”আমি যাতে টের পাই সেভাবেই তো আপনি জোরে দরজা খুলে এসেছেন।এখন নাটক করছেন কেন?”
হা হয়ে তাকিয়ে রইলো সোভাম।কিছু বলতে গিয়েও গিলে ফেললো।বিরক্তিকর শব্দে বললো,
_”স্টুপিড!”
স্তব্ধ হয়ে গেলো পাভেল।দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলো সোভামের রুমের দিকে।দরজার সামনে কান পাততেই অবাক হয়ে গেল।মুহুর্তে’ই মাথায় রক্ত উঠে গেল।গায়ের প্রতিটা শিরা-উপশিরায় যেন রক্তের বদলে আগুন জ্বলছে।গায়ের সর্বোচ্চ শক্তিতে দরজার উপর ধাক্কা মেরে বললো,
_”প্রেমা তুই ভেতরে কেন?দরজা খোল।এইইই দরজা খোল।”
ভয়ে কেঁপে উঠলো প্রেমা।শান্ত ভঙ্গিতে একবার প্রেমার পাংশুটে মুখের দিকে তাকালো সোভাম।এরপর শান্তভাবে খুলে দিলো দরজা।পাভেল হুরমুড়িয়ে ভেতরে ঢুকলো।চোখ দুটো তার জ্বলছে।বিছানার উপরে সোভামের খুলে রাখা পাঞ্জাবি।দুরেই খাটের এক কোনায় দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপছে প্রেমা।পাভেল চিৎকার করে উঠলো।বললো,
_”এখানে কি হচ্ছে?”

কোনোরকমের চিন্তা, ভয় বা অসস্তি দেখা গেল না সোভামের চোখেমুখে। বরাবরের ন্যায় শান্ত কন্ঠে পাঞ্জাবি গোছাতে গোছাতে বললো,
_”রুমটা আমার।আমার জায়গায় আমিই আছি।কিন্তু তোমার বোন তার জায়গায় নেই।সে কোনো এখানে সেটা তাকেই জিজ্ঞেস করো।”
এ পর্যায়ে যেন মুর্ছা যাবে প্রেমা।আল্লাহ!সব টা স্বপ্ন হয়ে যাক।কলেজে আসা সকল ভিক্ষুককে প্রেমা একশো করে টাকা দিয়ে দেবে।কিন্তু এই মানত ও যেন কাজে ফললো না।বরং তার স্বপ্নকে সত্যি করতে পাভেলের এক থাপ্পড় ই যথেষ্ট ছিলো।ইশশ!কান থেকে যেন ধোয়া বেরিয়ে গেল।কিন্তু কোনো ব্যাথাতুর অনুভূতি এখনো পায় নি প্রেমা।শুধুমাত্র জায়গাটা অসাড় হয়ে গেছে।ইশশ!ব্যাথা হচ্ছে।ধীরে ধীরে চিনচিন করে ব্যথা উঠছে।
পাভেল তার প্রশ্নের কোনো উত্তর-ই পেল না।রাগের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছে পুণরায় থাপ্পড় মারতে যেতেই হাত ধরে ফেললো সোভাম।নিমিষেই গুটিশুটি পাকিয়ে তার পেছনে গিয়ে আশ্রয় নিলো প্রেমা।পাভেলের দিকে তাকিয়ে হাসলো সোভাম।বিদ্রুপ করে বললো,

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৭৫

_”দেখেছো?তোমার থেকেও ও আমাকে বেশি সেফ মনে করে।
থেমে,
-কি যেন বলছিলে?ও কেন এতো রাতে আমার ঘরে।কারন টা আমিই বলি।ঠিক যে কারনে আর্শিয়া সরদার পুরো সরদার বাড়ির মান সম্মান জলাঞ্জলি দিয়ে রাতের অন্ধকারে তোমার হাত ধরে পালিয়েছিলো।ঠিক সেই কারনেই আজ প্রেমা শিকদার তোমাদের নাক কেঁটে রাতের অন্ধকারে আমার রুমে হাজির হয়েছে।বুঝেছো?নাকি আরো বোঝাতে হবে।”

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৭৭