রাজবধূ পর্ব ৫৬

রাজবধূ পর্ব ৫৬
রেহানা পুতুল

আদুরী ও সুফিয়া বিভ্রান্তি নিয়ে পাথর চোখে শিখার দিকে তাকিয়ে রইলো। এ যেন এক সত্যি সত্যি জ্বলন্ত অগ্নিশিখা। যেই কিনা সত্য,নিজের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য সব তছনছ করে দিতে পারে। সঅব!
শিখা চলে যায় পুকুর পাড় ধরে। বাগানে কি কি ফল পাকড়া পড়ে আছে দেখতে হবে। কুড়ানো ফল খেতে তার বেশ মজা লাগে। পুরোনো অভ্যাস। যখন তিনবেলা খেতে পারতো না শিখা দারিদ্র্যতায় ক্লিষ্ট হয়ে। তখন সে ভোর হলে অন্যের ফলন্ত গাছের নিচে চলে যেতো। বাদুড় খেতে গেলেই যে ফলগুলো মাটিতে পড়ে যেতো। সেই বাদুড়ের এমন আধ খাওয়া পাকা পেয়ারা, পাকা গাব,পাকা ঢেওয়া,পাকা আম সে কুড়িয়ে নিতো ফ্রকের নিচের অংশ তুলে ধরে। ধুয়ে কেটে খেয়ে পেট ফুরাতো। শিখা কিছু ফল কুড়িয়ে নিয়ে চলে এলো।

সুফিয়া বিবি নিজ কক্ষে চলে গেলেন। পানের বাটা নিয়ে বসলেন। আস্ত একটা মসলাদার পানের খিলি বানিয়ে মুখে পুরে দিলেন। তার মাথার ভিতর যেন মৌমাছির ঝাঁক হুল ফোটাচ্ছে। পান না চিবোতে পারলে মাথাটা ছিঁড়েই যাবে এখন। ভাবছে শিখাকে নিয়ে। সংসারে এই কি আগুন নিয়ে এলো তার স্বামী ও ছেলে। এই আগুনের হলকায় তার ভালো থাকার দিন বুঝি ফুরিয়ে গেলো।
কলেজ শেষে শিখা ও কুসুম মাঠে পায়চারি করার মতো হাঁটতে লাগলো। শিখা কুসুমকে বলল,
“তোদের সিদ্বান্ত কি আগেরটাই?
” হ্যাঁরে সই। সীমান্তরে ছাড়া বেঁচে থাকা কঠিন। প্রেমে পড়লে টের পেতি, এ জ্বালা কি জ্বালা?”
“জ্বালা মালা হয়ে যাবে সময় হলেই। তোর মন খারাপ মনে হচ্ছে?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“হ্যাঁ। আমার বিয়ের জন্য প্রস্তাব আসতেছে নানান দিক হতে। সীমান্তকে নাকি তার পরিবার বিদেশ পাঠিয়ে দিতে চাচ্ছে। কিন্তু সে যাবে না। তারাতো মেনে নিবে না কিছুতেই। আমরা লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলবো। আমার আঠারো বছর পূর্ণ হলে এবং আই.এ.ফাইনাল শেষ হলেই। কিন্তু অশান্তির আখড়া শুরু হয়ে যাবে। তাই চিন্তায় অস্থির।”
“বাহ! প্ল্যান এক্কেবারে একশোতে একশো পাক্কা করে রাখছিস দেখি। তারপর?”
“তারপর আর কিহে সখী, আমরা দুজন, দুজনার মাঝে মিশে রবো সকল জ্বালা, যন্ত্রণা হজম করেও।”
“আচ্ছা আচ্ছা, এই কাহিনী?”

খিলখিলিয়ে হেসে বলল শিখা।
“তুই আইস আমার বাড়ি। আমি যাবো তোর বাড়ি।
যতই হোক মান,অভিমান/দুই সখীতে নেব না আড়ি।”
আহ্লাদী ঢংয়ে শিখার গাল টিপে বলল কুসুম।
“আমি আমার চেয়ে তোকে নিয়ে চিন্তা করছি কুসুম। তুই আমার দজ্জাল ফুফু শাশুড়ীর ধকল সামলাতে পারবি তো?”
“ধকল কি আমার একলার উপরে আসবে? আগের মতো তোর উপরেও সেই আঁচ যাবে।”
“আমি এসব পোহাতে পোহাতে পাথর হয়ে গিয়েছি। আমাকে গুঁড়িয়ে দেওয়া অসম্ভব! দুঃসাধ্য!”
আলাপ শেষে শিখা ও কুসুম কলেজের মাঠ পেরিয়ে চলে যায় দু’জন দু’জনের গন্তব্যের দিকে।
একদিন শিখা কলেজে যাওয়ার সময় মনসুরদের বাড়ি গেলো। তারা আশ্চর্য হয়ে যায় তালুকদারের পুত্রবধূর দর্শন পেয়ে। আপ্যায়নে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠলো সবাই। শিখা সেই বিশ শতক জমির বিষয়ে ভালো করে জেনে নেয় তাদের থেকে। তারা দলিল বের করে শিখাকে দেখায়। দলিলের অস্পষ্ট পেঁচানো শব্দগুলো কোনমতে পড়ে শিখা তাদের জিজ্ঞেস করলো,

“ক্রয়সূত্রে মালিক আবদুল মোবারক। তিনি আপনার দাদা?”
“হ।আমার দাদা।”
“তাহলে কিভাবে আমার ভাসুরেরা এটা দখল নিলো? কেনই বা নিলো? তাদের এমনিতেই অঢেল সম্পত্তি।”
মনসুর ব্যথিত গলায় বলল,
“আমার দাদা মৃত। আমাগো পারিবারিক কোন একটা কারণে আমার আব্বার মাথায় সামান্য ত্রুটি ছিলো। কখন কি বলে, কি করে তার কোন ঠিক ঠিকানা আছিল না। এইটা আবার বাইরের মানুষ জানতো না।তোমার চাচাস্বশুর আমার আব্বারে একদিন বাজারে নাস্তা,চা,বিড়ি খাওয়াইয়া, ফুসলাইয়া টিপসই নিয়া, বিশ শতক জমিনের মালিকানা আদায় করে। বিনিময়ে আমাদেরকে অল্পকিছু টাকা দেয়। তিনি তার ঘরে ও বাইরে সবাইরে জানাইছে আব্বা বিক্রি করছে আমাদের মতামত নিয়া। আর তিনি খরিদ করছে উপযুক্ত দাম দিয়া। সবাই হের কথাই বিশ্বাস করলো। তারপর হতে সেই জমিনের দায়িত্ব নেয় তোমার দুই ভাসুর।

প্রতি বছর ধানের মওসুমে বিশ শতক থেইকা প্রায় বিশমণ ইরি ধান তারা গোলায় তোলে। হেমন্তে ঋতুতে আমন-আউশ ফলায়। আব্বায়তো কিছু বুঝতো না। সেই টাকা পাইয়া ম্যালা খুশী। আমরা প্রতিবাদ করেও কোন কূল পাইনি। চেয়ারম্যান, মেম্বারসাবরেও জানাইলাম। তারা আমাদের কথা আমলে নিল না। বিস্বাসও করল না। উল্টা কইলো,
“তালুকদাররা ফকির? তোর বাপেরে ফুসলাইয়া জমি নিবো? তোর বাপে বিক্রি করছে তিনি কিনছে। হিসাব খতম।”
“আপনার আব্বা সবাইকে বললেইতো হয়। টাকা কত দিলো, কিভাবে সেই পরিস্থিতি তৈরি করলো ছোট তালুকদার।”
“আমার আব্বায় নাই এখন? তারপর হইতেই আব্বা নিখোঁজ। মাথা খারাপ যে,তাই কোথায় গ্যাছে কে জানে। কত খুঁজলাম আর পাইলাম না। আব্বায় থাকলে এতবছরে হয়তো একটা সুরাহা হইতো।”
দুঃখের স্বাস ছেড়ে বলল মনসুর।

“নিখোঁজ?”
অবাক কণ্ঠে উচ্চারণ করলো শিখা।
“হ্যাঁ মা।”
“কতবছর ধরে নিখোঁজ উনি?”
” বছর সাড়ে তিনেক হইবো।”
” খুব বেশি সময় গড়ায় নি। থানায় জানিয়েছেন? মানে নিখোঁজের জন্য জিডি বা সাধারণ ডায়েরি? কিংবা কোন উকিলের শরণাপন্ন হয়েছেন?”

“থানায় গেছিলাম মা। পুলিশ আমাগোরে খেদায়া,হুমকি ধামকি দিয়া ভাগাইয়া দিছে। জিডি করেনাই। আমরা নিরীহ মানুষ। আর কি করতে পারি। তাই চুপ হইয়া গ্যাছি মনে কষ্ট নিয়াও।”
“আপনার বাবার নাম? বয়স কত হবে বর্তমানে?”
“আমিতো বাপের পহেলা পোলা। আমার বাপে আবার অল্পবয়সে বিয়া করছে। সেই হিসাবে পঁচাত্তরের বেশি হইবো মনে হয়। আব্বার নাম আজগর আলী।”
“ঠিকআছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানলাম। তবে এই বছর থেকে আপনাদের জমি ফিরে পাওয়া পর্যন্ত আপনারা আর কোন হাতাহাতিতে যাবেন না আমার ভাসুরদের সঙ্গে। বুঝতে দিবেন,আপনারা মেনে নিয়েছেন যে এটা তাদের কেনা জমি। এবং আপনারা বুঝতে পেরে চুপ হয়ে গিয়েছেন।”
শিখার কথা শুনে তাদের ঘরে জড়ো হওয়া মানুষ একে অপরের দৃষ্টি বিনিময় করলো। মনসুর বলল,
“কি কও মা? চুপ থাকমু?”

“চাচা সবুরে মেওয়া ফলে জানেন ত? অপেক্ষার ফল সুমিষ্ট হয়, মনে রাখবেন। আমি আসি। প্রয়োজন হলে আবার আসবো আপনাদের বাড়ি। তবে আমার আসা,আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ, এই সবকিছু পুরোপুরি গোপন রাখবেন জমির অধিকার ফিরে পেতে হলে।”
“না মা। কাউরে কমু না। এই কাউরে কইবি না কেউ। তুমি ক্ষেতের আইল ধইরা রাস্তায় উইঠা যাইতে পারবা। কেউ দেখব না।”
শিখা সামান্য নাস্তা মুখে দেয় তাদের অনুরোধ রক্ষার্থে। এবং সালাম দিয়ে মাথায় ওড়না টেনে তাদের ঘর হতে বেরিয়ে যায়।
যেতে যেতে শিখা চিন্তা করে বিষয়টা নিয়ে। নিজে নিজে বিবিধ যুক্তি খন্ডন করতে থাকে মনসুরের বাবাকে নিয়ে। মাথা খেলায় তার। কেন জানি তার মনে হচ্ছে আজগর আলীর নিখোঁজের পিছনে ছোট তালুকদার কিংবা খালেদ,আসলামের হাত রয়েছে।

কেননা যেই লোক স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে। একমাত্র ছেলেকে ত্যাজ করার কথা বলতে পারে। গভীর রাতে ভাতিজা বউয়ের শরীরে হাত দিতে পারে কামুকতার উদ্দেশ্যে। তার মতো অসৎ, স্বার্থান্বেষী লোক দ্বারা যেকোন নিকৃষ্ট কাজ করা সম্ভব। খুব সম্ভব!
শিখা আজগর আলীর সন্ধান বের করতে হয়তো পারবে না। কিন্তু তাদের জমি ফিরিয়ে দিতে পারবে। তারজন্য সে লড়বে। আইন আদালত কোর্ট কাচারি কিছুই বাকি রাখবে না সে। অন্যায়ভাবে কারো হক মেরে খেতে দেওয়া হবে না তালুকদার বংশের একজন ব্যক্তিকেও।
পবিত্র কোরআনে বারবার নির্দেশনা প্রদান করে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
“তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। এবং মানুষের ধন-সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকের কাছে পেশ করো না। ”
(সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৮)

সেদিন কলেজে অর্থনীতির স্যার আসেনি বলে লাস্ট ক্লাস হয়নি। কলেজ ছুটি হয়ে গেলো। নির্ধারিত সময়ের আগে বাড়িতে চলে যায় শিখা। কাচারিঘরের সামনে জোছনা কাজ করছে। সে দু’হাতে খড়ের স্তপ থেকে টেনে টেনে খড় নিচ্ছে ও গুনগুন করে গান গাইছে।
“প্রাণ সখিরে…ঐ শোন কদম্বতলে বংশী বাজায় কে।
বংশী বাজায় কে রে সখি, বংশী বাজায় কেএএ..
আমার মাথার বেনী খুইলা দিমু তারে আনিয়া দে।
প্রাণ সখীরে…”
শিখার চরণ গতি মন্থর হয়ে যায় নিজের অজান্তেই। জোছনার বেসুরো গলায় সাড়া জাগানো বহুল জনপ্রিয় গানটি শুনে সে আনমনা হয়ে যায় ক্ষণিকের ত্বরে। যেই গানের গীতিকার ও সুরকার তার প্রাণের কবি,প্রিয় কবি,মাটির কবি পল্লীকবি জসীম উদ্‌দীন।

এই কবির সঙ্গে শিখার পরিচয় ঘটে ছেলেবেলাতেই। যখন মাটিতে বিছানো বেতের পাটিতে বসে সে ঢুলে ঢুলে মুখস্থ করতো ‘মামার বাড়ি’ শিরোনামে তাঁর মিষ্টি একটি ছড়া। তারপর ষষ্ঠ শ্রেণীতে পায় ‘আসমানী’ কবিতা। এভাবে পায় ‘পল্লী জননী’ ও কবির অমূল্য মহৎ সৃষ্টি ‘কবর’ কবিতাখানি।
যে কবিতা পাঠ বা আবৃত্তি করতে গেলেই শিখার দু’চোখ জলে ভরে যায় বর্ষার ভরা বিলের ন্যায়। বুকের ভিতর তৈরি হয় বিরানভূমি। শিখা বেদনার্ত স্বরে বলে উঠে,
হায় কবি! একবার যদি আপনার চরণধূলি নেওয়ার সৌভাগ্য এই আমার হতো।
শিখার উপস্থিতি টের পেতেই জোছনা গান বন্ধ করে দেয়। চিনিগুড়া হাসি হাসতে থাকে লাজুক ভঙ্গিমায়।
“জোছনা গান বন্ধ করলি কেন? ভালই ত লাগছে শুনতে। মনে খুব ফূর্তি মনে হচ্ছে? বিয়ে ঠিক হয়েছে?”
জোছনার হাসি গতি পায়। উড়ে আসার মতো করে শিখার নিকটে আসে। চঞ্চল চোখে এদিক ওদিক চায়। গোলগোল চোখে উচ্ছ্বাসমাখা সুরে শিখাকে বলে,

“ভাবিজানগো, আপনের আল্লারকিরা লাগে কাউরে কইয়েন না। মায় মানা করছে। আপনে আসলেই বেশি বুদ্ধিমতী। আমার তো ইয়ে ঠিক হইছে। সামনের মাসে। দুলা বেবিট্যাক্সির ড্রাইভার। নাম নিমু না উনার। গুনাহ হইবো। আমার কপাল ভাবিজান। ড্রাইভার দুলারেই মনে মনে বিছরাইতাছিলাম। তার গাড়িতে কইরা যেইখানে মন চায় চইলা যাইতে পারুম। আপনারে কলেজে পৌঁছাইয়া দিতে কমু উনারে।”
জোছনার আপ্লুত মুখায়বের দিকে শিখা একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। হেসে বলল,
“আলহামদুলিল্লাহ। শুভবিবাহ মোবারকবাদ। আমি কাউকেই বলব না। কিন্তু তুই আমাকে বললি কেন খালা মানা করে দেওয়ার পরেও? মায়ের আদেশ অমান্য করা উচিত হয়নি জোছনা।”
“থাকতে পারিনাইগো ভাবি। মুখ ফসকাইয়া বাইর হইয়া গ্যাছে। বিয়া বওনের খুব শখ আমার। আপনের আর রাজ ভাইয়ের মিলামিশা দেখলে লোভ আরো বাইড়া যায়। আপনেরে দেখলেই খালি তাকায়া থাকতে মন চায়। দিনদিন আপনের রূপ টপটপাইয়া পড়তাছে।”

“হয়েছে। কাজ কর এবার। খড় আগেরগুলো শেষ?”
“হ। ওইদিন বেশি রান্ধন হইল না? সাইজ্জা ভাবির বাপের বাড়ির মেহমান আইলো যে?”
“ওহ! বুঝলাম।” বলে শিখা পা বাড়ালো ঘরের দিকে।
আদুরীর প্রচণ্ড মন খারাপ। পুকুর ঘাটে বসে বসে রানীর সঙ্গে নিজের উচ্ছিষ্ট জীবন নিয়ে নানা কথা বলছে। তারপর দুজনে একসঙ্গে কথা বলতে বলতে রসুইঘরে ঢুকলো। তাদের কথা চলমান।
এমতাবস্থায় শিখা ঘরে চলে যায়। তার রুমের টেবিলে বইখাতা রেখে পিছনের উঠানে গেলো। আলসেমি করে পুকুর ঘাটে গেল না। নলকূপের নিচে থাকা একটি টিনের বালতির জমা পানি দিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নিলো পানির ঝাপটা মেরে। পায়েত তালুতে গরম লাগছে বলে স্যান্ডেল জোড়া মাটির ঢেলার উপরে রাখলো। খালি পায়ে রসুই ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো ভাত খাওয়ার জন্য। রোয়াকে পা রাখতেই ভিতর হতে রানী ও আদুরীর স্বল্প আওয়াজে কথোপকথন শুনতে পেলো। শিখা পা থামিয়ে নিলো।
নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে শুনতে লাগলো,

” ওই বেটারা শিখাকে যদি রাস্তায় না দেখতে পাইতো, তাইলে ঠিকই তোরে বউ কইরা নিতো। মাঝে মাঝে খোদারে প্রশ্ন করতে মন চায় আমার। কাউরে তিনি ভাসাইয়া দেন। আর কাউরে কিছুই দেন না৷ উনার হিসাবটাই বেহিসাব ঠ্যাকে আমার কাছে। দেখ,সুমনার দুইটা বাচ্চা। আর আমার একটাও নাই। দরকার তোর বিয়ার। মাইনষে পছন্দ করে হ্যারে।”
আদুরী হাপিত্যেশ গলায় বলল,
“কই মাছের প্রাণ। মরলো না।”
শিখা বুকে হাত দিয়ে আঁতকে উঠে। চুপ থাকে বাকি কথা শোনার।
“তাইলে তুই ভর্তায় বিষ দিলি? কই পাইলি?”
“ইচ্ছা থাকলে উপায় মেলে ভাবি।”
বলল আদুরী।

রাজবধূ পর্ব ৫৫

“অহন বাঁইচা থাকলেও আর লাভ নাই। আমার পথের পথিক বানায়া দিছি।”
বিষাক্ত স্বরে বলল রানী।
“তারমানে আমার মতো একই কাজ তুমিও করলা? কিন্তু কি করলা? ঠিক বুঝলাম না?”
আদুরীর মতো শিখাও বুঝতে পারল না রানির কথার মানে। কিন্তু বড়সড় কোন ক্ষতির সম্মুখীন করে দিয়েছে তাকে, এতটুকু বুঝতে শিখার কোন অসুবিধা হলো না। শিখা জমে গেলো বরফখন্ডের ন্যায়। থরথর করে কাঁপতে লাগলো অশীতিপর বৃদ্ধার মতো।

রাজবধূ পর্ব ৫৭