রাজবধূ পর্ব ৪১
রেহানা পুতুল
জুবায়ের শিখাকে পাঁজাকোলা করে তার রুমে নিয়ে যায়। তারপর,
“ওই অমানুদের দলেরা,কে কই আছিস এদিকে আয়।”
বলে ব্যাঘ্রকন্ঠে হুংকার দিয়ে সবাইকে ডাক দিলো জুবায়ের।
এতক্ষন নিজাম কাচারি ঘরের বেড়ার ফাঁক দিয়ে লুকিয়ে উঠানের সব কার্যকলাপ দেখেছে। শিখার গায়ে লালচাঁনের প্রতিটি আঘাত দেখে সে বেশ আমোদিত হয়েছে। বেশ হয়েছে! মার খেয়ে কাত হয়েছে। কতটুকুন একটা মেয়ে। অথচ ঝাঁঝ কি কড়া। মনে হয় ধানি লংকা।
সবাই হন্তদন্ত পায়ে ছুটে এলো শিখার রুমে। জুবায়েরের মা,নানীও ছুটে এলো। সুফিয়া অসহিষ্ণু গলায় বলল,
” কি হইছেরে জুবায়ের? গলা ফাটাস ক্যান?”
“দেখেন কি করছেন ছেলের বউরে? জ্ঞান আছে এর?”
শিখাকে বিছানার উপরে শুইয়ে দিতে দিতে ক্ষ্যাপাটে গলায় বলল জুবায়ের।
সবাই শিখাকে টেনেটুনে দেখছে। শিখা নির্জীবের ন্যায় আধমরা হয়ে পড়ে আছে। দুচোখ বন্ধ।
সুফিয়া বিবি মাথায় হাত দিয়ে ধপাস করে মেঝেতে বসে পড়লেন। হায় হায় সুরে বললেন,
” হায়রে খবিস জ্বিন। তোরে তাড়াইতে গিয়া এমন করতে হইলো। ব্যাটার কি দোষ? ওই সাইজ্জা বউ, এর হাতে পায়ে তেল মালিশ করো। দাঁত কেঁচকি মাইরা আছে কিনা দেখো। ছ্যাবলার মতন খাড়ায়া থাকলে হইবো? জখমের জায়গায় মলম লাগাও।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শিখার জ্ঞান ফেরানোর জন্য তারা উঠে পড়ে লাগলো। তার দাঁতের ভিতরে একটা স্টিলের নাস্তার চামচ ঢুকিয়ে দিলো। তাতেও কাজ হলো না।
জুবায়ের শশব্যস্ত হয়ে বের হয়ে গেলো। বরকতকে ডাক দিতে গিয়েও থেমে গেলো। বরকত যদি এখন ডাক্তার নিয়ে আসে,তাহলে কারণ জেনে যাবে কেশব ডাক্তার। এতে শিখা ও তাদের পরিবার ছোট হয়ে যাবে। তারচেয়ে বরং সেই চলে যাক। জুবায়ের বাইক টান দিয়ে বাজারে চলে গেলো। ফার্মেসিতে গিয়ে বলল জ্ঞান ফেরানোর ও শরীরের ব্যথা দূর করার মেডিসিন দেওয়ার জন্য। ডাক্তার বিস্তারিত জানতে চাইলো। জুবায়ের চালাকি করে আদুরীর কথা বলল। পড়ে গিয়ে শরীরে ব্যথা পেয়েছে বলল। ডাক্তার ঔষধ দিয়ে দিলো। জুবায়ের বাড়ি এসে শিখার রুমে গেলো। দেখলো শিখার জ্ঞান ফিরেনি। শারিরীক কন্ডিশনও খারাপ।
সে আদুরীর হাতে মেডিসিন দিয়ে বলল,
“এই মলম লাগিয়ে ট্যাবলেট খাইয়ে দে। রোজ তিনবেলা ভরা পেটে ট্যাবলেট খেতে হবে।”
“আচ্ছা।” বলে আদুরী সব নিলো। জুবায়ের তার মা,নানীকে ডেকে নিজেদের রুমে চলে গেলো। জিজ্ঞেস করে বিস্তারিত জেনে নিলো তার মায়ের থেকে। দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
পরেরদিন জুবায়ের মার্কেটে যাওয়ার পথে চৌরাস্তায় থামলো বাইক নিয়ে। ফোনফ্যাক্সের দোকানে গেলো। রাজের অফিসের টি এন্ড টি ফোনে ফোন দিলো।
রাজ, হ্যালো..নওশাদ স্পিকিং বলতেই,
জুবায়ের অস্থির কন্ঠে বলে উঠলো,
” বিয়ে করে গ্রামে বউ ফেলে রাখছিস। কি করিস শালা তুই শহরে বসে বসে? ”
রাজ খানিক নড়ে উঠলো। নিরস গলায় বলল,
“কি করি মানে কেমন প্রশ্ন? কেউ না জানুক। তুই ত জানিস আমি কি করি? কি হয়েছে সেটা বল?”
জুবায়ের বন্ধুসুলভ কন্ঠে অধিকার নিয়ে বলল,
“কি আর হয়নি? হাঁড়িতে মাখন রেখে গেলি। সবাই স্বাদ নিতে চায়। চেখে দেখতে চায়। সবাই কামুক, লোভাতুর হয়ে উঠেছে। সবার জিহবা লকলকায় মাখন দেখলেই। চাকর থেকে মনিব সবাই। কাল বিকালে বেদম মারও খেলো শিখা। অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে মারের চোটে। আমি মেডিসিন এনে দিয়েছি।”
“হোয়াট! কি বলছিস এসব? কে মারলো তাকে? কেন মারলো? আর সবাই বলতে কে?”
কম্পিত রুক্ষস্বরে জিজ্ঞেস করলো রাজ।
“কে নয়? সীমান্ত, তোর ছোট চাচা,তোর মামু, কাজের ছেলে নিজামও শেষ পর্যন্ত।”
” চাকর নিজাম? নিজাম কি করেছে?”
জুবায়ের যা জানে সব বলল লালচাঁনের বিষয়টা সহ। রাজ মৃগী রোগীর ন্যায় কাঁপতে লাগল। তার ঘাড়ের র * গ ফুলে গিয়েছে। শিরা উপশিরার র *ক্তগুলো দাপাদাপি করছে বিরতিহীনভাবে। সে ঠিকভাবে কথা বলতে পারছে না। তার কণ্ঠনালী রোধ হয়ে আসছে। কেউ যেন তার গলা টিপে ধরেছে।
সে জড়ানো স্বরে জুবায়েরকে অনুরোধ করে বলল,
“আমি এদিকটা গুছিয়ে বেশ কিছুদিনের জন্য বাড়িতে আসবো। লালচাঁন ভণ্ডকে তুই কিছু বলিস না। নিজাম বর্বরকেও এখন তাড়াস না। আমি নিজ হাতে এদের শায়েস্তা করবো। বাকিদের ফয়সালাও হবে। এই ভিতরে বাবাও চিল্লা থেকে আসুক। ততদিন তুই শিখার দিকে খেয়াল রাখিস আমার হয়ে। কলেজে কোন ছেলে তাকে ডিস্টার্ব করে কিনা তার খোঁজটুকুও রাখিস। আর তুই যে আমাকে জানিয়েছিস এটা বলিস শিখাকে। আমি আজই চিঠি লিখবো তাকে।”
“ঠিক আছে। তুই যত দ্রুত পারিস আয়।”
দুজন ফোন রিসিভার রাখলো দুই প্রান্তে। জুবায়ের মার্কেটে চলে গেলো। রাতে বাড়িতে এসেই শিখার রুমের সামনে গেলো। চাপানো দরজা ফাঁক করে গম্ভীর অথচ ভীষণ আন্তরিক কণ্ঠে বলল,
“শিখা আসতে পারি?”
“হ্যাঁ ভাইয়া আসেন।”
দুর্বল স্বরে বলল শিখা। পাশ থেকে ওড়নাটা দ্রুত নিয়ে বুকের উপর মেলে দিলো। সে বিছানায় কাত হয়ে শুয়েছিলো। উঠতে চাইলে জুবায়ের আপত্তি করলো।
” উঠো কেন? শুয়ে থাকো। ব্যথার উপশম হচ্ছে?”
“হ্যাঁ ভাইয়া। কিছুটা হচ্ছে।”
“দরকার হলে আরো ঔষধ এনে দিবো। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করো। মুখ কেমন পাংশুটে হয়ে গিয়েছে তোমার। আমি রাজকে ফোন করেছি। সব জানালাম। বলল, নিজাম এখন থাকুক। সে নিজ হাতে তাকে ও ফকিরকে শাস্তি দিবে।”
রাজের কথা শুনে শিখার মলিন মুখে এক টুকরো হাসি উদ্ভাসিত হলো ভোরের উদীয়মান সূর্যের ন্যায়। সে জুবায়েরের দিকে চেয়ে মায়া মায়া স্বরে বলল,
“আপনি অনেক ভালো মানুষ জুবায়ের ভাই। অনেক। আপনার সব উপকারের কথা শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত মনে থাকবে আমার।”
জুবায়ের থমকালো। করুণ চোখে শিখার চোখে তাকালো। গভীর স্বাস ফেলে নৈরাশ্যবাদী সুরে বলল,
“পৃথিবীতে ভালো মানুষদের বুকের ভিতরে ব্যথা, যন্ত্রণা সীমাহীন! অসহনীয়! এটা জানো তুমি? এরা ত্যাগ দিতে জানে। ভোগ করতে জানে না।”
শিখা জুবায়েরেকে বিনীত গলায় বলল,
“আপনার ব্যথাগুলো চাইলে শেয়ার করতে পারেন আমার সঙ্গে।”
“তুমি সত্যিই শুনতে চাও শিখা?”
চমকানো গলায় বলল জুবায়ের।
“হুম সত্যি। একশোবার সত্যি।”
“বাড়িতে বেশি গল্প করার সুযোগ নেই। দেখতেই ত পাচ্ছো। তুমি যেদিন কলেজে যাবে। সেদিন তোমার ক্লাস ছুটির পরে আমি মোটরবাইক নিয়ে মাঠে থাকবো। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে। তোমার বাইকে চড়ার ইচ্ছেটা পূরণ হবে। আমারও ভিতরটা একটু হালকা হবে। কেমন?”
“আচ্ছা।” বলল শিখা।
জুবায়েরের উপস্থিতি টের পেয়েই আদুরী ও ডলিও প্রবেশ করলো শিখার রুমে। জুবায়ের তাদের সঙ্গে কোন কথা বলল না। রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আদুরী, ডলিও বের হয়ে গেলো। তারা জুবায়েরের পিছন পিছন একটু এগিয়ে গেলো সামনের দিকে। জুবায়ের পা থামালো তাদের পদধ্বনি টের পেয়ে। ঘাড় ঘুরিয়ে দুজনের দিকে তাকালো। দেখলো দুজনই মিটমিটিয়ে হাসছে।
“কি ব্যাপার আদুরী? মিসেস ডলি? হাসা হচ্ছে কেন?”
“জুবায়ের ভাই,আপনে শিখার এমন খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করছেন, মনে হয় শিখা আপনার বউ। রাজ ভাইয়ার নয়। বাইরে থেকে আইসা শার্ট প্যান্ট না পাল্টায়াই এক্কেবারে শিখার রুমে চলে আইলেন। বাপরে বাপ!”
ঠোঁট বাঁকিয়ে টিপ্পনী কেটে কথাগুলো বলল আদুরী।
ডলি বলল,
“আমারও তাই মনে হয় দেবরজি।”
জুবায়ের দু’পা এগিয়ে তাদের মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো। স্পষ্ট ভাষায় বলল,
“কোনকিছু বারবার বললে সেটা কিন্তু বাস্তবে ফলে যায়। মনে রেখো তোমরা। শিখার দায়িত্ব রাজ আমাকে দিয়েছে আরো আগেই।”
“রাতের দায়িত্ব না দিনের দায়িত্ব দিলো দেবরজি?”
বলল ডলি।
“রাতেরও। দিনেরও। খুশী? ”
খিটখিটে মেজাজে বলল জুবায়ের। আদুরী ও ডলি ভিরমি খেলো যেন। গোল গোল চোখে জুবায়েরের দিকে চেয়ে রইলো।জুবায়ের চলে গেলো নিজের রুমে।
সেই নিশিতে নিজের অজান্তেই শিখাকে নিয়ে এলোমেলো কল্পনায় ডুবে গেলো জুবায়ের। ডুবুরির ন্যায় এফোঁড়ওফোঁড় করেও কল্পনার কোন থই খুঁজে পেলনা সে।
সুফিয়া বড় বউকে জিজ্ঞেস করলো,
“আদুরীর কি সমস্যা? জিগাইছো? কি কইলো?”
“হ জিগাইছি আম্মা। তার ননদের লগে নাকি ভুল বোঝাবুঝি হইছে রান্নাবাড়া নিয়া। এজন্যই তারে দিয়া গেলো।”
সুফিয়া ভিরমি খাওয়া সুরে বলল,
“মাইয়া সুজারে বুঝায়? এইটার লাইগা কেউ বউরে বাপের বাড়ি তুইলা রাখে? আর কয়দিন দেইখা আমি লোক পাডামু কৃষ্ণনগর। তহন আসল কেচ্ছা জানা যাইবো। ইজ্জত ডুবাইবো। মাইনষে জিগাইলে কি জবাব দিমু?”
এই বলে নিজে নিজে অনেক্ষণ ধরে আদুরীকে বকাঝকা দিতে লাগল বিষিয়ে আসা কণ্ঠে। রানী চুপ মেরে রইলো। আদুরী তাকে সত্যিটা বলে মায়ের কাছে মিথ্যে বলতে শিখিয়ে দিয়েছে। রানীও একমাত্র ননদের মুখের দিকে চেয়ে শুনতে রাজী হলো।
দুই তিনদিন পর শিখা সুস্থ হলো। শরীরের ব্যথা কমলো। জুবায়ের প্রতিদিন মার্কেটে যাওয়ার আগে শিখার সুস্থতার খবর নেয়। সেদিন খবর নিতে এলে শিখা জানালো আজ কলেজে যাবে। এমনিতেই লস হয়ে গিয়েছে। জুবায়ের নিজের রুমে গিয়ে একবারে তৈরি হয়ে বের হয়ে গেলো। শিখা কলেজ শেষে বের হয়ে মাঠের শেষ প্রান্তে এলো।
“শিখা এদিকে এসো।”
জুবায়েরের হাস্কি গলা শুনে শিখা তারকাছে এগিয়ে গেলো। দেখলো জুবায়ের বাইকের উপর নায়কের স্টাইলে বসে আছে। গায়ে হাফহাতার নীল চেকের শার্ট। পরনে কালো প্যান্ট। চোখে সানগ্লাস। এক হাতে ঘড়ি। তাকে আজ অন্যদিনের চেয়ে বেশি হ্যান্ডসাম লাগছে। শিখা ঈষৎ হেসে বলল,
“সকালে ত বলেন নি আজ আসবেন যে? আপনাকে সুন্দর লাগছে।”
“তোমার চোখে সুন্দর লেগেছে আমাকে। আমি ধন্য ও কৃতার্থ। আর সব বলতে হবে কেন শিখা। কিছু বিষয় বুঝে নিতে হবে তোমাকে। আমার পিছনে চড়ে বসো। পড়ে যাওয়ার ভীতি থাকলে আমাকে ধরে বসবে প্রিয়জন ভেবে।”
“কোথায় নিবেন আমাকে?”
“উঠে বসো। তারপর দেখো।”
শিখা জুবায়েরের পিছনে উঠে বসলো। ভয় পেলেও জুবায়েরকে না ধরেই বসে রইলো বাইকে। জুবায়ের শাঁই শাঁই করে দুর্বার গতিতে বাইক চালিয়ে যেতে লাগলো। যেন আজ তার অসীম দিগন্তে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। একটা নদীর পাড়ে গিয়ে থামলো বাইক। শিখা নেমে চারপাশে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলো।
মাথার উপরে উদার আকাশ। নিচে ঢেউ খেলানো রাশি রাশি জলের বিশালতা। অদূরে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। এত অপরূপ মনোমুগ্ধকর দৃশ্য সে কোনদিন দেখেনি। শিখা আনমনা হয়ে গেলো।
জুবায়েরের দুহাত ঝাঁকিয়ে আহ্লাদী সুরে বলল,
“ভাইয়া অশেষ ধন্যবাদ। আমি কোনদিন একসঙ্গে এত মনোরোম দৃশ্য দেখিনি।”
জুবায়ের শিখার হাতের দিকে চেয়ে প্রসন্ন হেসে বলল,
“আসো লাঞ্চ করো। সামনেই হোটেল।”
শিখা ও জুবায়ের একসঙ্গে ভাত খেলো। পরে বের হয়ে তারা নির্জন একটি গাছের গোড়ায় গিয়ে বসলো পাশাপাশি।
জুবায়ের বলল,
“ওহ হো! ভালো কথা। রাজ বলল,তোমাকে কলেজে কোন ছেলে বিরক্ত করে কিনা আমার খবর নিতে।”
“কেউ বিরক্ত করে না ভাইয়া। তবে…”
তিন আঙ্গুলের ডগা দিয়ে কচি ঘাসের মাথা ছিঁড়তে ছিঁড়তে ছোট্ট করে বলল শিখা।
“তবে কি শিখা? বাক্য ফিলাপ করো বলছি।”
শিখা বইয়ের ভিতর হতে কয়দিন আগে পাওয়া লাস্ট চিরকুটটি বের করে জুবায়েরের হাতে দেয়। এবং আগের চিরকুটের বিষয়গুলোও জানায় তাকে। জুবায়েরের চিরকুটটি পড়ে শিখার হাতে গুঁজে দিয়ে বলল,
“চিরকুটের মালিক তোমাকে জীবন দিয়ে ভালোবাসে মনে হলো। রাজ বাড়ি আসলে অবশ্যই দেখাবে। আমিও দেখি কি করা যায়। আর গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো আমাদের পরিবারে তুমি চোখ কান খোলা রেখে চলবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে। আমার থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পাবে তুমি।”
“আচ্ছা ভাইয়া। আমার বাইকে চড়ার ইচ্ছে মিটলো। আপনার ব্যথাগুলো?”
“মিটে গেলো? আর চড়বে না?”
“নাহ ভাইয়া। আমি মেরিড। এটা উচিত নয়। যতই ভালো লাগুক।”
“যুক্তি সুন্দর। মানলাম। আমার ব্যথাগুলো এখন ভুলে গিয়েছি। তোমার সামনে থেকে মনে আসছে না।”
” তাহলে আমি সরে যাই?”
“নাহ শিখা।”
“আপনাদের দুজনের মাঝে অনেককিছুর মিল খুঁজে পাই আমি।”
“যেমন?”
“কথা বলার স্টাইল, রা* গ, কেয়ারিং, পোশাক, হাঁটা,চুল, হাইট এসব।”
“আর অমিল?”
“গায়ের রঙ,স্বাস্থ্য, কণ্ঠস্বর,কর্ম, আপাতত আর কিছু মনে আসছে না।”
জুবায়ের হোহোহো করে গলা খুলে হেসে ফেলল। বলল,
“তুমিতো ভারি দুষ্ট আছো? লুকিয়ে লুকিয়ে আমাদের দুই বন্ধুর মাঝে মিল অমিল খুঁজে বেড়াও নাহ?”
“আপনি বিয়ে করছেন না কেন ভাইয়া?”
“করবো। ঠিক তোমার মতো কাউকে পেলে।”
“প্রতিটি মানুষ আলাদা। একজনের মতো আরেকজন হয় না। সুতরাং আমার মতো দ্বিতীয় কাউকেই পাবেন না।”
“তাহলে বিয়েই করবো না।”
ছল করা হাসি দিয়ে বলল জুবায়ের।
“আপনিও ভারি ছেলেমানুষী করতে পারেন দেখি।”
“আচ্ছা শিখা তুমি কি আমাকে তোমার বিয়ের আগে কখনও কোথাও দেখেছো?”
“উমমম! কই নাতো। কেন ভাইয়া?”
“নাহ। এমনিই বললাম আর কি। চলো উঠি। লেট হলে আবার পাঁচ কথা উঠবে।”
শিখাকে বাইকে চড়িয়ে জুবায়ের বাড়ির কাছাকাছি নামিয়ে দিলো। শিখা হেঁটে বাড়িতে চলে গেলো। জুবায়ের বাইক ঘুরিয়ে মার্কেটে চলে গেলো।
তার সপ্তাহ খানেক পরের ঘটনা। সেদিন শুক্রবার ছিলো। জুবায়ের বাড়ির বাইরে ছিলো। তালুকদার জামায়েত থেকে তখনো আসেনি। শেষ বিকেলের দিকে শিখা বাগানের ভিতরে গেলো কাউফল নেওয়ার জন্য। তার খুব খেতে ইচ্ছে করছে এই কাউফল। সে আগের চেয়ে এখন বেশি স্বাধীনচেতা ও সাহস নিয়ে চলাফেরা করে স্বশুর বাড়িতে।
সে পড়ে থাকা পাকা কাউফলগুলো কুড়িয়ে ওড়নার কোঁচায় ভরে নিতে লাগলো। আকস্মিক নিজাম পিছন থেকে শিখার মুখ চেপে ধরলো। মুহূর্তেই শিখার কোঁচার সব কাউফল বাগানের মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলো। নিজাম শিখাকে টেনে সেই নির্জন জংলার ধারে নিয়ে গেলো। শিখার বুকের ওড়না দিয়ে মুখ বেঁধে ফেললো। শিখা কথা বলতে পারছে না। নিজাম কামুক চোখে শিখাকে বলল,
“আমি জানি জুবায়ের ভাই রাজ ভাইরে জানাইছে। আর রাজ ভাই যেকোন সময় আইসা পড়তে পারে। চাচাও আইসা পড়বো। আমার চাকরি খতম তা সত্য। তার আগে আপনারে খাইতে চাই। আপনার তুলতুলা দেহের উপরে আমার ম্যালা লোভ।”
রাজবধূ পর্ব ৪০
বলে নিজাম শিখাকে মাটিতে শুইয়ে দিলো চিৎ করে। প্রস্তুতি নিচ্ছে তার লালসা মেটানোর জন্য। শিখা ভয়ার্ত চোখে অনুনয় বিনয় করতে লাগলো নিজের সতীত্ব রক্ষার জন্য। কিন্তু নিজামের কর্ণপাত হলো না শিখার আকুতি।
তখনই পিছন হতে নিজামের গায়ের উপর অতর্কিত হামলা শুরু হলো। শিখা উঠে চলে গেলো কাঁপতে কাঁপতে।
সেই রাতেই নিজামের লা* শ উদ্ধার হলো বাগানের ভিতর হতে। তুলকালাম কাণ্ড বেঁধে গেলো ও হায় – হুতাশ শুরু হলো তালুকদার বাড়ির অন্দরমহলে।
সবাই বিশ্বাস করলো সেই শক্তিশালী জ্বীন আবার শিখার উপর ভর করলো।এবং শিখাই নিজামকে মেরে ফেলল।