রাজবধূ পর্ব ৩৪
রেহানা পুতুল
কথাগুলো বলেই তারা এক মুহূর্ত বিলম্ব করল না। বাদশাকে তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে গেলো।
বাদশা কিছুই বলল না কাউকে। কেবল অবসন্ন বিকেলের মরা রোদের মতো তার ফুলের দিকে অপলক চেয়ে রইলো।
ফুল নিজের আবেগের কাছে বলী হয়ে গেলো। তার বুক ভাঙ্গা কান্না দেখেও কেউ ভুল বুঝল না। কিছু মনে করল না। সবাই ধরে নিলো, এক সঙ্গে কাজ করে। তাই মায়ায় পড়ে বাদশার জন্য কাঁদছে ফুল। কিন্তু মতির মা কিছুটা হলেও আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছে বাদশা ও ফুলের সম্পর্ক।
সবাই হায় হুতাশ করতে করতে কাচারি ঘরের উঠান ত্যাগ করলো। গিয়ে জড়ো হলো নিচতলার বৈঠকখানায়।
ফুল হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে একগাদা শুকনো খড়ের স্তুপের উপরে। মতির মা নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে ফুলের দু’চোখ মুছে দিলো। বলল,
“আর কান্দিস না। চইলা আয়। বাদশা নির্দোষ। তারে এরা ছাড়ান নিয়া আইবই। দেহিস।”
ফুলকে নিয়ে মতির মা চলে যায় হেঁসেল ঘরে। তার অন্তরটাও ভারাক্রান্ত! তালুকদার পরিবারে এত তেলেসমাতি আগে কখনো সে স্বচক্ষে দেখেনি। সব ঘটনাগুলো ঘটছে শিখা আসার পর হতেই। চিন্তা করতেই সবকিছু তার মাথার উপর দিয়ে গেলো। কেমন জট পাকানো সব।
বড় তালুকদার একমাত্র ভাতিজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“কি করা যায় জুবায়ের? কওতো? সব ছ্যাড়াব্যাড়া হইয়া যাইতাছে। মাথা ঘুরাইতাছে আমার। বাদশা ছাড়াতো আমরা অচল। সবদিক সেই সামলায়।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“জেঠা আপনি চিন্তা করবে না। আমি বাজারে যাই। রাজেরে টেলিফোন করে বলি। দেখি সে কি বলে।”
“তাই কর বাপ। দেরী করিস না আর। আল্লাগো! বাদশারে তোর জেঠার চাইতেও তোর বাপে বেশি দরদ করতো। এই বাড়িতে বাদশার খাওন,পিন্দনের অভাব ছিল না। তার মারেও আমরা দেখি। সেই বাদশা ক্যান তোর বাপেরে মারবো। নিজের প্যাটের পোলা রাজ। তাই কইতে খারাপ লাগে। শুনতেও খারাপ লাগে৷ আদুরীর মতো আমগো সবার রাজেরেই দোষী মনে হয়।”
ভেজা গলায় বলল সুফিয়া বিবি। পাশ থেকে তার তিন ছেলের বউও একইসুরে কথা বলল। জুবায়ের তাদের কথা গ্রাহ্য করল না।
যাচ্ছি বড় মা, বলে জুবায়ের উঠে গেলো তড়িতেই। বাজারে ফোনফ্যাক্সের দোকানে গিয়ে রাজকে টেলিফোনে করলো। সব জানালো। শুনে রাজ চিন্তিত সুরে বলল,
“তুই থানায় যা। সেখানে গিয়ে সম্ভবপর যাকে বললে কাজ হবে,এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তার ল্যান্ডফোনের নাম্বার যোগাড় করে দে। বাকিটা আমি দেখছি। তবে জুবায়ের, যাহা কিছু রটে কিছু না কিছু হলেও বটে। এটাতো জানিস। আমার নিজেরই কেমন খটকা লাগছে বাদশাকে নিয়ে।”
“যেমন?”
বিহ্বল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো জুবায়ের।
“তোর আব্বা লাস্ট কখন ঘর থেকে বের হয়ে গেলো,এটা কিন্তু চাচী বা কেউই বলতে পারল না। উনি থাকে উনার রুমে। কেউই ত উনার সঙ্গে কথা বলে না। মানলাম, উনাকে হয়তো রাতে এশার নামাজের পর পথ থেকে কেউ তুলে নিয়েছে। কিন্তু বাদশাতো উনার দিকে খেয়াল রাখে সবসময় অসুস্থতার জন্য। তাহলে বাদশা কেন বলতে পারল না তিনি কখন বের হয়েছেন ঘর থেকে? সারমর্ম হলো যারাই উনাকে মেরেছে, হয়তো বাদশা কিছুটা হলেও জানে। ভয়ে মুখ খুলছে না। বড় ভাই, মামা, এদেরইবা কে মারল? বিষয়টা কুয়াশার মতো। অস্পষ্ট! ”
রাজ থামলে, এপ্রান্ত হতে জুবায়ের বিরস গলায় নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো।
” এই দুজনের বিষয় জানি না। তখন যা জানা গিয়েছে হয়তো সেগুলোই কারণ হবে। আর বাবাকে নিয়ে সবাই ত তোর দিকেই আঙ্গুল তুলছে রাজ। তার কারণটা তুই,আমি সবাই জানি।”
“তোর কি মনে হয় জুবায়ের?”
“আমার তোকে কিংবা বাদশাকে সন্দেহ হয় না। মনে হয় আব্বার বাইরের কোন শত্রু একাজ করেছে। তবে যেই করুক আমি তারমতো পাপিষ্ঠ লোকের খু*নের রহস্য ভেদ করতে অপারগ। যে আমার মাকে জীবনের ক্রান্তিলগ্নে এসে ছেড়ে দিতে পারে ভুল বুঝে। ছেলেকে পরিত্যাজ্য করতে পারে, তাকে নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না। আমি তোকে নাম্বার যোগাড় করে দিচ্ছি। বাদশাকে মুক্ত করার ব্যবস্থা কর তুই। বাদশা জামিন পাক এটা আমি চাই। একজন তুখোড় বাদশাকে আমাদের পরিবারে জরুরী।”
জুবায়ের সেদিন দুপুরের দিকে রাজকে টি এন্ড টি ফোন নাম্বার দিলো। রাজ তার পরিচিত উচ্চ পদধারী কয়েকজনকে টেলিফোন করলো। স্বশরীরে গিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করলো। এভাবে সারাদিন অতিবাহিত হয়ে গেলো।
এদিকে থানায় সারাদিন দফায় দফায় বাদশাকে তিনজন পুলিশ জেরা করছে। রিমান্ডের গরম ডিম থেরাপির ভয় দেখিয়ে কাবু করে ফেলতে চাইছে।
কিন্তু বাদশা তার অবস্থানে পাহাড়ের মতো অবিচল। পাথরের মতো শক্ত।
সে দৃঢ়তার সঙ্গে মার্জিত ভাষায় বলল,
“আপনারা আমারে ডিম থেরাপি দেন আর উলটা ঝুলায়া পিডান। লাভ নাই। মরণরে এই বাদশা ডরায় না। আমি না উনার হত্যার সাথে জড়িত, না যারা মারছে তাগোরে চিনি।”
পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একজন বলল,
“গদির চাবি এর কাছে থাকা মানেই যে এ জড়িত বা জানে,তা কিন্তু নয়। এমন কিছু রাসায়নিক কেমিক্যাল রয়েছে,যা দিয়ে এর চেয়েও শক্তিশালী তালা খুলে ফেলা যায়। হত্যাকারীরাই এসব করেছে হয়তো। তালুকদারের স্ত্রী ও সন্তানের কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। সেক্ষেত্রে আমাদের একে ঘাঁটানো ঠিক নয়। সহজেয় অনুমেয়, তালুকদার লোক হিসেবে সুবিধার ছিলো না।”
এভাবে আরো দুদিন পার হয়ে গেলো। বাদশার আটকের খবর রটে গেলো চারদিকে। নূরীর কানেও গেলো। নূরী ভয়ে তটস্থ হয়ে গেলো। ব্যতিব্যস্ত হয়ে অজু করে এসে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নিলো সে। মোনাজাতে দুইহাত তুলে বোবা অশ্রুপাতে স্রস্টার নিকট ফরিয়াদ করলো,
“হে দ্বীন দুনিয়ায় মালিক,হে সর্বজ্ঞানী, আপনার করুণা ছাড়া বাঁচার উপায় নাই। দুই মাইয়া ও দুই জামাইয়ের কাছে এক মায়ের মর্যাদা রাইখেন গো আল্লাহ! নইলে আমারে তুইলা নিয়েন জমিন থেইকা। আমি ভুল কইরা থাকলে আমারে ক্ষমা কইরা দেনগো মাবুদ। আপনি বড়ই ক্ষমাশীল!”
জুলফার কানেও চলে গেলো ছেলের বন্দী হওয়ার খবর। আকস্মিক এমন খবরে জুলফা ভীষণভাবে ঘাবড়ে গেলো। ছেলে বুঝি ধরা পড়বে৷ ফাঁসী হবে। এমনা কল্পনা করতেই জুলফা মাথা ঘুরে পড়ে গেলো মাটিতে। অচেতন অবস্থায় জুলফাকে বাড়ির লোকজন হাসপাতালে নিয়ে গেলো। জানা গেলো জুলফা ব্রেন স্ট্রোক করেছে।
তার দুইদিন পর ঢাকা হতে থানায় ওসির কাছে ফোন এলো। তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তি। অনুরোধ করলেন যেন বাদশাকে জামিন দেয়া হয়। বাদশা থানা হতে মুক্ত হয়ে তালুকদার বাড়িতে গেলো। তালুকদারের মৃত্যুতে তারা যতটা মর্মাহত হয়েছে তারচেয়ে বেশি আনন্দিত হয়েছে বাদশা ভালোভাবে জামিন পেয়ে ফিরে এসেছে দেখে।
তার ফুল ছোট বাচ্চার মতো সবার অলক্ষ্যে কেঁদে ফেলল। বাদশা ফুলকে মৃদু ধমকে বলল,
“আজব ত। আমারে ধইরা নিতেও তোমার কান্দন।আমি ফিরা আসাতেও তোমার কান্দন। কোনটা ধরবো আমি?”
বাদশার কথা শুনে ফুল বোকা বোকা চোখে হেসে ফেলল। মতির মা বলল,
“ওই বাদশা,তোর মা তোর খবর শুইনা বেহুঁশ হইয়া মাটিতে লুটায়া পড়ছে। হাসপাতালে এখন। এক পোলা আইসা খবর দিয়া গ্যালো। তুই চইলা যা।”
ঘরের বাকি মহিলারাও বাদশাকে তাড়া দিলো তার মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য। আদুরী হাসপাতালের ঠিকানা দিলো বাদশাকে। তালুকদার বাদশাকে টাকা দিলো খরচের জন্য। বাদশা আহত মনে খালি পেটেই হাসপাতালে চলে গেলো। ওয়ার্ড নং ও সিট নং খুঁজে বের করলো। জুলফার মাথায় হাত রাখতেই সে পিটপিট চোখে তাকালো পুত্রের দিকে। ডাক্তার জানালো জুলফার শারীরিক কন্ডিশন খুব খারাপ। সে ব্রেন স্ট্রোক করেছে৷ বাদশা দিশেহারা হয়ে পড়লো মায়ের জন্য। সে তালুকদার বাড়িতে এসে জানালো,
আপাতত সে তার মায়ের কাছে থাকবে। তার পরিবর্তে যেন অন্য কাউকে দিয়ে তারকাজগুলো সামলে নেয় তালুকদার।
একজন সন্তানের জীবনে তার মাই সব। এই উপলব্ধি থেকে বাদশাকে কেউই বাধা দিল না। বাদশা রান্নাঘরের বড় চৌকিতে বসে ভাত খেয়ে নিলো। মতির মা সব বেড়ে দিলো। ফুল পরিবেশন করে দিলো।
তখন ফুল গলায় দরদ ঢেলে বলল,
“বাদশা ভাই আপনের মায়ের শরীরের অবস্থা কি হয় না হয়, লোক পাঠাইয়া হইলেও আমাগোরে জানাইয়েন। নইলে মন টানা থাকবো আমাদের।”
“হ বাদশা। ফুল ঠিকই কইছে। জানাইস পারলে।” বলল মতির মা।
“হ চাচী জানামুনি। আমার মায়ের জন্য নামাজ পইড়া দোয়া কইরেন। ফুল তুইও দোয়া করিস।”
“এইটা আর কইতে হয় আমারে? আপনাদের মা ছেলের জন্য আমি প্রতিবেলায় নমাজ পইড়া দোয়া করি।”
বাদশা শশব্যস্ত হয়ে হাসপাতালে ছুটে যায়৷ রাতেও মায়ের কাছে থাকে। তার দূর সম্পর্কের এক ভাইও থাকে তার সঙ্গে হাসপাতালে। ক্রমশ জুলফার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। চারদিন পর একরাত্রির শেষ প্রহরে জুলফা বিদায় নেয় এই নশ্বর পৃথিবী থেকে। তার পূর্ব মুহূর্তে বাদশার মাথায় জুলফা কাঁপা কাঁপা হাত রাখে। মায়ের সমস্ত আশীর্বাদ ঢেলে দেয় প্রান উজাড় করে। বাদশা মায়ের নিথর দেহ জড়িয়ে উম্মাদের মতো গলা ফাটিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।
বাকি ছেলেটা তার নির্দেশ পেয়ে তালুকদার বাড়িতে এসে খবর দিলো। শুনে সবাই আফসোসে ঢলে পড়লো। জুবায়ের ও তালুকদার বাদশার বাড়িতে চলে গেলো। বাদশা মায়ের নির্জীব দেহখানা নিয়ে বাড়িতে পৌছালো। স্বল্পসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে নিদিষ্ট সময়ে তার মায়ের দাফন কার্য সমাধান হয়ে গেলো। তালুকদারের সহযোগিতায় তিনদিনের দিন বাদশা তার সামর্থ্য অনুযায়ী মায়ের জন্য দুরুদ পাঠ ও মিলাদ পড়ালো। কোরান খতম দেওয়ালো। তাদের স্থানীয় কওমী মাদ্রাসার এতিম ছাত্রদের খাওয়ালো।
সবাই যার যার বাড়িতে চলে গেলো। বাদশা মা ছাড়া শূন্য ঘরে ডানা ঝাপটানো পাখির মতো ছটপটাতে লাগলো। তালুকদার বাড়িতে যাচ্ছে না। ঘর থেকে কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না তার। মায়ের স্মৃতি আঁকড়ে পড়ে থাকতেই তার মন আকুল হয় থাকি থাকি।
জুবায়ের রাজকে টেলিফোন করে থানা থেকে বাদশার মুক্ত হওয়া ও জুলফার মৃত্যু সংবাদ দিলো। রাজ মর্মাহত হলো বেশ। বাদশার জন্য বন্ধুরূপী ভাই জুবায়েরের নিকট সহমর্মিতা প্রকাশ করলো। জুবায়ের হতে বিদায় নিয়ে রাজ তার বাকি দুইভাইকে বাদশার বিষয় জানালো। গ্রামে কোন কিছু হলে প্রথমে রাজের কাছে সংবাদ পৌছানো হয় ল্যান্ডফোনের মাধ্যমে। সে বাকি দুই ভাইকে জানিয়ে দেয়। কারণ রাজের নিজের ব্যবসা। নিজের অফিস। অফিসে রয়েছে ল্যান্ডফোন। খালেদ ও আসলাম ভিন্ন দুই কোম্পানিতে চাকরি করে।
বাদশা আসছে না দেখে তালুকদার নিজে তার বাড়িতে চলে গেলো। পিতৃস্নেহ স্বরে বাদশাকে মনঃস্থির হতে বলল। পাশাপাশি বাদশা যেনো তালুকদার বাড়িতে ফিরে এসে তার দায়িত্ব পালন করে তাও বলল। বাদশা আশ্বাস দিলো তালুকদারকে আসবে বলে।
সেদিন বিকেলে বাদশা প্রথম মধুপুর গ্রামে গেলো। নূরী ও শিখাকে তার মায়ের বিষয় জানালো। শুনে তারা মা মেয়ে আফসোসে ভেঙ্গে পড়লো। তখন প্রসঙ্গক্রমে বাদশা তালুকদার পরিবারের অনেক কথাই বলল শিখা ও নূরীর কাছে। শিখা পূর্ণ মনোযোগে বিষয়গুলো শ্রবণ করলো। নাস্তা খেয়ে বাদশা তালুকদার বাড়িতে চলে গেলো। দেখলো তার ফুলও কেমন চুপসে গিয়েছে। আগের মতো সেই সতেজতা নেই তার ফুলের পাপড়িগুলোর মাঝে। একইভাবে ফুলও দেখলো বাদশা কেমন ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে গিয়েছে মাকে হারিয়ে।
শিখার কাছে রাজের চিঠি এলো। শিখা মিটমিটিয়ে হাসছে আর চিঠি পড়ছে।
হাসির কারণ হলো চিঠির ভিতরে কয়েকটি লাল গোলাপের পাপড়ি রয়েছে। প্রতিটি পাপড়ির মাঝে জেলপেন দিয়ে লিখা, শিখা, মাই লাভ, মাই লাইফ,প্রজাপতি, ইত্যাদি।
“প্রজাপতি কেমন আছো? মন বলছে ভালো আছো। যার জীবনে একটা আমি আছি সে ভালো না থেকে পারে না। আকাশের সীমানা যদি মাপা যেত। তার বুকে কত তারার বাস, যদি গোনা যেত। তাহলে তুমি বুঝতে, এ হৃদয় তোমাকে ভালবাসে কত। চায় কত। হয়তো তুমি জানো না, জীবন আমার তোমাকে ছাড়া, যেন শূন্য মরু সাহারা। সাগরের বুকে যত জল আছে। যত ঢেউ উঠে দুলে দুলে, একে একে ভীড়ে সব সাগরের কূলে। তারচেয়েও বেশি আমার প্রেম তোমার তরে।
প্রিয়া আমার বাড়ির বিষয় নিয়ে তুমি মন খারাপ করো না। এসব আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভালো মন্দ মিলিয়েই ত জীবন। আমি নিজেও তেমন ভালো নেই সেসব নিয়ে। বাবা তার ভাইকে হারিয়ে মানসিকভাবে কিছুটা হলেও ভেঙ্গে পড়েছে। তবে তার বড় কারণ হলো,
আমাদের যে পারিবারিক সম্পত্তি রয়েছে, বাড়িতে ও,বাইরে। এগুলো তদারকি করার লোকের অভাব পড়ে গিয়েছে। বড় ভাইয়া ও চাচা দুজনই গত। শুনলাম বাদশাও মাকে হারিয়ে বিপন্ন এখন। সব আগোছালো হয়ে যাচ্ছে। তোমার রেজাল্ট দিলে বাড়ি আসবো। তখন জুবায়ের,বাবাসহ বসবো এসব নিয়ে। আমার মতো করে কি আমাকে তোমার মনে পড়ে? জানাতে ভুল কর না।
আমার বর্তমান অবস্থা এমন, যখন শুই তখন ঘুম আসে। যখন ঘুম আসে তখন স্বপ্ন আসে। যখন স্বপ্ন আসে তখন তুমি আসো। যখন তুমি আসো, তখন আসে না ঘুম, আসে না স্বপ। তোমার জ্বালায় তারা পালায়।
কি লিখতে কি লিখেছি জানি না। বুঝে নিও সব। আম্মা ও আপাকে সালাম দিও। আমার প্রতিক্ষার ক্ষণগুলো দীর্ঘ করো না।
ইতি____
বিরহে পোড়া মন।”
শিখা রাজের চিঠির সম্পত্তি নিয়ে বলা কথাগুলো মায়ের সঙ্গে শেয়ার করলো। নূরী সহমত প্রকাশ করে আফসোস করলো। বলল,
“ঠিকই কইছে জামাই। ধর, আগে হের বড় ভাই ,চাচা ছিলো। তারা ও বাদশা মিলা সব দেখাশুনা করতো। দুজন কইমা যাওন মানে বিশাল কিছু। মা হারাইয়া বাদশাও এলোমেলো হইয়া গ্যালো। দুনিয়াতে কারো জন্যই কিছু থাইমা থাকে না। দেখবি সব ঠিক হইয়া যাইবো সময়মতো।”
“হইলেই ভালো আম্মা।”
এদিকে বাদশা দুটো বিষয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো। জুবায়েরও তার জীবন নিয়ে এক নিষ্ঠুরতম সিদ্বান্ত নিয়ে ফেলল। ওয়াদা করে ফেলল নিজের সঙ্গে নিজে।
রাজবধূ পর্ব ৩৩
তারপর এক সন্ধ্যায় মতির মা কন্ঠকে খাদে নামিয়ে সুফিয়া বিবিকে বলল,
” ভাবি অভয় দিলে কিছু কথা কইতাম বাদশার হইয়া।”
“বাদশার হইয়া তুই কিছু কইতে হইবো ক্যান? বাদশা কইলে সমস্যা কি?”
চমকিত চোখে অবাক কণ্ঠে বলল সুফিয়া বিবি।