রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব ৫৫
রিক্তা ইসলাম মায়া
ইংল্যান্ডের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর হলো লন্ডন।
যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য ও পযর্টক কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে অন্যতম লন্ডন শহর। এখানের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সাথে চিকিৎসা ব্যবস্থাও বেশ চর্চিত। জন্ম সূত্রে এই লন্ডন শহরের বাসিন্দা সুফিয়া খান। বাবা-মা, ভাই বোনকে নিয়েই ছিল উনার পারিবারিক বসবাস এই শহরের তলিতে। একটা সময় পড়াশোনার সুবাদে পরিচিত হয়েছিল নিহাল খানের সঙ্গে এই শহরের মাটিতে। প্রথমে বন্ধুত্ব তারপর দুজনের প্রেম। পড়াশোনা শেষে দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে হয়েছিল তাদের। তারপর নিহাল খানের হাত ধরে সুফিয়া খান বাংলাদেশে সেটেল্ড হয়ে যান। তারপর আর কখনোই এই লন্ডন শহরকে আপন করতে পারেন নি তিনি। যদিও দুজন একটা সময় পর আলাদা হয়ে গেছেন তবে বিচ্ছেদ হয়নি দুজনের। আজও দুজন স্বামী স্ত্রী।
তারপরও কেন জানি সুফিয়া খান কখনো বাংলাদেশের মাটি ত্যাগ করে লন্ডন শহরকে আপন করতে পারে নি। তবে উনার যোগাযোগ রয়েছে এই শহরের সঙ্গে একেবারে পর করে দেননি এই শহরকে। জম্ম সূত্রে ইংল্যান্ডের সিটিজেনশিপ নাগরিক হওয়ায় প্রায় প্রতি বছরই উনার বাংলাদেশ টু লন্ডন আসা-যাওয়া লেগেই থাকেন ভিন্ন কাজে। তাছাড়া সুফিয়া খানের বাবা-মা আজ জীবিত না থাকলেও উনার বড়ো ভাই আজও পরিবার নিয়ে এই লন্ডন শহরের বসবাসরত আছেন। যেমন আছেন শশীর মা সালমা সৈয়দ ও উনার স্বামী। সুফিয়া খানের ছোট বোন সালমা সৈয়দ পরিবার এই শহরের নাগরিক। বাংলাদেশে তিনি শুধু খান বাড়ির উদ্দেশ্যে আসা-যাওয়া করেন। বলতে গেলে শশীর সঙ্গে রিদের বিয়ের ব্যাপারটা তাজা রাখতে এতো কাঠখড় পুড়িয়ে দু-টানার সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছেন তিনি। দু-টানা সম্পর্কে সালমা সৈয়দ খাতির জমালেও স্বভাবে ঠিক বিপরীত হলো সুফিয়া খান।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রাগ জেদ্দে এক স্পষ্টভাসী মহিলা তিনি। মিথ্যা, ছলনা পছন্দ নয়। মুখের উপর সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলায় উনার কঠিন ব্যক্তিত্ব । বলতে গেলে রিদ অনেকটা তার মার মতোই হয়েছে। রাগী আর বদমেজাজি টাইপ। নিহাল খান এমন শক্তপোক্ত কঠিন চরিত্রে প্রেমে পরেছিল যৌবনকালে। পরেছিল বলতে ভুল হবে, আজও তিনি বউয়ের প্রেমে পড়ে আছেন। কিন্তু দীর্ঘ দিনের দূরত্বের কারণে দুজনের সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। বউয়ের জন্য মায়া আছে কিন্তু প্রকাশ করার জন্য ভাষা নেই নিহাল খানের। তাই যেটা যে ভাবে চলছে সেটা সেভাবেই যেতে দিচ্ছেন তিনি। যৌবনকালটা তিনি একাই কাটিয়েছেন এখন তো মধ্যবয়সটাও শেষে দিকে। এখন আর উনার একাকিত্ব পোড়াই না। সয়ে গেছে। একা থাকতে শিখে গেছেন।
এই দুনিয়াতে বাঁচবে বা আর কয়দিন? বাকি দিন গুলো না-হয় একাকিত্বে কাটিয়ে দিবে। তারপরও এই বয়সে এসে কাউকে ডিস্টার্ব করতে মন চাইনা উনার। সবাই তো ভালো আছে, উনি দুঃখে থাকলে কেউ বা দেখবে? কারও দেখার তো আর নেই। কেউ দেখতে আসেও না। সবাই শুধু উনার উপরটায় দেখে, যেটা উনি দেখায়। কিন্তু মনের খবরই বা কয়জন নেয়? আজকাল উনার এই দুনিয়াটা কেমন তেতু তেতু লাগছে। নিজের নিশ্বাসটাও বেশ ভারি ভারি বজা মনে হয়। নিজের ছেলের মৃত্যুমুখী হওয়ার কারণটা আজ তিনি। উনার করা রাজনৈতিক দন্ডের জন্য আজ উনার বড় ছেলে মৃত্যুশয্যায় শুয়ে। বাবা হিসাবে তিনি অপরাধীর। না হতে পারলেন ভালো স্বামী আর না হতে পারলেন আদর্শ বাবা। ব্যর্থ উনার জীবন। আর এই ব্যর্থতা উনাকে ভিতর থেকে দুমড়ে মুচড়ে খুঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছে।
নত মস্তিষ্কের নিহাল খান দু’হাতে মাথা চেপে হাহাকার বুকে দীর্ঘ শ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে দু’ফোটো চোখের জলও ফেললো পায়ের কাছে ফ্লোরে। সামনেই রিদের কেবিন। তিনি হসপিটালের বিশাল করিডোরের সারিবদ্ধ চেয়ারে মাথা ঝুঁকে বসে মনস্তাত্ত্বিক চিন্তা ভাবনায় বিভোর। আশেপাশে পরিচিত কেউ নেই। সকল অপরিচিত ভিন্ন দেশিদের মাঝে তিনি একা বসে জীবনের কিছু হিসাব মিলাতে ব্যস্ত। উনার জীবনের অনেক সময় তিনি এই শহরে কাটিয়েছেন। আবার রিদ-রাদিফ আয়ন, তিনজনের পড়াশোনা, বেড়ে উঠা এই লন্ডন শহর থেকেই হয়েছে। তাই এই শহরটা উনার কাছে এতোটাও অপরিচিত নন। পরিচিত বটে। পরিচিত শহরে নিজের সন্তানকে নিয়ে আজ পনেরোদিন যাবত হসপিটালের চক্কর কাটছেন উনারা।
অজ্ঞানরত রিদের হুশ নেই। বিগত পনেরোদিন পেরুয়ে ষোলো দিনে পড়তে চলল। অথচ রিদের কন্ডিশন এখনো আগে নেয়। মাথার অপারেশনও সাকসেসফুলি হয়েছে তারপরও রিদের অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে রিদকে। টুয়েন্টি ফর আওয়াস হসপিটালের চত্বরে কেউ না কেউ উপস্থিত থাকছে রিদের সঙ্গে। বেশিভাগ সময় সুফিয়া খান আর নিহাল খানকে দেখা যায় হসপিটালের। খাওয়া-দাওয়ার আর গোসল বাদে দুজন হসপিটালের থাকছেন চব্বিশ ঘণ্টা। অথচ কেউ কারও সাথে কথা বলছে না আর না চোখ ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করে। দুজন দুজনার আশেপাশে থাকছে অথচ একজনের উপস্থিতে অন্যজন নিরব দর্শক। যেন নিরব যুদ্ধ চলছে দুজনার মধ্যে। এমন কি দুজন রাত্রী যাপন করছে দু’টো আলাদা আলাদা বাড়িতে। সুফিয়া খানের নিজ বাড়ি, নিজ আত্মীয় রেখেও তিনি হোটেলে উঠেছেন। কারও সাহায্য নেওয়ার মানুষ তিনি নন। সবসময় নিজের কাজ নিজে করেন। নিজের দায়িত্ব নিজে পালন করতে পছন্দ করেন। সেজন্য রিদের আশেপাশে নিহাল খান থেকে উনাকে দেখা যায় বেশি। নিহাল খান
সুফিয়া খানের জন্য হসপিটালের রাত্রি যাপন করতে পারেন না নিহাল খান। একাধিক মানুষ হসপিটালের রোগীর সঙ্গে এলাউ নয় বলে তিনি রাদিফের ফ্লাইটে থাকছেন। আরাফ খান, হেনা খান আয়নের সঙ্গে আছেন ওদের পরিবারের।
সকলেই রোজকার আসা যাওয়া লেগে থাকে হসপিটালের চত্বরে। আয়ন প্রফেশনাল ডাক্তার হওয়ার সে রিদের রেগুলার চেক-আপ রুটিন মেইনটেইন করে। এখন রাত দশ-টা পাঁচটা। আপাতত হসপিটালের কেউ নেই। সুফিয়া খান হোটেলে গেছেন রিদের কিছু রিপোর্ট আনতে। সঙ্গে রাদিফও আছে। আয়ন হয়তো নিচে গেছে ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলতে। সেই মূহুর্তে তিনি একা বসে আছেন এখানটায়। আশেপাশে সাদা চামড়ার ওয়েস্টার্ন পড়া মেয়েদের ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। যে যার মতোন রোগীদের নিয়ে ব্যস্ত। আপাতত কারও মনোযোগ নেই নিহাল খানের উপর। মনস্তাত্ত্বিক ভাবনায় নিহাল খান যখন বিভোর তখনই উনার সম্মুখে অর্ধ পোষাকে দাঁড়াল কেউ। খুবই মিষ্টি স্বরে নিহাল খানকে ইংরেজি ভাষায় বলল…
‘ মিস্টার খান আর ইউ ওকে?
অশ্রু ভেজা চোখ দ্রুত মুছলো নিহাল খান। পরিচিত নার্সের কন্ঠে পেয়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে তিনিও ইংলিশে উত্তর করে বলল…
‘ আই এম ওকে মিস লিটা। থ্যাংকস ফর আকসিং মি।
বিদেশিনী নার্সটি বয়স প্রায় ত্রিশের উধ্বে অথচ দেখে মনে হবে মাত্র বিশের কোটায় পা রেখেছে সে। আসলে বিদেশিদের চেহারা দেখে বয়স ধারণা করার উপায় নেয়। যেমন মিস লিটা ক্ষেত্রে হয়েছে নিহাল খানের। রিদের পার্সোনাল নার্স হলো মিস লিটা। রিদের দেখা শোনা মিস লিটা নামক নার্সটি করে থাকেন সেজন্য বেশ পরিচিত এই নার্সের সঙ্গে সবাই। রিদের কন্ডিশনের বাইরেও মিস লিটা নিজ থেকে নিহাল খানের খবরা-খবর নিয়ে থাকেন সবসময়। তাই আজ নিহাল খানকে একা বসে থাকতে দেখে মিস লিটায় আগ বাড়িয়ে উনার সাথে কথা চলাল। সুন্দরী নার্সটি উজ্জ্বল হেঁসে লাজুক ভঙ্গিতে ঝলমলে ইংরেজিতে বলল….
‘ মাই প্লেজার মিস্টার খান। আপনার খবর নেওয়া আমার দায়িত্বের মধ্যেই পরে। যায় হোক, আপনি কি একা হসপিটালের আছেন? আর কেউ নেই?
নিহাল খান স্বাভাবিক নেয় উত্তর দিয়ে বলল….
‘ আপাতত কেউ নেই মিস লিটা। তবে একটু পর সবাই চলে আসবে।
নিহাল খান রাতে হসপিটালের থাকেন না। সুফিয়া খান রিদের সঙ্গে থাকছেন। সেজন্য উনাকে রাতে চলে যেতে হয় আবার সকালে আসতে হয়। নার্সটি বলল…
‘ ওহ! তাহলে আপনি এখন চলে যাবেন?
‘ না! একটু পর যাবো।
সুন্দরী নার্সটি চট করে নিহাল খানকে কফির অফার করে বলল…
‘ তাহলে কফি খাবেন আমারা সাথে? প্লিজ না করবেন না।
মিস লিটা কাজের প্রতি বেশ দায়িত্ববার। নিহাল খানের প্রচন্ড মন খারাপ হলে মিস লিটা বন্ধুর মতোন উনাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন প্রায়। উনার বিষয়টা খারাপ লাগে এমন না। বিপদে একজন অন্য জনকে সান্ত্বনা দিতেই পারে এটা অস্বাভাবিক কিছু না। উনিও বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবেই নিয়ে উত্তর করতে যাবে তার আগেই শুনা গেল সুফিয়া খানের গলা। নিহাল খানের আগে বিদেশি নার্সটির উদ্দেশ্যে উত্তর দিতে দিতে একই ইংরেজি ভাষায় বললো…
‘ আপনার সাথে কফি খাওয়ার মতোন দাঁত নেই মিস্টার নিহালের মিস লিটা। বুড়ো মানুষ দাঁত সব বয়সের ভারে পরে গেছে। মুখের ভিতর এখন সব প্লাস্টিকের দাঁত। আপনার সাথে গরম কফি খেতে গেলে তার প্লাস্টিকের দাঁত সব গলে যাবে। আপনি বরং আমাকে কফির দাওয়াত দিতে পারেন। আই লাভ কফি।
সুফিয়া খানের কথায় চমকে উঠার মতোন বিদেশি নার্সটি ঘুরে তাকাল। সেই সাথে নিহাল খানও তাকাল তক্ষুনি। থ্রি পিসের উপর মোটা ভারি ওভারকোট পরে হাতে রিদের বেশ কিছু রিপোর্টের ফাইল চেপে দাঁড়িয়ে সুফিয়া খান। পিছনে রাদিফ সরল ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে। মা-ছেলে লম্বা প্রায় সমান সমান দেখালো। যদিও রাদিফের হাইট ৫’১০। সুফিয়া খানের ৫’৮।
জুতো পড়ায় মা-ছেলে দুজনকে লম্বাই একই দেখাল। রাদিফ চোখ ছোট ছোট করে মায়ের দিকে তাকিয়ে। বাবার যে প্লাস্টিকের দাঁত সব সেটা সে আজই জানতে পারলো। নয়তো এতোদিন তো সে তার বাবাকে ইয়ং আর বত্রিশ দাঁতে অধিকারী মনে করতো। কিন্তু আজ জানতে পারলো তার বাবা আসলে ইয়ং ম্যান নয় ওল্ড ম্যান। বুড়া মানুষ। সেজন্য রাদিফ ছোট ছোট চোখ করে বাবাকে আওড়াতে লাগল আসলেই নিহাল খানের দাঁত প্লাস্টিকের কিনা সেটা দেখতে। এর মাঝেই সুফিয়া খান পিছন থাকা রাদিফকে দিকে হাতের রিপোর্ট গুলো বাড়িয়ে দিতে দিতে সৃষ্টি তাক করলো সুন্দরী নার্সটির উপর। রাদিফকে বলল সুফিয়া খান…
‘ আয়নকে সেকেন্ড ফ্লোরে পাবে। গো।
রাদিফ ভদ্র ছেলের মতোন রিপোর্ট গুলো হাতে নিয়ে তৎক্ষনাৎ জায়গা ছাড়লো। সুফিয়া খান মিস লিটার মুখোমুখি হয়ে তাকাল সুন্দরী নার্সটির গলার নিচে। টাইট ফিটিং ইউনিফর্মের বুকের কাছটায় দুটো বোতাম খোলা। পাশেই নিহাল খান দাঁড়িয়ে সুফিয়া খানকে দেখছিল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। উনার যে প্লাস্টিকের দাঁত মুখে সেটা তিনি নিজেরও আজ প্রথম শুনলো। হঠাৎ উনার বউ এসব কথা কেন বলল সেটাই তিনি বুঝতে চাইলো। সুফিয়া খান নিহাল খানের সকল কৌতুহল ভস্ম করে রয়েসয়ে দু’হাত চালাল সুন্দরী নার্সটির ইউনিফর্মের বোতামের উপর। টাইট ফিটিংস ইউনিফর্মটির দুপাশ টেনে বোতাম দু’টো লাগাতে লাগাতে আবারও সচ্ছ ইংরেজি ভাষায় বলল…
‘ হি ইজ নট ইন্টারেস্টেড ইন ইউ। কারণ তার বউয়ের প্রয়োজন হয়না তাহলে তোমার এসব দেখে কি ফিল করবে বলো। আসলে সমস্যা তোমার না তার মেশিনের। যন্ত্রে ঝংকার ধরে আছে তোমার সাথে চলবে না। ইউ ডিজার্ভ বেটার।
সুফিয়া খানের কথায় তৎক্ষনাৎ নার্সটি নিহাল খানের দিকে কেমন বাঁকা চোখে তাকাল। বিরবির করে বলল নার্সটি….
‘ ওয়েস্ট অফ টাইম।
নার্সটির কথায় তৎক্ষনাৎ উত্তর করলো সুফিয়া খান।
‘ ইয়াহ!
কথাটা বলেই সুফিয়া খান জায়গা ত্যাগ করেন। কেবিনের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢোকে পড়েন। পিছন থেকে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল নিহাল খান। কেমন বোকার মতোন তাকিয়ে রইল সুফিয়া খানের যাওয়ার দিকে। এই দিকে খানিকটা বিরক্তি প্রকাশ করে সুন্দরী নার্সটিকেও চলে যেতে দেখল। অথচ উনি এতোদিন সরল মনে কথা বলতো নার্সটির সঙ্গে। উনি বুঝতে পারেননি আসলে নার্সের মনে কি ছিল। এই বয়সে তিনি পরকীয়া করবেন ছিঃ।
আজ সতেরো দিন হতে চললো রিদের এক্সিডেন্টের পর। মায়ার অবস্থার পরিবর্তন নেই। গায়ে সবসময় জ্বর থাকে। অতিরিক্ত মানসিকতা চাপে কারণে সারাক্ষণ ঘুমিয়ে নয়তো চুপচাপ বসে থাকে। পারিবারিক আত্মীয়দের নানান কথা কানে আসে মায়ার। মায়ার ফুপিরা তো মায়ার সামনে এসে যাতা বলে যান। মায়ার জন্য জুইয়ের পড়াশোনাও বন্ধ পথে। বাড়ির মেয়েরা পড়াশোনা ছেড়ে ছেলেদের পিছনে ঘুরে পাগল হয়ে যাচ্ছে বলে আর পড়াশোনা করানো ঠিক হবে না বলে এমনটা মায়ার তিন ফুপির ধারণা। এতো পড়াশোনার করিয়ে বা কি লাভ হবে যদি পরিবারের সম্মান নষ্ট করে বেড়ায় এরা? পরিবারের সম্মান বাঁচাতে চাইলে মায়া বা জুই কারও পড়াশোনার আর দরকার নেই আর। ভালোই ভালোই সম্মান থাকতে মেয়ে দু’টোকে বিয়ে দিলে জান বাঁচবে নয়তো সমাজে মুখ দেখাবার নয়। এমনই মায়ার জন্য আত্মীয় স্বজনরা থুঃথুঃ করছেন উনাদের উপর। বড়ো লোক ঘরের ছেলেকে ফাঁসাতে না পেরে মায়া নাকি নিজেই পাগল হয়ে ঘরে বসেছে।
এসব কথা আরিফের কানেও গিয়েছে অনেকবার। সে প্রতিবারই প্রতিবাদ করেছে কিন্তু সবসময় আরিফ সামনে থাকে না মায়াকে বাঁচানো জন্য। মায়ার ছোট ফুপি শান্তা মজুদার তিনি একটু শক্তমনের মানুষ। ভাইয়ের সংসারের ভালো-মন্দ চিন্তা করার উনার সবসময়ের স্বভাব। মায়ার অসুস্থতার বা প্রেম জনিত কথাটি শুনে বড়ো ভাইয়ের বউদের যা-তা শুনিয়েছেন তিনি। দুই ভাইকে বুঝাচ্ছেন মায়াকে ভালো ডাক্তার দেখিয়ে সুস্থ করে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিতে নয়তো সমাজে মায়ার পাগল হওয়ার বিষয়টি রটে গেলে সম্মান নষ্ট হবে সবার। মায়ার বাবা শফিকুল ইসলাম বোনের কথায় সহমত পোষণ করেন।
রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব ৫৪ (২)
সেই সাথে জুইয়ের বাবাও তাই প্রকাশ করলেন। সকলেই চাই মায়াকে সুস্থ করে চেয়ারম্যান পরিবারের বিয়েটা সেড়ে ফেলতে। সেই সাথে উনারা মতে মতে জুইয়ের জন্যও ভালো ছেলের সন্ধান করছেন। তবে বোনদের বিয়ের ব্যাপারে কেউ আরিফের সামনে আলোচনা করে না। আরিফ বরাবরই মায়ার অন্য জায়গায় বিয়ে নিয়ে প্রতিবাদ করে। সেজন্য পরিবারের সবাই ঠিক করলো মায়ার সুস্থতা নিশ্চিত করতে মায়াকে পরিবার থেকে দূরে পাঠানো হবে। আরিফ বলা হবে মায়ার চিকিৎসার জন্য পাঠানো হচ্ছে সেখান থেকে চুপিসারে মায়ার বিয়েটা উনারা সেরে ফেলবেন। নাহিদ ভালো ছেলে ।মায়া স্বামী সঙ্গ পেলে প্রেমের ভুত মাথা থেকে সরে যাবে। দ্রুত সুস্থ হয়েও উঠবে।