রাজবধূ পর্ব ৪৮

রাজবধূ পর্ব ৪৮
রেহানা পুতুল

জুবায়ের চটুল হেসে বলল,
” ওরেব্বাস! তুই দেখি দানশীল হাজী মুহাম্মদ মহসিনের ছোটভাই। বেঁচে থাকো বৎস! দীর্ঘজীবী হও! দেখি, তাকে খুঁজে বের করা যায় কিনা কোন ক্লু ধরে।”
রাজ চলে গেলে জুবায়ের চিরকুটটি পূনরায় পড়ে নেয়। নিরবে হেসে বলে,
“তুই একদিন সত্যি সত্যি জানবি এবং দেখবি, শিখার সেই মহাপ্রেমিককে। যে তোর চেয়েও অনেক বেশী ভালোবাসে,কেয়ার করে শিখাকে।”
রাজ নিচে গিয়ে আদুরীকে ডাক দেয়।
“হ্যাঁ ছোট ভাইয়া,বলেন?”
“তোর স্বশুর বাড়িতে কোন সমস্যা?”
“কই নাতো?”

দোনোমোনো করতে করতে জবাব দেয় আদুরী।
“তাহলে যাচ্ছিস না কেন? তারা কেউ নিতে আসে না কেন?”
“কি জানি। তারা হয়তো সময় করে উঠতে পারছে না।”
“তাহলে আমি দিয়ে আসবো তোকে। কাল সকালে রেডি থাকিস।”
আদুরী মুখ কালো করে ফেলল। রাজের ভরাট গলা শুনে সুফিয়া বিবি এগিয়ে এলো।
“কিরে রাজ, কি হইলো?”
“মা,আদুরী যাচ্ছে না কেন? এখানে থাকলে ত আমাদের কোন সমস্যা নেই। কিন্তু আমার কেমন ঘাফলা লাগছে।”
সুফিয়া ছেলের কথায় সায় দিলো কিছুটা। মুখ গোঁজ করে বলল,
“এইটা আমারো মনে হইতাছে। ওই তো কিছুই কইতাছে না।”
“ওদের হয়তো কেউ নেই আসার জন্য। কাল সকালে আমি আদুরীকে নিয়ে কৃষ্ণনগর যাবো।”
“হ যাইস। তবে কাইল নাহ। আরো কয়দিন দেখি তারা কেউ নিতে আসে কিনা।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাজ কিছু না বলে উঠানের দিকে বেরিয়ে যায়। আদুরী মায়ের দিকে চেয়ে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,
“কূটনা বউ আমার ভাইর কান ভারি করছে। মন চায় তার সারাগায়ে লবন মরিচ ছিটাই।”
“সামনের শুক্কুরবারে তৈয়ার থাকিস। রাজ নিয়া যাইবো। বিয়ার পর বাপের বাড়ির কোর্মা পোলাওর চাইতে স্বামীর বাড়ির ভর্তা ভাত খাওয়াও বহুত ইজ্জতের। গর্বের! শান্তির!”
সুফিয়া বিবি সরে গেলে রানী দপদপ পায়ে আদুরীর সামনে যায়।
“রুমে আয়। কথা আছে।”
আদুরীকে নিয়ে রানী তার রুমে ঢুকে। উদ্বেগজনিত স্বরে বলে,

“কিরে আদুরী? হেই মাইয়া ক্যামনে টের পাইলো? ভাইবা কূল কিনারা পাই না। মাথা চক্কর মারতাছে আমার। আমারে আইজও হুমকি দিয়া গ্যালো। ওই এখন কলেজে আছে। তুই ফার্মেসীর কথা বইলা বাজারে যা। খালেদ ভাইরে টেলিফোন কইরা সব ক। সে কি উত্তর দেয়,ভালো কইরা হুইনা আয়। তার উপর ভিত্তি কইরা সিদ্ধান্ত নিমুনি।”
“যাচ্ছি। আমি নিজেই আছি আমার বিপদ নিয়ে। কি যে হবে আল্লাগো!”

আদুরী ঘরের কে কোথায় আছে দেখে নেয়। তাড়া করে বের হয়ে যায়। মায়ের কাছে বলল মার্কেটে সামান্য কেনাকাটা আছে। ফোনফ্যাক্সের দোকানে গিয়ে খালেদের কোম্পানিতে টেলিফোন করলো। খালেদকে সংকোচপূর্ণ স্বরে সব বলল। খালেদ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলো,তার ভুল ও মোহের জন্য সে অনুতপ্ত, অনুশোচিত। সুমনার ভাগ সে দ্বিতীয় কাউকে দিবে না। সুমনাকে সে দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করাবে দরকার পড়লে।
আদুরী বাড়ি এসে সব জানালো রানীকে। রানী হিমশীতল বরফখন্ডের ন্যায় জমে গেলো। আদুরীকে অবসাদজনিত গলায় বলল,

“তুই পরশু যাইস। কাইল আমারে নিয়া চল। ওয়াশ কইরা ফালামু।”
আদুরী সেদিন দুপুরে রানীকে নিয়ে গেলো সেই সরকারি হসপিটালে। এবোরেশন করে ফেলল চার সপ্তাহের নিষ্পাপ ভ্রুণটি। তবে রানী প্রতিশোধের অনলে পুড়ে মরছে প্রতি ক্ষণে ক্ষণে। শিখা হুমকি না দিলে হয়তো সে ও আদুরী মিলে খালেদকে বুঝিয়ে নিতে সক্ষম হতো।
সন্ধ্যায় রানী শিখার রুমে গেলো। বিছানার এককোণে বসলো। কণ্ঠে দরদের ঝাঁপি ঢেলে বলল,
“শিখা, আছোত। ভাবছি উপরে তুই। তোর কথা রাখছি বইন। চিন্তা করলাম আসলে এইটা উচিত না। নিজের শান্তির লাইগা আরেকজন নারীর সুখে ভাগ বসান পাপ। তুই দ্বিতীয় কান করিস না আর। বিষয়টা ভুইলা যা। তবে কৌতুহল জাগতাছে,তুই ক্যামনে জানলি?”

শিখা প্রীত চোখে রানীর দিকে তাকায়। আন্তরিক গলায় বলল,
“ভাবি সারাদিন ত আমি উনার কাছে থাকি না। উনিও কাজে এদিক সেদিক ব্যস্ত থাকে। আমি আমার এই রুমেই থাকি পড়াশোনা করার জন্য। শুনে স্বস্তি পেলাম ভাবি। আলহামদুলিল্লাহ। যার ভাগ্যে বিধাতা যতটুকু সুখ শান্তি বরাদ্দ রেখেছে, তা নিয়েই প্রতিটি মানুষের শুকরিয়া আদায় করা উচিত। আর আমি কিভাবে জানলাম বা টের পেলাম সেটা আপনার না জানলেও চলবে।”

” আইচ্ছা। আমি যাই তাইলে। তুই পড়।”
রানী চলে যায়। শিখা রানীর উপর সন্তুষ্টির চিত্ত নিয়ে পড়ায় মনোযোগ স্থাপন করলো।
রাতে রাজ শিখার রাঙা অধর ভাঁজে আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে বলল,
“তুমি নিজ থেকেই ভাষার পরিবর্তন করেছো। এতে আমি ভীষণ স্যাটিসফাইড।আচ্ছা, আমার পরিবর্তে যদি তোমাকে কিছু দায়িত্ব দিই,তুমি পারবে?”
“কিসের দায়িত্ব? আপনাদের বাড়ির,জায়গাজমির?”
“হ্যাঁ। সব মিলিয়ে। তুমি যা পারবে তাই দেখাশোনা করবে। আমার মনে হলো তুমি পারবে। তাই জেনে নিলাম। বাবা তাবলীগ থেকে আসলে আমি সবাইকে নিয়ে বসবো। তখন সবার উপস্থিতিতেই আমি তোমাকে সেই স্বাধীনতা দিয়ে দিবো। যেহেতু আমি গ্রামে থাকি না।”

“আচ্ছা সমস্যা নেই।”
এভাবে আমেনা ও জুবায়েরের প্রসঙ্গ আসে। তখন শিখা জিজ্ঞেস করলো,
“জুবায়ের ভাই নাকি আপনার সমবয়সি। তাহলে বিয়ে করেনা কেন?”
“সে ছ্যাঁকা খেয়ে ব্যাঁকা হয়ে আছে। আমাদের ফুলসজ্জা রাতে সেজন্যই সে মদ গিলে আহত হয়েছে।”
“আসলেই? মারাত্মক লেভেলের প্রেম বলা যায়।”
অবাক কণ্ঠে চোখ কপালে তুলে বলল শিখা।
” তাতো বটেই। পুরাই সত্যি।”

“চাচীর একটা মেয়ের শখ। আপনি তারে বুঝান বিয়ে করতে। একজনের স্মৃতি নিয়ে পড়ে থাকলে হবে?”
“হুম বিয়ে করাবো তাকে। নয়তো তার নজর লাগবে আমাদের উপরে। কারণ সে ক্ষুধার্ত!”
এটা ভালো বলেছেন। বলে শিখা মুখ টিপে হেসে ফেলল।
রাজ মুগ্ধ নয়নে শিখার দিকে চেয়ে রইলো ভাবুকের মতো। শীতল গলায় বলল,
“প্রজাপতি, তোমার নাম শিখা কে রেখেছে?”
“কেন? আব্বায় রাখছে।”
” ‘শিখা’ নামটা বেশ গরম,ঝাঁঝালো ও ভারি। ‘আলো’ নামটা কোমল, ঠান্ডা ও মোলায়েম। তবে দুটো নামই আলাদা সৌন্দর্য ও তাৎপর্য বহন করে।”

“আপনি আবার কবে থেকে নাম বিশারদ হলেন?”
“যখন শুনলাম আমার হবু বউয়ের নাম অগ্নিশিখা।”
“কেন? ভয় হয় শিখাকে?”
“একদম নাহ। জ্বিন তাড়ানো ফকিরকে মারার সময় প্রথম তোমার তেজের স্ফুরণ দেখেছি। যেটা তোমার নামের সাথে একদম যায়। বুকে আসো, উত্তাল সুখের ঝড় তুলি। হারিয়ে যাই অতল স্বর্গের ডাকে।”
“নাহ। অসুবিধা আছে।”
“কিসের অসুবিধা?”
শিখার সরু আঙ্গুলগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে বলল রাজ।
“বলা যাবে না।”
“বলো বলছি। নইলে ধরে নিব ছল করছো ফাঁকি দেওয়ার জন্য।”
“আমার অসুখ।”
“কিসের অসুখ?”

“ধূর মিয়া। আপনি পঁচা সাবান। বুঝেন না কেন?”
কাঁথার নিচে মুখ লুকিয়ে বলল শিখা।
রাজও চট করে একই কাঁথার নিচে ঢুকে গেলো। শিখার কানের কাছে মুখ নিয়ে হিসহিসিয়ে বলল,
“ওহ হো! এবার বুঝতে পেরেছি বোধ হয়। ফার্মেসী থেকে কিছু কিনে আনতে হবে নাকি?”
“নাহ।”
রাতের মধ্য প্রহর অবধি রাজ শিখা আশা জাগানিয়া গল্পে মেতে উঠে। অবশেষে মধুর আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়ে দুজনে সুখ নিদ্রায় ঢলে পড়ে।

শুক্রবারে রাজের কলেজ পড়ুয়া খালাতো বোন লিমা বেড়াতে এলো তাদের বাড়িতে। শিখার সাথে তার সখ্যতা বেশ। লিমা ও শিখা হাত ধরাধরি করে গল্প করতে করতে বাগানের ভিতরে গেলো। বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়াতে শিখার খুব ভালোলাগে। বাগানে নানারকম ফল ফলাদির গাছ রয়েছে। করমচা গাছের নিচে গিয়ে দাঁড়ালো দুজন। কিছু আধপাকা করমচা চোখে পড়লো শিখার। লিমাকে বলল,
“করমচা খাবি? গাছে উঠে ডাল ধরে ঝাঁকি দিলেই টুপটুপ করে নিচে পড়বে।”
“খাইতে ত মন চায়। কিন্তু নিব কিভাবে?”
“দাঁড়া আমি পেড়ে নিচ্ছি। আমাদের বাড়িতে ত আমি আম গাছ,কাঁঠাল গাছ,বরই গাছ,চালতা গাছ,পেয়ারা গাছে কত উঠেছি। এখনো উঠি বাড়ি গেলে।”

“তাহলে তুমি উঠো ভাবি। বাগানে কেউ আসবে না।”
শিখা কোমরে ওড়না পেঁচিয়ে নেয়। গাছে উঠে ডাল ঝাঁকি দিয়ে দিয়ে অনেকগুলো করমচা ফল মাটিতে ফেলে দেয়। লিমা সেগুলো তার আঁচলায় ভরে নেয়। হঠাৎ সে জুবায়েরের গলার ডাক শুনতে পেলো।
“এই কে আমাদের গাছ হতে করমচা চুরি করে? কে?”
“এমন চিল্লান কেন জুবায়ের ভাই? আমি।”
” ওহ লিমা। কেমন আছিস? কখন এলি? সরি। বুঝতে পারিনি। আমি দূর থেকেই করমচা গাছের নড়াচড়া দেখে এগিয়ে এলাম। ভাবলাম পাশের বাড়ির পোলাপান।”
“আজ সকালে। আপনি এখন কেমন আছেন?”
“এইতো ভালো আছি। মগডালে কে বসে আছে?”

বলে জুবায়ের মাথা উঁচিয়ে গাছের দিকে তাকালো। দেখলো শিখা অন্যদিকে মুখ করে চুপটি করে পাতার আড়ালে বসে আছে। জুবায়ের এক চিলতে হাসি ছড়িয়ে বাড়ির দিকে চলে গেলো। পরক্ষণেই শিখা ঝুঁপ করে লাফ দিয়ে নিচে নামলো। জুবায়ের টের পেতেই পা থামিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে আবার শিখাকে দেখলো।
লিমা ও শিখা দুজনে বাড়িতে এসে রান্নাঘরে ঢুকলো। লবন মরিচ মিলিয়ে জোছনাসহ বসে বসে খেতে লাগলো। ডলি রান্নাঘরে এসে দেখে গেলো। কিছু বলল না। সুফিয়াকে গিয়ে জানালো। সুফিয়া বিষয়টা মাথায় গেঁথে রাখলো। তারপর দুদিন বেড়ানো শেষে লিমা চলে গেলো।
সেদিন রাতেই জুবায়ের তার শার্টের পকেটে কয়েক লাইনের ছোট্ট একটি চিরকুট পায়।

“জুবায়ের ভাই, আমি জানি আপনি আমাকে পছন্দ করেন। আমিও আপনাকে অনেক পছন্দ করি। কিন্তু বলতে পারি না। আজ বলেই দিলাম। ভুল বুঝবেন না দয়া করে। কাউকে ভালোলাগা কি অপরাধ বলেন?”
জুবায়ের গাড়ির ব্রেকফেইলের মতন ধাক্কা খেলো। তার মনে অসীম কৌতুহল ও উদ্দীপনা বিরাজ করলো। এই হাতের লিখা কার হতে পারে ভেবে সে তদন্তে নেমে পড়লো। শিখা কলেজে গেলে চুপিচুপি তার রুমে গেলো। টেবিলের উপর থেকে শিখার কয়েকটি খাতা নিয়ে হাতের লিখা মিলিয়ে নিলো।
জুবায়ের অবিশ্বাস্য চোখে চিরকুট ও খাতার লেখাগুলোর অক্ষরের দিকে পলকহীন চোখে চেয়ে রইলো। গোপনে উচ্চারণ করলো,

এ কি করে সম্ভব! কি করে? এতো দেখি হুবুহু শিখার হাতের লিখা। তার মানে শিখাও আমাকে… না না এ অসম্ভব! শিখাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করাটা কি সমীচীন হবে?
জুবায়েরের হৃদয়পাড়ে ঝড় উঠে। অশান্ত ঝড়! বিরামহীন অবিশ্রান্ত সেই ঝড় থামার কোন লক্ষন নেই।
শিখা কলেজ থেকে বাড়িতে এসে দোতলায় যায়। বাদশাকে নিয়ে লিখা প্রিন্ট করা কাগজটি দেখায় রাজকে। যাতে লিখা রয়েছে,
“বাদশা ভাই,আমার এই লেখা আপনার চোখে পড়ামাত্রই ফুলকে নিয়ে তালুকদার বাড়ি কিংবা আমার বাবার বাড়ি আসবেন। এতে আপনাদের ভালো বৈকি মন্দ হবে না। কথা দিলাম। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন।”

____রাজবধূ শিখা
রাজ বলল,
“ভালো হয়েছে। এভাবেই দায়িত্ববান হতে শিখো। বরকতকে দিয়ে পাঠিয়ে দাও। ”
শিখা নিচে গিয়ে বরকতকে ডেকে বলল,
“বরকত ভাই, এই বাঁধাই করা কাগজটি নিয়ে বাদশা ভাইদের বাড়ি যাবেন। ঘরের সামনে এটা ঝুলিয়ে রাখবেন। বাড়ির সবাইকে বলে রাখবেন এটা যেন না সরিয়ে নেয় কেউ। হাতুড়ি ও পেরেক নিয়ে যাবেন।”
“আইচ্ছা ভাবিজান। যাইতাছি হাতের কাম গোছাইয়া।”
বরকত শিখার নির্দেশ পালন করে দু’ঘন্টার ভিতরেই।
জয়নুল তালুকদার বাড়ি এলো তাবলীগ জামাত থেকে। সবার খোঁজ খবর নিলো। সুফিয়া বিবি নিজের সুবিধামতো কিছু বলল, কিছু লুকালো স্বামীর কাছ হতে।

রাজ পিতার সঙ্গে দেখা করলো। দু’পা ছুঁয়ে সালাম দিলো। পিতার শারীরিক খোঁজখবর নিলো। এবং বলল,
“বাবা আপনার আসার অপেক্ষায় ছিলাম। জরুরী আলাপ আছে আপনার সাথে।”
“আইচ্ছা বাবা। সমস্যা নাই। তোমার সকল কথাই আমি শুনবো। দু’দিন যাক। শরীরটা ভালো ঠেকতাছে না আমার।”
আদুরীকে নিয়ে যেদিন রাজ যাওয়ার কথা ছিলো, তার আগেরদিন সকালে তালুকদার বাড়িতে ডাকপিয়ন আসলো। পিয়নের গলার হাঁক শুনেই রাজ বেরিয়ে গেলো উঠানের দিকে। পিয়ন একটি খাম ধরিয়ে দিলো রাজের হাতে প্রাপকের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে। পিয়ন চলে গেলে রাজ বিষম খাওয়া চোখে খামের উপরে আবারও দেখলো আদুরির নাম। আদুরিকে ডাক দিলো রাজ। আদুরী এলে রাজ খাম হাতে দিয়ে বলল,
“কৃষ্ণনগর থেকে এসেছে। দেখতো কিসের?”
আদুরি কম্পিত হস্তে খামের মুখ ছিঁড়ল। কারণ সে জানে কিসের এটা। নিরুপায় আদুরী ভাইয়ের সামনেই ভিতরের কাগজটি মেলে ধরলো। পড়লো। রাজ জিজ্ঞেস করলো,

“কি এটা? চিঠি ত মনে হচ্ছে না।”
আদুরী ভীতমুখে দাঁড়িয়ে রইলো স্থির হয়ে। রাজ আদুরীর হাত থেকে কাগজটি নিয়ে ভালো করে পড়লো। তড়িতেই ভারি ভারি পা ফেলে ঘরের ভিতর গেলো। মায়ের কক্ষে প্রবেশ করলো।
কাগজটি বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“মা আদুরীকে তার জামাই ডিভোর্স দিয়েছে। এটা তার পূর্ববর্তী নোটিশ। তিনমাস পর কার্যকর হবে। কিন্তু কারণ কি মা? তা জানার জন্য আমি নিজেই স্বশরীরে কাল কৃষ্ণনগর যাবো।”
সুফিয়া বিবি হায় হায় সুরে বললেন,
“যাইতে ত হইবোই। আদুরীরে ডাক দে। কাহিনী কি জানতে হইবো। মঘের মুল্লুক নাকি তালুকদার কন্যারে ছাইড়া দেওন?”

আদুরীকে ডাক দিলে সে অস্পষ্ট ভাষায় অগোছালোভাবে কিছু বলল ধোঁয়াশার মতো করে। এতে রাজ ও সুফিয়া কিছুই বুঝল না।
তাই রাজ পরেরদিন দুপুরের পর আদুরীর শ্বশুরবাড়ি গেলো। গিয়ে আদুরী সম্পর্কে যা শুনলো তাতে তার মাথা হেঁট হয়ে গেলো। সে চোখ তুলে তাদের দু’কথা বলতে পারেনি। আদুরীর উপর এক সমুদ্র ক্রোধ নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো।
হুংকার দিয়ে আদুরীকে জিজ্ঞেস করলো,
“শোয়েব কে? তোর গর্ভে তার সন্তান কখন এলো? কিভাবে এতসব ঘটলো? আজ তোকে আমি মেরেই ফেলবো। অসভ্য কোথাকার।”

রাজবধূ পর্ব ৪৭

শিখা কলেজ থেকে এসে মাত্রই ঘরের দাওয়ায় পা রাখলো। ঘরের ভিতর হতে রাজের ক্ষিপ্ত কণ্ঠস্বর শুনে সে কিঞ্চিৎ ঘাবড়ে গেলো। নিশ্চয়ই তাকে নিয়ে নতুন কোন সংঘর্ষ বেঁধেছে। তবুও শিখা তার বই খাতাকে বুকে চেপে ধরে,পা টিপে টিপে তার রুমে প্রবেশ করলো।

রাজবধূ পর্ব ৪৯