রাজবধূ পর্ব ৬৪
রেহানা পুতুল
“নাহ। তুমি এখন শুনবে। তোমাকে শুনতে হবে। এরপর আর সময় নেই। আমার সময় শেষ প্রলয়শিখা।”
গলায় এক সমুদ্র বিষাদ ঢেলে গম্ভীর মুখে বলল জুবায়ের।
শিখা ভ্রুকুঞ্চন করে চাইলো জুবায়েরের দিকে। কৌতুহলী হয়ে তার চিকন গলায় শুধালো,
“আপনার সময় শেষ মানে? ওপার থেকে পত্র এসেছে নাকি?”
জুবায়ের ছাদের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। শিখার হেয়ালী কণ্ঠ শুনে উদাস চোখে আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকালো।
নিরাসক্ত গলায় বলল,
“সেটা তুমি, আমার ভালোবাসার দুঃখী গল্পটা শোনার পর বলবো। জানাবো, পত্র ওপার থেকে এসেছে না এপার থেকে এসেছে। ”
“জুবায়ের ভাই,ছাদে আপনি, আমি একা। এটা দৃষ্টিকটু দেখাচ্ছে। যদি অন্তত আর একজনও থাকতো, তাহলে সমস্যা ছিল না। আমার এখন শোনার মুড নেই। অন্যদিন শুনবো।”
“ঘরের কে, কোথায়, কি অবস্থায় আছে, তা আমি সব দেখেই ছাদে এসেছি।”
“তাও শুনব না।”
“সত্যিই এখন শুনবে না?”
“বললাম ত। নাহ।”
শিখার কন্ঠে বিরক্তি ঝরে পড়ছে। চোখের কোণেও বিরক্তি জমা হলো।
জুবায়ের রাগত স্বরে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“এত বিরক্তিভাব দেখাচ্ছ কেন আমার সঙ্গে? কি করিনি তোমার সুরক্ষার জন্য? তোমার ভালোথাকার জন্য? হাসু মামাকে মেরে ফেললাম। নিজামকে মেরে ফেললাম। বড় মা, লালচাঁন ফকির দিয়ে জ্বীন তাড়ানোর নামে প্রচন্ডভাবে মারলো তোমাকে। তুমি আমার পায়ে লুটিয়ে পড়লে জ্ঞান হারিয়ে। ঔষধ এনে দিয়ে তোমাকে সুস্থ করেছি। তোমাকে আলাদা রুমে ভাত দিতো। আমি বড় মার সাথে তা নিয়ে কথা কাটাকাটি করেছি। সবার সাথে টেবিলে তোমার ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। তাছাড়াও বড় মার মুখে মুখে কয়েকদিন তর্ক করেছি শুধু তোমার জন্য? অথচ তার আগে কোনদিনও উনার চোখের দিকে চোখ তুলে কথা বলিনি।
ভাবি,আদুরী বিষ দিয়ে তোমাকে মারতে চেয়েছে। দোকানে কাস্টমার রেখে হাসপাতালে ছুটে গিয়েছি পাগলের মতো। তোমাকে ভর্তি করেছি। তোমার জন্য ব্লাড যোগাড় করেছি। এতসব করেও কি আমি তোমার থেকে সৌহার্দপূর্ণ ব্যবহার প্রত্যাশা করতে পারি না? কোন প্রতিদান চাইনি। কোন বিনিময় চাইনি। নিঃস্বার্থভাবে এতসব করেছি নিজেকে ভুলে গিয়ে।”
শিখা ব্যথিত গলায় বলল,
“আপনি এতসব আমার জন্য করেন নি জুবায়ের ভাই। করেছেন আপনাদের তালুকদার পরিবারের মর্যাদা ধরে রাখতে। এবং রাজ আপনার প্রাণের বন্ধু। আমি তার স্ত্রী। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে। তবুও আমি চিরকৃতার্থ আপনার প্রতি। আমার জীবনের শেষ নিঃস্বাস পর্যন্ত আপনার এই অতুলনীয় ত্যাগ ও অবদান মনে রাখবো। প্রাণ থাকতে ভোলা যাবে না আপনাকে ও আপনার এই মহান দানকে। ক্ষমা করে দিবেন যদি কোনভাবে আপনাকে আহত করে থাকি। কথা দিলাম, আমি সময় করেই আপনার ভালোবাসার গল্প শুনবো। আমি উপলব্ধি করতে পারছি,হয়তো এখন আপনার খুব মন চাচ্ছে আমাকে বলতে। কিন্তু দুঃখিত!”
জুবায়ের বিপন্ন চোখে তাকালো শিখার মায়াভরা সুশ্রী মুখখানাতে। শিখাও তার মোহহীন আঁখিপল্লব তুলে জুবায়েরের দিকে চাইলো একপলক। পরে পা ঘুরিয়ে শিখা ছাদ থেকে নিচে নেমে গেলো। জুবায়ের ছাদে টুলটার উপরে বসলো পায়ের উপর পা তুলে। হৃৎপিণ্ডের তলায় ঘাপটি মেরে থাকা থরে থরে নীল বেদনাগুলো বুদবুদের মতো ভেসে ভেসে উঠছে। অসহনীয় তীব্র যন্ত্রণায় তার চোখদুটো টলমল করছে। পকেটে থাকা পুরো এক প্যাকেট সিগারেট ছাঁই করে ফেলল মুখভর্তি ধোঁয়া ছেড়ে ছেড়ে। চারপাশে আঁধার ঘনিয়ে এলো। সে আঁধারে বিলীন হয়ে গেলো এক মহান প্রেমিকের দীর্ঘশ্বাস ও চোখের নোনাজল। মশার কুটকুট হামলার শিকার হতেই সে ছাদ থেকে নেমে যেতে বাধ্য হলো। ঘরে না গিয়ে বাইক নিয়ে চলে গেলো বাজারের দিকে।তারপর হতে জুবায়ের স্পন্দনশূন্য, অচঞ্চল।
এই ভিতরে ঘরোয়াভাবে আদুরীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলে তাদের পাশ্ববর্তী গ্রামের। আদুরী শিখার সাথে উপর উপরে সদ্ব্যবহার করছে। কিন্তু ভিতরটা বিষে ভরা শিখার জন্য। প্রতিনিয়ত হিংসায় জ্বলছে সে ধূপশিখার মতো। রানী কাটা হাতে আগের মতো কাজ করতে পারেনা। প্রায়শই হাতে ব্যথা করে। সুফিয়া বিবির ভাঁজ পড়া বয়েসী মুখখানা দিবানিশি থাকে মরা বিকেলের মতো। তালুকদার লাঠি ভর করে হাঁটাচলা করে।
শিখা ফোনফ্যাক্সের দোকান থেকে মাঝে মাঝে রাজের কাছে টেলিফোনে করে কথা বলে নিতো। ইচ্ছে করেই জুবায়েরের দোকান থেকে ফোন করতো না। নয়তো সেখানে টাকা ছাড়াই যতক্ষণ ইচ্ছা ততক্ষণ কথা বলা যেতো রাজের সঙ্গে। কিন্তু সেদিন জুবায়েরের বলতে চাওয়া একান্ত কথাগুলো সে শুনল না। তাই চক্ষুলজ্জায় জুবায়েরের দোকানে গেল না।
শিখা, রাজকে, তাদের বাড়ির,ঘরের, সবার, তার পড়াশোনার ও নিজের শারীরিক অবস্থার কথা অবগত করতো। এভাবে কিছুক্ষন হেসে হেসে গল্পগুজব করতো। চেয়েও রাজের কাছে চিঠি লিখার সময় বের করতে পারেনা সে। চিঠি লিখতে গেলে এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশী ভাবতে হয় তাকে। ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় করেও চিঠির শুরুটা শুরু করতে হিমশিম খেতে হতো তাকে। সব ব্যাকরণ বই একত্রিত করে চিঠিপত্র বিভাগের চ্যাপ্টারে চলে যেতো। তবুও রোমাঞ্চকর প্রেমময় ভাষা বিন্যাস করতেই পারতো না। পারলেও তা রাজের হৃদয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করতে পারবে কিনা,এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব থেকে ফের কলম থামিয়ে দিতো। এদিকে শিখার কড়া হুকুমের কাছে রাজ ঘায়েল। না গ্রামে আসতে পারছে। না চিঠি দিতে পারছে। কেননা রাজের চিঠির আবেগাপ্লুত মোহনীয় ভাষাগুলো শিখার কয়েকরাতের নিদ্রা হরণ করার জন্য যথেষ্ট।
এভাবে সময় গড়ালো। ঋতু বদল হলো। গ্রীষ্মও বিদায় নিবে নিবে ভাব। শিখার ফাইনাল পরিক্ষা শেষ হয়ে গেলো। পরিক্ষার সময় রাজের অনুরোধে জুবায়ের শিখার পরিক্ষার সিট কোথায় পড়লো দেখে আসলো। রাজ জুবায়ের থেকে ফোনে শিখার পরিক্ষার খোঁজখবর নিতো। শিখা পরিক্ষা শেষের দিনই রাজকে টেলিফোন করলো।
সালাম দিয়েই সুখ সুখ গলায় বলল,
“এবার যে কোন টাইমে বাড়ি আসতে পারেন মাননীয়! আপনাকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে।”
“তুমি যদি ডাকো আমায়,তোমার কাছে মন ছুটে যায়। থাকো তুমি যতদূরে,যখন যেথায়…।”
ল্যান্ডফোনের ওপ্রান্তে গুনগুনিয়ে গাইলো রাজ।
“সুন্দর তো গানটা? এটা কোন সিনেমার গান?”
উৎসুক গলায় জিজ্ঞেস করলো শিখা।
“১৯৯৩ সালের ‘প্রেমপ্রীতি’ সিনেমার গান। কণ্ঠ দিয়েছেন খালিদ হাসান মিলু ও সাবিনা ইয়াসমিন। আর ঠোঁট মিলিয়েছে নবাগত নায়ক তপু রায়হান ও ইন্ডিয়ান নায়িকা প্রিয়া। আমরাও তাদের মতো ঠোঁট মিলাবো। কেমন?”
দুষ্টমিষ্ট গলায় বলল রাজ।
শিখার অনুভূতিরা শিরশির করে উঠলো।
“আপনি ফাজিল আছেন। তারমানে এই বছর মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা?”
“ইয়েস রাজবধূ। ও হ্যাঁ,জুবায়ের থেকে তোমার পরিক্ষার আপডেট নিয়েছি। আর আমি এনিটাইম উল্কার মতো তোমার সামনে চলে আসবো।”
শিখা বাড়ি চলে আসে। খুব ফুরফুরে মেজাজে আছে সে। রাজ আসলে যেতে পারবে না। তাই বাবার বাড়ি গিয়ে দুইদিন বেড়িয়ে এলো। বেশী থাকল না সেই কবরের জন্যই।
তারপর এক বিকেলে বাদশাকে ডাক দিলো শিখা।
জিজ্ঞেস করলো,
“বাদশা ভাই,উনি আসলে আমার ব্যস্ততা বেড়ে যাবে। আপনার সঙ্গে একলা কথা বলার সুযোগ নাও হতে পারে। এই কয়মাস আমার পরিক্ষার জন্য ঝিম মেরে রইলাম। বলেন কোন নরপিশাচেরা এই বর্বরোচিত, ঘৃণিত কাজটা করলো?”
বাদশা শিকারি চোখে এদিক ওদিক চাইলো। অস্পষ্ট গলায় বলল,
“ভাবি এখন তো আমারই প্রাণের সংশয়
দেখা দিছে। তারা শীতে বাড়িতে আইলো যখন, আমারে ডাক দিয়া কইলো, এরপরে বাড়িতে আইলে নাকি আমারে নিয়া নদীর ঘাটে যাইবো। টাটকা মাছ কিনবো জেলেগো থেইকা। আমি আবার ভালো মাছ চিনি কিনা তাই। আমার এই বাড়িতে ফিরা আসাটারে তারা ভালোভাবে নেয়নাই। তারা এখন আপনারে ও আমারে একশক্তি মনে করে।”
“নাম জানতে চাই সেই পশুদের?”
“খালেদ ও আসলাম ভাই। এই দুজন আমারে সাক্ষী রাইখা এই নিষ্ঠুরতম কামটা করছে।”
শিখা বিস্ময়কর চাহনি ফেলে বিড়বিড়িয়ে বলল,
“অবাক কাণ্ড! জমি কিনলো ছোট তালুকদার। দিলো বড় তালুকদারকে। কিন্তু জমির মালিককে মারলো অন্য দুজন। কাহিনী কী?”
“ভাবি আমি এতসব কইতে পারুম না। আমি কেবল সাক্ষী! তাইতো মনে হয় আমারে সরাইয়া দিতে চায়। আমি যদি আপনারে এখন বইলা দিই এইজন্য।”
” আপনার কিছুই হবে না। আমি আপনার সুরক্ষা নিশ্চিত করবো। এবং আপনার সাহায্য লাগবে আমার। সেই অমানুষদের অমানুষিকতার শাস্তি তাদের ভোগ করতেই হবে।”
শিখা চলে যায় বাদশার সামনে হতে। চিন্তা করতে থাকে কিভাবে কি করবে। এত বড় পাপিষ্ঠদের কিছুতেই ছাড় দেওয়া যাবে না সব জেনেশুনে। রাজকে বললে হয়তো সে আপন ভাই ভেবে তেমন কিছুই করবে না। অলরেডি একজন ভাই বেঁচে নেই তার। জুবায়েরকে বললেও হয়তো কাজ হবে না। বলবে ইগনোর করতে। তালুকদারের শারীরিক অবস্থা নাজুক। তবুও তাকে জানাতে হবে। প্রমাণ না দেখালে তিনি মনসুরদের জমি ফিরিয়ে দিতে নারাজ হবেন। শিখা আর ভাবতে পারছে না। তার মাথার ভিতর অজস্র পোকা কিলবিল করছে যেন। তালুকদার পরিবারের শাষিত ও শোষিত রূপ এত নিম্ন পর্যায়ের। তা সে ক্ষুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারেনি। জন্ম,মৃত্যু, বিয়ে, রিযিক,ধনদৌলত এই পাঁচটা বিষয় সরাসরি স্রস্টার হাতে। কোন পূণ্যের জন্য স্রস্টা তার বিয়ে এত হীন ও নিচু মানুষিকতার পরিবারে দিয়েছে,তা এখনো তারকাছে ধোঁয়াশা।
শিখা তার পরেরদিন স্বশুরের রুমে গেলো। উনার এলোমেলো টেবিলটা গুছিয়ে দিতে দিতে বলল,
“বাবা মনসুর চাচাদের জমিটা কবে দিতে চাচ্ছেন? উনাদেরকে বললে স্টাম্প রেডি করবে। আমি চাই আগামী মৌসুমে যেন উনারা সেই ক্ষেতে ধান ফলাতে পারে। চারবছর ধরে তো অন্যায়ভাবে তাদের জমির ধান উঠেছে এই বাড়ির উঠানে।”
“দিমু কইছি যহন দিমুই। কিন্তু সত্যমিথ্যা যাচাই কইরা লই আগে।”
“বাবা যেই অমানবিক সত্য আমি আবিষ্কার করেছি,তা শুনলে ও দেখলে আপনি মুষড়ে পড়বেন। আমি চাইনা জীবনের এই পড়ন্তবেলায় আপনার মনের উপর এত বড় ধকল যাক। তবুও আমার মুখের কথায় আপনার আপত্তি থাকলে আমি প্রমাণ দেখাবো।”
তালুকদার ক্লান্ত চোখে শিখার দিকে চায়। স্নেহময় সুরে বলল,
“কি একরত্তি মাইয়া ছিলা তুমি। তোমারে শখ কইরা আমার রাজের বউ কইরা আনলাম। সেই তুমি এখন স্বামীর ঘর করো। পড়ালেহা করো। জায়গা জমি দেখভাল করো। কত বড় বড় দায়িত্বের কাজ করো।গর্বে আমার বুকটা ভইরা গ্যাছে মা। আমি মানুষ চিনি। তুমি গৃহস্থ ঘরের মাইয়া। কোনদিন স্বামীর সংসারের লোকসান হোক, তা চাইবা না। যখন যা উত্তম মনে হয় সেটাই করতাছো। আলহামদুলিল্লাহ। মালিকের কাছে কোটি শুকরিয়া তোমারে আমার রাজের কপালে রাখছেন।”
“বাবা এত আকুল হবেন না আপনি। বুকে ব্যথা করবে পরে। আমি কি উনাদের সাথে আলাপ করবো?”
“হ করো। কিন্তু আমারে পরে হইলেও প্রমাণ দেখাইয়ো। আগ্রহ হইতাছে আসল বিষয় জানার লাইগা।”
“বাবা, জানাবো। কথা দিলাম। তবে বিষয়টা অবশ্যই আপাতত চেপে রাখবেন। তাদের জমিটা ফিরিয়ে দেওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। আমি আসি বাবা। থাকেন। রেস্ট নেন।।আরাম করেন।”
শিখা চলে যায়। শ্বশুরের আদর্শ,ব্যক্তিত্ব,নীতিপরায়নতা, তাকে মুগ্ধ করে। নিজেকে প্রশ্ন করে। একই পিতার জন্ম দেওয়া দুজন ছেলে কিভাবে এত জোচ্চর! হারামী হলো? উত্তর মিলিয়ে নেয় নিজেই। ওই যে মা হারামী,স্বার্থবাদী,দাম্ভিক! মায়ের স্বভাব পেয়েছে। সে নিজেইতো আমাকে কতভাবে মারতে চেয়েছে। আল্লাহ চায়নি তাই পারেনি।
তার পরের ঘটনা শুক্রবারের দিন। জুবায়ের তাদের পুরাতন কবরগুলো জেয়ারত করলো। তার প্রিয় নানীর কবরও জেয়ারত করলো কান্নারত অবস্থায় দাঁড়িয়ে। একজন একজন করে ঘরের সবার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলল বিদায় নেওয়ার মতো করে। কেউ তেমন কিছু বুঝেও বুঝে উঠতে পারল না।
সবার শেষে জুবায়ের শিখাকে অপেক্ষাকৃত নিরিবিলি স্থানে ডেকে নিলো। শান্ত ভঙ্গিতে মৃদু হেসে বলল,
” সময় নেই। তাই ভণিতা করলাম না। তোমার হাতদুটো বাড়িয়ে দাও। ছুঁয়ে দেখবো। চোখের সামনে স্বর্গের হুর-পরী! আর কত নিজেকে সংযত রাখবো? বলো? আমি চাই তুমি স্বইচ্ছায় দাও। নয়তো এমনিতেই তোমাকে কোলে নিয়েছি। ছুঁয়েছি কত। কিন্তু সেসব স্পর্শ আর এই স্পর্শে পার্থক্য বিস্তর! মায়ের কাছে তোমার জন্য একটা জিনিস গচ্ছিত রাখবো। পেয়ে যাবে।”
“অতিরঞ্জিত ও অনধিকার চর্চা করে ফেলছেন জুবায়ের ভাই। অসভ্যতামির একটা লিমিট থাকা চাই। আমার কয়েকমাস ধরেই টুকটাক সন্দেহ হচ্ছে আপনাকে। যেন এমন সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন আপনি। সবসময় কেমন করে যেন তাকান আমার দিকে। পারেন ত মনে হয় গিলে খান। কিছুদিন আগে ছাদে গিয়েছেন আমাকে টাচ করার জন্যই। আপনার প্রেমের গল্প ছিল বাহানা মাত্র।”
বিষাক্ত গলায় কটমট চাহনি নিক্ষেপ করে বলল শিখা।
জুবায়ের নিরুত্তর! শিখার কথা কানেই তুলল না। সে মুহূর্তেই শিখার হাত দুটো টেনে ধরলো শক্ত করে। শিখা মোচড়ামুচড়ি করেও তার হাতকে মুক্ত করতে পারল না জুবায়েরের মুঠোবন্দী হতে। জুবায়ের শিখার ফর্সা হাতের পিঠের আঙ্গুলগুলোর উপরে ঠোঁট বুলাতে বুলাতে বেশ কয়েকটি চুমু খেলো। জুবায়েরের চোখদুটো টকটকে লাল হয়ে উঠলো নেশাতুরের মতো।
পরক্ষণেই সে শিখার হাতদুটো ছেড়ে দিলো। পা চালিয়ে চলে গেলো। শিখা রীতিমতো কাঁপছে। সে পায়ের থেকে একটা স্যান্ডেল খুলে জুবায়েরের গায়ের দিকে ছুঁড়ে মারলো। কিন্তু লক্ষ্যচ্যুত হলো। জুবায়ের ঘাড় ঘুরিয়ে শিখার দিকে চেয়ে কোমল হাসলো।
শিখা তার রুমে গিয়ে দরজা চাপিয়ে দিলো।থরথর করে কাঁপছে সে অশীতিপর বৃদ্ধার ন্যায়। যেই মানুষটাকে সে এত ভালো জানে, সেই মানুষটা আজ একি অসভ্য আচরণ করলো তারসঙ্গে। কার কাছে চাইবে এই বিচার। বলতে গেলে নিজেরই লজ্জা! রাজতো বাড়িতে আসবেন। তখন তাকে বলে এর একটা কঠিন শাস্তি দিতে হবে বেয়াদবটাকে। আর এখন গিয়ে তার মায়ের কাছে নালিশ দিবো।
রাজবধূ পর্ব ৬৩
সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই। শিখা মাথায় ওড়না দিয়ে রুম থেকে বের হলো। ঠিক তক্ষুনি আমেনার পাঁজর ভাঙ্গা বিলাপ শোনা গেলো। কি হলো,কি হলো বলে, ঘরের সবাই জড়ো হলো আমেনার রুমে গিয়ে।
“জুবা নাই। চইলা গ্যাছে..গো.. মায়েরে ছাইড়া।”
বলে আমেনা ফের ডুকরে কেঁদে উঠলো।
শিখা আহাম্মকের ন্যায় সবার মাঝে দাঁড়িয়ে রইলো। কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না তার।