রাজবধূ পর্ব ৭

রাজবধূ পর্ব ৭
রেহানা পুতুল

অবশেষে সুফিয়া বিবির সভা আগে বসলো। সে তার পালংকের মাঝখানে রাজকীয় স্টাইলে বসলো। তার সারামুখে ফুটে উঠেছে দম্ভ ও প্রতিহিংসার ছাপ।
রুমের স্থানে স্থানে বসে রয়েছে তার তিন ছেলে ও তাদের তিন স্ত্রী। তার একমাত্র মেয়ে আদুরী ও নিজের স্বামী জয়নুল তালুকদারও রয়েছেন। একমাত্র ননদ জাহানারা চলে গিয়েছে দুপুরেই। তার ছোট দেবরের পরিবারের কেউই উপস্থিত নেই এখানে। এটা একান্তই তাদের পারিবারিক বৈঠক। এখানে তৃতীয় ব্যক্তিবর্গের আগমন সুফিয়া বিবির কাম্য নয়। গৃহ পরিচারক ও পরিচারিকাগণ রয়েছে অন্যত্র তাদের স্থানে। কেউ কিছু বলছে না। প্রসঙ্গ তুললো সুফিয়া বিবি নিজেই।

” রাজ আবার রাইতেই আইসা পড়বো। তোরা সব একলগে থাকবি না। আদুরীর বিয়া সাদীর আলাপ চলতাছে। চইলা যাইবো। তাই এহনই সুযোগ। তোরা সকলে জানস আমি রাজের বউ করতে চাইছি আমার এতিম ভাইঝি আঁখিমনিকে। আঁখিমনির নামে বেবাক সম্পত্তি আছে। সবকিছুর মালিক হইতো রাজ। বহুত কওনের পরেও কিন্তু রাজ রাজী হইলো না। সে তোগো বাপের পছন্দ করা এক ফইন্নীর ল্যাদা রূপসী মাইয়ারে সাদী কইরা ঘরে তুললো। এবার রূপ ধুইয়া পানি খাউক।”
“আম্মা শুধু রূপের কথা কন। বিবির লেখাপড়ির খরচ টানবো কে? ওই ছোডমিয়াই।”
ঠেস মেরে বাক্যটি আওড়ালো বড় বউ রানী।
সুফিয়া বিবি বললেন,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এইটা ভুল। লেহাপড়ি করে ক্যান গরিবে? উঁচু ঘরে সাদী হওনের লাইগা। যেন তিনবেলা ভালো ভালো খাওন আর পিন্দন জুটে। ব্যাস। এইটাতো হইলোই। তাইলে আর কিসের স্কুলে যাইবো। এত রঙের দরকার নাই। পরে ব্যাডা ধরবো। তালুকদার বংশের মান ইজ্জত নিয়া টানাটানি হইবো।”
তার বড় ছেলে রাশেদ বলল,
“আম্মা মূল কথায় চইলা আসেন।”
“আইতাছি। এমন করছ ক্যান তুই? ক্ষ্যাতে যাইবি হাল চাষ কইরতে?”
আদুরী বলল,
“আম্মা আস্তে ধীরেই বলেন সমস্যা নেই।”
“আমি রাজের এই বউরে পছন্দ করিনাই। মাইনাও নেইনাই। আমার লগে একমত কে কে কও?”
“আম্মা আমি সহমত জানাই। নিজেদের একটা পারিবারিক ঐতিহ্য আছে। এ বাড়ির ও বাড়ির কতজন আমাকে উপহাস করে কথা বলল। গরিবের মেয়ে বিয়ে করিয়ে আমরা নাকি মহৎ সাজতে গেলাম।”
মুখ বাঁকিয়ে বলল আদুরী।

“আম্মা আমিও আপনার লগে আছি। কয়দিন বাদে দেখা যাইবো এই মাইয়ার রূপের দেমাকে মাটিতে পা পড়ব না।”
টনটন সুরে মত জানালো বড় বউ রানী।
“আম্মা আপনার কথাই আমার কথা। সে আমাগো তিন জা, ননদের চাইতে সুন্দরী। জামাইর আহ্লাদ পাইয়া গাছে উঠবো। মুছিবত। কিছু একটা করতে হউবো।”
বলল দ্বিতীয় বউ সুমনা।
“আম্মা আমার তারে সহ্যই হয়না। একটা গরিবের মেয়ে আমাগো সমান মর্যাদায় এসে পড়লো। মানা যায়? পড়াশোনা আটকাইতে হবে। আমার উপরে উঠতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই।”
বলল সেজো বউ ডলি।
সুফিয়া বিবি এবার তিন ছেলের দিকে দৃষ্টি তাক করলেন। বড় ছেলে রাশেদ বলল,

“তোমরা সবাই মেয়েমানুষ। তোমাগো দ্বন্দ্ব, হিংসা,রেষারেষি থাকতে পারে। কিন্তু আমরা পুরুষ মানুষ। বাইরে বাইরে থাকি। আমি আম্মার সঙ্গে একমত নয়। আমার তো তারে দেখে ভালো মনের মেয়ে মনে হইছে।”
মেঝো ছেলে খালেদ বলল,
“বড় ভাইজানের কথাই আমার কথা। যেহেতু বিয়ে হয়েই গ্যালো। ওরে আমাদের সবার আপন করে নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। নয়তো রাজের সঙ্গে আমাদের দ্বন্দ্ব শুরু হইতে পারে।”
সুফিয়া বিবি ভ্রুযুগল কুঞ্চিত করলো। কড়া চাহনি নিক্ষেপ করলো ছেলের দিকে। থম মেরে রইলো।
সেজো ছেলে আসলাম বলল,

“রাজের কাছে কি ঠ্যাকা আমাদের? আমাদের সম মর্যাদার মেয়েরে বিয়ে করালে মুখ বড় করে সব জায়গায় চলতে পারতাম। আর এখন অল্প হলেও সমাজের কানাঘুঁষা শুনতে হয়। তাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা এমন, যেন কোন বড়সড় কারণে আব্বা এই মেয়েকে বিয়ে করালো রাজকে। তাই আম্মার সঙ্গে আমিও একমত।”
সুফিয়া বিবির মুখ চকচকে রূপোলী থালার মতো উজ্জ্বল হয়ে গেলো নিমিষেই। তিনি স্বামীর দিকে চেয়ে বললেন,
“আপনে আর কি কইবেন। জানি এতক্ষণ মনে গোসসা নিয়া খিঁচ মাইরা আছেন।”
জয়নুল তালুকদার বললেন,
” আমি গোসসা হইনি। তোমরা এগুলো কইবা এসব আমি আগেই থেইকাই জানি। কারণ তুমি ও তোমার বউয়েরা ঘুইরা ফিরা কতবার এগুলা কইলা। আমারে ক্যান ডাকছো সেইটা কও? ”
“হুনেন। এই বিয়া নিয়া রাজের লগে আমগো কারোই মধুর সম্পর্ক নাই এখন। আপনে যেইটা কইবেন রাজ সেইটাই হুনবো। বউ যদি লেহাপড়ি কইরতে চায়,যেন রাজ মানা করে। বিয়া হই গ্যালো। এহন বিদ্যা দিয়া কি হইবো। আর আপনে বউরে এত লায় দিবেন না। যে যেমন তারে সেভাবেই দেখা দরকার। নয়তো আসমানে উইঠা যাইবো।”
জয়নুল তালুকদার বলল,

“এসব ভালো না। খোদার দুনিয়াতে সবাই সমান। মাটির নিচে প্রত্যেকের হিসাব এক হইবো। চাই সে জমিদার হোক আর ভিখারি হউক।”
“আরেক কিচ্ছা। বুজান মনে ব্যথা নিয়া চইলা গ্যালো। ক্যান জানেন? রাজ অনুষ্ঠানের দিন বিয়ালকালে বাগানে সীমান্তর গায়ে হাত তুলছে। সীমান্ত নাকি তার বউয়ের আঁচলে ও চুলে হাত দিছে। চিন্তা করেন, বউয়ের ছোঁয়া না পাইতেই পোলার এই দশা। ভবিষ্যতে কি হইবো।”
“এইটা উচিত হয়নাই রাজের। আমি জিগামু।”
বলল জয়নুল তালুকদার।
পাশ থেকে তার ছেলেরা অবাক করা কন্ঠে বলল,
“এটা বাড়াবাড়ি হইছে রাজের। মজা করে বিয়ার সময় দেবরেরা এমন একটু আধটু করেই। সীমান্তরে ডাইকা তার কথা বলা দরকার।”
“আপনে ক্যান ডাকছেন সবাইরে। কইয়া ফালান?” বলল সুফিয়া।
“তা বইলা কোন ফয়দা নাই। তবুও কই। আমি চাই তোমরা সকলে ছোট বউর সঙ্গে ভালোভাবে মিশা চলো। তারে আপন কইরা নাও। এইটা মাটির হাঁড়ি না। মন চাইলো আছাড় মাইরা ভাইঙ্গা ফালাইবা। সে মানুষ। তারও একটা ইজ্জত আছে। হেলাফেলা করিওনা পিতাহারা মেয়েটার প্রতি। নারী হইয়া নারীর সমব্যথী হইয়ো সবাই। ভালো হইবো কইলাম। দুইদিনের দুনিয়ায় মনে হারামি রাইখা চইলো না।”
সুফিয়া বিবি ঝাঁঝের দৃষ্টিতে স্বামীর দিকে চেয়ে বললেন,

“হইছে। বুঝছি। আমগোরে হুমকি দিতাছেন মনে হয়? এবার কন, তারে ক্যান ঘরে আনলেন সেই কাহিনী?”
“সেইটা লম্বা ইতিহাস। এখন বলার মানসিকতা নাই আমার। অন্যদিন বলমু। আমি যাই আমার কক্ষে।”
জয়নুল পরিতাপের নিঃস্বাস ফেলে উঠে গেলেন নিজের থাকার রুমের দিকে। রাশেদ, খালেদও উঠে চলে গেলো।
একমতের সবাই বসে রইলো। সুফিয়া বিবি এদের সবাইকে নির্দেশ করে বললেন,
“সবাই এই মাইয়ার লগে এমনভাবে চলবা যেন সে আবার বেশি টের না পাইয়া যায়। আর কি সাপও মরবে লাঠিও ভাঙ্গব না। চালাকি কইরা চলাফিরা করবা। উপরে উপরে ভালা,ভিতরে ভিতরে কালা। বুঝলা? না আরো খোলাসা কইরা কিছু কইতে হইবো? এই মাইয়ারে অশান্তি দিয়া নিজেরা কিছু শান্তি পাইতে চাই। আমার ভাইঝি কি কান্দন কাঁদলো। আহারে! আমি তারে স্বপ্ন দেখাইছিলাম রাজের বউ বানামু বইলা।”
সবাই সমকন্ঠে বলে উঠলো,

” আম্মা জিন্দাবাদ। সুফিয়া বিবির জয় হোক।”
রানী বলল,
” সেই দুঃখে বিয়ার দিনও আইল না আঁখিমনি।”
“তোমরা এইবার যাইতে পারো সকলে। ”
সবাই ফিসফাস করতে করতে চলে গেলো যে যার মতো।

এক অবিশ্বাস্য চোখে শিখা রাজের দিকে চেয়ে রইলো। চেয়ারে দুই পা তুলে ছোট্র শিশুর মতো গুটিসুটি মেরে বসলো। তার মনে হচ্ছে পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যর এক আশ্চর্য তার সামনে। ঘোর বিস্ময়ে অভিভূত সে। এত অপূর্ব একটা ছেলের বউ হবে সে, এমন দৃশ্য কল্পনা করার দুঃসাহস স্বপ্নেও কোনদিন হয়নি তার। অথচ একেই আজ সকালে কতগুলো বাজে কথা বলল সে। মনে করতেই একরাশ লজ্জা,আড়ষ্টতা, ভীরুতা তাকে ঝেঁকে ধরলো। সঙ্গে যোগ হলো উৎফুল্লতা ও আনন্দ! মৃদু কাঁপছে শিখা। এই আলো আঁধারের সন্ধ্যাকে সাক্ষী রেখে যে নিগুঢ় সত্য বালিকা মেয়েটি জানতে পারলো,তাতে সে অতি পুলকিত।
রাজ বিছানায় শোয়া থেকেই শিখার দিকে চেয়ে রইলো। দুচোখ ভর্তি তার আকণ্ঠ সুধা। পুলকের প্রথম মুহূর্ত পার না হতেই তাকে চমকে দিয়ে রাজ বলল,

“অমন কাঁপছো কেন বধূ? দূরেই ত আছি। থাকবো পুরো দুই বছর। বিরহে বেশি পুড়বে? না সহনীয়?”
এই সরল বাক্যটিও বুঝতে পারল না সরলা মেয়েটি। তার অনুভূতিগুলো ক্রমশ বরফ খন্ডের ন্যায় জমে যেতে লাগলো। উম্মাদনা মিইয়ে যেতে লাগলো ফুরিয়ে আসা সাঁঝের প্রদীপের ন্যায়।
সে শীতল চাহনিতে চেয়ে ক্ষীণ স্বরে রাজকে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনে সত্যই কইতাছেন ভাইয়া? নাকি সকালের মতন ফাইজলামি করতেছেন?”
রাজের ঠোঁটের কোণে হাসির চাপা ঢেউ। সে দুষ্টমিষ্ট স্বরে শিখাকে বলল,
“ভাইয়া কি করলে বা কি বললে তোমার পূর্ণ বিশ্বাস হবে যে আমি তোমার বর? বলোতো শিখা? ”
শিখা বোকা বোকা চাহনিতে চেয়ে রইলো অন্যদিকে।

“প্রশ্ন বেশী কঠিন না জটিল হয়ে গেলো?”
“কিছুই করা লাগব না আপনার। আমারে মারবেন আপনে? ”
অবনত মস্তকে নিচু স্বরে বলল শিখা।
রাজ বিপন্ন চোখে শিখার মুখপানে নিষ্পলক চেয়ে রইলো। তার হৃদয়ের এক কোণ অপ্রত্যাশিত বেদনায় টনটন করে ভেঙ্গে পড়লো। তবুও নিজেকে ধীর রাখলো। সে মাথার নিচের দুটো বালিশ হতে একটা বালিশ সরিয়ে নিলো। বুকের একপাশে দিয়ে হালকা কাত হয়ে নিলো। বলল,
” তোমাকে আঘাত করা যায় না। পিঞ্জিরার পোষা পাখির মতো আদর করা যায়। যত্ন করা যায়। নির্ভয়ে থাকো তুমি।”
শিখা বের হয়ে যেতে লাগলো। রাজ থামালো।
“জামাইর অনুমতি না নিয়ে রুমের বাইরে যাওয়া অনুচিত।”
শিখা ভ্রু কুঁচকে চাইলো।

” বসো না প্লিজ। তোমাকে দেখতে,তোমার সঙ্গে গল্প করতে খুব মজা লাগে আমার।”
শিখা খানিক স্বাভাবিক হলো। হেয়ালী সুরে বলল,
“আমি কি মজার খানা নাকি? মজা লাগবো যে।”
রাজ হো হো করে হেসে ফেলল।
” আমার জন্য সেটাই। কেবল সময়ের অপেক্ষা। তোমাকে দেখেছি শাড়ি পরা বধূ বেশে। এখন দেখছি কামিজ পরা খুকী বেশে। তুমি অনিন্দ্য! একটু কাছে আসবে খুকী?”
“কেন?” বিষম খাওয়া কন্ঠে বলল শিখা।
“দরকার ছিলো যে। তোমার নরম হাতের কচি আঙ্গুলের সঙ্গে আমার শক্ত আঙ্গুলের সাক্ষাৎ করানোর জন্য। খাটে এসে একটু বসনা শিখা।”
মোলায়েম স্বরে বলল রাজ।
“কি শক্ত শক্ত আবোলতাবোল কন এসব? বুঝিনা।”

শিখা আর কথা বাড়াল না। রাজের কথামতো খাটের এককোণে বসলো দুইপা ঝুলিয়ে। নয়তো তাকে এই যুবক ছেলেটি জড়িয়ে ধরে ফেলতে পারে। যদিও সে একটু আগেই বলছে দূরে থাকবে। তবুও ছেলেদের বিশ্বাস নেই।
রাজ উঠে দাঁড়ালো। দরজার খিড়কি দিয়ে দিলো। শিখার পায়ের কাছে এসে হাঁটু গেঁড়ে বসলো। পকেট হতে একটা হিরের আংটি বের করে নিলো। শিখার ডান হাতখানা নিজের হাত দিয়ে ধরলো। অনামিকায় আংটিটা পরিয়ে দিলো। আলতো করে কোমল একটা চুমু খেলো হাতের পিঠে। জীবনে প্রথম কোন যুবকের ঠোঁটের উষ্ণ আলিঙ্গনে শিখা সজোরে কেঁপে উঠলো। রাজ নিবেদিত স্বরে বলল,

“মধুর চেয়েও মিষ্টি তুমি। স্রস্টার প্রিয় সৃষ্টি তুমি। শোন, সাধারণত ফুলসজ্জা রাতে বর বউকে একটা আংটি উপহার দেয়। এটা আমাদের দেশের একটা প্রচলিত ও জনপ্রিয় রীতি। তো আমাদের ত বাসর হলো না। যেহেতু এখন আমাদের দুজনের পরিচয় হলো স্বামী, স্ত্রী হিসেবে। তাই তোমাকে আমার ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে এই ক্ষুদ্র উপহার দিলাম।”
শিখা নড়তে পারছে না। এক অপার্থিব স্বর্গীয় সুখে বুকটা ভরে গিয়েছে। রাজও ওভাবে বসে রইলো শিখার আঙ্গুলগুলোর পিঠ নিজের গালের একপাশে চেপে ধরে। ধ্যান ভেঙ্গে ফের বলল রাজ,
“আমি ঢাকার ঠিকানা লিখে দিচ্ছি। তোমাদের বাড়ির ঠিকানাও আমাকে দাও। পত্রালাপে আমাদের প্রণয় হবে। চিঠি লিখতে পারো খুকী?”
“কখনো লিখিনি। ”

লাজুক ভঙ্গিতে জবাব দিলো শিখা।
“ব্যাকরণ দেখে শিখে নিও। মন দিয়ে অবশ্যই পড়াশোনা করবে। রেজাল্ট ভালো হলে যা চাইবে তাই পাবে। প্রমিজ। নিজের খেয়াল রেখো। জানি তোমার ভিতরে কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে আমাকে নিয়ে। জবাবগুলো তোমার আম্মা ভালো দিতে পারবে। জেনে নিও।”
সুস্বাদু অষ্ট ব্যঞ্জন দিয়ে রাতের নৈশভোজ একসঙ্গে সেরে নিলো রাজ,শিখা,আলো ও আলোর স্বামী। রাজ চলে যাওয়ার পূর্ব মূহুর্তে নূরী এসে রাজকে বলল,
“রাজ ওয়াদা সব ঠিক আছেতো? যা যা তোমার আব্বায় কইলো?”

“হ্যাঁ আম্মা। শিখাকে দু’চারদিন পর কেউ এসে নিয়ে যাবে আমাদের বাড়ি। তারপর একবারেই চলে আসবে আপনার কাছে। আম্মাকে আমি বুঝিয়ে নিবো। আপনি ভাববেন না। শিখা ইন্টারমিডিয়েট পাশ করা পর্যন্ত আপনার হেফাজতে থাকবে। আমি ঠিকানা লিখে দিয়েছি। আমাদের চিঠিতে আদান প্রদান হবে। আপনি আমাদের বাড়ি বেড়াতে যাবেন শিখাকে নিয়ে। যখন ওর স্কুল বন্ধ থাকবে। কোন জরুরী প্রয়োজন হলে আমি ঢাকা থেকে আপনাদের বাড়িতে লোক পাঠবো।”
রাজ চলে গেলে শিখার দু’চোখ টলমল হয়ে উঠলো। সারারাত অঝোর নয়নে অশ্রুপাত করলো বিনামেঘে বর্ষনের মতো।
রাজ পরেরদিন তার মাকে ডেকে সুন্দরভাবে শিখার পড়াশোনা ও থাকার কথা জানালো। সুফিয়া বিবি উত্তেজিত হলো না। ছেলেকে তার রুদ্রমূর্তি দেখাল না। মনে মনে কঠিন প্রতিজ্ঞা করে ফেলল শিখাকে নিয়ে। কেবল বাস্তবায়নের অপেক্ষা।

রাজবধূ পর্ব ৬

শিখা নিরালা দুপুরে নিরিবিলি মায়ের কাছে গিয়ে নিরিবিলি বসলো। কৌতুহল মিশ্রিত কন্ঠে জানতে চাইলো,
“আম্মা বুঝলাম না, বিয়ার পর ওরা আমারে আলাদা রাখলো ক্যান? উনিও প্রতিবাদ করল না। হাসিমুখেই মাইনা নিলো। আবার উনার কথায় মনে হইলো সহজে আর গ্রামে আইব না। আমি শরমে এসব উনারে জিগাইনাই। উনি কইলো তোমার থেইকা জাইনা নিতে।”
নূরী সরস হেসে মেয়েকে বলল,
“অবসর হইয়া সব কইতাছি মা। রান্ধন শ্যাষ হউক।”

রাজবধূ পর্ব ৮