রেড রোজ পর্ব ৩১

রেড রোজ পর্ব ৩১
ফারহানা নিঝুম

“বিয়ে করবি না মানে?আই উইল কি’ল ইউ, শেষ করে দেব।”
ঐশ্বর্যের দাবাং হাতের থা’প্প’ড় খেয়ে ফ্লোরে লু’টিয়ে পড়ে আছে। ঠোঁট কে’টে র’ক্ত বের হচ্ছে।
ঐশ্বর্য ক্লান্ত স্বরে বলল।
“সুইটহার্ট তুই আমাকে রাগাস কেন?”
উৎসা চোখ বুজে লম্বা নিঃশ্বাস টেনে নেয়। ঐশ্বর্য ভীষণ ভ’য়ংকর,এই তো কিছুক্ষণ আগেই মাহমুদ ডিরেক্ট উৎসার রুমে চলে এলো তার সঙ্গে কথা বলতে। উৎসা মাহমুদ কে দেখে প্রচন্ড রাগ হয়।

“একী মাহমুদ ভাইয়া আপনি আমার রুমে কেন?”
মাহমুদ বি’শ্রী হাসলো।
“উৎসা আমি তো তোমার সঙ্গেই দেখা করতে এসেছি।”
উৎসা কপাল কুঁচকে নেয়।
“দেখুন ভাইয়া আপনি প্লিজ রুম থেকে বের হন।”
মাহমুদ চট করে উৎসার হাত ধরে ফেলল।
“উৎসা বিশ্বাস করো তোমাকে দেখলে হুঁ’শ থাকে না।”
“অস’ভ্য ছাড়ুন আমার হাত?”
“না জানু তোমাকে এত্ত সহজে কী করে ছাড়ি?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

উৎসা নিজের হাত টান দিয়ে ছাড়িয়ে নিলো,যেই মাহমুদের গালে চ’ড় দিতে যায় তৎক্ষণাৎ মাহমুদ ওর হাত ধরে ফেলে। অদ্ভুত ভাবে স্পর্শ করে, মোলায়েম ভাবে ছুঁতে লাগলো।
“নির্ল’জ্জ ছাড় আমার হাত।”
উৎসা মাহমুদ কে সজোরে লাথি দিয়ে দরজার উপর ফেললো।
“আর যদি কখনও আপনাকে আমার রুমে দেখি তাহলে……
আর কিছু বলার আগেই ঐশ্বর্য কে দেখতে পেলো উৎসা, তৎক্ষণাৎ মাহমুদ বেরিয়ে গেল।
মাহমুদ বের হতেই দরজা লক করে দেয় ঐশ্বর্য। আচমকা উৎসা কে সজোরে থা’প্প’ড় বসালো।
উৎসা মিনমিনে গলায় বলল।

“আপনার সঙ্গে থাকব না আমি, আমি আপনাকে বিয়ে করব না।”
বিয়ে করবে না! কথাটা ঝং’কার তুললো ঐশ্বর্যের কানে,আবারো গালে পড়লো ঠাস করে। এবারে টাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে গেল উৎসা।
“সুইটহার্ট ভালো যখন বাসতে বাধ্য করেছো তাহলে তো এখন বিয়ে করতেই হবে! অন্য মেয়ে হলে জাস্ট একটা রাত ইউজ করে ছেড়ে দিতাম। কিন্তু ইউ! তুমি ভালোবাসতে ফোর্স করেছো, এবার থাকতে তো হবেই।”

উৎসা শব্দ করে কেঁদে উঠলো,ব্যথা পেয়েছে সে।গাল দুটো লাল হয়ে আছে।
“খারাপ মানুষ কোথাকার! আমার গাল ফা’টিয়ে দিল।”
ঐশ্বর্য উৎসার সামনে ফ্লোরে বসে পড়লো। উৎসা কে টেনে বসালো।
“বেইবি সামথিং নিডস্।”
উৎসার প্রচুর রাগ হলো ঐশ্বর্যের উপর,লোকটা এই মাত্র এত গুলো বকা দিয়েছে,মে’রেছে। এখন আবার বলছে সামথিং?
“আমি বাইরে যাবো,সরুন।”
ঐশ্বর্য ছাড়লো না,উঠে দাঁড়ালো।উৎসাকেও টেনে তুলে।উৎসা সরে যেতে নিলে ঐশ্বর্য ডান হাতে উৎসার কোমড় টেনে ধরে।
“আই লাভ ইউ।”

উৎসার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, শ্বাস আটকে আসছে। ঐশ্বর্য উৎসার লম্বা চুল গুলো ঘাড়ের সাইড থেকে সরিয়ে সেখানে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।
“কাম অন রেড রোজ আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ।”
উৎসা ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠলো।
“আ,, আমি যাই।স,, সবাই খারাপ ভাববে!”
ঐশ্বর্য তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে উৎসার পেটে স্লাইড করলো।
“ডু সামথিং সুইটহার্ট। আমি সামলাতে পারছি না নিজেকে।”
উৎসা দু পা উঁচু করে ঐশ্বর্যের কপালে চুমু খায়।

“ওকে?”
“উঁহু।”
উৎসা আবারো ঐশ্বর্যের দু গালে চুমু খায়।
“এখন?”
“উঁহু।”
ঐশ্বর্যের আবার নাহুচে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গেল উৎসা। কিছু একটা ভেবে উৎসা ঐশ্বর্যের বুকের কাছের ট্রি শার্ট অল্প একটু উপরে তুলে কালো তিলটাতে চুমু খায়।
ঐশ্বর্যের বুকের মাঝখানে তিল আছে,সেটা গত কাল রাতে দেখেছে উৎসা।
“এবার?”
“হুঁ, উম্মাহ্।”

মনিকা চৌধুরী বাংলাদেশের মেয়ে হলেও বড় হওয়া তার জার্মানিতে। পড়াশোনা থেকে শুরু করে সব কিছুতেই প্রথম ছিলেন, কিন্তু কে জানতো জীবন যু’দ্ধে পিছনে যাবেন?
সাল ১৯৯১ প্রথম বার জার্মান পা রেখেছিল শহীদ নামে এক বাংলাদেশী।মনিকাদের কোম্পানিতে চাকরি করে, মনিকা মাঝে মাঝে অফিসে যেতো। ভাই রাজেশ চৌধুরী এবং মনিকা চৌধুরী দু’জনে মিলে এত বড় বিজনেস দাঁড় করায়।
বছরের মধ্যে মনিকা আর শহীদের মধ্যে সম্পর্কের শুরু হয়।যেহেতু মনিকা বাংলাদেশী মানুষ পছন্দ করতো সেই জন্য শহীদ আরো বেশী মন কা’ড়ে মনিকার। কিন্তু কে জানতো শহীদ তার থেকে অনেক কিছু চেপে যাবে?

বছর ঘুরতে লাগলো, এদিকে মনিকা আর শহীদের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হতে লাগলো।
মনিকা যখন প্রেগন্যান্ট সেদিন খুশির অন্ত নেই মনিকার।
সে চেয়েছিল শহীদ কে সারপ্রাইজ দিতে, এদিকে শহীদ ভীষণ ভাবে মানসিক চাপে ছিলো।তার এক্স গার্লফ্রেন্ড আফসানা,যার সঙ্গে কিছু দিন আগেই ব্রেক আপ হয়েছে। কিন্তু এখন শহীদের জীবনে আবার ফিরতে চাইছে আফসানা।
শনিবার দুপুরে মনিকা শহীদ কে নিয়ে রেজিস্ট্রি অফিসে পৌঁছায়।

“মনিকা আমরা এখানে কেন?”
মনিকা হাস্যোজ্জ্বল মুখে বললো।
“ডিয়ার আমি চাই আমাদের বিয়ে হোক।”
শহীদ অস্বস্তিতে পড়ে গেল।
“কিন্তু এভাবে কাউকে না জানিয়ে!”
“ওহ্ কাম অন শহীদ আমরা পড়ে আবার বড় করে সেলিব্রিট করে ফাংশন অ্যারেঞ্জ করে সবাইকে জানাবো।”

শহীদ মিহি হাসলো, সত্যি তো মনিকা কে সে কত ভালোবাসে! আর মনিকাও কতটা ভালোবাসে!এভাবে একটা মেয়ে কে ঠকানো উচিত হবে না।
শহীদ সেইদিন মনিকা কে বিয়ে করে। মনিকা খুব বড় একটা ফাংশন অ্যারেঞ্জ করেছে পরের দিন,যাতে জানাতে পারে সে প্রেগন্যান্ট। কিন্তু ঘন কালো মেঘ ছেয়ে যায়, শহীদ পরের দিনই বাংলাদেশ ব্যাক করে।অথচ মনিকা কে একবার জানানোর প্রয়োজন বোধ করেনি।
মাস কয়েক দিনের মধ্যে ফিরবে বলে শহীদ ফিরলো না, মনিকা আস্তে আস্তে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়তে লাগলো,সে জেদ করলো বাংলাদেশ যাবে। কিন্তু মিস্টার রাজেশ চৌধুরী বোনের এমন অবস্থা দেখে আর চুপ থাকতে পারলো না। অবশেষে মনিকা কে সব সত্যি কথা বলে দেয়। শহীদ বাংলাদেশে গিয়ে বিয়ে করেছে, সংসার করছে। এটা শোনার পর দীর্ঘ তিন দিন হসপিটালে ভর্তি ছিলো মনিকা।

সে অনেক বার শহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেয়েছে, কিন্তু শহীদ কোনো যোগাযোগ রাখেনি। অবশেষে দেখতে দেখতে বছর ঘুরে গেল, মনিকার ফুটফুটে একটা ছেলে হয়। মনিকা খুব শখ করে তার নাম রাখে ঐশ্বর্য রিক, রাজেশ চৌধুরী ঐশ্বর্য রিকের সঙ্গে পদবী চৌধুরী লাগিয়ে দেয়।

গুনে গুনে ঠিক দু’টো বছর পর শহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মনিকা। শহীদ যখন নিজের বড় ছেলের ছবি দেখেছে সেদিন হাপিত্যেশ করেছে। ছেলেটাকে একটি বার ছোঁয়ার জন্য, কিন্তু পারেনি। আফসানার জন্য, শহীদ চেয়েছিল ফিরে আসতে, কিন্তু মনিকা চায়নি একটা মানুষের সংসার ভেঙ্গে যাক। এদিকে সে তো আর কটা দিন! মরণ ব্যাধি ক্যা’ন্সারে আ’ক্রা’ন্ত হলো,এর থেকে ভালো ওরা সুখে সংসার করুক।

শহীদ ছেলে কে ছুঁতে না পেরে সেদিন কেঁদেছিলো। ঐশ্বর্য বড় হতে লাগলো, নিজের মা বাবার সম্পর্কে রাজেশ তাকে সব কিছুই বলে। বাবার প্রতি তীব্র ঘৃ’ণা সৃষ্টি হয় ঐশ্বর্যের মনে। সাথে আফসানার প্রতিও, বাবার কাছে আসতে চায়নি ঐশ্বর্য। কিন্তু মনিকা চেয়েছে শহীদ ঐশ্বর্য কে একটু স্পর্শ করুক, মাথায় হাত বুলিয়ে দিক।
মায়ের ইচ্ছাতেই প্রথম বার বাংলাদেশ শেখ এসেছিল ঐশ্বর্য। শহীদের সঙ্গে দেখাও করেছে,তবে বাবা বলে একবারের জন্যও ডাকেনি।

মাত্র দুটি দিন থেকেছে ঐশ্বর্য,ভাই রুদ্র আর ছোট বোন নিকি ঐশ্বর্য ভাইয়া বলতে পাগল ছিল।হবেই বা না কেন? শহীদ বড় ভাই নিয়ে তাদের মনে আকাশ সম ভালোবাসার জন্ম দিয়েছে।
সেই ঠিক পাঁচ বছর আগে একবার বাংলাদেশ এসেছিল ঐশ্বর্য। এরপর তার মা…..
কথা গুলো বলে থামলো ঐশ্বর্য, না না তাকে থামতে হয়েছে।কেউ ফুঁপিয়ে কাঁদছে,সেই কান্নায় আর কিছু বলতে পারলো না ঐশ্বর্য।

পাশেই বসে আছে উৎসা, ঐশ্বর্যের কাছে জানতে চেয়েছে মনিকার সম্পর্কে।তার মনে হাজারো প্রশ্ন, কোথায় তিনি? কেনো শহীদের সঙ্গে ওনার ডিভোর্স হয়েছে?
ঐশ্বর্যের মুখে সব শুনে ভেতরটা খাঁ খাঁ করছে উৎসার
আফসানা পাটোয়ারী তো মনিকার স্বামীই নিয়ে নিলো। কিন্তু তবুও কিছু বললো না, এত ভালো মানুষটার শেষে কী না এত ভ’য়’ঙ্কর পরিণতি?

“ইডিয়েট।”
ঐশ্বর্যের মুখে ইডিয়েট শুনে চুপ করে গেল উৎসা।
“কাঁদার কী হয়েছে?”
উৎসা ঝাপটে ধরে ঐশ্বর্য কে।
“আপনি এত কষ্ট একা স’হ্য করেছিলেন?”
ঐশ্বর্য উৎসার কাঁধে কা’ম’ড় বসিয়ে দিল।
“একা কোথায় ছিলাম?এত এত গার্লস ছিল!”গার্লফ্রেন্ড ছিল।”
উৎসা ঐশ্বর্যের বাহুতে কি’ল বসিয়ে দেয়।
“অস’ভ্য রিক চৌধুরী,যান।”

উৎসা দোলনা থেকে কবর উঠে গেল, ঐশ্বর্য ওকে আবার টেনে কোলে বসায়।
“লিসেন রেড রোজ অ্যাম নট গুড পার্সন, ট্রাস্ট মি।আর না কখনও ভালো হতে চাই। তুমি থেকো দ্যাটস্ এনাফ ফর মি।”
উৎসা ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে।

“চেনা হয়ে গেছে আপনাকে।হায় আল্লাহ আপনাকে কত মেয়ে…..
উৎসা নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেছে, ঐশ্বর্য ঠোঁট আঁকড়ে ধরেছে উৎসার। সম্পূর্ণ কথাটা করতে পারলো না উৎসা,তার পূর্বেই এমনতর কান্ড করলো ঐশ্বর্য। মিনিটের ব্যবধানে ছেড়েও দিল।
“সত্যি বললেই গায়ে লাগে তাই না! আমিও এবার থেকে ছেলেদের… আহ্!”
ঐশ্বর্য উৎসার ঠোঁটে কা’ম’ড় বসিয়ে দেয়। উৎসার নরম গান চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বলল।
“ডোন্ট ইউ ডেয়ার আমার সামনে আর কখনও অন্য ছেলের কথা বললে! আদ্যারওয়াইজ আই উইল কি’ল ইউ।”
উৎসা ত মে’রে গেল,কী সাং’ঘাতিক লোক রে বাবা!

বিয়ের জন্য রিতিমত পাগল হয়ে উঠেছে ঐশ্বর্য,এই তো জিসান কে দিয়ে জোর করে ডেকোরেশন করিয়েছে। কালকে রাতেই ওদের আংটি বদল অনুষ্ঠান করবে, অবশ্য ঐশ্বর্য শুধু একবারই শহীদ কে সবটা বলেছে। কাল আংটি বদল দু দিন পর মেয়েলি যা রিচুয়েল আছে এরপর রাতেই ঐশ্বর্য বিয়ে করবে।
জিসান,কেয়া নতুন ঐশ্বর্য কে দেখে রিতিমত নির্বাক হয়ে গেছে।
“ব্রো ব্যাপার কী মিস বাংলাদেশী পাগল করছে না কি?”
ঐশ্বর্য চোখ রাঙিয়ে তাকালো, কেয়া আর নিকি কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো।
নিকি বললো।

রেড রোজ পর্ব ৩০

“এই শুনো কেউ আমার ভাইয়ের সঙ্গে লাগবে না, আমার ভাইটা বিয়ে করবে এটাতো আনন্দের বিষয়। এখন কথা হচ্ছে উৎসা কী এমন করলো?”
ঐশ্বর্য নিকির মাথায় টোকা দিয়ে বলল।
“ভালো হয়ে যা না হলে জিসানের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেব।”
নিকি লজ্জায় কুঁকড়ে গেল, জিসান শব্দ করে হেসে উঠলো।আড় চোখে তাকায় নিকি, জিসান চোখ টিপে।নিকি তম্বা খেয়ে গেল।

রেড রোজ পর্ব ৩২