রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৮১
সিমরান মিমি
সদ্য প্রেমে পড়া পবিত্র মনটা যখন সেই প্রেমিক পুরুষ’ই সযত্নে ভেঙে গুড়িয়ে দেয় তখন আর অপেক্ষার অবকাশ থাকে না।যৌবন বলো কৈশোর বলো এটাই তো ছিলো প্রেমার জীবনের সর্বপ্রথম প্রেম।একটু একটু করে গড়ে ওঠা লজ্জা,হাসি,খুনশুটি,অভিমান মাখানো অনুভূতি মিশ্রণ টাকে কিভাবে পারলো ওই পাষাণ হৃদয়টা ভেঙে, গুড়িয়ে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিতে?একটুও কি মায়া হলো না তার?একবার কি মনেও হলো না মেয়েটা কষ্ট পাবে।ভাবতেই দুহাতে চোখের গড়িয়ে পড়া পানিটুকু মুছলো।নাক টেনে পুণরায় সেই পুরুষকে নিয়ে ভাবতেই ছোট্ট হৃদয়টুকু কঠোর হয়ে উঠলো।দ্রুতবেগে প্রতিবাদ করে দাম্ভিকের স্বরে বললো,
-কষ্ট?সে কেন কষ্ট পাবে?কার জন্যই বা পাবে?ওই পাষাণ পুরুষের জন্য?মোটেই না।বরং তার চোখের সামনে অন্যকাউকে বিয়ে সুখে-শান্তিতে বিয়ে করে বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে হাটবে।না না শুধু হাঁটবে না,দৌড়াবেও।একটা বুড়ো লোক,কে বিয়ে করবে ওকে?তার তো হাজার গুণে কপাল যে প্রেমা শিকদার তাকে পছন্দ করেছিলো।কিন্তু বিয়ে কিভাবে করবে প্রেমা?কাকে গিয়ে যে-চে বলবে আমাকে বিয়ে দাও,আমি বিয়ে করে সরদারের ব্যাটাকে দেখিয়ে ছাড়বো।উফফ!অসহ্যকর এক অবস্থা।কাল কত্ত বড় অঘটন টা ঘটালো।অথচ এখনো পর্যন্ত পরিবারের কেউই তাকে বলে নি,তোকে জোর করে অন্যকোথাও বিয়ে দেবো।এটা কেমন পরিবার?আজব মস্তিষ্ক সবার।বরং তার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই তো দুপুরে বের হওয়ার আগে সযত্নে হুমকি দিয়ে বলে গেছে,“লেখাপড়ার অবস্থা যদি একটুও খারাপ হয় তো তোকে এরপর বাড়িতে না, সোজা হোস্টেলে দিয়ে আসবো।বছর গেলেও বাড়ির ছবি দেখতে পারবি না।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
প্রেমা চোখেমুখে বিরক্তি নিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসলো।মুখ চোখ ধোয়ার প্রয়াস করে বাথরুমের দিকে যেতেই থমকে দাঁড়ালো।পুণরায় এগিয়ে এলো আয়নার দিকে।মুখটাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে মনে মনে বললো,-ধোয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।এখনি তো বেশি সুন্দর লাগছে।
এরপর ঠোঁট দুটোকে সামান্য রাঙিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।সময় এখন সন্ধ্যা পরবর্তী।উঁকি মেরে ড্রয়িংরুমের দিকে দেখলো সে।কেউ নেই।অদ্ভুত! নিত্যকার মতো আজ কেউই নেই ড্রয়িংরুমে।অথচ অন্যসব দিন সবাই এই সময়টাতে চা-কফি খেত।এগিয়ে গেলো সামনের দিকে।ধীরে ধীরে এসে থামলো বড় ভাইয়ের রুমের সামনে।মাথা নিচু করে উঁকি মারলো। রুম পুরোটা ফাঁকা।এর মানে তার ভাই এই মুহুর্তে রুমে নেই।হয়তো বাড়ি ও আসি নি এখন পর্যন্ত।দ্রুতবেগে ঢুকে পড়লো ভেতরে।দরজা আটকে বসে পড়লো খাটে।স্পর্শী মাত্র’ই হাতে শুকনো জামাকাপড় নিয়ে ঢুকলো।বিকালে ঘুমিয়ে পড়েছিলো বিধায় বারান্দা থেকে জামাকাপড় আনা হয় নি।খাটের উপর প্রেমাকে বসে থাকতে দেখেই ভ্রুঁ উঁচালো।ভাঁজ করতে করতে বললো,
-হঠাৎ এখানে?
উত্তর দিলো না প্রেমা।বরং তেজ নিয়ে নিজেই উলটো প্রশ্ন ছুঁড়লো।
-কেন তুমি জানো না?
থেমে শান্ত হলো ঠোঁট ভেঙে আমতা-আমতা করে বললো,
-আমি বিয়ে করবো।তুমি আম্মুকে বলবে যে প্রেমা এখন আর পড়াশোনা করবে না।মন ভেঙে গেছে তার।এই মুহূর্তে বিয়ে করা উচিত।নইলে সামনে আরো বড় ভুল করার সম্ভাবনা আছে।বুঝলে?
স্পর্শী এক ঝলক তাকালো।এরপর আলতো হেসে বললো,
-শান্তিতে আছো সহ্য হচ্ছে না?
-না হচ্ছে না।আমার যথেষ্ট বয়স হয়েছে।প্রত্যেকেরই একটা স্বপ্ন থাকে।আমার সেই স্বপ্ন হচ্ছে পড়ালেখা বাদ দিয়ে বিয়ে শাদী করে জামাই বাচ্চা নিয়ে তোমার বুড়ো ভাইয়ের সামনে ঘুরঘুর করা।বুঝেছো?
রুমের প্রতিটা কোণা যেন শূন্য ঠেকছে স্পর্শীর কাছে।বিছানায় বসে গায়ে কম্বল জড়িয়ে কোলের উপর বালিশ নিয়ে ভাবনাতে মশগুল সে।মন তার কোনো কারনবশত বেজায় খারাপ।সেই সকালে আসার পর থেকে একবারেও কথা বলে নি পরশ।সর্বোচ্চ অবহেলা করে চলে গেছে উদ্দেশ্যহীন হয়ে।এসব নিয়ে না ভাবতে চাইলেও সেই গেঁথে রয়েছে মস্তিষ্কের মধ্যখানে।ভালো লাগছে না।বাড়িতে কথা বলা প্রয়োজন।বিশেষ করে মন খারাপ থাকলে মায়ের সাথে কথা বললে তা নিমিষেই ভালো হয়ে যায়।ভেবেই কল লাগালো ফোনে।
সন্ধ্যার পরক্ষণটা সরদার বাড়ির প্রত্যেকেই থাকে ড্রয়িংরুমে।সন্ধ্যার নাস্তা খেয়ে আলোচনা করতে থাকে টুকটাক বিষয় নিয়ে।পিপাসা বেগম খাবারের ট্রে হাতে রান্নাঘরে গিয়েছেন।ফোনটা পড়ে আছে টি-টেবিলের পাশেই।রিংটোন বাজতেই রিসিভড করলো আর্শি।বেড়ে ওঠা পেটটাতে হাত দিয়ে অতি সাবধানে বসলো সোফায়।বোনের নাম্বার দেখতেই চিন্তিত কন্ঠে বললো,
-কেমন আছিস আপু?সব ঠিক আছে?জানিস,উনি মনে হয় রাগ করেছে আমার সাথে ফোন ধরছে না সকাল থেকেই।
চমকে তাকালো শামসুল।বাবার দিকে তাকাতেই নিজেকে শুধরে নিয়ে আর্শি আমতা-আমতা করে বললো,
-ব্যস্ত আছে মনে হয়।রাতে ফোন দিবে বলেছে।
বুঝতে পারলো স্পর্শী।বললো,
-পাশে কে?
-সবাই।
চুপ করে ভাবলো। এরপর বললো,
-প্রেমার বিয়ে নিয়ে একটু ব্যস্ত আছে সবাই।হয়তো এ সপ্তাহেই হয়ে যাবে। তোকে কাল পরশুর মধ্যেই পাভেল গিয়ে নিয়ে আসবে।চিন্তা করিস না।
খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে চিৎকার করে উঠলো আর্শি।চোখে-মুখে তার খুশির আমেজ চিকচিক করছে।বললো,
-সত্যি?প্রেমার বিয়ে।আমি কাল’ই যাবো।প্লিজ আপু তুই বল না ওনাকে।আমাকে যেন এসে নিয়ে যায়।আমি তো ভাবতেই পারছি না প্রেমা বিয়েতে রাজী হয়েছে।
-হুম হয়েছে।নিজে থেকেই বিয়ে করবে বলেছে।তুই বাকিদের জানিয়ে দিস তো।আমি রাখছি এখন।
চোখের দৃষ্টি পুরোপুরি ফোনের স্ক্রিনের দিকে থাকলেও তার সজাগ কান রয়েছে স্পর্শীর বলা কথাগুলোর দিকে।তবে স্পিকার লো থাকার কারনে ওপাশ থেকে বলা কোনো কথাই শুনতে পারে নি সোভাম।আর্শি সবার দিকে তাকালো এরপর উপস্থিত সবার মধ্যমনি হয়ে জোড়ালো আওয়াজে বললো,
-এ মাস টা বুঝি বিয়ের জন্যই বরাদ্দ।আমাদের বাড়ির ডেকোরেশনের জিনিসপত্র এখনো নিতে পারলো না এর মধ্যেই প্রেমার বিয়ে পড়ে গেলো।
শামসুল সরদার আহত চোখে ছেলের দিকে তাকালেন।আফসোসের স্বরে বললো,
-সেই মেয়েটার বিয়ে দিয়েই ছাড়লো।ইশশ!এত ছোট বয়সে ভুল করে এখন পরিবারের জন্য বিয়ে করতে হচ্ছে।
ভ্রুঁ বাঁকিয়ে বাবার দিকে চাইলো আর্শি।বললো,
-আরেহ নাহ।বাড়ির কেউই তো ওকে বিয়ের কথা বলে নি।ও নিজে থেকেই বিয়ে করবে বলেছে।হয়তো ওরাও ভেবেছে মেয়ে যখন বিয়ে করতে চায় তখন দিয়েই দি।ও রাজি না হলে কেউই জোর করতো না।
থেমে,
ভালোই হয়েছে।এখন আর সোভাম ভাইয়ের কোনো চিন্তা নেই।ঝামেলা মুক্ত।
তড়িৎ গতিতে আর্শির দিকে তাকালো সোভাম।পরক্ষণেই সেই দৃষ্টি নামিয়ে কোনো কিছু না বলেই হনহন করে উঠে গেল দোতলায়।বাকিরা অবাক হলেও ঠোঁট টিপে হাসলো আর্শি।গুটি গুটি অক্ষরে লিখলো,-“কাজ হয়েছে।”
এশার আযান দিয়েছে মাত্র।কাধে জায়নামাজ নিয়ে নিজেকে পরিপাটি করে রুম থেকে বের হলেন শামসুল।উদ্দেশ্যে বাড়ির সামনের জামে মসজিদ।ধীর পায়ে নেমে এলেন বাড়ির বাইরে। ওজু জরার উদ্দেশ্যে বিশালাকার পুকুরের দিকে এগোতেই অবাক হলেন।রাতের আকাশের চাঁদের আলোয় অস্পষ্ট এক মানবকে দেখা যাচ্ছে।যে পুকুর ঘাটের সান বাঁধানো বৈঠকে সোজা হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে শুয়ে আছে।এগিয়ে গেলেন শামসুল।সিঁড়ির কাছে আসতেই চিনতে পারলেন মানবটিকে।গমগমে আওয়াজে বললেন,
-এখানে কি করছো?
চমকে উঠে বসলো সোভাম।বাবাকে দেখতেই নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বসলো।আমতা-আমতা করে অসস্তি মাখা কন্ঠে বললো,
-কই?কিছু না তো।এমনিই এসেছি।
সন্দেহজনক দৃষ্টিতে ছেলের এই অগোছালো আচরণ দেখলেন।বললেন,
-ভরা শীত।চারপাশে ঠান্ডা বাতাস।হিমের মতো সান।এরমধ্যে শুয়ে আছো কেন?গরম হলেও তো ভাবা যেত ঠান্ডা বাতাসে বের হয়েছো।কিন্তু এই শীতের মধ্যে এখানে বসে থাকার কারন কি?
সোভাম কথা বললো না।বরং মাথাটা নিচু করে কথা এড়িয়ে গিয়ে বললো,
-ওযু করতে এসেছো?
শামসুল সরদার চুপ করে গেলেন।ছেলে কথা এড়িয়ে যাচ্ছে মানে বিষয়টা ব্যক্তিগত।এ নিয়ে এতো বড় ছেলেকে তোড়জোড় করা মোটেই শোভা পায় না।ধীর পায়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যেতে যেত বললো,
-হুম,নামাজে যাচ্ছি।
শামসুল সরদার ওজু করতে লাগলেন।নিশ্চুপ হয়ে একদৃষ্টে বাবার দিকে তাকিয়ে রইলেন।বেশ অনেকক্ষণ এভাবেই নিরবতায় ডুবে গেল সময়টা।হুট করেই আনমনে শান্ত গলায় সোভাম বললো,
-আমি বিয়ে করবো আব্বু।
শামসুল সরদার যেন হোঁচট খেলেন।কিছুটা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলেন।এরপর স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
-বেশ।মেয়ে দেখা শুরু করবো কাল থেকে।
-আব্বু??
ছেলের হুট এমন জোরগলায় ডাক শুনে ভ্রুঁ কুঁচকালেন।বললেন,
-রেগে যাচ্ছো কেন?মেয়ে পছন্দ আছে নাকি?
সোভাম উঠে বসলো।শার্টের হাতা গোছাতে গোছাতে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,
-যাকে নিয়ে কন্ট্রোভার্সি শুরু হয়েছে তাকেই বিয়ে করবো।আর সেটাও খুব দ্রুত।রাতের মধ্যে ও বাড়িতে জানিয়ে দেবে।
ওজু করা শেষ শামসুল সরদারের।মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে ছেলের পাশ থেকে সম্পুর্নভাবে তাকে এড়িয়ে হেঁটে চলে গেলো সামনে।যেতে যেতে বললো,
– আমাকে কি যা-তা পেয়েছো নাকি?বোনের মতো দু মিনিট পর পর মত চেঞ্জ করবে।একবার বলবে বিয়ে করবে আবার বলবে করবে না।আর আমি তোমাদের কথায় নাঁচবো।পারবো না।যার বিয়ে সে করে নাও।
আশ্চর্য হয়ে গেলো সোভাম।দাঁতে দাঁত চেপে জেদ নিয়ে বললো,
-বেশ!পরে আবার আফসোস করো না।
রাত তখন ততটাও নয়।ঘড়ির কাঁটায় মাত্র সাড়ে দশটা।আকাশকে ডুবিয়ে ফেলেছে কুয়াশারা।যেন আজকের রাতে রাজত্ব সম্পুর্ন তাদের হাতে।এই কুয়াশার ঘন আবরণে চাঁদ ও হয়ে আছে অস্পষ্ট। রাতের খাওয়ার পালা শেষ। তবে পাভেল শিকদার ফিরলেও ফেরেনি পরশ।জেদের বশবর্তী হয়ে এখনো পর্যন্ত জিজ্ঞেস ও করেনি স্বামীর খবর।এমনকি একটা ফোনকল ও করেনি।সবার খাওয়া শেষ হতেই থালাবাসন গুছিয়ে চলে এলো রুমে।এর’ই মধ্যে শোনা গেলো চিৎকার।হ্যাঁ, এটা পাভেলের গলার স্বর। দ্রুত বেরিয়ে পড়লো স্পর্শী।সিঁড়ির গোঁড়ায় যেতেই নজর পড়লো সোফার দিকে।সেখানে গম্ভীর হয়ে বসে আছে পরশ।তার চোখ-মুখ অন্ধকার হয়ে ফুলে-ফেঁপে আছে।যেন এক্ষুণি রাগের এই তীব্র অগ্নিপিণ্ড গুলো ঝরে পড়বে শিকদার বাড়িতে। পিয়াশা সশব্দে থাপ্পড় মারলো পাভেলের গালে।শাসনের সুরে বললো,
-আমার মেয়ে, আমি বুঝবো।তুই কেন এতো বিরোধিতা করছিস?এখনো বেঁচে আছি আমরা।প্রেমার ভালো-মন্দ,বিয়ে-শাদি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার জন্য যথেষ্ট আমরা।তুই কেন ওর দিকে তেড়ে যাচ্ছিস?ওরা খারাপ কি বলেছে।আশেপাশ ছেয়ে গেছে,মেয়েকে নিয়ে নানা অশ্লীল কথাবার্তা বলছে। এগুলো সারাজীবন ও সহ্য করবে কেন?সোভাম ছেলেটা খারাপ কোথায়?যদি ওরা প্রেমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব ও দেয় তো সেখানে খারাপ কি আছে?তোরা দুই ভাই এটা নিয়ে এতো ঝামেলা করছিস কেন?
পরশ থমথমে মুখে তাকিয়ে আছে গম্ভীর হয়ে।আমজাদ মাথায় হাত দিয়ে বসলেন সোফায়।বড় ছেলেকে বোঝানোর উদ্দেশ্যে বললো,
-ঘটনা যা ঘটেছে সেটা তোমাদের সামনেই।এখানে সোভামের কোনো দোষ ছিলো না।তারপরেও ওরা যে স্বেচ্ছায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে এটাই তো অনেক।সে যাই হোক,আমি এখনো মত দেই নি।ভাবনা-চিন্তা করে ভালো মনে হলে তারপর যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবো।তুমি কি বলো এই ব্যাপারে?
এতোক্ষণে মুখ খুললো পরশ।গম্ভীরতা কে ছাপিয়ে কঠোর গলায় বললো,
-ওদেরকে না বলে দাও।প্রেমার বিয়ে হবে না,আর হলেও সোভাম সরদারের সাথে তো না-ই।
আবারো রুষ্ট হলেন পিয়াশা।জেদ দেখিয়ে বললেন,
-কেন নাহ?ছেলেটা খারাপ কোন দিক থেকে।আমার তো ভীষণ পছন্দ।অন্ততপক্ষে ওদের মেয়ের জন্য যে পাত্র পছন্দ করেছে, তার থেকে ঢের ভালো আমার মেয়ের পাত্র।
থেমে আমজাদ শিকদারের উদ্দেশ্যে বললো,
-শুনুন,মেয়ে বিয়ে আমি এখানেই দেব।মায়ের থেকে যেন কেউ দরদ বেশি দেখাতে না আসে।
স্পর্শী ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো। শান্ত কন্ঠে বললো,
“আমার পরিবার কখনো আমাদের পরাধীনতার শিকলে বাঁধে নি।নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য জোর করে কারো উপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার মতো নিচু মনমানসিকতাও নেই।যদি জানতাম,আমার ভাই আপনার মেয়েকে এতটাই ভালোবাসে তাহলে কখনো ওদের পালাতে দিতাম না।আমি নিজে এসে এই বাড়ি থেকে আমার ভাইয়ের বউকে নিয়ে যেতাম।আমার বোন বা ভাই যদি আমার সর্বোচ্চ শত্রুকেও ভালোবেসে তার সাথে জড়াতে চায়, তাহল্র সেটা সানন্দে মেনে নেওয়ার যথেষ্ট মানসিকতা আমার পরিবারের আছে।ওদের স্বাধীনতায় রাখতে যথেষ্ট আগ্রহী আমি।আশা করছি কিছু শিখবেন।
রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৮০
-হুবুহু এই কথাটাই একদিন দাম্ভিকতার সুরে সরদার বাড়ির ড্রয়িংরুম এ বসে আমার বাবার উদ্দেশ্যে পরশ শিকদার বলেছিলেন।তাহলে আজ কেন মানসিকতা বদলে গেল?নাকি পরের বেলায় মুখে জোড় থাকলেও নিজের বেলায় মেরুদন্ড ভেঙে যায়?