রাজবধূ পর্ব ৩১ (২)

রাজবধূ পর্ব ৩১ (২)
রেহানা পুতুল

তালুকদার বিশ্বাস করে বাদশার কথা। ঘর থেকে বের হয়ে বাড়ির সামনের দিকে যায়। বাদশা মনে মনে বলে,
“আজই তোরে পরপারে পাঠাচ্ছি। তুই একটা নরপিশাচ! খেলা হইবো তোর গদিতেই। কঠিন খেলা হইব আজ তোর সঙ্গে আমার।”
পল্লীগ্রাম। প্রকৃতিজুড়ে অখণ্ড নিরবতা। রাতের আঁধার মাড়িয়ে বাদশা ও খায়রুল তালুকদার এগিয়ে যায় বাড়ির সামনের দিকে।
“কিরে, কই কারা ডাকে আমারে?”
“আরেহ এইখানেই ত দুইজন ছিলো। ধূর। চইলা আসেন বাড়িতে।”

বাদশা পা ঘুরিয়ে হাঁটা ধরে বাড়ির দিকে যাওয়ার জন্য। তালুকদার পিছনে পড়ে যায়। খানিক পরে বাদশা ঘাড় ঘুরিয়ে নেয়। দেখলো ঝোঁপের আড়াল হতে দুজন লোক বেরিয়ে আসে। একজন জাপটে ধরে তালুকদারকে। আরেকজন তার মুখ বেঁধে ফেলে। যেন চিৎকার দিতে না পারে। তাদের দুজনের মুখও কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা। তালুকদার বাদশার দিকে চায়। ঘটনার আকস্মিকতায় সে চলন্ত গাড়ির ব্রেকফেইলের মতো হোঁচট খেলো।
বাদশা তাকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসে। পারে না। তারা পাশে থাকা বেবিট্যাক্সিতে তালুকদারকে টেনে হিঁচড়ে তুলে নেয়। তারমধ্যে একজন ছিলো ড্রাইভার। গাড়ি চলে যায় তালুকদারের গদির সামনে। তারা তালুকদারকে নিয়ে গদির ভিতরে চলে যায়। একটি কাঠের চেয়ারে বসিয়ে বেঁধে ফেলে। এবং তারা দুজন গদির মেঝেতে বসে পাহারা দেয় তালুকদারকে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

উজানপুর গ্রাম শহর হতে বেশ ভিতরে। তাই রাস্তাঘাট সহজেই জনশূন্য হয়ে পড়ে। সুতরাং সমস্যা হওয়া বা সন্দেহ করার মতো কারো চোখেই পড়ল না। আর পড়লেও অসুবিধা নেই। তারা উজানপুর গ্রামের সম্পদশালী তালুকদার পরিবার। যে কোন সময় নিজেদের প্রয়োজনে তাদের গদিতে এবং ধান,চাল,নারকেল,সুপারির আড়তে আসতেই পারে।
পিছন দিয়ে বাদশা আসে একটি রিকশায় করে। ক্ষমতাশীল রাজার মতো হেঁটে গদিতে প্রবেশ করে। শার্ট তুলে লুঙির মাঝে গুঁজে থাকা মিনি সাইজের টেপ রেকর্ডারটা অন করে দেয়। আবার শার্ট দিয়ে ঢেকে ফেলে। তারপর মূল ফটকে তালা দিয়ে ফেলে ভিতর থেকে। আর কিছু দেখল না সে। কারণ সে বিকেল হতেই এটা নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। আধঘন্টা আগেও গদিতে সবাইকে উপস্থিত করে সব সেট করে দিয়ে গিয়েছে।
তাকে দেখেই তালুকদারের রুহতে পানি আসে। ভয়মিশ্রিত তেজী স্বরে বলল,

“বাদশা তুই আইছত। বুঝলাম না বিষয়টা। আমার গদিতেই আমারে আটকাইলো? এরা কারা? একজনত গাড়ির চালক ছিলো।”
বাদশা নিরুত্তর! তার চোয়াল শক্ত! দৃষ্টি হিংস্র! তবে গলার স্বর ঠান্ডা।
“কিরে কথা কসনা ক্যান? তুই কিছু জানস? এগোরে চিনস?”
“চিনি। একজন চালক। আরেকজন কিডন্যাপার। মানুষরে কৌশলে তুইলা
আনার বিষয়ে তারা সিদ্বহস্ত।”
বলল বাদশা।

“মানে কি এইসবের বাদশা? তাইলে কি তোর আমারে বাঁচানোর বিষয়টা অভিনয় ছিলো? সেদিন কইলি, আমার কথা তোর বিশ্বাস হইছে। সেইটাও অভিনয় তোর? ”
“হ। আপনার থেইকা প্রশিক্ষণ নিলাম।সারাজীবন ভণ্ডামি আর নোংরামি কইরা আইছেন। কিছুতো আমিও পাইছি।”
খায়রুল তালুকদার রুদ্ররূপ ধারণ করলো। বাদশা গদির পিছনের রুমে চলে গেলো। তার মাকে নিয়ে আসে তালুকদারের সামনে। জুলফার পরনে নতুন একটি শাড়ি। বাদশা জুলফাকে তালুকদারের সামনে একটি চেয়ারে মুখোমুখি বসায়। কাজিকে ডেকে আনলো পিছনের রুম হতে।
তালুকদারের দিকে পাথর চোখে চেয়ে বলে,

“কাম অনেক। সুতরাং এই রাইতে কথা কম হইবো। কাম বেশী হইবো। আপনে আমার মায়েরে এখন বিয়া করবেন। দুই পক্ষের জন্য সাক্ষি তিনজন করে ছয়জন উপস্থিত রয়েছে ৷ গদি ভর্তি লোকজন আছে এখন। কোন ঝামেলা চাই না। আমার জন্মের এবং রক্তের বৈধতা চাই। ”
“বাদশা, বেঈমান কোথাকার! ” বলে হুংকার দিয়ে উঠে ছোট তালুকদার। বাদশা তার কথায় কর্ণপাত করল না। কাজীকে অনুরোধ করে বলল,

” কাজী সাহেব। বিয়া পড়ানোর কাম শুরু করেন।”
কাজী চেয়ার টেনে বসে পাশের একটি চেয়ারে৷ তালুকদার কাঁপানো ঠোঁটে বলল,
“তোর মায়েরে ক্যান আমি বিয়া করুম? জালিম একটা তুই! দুধ কলা দিয়া আমি কালসাপ পুষছিলাম।”
“কালসাপ যেহেতু পুষলেন,ছোবল ত খাইতেই হইবো। নিস্তার নাই। আমারে জন্ম দিলেন। স্বীকৃত দিবেন না,এইটাতো হইতে পারে না। লোক চক্ষুর আড়ালে কাজ সারবেন? নাকি মর্যাদা হারাইয়া দিনের আলোয় সমাজের লোকজনের সামনে আমার মায়েরে বিয়া করবেন? কোনটা উত্তম খায়রুল তালুকদার?”

“তোরে আমি জন্ম দিছি,কি প্রমাণ আছে?”
“প্রমাণ বহুত আছে। সেদিকে গ্যালে আপনাএ অবস্থা ছ্যাড়াব্যাড়া হইয়া যাইবো। ঝড়ে যেমন কইরা ফরফর কইরা কলাপাতা ছিঁড়া যায়।”
শীতল গলায় বলল বাদশা।
এবার তালুকদার পুরোপুরি ভড়কে যায়। বাদশার শরীরে তারই যে র*ক্ত প্রবাহমান। দিনের আলোর চেয়ে রাতের আঁধারই ভালো। মুসলিম রীতি অনুযায়ী সে জুলফাকে বিয়ে করলো। বাদশা জুলফাকে নিয়ে ভিতরের রুমে বসিয়ে রাখে। ফিরে আসে তালুকদারের সামনে। তার সঙ্গে পিছনের রুম হতে আসে আরো দুজন মানুষ। তাদের হাতে কিছু কাগজ পত্র ও কলম দেখা যাচ্ছে৷
বাদশা তালুকদারকে বলল,

“পিতা হিসেবে এবার আমাকে দুটো ধানি জমি রেজিষ্ট্রি করে দিবেন। আপনার অবর্তমানে কেউ আমার মুখের কথা বিশ্বাস করবে না,যে আমি আপনার জন্ম দেওয়া সন্তান। তো আমি যেন চাইলেই সেগুলো ইচ্ছেমতো ভোগ করতে পারি। এনারা রেজিষ্ট্রি অফিসের লোক। ফরম, স্ট্যাম্প ও বাকি সবই নিয়ে এসেছে তারা।”
তালুকদার বুঝতে পারলো বাদশা তার মতই ভয়ংকর। বাঁচার সুযোগ নেই। সে কোন উচ্চবাচ্য করল না। বাধ্য ছাত্রের ন্যায় বাদশাকে দুটো ধানি জমি দান করে দিলো। এতেও ছিলো প্রয়োজনীয় সাক্ষিদের সিগনেচার।
বাদশা কিডন্যাপারকে বিদায় দিয়ে দিলো তার পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে। ট্যাক্সি চালক রয়ে গেলো। সে বাইরে অবস্থান করছে বাদশার নির্দেশে। দলিল রেজিষ্টি লিখা দুজনকেও তাদের প্রাপ্য সম্মানি দিয়ে বিদায় দিলো।
তারপর তালুকদারের সামনে এলো একজন নাপিত। সে ও বাদশা মিলে তালুকদারের দু’হাত পিছমোড়া করে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে ফেলল। তালুকদারের দাঁড়িগোঁফ ছাঁটাইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে নাপিত। তক্ষুনি তালুকদার বেয়াড়া আচরণ করে বসলো নাপিতের সঙ্গে।
নাপিত কটাক্ষ স্বরে প্রতিউত্তর দিলো।
বলল,

“তেড়িবেড়ি করলে ক্ষুর দিয়া গলায় পোচ দিয়া দিমু। গাল লাড়াইবেন ত নিজেই মারা খাইবেন। চুপ মাইরা থাকেন কইলাম।”
সমাজের নিম্নশ্রেণীর এক নাপিতের কথায় মুখ বন্ধ হয়ে গেলো মুখোশধারী এক দাম্ভিক তালুকদারের। নাপিত তার মুখের সব গোঁফ দাঁড়ি ছেঁচে ফেলে দিলো। বাদশা পিছনের রুম থেকে নূরীকে তালুকদারের সামনে নিয়ে গেলো। নূরী তালুকদারের দিকে ঠায় চেয়ে রইলো। তালুকদারের গালের একপাশের বড় তিলটার দিকে চেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলো। যেটা এতদিন তার দাঁড়ির জন্য ডাকা পড়েছিলো। বহু বছর পূর্বের কোন এক নির্জন রাতের কথা মনে পড়ে গেলো নূরীর।

শ্রাবণের এক মধ্যরজনী। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিলো। নূরী ও তার স্বামী মকবুল অঘোরে ঘুমাচ্ছে। পাশে ঘুমের ঘোরে ডুবেছিলো তাদের এক বছরের ছোট্ট মেয়ে শিখা। পুরো ঘরে আর কেউ নেই। নূরীর শাশুড়ী তার বড় মেয়ে আলোকে নিয়ে মেয়ের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছে। তখনি মকবুলের ঘরের বেড়ার বাঁধ কেটে তিনজন পুরুষ ঘরে প্রবেশ করে। তিনজনের মুখে কাপড় বাঁধা ছিলো। ঘরে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে নূরী আঁৎকে উঠে। মকবুল হারিকেনের আলো বাড়িয়ে দেয়। ডাকাত পরিচয়ে তিনজন পুরুষের দুজন মকবুলকে শক্ত করে ধরে রাখে। বাকিজন যুবতী নূরীকে বিবস্র করে ফেলে। এভাবে একজন নূরীর কাছে যায়। বাকি দুজন মকবুলকে ধরে রাখে। মকবুলের চোখের সামনেই পালাক্রমে নূরী ধর্ষিত হয় তাদের হাতে। মকবুল করুণ চোখে চেয়ে রইলো। তার ও নূরীর শত আকুতি তিনজন ডাকাতের অন্তরকে এতটুকু গলাতে পারেনি।

তারা পৈশাচিক উল্লাস করতে করতে নূরীকে রাতভর ভোগ করেছিলো।প্রথম দুজন কাজ শেষে বেরিয়ে যায়। শারিরীক ব্যথায় অতিষ্ঠ হয়ে শেষের জনের মুখোশ নূরী টান দিয়ে খুলে ফেলে। দেখলো তার গালের একপাশে বড় একটি তিল। সেই ডাকাত উঠে যাওয়ার সময় মকবুল তার অন্ডকোষে সজোরে লাথি মারে। সে আর্তনাদ করে উঠে। এবং বন্য জন্তুর ন্যায় লুঙ্গির ভিতর থেকে ছোট্ট ধারালো ছুরিটি বের করে মকবুলের পেটের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়। সে কোনমতে ঝুঁকে বের হয়ে যায় ঘর থেকে। নূরী কাপড় পরে নেয়। আর্তনাদ করে বাড়ির সবাইকে ডেকে তোলে। সবাই মকবুলকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। তখন সবাই এটাই জানলো, মকবুলের ঘরে ডাকাত এসেছে। কিছু পায়নি বলে আক্রোশে তাকে ছুরি মেরে চলে যায়। নূরী ধর্ষণের বিষয়টি ভয়ে গোপন রাখে। কে করবে তার উপর এই পাশবিক নির্যাতনের বিচার। কোথায় পাবে সেই তিন ডাকাতকে। এভাবেই তার ধর্ষিত হওয়ার বিষয়টি সবার অজানা রয়ে যায় তার দুই কন্যাসহ।

তারপর নূরীর জীবনে নেমে আসে এক ক্রুশ অন্ধকার। দুই মেয়েকে নিয়ে নূরীর জীবন ভাসছে অথই সাগরে। সে শক্ত হাতে মনোবলের সঙ্গে দুই মেয়েকে বড় করে। তার জন্য নূরীকে কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে। ঝুঝতে হয়েছে দিনরাত। ভাবনা শেষেই নূরী তালুকদারের গায়ে এক দলা থু থু ছিটে মারে। নির্বাক চাহনিতে চেয়ে ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে,
“তুই ডাকাইত না? কুকর্ম ডাকার লাইগা লম্বা দাঁড়ি রাখছত? আমার উপরে ক্ষ্যাপা ক্যান? জবাব চাই? ”
তালুকদার ফণা তোলা সর্পের ন্যায় ফোঁস ফোঁস করতে থাকে। কিছু বলতে গিয়েও রাগের জন্য পারছে না। তার হয়ে কথা বলল বাদশা।

“খালাম্মা,উনি ডাকাত না। তারচেয়েও ভয়ংকর! দুর্ধর্ষ! বিধ্বংসী! ডাকাত ত ঘরের জিনিসপত্র লুট করে নেয়। উনি লুট করে একজন নারীর সম্ভ্রম! বেঁচে থাকার অহংকার! হজ্জ করে হাজী সাজছে। গোঁফদাঁড়ি না রাখলে চলে? আর আপনার উপরে ক্ষ্যাপার কারণটাও আমি কই। উনার স্ত্রীর মুখে শুনলাম কার সঙ্গে আকাম করতে গিয়া ছ্যাঁচা খাইলো জায়গামতে। এরপর হইতে আর হের কোন সন্তান হয় না। তাইলে মনে হয় সেটা আপনার এইখানেই হইবো।”
” হ বাদশা। কিন্তু তুমি বুঝলা ক্যামনে বিষয়টা?”
“আপনে আরেক গ্রামের নারী। নিরীহ মানুষ। আপনার লগে তালুকদারের কিসের কোন্দল হইতে পারে,এইটা সহজেই অনুমান করা যায়। আমার মায়ের লগেও একই কাম করছে সে। তারই ফসল আমি। সেটাই ত বৈধ করলাম একটু আগে।”

নূরী বুঝলো এবার। বাদশাকে কিছু বলল না। তালুকদারকে দিকে চেয়ে মুখ বিকৃত করে বলল,
“তুই আমার স্বামীরে খু*ন করলি। আমার দুই মাইয়ারে এতিম করলি। আমাদের তিনজনের জীবনটা নরক বানায়া দিলি। আমার মাইয়ার গায়ে হাত দিলি। মন চায় তোর হাতটা কাইটা ফালাই।”
তালুকদার স্তম্ভিত চোখে বাদশার দিকে চেয়ে বলল,
“তুই মীর জাফরের চাইতেও বড় বিশ্বাসঘাতক। সবাইর লগে হাত মিলাইলি।”
বাদশা নূরীকে ইশারায় বলে,
“প্রতিশোধ নেওয়ার প্রস্তুতি নেন। আমি সাহায্য করবো। পিতৃ হত্যার দায় মাথায় নিতে চাই না। স্বামী হত্যার বদলা নেন আপনি।”
নূরী পিছনের রুম থেকে কিছু জিনিস নিয়ে আসে। তার সঙ্গে আসে জুলফাও। বাদশা ও নাপিত দুজনে মিলি তালুকদারকে মেঝেতে শুইয়ে ফেলে। আপাদমস্তক মোটা নাইলনের রশি দিয়ে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে বেঁধে ফেলল। মুখ চওড়া ও মোটা স্কচটেপ দিয়ে বন্ধ করে দেয়। যেন চিৎকার না দিতে পারে। এবং দিলেও দেয়াল ভেদ করে বাইরে না যেতে পারে।

নূরী কিছুদিন আগে সেলাই করে জোড়া দেওয়া চটের বস্তাটি নিয়ে এলো। তালুকদারের মাথার কাছে বসলো।বস্তার ভিতরে বেশকিছু বিছুটি পাতা ছড়িয়ে দিলো। এই পাতা শরীরে লাগলে চুলকাতে থাকে এবং স্থানে স্থানে লাল চাকা হয়ে যায়। তারপরে ছড়িয়ে দুলো শুকনো মরিচের গুঁড়ো অনেকগুলো।
নূরী তালুকদারকে বলল,
“চাইলে এক কোপেই তোর কল্লা আলগা করে দিতে পারি। এতে তুই যন্ত্রণা টের পাবি না। এমনভাবে তোরে মারমু,যেন তুই তিলে তিলে নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে করতে মরিস। পাপ বাপরেও ছাড়ে না।।ম্যালা সুখ করছত। ম্যালা আনন্দ করছত। এগুলোর খেসারত দে এইবার। অমানুষ, পশু কোথাকার।”
নূরী,জুলফা,বাদশা ও নাপিত এই চারজন মিলে অতিকষ্টে তালুকদারকে বস্তায় ভরে ফেলে। তারপর নূরী বয়াম ভর্তি অজস্র জংলী বিষ পিঁপড়া ঢেলে দিলো বস্তার ভিতরে৷ তালুকদার করুণ চোখে বাঁচার হাজারো আকুতি ও আর্তি করলো নূরী ও বাদশার কাছে। তার ফরিয়াদ শোনার সময় নেই কারো। এমন ফরিয়াদ নূরী ও মকবুলও করেছিলো তার কাছে।

অতঃপর বস্তার মুখ শক্ত করে বাইরে থেকে বেঁধে ফেলা হয়। নূরী আবারো এক বয়াম মরিচের গুঁড়ো চটের বস্থার উপরে চারপাশে ছড়িয়ে দেয়। বস্তার ভিতরের অবস্থা অনুধাবন করার জন্য তারা চারজন অপেক্ষা করে আধঘন্টা। বস্তার ভিতর প্রচন্ড ছটপটানি শুরু হলো। বস্তা মেঝেতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। যেটা বাইরে থেকে স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে। তারমানে পিঁপড়ার আগ্রাসী দল কুটকুট করে কামড়ে তাদের আক্রমণ শুরু করে দিলো।
নাপিত বিদায় নিলো তার পারিশ্রমিক নিয়ে। বাদশা তার মা ও নূরীকে নিয়ে সাবধানে বের হলো। গদির সব দরজা মূল ফটকসহ খোলা রেখেই বের হলো সে। সেই ট্যাক্সি করে তার মা ও নূরীকে নিয়ে মধুপুর নূরীর বাড়িতে চলে গেলো বাদশা। জুলফাকে, নূরীর কাছে রেখে সে উজানপুর তালুকদার বাড়িতে চলে এলো। নূরী, জুলফা ও বাদশার সেই রাত কাটলো বিনানিদ্রায় ও বিভীষিকার মাঝে।

রাজবধূ পর্ব ৩১

তারমাঝেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো দুজন, এক পিশাচকে শেষ করার উত্তম ব্যবস্থা করতে পারলো বলে। ঘটনার মুখোমুখি যারা উপস্থিত ছিলো তারা কেউই ভুলেও মুখ খুলবে না কোনদিন। কেননা এদের প্রত্যেকেরই বিভিন্নকারণে তালুকদারের উপর ছিলো চরম জিঘাংসা! বাদশা মাসের পর মাস হেঁটে এদের খুঁজে বের করেছে।
পরেরদিন সকাল সাড়ে আটটার দিকে রাজ ফ্রেস হয়ে দোতলা থেকে নিচে নেমে আসলো। জোছনাকে ডেকে বলল,

রাজবধূ পর্ব ৩২