রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব ৪৬
রিক্তা ইসলাম মায়া
‘ আমার রুমে আসো!
বলতে বলতে রিদ সামনে এগোল। মায়া কম্পিত শরীরে বেশ অনেকটা সময় নিয়ে জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল স্বাভাবিক হতে। যখন নিজেকে ধাতস্থ করলো কি হয়েছে ওর সাথে? লজ্জায় তৎক্ষনাৎ দু’হাত চলে গেল মুখে। মূহুর্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা পুনরায় মনে করতেই রিদের পিছনে না গিয়ে উল্টো দৌড়াল নিজে রুমে। এই মূহুর্তে রিদের সামনে দাঁড়ানোর মতোন সাহস মায়ার নেই। কিন্তু নিজের রুমের দরজায় গিয়েও আঁটকে গেল মায়া। এতোদিন পর মায়ার স্বামী ওকে ডেকেছে, এখন না গেলে নিশ্চয়ই আবার রেগে যাবে? বলবে মায়া বেয়াদব বউ উনার!
নিজের চিন্তা ভাবনায় মায়া রিদের রুমে যেতে গিয়েও আবার বেঁকে গেল। বরং নিজের দিকে তাকিয়ে পরখ করলো অগোছালো চুল আর তেল-চিটচিটে মুখটা। মায়া তৎক্ষনাৎ দৌড়ে এগোল ওয়াশরুমের দিকে। হাত-মুখ ধুয়ে নিজেকে পরিপাটি করে তারপর যাবে স্বামী রুমে নয়তো কেমন দেখাবে? যে ওহ অগোছালো আর ময়লা ময়লা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে স্বামী সামনে। মোটেও বিষয়টা ভালো দেখাবে না বলেই মায়া ওয়াশরুম হতে হাত-মুখ ধুয়ে গেল ড্রেসিংটেবিলের সামনে। সেখানে পূর্ব থেকে জুই দাঁড়িয়ে। মাথায় চিরুনি চালাচ্ছিল। গায়ে তাঁরও কালো রঙের জামদানী শাড়ি জড়ানো। ফর্সা শরীরে যেন চকচক করছে সেটা। মায়া আগ বাড়িয়ে
এসেই জুইয়ের হাত থেকে চিরুনি টেনে নিজে ড্রেসিংটেবিলের সামনে টুলে বসে পরলো। খোপা করা এলোমেলো চুল গুলো খোলে দিতেই সেগুলো পিঠ ছড়িয়ে পরলো ফ্লোরে। মায়া চিরুনিটা পুনরায় জুঁইয়ের হাতে দিতে দিতে বলল…
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘ চুল গুলো ঠিক করে দে-তো জুঁই।
জুঁই মায়ার হাত থেকে চিরনি নিতে নিতে বলল….
‘ কোথাও যাবি নাকি?
‘ হুম! উনার রুমে যাব!
জুই মায়ার কথাটা পুনরায় শুধিয়ে বলল..
‘ উনি মানে রিদ ভাইয়ার রুমে?
‘ হুম! উনি ডেকেছেন যেতে।
জুই আগ বাড়িয়ে আর কিছু জিজ্ঞেসা করলো না মায়াকে। বরং সে নিজের অগোছালো চুল রেখে মায়ার চুলগুলো চিরনি করে বেঁধে দিল গুছিয়ে। এরমাঝেই মায়া তাড়াহুড়োয় অল্পসল্প সাজুগুজু করে উঠে দাঁড়াল। নিজেকে পরিপাটি করেই পুনরায় দৌড় লাগাল রিদের রুমে। জুঁই চিরুনি হাতেই মায়ার চলে যাওয়া উচ্ছ্বাস পথের দিকে তাকিয়ে রইল। ভালোবাসা আসলেই সুন্দর, যদি সঠিক মানুষের সাথে হয়। নয়তো একটা ভুল মানুষ জীবন ধ্বংস করার ক্ষমতা পর্যন্ত রাখে। আচ্ছা জুঁই কি আয়নের জন্য ভুল মানুষ ছিল? জুঁইয়ের মন থেকে তৎক্ষনাৎ উত্তর আসলো, অবশ্যই জুঁই আয়নের জন্য একটা ভুল মানুষ ছিল। নয়তো সামান্য ভুল বুঝাবুঝি থেকে কিভাবে পারলো জুঁই সুন্দর একটা সম্পর্ক শেষ করে দিতে? এটা কি প্রমাণ করে না,জুঁই একটা ভুল মানুষ ছিল আয়নের জীবনে?
আদৌও এখানে আয়নের কোনো দোষ ছিল? এই সম্পর্কের মাঝে জুঁই টেনেছিল আয়নকে। আবেগ, ভালোবাসা সবকিছু জুঁই আয়নের প্রতি দেখিয়েছিল তাহলে জুঁই কিসের অপরাধে আয়নকে অবজ্ঞা করলো? আসলে কি জুঁই রাদিফকে পছন্দ করতো? নাকি ফোনের ওপাশের থাকা মানুষটাকে পছন্দ করতো জুঁই, যে জুঁইয়ের সাথে সারাক্ষণ কথা বলতো, ওর খেয়াল রাখতো, যত্ন করে ভালোবাসতো। যার সাথে জুঁইয়ের মনের লেনদেন হয়েছিল। ভালোলাগা, আবেগ, পছন্দ অপছন্দ সবকিছু জড়িয়ে ছিল। আর সেই মানুষটাই তো আয়ন ছিল তাহলে তাঁকে কেন জুঁই কোন অপরাধে দূরে সরালো। কিসের জন্য?
চিরুনি হাতে নিয়ে জুঁই ধুপ করে ঢোলে উপর বসে পরলো। হাঁটুতে দু’হাত ঠেকিয়ে মুখ ঢেকে বসলো মাথা ঝুঁকে। তীব্র অপরাধ বোধে জুঁই শরীর কাপিয়ে ফুপিয়ে উঠলো শব্দবিহীন কান্নায়। এরমাঝে কেউ বেশ কয়েকবার নক করে রুমে ঢুকলো। কিন্তু কান্দনরত জুঁই নিজের বেখেয়ালির কারণে সেটা ঠাহর করতে পারলো না। কেউ একজন কক্ষে প্রবেশ করেই ভিতর থেকে দরজা আটকিয়ে দিল। পিছনে ঘুরে নিজের বুক পাশের শার্টে বোতামে হাত দিতেই থমথমে খেয়ে বসলো রুমে জুঁইয়ের উপস্থিত দেখে। দরজার আওয়াজে সবেমাত্র জুঁই মাথা তুলে তাকিয়েছিল, মনে করেছিল মায়া পুনরায় রুমে এসেছে বুঝি। কিন্তু একই রুমে মায়ার জায়গায় আয়নকে দেখে থমথমে খেয়ে বসলো জুঁইও। মূহুর্তে মাঝে জুঁই ধরফরিয়ে উঠে দাঁড়াল আয়নকে দেখে। দু’হাতে চোখের পানি মুছতে মুছতে পিঠ বেঁকে দাঁড়াল তৎক্ষনাৎ।
আয়ন তখনো জুঁইয়ের কান্দনরত মুখের দিকে তাকিয়ে।
‘ আপনি কাঁদছেন কেন জুঁই?
আয়নের অল্প কথায় যেন জুঁই আরও আবেগি হলো। ডুকরে কেঁদে উঠলো তীব্র অপরাধ বোধে। জুঁইয়ের কান্নায় আয়ন ভিতর থেকে বিচলিত হলেও বাহির থেকে শক্ত দেখাল। আয়ন এই মূহুর্তে চলে যেতে গিয়েও পারলো না জুঁইয়ের ফুপিয়ে কেঁদে উঠা দেখে। কিন্তু বন্ধ দরজার ভিতরে দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ে থাকাটা দৃষ্টিকটুর বলে সে সামনে এগোল না। তবে আয়ন স্থিরও থাকতে পারলো না।
কারণ সে কখনো জুঁইকে কাঁদতে দেখেনি এই প্রথম। অধৈর্য্যের আয়ন পুনরায় প্রশ্ন করলো জুঁইকে…
‘ আপনি ঠিক আছেন জুঁই? কাঁদছেন কেন? কেউ কিছু বলেছে আপনাকে? রাদিফের সঙ্গে আপনার ঝামেলা হয়েছে? আমি কি কথা বলবো রাদি…
আয়নের কথা গুলো বলতে বলতে দুই এক কদম এগোল সবে। দুজনের মাঝে তারপরও কয়েক কদমের দূরত্ব ছিল। সেটা মূহুর্তে শেষ করলো জুই। আয়নের বাকি কথা গুলো শেষ করার আগেই জুঁই ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো আয়নকে। পরিস্থিতি এমন হবে আয়ন আশা করেনি। কেমন বোকার মতোন শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে সে। তক্ষুনি জুঁইকে ভাঙ্গা গলায় বলতে শুনা গেল…
‘ আমি ভুল করেছি ডাক্তার সাহেব। বিশাল বড়ো ভুল করেছি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি আপনাকে রাদিফ ভাইয়া মনে করে কথা বললেও আমি সবসময় ফোনের ওপাশের মানুষটাকে ভালোবেসেছিলাম। যেটা আপনি ছিলেন। আমার কখনো কারও সাথে কোনো সম্পর্ক ছিল না। আমি আপনাকে কষ্ট দিয়েছি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন। তীব্র অপরাধ বোধে আমি রোজ পুড়ছি। প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন। প্লিজ! প্লিজ!
তড়াক করে মস্তিষ্ক জ্বলে উঠলো আয়নের। বন্ধ দরজার ভিতরে দুজন নারী-পুরুষের আলিঙ্গন করার পাপ। তাছাড়া খান বাড়ি ভরপুর মেহমানে। যদি কেউ ওদের এই পরিস্থিতি দেখে তাহলে দুজনের কলঙ্কের সীমা থাকবে না। আয়ন মূহুর্তে মাঝে জুইকে টেনে নিজের থেকে দূরে সরাল। রাগে বলল…
‘ আপনি নিজের লিমিট ক্রস করে ফেলেছেন জুঁই।
রাগে কথা গুলো বলেই আয়ন ত্যাগ করলো।
জুঁইকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সে নিজে রুম থেকে বের হয়ে গেল দ্রুত। আয়নকে চলে যেতে দেখে জুঁই পুনরায় কেঁদে উঠলো। ভাবলো আয়ন হয়তো জুঁইকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে না৷ অথচ আয়ন রুমে এসেছিল নিজের ট্রলি ব্যাগের জন্য। চট্টগ্রামে এই খান বাড়িতে আসলে সে এই রুমেই অবস্থান করে। কাল রাতে মায়া আর জুঁইকে আয়নের রুমেটা দেওয়াতে আয়ন আর এই রুমে আসেনি। রাদিফের সঙ্গে ছিল। কিন্তু নিজের ট্রলি ব্যাগটা এই রুমে থেকে যাওয়ার কারণে সেটা নিতে এসেছিল এখন।
আয়ন প্রথমে মনে করেছিল রুমে হয়তো কেউ না কেউ থাকবে। কাউকে বললে রুম থেকে আয়নের ট্রলিটা বের করে দিবে কিন্তু আয়নের পরপর কয়েকবার নক করার পরও যখন রুমের ভিতর থেকে শব্দ আসলো না তখন আয়ন মনে করেছিল রুমে হয়তো কেউ নেই। সবাই নিচে! সেজন্য সে ভেবেছিল যখন এসেছে তখন না-হয় একেবারে গোসল করে রেডি হয়ে বেড়িয়ে যাবে। আর এজন্য আয়ন রুমে ঢুকেই প্রথমে দরজা আঁটকে দিয়েছিল খালি রুম ভেবে। কিন্তু রুমে হঠাৎ জুঁইয়ের উপস্থিতে দেখে সে থমমত খেয়ে বসল। আয়ন চেয়েছিল বেড়িয়ে যাবে তৎক্ষনাৎ কিন্তু জুঁইকে কান্না করতে দেখে না চাইতেও দাঁড়াতে হয় আয়নকে। মন বিচলিত হয়ে উঠে জুঁই কেন কান্না করছে সেটা জানতে কিন্তু জুঁইয়ের হঠাৎ জড়িয়ে ধরাটা ছিল সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত। এমনকিছু হবে আয়ন স্বপ্নেও ভাবেনি। মন খচখচে আয়ন বেড়িয়ে যেতেই জুঁইয়ের গাল বেয়ে অশ্রু জড়াল ভিতরকার তোলপাড়ে।
দরজা খোলা থাকায় মায়া নক না করেই ঢুকলো রিদের রুমে। স্বামীর কক্ষে প্রবেশ করতে অবশ্যই কারও অনুমতি প্রয়োজন নেই মায়ার? মায়ার সেই অধিকার আছে। উৎফুল্লর মায়া হাসিমুখে ভিতরে প্রবেশ করতেই থমথমে খেয়ে বসলো রিদ শশীকে একত্রে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। হঠাৎ রুমে মায়ার উপস্থিতি পেয়ে রিদ শশী দুজনই পিছনে তাকাল। রিদের হাতে তখন শশীর দেওয়া লেবু পানির গ্লাসটা। যেটা সে পান করছিল। মায়াকে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিদকে আগের নেয় স্বাভাবিকই দেখাল কিন্তু শশী মায়ার নক না করে রিদের রুমে প্রবেশ করাটা ভালো চোখে দেখলো না। কিন্তু তারপরও সেটা রিদের সামনে মায়াকে কিছু না বলে বরং মায়ার উপস্থিতিট কারণ জানতে চেয়ে বলল…
‘ তুমি এখানে? কিছু বলবে মায়া?
শশীর প্রশ্ন মায়ার চোখে পানি দেখা গেল। রিদকে স্বাভাবিক দেখে মায়ার কষ্ট আরও বাড়ল। কিন্তু রাগে জিদ্দে মায়া সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। রিদ- শশীর দুজনকে একত্রে দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক আচরণ দেখে মায়ার মনে হলো সত্যিই শশীর সাথে রিদের পূর্বে কোনো সম্পর্ক ছিল বা এখনো আছে। মায়া হাসিমুখ খানা মূহুর্তে নুইয়ে গেল তীব্র জেদ্দে। চোখের কোণে জমলো ক্ষোভের জল। শশীর কথায় মায়া কিছু বলবে তার আগেই রিদ লেবু পানি সবটা শেষ করে শশীর হাতে খালি গ্লাসটা এগিয়ে দিতে দিতে বলল…
‘ আমি ওকে ডেকেছিলাম।
রিদের কথাটা স্বাভাবিক ভাবেই নিল শশী। মায়ার উপর সন্দেহা ভাব সরে গিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলল শশী…
‘ কেন? কোনো কাজ ছিল তোমার? আমাকে বলো আমি করে দিচ্ছি তোমাকে। মায়া এই বাড়ির মেহমান, ওহ কি কাজ করে দিবে তোমাকে? মায়া পারবে না। আমাকে বলো কি করতে হবে।
শশীর কথায় স্পষ্ট সে রিদের সামান্য কাজের ভারও অন্য নারীর হাতে দিতে রাজী নয়। বিষয়টা মায়ার কাছে স্পষ্ট হলেও রিদ যেন অদেখা করে শশীকে বলল…
‘ আমারটা আমি বুঝে নিব। তুই যাহ!
বলতে বলতে রিদ ঘুরে ড্রেসিংটেবিল সামনে দাঁড়িয়ে হাতে ঘড়িটা খোলে পাশে রাখলে চাইলে শশী পুনরায় বলল…
‘ তুমি কি এখন ফ্রেশ হবে?
রিদের ছোট উত্তর…
‘ হুম।
শশী আর কথা না বাড়িয়ে বেড়িয়ে যেতে চাইলে দরজা সামনে মায়ার মুখোমুখি হয়ে বলল….
‘ আমার সাথে চলো মায়া!
শশীর কথায় স্পষ্ট জানান দিচ্ছে সে মায়াকে একা রিদের রুমে রেখে যেতে চাই না। শশীকে বাঁধা দিয়ে রিদ মিরর দিয়ে মায়ার নত মস্তিষ্কের দিকে তাকিয়ে শশীকে শুধিয়ে বলল…
‘ তুই যাহ শশী! ওহ থাক!
শশীর পিছনে ঘুরে সন্দিহা গলায় রিদকে বলল…
‘ তুমি তো ফ্রেশ হবে। তাহলে মায়া কেন থাকবে এখানে?
শশীকে এতো জেরা করতে দেখে রিদ রেগে যায়। তার মোটেও পছন্দ নয় কাউকে কৈফিয়ত দেওয়াতে। শশীর কথায় চিবিয়ে চিবিয়ে রিদ বলল…
‘ আমি বলছি তাই থাকবে। তোর সমস্যা?
‘ কিন্তু….
শশীকে কথা পেঁচাতে দেখে মায়া নিজেই চলে যেতে চেয়ে বলল…
‘ আমি চলে যাচ্ছি আপু। তুমি থাকো!
প্রথমে শশী এখন মায়াকে অবাধ্য হতে দেখে রিদ তড়াক করে রেগে উঠে। মায়াকে চলে যেতে দেখে মিরর দিয়েই রিদ দাঁতে দাঁত পিষে মায়াকে ডেকে বলল…
‘ রিত ডোন্ট গো! স্টে হেয়ার।
মায়া দাঁড়াল না। রিদকে এক প্রকার অমান্য করেই জেদ দেখিয়ে বেড়িয়ে গেল রুম হতে। মায়ার পিছন পিছন শশীও বেড়িয়ে গেল। রিদ মায়াকে বেড়িয়ে যেতে দেখেই রাগে দাঁতে দাঁত পিষল। মেজাজ হারিয়ে তৎক্ষনাৎ ড্রেসিংটেবিলের সবকিছু ছুড়ে ফেলল ফ্লোরে। রাগে তির তির করে এগোল ওয়াশরুমের দিকে। শালা বা*লের বিয়ে করেছে সে। জীবনটায় ত্যানা ত্যানা হয়ে গেছে। না বউ কথা শুনে আর না বা*লের মেজাজটা কখনো তাঁর পক্ষে হয়। চুন থেকে পান খসতেই বা*লের মেজাজ গরম হয়ে যায়। রিদ ওয়াশরুমে ঢুকে সজোরে দরজা লাগাতেই তার শব্দ বাহির পযন্ত মায়া শশী কানে যায়। মায়া শশী দুজনই বুঝতে পারে রিদ রেগে আছে। সেই একই রাগ-ক্ষোভে মায়াও আছে সেজন্য এই মূহুর্তে সে শশীর সাথে কথা বলতে চাই না বলেই জেদ্দি মায়া শশীকে এরিয়ে নিজের রুমে চলে যেতে চাইলে বাঁধা দেয় শশী। মায়াকে পিছন ডেকে থামিয়ে দিয়ে মুখোমুখি হয়ে বলল…
‘ ওহ তোমাকে কেন ডেকেছিল মায়া?
শশীর এই প্রশ্নটা করা এই মূহুর্তে কতোটা ভুল হয়েছে সেটা একমাত্র মায়াই জানে। ভিতরকার তোলপাড় চলছে মায়ার মনে। মায়ার সকল রাগ ক্ষোভ গিয়ে পড়লো রিদের উপর। মায়ার মনে হচ্ছে রিদ ডাবল টাইমিং করছেন ওর সাথে। সে বউও রাখতে চাচ্ছে আবার পরকীয়ার জন্য গার্লফ্রেন্ডও রাখতে চাইছে। নয়তো কেন রিদের বউ থাকা শর্তেও রিদের আশেপাশে শশীকে ভিড়তে দিবে? কেন রিদের সকল কাজ শশী করবে? যেখানে রিদ জানে শশীর মনোভাব রিদের প্রতি কি রাখে? শশীর মনের ফিলিংস সম্পর্কে জানার পরও শশীর সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে নেওয়াটা কি সে শশীকে প্রশ্রয় দিচ্ছে না নিজের প্রতি? অবশ্যই দিচ্ছে। আর এজন্যই তো পরিবারের সবাই বলে দুজনের মধ্যে প্রেমকাহিনী চলছে বিগত পাঁচ বছর ধরে। সবকিছু তো এমনই শুরু হয়নি। অবশ্য পরিবারের মানুষ রিদ-শশীর মধ্যে এমন কিছু পেয়েছে যার জন্য সবাই এসব সরাসরি বলতে সাহস পাই।
যদি এসব মিথ্যা হতো তাহলে কখনো না কখনো রিদকে এসবের জন্য প্রতিবাদ করতে দেখা যেতো কই মায়াতো কখনো দেখেনি রিদকে এসবের প্রতিবাদ করতে। মায়ার রিদের জীবনে আসার আগে যা-কিছু হয়েছিল সেই সবকিছু না-হয় মায়া দেখার প্রয়োজন মনে করলো না কিন্তু মায়া রিদের জীবনে উপস্থিত থাকার পরও কেন প্রেমিকার এতো বাড়াবাড়ি তদারকি থাকবে রিদের জীবনে? এটা কি আদৌও মায়া মেনে নিবে? অবশ্যই না। পরিবারের সবাই এমনই এমনই শশীর সঙ্গে রিদের বিয়ের কথা বলছে না। এখানে অবশ্যই কারণ আছে বলেই বলছে। শশীর সঙ্গে রিদের বিয়ের কথা পরিবারের চলছে আর সেটা রিদ জানে না এমনটাতো নয়। বাতাসের গতিতে সকল খবর রিদের কানে পৌঁছায় তাহলে এই খবরটাও নিশ্চয়ই গিয়েছে। কই এজন্য তো রিদ কোনো স্টেপ নেই না। বরং চুপ থেকে বিষয়টা আরও বড়ো করছে। দিন দিন শশীকে প্রশ্রয় দিচ্ছে রিদের জীবনে ইন্টারফেয়ার করার জন্য। মায়া জীবনে সবকিছু মেনে নিবে কিন্তু কখনো নারী সংক্রান্ত স্বামী পরকীয়া মেনে নিবে না। মায়া ভালোবাসার কাঙ্গাল হতে পারে তাই বলে চোখ বন্ধ করে কোনো নষ্টামি সহ্য করবে না সে। মায়া নাক মুখ শক্ত রেখে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শশী পুনরায় একই প্রশ্ন মায়াকে শুধিয়ে বলল…
‘ কি হলে? কথা বলছো না কেন? কি জন্য ডেকেছিল ওহ তোমাকে?
শশীর রিদকে ওহ বলে সম্মোধন করাতে মায়ার ভিতরকার রাগ আরও বাড়ল। অবুঝের মতোন শশীর কথাটা ঘুরিয়ে বলল…
‘ ওহ, কে আপু?
শশী সহজ সরল উত্তর করলো তক্ষুনি…
‘ আমি রিদের কথা বলছি তোমাকে।
মায়া নাক মুখ শক্ত করে বলল…
‘ আপনার উনি জানে আমায় কেন ডেকেছিল আপু। এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমাকে বলেছিল উনার সাথে দেখা করতে সেজন্য গিয়েছিলাম।
‘ ওহ আচ্ছা! আমি আরও ভাবলাম…
শশীর কথা মাঝে থামিয়ে মায়া চোখ মুখ শক্ত করে বলল…
‘ আপনাদের কতো দিনের সম্পর্ক আপু?
মায়ার কথায় শশী মিষ্টি হেঁসে লাজুক ভঙ্গিতে বলল…
‘ দিন না অনেক বছরের সম্পর্ক আমাদের। সামনে বিয়ে করতে যাচ্ছি আমরা। সেজন্য তো রিদের দেওয়া এই লাল শাড়িটা পড়েছি আজ। রিদের বাঙালি শাড়ি খুব পছন্দ। এই শাড়িটা ওহ-ই আমাকে দিয়েছে। তুমি হয়তো জা….
শশীর কথা গুলো আর শুনা হলো না মায়ার তার আগেই মায়া জায়গা ত্যাগ করলো ক্ষোভে। বিষাক্ত কাঁটার নেয় বিঁধছে মায়ার মনে শশীর কথা গুলো। শরীর মন দুটোই পুড়ছে তপ্ত দহনে। মায়ার মনে হচ্ছে সে ভুল করেছে, ভিষণ বড়ো ভুল করেছে রিদ খানকে নিজের স্বামী হিসাবে কবুল করে। মায়াতো জানতো নেতা-ফেতারা ভালো হয়না। এখানে মায়া জেনে-বুঝে আগুনে ঝাপ দিয়েছে। মায়ার উচিত হয়নি রিদের সঙ্গে নিজেকে জড়ানো। মায়া ভুল করেছে। ভিষণ বড়ো ভুল করেছে সে। নয়তো আজ পর্যন্ত মায়াকে তো ওর স্বামী পছন্দ করে একটা শাড়ি গিফট করলো না। বললো না তুমি আমার জন্য আজ এই শাড়ীটা পড়বে। অথচ প্রেমিকাকে নিজের পরিবারের সামনে সুন্দর দেখানোর জন্য নিজের পছন্দের শাড়ি কিনে দিল। সেই লাল শাড়ি পড়া প্রেমিকার হাতের লেবু পানি পান করছে আবার।
এসব কিছু তো মায়ার চোখের সামনেই হচ্ছে তাহলে মায়া কেন অন্ধের মতো চোখ বন্ধ করে রাখবে? অসহ্যের নেয় মায়া রুমে প্রবেশ করতেই ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিল। শশী বোকার মতোন মায়ার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সেও চলে গেল নিচে। সবকিছু ঠিক হয়েও যেন সবকিছু আবারও এলোমেলো হলো দুজনের মধ্যকার সম্পর্কে। সেই রেশারেশি থেকে সারাটা দিন গেল মায়া রিদের সামনে যায়নি। কথা বলেনি। এমনকি খাওয়া দাওয়া পর্যন্ত করেনি। সারাক্ষণ বড়োবোন মুক্তা আর জুঁইয়ের পাশেপাশেই বসে রইল কক্ষে। কিন্তু ছেলেরা সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লো মেহমানদারিতে। মেজবানের খাওয়া দাওয়া চলল সন্ধ্যা নাগাত। এরমাঝে আরিফ আসেনি খান বাড়িতে। যদিও মুক্তাকে কথা দিয়েছিল সে খান বাড়িতে আসবে দুপুরে দাওয়াতে কিন্তু আরিফকে আসতে না দেখে বুঝতে পারলো সে কাল মুক্তাকে মিথ্যা বলেছিল।
খান বাড়ির ছোট বড়ো, ছেলে-পেলে কর্মচারী পযন্ত সবার খাওয়া শেষ হলেও মায়া তার কিছুই মুখে দিল না। অথচ মায়ার জন্য রাদিফ নিজে দুবার খাবার নিয়ে এসেছিল ব্যস্ততার মাঝেও। বলা যায় খাবার গুলো রিদ পাঠিয়েছিল মায়ার জন্য। কিন্তু মায়া শরীর খারাপের বাহানায় প্রতিবার রিদের দেওয়া খাবার গুলো ফিরিয়ে দিলে তার খবর রিদের কান অবধি পৌঁছায়।ব্যস্ততা মাঝে রিদ সবার সামনে উঠে আসতে পারছে না বলে রাগে দাঁতে দাঁত পিষে সারাটা দিন পাড় করলেও রাত আটটার দিকে সকল ব্যস্ততা ঠেলে রিদ রাদিফকে দিয়ে মায়াকে খবর পাঠাল রিদের রুমে আসতে। পরপর দুবার মায়াকে সংবাদ পাঠালেও মায়া রিদের সঙ্গে দেখা করতে গেল না কক্ষে। রিদের ক্ষোভ তখন প্রকাশে, চোখ মুখ শক্ত করে দু’হাতে মুঠোয় চাপল রাগ। রাদিফ তখন মায়ার পক্ষ নিয়ে অনুনয় করে রিদকে বলল…
‘ ভাই ভাবি আসলেই অনেক অসুস্থ্য। আমি দেখেছি ভাবিকে রুমে শুয়ে থাকতে।
রিদ রাগের তোপে রাদিফকে কিছু না বলে কক্ষ হতে বের হয়ে যায় তক্ষুনি। কোথায় গেছে কারও জানা নেই। আসিফকেও সঙ্গে নেই নি। শুনা গেল সারাদিন নাকি রিদও না খাওয়া ছিল। কিছু খাইনি। সেটা নিয়ে কতো চিন্তিত শশী। মায়া রিদের চলে যাওয়ার কথাটা শুনলেও চুপ থাকল। কিন্তু যখন শুনলো রিদও কিছু খাইনি তখন ভিতর ভিতর খারাপ লাগতে শুরু করলো অপরাধ বোধে। রিদ না খেয়ে থাকলে সুগার ফল হয় তার। মায়া হয়তো উচিত হয়নি রিদের সঙ্গে রেগে খাবার গুলো ঐভাবে ফিরিয়ে দেওয়ার। কিন্তু তার পরমূহুর্তে শশীকে রিদের জন্য বিচলিত হতে দেখে মায়ার ভিতরে রিদকে নিয়ে হওয়া অনুসূচনা গুলো মূহুর্তে পরিবর্তীত হয়ে রাগ জমালো। রিদের চিন্তা করতে তাঁর সুন্দরী প্রেমিকা তো আছেই তাহলে মায়া কেন অযথা চিন্তা করতে যাবে তাঁর? মায়া শশীর সামনে বসে না থেকে আস্তে করে উঠে গেল। এসব নাটক দেখতে মায়ার ভালো লাগছে না।
নিচ থেকে উপরে উঠতে উঠতে মায়া আশেপাশে তাকাল, আপাতত কেউ নেই চারপাশে। কারণ খান বাড়ির সকল কাজিনরা মিলে বাড়ির ছাঁদে আড্ডা দিচ্ছে সন্ধ্যা থেকেই। যদিও মায়াকে বেশ কয়েকবার রাদিফ ও সেঁজুতি মিলে বলেছিল ওদের সাথে সেখানে আড্ডা দিতে কিন্তু মায়া যায়নি। জেদ ধরে নিচে মুক্তার পাশে বসেছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে মায়া আরও কিছুক্ষণ নিচে বসে থাকলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবে না হয়তো রাগের তোপে কান্না করে বসবে সবার সামনে। তখন বিষয়টা খুবই বাজে দেখাবে। বলতে গেলে মায়া নিজের ইমোশন লুকাতে নিচ থেকে ছাঁদে চলে এসেছে। তাছাড়া জুঁইও বেশ ঘন্টা খানিক হলো ছাঁদে সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছে। মায়া ছাঁদে পা রাখতেই সে ভিষণ চমকালো। চারপাশে মরিচবাতি আর বেশ জমকালো সাজ দেখে মুগ্ধ হলো।
এই মূহুর্তে খান বাড়িতে থাকা আত্মীয় স্বজনদের বাচ্চা কাচ্চা থেকে শুরু করে ছোট বড়ো সবাই ছাঁদের জায়গা জায়গায় দাঁড়িয়ে, বসে আড্ডা দিচ্ছে। এমনকি এখানে খান বাড়ির ছেলেরাও উপস্থিত। মায়া গিয়ে জুঁইয়ের পাশে আসন নিয়ে বসলো বিছানো পাঠিতে। সবার একত্রে অনেকটা সময় পার হলো আড্ডায়। রাত তখন এগারোটা দিকে। আকাশের বিদুৎ চমকাচ্ছে। বৃষ্টি হবে হবে ভাব। ছোট বাচ্চা কাচ্চারা অনেক আগেই দৌড়ে নিচে নেমে গেছে বাকি সেঁজুতিরা বসে আছে এককোণে। ছাঁদের অন্য পাশে ছেলেরাও হৈচৈ করছে। তখনই কোথা থেকে রাদিফ দৌড়ে আসলো ছাঁদে। মায়াদের ঠেঙ্গিয়ে এগিয়ে গেল ছাঁদে অন্যপাশে ছেলেদের উদ্দেশ্যে। সবাইকে নিচে নেমে যেতে বললে একে একে সকল ছেলেরা নিচে নেমে গেল মূহুর্তে। বাকি রইল সেঁজুতির দলের মেয়েরা। যেখানে মায়া, জুইকে নিয়ে আরও বেশ কিছু মেয়েরা বসে আড্ডা দিচ্ছিল একত্রে। রাদিফ এগিয়ে এসে সেঁজুতিকে বলল…
‘ সেজু তোদের জন্য আমি আইসক্রিম, চিপস এনেছিলাম। যা-তো সেই গুলো নিয়ে আয় ছাঁদে সবাই একত্রে বসে খাবো।
‘ আচ্ছা ভাই।
রাদিফের কথায় সেঁজুতি মূহুর্তে লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল নিচে যেতে। তখনই রাদিফ সেঁজুতিকে আবারও থামিয়ে দিয়ে বলল…
‘ আরে তুই একা এতো গুলো আনতে পারবি না সেজু। তুই বরং তোর সাথের সবগুলো সহপাঠীদের নিয়ে যা তাহলে আনতে সুবিধা হবে।
রাদিফের কথায় সেঁজুতি সাথে থাকা বাকি মেয়ে গুলো একত্রে উঠে দাঁড়াল সাহায্য করবে বলে। সবাই ছাঁদের দরজার দিকে যেতেই জুঁইও সবার পিছন পিছন উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল…
‘ তাহলে আমিও যায় সেঁজুতি আপুদের সাথে।
‘ অবশ্যই বিয়াইন! আপনি গেলে আমিও আপনার সাথে যাব। আমার আবার আপনাকে ছাড়া একা ভালো লাগে না। চলেন নিচে যায়।
রাদিফের মজার ছলে কথা গুলো বলেই উঠে দাঁড়াল। জুঁই ইতস্তত বোধ করে রাদিফকে কিছু না বলে সেঁজুতিদের পিছন পিছন হাঁটল। পুরো ছাঁদ খালি করে সবাইকে চলে যেতে দেখে মায়া খানিকটা ভয়ভীত হলো। মায়াকে রাদিফের সঙ্গে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে রাদিফ মায়াকে থামিয়ে বলল….
‘ ভাবি আপনাকে উঠতে হবে না। আপনি এখানেই বসুন। আমাদের জন্য পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন আমরা দশ মিনিটের মধ্যে আসছি কেমন?
মায়া ভয়ভীত মুখে জায়গায় বসে রইল। দেখতে দেখতে সবাই চলে গেল পুরো ছাঁদ খালি করে। মায়া অন্ধকারে মধ্যে আশেপাশে তাকিয়ে ভয় পেল। বৃষ্টি হওয়ার পূর্বে বাতাসের তোপ বাড়তে দেখে মায়া উঠে দাঁড়াল। বসে থাকা পাঠিটা উঠিয়ে একপাশে রাখল। বৃষ্টি হতে পারে যেকোনো সময়। মায়া চলে যাবে কিনা বুঝতে পারছে না। যদিও সবাই বাদে আসে তাহলে বেশিক্ষণ বসতে পারবে না যেকোনো সময় বৃষ্টি হবে বলে। মায়া চারপাশের ঠান্ডা বাতাস অনুভব করে শাড়ির আঁচলটা টেনে গায়ে জড়াল। সবাই বলেছিল মায়াকে শাড়িটা চেঞ্জ করতে কিন্তু কেন জানি মায়া করতে পারলো না। হয়তো এখন নিচে নেমে চেঞ্জ করে নিবে। দীর্ঘশ্বাসে মায়া গিয়ে দাঁড়াল রেলিং ধরে। শরীর ঝুকে নিচে তাকাতেই দেখল খান বাড়ি পাহারাদার বেশ কিছু বডিগার্ড আর কর্মচারীদের যাতায়াত ছাড়া তেমন কাউকে চোখে পড়লো না। হয়তো বৃষ্টি হবে বলে সবাই বাড়ির ভিতরে অবস্থান করছে। মায়া মনে মনে রিদের খোঁজ করলো। আচ্ছা লোকটা কি বাসায় ফিরেছে? নাকি এই বৃষ্টি মধ্যে বাহিরেই ঘুরছে কোথাও?
মায়ার ছাঁদের রেলিং ধরে ঝুঁকে থাকার মধ্যেই হঠাৎ ঠাস করে ছাদের দরজার শব্দ হতেই মায়া ভয়ে ধরফরিয়ে উঠে পিছনে তাকাতেই দেখল রিদ শক্ত হাতে ছাঁদের দরজার খিল লাগাচ্ছে। হঠাৎ করে রিদকে এই অসময়ে ছাঁদে দেখে মায়ার মনে ভয় হলো। সারাদিন রিদকে অনেক অমান্য করেছে মায়া, এখন নিশ্চয়ই মায়াকে একা পেয়ে এর শুধ তুলবে লোকটা? আশেপাশে কেউ নেই যে মায়াকে বাঁচাবে রিদের হাত থেকে। আচ্ছা রাদিফ ভাই প্লানিং করে সবাইকে নিচে পাঠালো নাতো মায়াকে একা ছাঁদে রেখে যাতে উনার ভাই এসে মায়াকে একা পাই? অবশ্যই এটা হতে পারে। মায়া হঠাৎ মনে মনে রাদিফের প্রতি রাগ হলো। সেই রাগ দেখিয়ে রিদকে এরিয়ে চলে যেতে চেয়ে সাহস দেখাল। রিদের উপস্থিত অবজ্ঞা করে মায়া রিদকে পাশকাটিয়ে দরজা কাছে যেতে চাইলে মূহুর্তে রিদ চেতে উঠে শক্ত হাতে থাবা পরে মায়ার মুখে। মায়া ছটফটিয়ে উঠে তৎক্ষনাৎ দু’হাতে রিদের হাত থেকে মুখ ছাড়াতে চেষ্টা করলে রিদ আরও ক্ষেপে যায়। রাগে রি রি করে বলে…
‘ ইগনোর করছিস কেন? কি সমস্যা? চোখে পরে না আমায়? ডাকলে আসিস না কেন? শরীরে তেজ বাড়ছে হ্যাঁ?
রিদের শক্ত হাতের থাবাই মায়ার দাঁতের মাড়ি ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হলো। ঠোঁট উঁচিয়ে উপরে উঠে আসলো গোল হয়ে। কোনো রকমের মায়া বলল…
‘ আমি কেন আসবো? আপনার শশী আছে না? তাঁকে গিয়ে ডাকেন আমার কাছে কি? ছাড়ুন আমাকে ব্যথা পাচ্ছি।
মায়ার কথায় রিদের হাতটা আরও শক্ত হয়ে আসল মায়ার গালে। রিদ মায়ার মুখের উপর ঝুঁকে বলল…
‘ একদম তেজ দেখাবি না আমাকে। তাহলে হাড় ভেঙ্গে হাতে ধরাই দিবো। তুই আমার বউ হোস নাকি শশী? আমি শশীকে কেন ডাকবো বল?
মায়া সেই ভাবেই রিদের হাতটা ছাড়াতে চেয়ে বলল….
‘ তাহলে শশী আপু কেন আপনার উপর এতো অধিকার দেখায়? কিসের সম্পর্ক আপনার আর শশী আপুর মধ্যে? পরিবারের সবাই বলে আপনাদের বিয়ে ঠিক, পাঁচ বছরের সম্পর্ক আপনাদের মাঝে, সামনে নাকি বিয়ে হবে। শশী আপু আপনার জন্য লেবু পানি কেন সবসময় এনে দেয়? আর সেটা আপনি কেন সাদরে গ্রহণ করে পান করেন। শশী আপু না-হয় জানে না আপনি বিবাহিত পুরুষ সেটা, কিন্তু আপনি তো জানেন আপনি বিবাহিত আপনার বউ আছে, তাহলে আপনি কেন শশী আপুকে এলাউ করছেন আপনার উপর অধিকার খাটানোর জন্য? আর আমি বউ হয়ে কেন সেটা মনে নিব বলেন? আমি মানব না কোনো কিছু। আপনি প্রেমিকার রাখতে পারবেন আর আমি একটু কথার অমান্য করলেই সমস্যা হয়ে যায় আপনার? আমি মানব না কোনো কিছু। হয় শশী আপু আপনার লাইফে থাকবে নয়তো আমি। তারপরও এসব কিছু আমি মিনে নিব না।
সারাদিনের মায়ার রেগে থাকা কারণটা রিদ আগেই বুঝতে পেরেছিল কিন্তু মায়া রিদকে সুযোগই দিচ্ছিল না কিছু বলার। আর ব্যস্ততার জন্য রিদেরও সময় হয়ে উঠেনি। এখন রাদিফকে দিয়ে সবাইকে নিচে পাঠিয়ে বউকে একা পেতে হলো। রিদের হাতটা মায়ার গালে নরম হয়ে আসতেই মায়া নিজেকে রিদ থেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলে রিদ বলে….
‘ শশী মেন্টাল পেশেন্ট বউ। ওর সাথে রাফ বিহেভ করা নিষেধ।
রিদের কথা মায়া মুহূর্তে চুপ করে যায়। শশীকে দেখলে কেউ বলবে না সে মেন্টাল পেশেন্ট। কিন্তু শশী মেন্টাল পেশেন্ট হলেও রিদতো আর মেন্টাল নয়। সে যদি এখন শশীকে শশীর কাজে বাঁধা না দেয় তাহলে ভবিষ্যতে যদি শশী নিজের অসুস্থ্যতার দোহাই দিয়ে রিদকে বিয়ে করতে চাই তাহলে কি রিদ বিয়ে করে নিবে? অসুস্থ্যতা দোহাই দিয়ে তো মানুষ অনেক কিছু করায় তাহলে রিদ কেন এই বিষয়টাতে শশীকে বাঁধা না দিয়ে বরং প্রশ্রয় দিচ্ছে। মায়া রিদের কথায় রেগে গিয়ে রিদকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে চলে যেতে চেয়ে বলল….
‘ তাহলে যান আপনার পাগল প্রেমিকার কাছে সে ভালো আদর যত্ন করতে পারবে আপনার, আমার কাছে কি? যানতো আপনি!
রিদ রেগে চিবিয়ে বলল….
‘ রিত এবার কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে?
‘ হলে হোক! তারপরও আমি মানবো না কোনো কিছু। শশী আপু কেন বারবার বলে সে আপনার প্রেমিকা হয় সেটা আগে আমাকে বুঝান।
রিদ পুনরায় মায়ার বাহু চেপে মায়াকে কাছে টেনে বলল…
রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব ৪৫
‘ আরে বাবা কি জ্বালা! বলছি না শশী আমার কিছু হয়না। তুমি আমার বউ শশী নয়।
মায়া রিদের সঙ্গে মোচড়ামুচড়ি করে জেদ্দি গলায় বলল….
‘ একশো বার বউ বললেও আমি আজ মানবো না। যান!
রিদ রাগে আগের নেয় মায়ার গাল চেপে নিজের মুখোমুখি করে বলল…
‘ যা তোর মানতে হবে না। তুই ত্যাড়ামিই কর। আমার যা করার আমি তাই করবো। আয়!